নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাগো যুব সমাজ

মানবতার গান গেঁয়ে যায়-তারুণ্যের প্রেরণায়

ছানাউল্লাহ

পরিবর্তনের জন্য দেশপ্রেমিক সুস্থ রাজনীতি প্রয়োজন।

ছানাউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-৫

১৪ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:০১

মাকিন সাম্রাজ্যবাদ বনাম ইহুদীবাদ

ইহুদি নিয়ন্ত্রিত মাকিন যুক্তরাষ্ট্র
লীগ অফ নেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব মাকিন সিনেটে ব্যথ হওয়ার পর ইহুদীরা মাকিন সরকারের প্রতিটি রন্ধে রন্ধে অনুপ্রবেশের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহন করে। যাতে শুধু সিনেট নয় পুরো মাকিন সমাজের উপর আধিপত্য বিস্তার লাভ করা যায়। এ পরিকল্পনার আওতায় তারা সরকারের মৌলিক তিনটি স্তম্ভ এবং কেন্দ্র ছাড়াও মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া, সংবাদ মাধ্যম, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও অথনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কেন্দ্রগুলোকে টাগেট করে। এ উদ্দেশ্য অজনের জন্য কনেল মান্ডিল হাউস অতি গোপনে তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে আমেরিকার পরিবতে লন্ডনে সলা পরামশ করেন। সেই পরামশ সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় মাকিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘আন্তজাতিক বিষয়ক মাকিন সংস্থা’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেমতে মাকিন প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক উপদেষ্টা কনেল মান্ডিল হাউস মাকিন প্রেসিডেন্টের সহায়তায় এধরণের একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। পরবতীতে ১৯২১ সালে এই সংস্থার নাম পরিবতন করে ‘Council of Foreign Relation-C.F.R’ (পররাষ্ট্র সম্পক কাউন্সিল) রাখা হয়। এই সংস্থার লক্ষ্য উদ্দেশ্য অজনের জন্য তার অধীনে আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় এবং প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিধারণ করে সেগুলোকে ‘কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশন’ সংস্থার অধীনে রাখা হয়। সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘বিজনেস কাউন্সিল, এশিয়ান ইনষ্টিটিউট, আটলান্টিক কমিটি, ইউনাইটেড ওয়াল্ড ফেডারেলিস্ট ও ট্রি টেরিয়াল কমিশন ইত্যাদী বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সি.এফ.আর অস্তিত্ব লাভের পর পরই তার মুখমাত্র ‘ফরেন এ্যাফেয়াস এর প্রকাশনা শুরু হয়। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার আওতায় সি.এফ.আর এর শক্তিধর সদস্যরা যাদের সকলেই ছিল নিরেট ইহুদী-যারা মাকিন সরকারের গুরুত্বপূণ বড় বড় পদ ট্র্যাক্সমুক্ত সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, মাকিন মিডিয়া, ব্যাংক, বীমা, ইন্সুরেন্স, কোম্পানী, ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পাটি এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক অন্যান্য কেন্দ্রের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। তারা ডেল কানেগী, ফোড ফাউন্ডেশন, রকফেলার ফাউন্ডেশন, নিউ ইয়ক টাইমস, নিউজউইক এবং মাকিন সকল টিভি স্টেশনের ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কালক্রমে অবস্থা এ পযায়ে এসে দাঁড়ায় যে, যে জাতি মুহাজির হয়ে ১৮৪৮ সালে সহায়-সম্ভলহীন অবস্থায় এসেছিল এবং যাদের জনসংখ্যার হার শতকরা ২.৯ শতাংশ, সে জাতি আজ বিশাল আমেরিকার ৯৭ শতাংশ জনগণের ওপর একচ্ছত্র কতৃত্ব করছে। মাকিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট থেকে শুরু করে রোনাল্ড রিগ্যান পযন্ত নয় জন মাকিন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জন মেকলে বলেন, আমাদের যখনই মাকিন প্রশাসনের জন্য কোন লোকের প্রয়োজন পড়ে, তখনই আমরা নিউইয়কে অবস্থিত সি.এফ.আর-এর কেন্দ্রীয় দফতরের সাথে যোগাযোগ করি। মাকিন যুক্তরাষ্ট্রে সি.এফ.আর-এর অসাধারণ ও সীমাহীন প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে।তার অনুমান এভাবে করা যেতে পারে, ১৯৫২ সাল থেকে এ পযন্ত ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুটি দল থেকেই ‘প্রেসিডেন্ট পদে’ যত লোককেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তাদের সবারই সি.এফ.আর-এর সাথে নিবিড় সম্পক ছিল। সি.এফ.আর-এর সাথে সুগভীর ও সুনিবিড় সম্পক ছাড়া কেউ-ই পদে মনোনয়ন লাভ করতে সক্ষম হন না। শুধু প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি উক্ত সংগঠনের সদস্য ছিলেন না, কিন্তু তাকে বাধ্য করা হয় জজ বুশকে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দিতে। যিনি সি.এফ.আর-এর একজন সক্রিয় ও প্রসিদ্ধ সদস্য ছিলেন। মি. রোনাল্ড রিগ্যান প্রেসিডেন্ট নিবাচিত হওয়ার প্রথম মাসেই তার ওপর আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়, যাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট জজ বুশকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। রিগ্যান সরকারের সদস্য সংখ্যা ছিল তিনশ তের জন। তাদের সকলেই ছিল সি.এফ.আর-এর সক্রিয় সদস্য। মি.বিল ক্লিনটন যখন প্রেসিডেন্ট নিবাচিত হন তখন তিনি সি.এফ.আর-এর প্রেসিডেন্ট মি.ওয়ান ক্রিস্টোফারকে তার সরকার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিবগ নিবাচন করার পূণ স্বাধীনতা প্রদান করেন। সে হিসাবে তার সরকারের সকল লোকবলই ছিল সি.এফ.আর-এর সক্রিয় ও চৌকস সদস্য। সি.এফ.আর এর মুখপাত্র ফরেন এ্যাফেয়াসএরও মাকিন যুক্তরাষ্ট্রে অসাধারণ জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে। মাকিন নৌবাহিনীর কমান্ডার এ্যাডমিরাল ওয়াড-এর বক্তব্য ও সাক্ষ্যই তার প্রভাব-প্রতিপত্তি অনুমানের জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন,ফরেন এ্যায়াসের নিবন্ধগুলো পড়লে ভবিষ্যতে মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির কমকৌশল কি তা সহজেই অনুমান করা যায়। ফরেন এ্যাফেয়াস যদি কোন প্রস্তাব দ্বিতীয়বার প্রকাশ করে তাহলে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা এমনভাবে বাস্তবায়ন করে, যেন তা এক ‘সবজন স্বীকৃত বাস্তবতা’। এতো গেল ইহুদীদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রভাব সম্পকে। শুধু প্রশাসন নয় মাকিন যুক্তরাষ্ট্রে সকল স্তরে ইহুদীদের অল্পনীয় প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। ১৯৯৭ সালের একটি জরিপ থেকে তাদের সেই কল্পনাহীন প্রভাব প্রতিপত্তি সহজেই অনুমান করা যায়। এ জরিপ রিপোট থেকে জানা যায়, আমেরিকায় কোটিপতি ইহুদীদের হার শতকরা ২৫ শতাংশ, জুতা শিল্পের শতকরা ৩৪ শতাংশ, পানীয় শিল্পের শতকরা ৫০ শতাংশ, পোশাক ও ফ্যাশন শিল্পে শতকরা ১০০ শতাংশ, পেট্রোলিয়াম শিল্পে শতকরা ৯৮ শতাংশ, শিক্ষার ক্ষেত্রে শতকরা ২০ শতাংশ, আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ইহুদী শিক্ষকের হার শতকরা ৫০ শতাংশ, হাভাডের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে ইহুদী শিক্ষকদের হার শতকরা ৭৫ শতাংশ, মেডিসিন শিল্পে শতকরা ২৫ শতাংশ, ল’ কলেজে শিক্ষকের হার শতকরা ৩৮ শতাংশ, ডাক্তার ও আইনজীবিদের হার শতকরা ৩৮ শতাংশ। আর মিডিয়ায় তো তাদের একচ্ছত্র দখলেই রয়েছে। শুধু ‘নিউ হাউস ফ্যামেলী’ নামে একটি ইহুদী পরিবারের করায়ত্তেই ৪৮টি দৈনিক, ২০টি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, ১৮২টি রেড়িও স্টেশন, ১৪০টি টিভি ক্যাবল এবং ১৭৩৫টি প্রকাশনা রয়েছে। আমেরিকায় প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হয় ৬০ মিলিয়ন কপি। এসবই ইহুদী মালিকানা পত্রিকা। অপরদিকে আমেরিকায় নিবাচনে ইহুদী ভোটারদের ভোটের হার শতকরা ৯২ শতাংশ, অথচ সামগ্রিকভাবে গোটা জাতির ভোটের হার শতকরা ৫৪ শতাংশ। আর আমেরিকায় বসবাসরত মুসলমানদের ভোটের হার শতকরা কেবল ২৮ শতাংশ। তাইতো আমেরিকায় সবকিছুই ইহুদীদের পছন্দের বৃত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে আমেরিকান খ্রিস্টানরা যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তবে ইহুদীদের পছন্দে পরিচালিত হতে হবে। তাই বলা যায়, মূলত আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের ইহুদীরাই পরিচালিত করে, এর বাইরে সে যেতে পারে না। তাই মাকিন সাম্রাজ্যবাদকে ইহুদী সাম্রাজ্যবাদ বললে ভূল হবে না।

ইসরাইলকে অর্থনৈতিক সহায়তা

ইসরাঈলকে অথনৈতিকসহ সকল সহযোগিতার ক্ষেত্রে মাকিন সাম্রাজ্যবাদ দীলকে দরিয়া। কারণ আমেরিকান প্রেসিডেন্টরাই তাদের অনুগ্রহেই নিবাচিত হন। তাই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ইসরাঈলের জন্য সাত খুন মাফ। ইসরাইলের অনুগৃহীত অবস্থার স্পষ্ট মাপকাঠি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কাছ থেকে পাওয়া এর মোট বিদেশী সাহায্যের পরিমাণ। শুধু ২০০৫ সালেই অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরাইলকে দিয়েছে প্রায় ১৫৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণের পরিবর্তে অধিকাংশই সরাসরি অনুদান। উল্লেখ্য, আসলে মোট সহায়তার পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ সরাসরি মার্কিন সহায়তা দেওয়া হয় অস্বাভাবিক অনুকূল শর্তে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইসরাইলকে বস্ত্তগত সহায়তা দেয় যা বিদেশী সহায়তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
কারণ সমর্থনের এই মাত্রা নিয়ে এখন আর কেউ প্রায় কোনো প্রশ্নই তোলে না। এ কথা ভুলে যাওয়া খুবই সহজ, এখন যে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ আছে তা ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার পর কয়েক দশক ধরে গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে মার্কিন নেতৃবৃন্দ একটা ইহুদি আবাসভূমির জন্য জায়নিস্টদের লক্ষ্য অর্জনে মাঝে মাঝে অসার বাগাড়ম্বরপূর্ণ সমর্থন দিতেন। ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের বিভক্ত পরিকল্পনাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ’৪৮ সালের মে মাসে স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেন। ট্রুম্যান ও আইসেনহাওয়ার প্রশাসন এ কথাও অনুধাবন করে, ইসরাইলকে ঘনিষ্ঠভাবে গ্রহণ করার অর্থ আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে উস্কানি দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চাশের দশকে ইসরাইল ও এর আরব প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। এ সময় ইসরাইলে অর্থসাহায্য পরিমিত হয়ে আসে এবং ইসরাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক সাহায্য প্রায় ছিল না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্ক পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে বেশ উষ্ণ হয়ে ওঠে। তবে কেনেডি প্রশাসনের সময়ই ইসরাইলের সামরিক নিরাপত্তার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বোধগম্য অঙ্গীকার করে। বস্ত্তত ১৯৬২ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গোল্ডামায়ারকে কেনেডি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে একটা সম্পর্ক আছে যা ব্রিটেনের ‘সঙ্গে তার গোটা বিশ্বের সম্পর্ক বিষয়ে তুলনীয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্পষ্ট, কোনো আক্রমণ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সহায়তায় এগিয়ে আসবে। আমাদের সে সামর্থ্য আছে এবং তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ এর পরপরই অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে কেনেডি ইসরাইলে বড় ধরনের মার্কিন অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেন ওই অস্ত্র ছিল বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। নীতির এ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কৌশলগত বিবেচনা ক্রিয়াশীল ছিল। এর মধ্যে ছিল মিসরে সোভিয়েত অস্ত্র বিক্রির ভারসাম্য বিধান, ইসরাইলের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রোধ এবং মার্কিন শান্তি উদ্যোগে ইসরাইলি নেতৃবৃন্দের অনুকূলে সাড়া দিতে উৎসাহ প্রদান। কিন্তু এর সঙ্গে আরো ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতাপূর্ণ ইসরাইলি কূটনীতি, একাধিক ইসরাইল সমর্থক উপদেষ্টাকে প্রভাবিত করা এবং কেনেডির একটা বোধগম্য কারণ ছিল ইহুদি ভোটার ও ডোনারদের সমর্থন রক্ষা করা। তার সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইহুদি ভোটার ও ডোনারদের একটা ভূমিকা ছিল। বিমানবিধ্বংসী মারণাস্ত্র বিক্রির পর আরো অনেক ধরনের অস্ত্র বিক্রির পথ উন্মুক্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৯৬৪ সালে দুইশর বেশি এম-৪৮ যুদ্ধট্যাংক। এই প্রয়াসে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতা গোপন রাখা এবং একই সঙ্গে আরব বিশ্বে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সীমিত করার লক্ষ্যে ওই ট্যাংকগুলো ইসরাইলে পাঠায় পশ্চিম জার্মানি। এর পরিবর্তে পশ্চিম জার্মানি অনুরূপ ট্যাংক পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। সামগ্রিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের পরিমাণ ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের পর আমূল পরিবর্তন ঘটে। মোটামুটিভাবে ১৯৪৯ থেকে ’৬৫ সাল পর্যন্ত গড়পড়তা বার্ষিক সহায়তা ৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার থেকে (এর মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ অর্থনৈতিক ও খাদ্যসহায়তা) ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়ে ওই সাহায্যের পরিমাণ গড়পড়তাভাবে বৃদ্ধি পায় বার্ষিক ১০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারে। এ সহায়তার পরিমাণ ১৯৭১ সালে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৩ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলারে (এর মধ্যে মোটামুটিভাবে শতকরা ৮৫ ভাগ ছিল সামরিকসহায়তা)। এরপর ১৯৭৩ সালে ইয়ম কিপুর যুদ্ধের পর ওই সহায়তার পরিমাণ পাঁচগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশী সহায়তাপ্রাপ্ত দেশ হলো ইসরাইল এবং এখনো ওই অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। ওই সময়কালে ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের ধরন ঋণ থেকে সরাসরি অনুদানে পরিবর্তিত হয়েছে। মার্কিন সহায়তার মধ্যে বেশির ভাগই হলো সামরিক সহায়তা – অথ©নৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সে তুলনায় খুব কম। মার্কিন কংগ্রেসের সরকারি গবেষণা সংস্থা কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের ক্লাইড মার্কের মতে, ইসরাইল চেয়েছিল অনুদানের পরিবর্তে ঋণের আকারে সাহায্য। অনুদানের কর্মসূচি তদারকির জন্য মার্কিন সামরিক দলের উপস্থিতি ইসরাইল এড়াতে চেয়েছিল। ১৯৭৪ সাল থেকে কিছু অথবা সব মার্কিন সামরিক সহায়তা ঋণের আকারে ইসরাইলকে দেওয়া হয়েছিল; ওই ঋণ পরিশোধের দাবি পরিত্যাগ করা হয়। পরিভাষার দিক থেকে সহায়তাকে বলা হয় ঋণ। কিন্তু বাস্তবে সামরিক সহায়তা হলো অনুদান।
ইসরাইল বর্তমানে বছরে গড়ে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার সরাসরি বিদেশী সহায়তা পায়। এ পরিমাণ অর্থ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিদেশী সহায়তা বাজেটের মোটামুটি এক-ষষ্ঠাংশ যা ইসরাইলের জিডিপির শতকরা প্রায় দুই ভাগের সমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ হলো সামরিক সহায়তা এবং অবশিষ্টাংশ দেওয়া হয় বিভিন্ন আকারের অর্থনৈতিক সহায়তা। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে এ স্তরের সরাসরি বিদেশী সহায়তার পরিমাণ সরাসরি প্রত্যেক ইসরাইলির ওপর ৫০০ মার্কিন ডলারের বেশি বার্ষিক ভর্তুকি দেওয়া হয়। তুলনামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পাওয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে মিসর। এ দেশের প্রতিজন লোক পায় ২০ মার্কিন ডলার। পাকিস্তান ও হাইতির মতো দরিদ্র দেশের লোক জনপ্রতি পায় যথাক্রমে ৫ ও ২৭ মার্কিন ডলার। জেরুজালেম ও ওয়াশিংটন ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক সহায়তা বাতিল করতে সম্মত হয় এবং ১৯৯৭ সাল থেকে ওই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদিকে কংগ্রেস ১৯৯৯ আর্থিক বছর থেকে ইসরাইলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ১২০ কোটি মার্কিন ডলার কমিয়ে দিয়েছে। এ পদক্ষেপের আংশিক ক্ষতিপূরণ করা হয়েছে প্রতিবছর ৬ কোটি মার্কিন ডলার সমমানের সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির মার্কিন অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া আরো আছে অতিরিক্ত সহায়তা প্যাকেজে কংগ্রেসের সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার, যেমন ১৯৯৮ সালের উইয়ি চুক্তি বাস্তবায়নের কাজে সমর্থন দিতে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান (ওই চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইল পশ্চিমতীর থেকে আংশিকভাবে সৈন্য প্রত্যাহারে সম্মত হয়) এবং ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্ত্ততির জন্য ইসরাইলকে ২০০৩ সালে সামরিক খাতে বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা হিসেবে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত প্রদান।
বছরে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বেশ উদার সহায়তা, তবে এটাই পুরো ঘটনা নয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আনুমানিক ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার অন্যান্য একাধিক সুযোগসুবিধাকে বাদ দিয়ে হিসাব করা হয় এবং এভাবে সত্যিকার মার্কিন সহায়তার মাত্রাকে ব্যাপকভাবে কম করে দেখানো হয়। বস্ত্তত ১৯৯১ সালে প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য লি হ্যামিলটন রিপোর্টারদের বলেন, ইসরাইল হলো তিনটা দেশের মধ্যে একটা যাকে সাহায্যের পরিমাণ সাধারণভাবে উদ্ধৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, বার্ষিক সহায়তার পরিমাণ ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি।
এই অসামঞ্জস্য দেখা যায় আংশিকভাবে, কারণ ইসরাইল তার সাহায্য পায় অধিক সুবিধাজনক শর্তে যা মার্কিন সাহায্যপ্রাপ্ত অন্য দেশ পায় না। মার্কিন বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত দেশগুলোর অধিকাংশই তাদের অর্থ পায় চার দফায়। কিন্তু ১৯৮২ সাল থেকেই ইসরাইল ওই অর্থের সবটা পায় আর্থিক বছরের প্রথম ৩০ দিনের মধ্যেই। এর অর্থ হলো আপনি পুরো বছরের বেতন পাবেন জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে এবং পুরো টাকা খরচ না হওয়া পর্যন্ত জমা ওই অর্থের ওপর সুদ পাওয়ার সুযোগ থাকছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সাধারণত ঘাটতি বাজেটে চলে। সব সাহায্য একসঙ্গে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ ভিন্ন খাত থেকে আনতে হয়। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস হিসাব করে দেখিয়েছে, এ জন্য আগেভাগে থোক অর্থ প্রদানের জন্য প্রতিবছর ৫ কোটি থেকে ৬ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ ধার করার জন্য মার্কিন করদাতাদের ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া ইসরাইলকে অতিরিক্ত সুদ প্রদান থেকে মার্কিন সরকার অব্যাহতি দেয়, যদি ইসরাইল খরচ হয়নি এমন অর্থ মার্কিন ট্রেজারি বিলে পুনরায় বিনিয়োগ করে। ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী ‘ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং’-এর অর্থ প্রথম দিকে ছাড় করার জন্য ২০০৪ সালেই ইসরাইল ৬৬ কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত সুদ হিসেবে লাভ করে। ১৯৭৬ সালের অস্ত্র রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরোপিত সাধারণ সীমার বাইরে ইসরাইল আরো লাভ করে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম (অতিরিক্ত মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম দেওয়া হয় বন্ধু দেশগুলোকে, হয় বিনামূল্যে অথবা ব্যাপক ছাড় দিয়ে) প্রথমে এই সীমা নির্ধারণ করা হয় ২৫ কোটি মার্কিন ডলারে (জাহাজ ছাড়া), কিন্তু ১৯৯০ সালের ৫ নভেম্বর সমন্বয় বিলে ১৯৯১ সালে ইসরাইলে প্রেরণের জন্য ৭০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের অতিরিক্ত মার্কিন সরঞ্জাম ‘শুধু একবার’ অনুমোদন দেওয়া হয়।একইভাবে ‘ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং’-এরও প্রয়োজন আছে মার্কিন সহায়তা গ্রহণকারীর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে অর্থ আছে তা ব্যয় করার এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা শ্রমিকদের কাজে নিয়োজিত থাকতে সহায়তা করার জন্য। কংগ্রেস বার্ষিক সমন্বয় বিলে ইসরাইলকে এ খাতেও বিশেষ অব্যাহতিদান করে। যা হোক, কংগ্রেস মার্কিন সামরিক সহায়তার চার ডলারের মধ্যে প্রায় এক ডলার ব্যবহার করার জন্য ইসরাইলকে অনুমোদন দেয়, যেন তা নিজেদের প্রতিরক্ষাশিল্পকে ভর্তুকি দিতে পারে। মার্কিন সামরিক সহায়তা গ্রহণকারী অন্য কোনো দেশকে এই সুবিধা দেওয়া হয় না, সম্প্রতি এক কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস রিপোর্টে এ কথা উল্লেখ করা হয়। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল থেকে কেনা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ফার্মগুলোর লাভ ইসরাইলের প্রতিরক্ষাশিল্পকে প্রয়োজনীয় মাত্রার অর্থ অর্জনে সহায়তা করে এবং তা ক্রমেই অত্যাধুনিক হয়ে ওঠে।’ বস্ত্তত ২০০৪ সালের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র দেশ ইসরাইল বিশ্বের মধ্যে অষ্টম বৃহৎ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়। মিসর ও তুরস্কের মতো ইসরাইলকেও তার পুরো ‘ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং’-এর অর্থ চলতি বছরের কাজ সম্পাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে পরবর্তী বছরগুলোর প্রত্যাশিত ব্যয় বহন করার জন্য ওই অর্থের কিছু অংশ আলাদা করে রাখতে হয় না। মার্কিন জেনারেল অ্যাকাউন্টিং অফিসের মতে, মার্কিন ধারার এ ধরনের ‘নগদ প্রবাহ’ পদ্ধতিতে ‘একটা দেশ সাধারণভাবে যা পারে তার চেয়ে বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সেবা কেনার জন্য ফরমায়েশ দার হতে পারে। কারণ কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের কিছু পরিমাণ অর্থ অবশ্যই সংরক্ষিত রাখতে হয়।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতদিন একই পরিমাণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে ততদিন ধরে ইসরাইল তার সরঞ্জামের দাম মেটাতে পারবে। এটা এমন এক ধরনের অবস্থা, ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তার সমর্থন কমিয়ে আনা খুবই কষ্টকর হবে। এ ছাড়া ফাইন্যান্সিং পদ্ধতিকে আরো বেশি করে কাজে লাগিয়ে মার্কিন সহায়তা লাভকারী দেশগুলো সাধারণভাবে ‘ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং’ থেকে ঋণ এবং অনুদান সমান হারে গ্রহণের আশা করে। কিন্তু ইসরাইলকে তার ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং বরাদ্দের (প্রত্যাহারকৃত) অংশবিশেষের অনুদান গ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয় ঋণাংশের কোনো কিছু ব্যবহার করার আগেই। যে তারিখ থেকে ঋণ কার্যকর হয় তা বিলম্বিত করার এই পদ্ধতিতে সুদের পরিমাণ কমে যায় এবং এই পদ্ধতিতে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্য দেনা সুদ কমিয়ে আনে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্কিন অর্থনৈতিক সহায়তাপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইলই একমাত্র দেশ যাকে ওই অর্থ খরচের জন্য কোনো হিসাব দিতে হয় না। অন্যান্য দেশে সাহায্য দেওয়া হয় নির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পে, যেমন এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ, মাদকবিরোধী কর্মসূচি, শিশুস্বাস্থ্য, গণতন্ত্র এবং শিক্ষা উন্নয়ন ইত্যাদি। কিন্তু ইসরাইল সরাসরি নগদ অর্থ পায় হস্তান্তরিত থোক হিসেবে। এ অব্যাহতি দেওয়ার ফলে যে উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হয় সেই উদ্দেশ্যে তা ব্যবহৃত না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা রোধ করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে যেমন পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের জন্য দালান নির্মাণ। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের ক্লাইড মার্কের মতে, মার্কিন অর্থনৈতিক সহায়তা ইসরাইলকে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের হিসাব ছাড়াই। সে কারণে ইসরাইল ওই মার্কিন সাহায্য কীভাবে ব্যবহার করে তা বলার কোনো উপায় নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের আর একটা পদ্ধতি হলো ঋণের জামিন, যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ইসরাইল নিম্নহারে অর্থ ধার করার সুবিধা পায়। এ জন্য সে শত শত মিলিয়ন ডলার সুদ প্রদান থেকে রেহাই পায়। নববইয়ের দশকের প্রথম দিকে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের জামিন চায় এবং তা পায়। সোভিয়েত ইহুদি অভিবাসীদের ইসরাইলে বসতি স্থাপনের জন্য ওই ঋণজামানত চাওয়া হয়েছিল। মার্কিন সরকার ঋণজামানতে সরাসরি অর্থ দেয় না – অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রেই কেবল মার্কিন সরকার বেসরকারি ঋণ প্রদানকারীর অর্থ পরিশোধ করে। এসব ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ক্ষেত্রেই দাবি করে, আসলে কোনো খরচই হয়নি এবং এর ফলে মার্কিন করদাতাদের সত্যিকার কোনো খরচ হয় না। যা হোক, ঋণজামানতের একটা বাজেটবিষয়ক ফলাফল আছে। বর্তমান মূল্যমানের ভিত্তিতে ঋণের সময়ে যে ক্ষতি হতে পারে তার হিসাব ঠিক করার জন্য কংগ্রেসকে তহবিলের সমন্বয় করতে হয়। ১৯৯২ সালের ঋণজামানতের ক্ষতির হিসাব করা হয় ১০ থেকে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়বার ঋণজামানত দেয় ২০০৩ সালে, ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের। ওই ঋণজামানত দিয়ে ইসরাইলকে সাহায্য করা হয় ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধপ্রস্ত্ততি গ্রহণ, দীর্ঘায়িত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইনতিফাদার বিরুদ্ধে ব্যয় মেটানোর জন্য। কারণ অধিকৃত এলাকায় মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসরাইলের আইনগত বাধা আছে। এ জন্য প্রকৃত বরাদ্দকৃত অর্থ শেষে এমন পরিমাণ কমিয়ে আনা হয় যা বসতি কাজে নির্মাণের জন্য ইসরাইলের প্রাক্কলিত ব্যয়ের সমান হয়। এ অর্থ যতটা বেশি বলে মনে হয় আসলে ততটা নয়। এতে সরাসরি মার্কিন সাহায্য হ্রাস পায় না। ইসরাইলকে শুধু ঋণ করা অর্থের সামান্য অংশের জন্য কিছুটা বেশি হারে সুদ দিতে হয়।সরকারি আথি©ক সাহায্য ও ঋণজামানত ছাড়াও ইসরাইল মার্কিন নাগরিকদের কাছ থেকে বেসরকারি অনুদান হিসেবে বার্ষিক প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার লাভ করে, মোটামুটিভাবে অর্ধেক সরাসরি প্রদান এবং অর্ধেক স্টেট অব ইসরাইল বন্ড কেনার মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এসব বন্ডের অনুকূল সমর্থন আছে, তবু এর ওপর যে সুদ প্রদান করা হয় তা করমুক্ত নয়। ১৯৮৪ সালের ডেফিসিট রিডাকশন অ্যাক্টের ধারা থেকে কংগ্রেস নির্দিষ্টভাবে ওই অব্যাহতি দেয়। ওই অ্যাক্ট অনুযায়ী ফেডারেল হারের নিম্নে অন্যান্য বন্ডের মোট পরিমাণের ওপর অতিরিক্ত দন্ড করারোপের বিধান আছে। একইভাবে বিদেশের অধিকাংশ দেশে দাতব্য কাজে বেসরকারি অনুদান কর ধার্যযোগ্য নয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল আয়কর চুক্তির বিশেষ ধারা অনুযায়ী ইসরাইলকে প্রদত্ত অনেক বেসরকারি অনুদান কর ধার্যযোগ্য।
ইসরাইলে অর্থের প্রবাহ সাধারণভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকেই মার্কিন নাগরিকদের বেসরকারি অনুদানও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ তার স্মৃতিকথায় লেখেন, বিদেশে বসবাসরত সমৃদ্ধ ইহুদিরা (অনেক মার্কিনিসহ) পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ইসরাইলের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচিতে ব্যক্তিগত অনুদান হিসেবে অর্থ জোগান দিয়ে সহায়তা করেছিল। ইসরাইলি সাংবাদিক মাইকেল কারপিনের মতে, ওই তহবিল সংগ্রহের প্রয়াসে প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন আবরাহাম ফেইনবার্গ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত মার্কিন ব্যবসায়ী, লোকহিতৈষী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি ওই তহবিল সংগ্রহের প্রয়াসে নিজেও অর্থ দেন এবং এ প্রয়াসের সঙ্গে কানাডার বেভারেজ ব্যবসায়ী স্যামুয়েল ব্রন্থম্যান এবং রথচাইল্ড পরিবারের অনেক সদস্য জড়িত ছিলেন বলে কথিত আছে। ফেইনবার্গ কখনো মার্কিন দাতাদের নাম প্রকাশ করেননি এবং তার নিজের ভূমিকার কথাও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি। বর্তমানে ফ্রেন্ডস অব ইসরাইল ডিফেন্স সার্ভিসেসের মতো অনেক গ্রুপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তহবিল সংগ্রহ করে ‘যেসব যুবক পুরুষ ও মহিলা সৈনিক ইহুদি স্বদেশভূমি রক্ষা করে তাদের সহায়তা এবং সামাজিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কর্মসূচি সমর্থন করার জন্য।’ সম্প্রতি নিউইয়র্কে এক নৈশভোজের জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয় যা মার্কিন আইন অনুযায়ী করযোগ্য।মার্কিন নাগরিকদের অন্যান্য ব্যক্তিগত অনুদান অধিকৃত এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে সহায়ক হয়। পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের জন্য এসব অনুদান (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে দাতব্য হিসেবে বা অন্যান্য ‘ফ্রেন্ডস…’ সংগঠনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানসহ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর রেয়াতযোগ্য নয়। কিন্তু এসব বাধানিষেধ আসলে বলবৎ করা কষ্টকর এবং অতীতে তা খুব হালকাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, জুইস এজেন্সি ফর ইসরাইলকে (এটা আধাসরকারি সংগঠন যা ইসরাইলে নতুন আগমনকারীদের বসতি স্থাপনে সহায়তা করে) দেওয়া মার্কিন অনুদানের কর রেয়াত মর্যাদাকে রক্ষা করার জন্য অধিকৃত অঞ্চলে বসতি স্থাপনে সহায়তার কাজ ওই এজেন্সির সেটেলমেন্ট বিভাগ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং ওই কাজের দায়িত্ব ওয়ার্ল্ড জায়নিস্ট অর্গানাইজেশনের মধ্যে নতুন ‘সেটেলমেন্ট ডিভিশন’কে দেওয়া হয়। কিন্তু গেরসম গোরেনবার্গ উল্লেখ করেন, ‘ওই ডিভিশন ছিল বহিরাবরণ যা সব কাজের জন্য জুইস এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করে… এই পরিবর্তন মার্কিন ইহুদি লোকহিতৈষীদের অধিকৃত অঞ্চল সম্পর্কে স্পষ্ট করে দেয়। বাস্তবে একই ধরনের লোক একই ধরনের কাজ করে।’ এ সমস্যা বিবেচনায় আনা হয় যখন সাবেক ক্রিমিনাল প্রসিকিউটর টালিয়া সাসনের নেতৃত্বে ইসরাইল সরকার সরকারিভাবে এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে। ওই গবেষণায় প্রকাশ পায়, ওয়ার্ল্ড জায়নিস্ট অর্গানাইজেশনের (যা বিশ্বব্যাপী নামকরা ইহুদি সমর্থন লাভ করে) সেটেলমেন্ট ডিভিশন অধিকৃত অঞ্চলে অবৈধ বসতি সৃষ্টির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আরো ব্যাপকভাবে বলা যায়, যেহেতু ইসরাইলি দাতব্য ব্যয় কার্যকর হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর কর্তৃপক্ষের আওতার বাইরে সেহেতু ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগঠনগুলোর অনুদান ইসরাইলে একবার হস্তান্তরিত হওয়ার পর তা পর্যবেক্ষণ করা কষ্টকর। বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্ধারণ করতে পারে না কি পরিমাণ কর-রেহাই করা ব্যক্তিগত অনুদান অবৈধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব দান বেশ লক্ষণীয় বিষয় যখন কেউ অনুধাবন করে, নাইজার, মিয়ানমার, সিয়েরালিয়ন বা আফগানিস্তানের মতো ইসরাইল গরিব বা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নয়। এর বিপরীতে ইসরাইল তখন একটা শিল্পশক্তি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, ইসরাইলের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে ছিল বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে উনত্রিশতম অবস্থানে, যা হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া বা তাইওয়ানের চেয়ে বেশ বেশি এবং লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। জাতিসংঘের ২০০৬ সালের মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অনুযায়ী এর অবস্থান ছিল তেত্রিশতম এবং ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের ২০০৫ সালের ‘জীবনমান’ স্তর অনুযায়ী এর অবস্থান ছিল আটত্রিশতম। তবু তুলনামূলকভাবে সমৃদ্ধ এই দেশ আমেরিকার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পায়; প্রতিবছর এ দেশ এমন পরিমাণ অর্থ পায় যে, এর ফলে অনুন্নত রাষ্ট্র বাংলাদেশ, বলিভিয়া ও লাইবেরিয়ায় মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ হ্রাস পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দৃঢ় ইসরাইল সমর্থকও এ বৈষম্যের কথা স্বীকার করেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির নিয়ারইস্ট রিপোর্টের সাবেক সম্পাদক মিচেল বার্ড এবং ইসরাইল সমর্থক মিডলইস্ট ফোরামের ডেনিয়েল পাইপস ১৯৯৭ সালে লেখেন, ‘ইসরাইল একটা সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে এবং এর মাথাপিছু আয় গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সুতরাং ইসরাইলকে সহায়তা করার মার্কিন ইচ্ছা এখন আর সম্পূর্ণ প্রয়োজনের ওপর ভিত্তিশীল নয়।’ ইসরাইলের সুবিধার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য আর্থিক ভারও বহন করে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করতে ইসরাইলকে সম্মত করার জন্য সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই ধরনের আর্থিক ভার গ্রহণ করে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, ১৯৭৫ সালে মিসর ও ইসরাইলের মধ্য যে বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একটা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংকটকালে ইসরাইলের জ্বালানি প্রয়োজন মেটানোর নিশ্চয়তা দেয় এবং ইসরাইলের জন্য ‘একটা অতিরিক্ত কৌশলগত রিজার্ভ’ গড়ে তুলতে অর্থ জোগানে সম্মত হয়। এ জন্য কয়েকশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ অন্তর্ভুক্ত ছিল। জ্বালানি তেলের ওই নিশ্চয়তা পুনরায় নবায়ন করা হয় ১৯৭৯ সালের মার্চে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে চূড়ান্ত শান্তি আলোচনার সময় এবং সেই সময় থেকে নীরবে নবায়ন করা হচ্ছে।
সবশেষে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের একাধিক প্রতিবেশীকে যে আর্থিক সহায়তা দেয় তার অংশবিশেষ দেওয়া হয় ইসরাইলের স্বার্থে। মিসর ও জর্দান হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়। কিন্তু দেখা যায়, এসব সাহায্যের অধিকাংশই দেওয়া হয় ভালো আচরণের জন্য; নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদনে আগ্রহের জন্য ওই অর্থ দেওয়া হয়। মিসর ১৯৭৪ সালে ৭ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার পায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। কিন্তু সিনাই সিনাই-২ বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মিসর পায় ১৯৭৫ সালে ১১২ কোটি ৭০ লাখ এবং ১৯৭৬ সালে ১৩২ কোটি মার্কিন ডলার। মিসরে মার্কিন সহায়তা ১৯৭৮ সালে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৭৯ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৯০ কোটি মার্কিন ডলারে। আসলে ১৯৭৯ সালে মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কায়রো এখনো বছরে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য পায়। একইভাবে জর্দান পায় ১৯৯৪ সালে ৭ কোটি ৬০ লাখ এবং ১৯৯৫ সালে ৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু ১৯৯৪ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের জন্য কংগ্রেস বাদশাহ হোসেনকে পুরস্কৃত করে। এই পুরস্কারের মধ্যে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জর্দানের ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ মাফ এবং জর্দানে মার্কিন সহায়তার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার। ১৯৯৭ সাল থেকে জর্দানে মার্কিন সহায়তার পরিমাণ গড়ে কমবেশি বার্ষিক ৫৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। মিসর ও জর্দানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি ওয়াশিংটনের উদারতার প্রকাশ ঘটে অন্যভাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।ভাল লাগল।
তবে তাদের মত যোগ্য লোক ও নেই কোথাওে

১৪ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫

ছানাউল্লাহ বলেছেন: এরা মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য সময় শ্রম ও টাকা ব্যয় করে মেধা কাটায় তাই তারা যোগ্য লোক-আবু মুছা আল আজাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.