![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পিআর নয়, বাংলাদেশের জন্য সেরা বিকল্প এমএমপি : গণতন্ত্রের সুষমীকরণ ও নতুন দিগন্ত
মানুষের সমাজে শাসন আর আইন তৈরি করতে হয়। শাসনের জন্য প্রয়োজন হয় জনমতের, আর সেই জনমতকে চূড়ান্তভাবে জানতে হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের বেছে নেয়, যারা তাদের হয়ে আইন প্রণয়ন করবে, নীতি ঠিক করবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো — সেই নির্বাচন পদ্ধতিই যদি ভুল হয়? যদি নির্বাচন পদ্ধতির কারণে জনগণের প্রকৃত অভিপ্রায় বিকৃত হয়ে যায়? যদি অল্প সংখ্যক মানুষের পছন্দের উপর পুরো দেশের ভাগ্য নির্ভর করে?
এই প্রশ্নগুলো আমাদের বাংলাদেশকে গভীরভাবে নাড়া দেওয়া প্রয়োজন। কারণ বর্তমান বাংলাদেশে যে নির্বাচন পদ্ধতি চালু আছে, তার মাধ্যমে প্রকৃত জনগণ কী চায়, সেটা প্রায়শই প্রতিফলিত হয় না। আর এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের কথার আসল সূত্রপাত।
বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির অসারতা ও ত্রুটি
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন হয় First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে, যাকে বাংলায় বলা যায় প্রথম-গত-পোস্ট পদ্ধতি। এটি খুব সহজ -যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পাবেন, তিনিই বিজয়ী। তাতে সে ভোট যতই কম হোক না কেন।
যেমন ধরুন, সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলো। একজন পেলেন ২০% ভোট, বাকিরা ১৮%, ১৬%, ১৫%, ১৪%, ১২% ও ৫%।
তাহলে মাত্র ২০% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন প্রথমজন। অথচ দেখা যাচ্ছে ৮০% ভোট পড়েছে তার বিরুদ্ধে।
এই পদ্ধতি এমনকি আরও ভয়াবহ যখন দেখা যায় — বাংলাদেশের কোনো কোনো নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর বিপক্ষে ৬৫%-৭০% ভোট পড়েছে। ভালো প্রার্থী শুধু দল দুর্বল বলে হারছেন। আবার খারাপ প্রার্থী দল শক্তিশালী হওয়ায় জিতে যাচ্ছেন।
তাহলে কি এটিকে জনগণের প্রকৃত রায় বলা যায়? এমন নির্বাচন গণতন্ত্রের মূল মন্ত্রের — “জনমতের যথাযথ প্রতিফলন” — সাথে সাংঘর্ষিক নয় কি?
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের এসব ত্রুটির কিছু সমাধান
বিশ্বের অনেক দেশ এই ধরনের সমস্যাগুলোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা চালু করেছে। যেমন:
চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স:
জার্মানিতে প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিক, চ্যান্সেলর পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ।
ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ভাগাভাগি করেন (কো-হাবিটেশন)।
দ্বি-দফা নির্বাচন:
ফ্রান্স, ব্রাজিল, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে প্রথম দফায় কেউ ৫০% না পেলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়। এতে প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়।
না ভোট (NOTA):
ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন ইত্যাদিতে ভোটার সরাসরি বলার সুযোগ পান: “আমরা কাউকেই চাই না।”
ছায়া সরকার, সংসদীয় কমিটি:
যুক্তরাজ্যে ছায়া মন্ত্রী থাকে, ভারত ও কানাডায় সংসদীয় কমিটিতে বিরোধীদলীয় নেতৃত্ব থাকে।
আনুপাতিক পিআর পদ্ধতি (PR):
জার্মানি, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড প্রমুখ দেশে ভোটের শতকরা হারে সংসদে আসন ভাগ হয়। এতে ছোট দল, নতুন ধারণা বা বিকল্প কণ্ঠও উঠে আসে।
পিআর পদ্ধতি ও তার সীমাবদ্ধতা
পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে মানুষ দলকে ভোট দেয়, কোনো ব্যক্তিকে নয়। দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পায়। এতে অনেক সুবিধা:
- রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য সংসদে প্রতিফলিত হয়।
- ছোট দলেরও মতামত সংসদে যায়।
তবে বাংলাদেশের মতো দেশে এর একাধিক সমস্যা:
- স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ থাকবে না।
- প্রার্থী-ভোটার সরাসরি সম্পর্ক থাকবে না।
- দল তাদের পছন্দমতো লোককে সংসদে পাঠাবে — এতে অর্থের লেনদেন, নীতিহীন মানুষ সংসদে ঢুকতে পারে।
তাই সেরা সমাধান এমএমপি (MMP)
কেন MMP?
এখন প্রশ্ন —
এমন কোনো পদ্ধতি কি নেই যেখানে
- ভোটার ব্যক্তিকেও ভোট দিতে পারবে, আবার
- দলকেও ভোট দিতে পারবে,
- ভোটের শতকরা হারে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হবে,
- সরাসরি এলাকার এমপি-রও দায়িত্ব থাকবে?
উত্তর: আছে।
এটাই MMP (Mixed Member Proportional system) — মিশ্র আনুপাতিক পদ্ধতি।
* MMP কিভাবে চলে?
একজন ভোটার দুটি ভোট দিবে।
-- একটি ভোট ব্যক্তিকে (তার এলাকার প্রার্থীকে)।
-- একটি ভোট দলকে।
ধরুন সংসদে মোট ৪০০ আসন। এর মধ্যে ৩০০ হবে সরাসরি নির্বাচিত প্রার্থী (FPTP), বাকি ১০০ হবে দলীয় ভোটের শতকরা অনুপাতে (PR)। যদি কোনো দল সরাসরি ভোটে কম প্রার্থী জেতে, তখন দলের ভোট শতকরা হিসাব করে লিস্ট থেকে বাকি এমপি সংসদে পাঠানো হয়।
উদাহরণ,
ধরুন- একটি দল সরাসরি নির্বাচনে ২০% আসন পেয়েছে, কিন্তু দল ভোটে পেয়েছে ৪০%।
তখন তাদের আরও ২০% লিস্ট এমপি সংসদে দেওয়া হবে, যাতে তাদের মোট আসন ৪০% হয়।
এমএমপি বাংলাদেশের জন্য কেন সবচেয়ে উপযুক্ত?
* এতে সরাসরি এলাকার প্রার্থী ও জনগণের সম্পর্ক থাকবে।
* আবার জাতীয়ভাবে ভোটের শতাংশ অনুসারে দলগুলো সংসদে যথার্থ প্রতিনিধিত্ব পাবে।
* স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচিত হতে পারবে।
* মেধাবী কিন্তু রাজনৈতিকভাবে দুর্বল প্রার্থীও লিস্ট থেকে যেতে পারবেন।
* ছোট দলও কিছু আসন পেয়ে সংসদে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে।
নতুন প্রস্তাবনা : ছায়া সংসদ ও বিভাগীয় কাউন্সিল
শুধু এমএমপি নয়, আরও কিছু সৃজনশীল প্রস্তাব রাখতে হবে। যেমন:
ছায়া সংসদ
নির্বাচনে যারা হেরে যান, তাদের নিয়েও একটি ছায়া সংসদ গঠন করা হবে।
বছরে ২–৩টি অধিবেশন হবে। তারা মতামত প্রস্তাব আকারে মূল সংসদে পাঠাবে।
এতে জনগণের বহু মতামত উঠে আসবে, পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীদেরও রাষ্ট্র গঠনের অংশ করা যাবে।
বিভাগীয় ছায়া কাউন্সিল
যেসব প্রার্থী অন্তত ১০% ভোট পেয়েছেন, তাদের বিভাগীয় পর্যায়ে ছায়া কাউন্সিল থাকবে।
তারাও মতামত প্রস্তাব আকারে সংসদে পাঠাবে।
এতে জনগণের প্রায় ৯০% ভোটই রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হবে।
ন্যায়পাল, সাংবিধানিক আদালত ও শক্তিশালী চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স
একটি ন্যায়পাল (Ombudsman) ও সাংবিধানিক আদালত সংসদ ভবনের ভেতরেই থাকবে, যাতে তারা সংসদ বা সরকারের কোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
উপ-রাষ্ট্রপতি, উপ-প্রধানমন্ত্রী, বিভাগীয় উন্নয়নমন্ত্রী প্রভৃতি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মূল সমস্যা হলো — প্রার্থী-ভোটের অসামঞ্জস্য, জনমতের অসম প্রতিফলন, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন। এমএমপি পদ্ধতি, ছায়া সংসদ, ন্যায়পাল-সাংবিধানিক আদালত, এবং বিভাগীয় কাউন্সিল — এই নতুন কাঠামো রাষ্ট্রের শিকড় থেকে শাখা পর্যন্ত গণতান্ত্রিকতা ছড়িয়ে দেবে। এতে মেধা, নতুন প্রজন্ম, ভিন্ন মত, এবং প্রকৃত সংখ্যাগুরু জনগণের অভিপ্রায় রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। আর সেটাই তো গণতন্ত্রের চূড়ান্ত সৌন্দর্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: হুম।