![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
( আমার লেখাটি ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়, লিংক Click This Link )
ভারতবর্ষ অতঃপর পাকিস্তান তারপর দীর্ঘ আটাশ বছরের মুক্তি সংগ্রাম। একটি স্বপ্ন পূরণের আন্দোলনে একজন মানুষের সমস্ত জীবন কাটে কারা প্রকোষ্ঠে। জীবনের সবটুকু দিয়ে এভাবে পৃথিবীর কোথাও কেউ লড়েনি আগে। ছড়িয়ে দেয়নি মানুষে মানুষে স্বাধীনতা আর বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। বাঙালি কতটা ভাগ্যবান হলে তাদের জীবনে বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একজন মানুষ জন্মলাভ করে। আর এ মানুষটি যখন একটি জাতির মুক্তিত্রাতা হয়ে উঠে, তখন সে জাতি পেয়ে যায় একটি স্বাধীন দেশ ‘বাংলাদেশ’। তাই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সবুজের বুকে লাল মিলে মিশে একাকার। এই দেশের মানুষের জয়োগানে তিনি বুকের উঠোন পেতে দিয়েছিলেন শৈশব থেকেই। টুঙ্গিপাড়ার কিশোর মুজিবর সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালিন সময়ে যোগ দেন স্বদেশী আন্দোলনে। আর যৌবনে হয়ে উঠলেন রাজনীতির কবি। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, ছয় দফা থেকে সংবিধান রচনা, এ জাতির সকল ইতিহাস বিনির্মাণ করলেন তিনি। এসব করতে গিয়ে বিনা বিচারে মাসের পর মাস কারারুদ্ধ থেকেছেন। কিন্তু পিছপা হননি, বরং ওই শোষণের নাগপাশ থেকে মুক্তির অনশন করেছেন। আর পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্র তাকে পুঁতে ফেলবার জন্য জেলের ভেতরেই কবর খুঁড়ে। বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা বই ’অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে’ উঠে এসেছে এসব বর্ণনা।
ভাষা সংগ্রামের উত্তাল সময় গুলোতে টানা দুই বছরের বেশি সময় জেলে বন্দি আছেন তিনি। না খেয়ে অনশন করছেন। কিন্তু চারদিন পর কর্তৃপক্ষ নাক দিয়ে খাওয়ানো শুরু করলো। এতে নাকের ভেতরে প্রচন্ড ঘা হওয়াতে রক্ত ঝরছে তার। তিনি লিখেছেন (পৃ: ২০৪) “যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর শান্তি ছায়ায় চিরদিনের জন্য স্থান পেতে পারি। ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন, ‘কাউকে খবর দিতে হবে কী না? আপনার ছেলে- মেয়ে ও স্ত্রী কোথায়? আপনার আব্বার কাছে কোনো টেলিগ্রাম করবেন? বললাম- দরকার নাই। আর ওদের কষ্ট দিতে চাইনা। আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল।” এভাবেই জীবন বাজি রেখে এদেশের অধিকারহীন, দেশহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এ অঞ্চলের জনগণের প্রতি তার আস্থা ছিল পর্বতসম দৃঢ়। অথচ সে মানুষগুলোই তাকে পঁচাত্তরে সপরিবারে হত্যা করে। জাতীয় সঙ্গীত বাজছে, নিজেদের পতাকা উড়ছে স্বাধীন ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে। আর বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টায় নিয়োজিত। ঠিক এমনই সময় ঘাতক চক্র তাকে নির্মম ভাবে খুন করলো। শুধু তাই নয়, হত্যাকাণ্ডের পরের ২১টি বছর ইতিহাস থেকে তার নাম নিশ্চিহ্ন করার জন্যে চলেছিল রাষ্টযন্ত্রের ঘৃণ্য কূটচাল। যে মানুষটি এ দেশটির জন্ম দিলেন, সেই দেশের সরকারি প্রকাশ মাধ্যমগুলোতে তার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। আর মনোজগত তৈরির সকল বিদ্যায়তনে দেয়া হতে থাকলো ইতিহাসের ভুল পাঠ। এটাই হল বাঙালির আদর্শগত দেওউলিপনা ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। ১৫ আগষ্টের ঘটনা কোনো নিছক অভূত্থান ছিলো না। এটা পরিষ্কার হত্যাৎসব। যা ছিল এ জাতির বিশ্বাস ঘাতকতা আর জাতীয়তাবাদের দ্বিচারীতার পরিণাম। শুধুমাত্র একজন সূর্যসন্তান ও তার সমস্ত শিকড় উপড়ে ফেলতে আর মুত্তিযুদ্ধের চেতনাজুড়ে ঘৃণার বিষবাস্প ঢ়েলে দিতে এ নারকীয় নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছিলো।
অকাট্য সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন যে দেশ ও দল নিয়ে গর্ব করতেন সেই দেশের মানুষ ও দলীয় নেতাদের একাংশ তার পরিবারের সঙ্গে চরম কাপুরুষতার পরিচয় দিল। তিনি শক্র-মিত্র বাছ-বিচার করেন নি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জিন বহন করা এদেশীয় অফিসারদের ভেতর যে ভারত বিরোধীতা রয়েছে তা তিনি অবহেলা করেছিলেন। জাতীয়বাদি সেই সামরিক চক্রটি পরে আওয়ামী সংস্কারবাদিদের সঙ্গে যড়যন্ত্রের জাল বুনেন, যার ফলাফল আগষ্টের রক্তপাত। তাদের প্রথম ম্যাকিয়াভিলিজম ছিল বঙ্গবন্ধু প্রাণে মেরে ফেলা। আর চমকপদ সমীকরণ হলো, সেই হন্তারকদের অনেকে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও রাজনৈতিক চেতনায় অন্তরালে ছিলেন, ঘোরতর রক্ষণশীল ও সাম্প্রদায়িক বাঙালি। তা না হলে তারা কিভাবে প্রাণের নেতার বুলেটে ঝাঁঝরা শরীর ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে ফেলে রেখে মোশতাক আহমদের কেবিনেটে শপথ নিলেন। আর যে মজলুম নেতা মাওলানা ভাসানি বঙ্গবন্ধুর মাথার হাত রেখে দোয়া করলেন, তিনিই আবার চালবাজ মোশতাক সরকারকে অভিনন্দন জানালেন। এ হলো বাঙালির রাজনৈতিক পতিতাবৃত্তি ও সুবিধাবাদিতার মৌলিক বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া আওয়ামী লীগ থেকে প্রতারিত নেতারা তখনকার ভূ-রাজনৈতিক আবহে একসময় গড়লেন “জাসদ”। ওই জাসদের একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধাচরণ করে তাকে ভারতের চর রুপে প্রচার করলো। আর জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারী সেনা মেজরদের সামরিক গোষ্ঠীটির হত্যাযজ্ঞের রসদ যোগালো। ৭৫ এর নভেম্বরে সেইসব কুশীলবরা খালেদ মোশারফের হাত ধরে আবার লিবিয়ায় পালিয়ে যায়। পরে ৭৮ এ সেনা ব্যারাকে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলটি খুনীদের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত বানিয়ে ওই হত্যার বৈধতাসহ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলো। সে সময়ের উর্দি পরা সামরিক রাষ্ট্রপ্রধানেরা আদালতে চলমান বিচারকার্য বন্ধ করেও স্বাধীনতার স্থপতিকে জনবিচ্ছিন্ন করলেন।
জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু বাঙালির মধ্যবিত্ত এ দ্বিমুখী মননের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল আমরা মুসলমান, আর একটা হল আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকা আমাদের রক্তে রয়েছে। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবেনা এবং বুঝবেনা ততদিন এদের মুক্তি আসবে না (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃঃ ৪৭)।’ মহামুতি শেখ মুজিবরের বড় ব্যর্থতা তিনি বাঙালিকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে ছিলেন, যা পরে তার নিজের এবং শেখ পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। সেদিনের ঘটনায় স্বাধীনতা বিরোধী ও মুজিবীয় উচ্ছ্বাসে লেফাফাধারী বাঙালি আত্মরক্ষরে নামে আত্মহননের পথ অবলম্বন করেছিলো। এদেশীয় উদার প্রগতিবাদী, উচ্চমার্গীয় বোদ্দা, আমলা ও শিক্ষক নেতারা যড়যন্ত্রকারী অনুঘটকদের সঙ্গে নিজেদের বুক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আগস্টের পট পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়ে ইত্তেপাকে সম্পাদকীয় লিখলেন। আর বাকশাল নেতা আতাউর রহমান খান ১৫ আগস্টকে “নাজাত দিবস” হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা করলেন। যে জাতির স্বাধীন মানচিত্র ও সার্বভৌমত্বের জন্য বঙ্গবন্ধু তার সর্বোচ্চ উৎসর্গ করলেন, আর ৭-ই মার্চে গণসূর্যের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কোটি মানুষের বুকে অনরনণ তুলে শুনিয়েছিলেন মৃত্যুহীন কবিতা ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সে অকৃতজ্ঞ জাতিই তার অনলবর্ষী কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দিলো।
সর্বগ্রাসী বাঙালি নিজ পিতার প্রাণ নাশের মাধ্যমে আত্মহননের যে পথে গেছে, তাতে নিজেরাই পড়লো আত্মপরিচয় সংকটের অতল গহরে। কিউবান বিপ্লবী ফিদেল কাস্ট্রো এ মহানায়ককে শ্রদ্ধাভরে বলেছেন, “আমি হিমালয় দেখি নি, কিন্তু শেখ মুজিব দেখেছি” সেখানে হতভাগ্য বাঙালি সে মানুষটিকে পেয়েও হারালো। এ জাতি বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিয়েছিল, মনে নেয়নি। এ জাতিগোষ্ঠীর রক্তে নদীর স্রোতের মত পাপ বয়ে চলে। চরিত্রে বিচরণ করে দ্বিমুখীতা, স্ববিরোধীতা আর পরম উৎপীড়ন। কিন্তু স্বাধীনতার পাঞ্জেরী শেখ সাহেব সব বৈষম্য ধর্ম-বর্ণ ভুলে কেবল একটি অসামপ্রদায়িক বাংলা গড়ার আন্দোলন করেছিলেন। মশালের মত নিজেকে দগ্ধ করে কি পেলেন তিনি, ঘাতকের নিক্ষিপ্ত বুলেট ছাড়া। আজো এ মানুষটিকে সব কিছুর ঊর্দ্ধে বিবেচনায় আনতে বাঙালির কঠিন কার্পণ্য। সর্বত্র চলে তার চরিত্র হণনের বিকৃত অপপ্রয়াস। সর্বশেষ কেউ আবার বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন এমন কটূক্তি করে জাতির সঙ্গে নির্মম পরিহাস করলেন। তাই এ মুহূর্তে আমাদের শপথ হোক মমত্ব ও আত্মসমালোচনার। পাশাপাশি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে আর কোনো বাঙালি যেন দ্বিধাবিভক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করা।
২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৮
ইফতেখার রাজু বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম। একজন বঙ্গবন্ধু একটি বাংলাদেশ এই অপ্রিয় সত্যি কথাটিই আমি বলতে চেয়েছি। আমাদের দেশে এখনো অসংখ্য মানুষ আছে যারা এই অকাট্য সত্যি কথাটা মন থেকে মানে না। তারা বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টির সঙ্গে অন্য যদু মধু জিয়া আর ভাসানির অবদান এক করে দেখে। বিভিন্নভাবে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। মশালের মত নিজেকে দগ্ধ করে কি পেলেন তিনি, ঘাতকের নিক্ষিপ্ত বুলেট ছাড়া। আজো এ মানুষটিকে সব কিছুর ঊর্দ্ধে বিবেচনায় আনতে বাঙালির কঠিন কার্পণ্য। সর্বত্র চলে তার চরিত্র হননের বিকৃত অপপ্রয়াস। সর্বশেষ কেউ আবার বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন এমন কটূক্তি করে জাতির সঙ্গে নির্মম পরিহাস করলেন।
৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩০
দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: পাকিস্থান পরশ্রীকাতর দেশ । ওদের আত্মজ্ঞান কখনই হবে না । ভাললিখেছ
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭
ইফতেখার রাজু বলেছেন: ভাই , আমার এ লেখায় পাকিস্তান পরশ্রীকাতর দেশ এমন কোনো তথ্য আসেনি। লেখাটি বরং বাঙালিদের চারিত্রিক বিশ্লেষণ। আমরা কেন বঙ্গবন্ধুকে সহ্য করতে পারি না তা নিয়ে। তার অবদান মেনে নিতে এতো কার্পণ্য কেন আমাদের? আমি লিখতে চেয়েছি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও তাকে ঘিরে আমাদের নোংরা রাজনীতি। তাকে বাঙালির সূর্য সন্তান হিসেবে স্বীকার না করাটা আমাদের জন্য কতটা অমর্যাদাকর তা বুঝাতে চেয়েছি আমি। লেখাটি পড়লে উপকৃত হবো।
৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৬
দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: বঙ্গবন্ধুকে তারাই সহ্য করতে পারে না ,যারা পাকি পন্থি ।
৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩
ইফতেখার রাজু বলেছেন: বঙ্গবন্ধু সারাজীবন যে দেশ ও দল নিয়ে গর্ব করতেন সেই দেশের মানুষ ও দলীয় নেতাদের একাংশ তার পরিবারের সঙ্গে চরম কাপুরুষতার পরিচয় দিল। তিনি শক্র-মিত্র বাছ-বিচার করেন নি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জিন বহন করা এদেশীয় অফিসারদের ভেতর যে ভারত বিরোধীতা রয়েছে তা তিনি অবহেলা করেছিলেন। জাতীয়বাদি সেই সামরিক চক্রটি পরে আওয়ামী সংস্কারবাদিদের সঙ্গে যড়যন্ত্রের জাল বুনেন, যার ফলাফল আগষ্টের রক্তপাত। তাদের প্রথম ম্যাকিয়াভিলিজম ছিল বঙ্গবন্ধু প্রাণে মেরে ফেলা
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: দারুণ লিখেছেন জাতির জনককে নিয়ে।খুব ভালো লাগল লেখাটি পড়ে।কিছু অজানা ও বিতর্কিত তথ্য আসছে লেখাটিতে।আমার অত গভীরভাবে জানা নেই সেগুলো।