![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“জিমি কোথায় ?” জিজ্ঞাস করলেন মিস্টার এন্ডারসন।
“ ও তো চন্দ্র গহবরের বাইরে। চিন্তার কিছু নেই, রুবাটওর সাথে আছে।” তার স্ত্রীর সোজা জবাব কোন টেনশন নেই। রুবাট থাকলে টেনশনের কিছু নেই , ভাবখানা এরকম।
“তুমি কি ওর জন্য উপহার এনেছ?”
“ হুম্, আনিয়েছি বটে। তবে রকেট স্টেশনে উপহারটার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। পৃথিবী ছেড়েছি ১৫ বছর কিন্তু চাদেঁ একটিও জীবন্ত কুকুরছানা দেখিনি। মু্ভিতে দেখা আর বাস্তবিকভাবে দেখা তো এক নয়” বললেন মিস্টার এন্ডারসন।
“ জিমিও প্রথমবারের মত কোন জীবন্ত কুকুরছানাকে দেখবে। ওর কাছে বিষয়টা খুব ইন্টারোস্টিং ঠেকবে ।” ছেলের প্রতি মিসেস এন্ডারসন মমতা অনুভব করলেন।
“ আরে এ কারণেই ওটা অর্ডার দিয়ে কিনে এনেছি। ও পিলে চমকে যাবে” পিতৃস্নেহের কথা প্রকাশে মিস্টার এন্ডারসন মোটেও দেরী করলেন না। " জিমিতো আর পৃথিবীর মানুষ না। ও চন্দ্রমাতার সন্তান। আর চাঁদে এটাই কোন কুকুরছানার প্রথম পদার্পণ।”
“ কিন্তু এটার পরিচর্যা অনেক ব্যায় বহুল হবে ।” দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিস্টার এন্ডারসন। “ আর অন্যদিকে রুবাটের পরিচর্যা করাও কম কষ্টের নয় ।” দুহাত কচলালেন তিনি।
জিমি একজন স্বাস্থ্যবান চটপটে বালক। তার বয়স দশ হলেও পৃথিবীর একজন কিশোরের তুলনায় সে অনেক লম্বা। এ রকম শরীরবৃত্তিক পরিবর্তনের কারণ মূলত চাঁদের কম মহাকর্ষ। কিন্তু স্পেসসুট পরা অবস্থায় দূর থেকে দেখলে জিমিকে মোটা ও বেটে মনে হবে। স্পেসসুট নিয়ে চন্দ্র পৃষ্ঠে সে দক্ষতার সাথে যেভাবে চলাফেরা করে তাতে যেকোন পৃথিবীবাসীর তাক লেগে যাবার কথা। যখন সে চাঁদের বালিতে লম্বা লম্বা পায়ে ক্যাঙ্গারুর মত লাফিয়ে চলে তখণ পুত্রের সাথে সমানতালে চলতে মিস্টার এন্ডারসনের হিমশিম খেতে হয়।
দক্ষিণে চন্দ্র গহবরের বাইরের দিকটা বেশ ঢালু। আর সেই ঢাল দিয়ে স্পষ্ট দৃশ্যমান দক্ষিণ দিগন্তে জেগে উঠা রহস্যময় পৃথিবী , যার নীলাভ আলো গোটা লুনার সিটিকে মায়ার আবেশে জড়িয়ে রেখেছে।
ভারী স্পেসসুট পরে দক্ষিণের ঢাল বেয়ে উঠা কষ্টকর কিন্তু জিমি যেমন সাচ্ছন্দ্যে সেটা বেয়ে উঠে দেখে মনে হয় চাঁদের মহাকর্ষ তার কাছে পরাভূত।
“ চলো রুবাট।” জিমি চেচিয়ে বলল। রেডিও সিগনালের মাধ্যমে জিমিকে শুনতে পেয়ে আনন্দে লাফঝাপ দিতে লাগল রুবাট। এরপর সুরসুর করে জিমিকে অনুসরণ করল।
কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্র হওয়ায় রুবাটের স্পেসসুটের প্রয়োজন নেই। ক্ষিপ্রতার দিক দিয়ে যেকোন মানুষের থেকে শতগুণ এগিয়ে। তবুও গুটিগুটি চার পায়ে হেঁটে আর ইস্পাতের ছোট লেজটি নাড়িয়ে সে সর্বদা জিমিকে মনিব মানে।
মাথার উপর দিয়ে লম্বা ঝাঁপ দিয়ে শূন্যে ডিগবাজির কারিশমা দেখিয়ে সে ধপ করে সে জিমির সামনে পড়ল।
"দেখাতে হবে না, রুবাট," জিমি বলল, “ আমার কাছাকাছি থাকো।" রুবাট আবার আনন্দে চিৎকার করল আর লেজটা টুংটুং করে নাড়ল।“ এত নেকামো করো না। তুমি একটা দুষ্ট।” রুবাটকে ভেংচি কাটল ।
জিমি দীর্ঘ লাফ দিয়ে গহবরের সর্বোচ্চ টিলাকে অতিক্রম করে ভেতরের ঢালে গিয়ে অবতরণ করল। এরপর নামতে লাগল ঢাল বেয়ে।
চাঁদের দক্ষিণ দিগন্তে পৃথিবী ডুবে গিয়েছে। সাথে সাথেই চন্দ্রবাসীদের ঘুম পাড়ানোর জন্য গুটিগুটি পায়ে নিরবে কোন এক মহাজাগতিক অভিভাবক অতীব স্নেহে অন্ধকারের চাঁদর বিছিয়ে দিল যেন, দিকচক্রবালে বিলীন হয়ে গেল আকাশ ও মাটির পার্থক্য। শুধু মাত্রা তারাগুলো মিটিমিটি আলো জ্বেলে অন্ধকারে ধ্যানে মগ্ন থাকল।
চন্দ্রবাসীরা গহবরের অন্ধকার দিকটা এড়িয়ে চলত। সেটা ছিল বিপজ্জনক। বিপদের বিষয়টা জিমি উড়িয়ে দিত। কারণ অন্ধকার অংশের প্রতিটি পাথরের আর মাটির অবস্থান তার ছিল মুখস্থ। আর সবচেয়ে ভরসার বিষয় ছিল রুবাটের ব্যাবহার করা রাডার সিগনাল। এমনকি ঘোর অন্ধকারে রাডার দিয়ে খুব সহজেই জিমির অবস্থান বের করা রুবাটের জন্য মামুলি বিষয় ছিল। অন্ধকারে ভুল করে জিমি দৌড়ে কোন পাথরের কাছাকাছি চলে গেলে রুবাট তাকে থামিয়ে দিত। সর্বোপরি জিমির প্রতি তার ভালবাসার শেষ ছিল না । জিমিকে দেখলে লাফঝাপ দেয়া, ধমক শুনে মনখারাপ করে মাথা নিচু করা আর পাথরের পেছনে লুকানো ইত্যাদি হেন আহ্লাদী কর্মকান্ড রুবাটের বাদ ছিল না ।
একবার জিমি করে বসল এক দুষ্টামি ,যার জন্য তাকে বাবার অনেক বকুনি খেতে হয়েছে।ব্যাথ্যা পাবার ভান করে মাটিতে চিৎপটাৎ হয়ে রইল শুয়ে। কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়েও জিমির এই ভান ধরারা বুঝে উঠতে পারে নি রুবাট। বাজিয়ে দিল রেডিও এ্যালার্ম । সাথে সাথে লুনার সিটির মানুষেরা ছুটে এল সাহায্য করতে। জিমির বাবার মান-ইজ্জত তো যায় যায় এমন অবস্থা।
জিমি অন্ধকারাচ্ছন্ন চন্দ্রগহবরে মনের আনন্দে রুবাটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, এমন সময় হঠ্যাৎ স্পিকারে ভেসে এল বাবার কন্ঠ,” জিমি দ্রুত বাসায় আসো। তোমারা সাথে কথা আছে।”
বাসায় এসে স্পেস সুট খূলে ফেলল জিমি এবং সেটা ধুয়ে নিল। এ কাজটা সে প্রতিবারই করে। রুবাটকে ধোঁয়া-মোছা করা সম্ভব নয়। তাই তার দেহ থেকে ধূলাবালি ঝাড়তে স্প্রে করা হয়। স্প্রে করা রুবাট খুব উপভোগ করে। একফুট দেহটা আহ্লাদি ভঙ্গিতে দুলায় আর গোটা দেহে হালকা আলো জ্বেলে রাখে। তার মুখবিহীন মাথায় দুটি বড় কাঁচের কৃত্রিম চোখ আর মস্তিষ্কের জায়গায় লম্বাটে একটি ধাতব বিন্যাস যাতে লুকিয়ে রয়েছে পজিট্রনিক ব্রেইন। এসব নিয়েই সে হয়ে উঠেছে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এক যান্ত্রিক কুকুরছানা।
মিস্টার এন্ডারসনকে আসতে দেখে সে আনন্দে আটখানা হয়ে চেঁচাতে লাগল রুবাট। “ চুপ করো রুবাট”- বিরক্ত হয়ে বললেন এন্ডারসন। এবার ছেলের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসলেন। “ জিমি, তোমার জন্য একটা উপহার কাল আসবে কিন্তু। সেটা এখন রকেট স্টেশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আছে। “
“ রকেট স্টেশনে ? তার মানে পৃথিবী থেকে এসেছে বাবা” চোখ কপালে তুলল জিমি ।
“ হ্যাঁ পৃথিবী থেকে এসেছে সোনা বাবা, একটি কুকুর ছানা। হ্যাঁ, সত্যিকারের একটি কুকুরছানা। একদম জীবন্ত। একটি স্কচ টেরিয়ার জাতের ছানা। সত্যি বলতে কি লুনার সিটিতে এটাই কোন জীবন্ত কুকুরছানার প্রথম আগমন। তোমার কিন্তু আর রুবাটের দরকার নেই। দুটোকে একসাথে রাখার নিয়ম নেই। চাঁদের অন্য কোন বাচ্চা রুবাটকে পাবে।” মিস্টার এন্ডারসন থামলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন জিমির প্রতিক্রিয়া দেখতে। জিমি নির্বাক। মিস্টার এন্ডারসন এবার বলতে লাগলেন, “ কুকুর কি তা তুমি নিশ্চয়ই জান জিমি, একটি জীবন্ত প্রাণী। তোমার জন্য আনা কুকুরটা কিন্তু পুরাপুরি রক্ত-মাংসের। রুবাট কিন্তু যন্ত্র। কোন একটা নকশা অনুসরণ করে শতশত যান্ত্রিক কুকুরছানা বানানো হয়েছে, যার একটা তুমি পেয়েছ। তোমার পোষা যান্ত্রটা আসলে রোবট ছাড়া আর কিছু নয়। রোবট থেকে রুবাট। নামটাও মিলেছে ভাল, তাইনা!”
জিমি যেন একটা ধাক্কা খেল। সাথে সাথে ভ্রু কুচকে গেল তার। “ বাবা, রুবাট কিন্তু মোটেও যান্ত্রিক নকশার অনুকরণ নয়। ও আমার পোষা কুকুর ছানা কিন্তু। “
“ও কিন্তু জীবন্ত কিছু নয় জিমি।” পুত্রের আবেগপূর্ণ কথার লাগাম টেনে ধরলেন। “ কয়েক টুকরা ইস্পাত, কয়েক গাছি ইলেক্ট্রিক তার আর একটা পজিট্রনিক মস্তিষ্ক- এই কৃত্রিমতা নিয়েই রুবাট আমাদের সাথে আছে। ওকে জীবন্ত প্রাণী কোনভাবেই বলা যায় না জিমি সোনা।”
“ কিন্তু বাবা, আমি যা চাই রুবাট তাই করে। ও আমাকে বুঝতে পারে। ও অবশ্যই জীবন্ত। “
“ না বাবা। রুবাট শুধুমাত্র একটা যন্ত্র। এটাকে এভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবী থেকে আনা কুকুরটা কিন্তু জীবন্ত। ওটা পাবার পর তুমি রুবাটকে একদম ভুলে যাবে।”
“ তাহলে কুকুরটার কি স্পেসসুট লাগবে না ?”
“ হ্যাঁ অবশ্যই লাগবে । আর আমাকে কিছু খরচ বহন করতে হবে বটে, তবে সেটা আমি ম্যানেজ করব। তবে কুকুরটা স্পেস সুটে দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আর লুনার সিটির ভেতরে সুটের দরকার নেই মোটেও। ওটা বাসায় এলে রুবাট আর ওটার মাঝের স্পষ্ট পার্থক্য তুমি বুঝতে পারবে , সোনা বাবা।”
জিমি রুবাটের দিকে তাকাল। বেচারা তীক্ষ্মস্বরে কুইকুই করে উঠল, তাতে প্রবল ভয়ের বহি:প্রকাশ। জিমি দুহাত প্রসারিত করল আর রুবাট এক লাফে তার কোলে চলে আসল। “ ওই কুকুরটা আর আমার রুবাটের মাঝে এমন কি তাফৎ আছে, বলো তো বাবা ?” জিমির কাঁদকাঁদ কন্ঠ।
“ সোনা বাবা, তোমার মত ছোট মানুষকে বিষয়টা বোঝানো মুশকিল।” মিস্টার এন্ডারসন বললেন। “ কিন্তু যখন তুমি নিজ চোখে দেখবে তখন বিষয়টা পরিষ্কার হবে। রুবাটকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যাতে মনিবের প্রতি তার যান্ত্রিক ভলাবাসা প্রকাশ পায়। এটা তুমি কেন বুঝছ না ?”
“ কিন্তু বাবা আমরা তো জানি না পৃথিবী থেকে আসা কুকুরটার ভেতরে কি আছে আর তার অনুভূতিই বা কিরকম? হতেও তো পারে সেটা আমাকে দেখে ভালবাসার অভিনয় করবে !”
মিস্টার এন্ডারসন বিরক্ত হলেন। “ জিমি একটা সত্যিকার জীবের ভালবাসা, প্রোগ্রাম করা কৃত্তিম ভালবাসার চাইতে ভাল নয় কি ?” ভ্রু কুচকালেন তিনি।
জিমি রুবাটকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তার নিষ্পাপ মুখটা অভিমানে কুঁচকে আছে। বোঝা যাচ্ছে পৃথিবীর কুকুরটার বিনিময়ে রুবাটকে কোনভাবেই সে হাতছাড়া করবে না।
“কিন্তু বাবা তারা কিভাবে আচরণ করে সেটা তো আমার কাছে মুখ্য বিষয় না। আমার আগ্রহটাই মূলকথা। আর আমি রুবাটকে ভালবাসি আর সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।” জিমি রুবাটকে আরো জোরে আকড়ে ধরল।
রুবাট- মানব সমাজে যেটা কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যান্ত্রিক কুকুরছানা হিসেবে পরিচিত, কৃত্রিম চেতনা লাভের পর এই প্রথমবার সে তার মনিবের প্রচন্ড আবেগপূর্ণ অকৃত্রিম ভালবাসা সনাক্ত করতে পারল। যা এর আগে সে কখনো তার পজিট্রনিক মস্তিষ্কে বিশ্লেষণের সুযোগ পায় নি। এ এমন এক ভালবাসা যা হৃদয় থেকে হৃদয়েই শুধুমাত্র সঞ্চারিত হয়- হোক তা যান্ত্রিক অথবা জীবন্ত। রুবাট ক্রমাগত তীক্ষ্মস্বরে কুইকুই শব্দ করতে লাগল। কিন্তু এবার তাতে ভয়ের লেশমাত্র নেই শুধুমাত্র রইল আনন্দের ঝিলিক।
২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:০২
আইজ্যাক আসিমভ্ বলেছেন: আইজ্যাক আসিমভ্ বলেছেন: ধন্যবাদ। এটা আসলে Isaac Asimov এর ছোট গল্প " A boy's best friend " এর রূপান্তর। ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ বিশেষ ঝামেলার। অনেক অবেগীয় বিষয় ইংরেজিতে যেভাবে প্রকাশিত হয়, বাংলায় অনুবাদ করলে কেন যেন হারিয়ে যায়। বিপরীতটাও সত্য বটে। সময় পেলে মূল ইংরেজিটা পড়লে আপনার কাজে অনেক সহায়ক হবে। পুনরায় ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫২
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
আমি আপনাকে এই গল্পের উপর ভিত্তি করে একটি এনিমেটেড শর্ট ফিল্ম বানিয়ে দিবো।
একটু কনফ্লিক্ট আর ক্লাইম্যাক্স যোগ করতে হবে।