নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা আমার তৃষ্ণার জল!

বেনামি মানুষ

কেউ না

বেনামি মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্ফিয়ুস ও ইউরিডিস: একটি সফল প্রেমকাহিনী

২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৩২

পৌরাণিক কাহিনী বটে, তবুওতো ভালোবাসা



আপোলো ছিলেন সৌন্দর্যের দেবতা, শিল্প ও সঙ্গীতের দেবতা। তিনি যখন বীণা বাজিয়ে গান করতেন তখন দেবতারা পর্যন্ত অবাক হয়ে শুনতেন।

এমন বাপ-মায়ের ছেলে অর্ফিয়ুস যে গান-বাজনায় অসাধারণ ওস্তাদ হবেন, সে আর আশ্চর্য কি? অর্ফিয়ুসের গুণের কথা দেশ-বিদেশ রটে গেল—স্বয়ং আপোলো খুশী হয়ে তাঁকে নিজের বীণাটি দিয়ে ফেললেন। পাহাড়ে পর্বতে বনে জঙ্গলে অর্ফিয়ুস বীণা বাজিয়ে ফিরতেন আর সমস্ত পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে তা শুনত। অর্ফিয়ুসের বীণার সুরে আকাশ যখন ভরে উঠত, তখন সুরের আনন্দে গাছে গাছে ফুল ফুটত, সমুদ্রের কোলাহল থেমে যেতো, বনের পশু হিংসা ভুলে অবাক হয়ে পড়ে থাকত।

এ রকমে দেশে দেশে বীণা বাজিয়ে অর্ফিয়ুস ফিরছেন এমন সময় একদিন ইউরিডিস নামে এক আশ্চর্য সুন্দরী মেয়ে তাঁর বীণার সুরে মোহিত হয়ে দেখতে আসলেন, কে এমন সুন্দর বাজায়। ইউরিডিসকে দেখামাত্র অর্ফিয়ুসের মন প্রফুল্ল হয়ে উঠল, তাঁর আনন্দ বীণার ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে আকাশকে মাতিয়ে তুলল। তন্ময় হয়ে সঙ্গীত শুনতে শুনতে ইউরিডিসের মন একেবারে গলে গেল। তারপর ইউরিডিসের সাথে অর্ফিয়ুসের বিয়ে হল; মনের আনন্দে দুইজনে দেশ-দেশান্তরে বেড়াতে চললেন।

কিন্তু এ আনন্দ তাঁদের বেশীদিন থাকল না। একদিন মাঠের মধ্যে এক বিষাক্ত সাপ ইউরিডিসকে কামড়ে দিল এবং সেই বিষেই ইউরিডিসের মৃত্যু হল। অর্ফিয়ুস তখন শোকে পাগলের মত হয়ে পড়লেন, তাঁর বীণার তারে হাহাকার করে করুণ সঙ্গীত বেজে উঠল। কি করবেন, কোথায় যাবেন, কিছুই ভেবে না পেয়ে, ঘুরতে ঘুরতে অর্ফিয়ুস একেবারে অলিম্পাস্‌ পর্বতের উপর এসে পড়লেন। সেখানে দেবরাজ বজ্রধারী জুপিটার তাঁর দুঃখের গানে ব্যথিত হয়ে বললেন, "যাও, পাতালপুরীতে প্রবেশ করে যমরাজ প্লুটোর কাছে তোমার স্ত্রীর জন্য নতুন জীবন ভিক্ষা করে আন। কিন্তু এটা মনে রেখো, এ বড় দুঃসাধ্য কাজ; প্রাণের মায়া যদি থাকে, তবে এমন কাজে যাবার আগে চিন্তা করে দেখ।"

অর্ফিয়ুস নির্ভয়ে বীণা বাজাতে বাজাতে পাতালের দিলে চললেন। তাঁর প্রিয়তমাকে চাই-ই চাই।
পাতালপুরীর সিংহদ্বারে যমরাজের তিনমাথা কুকুর দিনরাত পাহারা দেয়। অর্ফিয়ুসকে আসতে দেখে রাগে তার ছয় চোখখ একেবারে জ্বলে উঠল— তার মুখ দিয়ে বিষাক্ত আগুন ঠিকরে পড়তে লাগল। কিন্তু অর্ফিয়ুসের বীণার সুর যেমন তার কানে এসে লাগল, অমনি সে শান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। অর্ফিয়ুস অবাধে পাতালপুরীতে প্রবেশ করলেন।

তখন পাতালপুরী কম্পিত করে বীণার ঝঙ্কার বেজে উঠল। নরকের অন্ধকার ভেদ করে সে সঙ্গীত পাতালের অতল গুহায় প্রবেশ করল। সে শব্দে যমদূতের হুঙ্কার আর পাপীদের চিৎকার মুহূর্তের মধ্যে থেমে গেল।
জলের মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে অত্যাচারী ট্যান্টেলাস পিপাসায় পাগল,—পান করতে গেলেই জল সরে যায়! বীণার সঙ্গীতে সে তাহার তৃষ্ণা ভুলে গেল। মহাপাপী ইক্সিয়ন নরকের ঘুরন্ত চক্রে ঘুরতে ঘুরতে এতদিন পরে বিশ্রাম পেল, ঘুরন্ত চক্র বন্ধ হয়ে রইল। ধূর্ত নিষ্ঠুর সিসিফাস্‌ চিরকাল ধরে পাহাড়ের উপর পাথর গড়িয়ে তুলছে, যতবার তোলে ততবার পাথর গড়িয়ে পড়ে; সেও দারুণ শ্রমের দুঃখ ভুলে সেই সঙ্গীত শুনতে লাগল।

অর্ফিয়ুস যমরাজের সিংহাসনের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন। যমরাজ প্লুটো ও রানী প্রসেরপিনা গম্ভীর হয়ে বসে আছেন; তাঁদের পায়ের কাছে নিয়তিরা তিন বোনে জীবনের সূতা নিয়ে খেলছে।
একজন সূতা টেনে ছাড়াচ্ছে, একজন সেই সূতা পাকিয়ে জড়াচ্ছে, আর একজন কাঁচি দিয়ে পাকান সূতা ছেঁটে ফেলছে।
অর্ফিয়ুসের সঙ্গীতে যমরাজ সন্তুষ্ট হলেন, নিয়তিরা প্রসন্ন হলো। তখন আদেশ হলো, "ইউরিডিসকে ফিরিয়ে দাও, সে পৃথিবীতে ফিরে যাক। কিন্তু সাবধান অর্ফিয়ুস! যমপুরীর সীমানা পার হবার আগে ইউরিডিসের দিকে ফিরে চেয়ো না—তবে কিন্তু সবই পণ্ড হবে।"

অর্ফিয়ুস মনের আনন্দে বীণা বাজিয়ে চললেন, তাঁর পিছন পিছন ইউরিডিসও চলেন। যমপুরীর সীমানায় এসে অর্ফিয়ুস মনের আনন্দে নিষেধের কথা ভুলে ফিরে তাকালেন। অমনি তাঁর চোখের সম্মুখেই ইউরিডিসের অপূর্বসুন্দর মূর্তি বিদায়ের ম্লান হাসি হেসে শূন্যের মধ্যে মিলিয়ে গেল।

তারপরে অর্ফিয়ুস আর কি করবেন? তিনি বনে জঙ্গলে পাহাড়ে পাগলের মত সন্ধান করতে লাগলেন। তাঁর মনে হল, বনের আড়ালে আড়ালে, পর্বতের গুহায় গুহায় ইউরিডিস লুকিয়ে আছেন। মনে হল, গাছের পাতায় পাতায় বাতাসের নিশ্বাস বলছে, "ইউরিডিস, ইউরিডিস—" পাখিরা শাখায় শাখায় করুণ সুরে গান করছে "ইউরিডিস, ইউরিডিস!"

এমনভাবে অস্থিরমনে যখন তিনি ঘুরছেন, তখন একদিন মদের দেবতা ব্যাকাসের সঙ্গীরা তাঁকে ধরে বলল, "তুমি স্ফূর্তি করে বীণা বাজাও, আমরা নাচব।" কিন্তু অর্ফিয়ুসের মনে সে স্ফূর্তি নেই, তাই বীণার তারেও কেবল দুঃখের সুরই বাজতে লাগল। তখন মাতালেরা রেগে বলল, "মার একে—এ আমাদের আমোদ মাটি করছে।" তখন সকলে মিলে অর্ফিয়ুস্‌কে মেরে তার দেহ নদীতে ভাসিয়ে দিল। সেই দেহ ইউরিডিসের নাম উচ্চারণ করতে করতে ভেসে চলল।

শূন্যে অর্ফিয়ুসের আনন্দধ্বনি শুনে সকলে বুঝতে পারল আবার তিনি ইউরিডিসকে ফিরে পেয়েছেন।

জলে স্থলে নদীর কলস্রোতে ঝরণার ঝর্ঝর শব্দে আনন্দ-কোলাহল বেজে উঠল।

সুকুমার রায়ের গল্পসমগ্র থেকে নিয়ে শুধু চলিত বাংলায় লিখেছি। বাকিটা আল্লামালুম

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: আহা কি দুঃখ???

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৪০

বেনামি মানুষ বলেছেন: :(( :(( :((



আদতে দুঃখ না, অর্ফিউস আর ইউরিডিস মিলিত হয়েছে ফাইনালি

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


এই সামান্য মীথটি বিশ্বের মানুষের জন্য বিশাল বিষাদময় গল্প

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:১৪

বেনামি মানুষ বলেছেন: সেটাই।


ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮

আরজু পনি বলেছেন:
বড় প্রেম শুধু কাছে টানে না মেরেও ফেলে! :(

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬

বেনামি মানুষ বলেছেন: মেরে ফেলেছে বাক্কাসের দল! :((

বড় প্রেমে মিলন নিশ্চয়।
তাদেরও মিলন হয়েছে বৈ কি।

৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
দারুণ বিষাদী প্রেমের মিথ। আহ!!!

ধন্যবাদ ভাই। :)

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮

বেনামি মানুষ বলেছেন: আহ!
এখানে আসার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: মিথিক্যাল স্টোরি বেশ ভালো লাগে। এইসব প্রেমগাঁথা এখনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে শেখায় :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.