নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।
রাত পৌনে বারোটা। নৌমন্ত্রীর পিএস মফিজ নিচতলা থেকে দেখল স্যারের দোতলার রুমে লাইট জ্বলছে। নিশ্চয়ই মিনিস্টার সাহেব হবেন। মফিজ অবাক হল। মন্ত্রী ঘুমাতে যায় সাড়ে দশটায়। আজ কী হল? রাত দশটায় গণভবন থেকে টেনিফোন করে বলেছে সকাল ৯ টায় গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে। গতকাল রাজধানীতে শিশুদের উপর গাড়ি তুলে দিয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিকের প্রশ্নে নৌমন্ত্রী খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে এখন সকলের চক্ষুশূল। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীরও চক্ষুশূল। চারিদিকে নিন্দার ঝড়। তবে কি পদত্যাগ করার জন্যেই প্রধানমন্ত্রী ডেকেছে আর সেই দুশ্চিন্তায় মন্ত্রীর ঘুম আসছে না? নাকি মৃত শিশু দুটির জন্যে মায়ার চোটে মন্ত্রীর চোখে ঘুম নাই!
চিন্তিত মফিজ ধীর পায়ে দোতলায় উঠে দেখল নৌমন্ত্রী ঘামছে আর দ্রুত পায়চারী করছে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, স্যার আসব? মন্ত্রী বলল, আয়।
মফিজঃ স্যারের কি শরীর খারাপ?
মন্ত্রীঃ না, পেটে সামান্য ট্রাবল। সংবাদ সম্মেলন শেষে শুয়োরেরবাচ্চা আক্কাস আলির মেয়ের বিয়েতে কোর্মা পোলাও খেয়ে পেটের মধ্যে ভট ভট করছে। কিছুক্ষণ পরপর পাদ মারছি, পাদের গন্ধে ঘুম আসছে না।
মফিজঃ আক্কাস আলি না আপনার খুব কাছের বন্ধু! বকা দেন যে!
মন্ত্রীঃ অবশ্যই বকা দিব। যার মেয়ের বিয়ের খাবার খেয়ে পেট ভটভট করে সে তো শুয়োরেরবাচ্চাই।
মফিজঃ স্যারের মনটাও খারাপ মনে হচ্ছে। অস্থির অস্থির ভাব। বুকের ব্যাথা কি বাড়লো? দুইবার কিন্তু হার্ট এটাক হইছে, আরেকবার হলেই...
মন্ত্রীঃ তুই গাধা নাকি? গরু ছাগল চিনতে পারলেই তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে- এই বক্তব্য দেয়ার পর শুয়োরেরবাচ্চা সাংবাদিকদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে সিঙ্গাপুর গিয়ে বাইপাসটা করে আনলাম ভুলে গেলি? এখন আর ব্যাথ্যা ট্যাথা নাই, নব্বইয়ের আগে মরছি না, হা হা হা হা।
মফিজঃ সেটা সত্যি, ভাল মানুষ অত সহজে মরে না। আপনিও মরবেন না। আপনি মরলে দেশ সেবা করবে কে? মন্ত্রী সভায় কাজের লোক আপনি ছাড়া আর কাউকে দেখি না। বাকি সবাই তো মিটিং এ ঝিমায়!! সে যাক, তাহলে স্যার আপনাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? খাবারে সমস্যা হলে বড়জোড় পাতলা পায়খানা হবে। আপনার তো অম্লশূল। জীবনভর পাতলা পায়খানা। সে নিয়ে অস্থির কেন? নাকি পদত্যাগের গন্ধ পাচ্ছেন স্যার?
মন্ত্রীঃ পদত্যাগ!! কি বলিস! আচ্ছা, তোর কেন একথা মনে আসলো?
মফিজঃ না মানে স্যার, চারিদিকে যেভাবে সমালোচনা শুরু হয়েছে, এরপর আপনার ওই হাসির ভিডিওটা ফেসবুকে বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। বজ্জাত ছেলেপেলে শেয়ার দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে। সিভিল সোসাইটি থেকে শুরু করে সাংবাদিক লেখক সবাই একটু ক্ষেপাই মনে হচ্ছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী এত সকালে কোনদিন ডাকে নাই। তাই ভাবলাম কোন খারাপ খবর আছে কিনা।
মন্ত্রীঃ তোর বয়স হইছে ঠিকই কিন্তু কথাবার্তা শিশুদের মত। তোর নাম হওয়া উচিত আব্দুল মফিজ শিশু। আজ থেকে তোকে এই নামেই ডাকবো।
মফিজঃ জ্বি স্যার। অবশ্যই ডাকবেন।
মন্ত্রীঃ শোন আব্দুল মফিজ শিশু, এই আমি কি সামান্য দুইটা গরীবের বাচ্চা মারা গেছে বইলা পদত্যাগ করার লোক? আমি জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমিতির নির্বাহী সভাপতি হইছি কলা খাওয়ার জন্য? শুয়োরেরবাচ্চা সাংবাদিক তো দূরের কথা প্রাইমমিনিষ্টারেরও ক্ষমতা নাই আমার কিছু করার। কত জাহাজ ডুবল, তারেক মাসুদসহ কত নামী দামী মানুষ মরলও, বাল ছিঁড়তে পারছে আমার?
মফিজঃ পারে নাই স্যার। ওরা তো মরে নিজের দোষে স্যার। কত বড় সাহস, বড় বড় বাস দেখলে সাইড দেয় না, বড় বাস কি আঙুল চুষবে নাকি। এই সেদিন নারায়ণগঞ্জে একটা ছেলে মুত্তে নামছে গাড়ী থেকে, পরে গাড়িতে উঠার সময় আহত হয়, হেলপার ড্রাইভার তারে নদীতে ফেইলা দিছে। বলি কি, মোতে ধরার আর সময় পেলি নারে হারামজাদা! ভারতেও প্রতিদিন কত শত...
মন্ত্রীঃ থাম। তোর নাম এখন থেকে আব্দুল মফিজ সাবালক।
মফিজঃ ধন্যবাদ স্যার! আপনার বিমর্ষ চেহারার মানে আমার কাছে এখন পরিষ্কার। বাচ্চা দুটি মারা গেল, তাদের মায়ায় আপনার ঘুম হচ্ছে না। আপনার হৃদয় ডিমের কুসুমের মত নরম। আপনার সাথে থেকে স্যার জীবনটা সত্যি ধন্য। আপনার মত মানুষ হয় না। অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ (কান্না)।
মন্ত্রীঃ গাধা নাকি তুই? তোর কি ধারণা ওই গরীব নোংরা ছোকরা ছোকরির জন্য এত রাত জেগে আছি আমি? এত সামান্য কারণে আমার ঘুম হারাম হবে? এই শাজাহান ওই দুই টাকার মানুষ নিয়া চিন্তা করার লোক না, এই শাজাহান সারাদেশ নিয়ে চিন্তা করার লোক, ষোলকোটি মানুষের ভালোর জন্য প্রতিদিন আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ি, খাস দিলে দোয়া করি। সুতরাং এই আলতু ফালতু মায়া ছায়ার কথা আমার সামনে বলবি না। তোর পার্মানেন্ট নাম আজ থেকে আব্দুল মফিজ গাধা।
মফিজঃ জ্বি স্যার অবশ্যই আমি গাধা। তাহলে স্যার আপনার এমন বিমর্ষ চেহারা আর কী কারণে হতে পারে আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না।
মন্ত্রীঃ আছে আছে, অনেক বড় কারণ আছে রে আব্দুল মফিজ গাধা। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণখুলে হাসার সময় আমার দাঁত নাকি সামান্য হলদেটে লেগেছে। আমার মেয়েটা টিভিতে দেখে বলল। সত্যিই কি আমার দাঁত হলুদ, নাকি আমাদের টিভির পর্দার রং নষ্টরে আব্দুল মফিজ গাধা? চিন্তা করে দেখ, সেদিন ইন্ডিয়া গিয়ে এক লাখ রুপী দিয়ে দাঁত স্কেলিং করায় আনলাম, সেই দাঁত নাকি হলুদ। শুয়োরেরবাচ্চা ইন্ডিয়ান ডাক্তার কি গরুর মোত খায় নাকি কে জানে! এই মুখ আর কিভাবে মানুষরে দেখাইরে আব্দুল মফিজ গাধা?
মফিজ বোবার মত দাঁড়িয়ে, ঘামছে। কেঁপে কেঁপে বলল, স্যার আমারও পেট ভটভট করতেছে। আমিও তো আপনার সাথে কুত্তার মত খাইছি। যাই স্যার। দ্রুত বেরিয়ে দরজার বাইরে গিয়ে মফিজ হড়হড় করে বমি করে দিল।
পুনশ্চঃ প্রধানমন্ত্রী নৌমন্ত্রীকে ডেকেছেন শিশুদুটির পরিবারের সাথে দেখা করতে। যাবার সময় যেন অবশ্যই অন্তত পঞ্চাশজন সাংবাদিক সাথে থাকে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলে দিয়েছেন, ওদের মা বাবাকে ধরে অবশ্যই হু হু করে কেঁদে ফেলতে হবে, চোখে পানি না আসলে গ্লিসারিন দিতে হবে। নৌমন্ত্রীর চোখের পানির দৃশ্য যেন এইচডি আকারে ভিডিও করা হয়।
**সমাপ্ত**
জাহিদ কবির হিমন
আখেন, জার্মানি
৩০ জুলাই ২০১৮
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:১৬
হিমন বলেছেন: ধন্যবাদ ঋতো
২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: হাসতে নাকি জানেনা সব কে বলেছে ভাই, এই শোন না কত হাসির খবর বলে যাই।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:১৬
হিমন বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: ইয়েস।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:১৬
হিমন বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব!
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৩৫
ঋতো আহমেদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন হিমন