![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা মারা যাবার পর যেই বড় ভাই আমাদের অভিভাবক হবার কথা ছিলো, বাবা মারা যাবার বছর দুইতিনেকের মাথায় সে হঠাৎ কেমন যেনো হয়ে গেলো। তাঁর হাসি-আনন্দ, খেয়াল-খুশি, ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিছুই আর পূর্বের মতো নেই।
ব্যবসায় নিয়ে একদম ব্যস্ত, কথা একেবারেই কম বলে। মেজাজ চড়া থাকে, এবং সময় সময় বায়বীয় নেশায় বুদ হয়ে রয়। বাড়ির বোনেদের বিয়ে দেয়া হয়ে গেলে সে তাদের বাড়িতে কদাচিৎ যায়। ভালো লাগলে যোগাযোগ করে নইলে না। আমরা যারা বাড়িতে থাকি, আমি আর মা আর ছোট বোন, তাদের সে কোনোরকম খোঁজখবর নিতো। এমনই খোঁজখবর নিতো যে যেবার আমি মেট্রিক পাশ করলাম সেবার সে বলে বসলো, আরে তুই যে মেট্রিক পাশ করে ফেললি টেরইতো পেলাম না! কেমনে কেমনে জানি তুই বড় হয়ে গেছিস!
আমাদের যে বোনের সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো, স্কুলে পড়ার সময় দুজনে সেম ক্লাসে পড়তো, সেই বোনের সাথে হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া ই কথা বার্তা বন্ধ করে দিলো।
এর পরের বোনটা যার ভিন্ন জেলায় বিয়ে হয়েছে, তাঁর বাড়ি বারকয়েক গিয়েছিলো, তারপর সেদিকেও বিমুখ।
আমার পিঠাপিঠি যে ভাই, সে একটু ভিন্ন আমেজের লোক, বড় ভাই তাঁর সাথেও একরকম কোনো কারণ ছাড়া ই কথা বলে কম কম।
আমাদের যে সবার ছোট বোন, সবার আদরের বোন। ছোটবেলা তাঁকে কোলে নেবার জন্য আমরা হুড়োহুড়ি জুড়ে দিতাম। বড় ভাইকে সে মাম বলে ডাকতো। আমরা সবাই আনন্দে হাত তালি বাজাতাম। আর তাঁকে খুশি করতে বড়ভাই মামের কতো কসরত! পাতা কেটে বাঁশি বানানো, রশি বেঁধে দোলনা টানানো, কাপড় দিয়ে পুতুল বানানো, ছেলেদের মতো চুল কেটে দেয়া কতো কিছু!
সেই ছোট বোনটাও তাঁর আদর বঞ্চিত অনেকদিন ধরে। কথাই বলে না তাঁর সাথে!
আর আমার সাথে, সেই যে কবে মেট্রিক দিয়েই বাড়ির বাহির হয়েছিলাম তারপর থেকেই ছন্নছাড়া যোগাযোগ। ইচ্ছে হলে বছরে একআধবার খবর নিবে নইলে না।
আমরা ঈদে চাঁদে ভাইবোনেরা যখন বাড়িতে একত্র হই বা আমরা যখনই কেউ কারোর সাথে যোগাযোগ করি আমাদের আলোচ্য বিষয়ের বেশির ভাগই থাকে আমাদের বড় ভাইয়ের কথা।
তাঁর বদলে যাওয়ার কথা।
বদলে যাবার সম্ভাব্য কারণের কথা।
আমাদের কি কি ভুল ভ্রান্তি সেসব কথা।
আমরা কি করলে ভাই আমাদের আগের মতো হবে সে কথা।
পরবর্তীতে আমরা বাড়িতে একত্র হলে ভাইকে আমাদের কাছে ভিড়াবার জন্য আমরা কী কী করবো তার কথা।
যদিও আমাদের অভ্যন্তরীণ আলোচনা আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে।
কি জানি এক অজানা ভয়ে বাড়িতে গেলে আমরা ভাইয়ের সামনে বেশি কথা বলতে পারিনা।
খাবার সময় হয়েছে খেতে আসো বলা আর কেমন আছো ছাড়া কোনো প্রশ্নও করতে পারিনা আমরা। বিশেষ করে আমি। আমার এমনও হয়েছে ভাইকে একটু বেশি সময় দেখার জন্য গাছের আড়ালে চেয়ার পেতে বসে রয়েছি ঘন্টার ঘন্টা। সে যে আমার ছোটবেলার আদর্শ পুরুষ! আমাকে সবচে বেশি আদর করা লোক! কিন্তু সরাসরি প্রাণ খুলে কথা বলা হয়ে উঠে নি।
জানিনা আমাদের ভাইবোন কে তাঁর ব্যাপারে কেমন ভাবে, আমার ভেতরে সেই মেট্রিকের পর থেকেই তাঁর প্রতি অভিমান কাজ করে।
আমি কতো আয়েজন করে মেট্রিক দিলাম, পাশ করলাম, আর আমারই ভাই, যে আমাদের অভিভাবক হবার কথা সে কতো উদাসীন!
এভাবেই চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। বছর দশেক তো হবে ই। কতো দিন আমরা ভাইবোনেরা চোখের জল ফেলেছি ভাই কে আগের মতো পেতে! সে কথা আমরা জানি আর জানে বিধাতা।
এভাবেই যখন চলে আসছে আমাদের বিরহ যন্ত্রণা আর তাঁর উদাসীনতা, আমরা ধরে নিয়ছিলাম আমাদের ভাই এরকম ই রবে। আগের মতো হবে না।
ধরেই নিয়েছিলাম বিধাতাপুরুষের রুদ্রদৃষ্টি আমাদের উপরে পতিত হয়েছে আমাদেরই কোনো পাপ কর্মের ফল হিসেবে।
সেজন্য আমার বোনেরা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও করেছে কিন্তু, যেই সেই।
এই যেই সেই নিয়েই যখন আমরা ছিলাম তখন হঠাৎ সেদিন ভাই আমাকে ফোন দিলো।
ফোন তাঁর নাম্বার দেখে আমার পিলে চমকে যাবার যোগার! আমার হা পিত্যেশ শুরু হয়ে গেছে কি বলবো ফোন ধরে!
কতোদিন পর আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলবো! কতো বার আমার ভাই কে ফোন দিতে গিয়ে অভিমানে আর দেয়া হয়ে ওঠে নি। সেই ভাই আমায় ফোন দিয়েছে!
কি বলবো না বলবো ঠিক করতে করতে ফোন রিসিভ করে অনভ্যস্তের মতো বললাম, কেমন আছো?
আমার সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়ে আমার ভাই আমার সাথে টানা আটাশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ড কথা বলেছে ফোনে।
কথা বলেছে আমাকে কোনো কথা না বলিয়েই।
কথা বলেছে কেমন আছে সেটা না বলেই।
একা একা অপ্রকৃতিস্থের মতো কথা বলেছে।
যেসব বলার সেসব বলেছে, যেসব বলার নয় সেসবও বলেছে।
তাঁর ভেতরের সব কথা সম্ভবত এই আটাশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ডে বলে ফেলেছে।
আমি তার আধা বুঝেছি আধা তন্ময় হয়ে শুনেছি।
বলেছে সে তাঁর সুখ, তাঁর দুঃখ।
কিন্তু আমার কেমন জানি লাগছিলো, আমার ভাই এরকম কেনো আমার সাথে হঠাৎ সব বলবে! আমার ভাই কি তবে বদলাচ্ছে আবার!
আমার কেমন জানি লাগাটা বিষাদে রূপান্তরিত হলো সন্ধ্যায় বড় আপার ফোনে।
কাঁদতে কাঁদতে বললো জানিস, ভাই এসে বিকেলে আমার বাড়িতে কি করেছে! আমাকে বলে খাবার কিছু থাকলে আগে দে। তিন চার দিন ধরে তেমন ভালো করে কিছু খাইনি, খিদেয় পেঠ জ্বলছে!
তারপর খেতে বসে সে কি পাগলের মতো কথা!
যেনো সব বলে দিবে আজ!
যেনো এই বিগত দিনের না বাসা ভালো গুলো আজ বেসে নিবে।
কথায় এতো আবেগে, যেনো প্রলাপ বকছে!
যেনো কোনো বাচ্চা আপন মনে বসে একা একা কথা বলছে!
চেহারায় তাঁর অপার্থিব শিশুসুলভ আভা।
আমার চোখ তখন জ্বলে টলোমলো, মুখে কোনো শব্দ করতে পারছি না, শুধু বারবার নাক টানছি। বহু কষ্টে, বুকের পাথর সরিয়ে আমার সাথে ভাইয়ের ফোনে কথা বলার ব্যাপারটা বললাম, বললাম আমাদের ভাই কি পাগল হয়ে গিয়েছে?
আমার হৃৎপিণ্ড যেনো বুক ছেড়ে গলায় এসে ঠেসে আছে। কথা বলতে পারছিনা আর। শরীর জুড়ে এক অসহ্য জ্বালা, যেনো এখনই আমার মরণ হবে!
বড় আপা বললো তুই কাঁদছিস কেনো?
আমি বললাম তুমি কাঁদছো কেনো!
বললো আমাদের ভাই ফিরেছে আমাদের কাছে, সুখে কাঁদছি।
শেষকথা:
ভাই বোনদের পাগলের মতো ভালোবাসুন, নইলে সময় যাবে,শান্তি পাবেন না। পৃথিবীর সব সংসারে প্রেম থাকুক অটুট। সুখ থাকুক স্বর্গের মতো।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩১
বেনামি মানুষ বলেছেন: শুনে প্রীত হলাম।
এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: বাড়ির বোনদের দেয়া তওয়া এই জায়গাটা ঠিক করে দিন। খুব সুন্দর লিখেছেন।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৪
বেনামি মানুষ বলেছেন: দেয়া তওয়া কথাটা আমাদের এখানে প্রবাদ হিসেবে প্রচলিত।
তবু ও মুছে ঠিক করে দিলাম।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৪
চিটাগং এক্সপ্রেস বলেছেন: গল্পটা ভাল ছিল