রাজিবের "থাবা বাবা” ব্লগের সন্ধান চাই

১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৬

ব্লগার রাজিব হায়দার শোভন হত্যার ক্লু এখনো আমাদের আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বের করতে পারছেনা। এদিকে রাজিব হত্যার পর তাকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরী হয়েছে তারও কোন অবসান হচ্ছেনা। রাজিব হত্যাকান্ডের রাতেই চ্যানেল আই’র নিউজ স্ক্রলে দেখলাম শাহবাগ আন্দোলনের রূপকার ব্লগার রাজিব নৃসংশ ভাবে খুন। রাজিব "থাবা বাবা” নামে ব্লগ লিখত। এই খবর পরের দিন অনেক পত্রিকাতেও দেখেছি। রাজিব নিহত হবার পর আমারদেশ পত্রিকাতে "থাবা বাবা” ব্লগের স্কিনশট সহ কয়েকটি পোস্ট প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইট গুলোতেও ব্যাপক ভাবে প্রচার পায়। এই সুযোগে বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও ওলামা-মাশায়েখ বৃন্দ শাহবাগ আন্দোলনের ব্লগার কতৃক আল্লাহ, রাসুল(সাঃ) কে অবমাননার প্রতিবাদে সোচ্ছার হন এবং আল্লাহ, রাসুল(সাঃ) কে অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবীতে গত শুক্রবার বাদ জুম্মা দেশের সকল মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষনা করেন। গত শুক্রবারের ওলামা-মাশায়েখ, ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন কালে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে গাইবান্ধায় ৩ জন, সিলেটে ১ জন, ঝিনাইদহে ১ জন এবং শুক্রবার সিলেটে পুলিশের গুলিতে আহত গতকাল আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পতাকা পোড়ানো, শহীদমিনার ভাঙচুর, গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর সহ অনেক ধ্বংসাত্বক, শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আইনানোগ ব্যবস্থা এবং কঠোর বিচার করা যায় । তা না করে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা কোনভাবেই সমর্থন করা যায়না। বিক্ষোভে বাঁধা এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে গত রবিবার হরতাল আহবান করে। সেই ঢিলেঢালা হরতালেও মানিকগঞ্জে ৫ জন নিহত। আল্লাহ, রাসুল(সাঃ) কে অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবীতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১২ জন মানুষ প্রাণ হারালেন। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী নিহত রাজিবের বাসায় গিয়ে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, শান্তনা দিয়েছেন। আল্লাহ, রাসুল(সাঃ) কে অবমাননাকারীদের শাস্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে ১২ জন মানুষ প্রাণ হারালেন তাদের বাসায় আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী গিয়েছেন? যতদূর জানি নিহত একজন শিবিরের কর্মী আর বাকী সবাই সাধারণ জনতা ছিলেন। সরকার ওলামা-মাশায়েখদের আন্দোলন কে জামাত-শিবিরের কাজ বলে আরো কঠোর হচ্ছে এবং তাদের দমন করতে গিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। অথচ আন্দোলনকারী ইসলামী দল ও তাদের নেতারা কট্টর জামাত বিরোধী। ব্লগার রাজিবের হত্যকান্ড কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না তদ্রুপ বিক্ষোদ্ধ জনতাকে গুলি করে জঘন্যতম, চরম মানবিকতা বিবর্জিত হত্যাকান্ড মেনে নেওয়া যায় না। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের সরকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে, সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। ব্লগার-তরুনরা তাদের দাবীর পাশাপাশি কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, ব্যংকের বুথ ভাংচুর করছে। আমাদের আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠি,গুলি, টিয়ার গ্যাস তো দূরের কথা-উল্টো জামাই আদরে তাদেরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে আর আল্লাহ, রাসুল(সাঃ) কে অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে!!! ৯০ ভাগ মুসলমান বসবাসকারীর দেশে এটা কি সম্ভব? এটা আমাদের আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৈত্ব নীতি নাকি ক্ষিবর্জিত নীতি? প্রাণের মূল্য সবার কাছেই সমান । ব্লগার রাজিব মানুষের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে, রাজিবের শরীরে যেরকম রক্ত আছে তদ্রুপ যারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে তারাও মানুষের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে, তাদের শরীরেও রাজিবের মত রক্ত রয়েছে।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- রাজিব যেখানে ব্লগ লিখত সেই ব্লগ পোস্ট গুলো প্রকাশ করছেনা কেন সংশিল্ট ব্লগসাইট এবং ব্লগাররা? রাজিব থাবা বাবা, নাঙাবাবা, ছাগু- যেই নামেই ব্লগ লিখুক তা প্রকাশ করতে হবে। যদি প্রমাণিত হয় পত্রিকায় প্রকাশিত ব্লগপোস্ট এবং স্কিনশট নিহত রাজিবের না তাহলে এরকম স্পর্শকাতর লেখা প্রকাশ করে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে, আন্দোলন-বিক্ষোভের সময় হতাহতের ঘটনার বিচার করতে হবে এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এবং আন্দেলনকারী ব্লগাররা যদি পত্রিকায় প্রকাশিত ব্লগপোস্ট এবং স্কিনশট নিহত রাজিবের না, এটা প্রমাণ করতে না পারে তাহলে এরকম জঘন্য হত্যাকান্ডের দায় তাদের উপর বর্তাবে এবং বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে কোন এক সময় এতে কোন সন্দেহ নেই।

এখন শাহবাগের আন্দোলনকারী ব্লগারদের উচিত "থাবা বাবা” ব্লগ পোস্ট গুলো প্রকাশ করা এবং বিতর্কের অবসান ঘটানো। তাছাড়া এই বিতর্কের অবসান না হলে এবং চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আরও মারাত্নক কিছু ঘটার সম্ভাবনার আশংকা করছি।

০ টি +০/-০