নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিচ্ছু নেই বলার মতো।এলোমেলো জীবন।যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াই।\'ভালো লাগা\'টাকেই প্রাধান্য দেই।

দূরের পথযাত্রী

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!!

দূরের পথযাত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের চার মাস্টারপিস

০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

সত্যজিৎ রায়।নাম একটা কিন্তু পরিচয় অনেক।ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কুর স্রষ্টা হিসেবে যিনি বইপ্রেমীদের কাছে প্রিয় সেই তিনিই আবার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে প্রিয় পরিচালক হিসেবে।রবীন্দ্রনাথ যেমন একাই বাংলা সাহিত্যকে সারা বিশ্বে পরিচিত করেছিলেন তেমনি সত্যজিৎ রায়ও একাই বাংলা চলচ্চিত্রকে সারাবিশ্বের মানুষের দরবারে নিয়ে গিয়েছিলেন।সেই 'পথের পাঁচালি' থেকে শুরু আর 'আগুন্তুক' দিয়ে শেষ।মাঝখানে বানিয়েছেন আরো ৩৫টি সিনেমা,কয়েকটা ডকুমেন্টারি আর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।ব্যাপক কাজের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক বিচিত্রতা।

'পথের পাঁচালি'তে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য,গ্রামীন দরিদ্র মানুষের জীবন সেলুলয়েডে আবদ্ধ করে প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি 'কলকাতা ট্রিলজি'র মাধ্যমে সমসাময়িক শহুরে জীবন,সমস্যা,সীমাবদ্ধতা তুলে ধরায় নিজেকে সীদ্ধহস্ত হিসেবে প্রমাণ করেছেন।সত্যজিৎ রায়ের মুভি মানেই একেকটা ক্ল্যাসিক,মাস্টারপিস বাংলা মুভি দেখা।নরম পানির স্রোতের মতো কাহিনির এগিয়ে যায়, কোথাও কোন খুঁত নেই,নেই অভিনয়ে ভুল ধরবার অবকাশ,কখনো মনে হবেনা এইখানে এই সিনটা না হলেও পারতো কিংবা এখানে এমন হলে ভালো হতো।


সত্যজিৎ রায়ের ৩৭টি মুভির মাঝে ৩৫টি আমার দেখা আছে।অল্প কয়েকটা বাদে প্রায় সবগুলোই আমি চুড়ান্তভাবে উপভোগ করেছি।আজকে তার মধ্যে চারটা চলচ্চিত্র নিয়ে হালকাপাতলা আলোচনা করবো।রিভিউ না কিন্তু।কারন রিভিউ আমার ঠিক আসেনা।কয়েকবার চেষ্টা করেছি।ফেল মারছি।সো ওই পথে যাচ্ছিনা।যেভাবে মাথায় আসছে ওভাবেই লিখলাম।


১।নায়ক(১৯৬৬)


সত্যজিতের নিজের লেখা কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র 'নায়ক'।ড্রামা জেনরের মুভি।এই ধরনের কাহিনি নিয়ে ঐ সময় চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে চিন্তা করা যায়না।সত্যজিৎ বলেই সম্ভব।মহানায়ক উত্তম কুমার আর শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত এই ছবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পায়।
ছবির কাহিনি এক প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত নায়ক অরিন্দম মুখার্জী(উত্তম কুমার)কে নিয়ে।যিনি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড নিতে ট্রেনে করে কলকাতা থেকে দিল্লী যাচ্ছেন।ট্রেনের খাবার কামরাতে আলাপ হয় 'আধুনিকা' নামের এক ম্যাগাজিনের জার্নালিস্ট অদিতি(শর্মিলা)র সাথে।কথাবার্তার এক পর্যায়ে ম্যাগাজিনের কাটতি বাড়ানোর জন্য অাদিতি গোপনে আলাপের ছলে অরিন্দম মুখার্জির ইন্টারভিউ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।এবং নায়কের মুখ থেকে বের করে আনে তার অতীত জীবনের ইতিহাস।কিভাবে এতদূর পর্যন্ত আসা,ফেলে আসা দিনের ভুলত্রুটি,বড় হওয়ার জন্য সংগ্রাম,টিকে থাকা,একাকীত্ব ইত্যাদি।সাতটি ফ্ল্যাশব্যাক আর দুইটা ড্রিম সিক্যুয়ন্সের মাধ্যমে এসব তুলে ধরা হয়।

'নায়ক' এর একটা দৃশ্য

ড্রিম সিক্যুয়েন্সের একটা সীন।প্রচুর টাকা থাকা সত্ত্বেও নায়কের একাকীত্ব ফুটে উঠেছে ।

উল্লেখ্য,সৃজিত মুখার্জির প্রথম সিনেমা 'অটোগ্রাফ'(অনেকেই দেখেছেন) এই সিনেমা,উত্তম কুমার আর সত্যজিতকে ট্রিবিউট করে বানানো হয়েছিল।কাহিনিতেও মিল পাবেন কিছুটা।


২।অরণ্যের দিনরাত্রি(১৯৭০)



এই এক মুভি দেখলে বুঝা যায়,সত্যজিৎ নিজের সময়ের থেকে কতটা আধুনিক ছিলেন আর চিন্তাভাবনায় সমসাময়িকদের তুলনায় অগ্রসর ছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস নিয়ে তৈরি এই সিনেমা অ্যাডভেঞ্চার,ড্রামা জেনরের।সুনীল নিজের উপন্যাসটাকে অবশ্য কিছুটা দুর্বল বলেছিলেন।কিন্তু রায়ের ছবিটা মোটেও দুর্বল নয় বরং আরেকটা মাস্টারপিস।কাহিনিও অনবদ্য।অসীম( সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়),সঞ্জয়, হরি আর শেখর(রবি ঘোষ)-কলকাতার চার যুবক বেড়াতে যায় বিহারের পালামৌতে।বুকড করা না থাকলেও সেখানকার সরকারি রেষ্ট হাউসে আস্তানা গাড়ে।আর ঘুরে বেড়ায় জঙ্গলে।পরদিন সকালে শেখরের সাথে দেখা হয় সদাশিব ত্রিপাঠি নামের এক লোকের মেয়ে(শর্মিলা ঠাকুর) ও মেয়ের বৌদি(কাবেরী বসু)র সাথে।এদের একটা ট্যুরিস্ট বাংলো আছে কাছেই।প্রতিবছর এই সময়ে বেড়াতে আসে পরিবারসহ।চার যুবক ওদের বাংলোতে দেখা করতে যায় এবং সেখানে কাহিনি এগিয়ে যেতে থাকে।এছাড়া এক সাঁওতাল রমনীকেও দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে!!


মুভির একটা সীন।সবাই আড্ডা দিচ্ছে জঙ্গলে।


চলছে শ্যূটিং।তখনকার সময় বিবেচনা করলে বেশ সাহসী বলতে হবে সত্যজিৎকে।

এই ছবির সিক্যুয়েল বের করেছেন আরেক বরেণ্য পরিচালক গৌতম ঘোষ।নাম 'আবার অরন্যে'(২০০৩)

৩।অশনি সংকেত(১৯৭৩)

এই মুভি মিস করি কি করে!!ববিতা আছে যে!!
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসম্পূর্ণ উপন্যাস 'অশনি সংকেত' অবলম্বনে নির্মিত।স্থান পেয়েছে 'The NewYork Time Guide to Best 1000 Movies Ever Made" তালিকায়।
মুভির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৃষ্ট দুর্ভিক্ষকে ঘিরে।১৯৪৩ সালের এ দুর্ভিক্ষ ইতিহাসে 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' নামে পরিচিত।প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ মারা যায় মনুষ্যসৃষ্ট এ মহামারীতে।
গ্রাম্য চিকিৎসক গঙ্গাচরণ(সৌমিত্র) আর তার স্ত্রী অনঙ্গ(ববিতা) নতুন গাঁয়ে আসে পুরাতন গাঁ ছেড়ে।নতুন গাঁয়ে কোন পুরোহিত নেই।সেই সুযোগে ব্রাহ্মণ গঙ্গাচরণ বনে যায় পুরোহিত আর সেই সাথে খুলে বসে টোল।তার বউ অনঙ্গও নিজের মিষ্টি স্বভাবের মাধ্যমে অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে।সুখেই যাচ্ছিল দিন।কিন্তু জাপান বার্মা আটক করে দখল করলে বন্ধ হয়ে যায় চালের আমদানি।সারা দেশে শুরু হয় দুর্ভিক্ষ।যার প্রভাব এই নতুন গাঁতেও পড়ে। লোকে নিজে খেতে পায়না।পুরোহিতকে দিবে কি!!শুরু হয় হাহাকার।চাল নিয়ে চোরাকারবারি।এরপরে নানান ঘটনা ঘটতে থাকে।

এই কি সেই 'অপুর সংসার'-এর সৌমিত্র??

ববিতার অভিনয়ে আরো একবার মুগ্ধ হবেন মুভিটা দেখলে!

১০১ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবিটি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার পায়।


৪।মহানগর(১৯৬৩)

১৯৬৩ সাল।চিন্তা করুন তো সেসময় নারীদের লিডিং রোল দিয়ে সিনেমা নির্মিত হয়েছে কতটি।আমার জানা নেই। তবে 'মহানগর' সিনেমার প্রধান চরিত্র কিন্তু একজন গৃহবধূ।শুধু মাধবী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখার জন্যে হলেও এই ছবি দেখা যায়।নরেন্দ্রনাথ মিত্রের 'আবর্তনিকা' নামক ছোটগল্প থেকে সত্যজিৎ তার এই ছবির কাহিনি তুলে এনেছেন।তৎকালীন মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি বলা যেতে পারে একে।
বার্লিনের চলচ্চিত্র উৎসবে সিল্ভার বিয়ার প্রাপ্ত এ মুভির শুরুতে দেখা যায়, আরতী আর সুব্রতর মোটামুটি স্বচ্চল সংসার।স্কুলপড়ুয়া ননদ,এক ছেলে আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে পরিবার।কিন্ত আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে প্রায় সবার মতের বিরুদ্ধে কাউকে না জানিয়ে আরতি চাকরি খুঁজেন।পেয়েও যান বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেলসম্যানের চাকরি।রক্ষনশীল পরিবারের বাধা ডিঙিয়ে চাকরি করতে করতে একসময় আরতি খুঁজে পায় এক ধরনের স্বাধীনতা।সেই সাথে পরিবারের অর্থনীতিতে সহয়তা করার ফলে একটা শক্ত অবস্থানও।এদিকে স্বামী সুব্রতর চাকরি চলে যায়।আরতি হয়ে পড়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থার একমাত্র ভরসা।কর্মস্থলে আরতির শক্ত অবস্থান,বসকে স্বামীর সন্দেহ করা, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বান্ধবীর প্রতি মিথ্যে অভিযোগের প্রতিবাদ এসব ঘটনা ছবির ক্ল্যাইম্যাক্স আরো বাড়িয়ে দেয়।

আরতি ও তার স্বামী সুব্রত

মুভির আরেকটা সিন।


প্রায় সবগুলা ছবির মিউজিক করেছেন সত্যজিৎ রায় নিজে।লিরিসিস্টও তিনিই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০

হামিদ আহসান বলেছেন: সুন্দর পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ অাপনার পাওনা...

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৩৪

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: উফফ্‌ দারুন.........চেটেপুটে খেলুম
তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ধন্যবাদ

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। ধন্যবাদ

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।

৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: প্রিয় ব্যক্তিত্বের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি দারণ লেখা পড়লাম।ধন্যবাদ অনেক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.