![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সাধনা গড়ে উঠে মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে। মানুষের সব রকম অনুভূতি ও কল্পনা, ভাব ও আদর্শ, মনের আকুতি ও আত্মার ব্যাকুলতা প্রেরণা পায় ও রূপায়িত হয়ে ওঠে মাতৃভাষার মাধ্যমে। ইশারা ভাষার স্বীকৃতি, প্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং এই ভাষাগোষ্ঠীর স্বকীয় সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি খোদ মূক ও বধির জনগোষ্ঠী নিয়ে ভাবতে হবে।
শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী (বধির) সমাজের বোঝা নয়। তারাও দেশের একশ্রেণির দক্ষ জনশক্তি। এক কথায় বধির জনগোষ্ঠী সমাজ ও রাষ্ট্রের মানব সম্পদই বটে। কোনোভাবেই এই প্রতিবন্ধীদের অবহেলার নজরে না দেখে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো সম্ভব। এরা আমাদের মতোই নিজেদের মেধা দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে উন্নত জীবন ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
এই শ্রেণির প্রতিবন্ধীরা নিজেরা কেউ মুখ ফুটে কথা বলতে না পারলেও সমাজের সুস্থ মানুষগুলোর সঙ্গে মনের ভাব প্রকাশ করেন ইশারা ভাষায় এবং প্রতীকি নিদর্শনের মাধ্যমে। উন্নত বিশে^ প্রশিক্ষণ ও আক্ষরিক শিক্ষার মাধ্যমে মূক ও বধির জনগোষ্ঠী কে মানব সম্পদে পরিণত করা হয়েছে। আমাদের দেশে এখনো তারা সামাজিক অনাদর ও অবহেলার গন্ডির মধ্যে রয়ে গেছে। দেশের এই জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি কার্যকর ভূমিকা ও সকল ক্ষেত্রে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। তাদের মধ্যে অনেকে দক্ষ পরিশ্রমী ও প্রখর মেধাবী অধিকারীও আছে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায়ও এগিয়ে রয়েছে। আমাদের মতো দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের প্রায় সবার হাতে হাতে দেখা যায় স্মার্টফোন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহ ফেসবুক, ইমু হোয়াটসঅ্যাপ এর মতো জনপ্রিয় মাধ্যমে গুলো তারা ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন।
আক্ষরিক জ্ঞান সম্পন্ন মূক ও বধিররা আমাদের মতোই সুস্থ মস্তিষ্ক সমপন্ন। সবই তারা বুঝেন, দেখেন, উপলব্ধি করেন। কিন্ত ভাগ্যিস তারা শোনেন না, মুখ ফোটে কথা বলতে পারেন না। সমাজ সচেতনতার অভাবে এই শ্রেণির মানুষগুলো আজো নানা ভাবে অবহেলিত-বঞ্চিত রয়ে গেছেন। তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। তাই তাদের জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে-মুখের ভাষার মতো ইশারা ভাষাও দেশভেদে জাতিভেদে বিভিন্ন রকম হয়! এ মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রায় দেড় শো’র কাছাকাছি সাইন ল্যাংগুয়েজ রয়েছে। মুখের ভাষার ক্ষেত্রে আমেরিকান ইংরেজি যেমন বিশ্বজুড়ে বহুল প্রচলিত, আমেরিকান সাইন ল্যাংগুয়েজ বা ইশারা ভাষার ক্ষেত্রে দারুণ জনপ্রিয়। তাদের অক্ষরজ্ঞান শিক্ষার কৌশল হলো, তারা সংখ্যাকে কোন কোন সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করে থাকে।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব দ্য ডেফের তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রায় সাত কোটি শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী রয়েছেন। বিশ্বের অনেক দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফিনল্যাল্ড ও সাউথ আফ্রিকা তাদের দেশে ইশারা ভাষা আইন, ইনস্টিটিউট ও দোভাষী সনদ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দিয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ভাষার আইনি স্বীকৃতি। তাছাড়া ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়ও ইশারা ভাষাকে একাডেমিক ও অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রাদেশিক আইনে উল্লেখ আছে,একাডেমিক ক্রেডিট কোনো কোর্সকে গ্রহণ করবে না যদি সেই প্রতিষ্ঠান ইশারা ভাষাকে স্বীকৃতি না দেয়। এনসিডিপির তথ্য মতে, ইংরেজি ছাড়া আমেরিকায় যে ১৩টি ভাষা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তার মধ্যে ¯প্যানিশ এবং চীনা ভাষার পরই রয়েছে আমেরিকান ইশারা ভাষা। যেখানে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ এই ভাষায় পার¯পরিক ভাব বিনিময় করে থাকেন। ভারত ২০১১ সালে ৪৪ কোটি রুপি ব্যয়ে ইন্দিরা গান্ধী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ভারতীয় ইশারা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে নরওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ডেফ-এর সহযোগিতায় প্রথম বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার যৌথ প্রয়াসে প্রথম বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরে অধিদপ্তর শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাপন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এই ভাষার বিকাশে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইশারা ভাষা প্রমিতকরণ কমিটি গঠন করা হলেও সেখানে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের প্রতিনিধিত্ব সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যদি হয় ভাষা; তাহলে ইশারা ভাষার প্রতি এই অবহেলা কি আমাদের বহমান সভ্যতায় এক ধরনের সংকট নয়? এ সংকট উত্তরণে এখনই সময় বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন; যে ইনস্টিটিউট ইশারা ভাষার প্রসার, আইনি স্বীকৃতি আদায় ও ভাষার প্রমিতকরণে গ্রহণ করবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, মুখের ভাষা দিয়ে শতকরা সর্বোচ্চ ৪০ ভাগ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে । বাকি ৬০ ভাগ “ইশারা ভাষা” বা “সাইন ল্যাংগুয়েজ” এর কেরামতি বলে অভিহিত করা হয়েছে! এর প্রকৃত উদাহরণ হচ্ছে- শিশুর কণ্ঠে অ-আ-ক-খ বর্ণমালা পরিচয়ে ভাষার সাথে প্রথম স¤পর্ক গড়ে ওঠে, কিন্তু যে শিশুটির মুখে শব্দ ফোটে না, প্রকৃতি যাকে শব্দ শুনতে পাবার সুযোগ করে দেয়নি, তারও কিন্তু নিজের ভাষা আছে। সে ইশারায় মনের ভাব প্রকাশ করে। আর বাকি ৬০ ভাগ অংশ- বডি ল্যাংগুয়েজ বা শারীরিক ভাষা। শরীরের নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যে শব্দমালা সাজিয়ে ভাবের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তা-ই হচ্ছে বডি ল্যাংগুয়েজ। আর সাইন ল্যাংগুয়েজ হচ্ছে বডি ল্যাংগুয়েজেরই একটা অংশ। মূলত মূক ও বধির লোকদের ভাব বিনিময়ের জন্য এ ভাষাটি ব্যবহার করা হয়।
‘ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। মুখের ভাষাতে যোগাযোগ করা অসম্ভব বা অযাচিত হলে এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত মুখের ভাষার আগেই ইশারা ভাষার উদ্ভব ঘটে। মুখের বিকৃত ভঙ্গিমা, কাঁধের ওঠানামা কিংবা আঙুল তাক করাকে এক ধরনের মোটা দাগের ইশারা ভাষা হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে প্রকৃত ইশারা ভাষাতে হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সুক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টি ব্যবহৃত হয়, এবং এর সাথে সাধারণত মুখমন্ডলের অভিব্যক্তিও যুক্ত করা হয়। মূক ও বধির লোকেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষার ব্যবহার করে থাকেন’। কিন্ত বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা ইশারা ভাষাকে সব ভাষার মাতৃভাষা, ইশারা ভাষাকে কথ্য ভাষার সমমর্যাদা, ইশারা ভাষার প্রসারের দাবি জানিয়ে আসলেও কার্যত এখনো আমাদের দেশে তা বাস্তবায়িত হচ্ছেনা।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সর্বোচ্চ ৯৩ ভাগ পর্যন্ত বডি ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে ভাব বিনিময়ে! কারণ হিসেবে গবেষকরা বলেন-মুখের কথার চেয়ে ইশারার ভাষা বেশি কার্যকর। সেজন্যই মানুষ বডি ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বাংলাদেশে ব্রিটেনের ইশারা ভাষার রীতিকে অনুসরণ করা হয়। এখানে ইশারা ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে সরকারি মূক ও বধির বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করছে-“সোসাইটি অব দি ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাক্সগুয়েজ ইউজার্স” এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু বাংলাদেশেই শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ, পৃথিবীজুড়ে এ সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি মানুষ, এবং তাদের সবার মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম এই সাইন ল্যাংগুয়েজ। তাই ভাষাটি শিখে ফেললে অনন্য একটি দক্ষতাই অর্জনের পাশাপাশি ৭ কোটি মানুষের সাথে যোগাযোগ করার, তাদের গল্প শোনার, তাদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাবে।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী গবেষক মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের মনের গহিনের লুকায়িত ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম বাংলা ইশারা ভাষার আইনি স্বীকৃতি এবং ভাষার প্রসারে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবি আজও পূরণ হয়নি। দেশে ছয়টি সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা প্রসারে রয়েছে আলাদা ইনস্টিটিউট। সংখ্যালঘু বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের যোগাযোগের মাধ্যম এই ইশারা ভাষার ওপর গবেষণা, ভাষার প্রমিতকরণ ও বিকাশে নেই কোনো ইনস্টিটিউট। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে বসবাসকারী ৫০ লাখ শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের ইশারা ভাষার প্রসারে জাতীয় পর্যায়ে ভারতে ইশারা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনে নরেন্দ্র মোদি সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো শ্রবণপ্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ জনজীবনের প্রতিটি স্তরে অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। যাদের ভাষা শিক্ষার আগেই শৈশবে কিংবা মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় কিংবা পরবর্তী সময়ে যেকোনো কারণে শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তাদের শ্রবণ ও মৌখিক ভাব বিনিময়ের পদ্ধতি হিসেবে ইশারার মাধ্যমে শব্দ বা বাক্যাংশ কিংবা আঙুলের সাহায্যে বর্ণ প্রদর্শন করার নামই আন্তর্জাতিকভাবে ইশারা ভাষা হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে পৃথক পৃথক ইশারা ভাষা এবং আছে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি স্বীকৃতি। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দেশ উগান্ডা। তারা ১৯৯৫ সালে ইশারা ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি স্বীকৃতি দেয়।
ইশারাভাষীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম একুশে বইমেলার উদ্বোধনী বক্তৃতায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ইশারা ভাষা চালুর ঘোষণা দেন এবং মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে বিটিভিসহ সব টেলিভিশন সংবাদে ইশারা ভাষা চালুর নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ে অগ্রভাগে থাকা সংগঠন এসডিএসএলের নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং সরকারের সদিচ্ছায় ২০১২ সাল থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্ত আজো পর্যন্ত আমাদের দেশে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জাতীয় ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে সুস্থ সমাজে আজো এই প্রতিবন্ধীরা বাস্তবতায় নিজেদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতে পারছেন না।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, অসংখ্য জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলী সিলেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় স্থাপন করেছেন শাহজালাল রাগীব-রাবেয়া প্রতিবন্ধী ইন্সটিটিউট।
আসুন আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল শ্রেণির শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের সুস্থ মানুষ হিসেবে দেখি। তাদের উন্নয়নে প্রয়োজন সরকারি বাধ্য বাধকতার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন। অধিকন্ত ইশারাভাষী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা এবং বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন এখন সময়ের দাবি।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৯
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব ডা:এম আলী।
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৭:১৮
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: অতি মুল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ অসাধারণ একটি পোষ্ট । ইশারা ভাষার বৈশিষ্ট , এর গুরুত্বপ , প্রয়জনীয়তা ও বিশ্বজনিন প্রয়োগিক ক্ষেত্রের বিস্তারিত বিবরণ লেখাটিতে রয়েছে । বাংদেলা দেশে বিদ্যমান ৩০ লাখের মত শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিদের সংখ্যাটা বেশ আশংকা জনক । রাষ্ট্র, সরকার , সমাজ ও পরিবার সচেতন হলে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধিদেরকর সহজেই শৈশব কালেই তাদের সমস্যা চিহ্রিত করতে সক্ষম হবে। অনেক বাক শ্রবন প্রতিবন্ধি শিশুদের মা বাবা কিংবা অতি কাছের জনেরাও প্রথমে সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারেননা যে তাদের সন্তান একজন শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধি হিসাবে বেড়ে উঠছে । অনেক শিশুর বয়স ২/৩ বছর পার হওয়ার পরেও যখন বাচ্চা কথা বলেতে পারছেনা বলে মনে হয় তখন অনেকের হুস হয় যে তার বাচ্চা শ্রবন কিংবা বাক প্রতিবন্ধী । কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে । শুরুতেই ধরতে পারলে ও তাদের শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিতার সঠিক মাত্রা নিরোপন করতে পারলে সঠিক চিকিংসা , সহায়ক যন্ত্রপাতি ও থেরাপী দিয়ে তাদেরকে কথা বলানো শিক্ষা দেয়া যেতো সহজেই। মডারেট এমনকি প্রফাউন্ড ডেফদেরকেও ( গভীর মুক ও বধির) যথাযথ ফেরাপীর মাধ্যম্যে কথা বলার সক্ষমতা দেয়া যায় , আর কানে শোনার জন্য বিভিন্ন ধরনের হিয়ারিং এইড এবং সম্ভব হলে হিয়ারিং ইনপ্লান্টের এর মাধ্যমে তাদের শ্রবন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় । সে রকম ক্ষেত্রে তারা সাধারণ( নরমাল ) বাচ্চাদের মত না হলেও মোটামোটি চলনসই পর্যায়ের কথা বলতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। তারজন্য প্রয়োজন দেশে প্রতিটা শিশুর জন্মের পরে একটি নিদৃষ্ট সময়ে তাদের হিয়ারিং টেষ্ট গ্রহনের বিষয়ে সকলকে সচেতন করে তোলা ও রাস্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ফিজিক্যাল ও ফাইনানসিয়েল অবকাঠামো সৃজন করা । বেসরকারী পর্যায়ে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত সাহিক ও সিলেটে দানবীর ড: রাগীব আলী স্থাপিত শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিদের কল্যানের জন্য স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের এমন আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন ।
শৈশবকাল হতে থেরাপীর মাধ্যমে শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিদেরকে কথা বলার সক্ষমতা দেওয়া সম্ভব না হলে তাদের জন্য ঈশারা ভাষা ব্যতিত সামাজিক যোগাযোগ কিংবা সাবলন্বী হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম । এক্ষেত্রে ঈশারা ভাষাকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এর শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা কার্যক্রম প্রনয়নও প্রসার একান্ত প্রয়োজন । বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ঈশারা ভাষার উপর বিভিন্ন পর্যায়ের ডিপ্লোমা ও হায়ার ন্যশনাল ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষাক্রম চালু আছে । সেখানে শুধুমাত্র যে শ্রবন প্রতিবন্ধিরাই পড়াশুনা করছে তা নয়, বরং নরমাল শিক্ষার্থীগনও ঈশারা ভাষা শিখছে । কারণ ঈশারা ভাষা জানা থাকলে তারা দোভাষীর কাজ করতে পারে । সেখানে একজন শ্রবন প্রতিবন্ধী তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা , চিকিংসা , চাকরীর ইন্টাভিউ কিংবা কোন গুরত্বপুর্ণ সরকারী কাজের প্রয়োজনে দোভাষীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে সরকারি ভাবে তাদের জন্য ইশারা ভাষা জানা দোভাষী নিয়োগ দেয়া হয় । ফলে এই ভাষা যারা জানে তাদের নীজেদেরও চাকরীর সুযোগ সৃষ্টি হয় ।
তাই দেশের এই বিশাল শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী জনগুষ্ঠির বৃহত্তর কল্যানের জন্য এই পোষ্টে উল্লেখিত জাতীয় ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট স্থাপনের দাবীর সাথে জোড়ালো সমর্থন জ্ঞাপন করছি । পোষ্ট লেখকের সহমত যে শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিরাও হতে পারে প্রখর মেধাবী ও সমাজের জন্য মুল্যবান সম্পদ । এ ব্লগেই একজন কৃতি শ্রবন প্রতিবন্ধির বিষয়ে আমার একটি পোষ্ট স্বপ্ন ছুতে চায় কির্তিময়ী সুমাইয়া রয়েছে দেখে নিতে পারেন ।
মুল্যবান এই পোষ্টটি প্রিয়তে গেল । জাতীয় গুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ের উপরে লেখা পোষ্ট টিকে স্টিকি করা যায় কিনা সে বিষয়টি সামু কতৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখতে পারেন ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল
৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৭:২৩
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: নেট ওয়ার্ক সমস্যার কারণে প্রথমবারে পোষ্ট না হওয়ায় দ্বিতীয় প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে । এখন দেখা যায় মন্তব্যটি দুইবার এসেছে । তাই দয়া করে এটা সহ ২নং মন্তব্যটি মুছে দিবেন ।
৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:০১
রাজীব নুর বলেছেন: ইচ্ছে হয় ধুলো হয়ে মিশে যেতে বাতাসে …
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৭:০৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: অতি মুল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ অসাধারণ একটি পোষ্ট । ইশারা ভাষার বৈশিষ্ট , এর গুরুত্বপ , প্রয়জনীয়তা ও বিশ্বজনিন প্রয়োগিক ক্ষেত্রের বিস্তারিত বিবরণ লেখাটিতে রয়েছে । বাংদেলা দেশে বিদ্যমান ৩০ লাখের মত শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিদের সংখ্যাটা বেশ আশংকা জনক । রাষ্ট্র, সরকার , সমাজ ও পরিবার সচেতন হলে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধিদেরকর সহজেই শৈশব কালেই তাদের সমস্যা চিহ্রিত করতে সক্ষম হবে। অনেক বাক শ্রবন প্রতিবন্ধি শিশুদের মা বাবা কিংবা অতি কাছের জনেরাও প্রথমে সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারেন না যে তাদের সন্তান একজন শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধি হিসাবে বেড়ে উঠছে । অনেক শিশুর বয়স ২/৩ বছর পার হওয়ার পরেও যখন বাচ্চা কথা বলেতে পারছেনা বলে মনে হয় তখন অনেকের হুস হয় যে তার বাচ্চা শ্রবন কিংবা বাক প্রতিবন্ধী । কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে । শুরুতেই ধরতে পারলে ও তাদের শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিতার সঠিক মাত্রা নিরোপন করতে পারলে সঠিক চিকিংসা , সহায়ক যন্ত্রপাতি ও থেরাপী দিয়ে তাদেরকে কথা বলানো শিক্ষা দেয়া যেতো সহজেই। মডারেট এমনকি প্রফাউন্ড ডেফদেরকেও ( গভীর মুক ও বধির) যথাযথ ফেরাপীর মাধ্যম্যে কথা বলার সক্ষমতা দেয়া যায় , আর কানে শোনার জন্য বিভিন্ন ধরনের হিয়ারিং এইড এবং সম্ভব হলে হিয়ারিং ইনপ্লান্টের এর মাধ্যমে তাদের শ্রবন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় । সে রকম ক্ষেত্রে তারা সাধারণ( নরমাল ) বাচ্চাদের মত না হলেও মোটামোটি চলনসই পর্যায়ের কথা বলতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। তারজন্য প্রয়োজন দেশে প্রতিটা শিশুর জন্মের পরে একটি নিদৃষ্ট সময়ে তাদের হিয়ারিং টেষ্ট গ্রহনের বিষয়ে সকলকে সচেতন করে তোলা ও রাস্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ফিজিক্যাল ও ফাইনানসিয়েল অবকাঠামো সৃজন করা । বেসরকারী পর্যায়ে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত সাহিক ও সিলেটে দানবীর ড: রাগীব আলী স্থাপিত শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিদের কল্যানের জন্য স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের এমন আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন ।
শৈশবকাল হতে থেরাপীর মাধ্যমে শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিদেরকে কথা বলার সক্ষমতা দেওয়া সম্ভব না হলে তাদের জন্য ঈশারা ভাষা ব্যতিত সামাজিক যোগাযোগ কিংবা সাবলন্বী হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম । এক্ষেত্রে ঈশারা ভাষাকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এর শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা কার্যক্রম প্রনয়নও প্রসার একান্ত প্রয়োজন । বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ঈশারা ভাষার উপর বিভিন্ন পর্যায়ের ডিপ্লোমা ও হায়ার ন্যশনাল ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষাক্রম চালু আছে । সেখানে শুধুমাত্র যে শ্রবন প্রতিবন্ধিরাই পড়াশুনা করছে তা নয়, বরং নরমাল শিক্ষার্থীগনও ঈশারা ভাষা শিখছে । কারণ ঈশারা ভাষা জানা থাকলে তারা দোভাষীর কাজ করতে পারে । সেখানে একজন শ্রবন প্রতিবন্ধী তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা , চিকিংসা , চাকরীর ইন্টাভিউ কিংবা কোন গুরত্বপুর্ণ সরকারী কাজের প্রয়োজনে দোভাষীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে সরকারি ভাবে তাদের জন্য ইশারা ভাষা জানা দোভাষী নিয়োগ দেয়া হয় । ফলে এই ভাষা যারা জানে তাদের নীজেদেরও চাকরীর সুযোগ সৃষ্টি হয় ।
তাই দেশের এই বিশাল শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী জনগুষ্ঠির বৃহত্তর কল্যানের জন্য এই পোষ্টে উল্লেখিত জাতীয় ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট স্থাপনের দাবীর সাথে জোড়ালো সমর্থন জ্ঞাপন করছি । পোষ্ট লেখকের সহমত যে শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিরাও হতে পারে প্রখর মেধাবী ও সমাজের জন্য মুল্যবান সম্পদ । এ ব্লগেই একজন কৃতি শ্রবন প্রতিবন্ধির বিষয়ে আমার একটি পোষ্ট স্বপ্ন ছুতে চায় কির্তিময়ী সুমাইয়া ( কবিতাটি শ্রবন প্রতিবন্ধি সুমাইয়াকে উৎসর্গিত) রয়েছে দেখে নিতে পারেন ।
মুল্যবান এই পোষ্টটি প্রিয়তে গেল । জাতীয় গুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ের উপরে লেখা পোষ্ট টিকে স্টিকি করা যায় কিনা সে বিষয়টি সামু কতৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখতে পারেন ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল