![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি জিও। কুয়েটে পড়াশোনা করছি, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ । লেখা লেখি খুব বেশি করিনি কখন। এই পথে তাই আমি নতুন। ভাল লাগে বই পড়তে, মুভি দেখতে । নতুন নতুন লেখার চেষ্টা করছি, তাই কেউ পড়ে দু-একটা ভুল বের করে দিলে খুশি হব। অপেক্ষায় রইলাম কারো গঠনমূলক সমালচনার জন্যে। ধন্যবাদ।
বন্ধু। বন্ধুত্ব ।
আমাদের জীবনে এই শব্দ দুইটির গুরুত্ব অনেক। আমাদের জীবনের বেশিরভাগ আনন্দময় মুহূর্তের সাথে জড়িয়ে থাকে এই শব্দদুটি । আমাদের শুখ দুঃখ , আমাদের আবেগ-অনুভূতির সাথে জড়িয়ে থাকে এই বন্ধু, এই বন্ধুত্ব। বলা হয়ে থাকে মানুষ নাকি সামাজিক জীব । সে নাকি সঙ্গী ছাড়া বাচতে পারে না। কথাটি সর্বজনীন সত্য নয় । সবাই এমন না । কেউ কেউ আছে নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিব্যি জীবন পার করে দিচ্ছে অথবা এমন বলা যায় যে সে তাঁর নিজের সাথে নিজের বন্ধুত্বটা উপভোগ করছে ।
আমাদের সবার জীবনে বন্ধুত্তের শুরুটা হয় ছেলেবেলায় । হয়ত পাড়ার গলিতে ক্রিকেট খেলার সময়, আবার হয়ত স্কুলের প্রথম দিন কারো পাশে বসায় । এই বন্ধুত্ব হয় নিঃস্বার্থ , অটুট । এতে থাকে না কোন হিংসা , থাকে না কোন ঈর্ষা । এই বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের পরবর্তী জীবনে নিখাদ আনন্দ যোগায়। বুড়ো আঙ্গুলে ভাব আর কনিষ্ঠা তে আড়ি ; এই সময়ের সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি । প্রতিদিন বিকেলে স্যারের কাছে পরেই ব্যাট হাতে নিয়ে মাঠে দৌড়ে যাওয়া অথবা এক সাথে পুতুলের বিয়ে দেওয়ার সেই বন্ধু বান্ধবী গুলো আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে যায় ।
দিন যায়। আমরা বড় হই । সেদিনের সেই শিশুমনে হিংসা বিদ্বেষ কলুষতা প্রবেশ করতে থাকে । কিন্তু তখনো বন্ধুদের প্রতি আবেগ – ভালবাসা তে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না । স্কুলে এক সাথে বসে কাটানো সময় গুলো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে পরিনত হয় । ক্লাসে লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্প করে কাটানোর সময় গুলো যেন অমূল্য । যান্ত্রিক জীবনের চাপে যতটুকু নির্মল আনন্দ প্রাপ্তি, তাঁর উৎস যেন ওই বন্ধুত্ব ।
একটা সময় আসে যখন সবাই নিজেদের জীবন জীবিকার প্রয়োজনে দূরে সরে যায় । কর্ম ব্যস্ত কোন এক দুপুরে ক্লান্তির তন্দ্রায় মনে পড়ে সেই স্কুল, কলেজের সেই সময়গুলর কথা, সেই বন্ধু দের কথা । সবাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্ব নাকি সব থেকে অটুট । আমি কথাটার সাথে একমত হতে পারি না । হতে পারে তাদের সাথে যোগাযোগ থাকে বেশি , তবুও ছোটবেলার বন্ধুত্তে যে আবেগ থাকে, যে অনুভূতি থাকে তাঁর লেশমাত্র এখানে থাকে না । এখানে থাকে স্বার্থের সম্পর্ক ।
বন্ধু বানানোর ব্যাপারে আমি মানুষটা খুব বেশি পারদর্শী নই । অতিরিক্ত ঘরকুনো প্রবনতা , অপরিচিত পরিবেশে খুব বেশি মাত্রায় অস্বচ্ছন্দ বোধ করাটা এর প্রধান কারন । এর জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার শুরুতে অনেকের কাছ থেকেই অসামাজিক, অহংকারি ইত্যাদি কথা- বার্তা শুনতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে । আবার পরিচিত পরিবেশে আবার একদম উলটো আমি ।
আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় আমার স্কুলজীবন । এর কারন আমার বন্ধুরা । পছন্দ – অপছন্দের বিষয়টা বাদ দিয়ে বলতে পারি যে ক্লাসে কারো সাথেই আমার তেমন শত্রুতা ছিল না । সেদিক থেকে সবাই আমার বন্ধু । কিন্তু এর মধ্যেও বিশেষ কিছু লোক তোঁ থাকেই । আমারও ছিল । ৫-৬ জনের খুব ছোট একটা গ্রুপ । তখন বুঝতাম না এই গ্রুপটা কতটা মূল্যবান , এই সম্পর্ক গুলো কতটা মূল্যবান । এখন বুঝি । স্কুলের পরে কলেজে পড়েছি, এখন আরও একটু উপরে পড়াশোনা করছি , কিন্তু বন্ধু তেমন বানাতে পারিনি । হবে বলে মনেও হয় না ।
আজ এখন কেন এসব লিখছি জানি না । হয়ত ফেসবুকের দেয়ালে,ইনবক্সে পাওয়া কয়েকটা বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা আজ এই কথা গুলোকে মনে করিয়ে দিচ্ছে । আমার এই লেখার ব্যাপারে আমি খুব বেশি আশাবাদি না । হয়ত আমার যারা বন্ধু , তারা এই লেখা পড়ে হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খাবে ।
আজ আমরা সবাই অনেক বেশি কর্পোরেট । সব কিছুর মধ্যে কেমন যেন একটা মেকি ভাব । গতানুগতিক টেম্পলেট ইনবক্সে সেন্ড করে আমরা নিজেদের তথাকথিত আবেগ- অনুভূতি প্রকাশ করি । ভাল ।
প্রতিটা সফল মানুষের সফলতার পেছনে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের অবদান থাকে। পরিবারের পর সেই জায়গা তাঁর সবচেয়ে বেশি দাবিদার থাকে একটা ভাল বন্ধু। সে আপনাকে বুঝাতে পারে, আপনাকে শাসন করতে পারে, আপনাকে হতাশা থেকে বের করে আনতে পারে যদি সে সত্যি আপনার বন্ধু হয় ।
আমি হয়ত বিখ্যাত কেউ না , তাই আমার এই লেখাটাও আহামরি কিছু না । তবুও এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা উৎসর্গীকৃত হল আমার সেই গুটিকয়েক বন্ধুদের প্রতি,যারা আসলে বন্ধু কম কিন্তু “ভাই” বেশি ।
ভাল থাকুক পৃথিবীর সব বন্ধু, ভাল থাকুক সব বন্ধুত্তের সম্পর্কগুলো । সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.