নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা-কালো

একই রকম ভিতর-বাহির . . . . .

ঈমানদার পাপী

কখনো কখনো পাপ করলেও ভন্ডামি কখনোই করিনা তাই আমি ঈমানদার পাপী . . . .

ঈমানদার পাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরল বিশ্লেষণঃ সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলন ও সুশীলদের ভূমিকা এবং কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা

২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫১

এক.

দিনদিন শাহবাগ চত্তর খ্যাতির শিখরে আরোহন করছে। গনতান্ত্রীক-অগনতান্ত্রীক, যৌক্তিক-অযৌক্তিক সকল আন্দোলন আবর্তিত হয় শাহবাগ চত্তরকে কেন্দ্র করে এবং এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা ‘তাহরির স্কয়ার’ এর ইস্যুর সঙ্গে মিল না থাকলেও কিছুটা অনুকরণ হয়ত আছেই।



সম্প্রতি এমন দুইটি আন্দোলনে শাহবাগ ধন্য। দুইটা’ই দাবী আদায়ের আন্দোলন হওয়া সত্তেও মিডিয়া ও সুশীল সমাজের অবস্থান শুধূ ভিন্ন’ই নয়, পুরোপুরি বিপরীতমূখী।



কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সুশীল সমাজের একাংশ নিশ্চুপ এবং অপর অংশের অবস্থান বিপক্ষে। সুশীল সমাজের মতে বিশেষ করে মুক্তযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন মানে প্রগতিশীলতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, এই আন্দোলনকারী ও সমর্থকরা জামাত শিবির অথবা তাদের পৃষ্ঠপোষক। কি হাস্যকর বিষয়!



কোটা বিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই অধিকাংশ মিডিয়া এমন খবর প্রচারে সরব যে শাহবাগ অবরোধের দরুন ঢাকা শহর যানজটে অচল, সাধারন জনগণের দূর্ভোগের অন্ত নাই। ইতিহাস ঘেটে তারা এমন তথ্যও আবিষ্কার করেছেন যে পূর্বে কখনো’ই ঢাকায় এমন যানজট সৃষ্টি হয়নি।আজব ব্যাপার! গণজাগরন(!) মঞ্চ যখন টানা তিন মাস শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করেছে তখন এই মিডিয়া’ই নিরুঙ্কুশ সমর্থন ও পক্ষে প্রচারনা চালিয়েছে। সেই সময় কি ঢাকায় যানজট সৃষ্টি হয়নি! সাধরন মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হয়নি!



সমাজের দর্পন হিসাবে মিডিয়া যেকোন আন্দোলনের যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করতে পারে কিন্তু পক্ষপাতমূলক অবস্থান নেওয়া হতে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়। সত্য তুলে ধরার মাধ্যম হিসাবে আমাদের মিডিয়া কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি বলে’ই প্রতীয়মান হয়।



এবার আমাদের সোনার ছেলেদের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত না করলে অন্যায় হবে। তারা সোনার বাংলার সোনার ছেলে। হাজারো দায়ীত্ব কর্তব্য তাদের ঘাড়ে। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের দমনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। পুলিশ মারে দেড়হাতি লাঠি দিয়ে, সোনার ছেলেরা মারে বাঁশ দিয়ে।



আর সোনার ছেলেদের একাংশ “আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান” নামক একটি সংগঠনের মতে যারা মুক্তিযোদ্ধা ও নারী কোটা বাতিল চায়, তারা সাধারণ ছাত্রের নামধারী জামায়াতের দোসর এবং কারও অযৌক্তিক দাবির মুখে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দিলে সারা বাংলার মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা কখনোই সেটি মেনে নেবে না। এমন কথা বলে তারা কার্যত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাধারন শ্রমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের সম্মান হানি করছে। একমাত্র শ্রমিক তার শ্রমের মুজুরী বা প্রাপ্য দাবী করে।



কারনে অকারনে, মতের অমিল হলেই এরা অবলিলায় যে কাউকে রাজাকার অথবা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি অথবা জামাত শিবির নামকরন করে। কথায় কথায় মূল্যবোধ আর চেতনার কথা বলে এরা মূলত মুক্তযুদ্ধ ও স্বাধীনতা কে ভীষন সস্তা বিষয়ে পরিনত করছে। জর্জ বুশের সাথে এদের চিন্তা ভাবনার অসম্ভব মিল- “তুমি আমার সাথে নেই মানে তুমি আমার শত্রু, এর মাঝামাঝি বলে কিছু নেই”।



দুই.

সাম্প্রতীক সময়ে সর্বস্তরে চাকরীক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। কেউ পক্ষে বলছেন, কেউ বিপক্ষে বলছেন আবার কেউ কোটা পদ্ধতি সংশোধনের কথা বলছেন। নিবিরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় অধিকাংশ মতামত আবেগ নির্ভর। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আমরা যারা অতি উচ্চমাত্রায় প্রগতিশীল তাদের আবেগের অন্ত নাই।



বঞ্চিত এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অনগ্রসর অংশ’র জন্য কোটা পদ্ধতি অধিকার। কোন দাবী বা প্রাপ্য তখনি অধিকার হিসাবে বিবেচিত হয় যখন তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি অথবা আইনগত ভিত্তি থাকে। অন্যথায় আবেগতাড়িত হয়ে অন্যায় কোন দাবী প্রতিষ্ঠা করলে প্রজাতন্ত্রের সাধারন নাগরিকের বঞ্চিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ও ভেদাভেদ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জল হয়।



মনের দ্বিধা-দন্দ নিরসনে শুরুতেই কোটা পদ্ধতি এবং এর যৌক্তিকতা ও ভিত্তি নিয়ে আলোকপাত করা বাঞ্চনীয়। অন্যথায় আমজনতার প্রতিনিধি হিসাবে নিজে তৃপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাই।



সাধরনভাবে “পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী” ও “অনগ্রসর অংশ’ কে এক’ই সমান্তরালে প্রতিষ্ঠিত করার একটি যৌক্তিক এবং কার্যকর উপায় চাকরীক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি।



মহান সংবিধানে নাগরিকের সমঅধিকার ও যৌক্তিক ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে একাধিকবর বলা হয়েছে। ২৮(২) অনুচ্ছেদে “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন”, ২৮(৪) অনুচ্ছেদে “নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না”, ২৯(১) অনুচ্ছেদে “প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে”, ২৯(২) অনুচ্ছেদে “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না” এবং ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদে “নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না” এমনটা’ই বর্নিত আছে।



এছাড়ও সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে “আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে”



অর্থাৎ সম সুযোগ নিশ্চিত করনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র সকল নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এখানে আবেগের কোন স্থান নাই, মূল কথা হলো ন্যায় বিচার।



উপরোক্ত আলোকপাত থেকে এটা বলা’ই যে, চাকরীক্ষেত্রেঃ

(১) উপজাতি কোটা একটি যুক্তিসম্মত ব্যবস্থা। অস্বীকার করার কোন উপায় নাই- আদিবাসী অথবা উপজাতীরা ক্ষুদ্র জাতিসত্বা হওয়ায় তারা সুবিধা বঞ্চিত অথবা আমরা তাদের অধিকার খর্ব করেছি প্রতিনিয়ত। আমরা তাদেরকে কখনোই মূল ধারায় বিবেচনা করি নাই। এছাড়া তারা ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের “অনগ্রসর অংশ”র অধিবাসী।



(২) নারী কোটা সংবিধান পরিপন্থী নয়। পুরুষ শাসিত সমাজে যুগ যুগ ধরে আমাদের নারীরা কাংক্ষিত পর্যায়ে ক্ষমতায়িত হতে পারেন নাই। আমরা নারীদেরকে পুরুষের সাথে সমান তালে অগ্রসর হতে দেই নাই বিধায় নারীরা এখনো “পিছিয়ে পড়া” জনগোষ্ঠীর কাতারেই পড়ে। কিছু নারী স্বমহিমায় উজ্জল সেটা ভিন্ন কথা কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমাদের নারীরা অনেকাংশেই পিছিয়ে।



সেই হিসাবে সমাজে ভারসাম্য অর্জনে এবং ভেদাভেদ নিরসনে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যৌক্তিক হারে নারী এবং উপজাতী আথবা আদিবাসীদের জন্য কোটা পদ্ধতি চলমান রাখা যেতে পারে।

তারপরেও নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সূযোগ থেকেই যায়। যেখানে দেশের যুবকদের সিংহভাগ চাকুরী এবং কর্মহীন সেখানে নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ কতখানি যৌক্তিক এবং ফলদায়ক তা বিবেচনার দাবী রাখে বলে আমার অনুধাবন। দেশের উন্নয়নে নিঃসন্দেহে নারীদের ভূমিকা কাম্য এবং কর্মসংস্থান একটি অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এটা ভাবা যেতেই পারে, যে যুবকদের বেকার রেখে নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ সেইসব যুবকদেরকে এই কোটা পদ্ধতি বিপথে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে কিনা! আপনারা একমত হবেন যে নারীদের বেলায় এমন ঘটার সম্ভাবনা অনেক কম। যাই হোক তারপরেও নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ মেনে নেওয়া যায় যদিও পুরুষরা বঞ্চিত হতে পারে। কিন্ত সামগ্রিকভাবে গোটা দেশের মানুষ বঞ্চিত হবেন না, কারন নারী মানে নির্দিষ্ট কোন পরিবারের নারী না।



(৩)জেলা কোটা একটি অন্যায় ব্যবস্থা। ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদে “অনগ্রসর অংশ”র কথা বলা হয়েছে এবং জেলা’কে ‘অংশ’ হিসাবে বিবেচনা করা যৌক্তিক হবেনা বলেই আমার অভিমত।



(৪) মুক্তিযোদ্ধা কোটা কোনভাবেই বিধিসম্মত ব্যবস্থা নয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে জাতীর শ্রষ্ঠ সন্তান। তাঁদের অসীম সাহস, ত্যাগ আর বীরত্বে পৃথীবির বুকে আজ আমরা মাথা উঁচু করে স্বাধীন দেশের নাগরিক। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব, তাঁরা নিশ্চই বাক্তি স্বার্থের জন্য দেশ স্বাধীন করেন নাই। দেশ ও দশের জন্য অপরিসীম অবদানের জন্য তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। গরীব, অসহায়, পঙ্গু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাগণকে আর্থিক সহযোগীতা করা যেতে পারে। তাই বলে তাঁদের উত্তরাধিকারীদের জন্য চাকরীক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষন কোনভাবেই যৌক্তক নয়। বরং এটা সংবিধান পরিপন্থী, এতে মৌলিক মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয় এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য বিনষ্ট হয়। সংবিধানে এমন কোন অনুচ্ছেদ অথবা ধারা নাই যেখানে মুক্তিযোদ্ধাগণকে ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী’ অথবা ‘অনগ্রসর অংশ’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। বরং মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সূর্য সন্তান। তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কিভাবে আইনসম্মত এবং সমর্থনযোগ্য হয় !!



মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এমনকি তাঁদের নাতি-পুতিদের জন্য কোটা সংরক্ষন শুধু একটি হাস্যকর ও অযৌক্তিক বিষয়’ই না বরং অন্যায়ও বটে। সরকারী চাকুরীতে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীদের জন্য শতকরা ৩০ টি আসন সংরক্ষন করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।



এমন অবস্থায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ব্যাতিত সকল অবস্থায় সাম্প্রতীক কোটা বিরোধী আন্দোলন যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য বলে’ই আমার অভিমত।



সবশেষে “জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো” এবং “বৃক্ষের পরিচয় ফল’এ”- এই মন্ত্রেই মূল্যায়িত হোক সকল মেধা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০২

শাহরিয়ার রিয়াদ বলেছেন:
কোটা প্রথা বাতিল নয় বরং যৌক্তিক সংস্কার অবশ্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই ব্যাপারে সরকার আন্দোলনটিকে সৎ ভাবে বিচার না করে অযথা কাঁদা ছোড়াছুড়িতে ব্যাস্ত।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০৭

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: এত কথা বলে কাম নাই, আমি নতুন কোটা চাই, কুত্তা লীগ কোটা

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:৫৩

কি বোর্ড বলেছেন: এত কথা বলে কাম নাই, আমি নতুন কোটা চাই, কুত্তা লীগ কোটা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.