নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহান

হে বণী আদম!!! যাও এলেমের আঁচল শক্ত করে ধর, কেননা এলেম তোমাকে দারুল ক্বারার (জান্নাতে) পৌঁছিয়ে দেবে। __________শেখ সা'দী (রাহঃ)

আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শরীয়তের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা এবং তার শাস্তি

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৩৩

শুরু করছি মহান স্রষ্ঠার নামে যিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু।





পবিত্র কুরআন থেকে :

এবার চলুন যাওয়া যাক আত্মহত্যা সম্পর্কে আমাদের

শরীয়ত কী বলে?



ইসলামের দৃষ্টিতেআত্মহত্যা কবীরা গুনাহ।

শিরকের পর সবচে বড় গুনাহ। সকল ফিকহবিদ

এবং চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ,

আল্লাহ তা'আলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই

সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-

প্রজা সবাইকে মরতেই হবে। পবিত্র কুরআনে

ইরশাদ হয়েছে,



﴿ﻛُﻞُّ ﻧَﻔۡﺲٖ ﺫَﺍٓﺋِﻘَﺔُ ﭐﻟۡﻤَﻮۡﺕِۖ ﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻴۡﻨَﺎ ﺗُﺮۡﺟَﻌُﻮﻥَ ٥٧

﴾ ‏[ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ : ٥٧‏]

"প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে,

তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত

হবে।"{সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত : ৫৭}



আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই।

তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে

না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,



﴿ﻫُﻮَ ﻳُﺤۡﻲِۦ ﻭَﻳُﻤِﻴﺖُ ﻭَﺇِﻟَﻴۡﻪِ ﺗُﺮۡﺟَﻌُﻮﻥَ ٥٦ ﴾ ‏[ ﻳﻮﻧﺲ : ٥٦‏]

'তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান

আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন

হবে।' {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬}



উপরোক্ত আয়াতদুটি থেকে বুঝা যায় মানুষের

মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর।

অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে

নেন, নিজের মৃত্যু ঘটান নিজের হাতে তবে

তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা

পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা

করে না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপবলে

গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে

মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন

এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর

ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র

আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।আল্লাহ

রাববুল আলামীন বলেন,



﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢۡ ﺭَﺣِﻴﻤٗﺎ ٢٩ ﻭَﻣَﻦ

ﻳَﻔۡﻌَﻞۡ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻋُﺪۡﻭَٰﻧٗﺎ ﻭَﻇُﻠۡﻤٗﺎ ﻓَﺴَﻮۡﻑَ ﻧُﺼۡﻠِﻴﻪِ ﻧَﺎﺭٗﺍۚ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺫَٰﻟِﻚَ

ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺴِﻴﺮًﺍ ٣٠ ]﴾ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣٠ ،٢٩ ‏]

'আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।

এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে

তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যইআমি তাকে

অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।'

{সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০}




আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,



﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻠۡﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳۡﺪِﻳﻜُﻢۡ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﺘَّﻬۡﻠُﻜَﺔِ ﴾ ‏[ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ١٩٥ : ‏]

‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে

ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’

{সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫}



হাদীসে নাববী থেকে :



রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাই কাজটি থেকে নানাভাবে

বারণ করেছেন। এ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছেন।

যেমন :



ছাবিত বিন যিহাক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি

বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,



‏« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻋُﺬِّﺏَ ﺑِﻪِ ﻳَﻮْﻡَ

ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ‏».

‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে

নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন

তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা

হবে।’ [বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম : ১১০]



অপর এক হাদীছে রয়েছে,



আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,(সা.) বলেন,



‏« ﻣَﻦْ ﺗَﺮَﺩَّﻯ ﻣِﻦْ ﺟَﺒَﻞٍ ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ، ﻓَﻬْﻮَ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ

ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ، ﻳَﺘَﺮَﺩَّﻯ ﻓِﻴﻪِ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ، ﻭَﻣَﻦْ

ﺗَﺤَﺴَّﻰ ﺳَﻤًّﺎ ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ، ﻓَﺴَﻤُّﻪُ ﻓِﻰ ﻳَﺪِﻩِ ، ﻳَﺘَﺤَﺴَّﺎﻩُ

ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ

ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺤَﺪِﻳﺪَﺓٍ ، ﻓَﺤَﺪِﻳﺪَﺗُﻪُ ﻓِﻰ ﻳَﺪِﻩِ ، ﻳَﺠَﺄُ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻰ ﺑَﻄْﻨِﻪِ

ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ‏».

‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে

নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে

জাহান্নামেযাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে

নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবেঅনন্তকাল

ধরে।যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে,

সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে

সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে

থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনোধারালো

অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে

জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা

সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।

[সহীহ বুখারী :৫৪৪২; মুসলিম:১০৯]



আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,



‏« ﻣَﻦْ ﺧَﻨَﻖَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﻘَﺘَﻠَﻬَﺎ ﺧَﻨَﻖَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓِﻲ

ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻃَﻌَﻦَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻃَﻌَﻨَﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ، ﻭَﻣَﻦِ

ﺍﻗْﺘَﺤَﻢَ ، ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺍﻗْﺘَﺤَﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏» .

‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে

দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির

শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার

আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও

সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।আর যে

নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে,

কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে

নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।’

[সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১]



জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,



‏« ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﻪِ ﺟُﺮْﺡٌ ﻓَﺠَﺰِﻉَ ﻓَﺄَﺧَﺬَ

ﺳِﻜِّﻴﻨًﺎ ﻓَﺤَﺰَّ ﺑِﻬَﺎ ﻳَﺪَﻩُ ﻓَﻤَﺎ ﺭَﻗَﺄَ ﺍﻟﺪَّﻡُ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺕَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ

ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺑَﺎﺩَﺭَﻧِﻲ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﺑِﻨَﻔْﺴِﻪِ ﺣَﺮَّﻣْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ‏».

‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে

সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে

একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই

কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা

যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে

হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে

ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত

হারাম করে দিলাম।’

[বুখারী :৩২৭৬; মুসলিম:১১৩]



আত্মহত্যা তো দূরে থাক মৃত্যু কামনাও বৈধ নয়

আত্মহত্যা তো দূরের কথা আমাদের পবিত্র এই

শরীয়ত কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায়

কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ

করেছে। যেমনঃ



আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,—



‏« ﻻَ ﻳَﺘَﻤَﻨَّﻴَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻟِﻀُﺮٍّ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻪِ ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻻَ ﺑُﺪَّ

ﻣُﺘَﻤَﻨِّﻴًﺎ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﺣْﻴِﻨِﻰ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟِﻰ

ﻭَﺗَﻮَﻓَّﻨِﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﻮَﻓَﺎﺓُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟِﻰ ‏».

‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত

হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে

প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে

আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন,

যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য

কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন

যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’

[বুখারী : ৫৬৭১; মুসলিম : ৬৯৯০]



সর্বপ্রথম প্রকাশিত আমার ব্লগেঃ http://ibnezahan.mywapblog.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.