![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তার নাম সাদেকমুল্লা, গ্রামের সবাই তাকে পটল দা নামেই চিনে, যুদ্ধ পরবর্তী যে সকল মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল পটল দা তাদের মধ্যে অন্যতম, তবে চুরি-চামারি করে নয়, তার রাত-দিন পরিশ্রমের বদৌলতে তার এই অর্জন। নিজে প্রাইমারির গন্ডি পার করতে না পারলেও তিন ছেলে ও এক মেয়েকে করেছেন উচ্চশিক্ষিত, তাদের মধ্যে একজনের তো হার্বাড ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিও আছে, বাকি তিন জনও কোনো অংশে কম না,,হার্বাড ডিগ্রিধারী বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক, নাম তার করিমুল্লা, যদিও নামটা এই জ্ঞানী ব্যক্তিটাকে কখনোয় সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তার চেয়ে বড় অসন্তুষ্টির কারন হলো, ছাএরা তার নাম দিয়েছেন রস বিহীন মুল্লা। এই জন্য বাপের প্রতি তার ক্ষোভের অন্ত নেই, তারপরও সে তার বৃদ্ধ বাবাকে অনেক ভালোবাসে, তার সে ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে চাপা পড়ে গেছে, তাতে জং ধরে গেছে।
ছোট ছেলে আবিরমুল্লা,, এ কেমন নাম সেটা নিয়ে সে কখনো চিন্তা করেনি, চিন্তার অবকাশও তো নেয়, সে তো শিল্পী, সে ছবি আকেঁ, আবেগ দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, আর তা দেখে দর্শনার্থীরা চোখের জল ফেলে, আবেগে আপ্লুতো হয়ে পড়ে, এতেই সে সার্থক, নামে নয় কাজের মধ্য দিয়েই সে নিজেকে খুজেঁ পায়। সে বড় ভাইয়ের সাথেই থাকে একই বিল্ডিং এ, কিন্তু ভিন্ন ফ্লাটে, যদিও খাওয়া দাওয়া তারা এক সাথেই করে।
আর পটল দার সবচেয়ে অপন্দের ছেলে সলিমুল্লা পটলদার সাথে গাছগাছালিতে ঘেরা প্রকান্ড দুতলা বাড়িটাতেয় থাকে, আশেপাশের আর দশগ্রামে এতো সুন্দর বাড়ি আর একটা ও নেয় , তার বাবা তাকে কেন এতো অপছন্দ করে তা সে খুব ভালো করেই জানে, ছয় বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে স্কলারশিপ পেয়েও সে যায়নি, বৃদ্ধ বাবাকে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না, বাবায় যে তার সব, মা মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে আর এক মেয়েকে তিনি বুকে আগলে রেখেছেন, যখন তাদের কিছু ছিল না, দুবেলা খাবার জুটানোয় যখন অসম্ভব ছিল, তখন এই বাবায় তখন নিজে না খেয়ে তাদের মুখে আহার তুলে দিত, রাত-দিন চোখের পাতা এক না করে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য অমানবিক পরিশ্রম করতো, সে পরিশ্রম আজ সার্থক, তার সন্তানরা আজ উচ্চশিক্ষিত, আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ তাকে এক নামে চিনে,,এমন বাবাকে সে কিভাবে ছেড়ে যাবে, বাবার জন্য সে এখনো বিয়ে পর্যন্ত করেনি, বউ যদি ভালো না পড়ে, তার বাবাকে যদি কষ্ট দেয়,,সে জানে তার বাবা তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, কিন্তু প্রকাশ করে না, পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখে তার গভীর ভালোবাসা,,
আজকে তারা তিন ছেলে আর তাদের ছোট বোন, বোনের জামাই, আত্মীয় স্বজন, সবাই তাদের গ্রামের বাড়িতে, গত কাল রাত থেকে পটল দার অবস্থা খুব খারাপ,,, তার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে,, বড় ছেলে আজ সকালে আসার সময় ঢাকা থেকে বড় ডাক্তার নিয়ে এসেছে,,ডাক্তার সবাইকে নিরাশ করে বললেন, সময় আর বেশি নেয়, সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বললেন, পটল দাকে লাইফ সাপার্টে রাখা হয়েছে, যে কোনো সময় সাপোর্টা রেখে তার লাইফ উড়াল দিতে পারে, ডাক্তারের এ কথায় সলিমুল্লা ছাড়া আর কারো মাঝে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না, সে ফুফিঁয়ে ফুফিঁয়ে কাদঁছে। বড় ছেলে মুর্তির মতো দাড়িঁয়ে আছে, কি করা উচিত বুঝতে পারছে না, তার ধারনা এই বারও তার বাবা ঠিকই বেচেঁ যাবেন, আগের দু বার যে ভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিল, সেটা নিয়ে তার বউ তাসলিমার কাল রাত থেকেয় মেজাজ খারাপ, যখনই শশুরের অসুস্থতার খবর তার কানে পৌঁছে, তখনই সে বলে উঠলো, বুড়ার নাটক শুরু হয়ে গেছে, দুই দুই বার মরবে মরবে করে ও মরলো না, বাচ্চাদের স্কুল কামায় দিয়ে, বারবার তার নাটক দেখতে যেতে আর ভালো লাগে না, এইবার মরলেয় বাচিঁ,,করিম সাহেব বউয়ের দিকে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিল, কিছুই বলতে পারলো না! ছোট ছেলে বাবার ডান দিকে বসে আছে, রঙ তুলি নিয়ে, সে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবিটা আকতেঁ যাচ্ছে, তারর বাবার মৃত্যুর ছবি,,এর আগেও সে দুবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারে নি, এইবারও পারবে কিনা সে জানে না,,,বাকি আত্মীয় স্বজনরা অলসভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে পটলদার প্রস্থানের, পটলদার মেয়ে তার শশুরবাড়ির লোকজনের খাতির দারিতে ব্যস্ত, ঠিক ভাবে যত্ন না নিলে শশুর বাড়ির লোকজন নানা কথা বলবে, তার ইমেজ সংকটাপন্ন হবে!
ছোট বেলায় একবার পটল দা পানিতে পড়ে মরতে মরতে ও বেচেঁ গিয়েছিল, পটল তুলতে গিয়েও তার পটল তুলা হয়নি, সে থেকে বন্ধুরা তাকে পটল ডাকতো, আজও তাকে পটল ডাকে সবাই, সে আজ সবার প্রিয় পটল দা, গ্রামের খুব কম মানুষই আছে, যারা তার জন্য চেখের পানি ফেলেনি।
সে কখনো তার নামের প্রতি অবিচার করে নি, বারবার মৃত্যুকে ফাকিঁ দিয়ে বেচেঁ উঠেছে,,সবার ধারনা এইবারও ৭৮ বছরের পটল দা সুস্থ হয়ে উঠবেন, আবার হাসবেন, সবার সাথে মজা করবেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোর খোজঁ খবর নিবেন, কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পটল দার শরীর নিথর হয়ে গেল, তার নিশ্বাস হারিয়ে গেল চিরতরে,,, সে কি কান্না! রহিমুল্লা নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলেন, সলিমুল্লা স্তব্দ হয়ে গেল, তার চোখ হটাত শুকিয়ে গেল, সে বাবার হাত ধরে পাথরের মতো বসে রইলো, আবিরমুল্লার আর ছবি আকাঁ হলো না, তার হাত কাপঁছে, তার চোখের পানি সে ধরে রাখতে পারলো না, জীবনের শ্রেষ্ঠ দৃশ্য যে তার দেখা হয়ে গেল,,তার বাবার মৃত্যু,, পটল দার মৃত্যু,,,
©somewhere in net ltd.