নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলামি চিন্তাবিদ

ইসলামি চিন্তাবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঁচাও দেশ বাঁচাও বিশ্ব মানবতা… মুছে যাক সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বন্ধন

০৯ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫২

পর্ব- ৪-----------৯) সবাই বলে "ধর্মহীন মানুষ পশুর সমতুল্য" এই কথাটি সর্বদাই বাস্তব সত্য কিনা তা আগে বিচার বিশ্লেষণ করা যাক। সাধারণত সকল ধর্মেই ঈশ্বর বলতে একজন সত্ত্বা আছেন যিনি এমন ক্ষমতার অধিপতি যে কোন মানুষ একান্ত গোপনেও অন্যায় করলে তা তিনি দেখতে পারেন এবং প্রায় সকল ধর্মই বলে যে প্রতিফল বা বিচারের কথা এমনকি কারও সাথে অন্যায় করলে তার পরিনাম হিসেবে অন্যায়কারীর চরম শাস্তির কথাও বেশীরভাগ ধর্মেই উল্লেখ আছে মোটকথা অন্যায়, মিথ্যা , চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষন ইত্যাদি সকল ধর্মেই ঘৃনিত কাজ এবং বারণ করা হয়েছে তাই সমাজের প্রকৃত ধার্মীক মানুষ খুবই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয় এবং ধর্মের ভয়েই সে তুলনামূলকভাবে ভাল কাজ করতে বাধ্য হয়। পক্ষান্তরে যারা ধর্মহীন তাদের নেই কোন বিধিনিষেধ, থাকে না কোন প্রতিফলের ভয় তাই তারা নিজস্ব আত্বতৃপ্ততার জন্যে অথবা লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে কিছু ভাল কাজ করলেও একান্ত গোপনে ঠিকই অন্যায় করে। আর যারা পূর্ব হতেই সকলের চোখে খারাপ হিসেবে পরিচিত তারা প্রকাশ্যেই খারাপ কাজ করে আবার কেউ কেউ এমন কাজও করে যা পশুরাও করে না সুতারাং "ধর্মহীন মানুষ পশুর সমতুল্য" এই কথাটি যৌক্তিক এবং বাস্তবিকভাবে প্রমানিত সত্য কথা।

বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগুলোর মাঝে একমাত্র হিন্দদেশের জাতিগুলোই বেশী অধার্মীক আবার সেই হিন্দদেশের মাঝে বাংগালী জাতিগুলো আরো বেশী অধার্মীক। বাংগালী জাতিগুলোর অধার্মীকতা আজ নতুন নয় বরং বাংগালী জাতির সূচনাই হয়েছে অধার্মীকতার মধ্য দিয়ে যা একটু পরে উল্লেখ করা হবে। বাংগালীজাতির নিকটতম অতীত ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় সনাতনত ধর্মের বিভিন্ন অবতারগন আসার পর বঙ্গজাতির কিছু জনগন একদমই শেষের দিকে তাদের মানা শুরু করত অনেকটা যখন আরেকটি অবতার আসার সময় ঘনিয়ে আসত তখন, এর পূর্বে সুদীর্ঘকাল এরা শুধু কুসংস্কারেই মেতে থাকত। যখনই বঙ্গদের মাঝে কিছুলোক শুদ্ধ ধর্ম মেনে চলত এবং অন্যদের মাঝে তা প্রচার করত তখনই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংগালীর প্রভাবে ঐ শুদ্ধ ধর্মের সাথে তাদের পূর্বের কুসংস্কারগুলোকে একাকার করে জগাখিচুরি বানিয়ে ফেলত তখন সেই শুদ্ধ ধর্ম রুপ নিত নতুন এক বাংগালিয়ানা ধর্মে। তখন বাংগালীজাতি আবারও নতুন অবতারের শুদ্ধিভিযানের বিরোধিতা করতে থাকত দীর্ঘকাল যদিও শেষের দিকে কিছু বাংগালী মেনে নিত কিন্তু বাংগালীরা ঈশ্বরের পাঠানো যেকোন ধর্মকে একদম শেষের দিকে হলেও খুব কম সময়ই মানত জাতিগতভাবে। তবে বাংগালীরা ধর্মের সবকিছুই না মানলেও ধর্মের আনন্দ উৎসবমূলক দিকগুলো খুব বেশী পছন্দ করত এবং মানত পক্ষান্তরে ধর্মের যেসব মূল বিষয় যেমন- ত্যাগ-তিতিক্ষা, প্রত্যহ উপাসনা, উপবাস এসব বিষয়ে সর্বদাই থাকত উদাসীন যদিও ঈশ্বর বাংগালী জাতির ভূ-প্রকৃতিগুলো দিয়েছিলেন অন্যান্ন জাতির তুলনায় সবচেয়ে উন্নত কিন্তু সেই অনুসারে তারা মোটেও ধার্মীক ছিল না অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল এই জাতি বোধহয় ঈশ্বরের পার্থিব স্বর্গ ভোগ করতেই ধরনীতে এসেছে, এমনকি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টিপাতও এমন সুন্দরভাবে নিয়মিত হত যে অন্য জাতির ধার্মীক বাক্তিবর্গ বলত- এইসব এলাকায় ঈশ্বর বৃষ্টি দেন আসলে এখানকার বৃক্ষ এবং পশুপাখিদের জন্য মানুষের জন্য নয়। মোটকথা বাংগালী জাতির মাঝে ধর্ম ঢুকত খুবই দেরিতে কিন্তু ধর্ম বেড় হয়ে যেত খুব দ্রুত, এরই ধারাবাহিকতায় দেখা যায় সনাতন ধর্মের পরে বৌদ্ধ ধর্ম এদেশে ঢুকে অনেক বিলম্বে তবু কিছু কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল আর তা মোটামুটি মানুষ যখন জানতে শুরু করেছে ঠিক তখনই দেখা যায় পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম এসে গেছে যা বাংগালীদের মাঝে মোটামুটি ধর্ম পরিচয়ে ঢুকতেই প্রায় আটশত হতে হাজার বছর লেগে যায় আবার তখন কিন্তু হিন্দদেশের সিংহভাগ মুসলিমরা শাষন করাও শুরু করেছে। সম্ভবত বাংগালীদের অতিরিক্ত কুসংস্কারমনতার পাশাপাশি নতুন ধর্মটি ভীনদেশের এবং ভিন্ন ভাষার হওয়ায় ইসলা্মের মত সার্বজনীন এবং উন্নত ধর্মও বাংগালীদের মাঝে ঢুকতে একটু বেশী সময় লেগেছিল। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে একটি জাতির মাঝে কোন মতবাদ বা কোন ধর্ম এসেছে একথা তখনই বলা যাবে যখন ঐ জাতির একটা পার্সেন্ট ঐ ধর্ম গ্রহন করবে এবং বাদবাকী অধিকাংশই সেই ধর্মের নাম জানবে বা চিনবে অর্থাৎ এজন্য বেশীরভাগই যে ঐ ধর্মে দীক্ষিত হতে হবে এমন নয় বা শাষনক্ষমতা তাদের হাতে থাকবে এমনটিও নয় আবার এক কোটি জনগনের মাঝে মাত্র এক হাজার সেই ধর্মে দীক্ষিত হলেও বলা যাবে না যে ঐ ধর্ম এদেশে এসেছে বরং তখন বলা যেতে পারে উক্ত ধর্মের অবির্ভাব এদেশেও শুরু হয়েছে।

১২০৩ সালে তুর্কি জেনারেল ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি অত্যাচারী সেন রাজাদের পরাজিত করে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করলেও তবে সমগ্র বাংলাকে একই মুসলিম শাসনের অধীনে আনতে প্রায় দেড় শ’ বছর লেগে যায়। সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি যখন সমগ্র বাংলাকে অভিন্ন শাসনে নিয়ে আসেন তখনই এই দেশে পরিপূর্নভাবে ইসলাম ধর্ম প্রবেশ করেছে বলা গেলেও কিন্তু ইসলামিক রাষ্ট্র বা খেলাফত তথা বৃহত্তর মুসলিম সম্রাজ্যের অংশ এই দেশ কখনই হয়নি । অথচ মাত্র কয়েকশত বছর মুসলিম শাষনের পর পরই ধর্মহীন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে চলে যায় এদেশই সবার আগে । তাই ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ উদ দৌলাকেই সর্বপ্রথম বৃটিশরা পরাজিত করতে পারে বাংগালী জাতির প্রবল শঠতা ও মীরজাফরী স্বভাবের কারনে যদিও ইতিহাসে শুধু মীরজাফরকেই দায়ী করা হয় কিন্তু একটি দেশের শাষন ক্ষমতা খারাপ হবার পিছনে অবশ্যই ঐ দেশের জাতিগত কুস্বভাব-চরিত্র বিদ্যমান থাকে। তাই বৃটিশরা প্রথমে বাংগালী জাতিকে হারিয়ে এরই ধারাবাহাকতায় পুরো হিন্দুস্থানকেই একের পর এক হারাতে থাকে সর্বশেষে হারায় মহিশুরের টিপু সুলতানকে । আর বৃটিশরা কেন তাদের রাজধানী বাংগালীদের মাঝেই স্থাপন করে বেশি নিরাপত্তা অনুভব করত ? বাংগালীদের কোন চরিত্রের কারনে তারা এমন সাহস পেত ? যাইহোক ইসলামের মত শান্তিপূর্ন ধর্ম বাংগালীদের মাঝে ঢুকতে হাজার বছররের কাছাকাছি সময় লাগা এবং মাত্র কয়েকশত বছরের ব্যাবধানে মুসলিম শাষনের চিরবিদায় হওয়া এবং এরপরই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধর্ম প্রতিষ্ঠা হওয়া এটাই প্রমান করে যে এই জাতির মাঝে ভাল এবং শুদ্ধ ধর্ম সহজে ঢুকতে চায় না যদিও কোনভাবে ঢুকেও তা আবার বেড়িয়ে যায় সর্বদাই খুবই দ্রুত বেগে, তাই বলা যায় বাংগালী জাতি একটি অধার্মীক জাতি হবার পাশাপাশি সঠিক ধর্মকে বেশিদিন সহ্যও করতে পারে না।

প্রকৃত ধর্ম কর্মে মন না থাকলেও বাংগালী মুসলিমদের দেখা যায় ধর্মীয় আনন্দ উল্লাস ও ভোগ-বিলাস জাতীয় কিছুতে ভালই আগ্রহ। উদাহরণস্বরুপ- বেশিরভাগ বাংগালী মুসলমান হবার পর বাৎসরিক দুই ঈদে ভালই আমদ-প্রমদে মত্ত থাকে এমনকি রমযান মাসের মত উপবাসের সময়কেও ভোজন বিলাসের উৎসবে রুপান্তরিত করেছে, প্রাত্যহিক উপাসনাকে সাপ্তাহিক জুময়াতে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে । বাংগালীরা কেমন উৎসবপ্রেমী তা বুঝা যায় হিন্দুদের পুজার সময় কারন মুর্তিপুজাকে চরম পাপ জানার পরও দূর্গা পুজায় আনন্দ উল্লাস ভোগে যেন বেশীরভাগ মুসলমানরাই অগ্রগামী শুধু তাই নয় পহেলা বৈশাখের মত উৎসবে বাংগালীদের থাকে সার্বজনীন অংশগ্রহন এমনকি এই ধরনের আরো অধর্মীয় আনন্দ-উৎসবের দিবস পালনে বাংগালীরা সর্বদাই তৎপর।
মোটকথা বাংগালী মুসলমানরা ধর্মের আনন্দ উল্লাস ও ভোগ-বিলাস জাতীয় অংশটুকু সকলেই মানে যা ইসলাম ধর্মে ফরয নয়, নফল বা সুন্নত টাইপেরই বেশী অর্থাৎ যা না করলেও চলে কিন্তু যা ফরযে আইন অর্থাৎ যা না করলে মুসলিম দাবীও করা যায় না সেই ফরয নামাজ অধিকাংশ একদমই পড়ে না অনেকে নামাজের নিয়ামাবলী পর্যন্ত জানে না। একবার বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক একটি জরিপ প্রকাশ করা হয় যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে এদেশে মুসলামনদের মাঝে শতকরা গড়ে দুইজন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী অর্থাৎ প্রতি একশ জনে আটানব্বই জনই বেনামজী। এই হল ধার্মিকদের অবস্থা আর ধর্মের যেসব মূল বিষয় যেমন- ত্যাগ-তিতিক্ষা, পরস্পরের সাথে সদাচারন, মানব অধিকার, অন্যায়-অবিচার না করা, মিথ্যা পরিহার ইত্যাদি অন্নান্য ইবাদতে তো আরও করুন অবস্থা। মুসলমান হবার পুর্বে বাংগালীরা সনাতন ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্মে থাকাবস্থায়ও একই রকম ছিল অর্থাৎ ধর্মীয় বিধিবিধান মানত না, ধর্ম কর্ম শুধু ব্রাহ্মণদের কাজ মনে করত আর এখন বর্তমানে মুসলমান হবার পর তা শুধু হুজুর মৌলভীদের কাজ মনে করে, কিছু মানুষ ধর্ম মানলেও বৃদ্ধ হবার পরে মানা শুরু করে যদিও বৃদ্ধ হবার পূর্বের বয়সের মানুষেরই সমাজে কর্মের প্রভাব বেশী থাকে আর বৃদ্ধ হবার পরে সে কতটুকুই বা ধর্ম মানতে পারে? তবুও বৃদ্ধ হবার পর দেখা যায় শুধুমাত্র ধর্মীয় লেবাস আর কিছু আচার অনুষ্ঠানাদি মেনে চলে আর তখনও সে হিংসাবৃত্তির চর্চা করতে করতেই মৃত্যুবরন করে থাকে। আর এরা যতদিন ধর্ম মানে ততদিন ধর্মগ্রন্থের বানী ইচ্ছে করেই নাবুঝে পড়ে, পূর্বে সনতন ধর্মে থাকাবস্থাতেও মন্ত্রগুলো না বুঝে পড়ত এমনকি মন্ত্র মানেই না বুঝে পড়ার জিনিস ঈশ্বরের বানী মানেই না বুঝে পড়লেও হয় ইত্যাদি ভাবত। আসলে কেন যুগের পর যুগ বাংগালীরা এমন করে আসছে এর কারন খুজতে গিয়ে দেখা গেছে – এরা আসলে মূর্খ্যতাবশত ঈশ্বরের সাথে এক ধরনের চলাকি করার চেষ্টা করে এবং মনে করে না বুঝে পাঠই শ্রেয় কেননা বুঝলেই মানতে হবে বেশী । আর এসব কারনেই মূর্খ্যের আধিক্য হওয়ায় ধর্মীয় ব্যাক্তিরাও খুব সহজেই স্বৈরাচার হবার সুযোগ পায় ফলে অল্পকিছুদিনেই বাংগালী জাতির মাঝে শুদ্ধ ধর্মটিতেও সর্বদাই চলে আসে বিভিন্ন ধরনের গোঁজামিল । শুধু ধর্মই নয় কোন ভাল মানুষও যদি এই জাতির মাঝে বেশিদিন অবস্থান করে সেও কিছুদিন পরে খারাপ হতে বাধ্য হয় কেননা বাংগালীর জাতই খারাপ যেমন বাংগালীর জাতির উৎপত্তি বিশ্লেষন করে জানা যায় আদি পিতা আদম আঃ এর কাবিল নামে এক অবাধ্য পুত্র ছিল যে কিনা মানুষ জাতির মাঝে সর্বপ্রথম অধর্মের উদ্ভব করে। বাংগালী জাতি সেই কাবিলেরই কয়েকটি জাতের মাঝে একটি জাত যারা অনেক পূর্ব হতেই মিশ্র জাত হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয় নূহ আঃ যখন কিছু ভাল মানুষ ও পশু পাখিদের বাচানোর উদ্দেশ্যে জাহাজ বানিয়েছিলেন সেই জাহাজে এই হিন্দ দেশের তথা বাংগালী জাতিরাই যে সর্বপ্রথম পায়খানা করেছিল তারও সম্ভাবনা রয়েছে কেননা আজও এই জাতির মাঝে এখানে সেখানে পায়খানা করে পরিবেশ দূষণের প্রবনতা সবচেয়ে বেশি বিশ্বের অন্নান্য জাতির তুলনায়।
১০) এবারে খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয় “জাতীয়তাবাদ” নিয়ে আলোচনা করা হবে তাই প্রথম হতেই এ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা দরকার।(ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন সোর্স হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে) বর্তমানে সাধারনভাবে নিম্নরুপে জাতীয়তাবাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয় যেমন- নির্দিষ্ট কোন জাতিকে ঘিরেই জাতীয়তাবাদ তৈরী হয় আর জাতি হল এমন একদল গোষ্টি যাদের কোনকিছুতে ঐক্য রয়েছে এবং এর উপর ভর করেই ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার চেষ্টা করে। বর্তমানে একটি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জাগ্রত হয়। এগুলো হল-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত, ভাষা, বর্ণ-গোত্র, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, একই পূর্বপুরুষ হতে আগমন, একই অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক আশা আকাঙ্ক্ষা, বীরত্বগাঁথা সম্বলিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ইত্যাদি কারনেই বর্তমানে খুব বেশী জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হতে দেখা যায় আর খুব কমই দেখা যায় ধর্ম এর উপর ভিত্তি করে এই চেতনা জাগ্রত হতে আর এর কারন কি তা পরে আলোচনা করা হবে। মোটকথা জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি আদর্শ যার কারনে কোন জাতি তার অন্নান্য আদর্শকে পেছনে ফেলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে উক্ত আদর্শকে মূখ্য ধরে অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়, তাই জাতীয়তাবাদ একটি আর্থ-সামজিক ও রাজনৈতিক ধারণা যেখানে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়। সকল জাতীয়তাবাদে দুটি বৈশিষ্ট থাকে- শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ তৈরী ও অন্যদের থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যবোধ। এসব বিষয় বিবেচনা করলে, জাতীয়তাবাদ ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইই হতে পারে কিন্তু বর্তমান জাতীয়তাবাদের ফলে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়। এই পৃথিবীতে জাতীয়তাবাদের কারণে অসংখ্য মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। পৃথিবীতে জাতীয়তাবাদের কারণে এক জাতি দ্বারা অন্য জাতিসত্ত্বার মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে এবং হচ্ছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ ২য় বিশ্বযুদ্ধটিও সংগঠিত হয়েছিল জার্মানির জাতীয়তাবাদের কারণে। রোমান,পারস্য সাম্রাজ্য,মোঙ্গল থেকে জাপান সবখানে এক জাতি অন্য জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ত্ব কায়েম করতে চেয়েছে।

জাতীয়তাবাদ শব্দটি ইংরেজি ন্যাশনালিজম শব্দের বাংলা পরিভাষা। ন্যাশনালিজম শব্দটি ১৮৪৪ সাল থেকে ব্যবহৃত হতে থাকে, যদিও জাতীয়তাবাদ মতবাদটি আরও আগে থেকে চলে আসছে। ১৯শ শতাব্দীতে এই মতবাদ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মতবাদটি এর অন্তর্নিহিত অর্থের কারণে ১৯১৪ সালের পর থেকে নেতিবাচক রূপ লাভ করে। যাইহোক
জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা। ১৮ শতকে এর উদ্ভব ঘটে। ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়। একটি অবিভক্ত ইতালি রাষ্ট্রের ধারণা তিনিই প্রথম দেন। তবে ইংরেজরা জাতীয়তাবাদ বা জাতি সত্তার পতিকৃৎ। নেপোলিয়ানের বীরত্ব ও রাজ্য বিস্তার তাদের জাতি সত্তা জাগরণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সত্যিকার্থে জাতীয়তাবাদের বর্তমান যে রুপ আমরা দেখতে পাই তা হলো মূলত সাম্রাজ্যবাদের ফসল, যদিওবা এর উৎপত্তি হয়েছিল ইউরোপে, বিশেষতঃ পশ্চিম ইউরোপে, রোমান ক্যাথলিক চার্চ এর অত্যাচার মোকাবেলায় আত্ম-রক্ষার পদ্ধতি হিসেবে। শুরুর দিকে এই সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল খ্রিষ্টান ধর্মের প্রটেস্টান্ট মতাবলম্বীদের দ্বারা, এটি নিজের শক্তি সঞ্চার করত আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়া থেকে যা সর্বদাই বহিঃশক্তির প্রভাব ও নিষ্পেষণের বিপরীতে ক্রিয়াশীল থাকত। বহিঃশত্রুর আক্রমণ সর্বদাই জনসাধারণদের প্রতিবাদী করে তোলে যা এক পর্যায়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে রুপ লাভ করে। অতএব জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের এই ধারণা গোড়ার দিকে ছিল বিদেশী আধিপত্য ও প্রভাব বলয় থেকে মুক্তির তাড়না যা পরবর্তীতে অন্য রুপ লাভ করে। ঐতিহাসিকভাবে, রোমান সাম্রাজের অধিবাসীদের সমাজবদ্ধতার চূড়ান্ত ভিত্তিই ছিল গির্জা। ক্যথলিক মতবাদই ছিল রাষ্ট্রীয় ধর্ম এবং যে ক্যাথলিক ছিল না, পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা তাকে দেয়া হতো না। পোপ এর হাতেই ছিল সম্রাটদের বৈধতা দানের পূর্ণ ক্ষমতা। সেন্ট আগাষ্টিন এর সময় থেকেই চলে আসছিল এ জাতীয় রাজনৈতিক গঠন। কারো ফরাসী, ইটালিয়ান বা জার্মান পরিচিতির চেয়েও বড় বিষয় ছিল তার খ্রিষ্টান হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি। যখন থেকে খ্রিষ্টান রোমান সাম্রাজ্য দূর্বল হতে শুরু করল, তখন থেকেই বিভিন্ন জাতির মানুষ এই খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা আদায়ের আন্দোলনে লিপ্ত হলো। তারা নিজেদের পুনরায় নতুন পরিচিতি দিল নাগরিকত্বের এক নতুন মাপকাঠি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। নাগরিকত্ব প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় কোন বিষয় হিসেবে আর থাকলনা, এক নতুন সাংস্কৃতিক পরিচিতি উদ্ভাবনের তাগিদ অনুভব করল আন্দোলনকারী বুদ্ধিজীবিরা, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে- "ফরাসী, জার্মান তথা স্প্যানিশ বলতে কি বোঝায়- ধর্ম নাকি অন্য কিছু?" এভাবেই ইউরোপে ধর্মহীন জাতীয়বাদ নামক এক নতুন চিন্তা ও বন্ধনের আবির্ভাব হলো ১৮ শতকে । প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি জাতীয়তাবাদের উত্থান । ১৯ শতকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সার্বিয়া, পোল্যান্ডে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি অন্যতম কারণ হল জার্মানির জাতীয়তাবাদ ও ইহুদী জাতীবাদের দ্বন্দ্ব।
আমরা এও দেখতে পাই যে এই জাতীয়তাবাদী চেতনা মানুষের ভেতর জাগিয়ে তোলে এক প্রচন্ড আধিপত্যবাদী মনোভাব। তাই এই জাতীয়তাবাদ কখনোই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনা কারণ এর ভিত্তিই হলো নেতৃত্ব ও অধিপত্য বিস্তারের ক্ষুধা যা এক প্রকার ক্ষমতার সংঘাত সৃষ্টি করে সামাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে। একই ভাষাভাষী ও তথাকথিত বাঙ্গালী সাংস্কৃতির ছায়াতলে থেকেও আওয়ামী ও বিএনপির ক্ষমতা ও আধিপত্যের দ্বন্দ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় জাতীয়তবাদের ব্যর্থতার চিত্র।
জাতীয়তাবাদ তার এই দ্বন্দ ও আধিপত্যের মৌলিক চরিত্র নিয়ে কালক্রমে সাম্রাজ্যবাদের শোষণ ও অত্যাচারের সহায়ক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে খুব সুচারুরূপে নিয়ন্ত্রন করতে সাম্রাজ্যবাদীরা সমর্থ হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ একই জাতির ভেতর ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে চলমান এই দ্বন্দ ও সংঘাতকে সর্বদাই জীবিত রাখে এবং এই প্রকারের দ্বন্দে লিপ্ত দল/গোত্র সমূহের দ্বারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রভাব বলয় অটুট রাখে। উদাহারণস্বরূপ, আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের (উগান্ডা, রুয়ান্ডা, কঙ্গো ইত্যাদি) গৃহযুদ্ধে মার্কিনীরা উভয় পক্ষকেই অস্ত্র যোগান দিয়ে থাকে এবং বিনিময়ে অগণিত প্রাকৃতিক সম্পদ লুট নিশ্চিত করে। ইরাকেও আমরা দেখতে পাই মার্কিনীরা পুরো দেশটাকে শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের দ্বারা তিনটি ভাগে বিভক্ত করে তাদের ভেতর দ্বন্দ অব্যাহত রেখেছে এবং এই দ্বন্দ নির্মূল করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইরাকের সেনাদের প্রশিক্ষনের নাম করে মার্কিনীরা শক্ত ঘাটি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এরই মাধ্যমে আমেরিকায় তেল সরবরাহ নিশ্চিত করে চলেছে। অতএব এ থেকেই বোঝা যায় কিভাবে জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তির কথা বলে সাম্রাজ্যবাদেরই সহায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই প্রকারের জাতি রাষ্ট্রের ধারণা একারণেই করা হয়েছে যাতে জাতিসমূহ নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত থাকবে এবং এরই মাধ্যমে পুজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ তাদের অন্নান্য সুবিধার পাশাপাশি সমর শিল্পের বিকাশ সাধন করবে।
এখন আলোচনা করা হবে জাতীয়তাবাদের বিকৃতরূপ বা বিপক্ষে যুক্তিগুলো নিয়ে-
১ম যুক্তিঃ- এক জাতীয়তাবাদের মানুষ অন্য জাতীয়তাবাদের মানুষকে ঘৃণা করে।
জাতীয়তাবাদ বিশ্বে বার বার যুদ্ধ বাঁধিয়েছে।
২য় যুক্তিঃ- জাতীয়তাবাদ মানুষের মনে হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণার জন্ম দেয়। তাই জাতীয়তাবাদ একটি ক্ষতিকারক বিষয়।
৩য় যুক্তিঃ- জাতীয়তাবাদ ভৌগোলিক সীমারেখাকে সীমিত করে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মিশ্রণ রোধ করে দেয়। ও অন্যদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদের সৃষ্টি হয়।
৪র্থ যুক্তিঃ- জাতীয়বাদীরা নিজেদের সব কিছুকে বড় করে দেখে, অপরের সব কিছুকে ছোট করে দেখে। পাকিস্তান আমলে পাঞ্জাবীরা বাঙালিদের থেকে নিজেদের অধিক সভ্য ও উন্নত জাত মনে করত।
৫ম যুক্তিঃ- জাতিভূক্ত নয় কিন্তু একই দেশে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদেরকে সংখ্যালঘু বিবেচনা করে তাদেরকে হেয় করে দেখা হয়। যেমন- মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, সিরিয়া ও তুরস্কের কুর্দি।
৬ষ্ট যুক্তিঃ- ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
৭ম যুক্তিঃ- জাতীয়তাবাদ থেকে সৃষ্টি হয় সাম্রাজ্যবাদের। যেমনটি দেখাগিয়েছিল হিটলারের মাঝে।
৮ম যুক্তিঃ- জাতীয়তাবাদীদের কাছে থেকে লোকরঞ্জনবাদীরা সহজেই ফায়দা উঠে নেয়।
এবারে আলোচনা করা হবে জাতীয়তাবাদের প্রকৃতরূপ বা সপক্ষের যুক্তিগুলো নিয়ে-
১ম যুক্তিঃ- “জাতীয়তাবাদ জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করে। তাদের আত্ম নিয়ন্ত্রণ ও আত্ম পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করে। ফলে গণতন্ত্রের উন্নয়ন ঘটে”।
পর্যালোচনাঃ- সাধারনত জাতীয়তাবাদ কোন জাতিকে যেসব ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ করে তা সবসময়ই হয় তুলনামূলক কম গুরত্বপূর্ন এবং সেটাও হয়ে থাকে সম্রাজ্যবাদী প্রভুরাষ্ট্রেরই ইশারায় তাদেরই স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে। জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হয়ে কোন জাতি যখন নিজেদের মাঝে খুব বেশি আত্ম নিয়ন্ত্রণ ও আত্ম পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ হয় তখন তাদের মাঝে চরম স্বার্থপরতার জন্ম নেয় আর গনতন্ত্রের নামে শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠদের সুবিধা তৈরী হয় পক্ষান্তরে সংখ্যালঘুরা হয় নির্যাতিত ।
২য় যুক্তিঃ- জাতী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদকে সুষ্টুভাবে ব্যবহার করতে পারে। নিজেদের উন্নয়ন ঘটিয়ে বিশ্ব মানবের জন্য ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
পর্যালোচনাঃ- সাধারনত এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় জাতীয়তাবাদের ফলে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদকে সম্রাজ্যবাদী প্রভুরাষ্ট্রের হাতে স্বল্পমূল্যে তুলে দিয়ে গর্ববোধ করে যে আমরা সম্পদের সুষ্টু ব্যবহার করতে পেরেছি। আর নিজেদের ঐ স্বল্প উন্নয়ন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে আর ভাবে এক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব মানবতার জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনছি।
৩য় যুক্তিঃ- জাতীয়তাবাদ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে বৃহত্তর স্বার্থে বলি দিতে শেখায়। ফলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম বৃদ্ধি পায়।
পর্যালোচনাঃ- জাতীয়তাবাদ বৃহত্তর স্বার্থের নামে নিজের এমন সব ক্ষুদ্র স্বার্থকে বলি দিতে শেখায় যা মোটেও ক্ষুদ্র ছিল না বরং সেসব স্বার্থের উপর যদি জাতি ঐক্যবদ্ধ হত তবে নিজেরা আরও বেশী উন্নতি করে শক্তিশালী জাতিতে পরিনিত হতে পারত। কিন্তু দেখা যায় জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে তারা নিজেদের সেসব শক্ত ভিত্তিকে জলাঞ্জলি দিয়ে সম্রাজ্যবাদী প্রভুরাষ্ট্রের চক্রান্তে দেশপ্রেমের মত দূর্বল ভিত্তিকে বৃদ্ধি করে।
৪র্থ যুক্তিঃ- এক জাতি একটি সাধারণ শাসকের দ্বারা শাসিত হয় বলে, নিজেদের মধ্যে বিভেদ হয় না। ফলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পর্যালোচনাঃ- বাস্তবে সমস্ত জাতীয়তাবাদী দেশ নির্বাচন নামক নাটকের মাধ্যমে সম্রাজ্যবাদী প্রভুরাষ্ট্রের অনুগত পুতুল সরকারের দ্বারা শাসিত হয় বলে নিজেদের অধিকার আদায়ে শুধুমাত্র মৌখিক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছু করতে গেলে সামরিক শক্তির মাধ্যমে তাদের কঠরভাবে দমন করা হয় তাই সত্যিকারের শান্তি সেখানে থাকে না। নির্বাচন নামক ধোঁকাবাজির নাটক করতে গিয়ে দেশে একাধিক রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন আদর্শিক দলের তৈরী হয়ে নিজেদের মাঝে প্রচন্ড বিভেদের সৃষ্টি করে।
৫ম যুক্তিঃ- একটি জাতীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বীরত্বগাঁথা তাদেরকে মহান করে।
জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে এক কুঠারাঘাত।
পর্যালোচনাঃ- সাধারনত জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রসমূহে সেই জাতীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বীরত্বগাঁথা এসব বিভিন্ন বুলি দিয়ে তাদেরকে বোকা বানিয়ে রাখে। তাই এগুলো তাদেরকে মহান না করে বরং চরমভাবে অসচেতন করে। ইতিহাস আমাদের সাক্ষী দেয় যে জাতীয়তাবাদী দেশগুলো, সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে না গিয়ে বরং বৃটিশ-আমেরিকার মত সাম্রাজ্যবাদীদের গোলামে পরিনিত হয়েছে আর নিজেদের আদি জাতির বিরুদ্ধে কুঠারাঘাত করেছে যেমন- ভারত বনাম পাকিস্তান, চীন বনাম জাপান, উত্তর কোরিয়া বনাম দক্ষিন কোরিয়া ইত্যাদি।
বর্তমান বিশ্বে জাতীয়তাবাদের বড় ফসল মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী তথাকথিত আরব বসন্ত। সিরিয়ার গৃহ যুদ্ধ। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংকট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্ত রাজ্যের বের হয়ে যাওয়া- ব্রেক্সিট।


জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে হলে আমাদের আরো গভীর কিছু বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে হবে যেমন- আমাদের সবচাইতে বড় পরিচয় আসলে কি হওয়া উচিৎ ? এক্ষেত্রে অনেকেই একবাক্যে উত্তর দিতে পারে আমাদের সবচাইতে বড় পরিচয় হল আমরা সবাই মানুষ অথবা বাংলাদেশের অনেক মানুষ বলতে পারে আমার বড় পরিচয় হল আমি একজন বাংগালী। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজেকে বাংগালী পরিচয় দেয়া বা মানুষের সামনে অপর মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে কোন লাভ তো নেইই বরং যেটার মাধ্যমে অটোমিটিক্যালি বাহ্যিকভাবে অন্যের কাছে পরিচিতি এমনিতেই পাওয়া যাচ্ছে সেটা কিভাবে আসল পরিচয় হয় ? তার মানে আপনি যে মানুষ সেটা তো সবার চোখেই পরছে অথবা বাংগালী সেটাও বুঝা যাচ্ছে। আমরা সবাই যেহেতু রক্তে মাংশে গড়া মানুষ কোন গরু ছাগল না, সেহেতু সবাই দেখতেই পাচ্ছে আমি জলজ্যান্ত মানুষ, তারপরও নিজেকে মানুষ বলে অন্যের কাছে পরিচয় দেয়া একধরনের হাস্যকর ব্যাপার। মনে করুন একদল বান্দর এসে যদি অন্য বান্দরদের বলে আমাদের পরিচয় হল আমরা সবাই বান্দর তবে কেমন হবে? কারন তারা তো দেখতেই পাচ্ছে তারা বান্দর সুতারাং এগুলো হল আজগুবি মতবাদ যেমন- কেউ আপনাকে যদি প্রশ্ন করে কোথায় থাক? উত্তরে যদি বলেন, বাসায় থাকি বা খাটের উপর থাকি, ঠিক সেরকমই হাস্যকর উত্তর হল আমার প্রথম পরিচয় মানুষ। তাই আমাদের প্রথম পরিচয়টা হওয়া উচিত- আমি আসলে কি ধরনের মানুষ? এছারাও নারী বা পুরুষ, ধনী বা গরিব এবং সাদা বা কালো এগুলো বলা যেমন অযৌক্তিক ঠিক তেমনি বাংলাদেশের ভিতরে বাস করে নিজের ১ম পরিচয় বাঙ্গালি বলাটাও অযৌক্তিক। মানুষের এসব পিকুলিয়ার আইডেন্টিটি বা এধরনের পরিচয় দানের পিছনে যে মতবাদটা দায়ী তাও হল এই জাতীয়তাবাদ।
পশ্চীমাদের নিজ স্বার্থে সৃষ্ট এই জাতীয়তাবাদ আসলে মানুষের মাঝে কি ধরনের বন্ধন সৃষ্টি করে তা ভালভাবে দেখতে হবে। জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম নামক বন্ধনগুলো হয় খুবই দূর্বল ধরনের যেমন- একটি পরিবারে যে বন্ধন থাকে তা একটি গ্রাম বা এলাকার মাঝেই তা শুধু প্রবল হতে পারে । এখানে কিন্তু ঐ গ্রাম বা অঞ্চলের মাঝে পারিবারিক বন্ধন ছাড়া গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক যে জাতীয়তাবাদ সেটার কোন অস্তিত্ব থাকে না কিন্তু গ্রাম ছেড়ে আরো বৃহৎ পরিসর যেমন ইউনিয়ন বা থানা পর্যায়ে গেলে গ্রামভিত্তিক জাতীয়তাবাদের দেখা মিলবে অর্থাৎ থানা পর্যায়ে গিয়ে দেখা যাবে একজন লোক অন্নান্য গ্রামের লোকদের তুলনায় নিজ গ্রামের লোকদেরকে বেশী আপন ভাববে এবং সুযোগ সহযোগিতাও বেশী করবে ঠিক একইভাবে যখন একজন ব্যাক্তি জেলা পর্যায়ে অবস্থান করবে ঠিক তখনি সেখানে নিজ থানাভিত্তিক আরেকটি জাতীয়তাবাদের দেখা দিবে কিন্তু এরপূর্বে নিজ থানায় অবস্থানকালে এই ধরনের কোন বন্ধনের দেখা মিলবে না। ঠিক একইভাবে বিভাগীয় বা রাজধানী পর্যায়ে গিয়ে তৈরী হবে জেলাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী বন্ধনের। আর ঠিক একই ভাবে মানুষ যখন অন্য দেশে অবস্থান করবে ঠিক তখনই দেখা মিলবে দেশভিত্তিক জাতীয়তাবাদের অর্থাৎ নিজ দেশে অবস্থানকালে দেশভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কোন মূল্যই থাকে না এমনকি দেশপ্রেমের মত জাতীয়তাবাদের বন্ধনের অতি দূর্বল ভিত্তিও তৈরী হয় না অথচ নিজ দেশে অবস্থান করে বর্তমান মানুষগুলো দেশীয় জাতীয়তাবাদ নিয়ে দাংগা হাংগামা পর্যন্ত করে থাকে প্রভু রাষ্ট্রের ইশারায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যত বৃহৎ পরিসরে যাওয়া যাচ্ছে ততোই জাতীয়তাবাদের বন্ধন দূর্বল থেকে দূর্বলতর হচ্ছে। উদাহরণস্বরুপঃ- পারিবারিক বন্ধনের তুলনায় নিজ গ্রাম বা নিজ এলাকাভিত্তিক বন্ধন হয় দূর্বল, একইভাবে নিজ গ্রাম বা নিজ এলাকাভিত্তিক বন্ধনের তুলনায় নিজ থানাভিত্তিক বন্ধন হয় আরো দূর্বল, আবার নিজ থানাভিত্তিক বন্ধনের তুলনায় নিজ জেলাভিত্তিক বন্ধন হয় আরো দূর্বল একইভাবে নিজ জেলাভিত্তিক বন্ধনের তুলনায় বিভাগভিত্তিক বন্ধন হয় আরো বেশী দূর্বল আর সবশেষে নিজ দেশভিত্তিক বন্ধন বা দেশপ্রেম খুবই দূর্বল ভিত্তি সম্পন্ন বন্ধন হয়ে থাকে কেননা ভীনদেশে কেউ বিপদে পরলে বা সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজ দেশীর চাইতে নিজ অঞ্চল বা নিজের পরিবারের লোককেই বেশী অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এখন লক্ষণীয় বিষয় হল এই জাতীয়তাবাদের মত অতিব দূর্বল ভিত্তির কলা ঝুলিয়ে বড় বড় যুদ্ধ পর্যন্ত হয়। সুতারাং জাতীয়তাবাদের বন্ধনের মতন অতি দূর্বল ভিত্তিকে যারা বড় ধরনের বন্ধনের ভিত্তি হিসেবে প্রচার করে তাদের এখানে স্বার্থ্য কি? তাদের স্বার্থ্যই হল বিভিন্ন দেশকে দূর্বল এবং খন্ড খন্ড করে শাষন ও শোষন করা অর্থাৎ সকল দেশকে ডিভাইড করে নিজেরা ইনাইটেড হয়ে( ইউনাইটেড কিংডম এবং ইউনাইটেড স্টেট) সমগ্র বিশ্বকে দূর্বল গোলাম বানিয়ে শোষন করা। এজন্যই পাঠ্য সিলেবাস থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই জাতীয়তাবাদকে এমনভাবে প্রমোট করা হয়েছে যে কেউ এর বিরুদ্ধে বলার সাহস পর্যন্ত করে না শুধু তাই নয় মানুষকে ব্রেইন ওয়াশ করার জন্য ধর্মকে পর্যন্ত অপব্যাবহার করা হয়েছে যেমন- দেশপ্রেম ঈমানের অংগ, এই কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে অথচ এটা কোন হাদিসই নয় এমনকি বানোয়াট হাদিসগুলোর মাঝেও এই ধরনের কোন কথা উল্লেখ নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে মানুষের মজবুত ভিত্তিকে পেছনে ফেলে দূর্বল ভিত্তির উপর দ্বার করিয়ে তাদেরকে বোকা বানিয়ে পুজিবাদী রাষ্ট্রগুলো শোষন করে যাচ্ছে অনেক দিন হতেই। এখন দেখতে হবে মানুষের মজবুত বা শক্তিশালী ভিত্তি আসলে কি ? সাধারনত পারিবারিক বন্ধনের চাইতেও ধর্মীয় বন্ধনের ভিত্তি হল সবচাইতে দৃঢ় কেননা একই পরিবারে দুই ধর্ম থাকলে মানুষ ধর্মীয় বন্ধনকেই বেশী প্রাধান্য দেয় আর ধর্মীয় বন্ধন এর ভিত্তিগুলোও হয় চিরন্তন এমনকি মৃত্যুর পরবর্তীতেও এই বন্ধন থাকে আর যেকোন ধর্মই সততা, ন্যায় বিচার, গন মানুষের অধিকারের কথা বলে বিধায় ধর্মীয় বন্ধনের ভিত্তিতে কোন জাতি ঐক্যবদ্ধ হলে সেই জাতীকে পরাস্ত করে শোষণ করা খুবই কঠিন তাই সুদীর্ঘ গবেষনা ও পরিকল্পনা করে এসব ধর্মীয় বন্ধনকে সাম্প্রদায়ীকতা বলে পেছনে ফেলে দূর্বল সব ভিত্তি যেমন- জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম, মাতৃভুমি, মাতৃভাষা এসবকে সামনে রেখে দূর্বল জাতি ও দেশ তৈরী করে শোষন করা হচ্ছে আর এসব করতে তাদেরকে সাহায্য করছে তাদেরই সৃষ্ট এজেন্ট বা নব্য মিরজাফরের দল অর্থাৎ নিজ নিজ দেশের সরকারগুলো, মিথ্যে নির্বাচনের নাটকের মাধ্যমে জনগনের ভোটে নির্বাচিত এসব সরকারকে যদিও সকলে পুতুল সরকার হিসেবেই জানে তবু সরকারের বিরুদ্ধে কারো কোন সচেতন পদক্ষেপ নেই। আর জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে এমনকি গর্ব করে সম্রাজ্যবাদীদের তাবেদারী করার ক্ষেত্রে সর্বশীর্ষ দেশের মাঝে আছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের অসচেতন জনগন কেননা বাঙালি জাতি উপমহাদেশের একটি অন্যতম জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রভাবিত এক প্রভাবশালী জাতি।বাঙালি জাতীয়তাবাদ ১৯ শতকে উদ্ভূত বাংলার নবজাগরণ এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও একটি অবিভক্ত স্বাধিন বাংলা সৃষ্টি পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে।

এবার আমাদের দেখতে হবে বিভিন্ন ধর্মগুলোর মাঝে সর্বশেষ অবিকৃত ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বর জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে কি বলেছেন। তাই এবার আসুন দেখি ইসলাম ধর্ম জাতীয়তাবাদকে নিয়ে কি বলে :-
ইসলামিক মতাদর্শ অনুযায়ী পৃথিবীর সকল মানুষ ও জাতি আল্লাহর সৃষ্টি।বাঙালি জাতিকে ঈশ্বর যেমন সৃষ্টি করেছেন। আমেরিকানদের ও তিনি সৃষ্টি করেছেন। ভারতীয়,পাঞ্জাবি, পাঠান,চাকমা, মারমা সবাইকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। সূরাঃ আল-হুজুরাত [49:13]হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
শ্বেতকায়(সাদা) জাতি তিনি সৃষ্টি করেছেন আবার কালো জাতি ও বাদামি জাতিও ঈশ্বর সৃষ্টি কতেছেন। যেহেতু ইসলাম বলে যে সবাইকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন আর ঈশ্বর কোন জাতিকে অন্যে জাতি থেকে সুপিরিয়র করে তৈরী করবন নি তাই একটি জাতি অন্য জাতির থেকে শ্রেষ্ঠ এমন কোন ভিত্তি আদৌতে নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেনঃহে লোক সকল শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক।শোনো, আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল তাকওয়ার কারণেই। [ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ, হাদিস নং ২৩৪৮৯]
সূরাঃ আল-ইমরান [3:103]আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার।
রসুলুল্লাহ সঃ যেটিকে তার পবিত্র হায়াতে জীবনের সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন।রসুলুল্লাহ সঃ বলেন,
“যে জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান করে সে যেন তার পিতার লিঙ্গ কামড়ে ধরে আছে।” এবং একথা বলতে তোমরা যেন লজ্জাবোধ না করো।।[বুখারী ফিল আদব আল মুফরদ।নাসাঈ ফী সুনানে কুবার।আবী শাইবা ফিল মুসান্নেফ।।ইবনে হাব্বান ফিল ইহসান। তাবরানী ফী মু’জমে কবীর। বগভী ফিশ শরহে সুন্নাহ।এবং মুসনদে আহমদ— হাদিসটি হাসান সহীহ]
একজন সাহাবী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘আসাবিয়্যাত’ কী? জবাবে তিনি ইরশাদ করলেন, অন্যায় কাজে স্বগোত্র-স্বজাতির পক্ষে দাঁড়ানো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫০৭৮)
জাতীয়তাবাদ, গোত্র প্রীতি, বংশীয় আভিজাত্য ও অহংকারবোধকে আরবী পরিভাষায় আসাবিয়্যাহ বলা হয়। এই আসাবিয়্যাহ এর কুফল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাহর কারণে মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাহর দিকে আহ্বান করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাহর কারণে যুদ্ধ করে। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১২১]
হযরত হুযাইফা রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সকল জাতি যেন তাদের বাপ-দাদা তথা বংশ নিয়ে গর্ববোধ থেকে ফিরে আসে অন্যথায় তারা আল্লাহর কাছে নাপাকির পোকামাকড় থেকেও নিকৃষ্ট গণ্য হবে। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ২৯৩৮)
জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেনঃ হে লোক সকল শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল তাকওয়ার কারণেই। [ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ, হাদিস নং ২৩৪৮৯]
ইসলাম কেন জাতীয়বাদকে প্রত্যাখ্যান করে সে সম্পর্কিত কয়েকটি দিক হলোঃ
প্রথমত, জাতীয়তাবাদের কারণে ইসলামের একটি মূলনীতি “আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ” সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়। আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ এর মর্মার্থ হলো আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা। একজন মুসলিমের প্রতি আরেকজন মুসলিমের ভালোবাসা থাকতে হবে আল্লাহর জন্যই। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী কাফির মুনাফিকদের প্রতি অন্তরে ঘৃণা থাকতে হবে আল্লাহর জন্যই। কোন পার্থিব স্বার্থের জন্য নয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের এই সম্পর্কের মধ্যে দেয়াল তৈরি করে দেয়। ভিনদেশের মুসলিমকে তখন আর আপন ভাবা যায় না। অন্যদিকে নিজ দেশের আল্লাহদ্রোহীর প্রতিও সহানুভূতি চলে আসে।দ্বিতীয়ত, জাতীয়তাবাদ মুসলিম উম্মাহর পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস করে দেয়। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে একজন মুসলিমের কষ্টে সমস্ত পৃথিবীর মুসলিমের অন্তরে কষ্ট অনুভূত হবে, এটিই ইসলামের শিক্ষা। অথচ জাতীয়তাবাদ আমাদের সেই অনুভূতি নষ্ট করে দিয়েছে। নিজ দেশের কিংবা নিজ জাতির মানুষ সুখে থাকলেই আমরা খুশি। আর এরূপ স্বার্থপরতাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদের মূল শিক্ষা।তৃতীয়ত, জাতীয়তাবাদ নিজের জাতিকে অন্যান্য জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শেখায়। ইসলামে নিজ জাতিকে নিয়ে অহংকার কিংবা বংশ মর্যাদার গৌরব চরম নিন্দনীয়। ইসলাম এরূপ কর্মকে জাহেলি যুগের কর্ম বলে উল্লেখ করেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড হলো তাকওয়া। এক্ষেত্রে গায়ের রঙ, বংশ, জাতি, ভাষা, ভূখণ্ড ইত্যাদি মূল্যহীন।চতুর্থত, জাতীয়তাবাদ মানুষকে সত্য অস্বীকার করতে শেখায়। নিজ সম্প্রদায় যখন বাতিলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং অন্য সম্প্রদায়ের নিকট থেকে সত্যের আহ্বান আসে তখন জাতীয়তাবাদের চেতনায় উন্মত্ত ব্যক্তির জন্য স্বাভাবিকভাবেই সত্যকে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। আর ঠিক এরূপ কারণেই ইহুদি সমাজ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করার পরও ইসলাম গ্রহণ করে সফল হতে পারে নি।পঞ্চমত, জাতীয়তাবাদ ন্যায় অন্যায় বোধকে নষ্ট করে দেয়। জাতীয়তাবাদের দাবিই হলো নিজের স্বজাতিকে সাহায্য করা হবে যদিও সে অন্যায় করে এবং অন্য জাতিকে সাহায্য করা হবে না যদিও তারা নিরপরাধ হয়। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা হবে, যদিও সে নিজ সম্প্রদায় কিংবা নিজ দেশের নাগরিক হয়।

জাতীয়তাবাদের অর্থ ও তার নিগূঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে যারা চিন্তা করবে তারা নিঃসন্দেহে স্বীকার করবে যে, অন্তর্নিহিত ভাবধারা, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের দৃষ্টিতে ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদ পরস্পর বিরোধী দুটি আদর্শ। ইসলাম নির্বিশেষে সমগ্র মানুষকে আহ্বান জানায় মানুষ হিসেবে। সমগ্র মানুষের সামনে ইসলাম একটি আদর্শগত ও বিশ্বাসমূলক নৈতিক বিধান পেশ করে-একটি সুবিচার ও আলাহভীরুমূলক সমাজ ব্যবস্থা উপস্থিত করে এবং নির্বিশেষে সকল মানুষকেই তা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানায়। অতপর যারাই তা গ্রহণ করে, সমান অধিকার ও মর্যাদা সহকারে তাদের সকলকেই তার গণ্ডীর মধ্যে গ্রহণ করে নেয়। ইসলামের ইবাদত, অর্থনীতি, সমাজ, আইনগত অধিকার ও কর্তব্য ইত্যাদি কোনো কাজেই ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে জাতিগত, বংশগত, ভৌগলিক কিংবা শ্রেণীগত বৈষম্য সৃষ্টি করে না। ইসলামের চরম উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন একটি বিশ্বরাষ্ট্র (World state) গঠন করা, যাতে মানুষের মধ্যে বংশগত ও জাতিগত হিংসা-বিদ্বেষের সমস্ত শৃংখলা ছিন্ন করে সমগ্র মানুষকে সমান অধিকার লাভের জন্য সমান সুবিধা দিয়ে একটি তামাদ্দুনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করা হবে। সমাজের লোকদের মধ্যে শত্রুতামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে পারস্পারিক বন্ধুত্বমূলক সহযোগিতা সৃষ্টি করা হবে। ফলে সকল মানুষ পরস্পরের জন্য বৈষয়িক উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি লাভ এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে সাহায্যকারী হবে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য ইসলাম যে নীতি ও জীবন ব্যবস্থা পেশ করে, সাধারণ মানুষ তা ঠিক তখন গ্রহণ করতে পারে, যখন তার মধ্যে কোনোরূপ জাহেলী ভাবধারা ও হিংসা-বিদ্বেষ বর্তমান থাকবে না। জাতীয় ঐতিহ্যের মায়া, বংশীয় আভিজাত্য ও গৌরবের নেশা, রক্ত এবং মাটির সম্পর্কের অন্ধ মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত করে কেবল মানুষ হিসেবেই তাকে সত্য, সুবিচার, ন্যায় ও সততা যাচাই করতে হবে-একটি শ্রেণী, জাতি বা দেশ হিসেবে নয়, সামগ্রিকভাবে গোটা মানবতার কল্যাণের পথ তাকে সন্ধান করতে হবে। পক্ষান্তরে জাতীয়তাবাদ মানুষের মধ্যে জাতীয়তার দৃষ্টিতে পার্থক্য সৃষ্টি করে। জাতীয়তাবাদের ফলে অনিবার্য রূপে প্রত্যেক জাতির জাতীয়তাবাদী ব্যক্তি নিজ জাতিকে অন্যান্য সমগ্র জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর মনে করবে। সে যদি অত্যন্ত হিংসুক জাতীয়তাবাদী (Aggressive Nationalist) না-ও হয়, তবুও নিছক জাতীয়তাবাদী হওয়ার কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইন-কানুনের দিক দিয়ে সে নিজ জাতি ও অপর জাতির মধ্যে পার্থক্য করতে বাধ্য হবে। নিজ জাতির জন্যে যতোদূর সম্ভব অধিক স্বার্থ ও সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণের চেষ্টা করবে। জাতীয় স্বার্থের জন্য অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রাচীর দাঁড় করাতে বাধ্য হবে। উপরন্তু যেসব ঐতিহ্য ও প্রাচীন বিদ্বেষভাবের উপর তার জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত, তার সংরক্ষণের জন্যে এবং নিজের মধ্যে জাতীয় আভিজাত্যবোধ জাগ্রত রাখার জন্য তাকে চেষ্টানুবর্তী হতে হবে। অন্য জাতির লোককে সাম্যনীতির ভিত্তিতে জীবনের কোনো বিভাগেই সে নিজের সাথে শরীক করতে প্রস্তুত হতে পারবে না। তার জাতি যেখানেই অন্যান্য জাতি অপেক্ষা অধিকতর বেশী স্বার্থ ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে থাকবে বা লাভ করতে পারবে, সেখানে তার মন ও মস্তিষ্ক থেকে সুবিচারের একটি কথাও ব্যক্ত হবে না। বিশ্বরাষ্ট্রের (World State) পরিবর্তে জাতীয় রাষ্ট্র (National state) প্রতিষ্ঠা করাই হবে তার চরম লক্ষ্য। সে যদি কোনো বিশ্বজনীন মতাদর্শ গ্রহণ করে, তবুও তা নিশ্চিতরূপে সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হবে। কারণ তার রাষ্ট্রে অন্যান্য জাতীয় লোকদেরকে সমান অংশীদার হিসেবে কখনো স্থান দেয়া যেতে পারে না। অবশ্য গোলাম ও দাসানুদাস হিসেবেই তাকে গ্রহণ করা যেতে পারে।
এতোটুকু আলোচনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, এ দুটি সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী। যেখানে জাতীয়তাবাদ হবে, সেখানে ইসলাম কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অনুরূপভাবে যেখানে ইসলাম কায়েম হবে, তথায় এ জাতীয়তাবাদ এক মূহুর্তও টিকতে পারে না। জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও উৎকর্ষ হলে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পথ সেখানে অবরুদ্ধ হবে। আর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে জাতীয়তাবাদের মূল উৎপাটিত হবেই। এমতাবস্থায় একজন লোক একই সময় কেবলমাত্র একটি মতকে গ্রহণ করতে পারে। একই সময় এ দুই বিপরীতমুখী নৌকায় আরোহণ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। একটি অনুসরণ করে চলার দাবী করার সাথে সাথেই তার ঠিক বিপরীত আদর্শের সমর্থন, সাহায্য ও পক্ষপাতিত্ব করা মানসিক বিকৃতির পরিচায়ক। যারা এরূপ করছে তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে বাধ্য হয়েই বলতে হবে যে, হয় তারা ইসলামকে বুঝতে পারেনি, নয় জাতীয়তাবাদকে, কিংবা এ দুটির মধ্যে কোনোটিকেই তারা সঠিকরূপে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়নি।
কিন্তু বেশীরভাগ বাংগালী স্বদেশীয় জাতীয়তাবাদ নিয়ে কি ধরনের গর্ববোধ করে তা তাদের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের মাধ্যমেও আঁচ করা যায়, আবার অনেক বাংগালী তো জাতীয়তাবাদকে ইসলাম ধর্মের সাথেও একাকার করে ফেলে।

১১) বাংগালী জাতির এরকম উভয় পাক্ষিক আরেকটি অপরাধ প্রবণতা হল- বিশেষ করে শহর অঞ্চলে বাসা ভাড়া দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রে দূর্নীতি অর্থাৎ বেশীরভাগ বাসাওয়লারাই ভারা বেশী নেওয়া সহ তাদের বছর বছর ভাড়া অতিরিক্ত বৃদ্ধি করাও এক ধরনের নিয়মে রুপান্তরিত হয়েছে যা বাংগালীদের মাঝেই বেশী দেখা যায় এসব ব্যাপার অনেকের কাছে সাধারন মনে হলেও যাদের ইনকাম কম তারা কিন্তু ভালই সমস্যায় পরে এছারাও রয়েছে বাসাওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়াদের বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হবার ঘটনা। ঠিক একই ভাবে ভাড়াটিয়া কর্তৃকও বাসাওয়ালাদের বিভিন্ন ক্ষতির ঘটনা ঘটে এমনকি খুন,ধর্ষন, বাসাওলার মেয়েকে নিয়ে ভাগিয়ে যাওয়াসহ আরও বিভিন্ন অঘটন ঘটায় তাছারা ভাড়ার টাকা দেয়া নিয়ে দূর্নীতি তো করেই।(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৬

ইসলামি চিন্তাবিদ বলেছেন: ৩য় পর্বের লিংক Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.