নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বো-লোগার

ইফতেখার রাজু

বো-লোগার

ইফতেখার রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্যারিসে হামলার বীজ বপণ করেছিল ফ্রান্স নিজেই

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫

আমার লেখাটি ভোরের কাগজে প্রকাশের লিংক : (Click This Link)
ইউরোপের সূতিকাগার ফ্রান্স ভূমধ্যসাগরের সুপেয় পানির লোভ সংবরণ করতে না পেরে আফ্রিকার মরুদেশ লিবিয়ায় গাদ্দাফির গদিতে আগুন ধরাতে কঠিন এক যুদ্ধের অবতারণা করেছিলো। মধ্যপ্রাচ্যে জায়নবাদ জিইয়ে রাখতে, ইহুদিদের অন্যায় ভূখন্ডের দাবিপূরণে ইসরাইলের পক্ষ হয়ে ফিলিস্তিনের অবিসংবাদীত পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাতকে ওষুধে বিষ মিশিয়ে নির্মমভাবে হত্যার কূটকৌশল বুনেছিলো দেশটির সে সময়কার ত্রাণকর্তারা। ২০০৬ সালে পবিত্র ঈদের দিন মধ্য এশিয়ায় পরমাণু অস্ত্রের মিথ্যা দোহাই দিয়ে গ্রেপ্তারকৃত স্বাধীন ইরাকের কিংবদন্তী শাসক সাদ্দাম হোসেনকেও ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর দায় এড়াতে পারেননি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক সিরাজ। পশ্চিমা এ দেশটির বর্তমান সরকার প্রধান ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ আজও সিরিয়ায় বাসার আল আসাদকে উৎখাতের নাম করে প্রতিদিন শতশত নিরীহ সিরীয় মানুষ হত্যা করে চলেছে। এভাবে পৃথিবীর মুসলীম অধ্যূষিত দেশগুলোতে ইসলামী সন্ত্রাস নির্মূলের ভুয়া কারণ দেখিয়ে একের পর এক মরণযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলো ফ্রান্স। আর সেসব রণযুদ্ধে বহু মুসলিম শাসক ও অসংখ্য বেসামরিক জনগণকে হত্যার কাজ অত্যন্ত সুকৌশলে সুসম্পন্ন করেছে। পরে সেখানে নিজেদের আজ্ঞাবহ পুতুল সরকার বসিয়ে সেসমস্ত দেশ হতে তেল-পানি-গ্যাস-স্বর্ণ আর পেট্রোলিয়াম হরিলুট করেছে। অত:পর সব যুদ্ধ ও পুঁজিবাদী টেকনিকাল সকল লুটের ঘটনাকে নিজেদের প্রপাগান্ডা মেশিনে প্রচার চালিয়ে নিজেদের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলেছে পশ্চিমা এ দেশটি।

দেশ থেকে দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে ভূখন্ড ও সম্পদ দখলের এ আধিপত্যবাদী চরিত্র ইউরোপের এ দেশটির বহু পুরনো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকে আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক দেশকে একক ক্ষমতাবলে একসময় ফ্রান্স নিজেদের কলোনিতে রুপান্তর করেছিলো। ১৫৬৮ সালে দেশটি আমাদের এ অঞ্চলেও অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসার নাম করে এসেছিলো, পরে অবশ্য পশ্চিমের তাদের আরেক জ্ঞাতি ভাই বৃটিশদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১১ সালে আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়া যে দেশটি একসময় তাদের উপনিবেশ ছিল, সেখানে গণজাগরনের নাম করে বেন আলী সরকারকে উৎখাত করার মাধ্যমে হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিল। সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারে, কালচারাল হেজিমনি প্রতিষ্ঠায় আর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট রাখতে এরকম বহু ঘৃণ্য ম্যাকিয়াভিলিজম চর্চার অভিযোগ রয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে। মানবতার বিরুদ্ধে জগন্যতম সেসব অপরাধ নিজেরা করেছে অথচ ধুন্ধুর কূটনীতির জালে ফেলে সে দায় চাপিয়েছে বিশ্ব জঙ্গিবাদের ঘাড়ে।

মধ্যপ্রাচ্যের তেল আর অলংকার শিল্প দখলে নিতে ফ্রান্স ও পশ্চিমা কর্পোরেট দুনিয়া ইসলামকে দাঁড় করিয়েছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সমান্তরালরুপে। নিজেদের নাক কেটে ইসলামের যাত্রা রুখতে তালেবান, আলশাবাব, আলকায়দার পরবর্তী সংস্করণ ‘আইএস’ নামক ভাইরাস ছড়িয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশগুলোতে। তবে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সৃষ্ট সেই ঘাতক ভাইরাসে শেষ পর্যন্ত আজ তারা নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মরণঘাতি হামলার ঘটনায় ১২৯ ব্যক্তি নিহত হন, আহত হয়েছেন আরো ৩৬২ জন। প্যারিসের কনসার্ট হল, বার, ও পানশালায় এসব হামলায় অংশ নেন আট আইএসপন্থি উগ্রমনা। হামলার কয়েক মাস পরে অবশেষে গত সোমবার আইএস অনেকটা দায়িত্ব নিয়েই হামলায় অংশ নেয়া সেসব জিহাদিদের ছবিও প্রকাশ করেছে। আর তাতেই ভীতসন্ত্রস্ত ওলাঁদের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা প্রশাসন। জরুরি অবস্থা চলছে সেখানে, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী টহল দিচ্ছে পাতাল ট্রেন, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে আর ব্যস্ততম হাইওয়েগুলোতে বসানো হয়েছে তল্লাশি চকি। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব সীমান্ত দ্বার। এদিকে ভয়ানক এ হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন আমেরিকা-বৃটেন-জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধানরা, প্রকারান্তে এরাই যে এই অভিনব ‘আইএস ডিসকোর্স ও ফলশ্রুতিতে শুক্রবারে প্যারিসে জঙ্গি হামলার মূল ক্রিড়ানক।

তাই বিশ্বনেতাদের মায়াকান্নার বিষয়টি অনেকটা বাংলা প্রবাদের মতো- সাপ হয়ে কামড়ায় ওঁঝা হয়ে ঝাড়ে। অত্যন্ত সুকৌশলে বারাক, ক্যামেরন আর মার্কেল জোট আইএস জুজুর ভয় দেখিয়ে ফ্রান্সকে কুপোকাত করে দিল। কারণটিও খুব পরিষ্কার ছিল, কিছুদিন আগে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র দপ্তর নিভৃতে রাশিয়ার সিরিয়া আক্রমণকে সমর্থন দিয়েছিল। আর তাতেই ফরাসী নাগরিকদের এত বড় একটি ম্যাসাকার নগদে হজম করতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ বেমালুম ভুলে গেছেন, আমেরিকার যে শত্রু হয়, তাদের কোনো বন্ধু থাকতে নেই। আর ফ্রান্স সরকার সে সত্য কথাটি লুকিয়ে সেদেশের নাগরিকদের গিনিপিগ বানিয়েছে। তাই এতগুলো মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ইইউভূক্ত দেশ ইতালিতে ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠী হামলা চালিয়ে ৮৫ জন খ্রিষ্টানকে হত্যা করেছিল। পরে ইউরোপের বৃটেন, স্পেন ও নরওয়েতে বিভিন্ন সময়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ডে অনেক লোক মারা যায়। তবে ফ্রান্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই সর্বোচ্চ ধ্বংসাত্মক আক্রমন, যেখানে একই সময়ে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জঙ্গি হামলা চালানো হয়। মেশিনগান, বোমাসহ আত্মঘাতী হামলার ঘটনা এমন সময়ে ঘটে যখন দেশটির একটি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স-জার্মানি ফুটবল ম্যাচ চলছিল, পাশে অন্য এক জনাকীর্ণ স্থানে চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড ঈগলসের গানের কনসার্ট যেখানে বহু বর্ণের মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। ঠিক এমন সময়ে এ ধরণের একটি রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা আজ পশ্চিমাদের বিশ্বায়নের ধারণার জন্য একটি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

এদিকে ঘটনার এমন আন্তর্জাতিকায়নে নিহতের পরিবারের পাশাপাশি গোটা ফ্রান্সবাসীর জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত হতে মানুষ সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানিয়েছে। সেটাই সমীচীন, কিন্তু যদিও ফ্রান্সসহ ইউরোপের নাগরিকরা কখনো ইইউর মুসলীম আগ্রাসী যুদ্ধাবাজ নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি। বরং অন্ধের মতো ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে আনিত সকল ষড়যন্ত্রতন্ত্র ও মতবাদ সেখানকার লোকেরা চোখ বুজে বিশ্বাস করেছে। ফ্রান্সের ফাইটার বিমান থেকে ছোঁড়া বোমায় অকাতরে মুসলিম নারী-শিশু প্রাণ দিয়েছে, অনেক শিয়া-সুন্নীবেষ্টিত ভূখন্ড পুড়ে ছাই হয়েছে। ইতিহাসের সেসব ঘটনায় ফ্রান্সবাসী মুসলিম বিশ্বের পাশেতো দাঁড়ায়নি, বরং মনে প্রাণে মুসলমানকে শত্রু মনে করেছে ফরাসী সভ্যরা। ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের উন্নত সমাজ সর্বদা মার্কিনীদের ‘খ্রিষ্টইজমতন্ত্র’ অবিবেচনাপ্রসূত গোগ্রাসে গিলেছে। আর বাদ বাকি ইসলামী বিশ্বকে অহেতুক নিজেদের প্রগতির পথের মাইন ভেবে একের পর এক যুদ্ধে নেমেছে। তবে প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে, সময়ভেদে তা বহুক্রিয়ায় রুপান্তরিতও হয়ে থাকে। আর ফ্রান্সে ঘটিত এহেন সন্ত্রাসীযজ্ঞ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেটাই ইঙ্গিত করেছে।

যাইহোক, কিছুদিন আগে লেবাননেও এক হামলায় অন্তত ৪০জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। একই সময়ে আফগানিস্তানে ১০টি মস্তকবিহীন শিশুর লাশ পাওয়া গিয়েছে। উভয়ই হামলার দায় স্বীকার করে কথিত ‘আইএস’ ভিড়িও বার্তা দিয়েছে। কিন্তু সেসময় সচেতন বিশ্ববাসীকে এতটা মানবিক হতে দেখা যায়নি, যেমনটা প্যারিস হামলায় দেখা গেছে। প্যারিস আক্রান্ত হয়েছে তাই লাল-নীল বর্ণে ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগের টাইম লাইন আর টুইট পেইজগুলো। তবে মনে রাখা জরুরি মৃত্যু কখনো মসজিদ-গীর্জার মাঝে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করে না। কেবল মৃত্যুই পারে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিতে। তাই খ্রিষ্টান জাতি সন্ত্রাসী থাবায় বিধ্বস্ত হলে আমাদের মন যেভাবে বেদনাকাতর হয়, ঠিক তেমনি ফিলিস্তিন আর আফগানিস্তানে পাশ্চাত্যের ছোঁড়া গোলার আঘাতে মুসলিম সম্প্রদায় নিধনেও সভ্য সমাজের চোখে জল থাকা চাই। মানুষের পরিচয় কেবল মানুষ, কোনো ভূখন্ড কিংবা কোনো ধর্ম-মতাদর্শ তার পরিচয় হতে পারে না। তাই পৃথিবীতে সব সম্প্রদায়কে সমানভাবে সবার প্রতি সমমানবিক হতে হবে। পাশাপাশি সব যুদ্ধ আর সাম্রাজ্য দখলের লড়াই রুখে দেবার জন্য মানবজাতিকে যথেষ্ট সহনশীল ও তাদের সংস্কৃতির আরো বেশি পরিশীলিত বিনির্মাণ করতে হবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পশ্চিমাদের তাদের শত বছরের মিথ্যার দায়তো চুকাতে হবেই।

এটা কোন ধর্মীয় আবেগর বা শাপান্তের কষ্ট নয়.. বরং প্রাকৃিতক বাস্তব। নিউটনের সূত্রানুসারেই সেই বিপরীত ক্রিয়া ক্রিয়াশীল হবে.. যে নামেই হোক বা যে ধরনেই হোক!
++

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১০

ইফতেখার রাজু বলেছেন: পশ্চিমা মিথ কতটা মানবতা ও সুন্দর পৃথিবীর জন্য সেই প্রশ্নের উত্তর শতাব্দি অবধি ঝুঁলে আছে বিশ্বদরবারের গলায়। যার বগল যতবেশি বাজে, সেটাই সত্যি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আর সত্য ও সুন্দর থেকে যাচ্ছে লাম্পট্যের দখলে। অভাবের সবকিছু ভেঙে পড়ছে..গরীবের উঠানে, আর সুন্দরের শকুন নৃত্য করছে পাশ্চাত্যের পায়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.