নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বারবার ১/১১!

হুমায়ুন কবীর হুমা

হুমায়ুন কবীর হুমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক নাস্তিক!

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৭



অনেকেই ৬ ই মার্চের হেফাজতের সমাবেশ কে অভ্যুত্থান বা জাগরণের ব্যাকরণে বাঁধতে চাইছেন, এ কাতারে যার সবচেয়ে বিস্ময়কর অনুভূতি আমরা লক্ষ্য করেছি তিনি হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ ! আব্দুল্লাপুরে হুজুরদের খেদমতের উছিলায় নারায়ে তকবির বলে তিনি যে লম্ফটি দিয়েছেন সেটির সাথে মতিঝিলে সমবেতদের কারোই কোনো তুলনা করা চলেনা কেননা সেই উল্মফন থেকে আজো বোধ করি তিনি ধরাতে পতিত হন নি! উক্ত সমাবেশে এরশাদ সাহেবের শেষ জীবনে আরো একটি হিজাবি বিদিশা প্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলেও কেউ কেউ ধারনা করছেন । যে বিদিশা পাসপোর্ট ও আপন পুত্র নিয়ে সরাসরি আমেরিকা চলে যাওয়ার মত ঔদ্ধত্য দেখাবে না, যে বিদিশা কোর্টে গিয়ে নিপিড়নের মামলা ঠুকে দেওয়ার দুঃসাহস করবে না!



ঢাকা ও এর পাশ্ববর্তী অঞ্চল মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটির অধিক, সারা বাংলাদেশ বাদ দিয়ে যদি ঐ সমাবেশে ১২ লক্ষ জমায়েত হয়ে থাকে তবে তা এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ যারা জামায়েত ইসলামীর তথা মওদুদী ভাবাদর্শের সাথে একমত নয়, যদিও আমারা জানিনা এরা ভোট দেয় কিনা বা এদের ভোট জামাত ব্যতীত অন্য আর কার বাক্সে কত শতাংশ পড়ে । এই ৬ শতাংশ কি হঠাৎকরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো নাকি হঠাৎ করেই এদের জন্ম হলো? এদের চেতনা ও বিশ্বাস কি এতদিন অবদমিত ছিল যেগুলোর হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটলো ? এরা মতিঝিলের ঐ সামাবেশে নতুন কি কি দাবি উত্থাপন করলো? কোন আকাঙ্ক্ষাটি বাংলার আকাশে-বাতাশে ধ্বনিত হলো যা ইতিপূর্বে শোনা যায় নি!



সমাবেশে অংশগ্রহনকারীদের অধিকাংশই ১০ থেকে ৩৫ বছরের এবং এরা এত বছর ধরেই আমাদের সাথে সাথে ছিল এবং আছে, আমরা তাদের দেখেছি বাসে রেলে জাহাজে হাটে-বাজারে মার্কেটে রেস্টুরেন্টে স্টেডিয়ামে পার্কে খেলার মাঠে, এরা সব জায়গাতেই আমাদের সাথী কারন এরা আগুন্তক নয় এরা আমাদের স্বজন পিতা ভাই পুত্র শিক্ষক আমাদের বাড়ির মেহমান আমাদের সাথে মসজিদে নামাজ আদায়কারী একই টং-দোকান থেকে পান খরিদকারী । আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানেরা যাদের জন্য আমরা প্রান বিপন্ন করি সেই সব শ্রদ্ধেয় প্রধানদের সাথে পবিত্র রোযার মাসের প্রথম দিনটিতে তাদের আমরা দেখি । প্রায় সব আনুষ্ঠানেই তাদের সাথে আমরা উঠা বসা করি তাদের হাস্যোজ্জল মুখচ্ছবি আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে। মুসলিমরা সবচেয়ে ভয়ের স্হান জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এদের শরণাপন্ন হই, দোয়ার আয়োজন করি, জানাযায় তারা নেতৃত্ব দেয়, আমাদের ছেলে সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়। এদের কোন দল নাই এরা হুজুর( সম্মানিত,প্রধান) আর যাদের দল আছে তারা হুজুর নয় জামাত!



তাহলে হঠাৎ করে এই প্রিয় হুজুরেরা কেন কি কারনে আমাদের পাশ থেকে দলে দলে চলে গিয়ে মতিঝিলে সমবেত হলো, লিখলো গ্রিনিচ বুক অফ বাংলাদেশে নাম! এবং আমরাই আবার হয়ে গেলাম তাদের মুখোমুখি, কি এমন আশ্চর্য ছোঁয়ায় তাদের এমন উত্থান ঘটলো?

নাস্তিক ও মুরতাদের ধারনা পৃথিবী ও বাংলাদেশে নতুন নয় এমনকি ধর্মের চেয়েও এই ধারনাসমূহের উপস্হিতি প্রাচীন । ধর্ম তার শান্তির গ্রন্থের বিশ্বাসে সবাইকে অধিগ্রহণ করতে পারেনি তাই কিছু মানুষ রয়ে গেছে ধর্মের বাহিরে এবং এরা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ থেকে ২৭ ভাগ । মধ্যম পন্থীদের সাথে হুজুররা যেমন ছিল তেমনি এই নাস্তিক মানুষেরাও এই সমাজে এই দেশে এই পৃথিবীতে ছিলো । নাস্তিকরা বাংলাদেশে ৫-ই ফ্রেব্রুয়ারীর পর হঠাৎ জন্ম নেয়নি । তাহলে হুজুররা কেন এতদিন পর দেশের রাজনীতির তমসাচ্ছন্ন কালে মতিঝিলে নিজেদের অবস্হান জানান দিলো ? শত বছর ধরে হুজুররা যেমন আর্থসামাজীক বৈষম্যে ও নোংরা রাজনীতির শিকার আজকের এই বাংলাদেশেও তারা ঐ একই বিষয়ের শিকার, মতিঝিলের সমাবেশে হুজুরদের জীবন মানের উন্নয়ন বা ব্যক্তি স্বার্থের পূর্ণতার জন্য কোন প্রকার দাবি উত্থাপিত হয় নাই, যে দাবিগুলো উত্থাপিত হলো তা মূলত বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী রাজনীতিকদের পক্ষেই গেলো। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর বাংলাদেশ যখন তার অমীমাংসিত ন্যায় বিচারের হিসাব করা শুরু করলো,যখন বাংলাদেশ তার কলঙ্কিত অতীতের কবর রচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ায় উদ্যত তখন ধর্মকে সামনে এনে একটি ব্যুহ গড়ে তোলা হলো; ধর্ম এবং রাজনীতিকে দাড় করিয়ে দেওয়া হলো যুদ্ধংদেহী সামনাসামনি।



যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়াটি সামাজীক এবং রাজনৈতিক, যখন জামায়েত ইসলাম দোষী সাব্যস্ত যখন জামাতের দোষে বর্তমানের প্রধান বিরোধীদল ক্ষতিগ্রস্ত তখন খালেদা জিয়া আঙ্গুল তুললেন এই যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়ায় প্রহসনের শিকার এর সমর্থনকারীদের দিকে ; তিনি ছুড়ে দিলেন সেই মহা অস্ত্র যেটি পারমানবিক বোমার চেয়েও ভংকর যেটি প্লেগের চাইতেও অচ্ছুত, বি-২ ইস্টিল্থ বিমানের চেয়েও আতংকের যেটি বর্তমান সামাজীক বিচারে সবচেয়ে অগ্রহণীয় সেই "নাস্তিক" শব্দটি! আদালত ৪২ বছর পর বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু অপরাধীকে ফাঁসি দিয়েছেন বা দিবেন কিন্তু খালেদা জিয়া এক মিনিটেই হাজার হাজার মানুষকে ফাঁসি দিয়ে দিলেন, তিনি জানেন বাংলাদেশে নস্তিক তকমা ওয়ালাদের মৃত্যুদন্ড বা দেশান্তর দন্ড বা বয়কট দন্ডের অঘোষিত রেওয়াজ চালু রয়েছে। শেখ হাসিনা গং এর নোংরা রাজনীতির বিপরীতে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত খালেদা জিয়া ধর্মতন্ত্র দিয়ে জয়ী হতে চাইলেন ! যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ে ক্ষুব্ধ তারা বিচার প্রার্থীদের প্রতিহিংসামূলক ফাঁসির রায় শুনিয়ে দিলেন ! নাস্তিক শব্দটি হয়ে উঠলো একটি রাজনৈতিক শব্দ, একটি জিঘাংসার উচ্চারণ। যেটি শুনতে পেয়ে অনেকের মত এরশাদ সাহেবও লাফিয়ে উঠলেন, এই বুঝি আবার মওকা ফিরে পাওয়া গেলো!



কিন্তু যে তরুনদল জ্ঞান বিচার ও চেতনায় জাগ্রত তারা কি রাজনৈতিক শব্দমালায় ভয় করবে? তারা কি এমনটি কখনো করেছে ৫২ বা ৭১-এ ?শেষ বিচারে ঘুণেধরা রাজনৈতিক শব্দমালার আদৌকি কোন মূল্য আছে?



মতিঝিলের হুজুরদের দাবীর সাথে আমরা অতি পরিচিত, বাংলাদেশের ৫-৬ % ভোটের ইতিহাস ও আমরা জানি। এই হুজুররা ঘরে ফিরে যাবে তারা আবার আমাদের সাথেই উঠ-বস করবে দাওয়াত খাবে, আমাদের জন্য দোয়া করবে অতি নরম স্বরে কেননা এই হুজুররা আমাদের বাইরের কেউ নয়। আমি দেখেছি এই হুজুরের মা-ই গার্মেন্টসে চাকুরী করে এই হুজুরের বোনই দর্জি দোকান চালায় এই হুজুরের খালাই নারীদের সেলুনে কাজ করে; আমি দেখেছি এই হুজুররাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম জয়ী হলে আনন্দে লাফিয়ে উঠে এবং নিজেরাও বড় হুজুরের চোঁখ ফাকি দিয়ে এই খেলা খেলে । তারেক মাসুদের মাটির ময়নার প্রতিটি চরিত্র বাস্তব এবং এখনো বর্তমান । যদিও এই হুজুরেরা এই মহা দুর্নীতির দেশে এই বৈষম্যের দেশে সামাজীক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার। এই কোমল-মতি শিশু কিশোরদের সমাজ রেখে দিয়েছে শহর বা গ্রামের এক কোনে তারা মুখস্তের পর মুখস্ত করে যাচ্ছে তারা ইহলোকে কোন কিছুই যেনো তাদের পাওয়ার নাই তাদের সব সুখ শান্তি পরলোকের জন্য তোলা। তাদের আদর্শ খাবার নাই চিকিৎসা নাই আবাস নাই পোশাক নাই খেলাধুলার সুযোগ নাই। সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র তাদের জন্য কোন পাঠ্যসূচিও তৈরি করতে পারে নাই, তারা একই রকম ভাবে বেড়ে উঠছে তাদের কাজের কোন জায়গা নাই তারা বৃদ্ধি পাচ্ছে দলে দলে বছরের পর বছর ধ'রে । তাদের কাজের একমাত্র জায়গা হচ্ছে নতুন তৈরি হওয়া মসজিদ এবং মাদ্রাসা। মতিঝিলের সমাবেশ আমাদের কে সামাজীক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার ব্যর্থতার বিষয়টিও স্বরণ করিয়ে দিলো। জঙ্গীবাদ বৈষম্য ও দরিদ্রতা থেকেই প্রথমে শুরু। এই হুজুরেরা রাজনীতির শিকার তাদের রাজনীতির মাঠে ব্যবহারের জন্য বর্তমানে আরোপিত রাজনৈতিক শব্দটি হচ্ছে "নাস্তিক" কিন্তু হুজুররা নিশ্চই বুঝে শুনেই ৬-ই মার্চ মতিঝিলের অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফিরে গেছে।

রাজনীতির সুষম-ধারায় যারা বিশ্বাস আনতে ব্যর্থ হয়েছে যারা বাংলাদেশকে ব্যক্তি-স্বার্থে করে রেখেছে কুক্ষিগত যারা সুস্হ রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাসী নয় তারাই প্রকৃত পক্ষে "রাজনৈতিক নাস্তিক" বাংলাদেশে নেতিবাচক কোন উত্থান ঘটবে না, ঘটলেও তা এর সমাজ বাস্তবতায় টিকে থাকতে পারবে না। হুজুরেরা এই দুনিয়াতে রক্ত মাংসের মানুষ হয়েই বেঁচে থাক, পরকালের শান্তির লোভে কেউ যেনো তাদের হত্যাকারী ও আদিম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে বিপদের ভেতর ঠেলে দিতে না পারে । লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আর পিছনে ফিরে যাবে না, লাল সবুজের পতাকা উড়তেই থাকবে এর অগ্রযাত্রা রুখার শক্তি কারো নাই ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.