![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রিং বাজছে ফোনে।“Ammu Calling…”. এই একটা নাম্বার আমার কাছে রেড এলার্টের মতো।চায়ের দোকানে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে সিগারেট টানতে টানতে আড্ডা দিচ্ছিলাম।জিসান খুব রসিয়ে তার ভার্সিটির একটা মেয়ের বর্ননা দিচ্ছিলো।চিৎকার করে সবাইকে থামতে বললাম।“ঐ ব্যাটারা থাম!Ammu Calling…Ammu Calling…!!!”…
এই কোড সবারই জানা।সবাই তাড়াতাড়ি মুখ লক করলো।জিসানকে মাস্টারলক করানো হলো।তার মুখটাই সবথেকে বেশি চলে।সবাই চুপ করার পর ফোন রিসিভ করলাম…
-হ্যালো আম্মু…
-কোথায় তুই?
-এইতো আম্মু।কৌশিকদের বাসায়।
-এত শব্দ কিসের?
-ঐতো আম্মু,রাস্তার পাশেই কৌশিকদের বাসা।আর বোলোনা…গাড়ির শব্দে না ঘুমাতে ঘুমাতে কৌশিকের ইনসোমনিয়া হয়ে গেছে।
-বাসায় ফিরবি না?
-হ্যাঁ,ফিরবো তো।
-কয়টা বাজে?
-এই তো আম্মু…উমম সাড়ে সাতটা…
-থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।সাড়ে নয়টা বাজে।দশটায় গেট বন্ধ করে দিব।এর পরে আসলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি সারারাত।
-ঠিক আছে আম্মু।এখুনি আসছি…রাখি। …যদিও বললাম তবুও আরো অন্তত এক ঘন্টা থাকার প্ল্যান।
-শোন…
-যতক্ষন কথা বলবা…গেট বন্ধ করার সময়ের সাথে ততক্ষন add হবে।
-চোপ বেয়াদপ।যা বলছি সেটা শোন।
-অলরেডি ৩ মিনিট হয়ে গেছে…১০ টা ৩…
-প্রিয়তির জ্বর দুপুর থেকে…ওর জন্য কয়েকটা নাপা এক্সট্রা নিয়ে আসিস…
-আম্মু একটু ধরো তো…
“এই দোস্তরা থাক আমি গেলাম।প্রিয়তির জ্বর…” বলেই কারোর জবাবের অপেক্ষা না করে হাঁটা দিলাম।
-হ্যাঁ আম্মু,আমি আসতেছি…বাই।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোন রিকশা পেলাম না।অগত্যা হাঁটতে শুরু করলাম……।
অনেকদিন পর ছুটি পেয়েছি।বাসায় এসেছি গত পরশু।অনেকদিন পর দেখছি সবকিছু।সেই চিরপরিচিত দোকানপাঠ,রাস্তাঘাট,বাড়িঘর,মাঠ,গাছ…মানুষগুলো।পরিচিত যেসব মানুষগুলোর সাথে কখনো তেমনভাবে কথাবার্তাও হয়নি তাদের সাথে কথা বলতেও ভালো লাগে।
সবকিছু আমার একান্ত আপন।আমার নিজের শহর।বন্ধু,আত্মীয়-স্বজন,আব্বু-আম্মু,আর……প্রিয়তি।আমার আদরের ছোট্ট বোন।আর তার মুখের টিয়া পাখির মত সুরে “ভাইয়ামনি” ডাক।
প্রিয়তি…।
আমার জগৎটাকে আমি খুব সহজেই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি।একভাগে প্রিয়তি; অন্যভাগে বাকি সব।প্রিয়তির বয়স ৭।ক্লাস টু’তে পড়ে।চঞ্চলতার কোন ইভেন্ট অলিম্পিকে থাকলে অনায়াসে সে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদকটা এনে দিত।তার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সবসময় একসাথে কমপক্ষে ১০ টি বিষয় কাজ করে।তাই সে কোনটাতেই স্থির হতে পারেনা।আমাদের কলোনীর সবচেয়ে কিউট বাচ্চা সে।নিজের ছোটবোন বলে বলছি না।সবাই ওকে অনেক আদর করে।কিন্তু little princess কারো আদরই সহ্য করতে পারেননা।কেও তাকে একটু টাচ করলেই চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে।এমনকি সে আব্বুর কাছেও কখনো যেতে চায় না।প্রতিটি ব্যাপারে তার অনেক strong opinion. একবার যেটা বলবে সেটাই।
বাসায় পৌঁছে কলিংবেল বাজাতেই টিয়াপাখির চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম।“Busy বিল্লি” “Busy বিল্লি”।
কোনো এক ক্লান্ত দুপুরে ঝিমাতে ঝিমাতে 9XM মিউজিক চ্যানেলটা দেখছিলাম।পাশে বসে ছিল প্রিয়তি।টিভির দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থেকে বেশ কিছুক্ষন ভেবে সে ঘোষনা করলো আমি নাকি দেখতে কার্টুন “ভিগি বিল্লি” র মতো।“ভিগি বিল্লি” টার্মটা কোনো এক কারনে তার কাছে মনে হয়েছে “বিজি বিল্লি”।
অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বোঝাতে পারলাম না যে আমি দেখতে ওরকম না আর word টা “ভিগি বিল্লি”।
কিন্তু সে মানতে নারাজ।আগেই বলেছি সব বিষয়ে তার opinion অনেক strong. তারপর থেকেই আমি তার “Busy বিল্লি”।
নেহায়েৎ তার মনে গভীর ভাবের উদয় না হলে আজকাল আমাকে “ভাইয়ামনি” বলে ডাকেনা।
যা হোক,বাসার গেট খোলা হলো।খোলার সাথে সাথেই দেখি টিয়াপাখি দুই হাত উঁচু করে চোখ বন্ধ করে লাফাচ্ছে।অর্থ্যাৎ “কোলে নাও”।কোলে তুলে নিতেই ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে।তারপরও অস্থিরতার শেষ নেই।আম্মু দেখি পিছন পিছন ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে ছুটছে।
-খেয়ে নে মা,আর জ্বালাস না…আম্মু বলল।
-নাআআআ…বলে চিৎকার করে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ লুকালো।
আমি আম্মুকে ইশারা করলাম একটা।
-আম্মু কি ভাত?
-এইতো দুধ ভাত।
-আম্মু দুষ্টিপাখিরা কি খায় যেন?
-দুষ্টিপাখিরা তো দুধভাত খায়।
-ও…আমাদের বাসায় তো কোনো দুষ্টিপাখি নেই।তুমি এক কাজ করো…তাসিন বাবুকে (কাজিন) খাইয়ে দিও ঐটা।তাসিন বাবু দুষ্টিপাখি হয়ে যাবে তাহলে।
-নাআ…আমি দুষ্টিপাখি…’ আমার কাঁধে মুখ লুকিয়ে রেখেই বললো।
-তাহলে খেয়ে নাও বাবু।
-না…খাবোনা…।
আহ্লাদ করে ফুঁপিয়ে বললো।
বুঝলাম জ্বরে রুচি হারিয়েছে।পকেট থেকে ক্যাডবেরি চকলেট বের করে বললাম “আম্মু ক্যাডবেরিটা তাহলে তাসিন বাবুকে দিয়ে দিও।“
এবার কাজ হলো।ক্যাডবেরীর লোভে খেতে চাইল ভাত।কিন্তু আম্মুর হাতে খাবেনা।আমার হাতে খাবে।তাকে কোলে করে বসিয়ে খাওয়াতে লাগলাম।কিছুক্ষন “টম এন্ড জেরি”র গল্প করলো।তারপর কি মনে হলো সিদ্ধান্ত নিল সে নিজ হাতে খাবে।কি আর করা…ছেড়ে দিলাম তার হাতেই।যা খেল তার তিনগুন ছিটালো।নাকে মুখে দুধভাত মাখিয়ে দাঁত বের করে যখন আমার কাছে এসে বলল “খাওয়া শেষ” তখন তাকে দেখতে লাগছে একটা বিড়ালের মত।
বিড়ালের মুখ ধুইয়ে দিয়ে বিছানায় নিয়ে গেলাম কোলে করে।ওষুধ খাওয়াতে গিয়ে ভাত খাওয়ানোর তিনগুন পেইন নিতে হলো।তার “মিস্টার পান্ডু” (টেডি বিয়ার) কে খুঁজে পেতে আরো কিছুক্ষন সময় ব্যয় হলো।অবশেষে little princess ঘুমানোর জন্য রেডি হলেন মিস্টার পান্ডুকে কোলের মধ্যে নিয়ে।তখনো গায়ে অনেক জ্বর।মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিচ্ছি।বিড়ালের মত আরো কাছে সরে এলো।আমি ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি।কিন্তু সে শুধু ছটফট করে।বেশ কিছুক্ষন পর নিজের ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল মুখে পুরে নিল।ঘুমানোর পুর্বাভাস।মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম।আস্তে আস্তে ওর শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হয়ে এলো।ঘুমিয়ে পড়লো আমার দুষ্টিপাখি।আমি সারারাত জেগে থাকলাম অর পাশে।শেষ রাতের দিকে ওর জ্বর নেমে এলো।
কিছুদিন পর।
রুমের দরজা ঠেলে দিয়ে বারান্দায় বসে সিগারেট টানছি।কখন যে পিচ্চিটা গুটুর গুটুর করে ঢুকে পড়েছে খেয়াল করিনি।আমার হাতে সিগারেট দেখে সে কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তারপরেই তারস্বরে চিৎকার করতে যাবে, “আম…ম…” আম্মু ডাকটা ডেকে শেষ করার আগেই মুখ চেপে ধরলাম।কিছুক্ষন অনেক জোরাজুরি করল।অবশেষে না পেরে হাল ছেড়ে দিলো।আমি তাড়াতাড়ি টেবিল এর ড্রয়ার থেকে ক্যাডবেরী বের করে দিলাম।এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে রাখা লাগে।কিন্তু বোঝা গেল ঘুষ যথেষ্ট না।এখন তার সাথে ছাদে গিয়ে তার সাহেবদের কে খাওয়াতে হবে । সাহেব অর্থ্যাৎ তার কবুতররা।উপায় নেই।যেতে হলো।
আমি আর ও মিলে খাওয়াতে লাগলাম।বোঝা গেল কবুতরগুলো তাদের এই পিচ্চি মালকিনকে ভালোই চিনে।ও ওদেরকে ছুটে ছুটে তাড়া করছে।ধরছে।কবুতরগুলো কিছু মনে করছে না।খাওয়ানো শেষে দুষ্টিপাখির সাথে কিছুক্ষন খেলা করতে হলো।শেষ বিকালের দিকে ওকে কোলে করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।অনেক্ষন বকবক করে এখন তিনি রেস্ট নিচ্ছেন।
-প্রিয়তি বাবু…
-হুম…
-তোমার ক্লাস পজিশান কত বাবু?
প্রশস্ত একটা হাসি দিয়ে বলল “ফার্স্ট”।
গাল টিপে আদর করে দিয়ে বললাম… “আমার সোনাপাখি”।
অমনি সে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমার মুখ খাঁমচে ধরল।
-এই এই,কি হলো ও ও…লাগছে তো…
-আমি সোনাপাখি না…দুষ্টিপাখি বল।
-আচ্ছা রে বাবা ঠিক আছে।দুষ্টিপাখি,দুষ্টিপাখি,আমার দুষ্টিপাখি।
অবশেষে থামলো।আমি এবার মেকি মন খারাপ করে বললাম…
-বাবু আমাকে খাঁমচে দিলা এখন কি হবে?আমি যে ব্যাথা পাইলাম…
আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন কি যেন ভাবল।তারপর আমার গালে চুমু দিয়ে দিলো একটা।দুষ্টিপাখিটাকে বুকে চেপে ধরে আদর করে দিলাম।আমার এই জা্নটাকে ছেড়ে দূরে ভার্সিটিতে আমি কিভাবে থাকি সে শুধু আমিই জানি।
সন্ধ্যায় তার মিস এসেছে।কিন্তু সে পড়তে চাইছে না কিছুতেই।পেট চেপে ধরে বসে আছে।আম্মু অনেক বকাবকি করছে।কিন্তু সে পেট চেপে ধরে বসেই আছে।আমি গিয়ে ওকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে এলাম।জিজ্ঞাসা করলাম…
-বাবু কোথায় ব্যাথা করে?
-এইখানে… পেটে হাত দিয়ে দেখালো।
চকলেট বের করে বললাম…”এইটা খাইলে কি প্রিয়তি বাবুর ব্যাথা ঠিক হবে?”
কিন্তু ও চকলেটও খেতে চাইলো না।অবশষে আমি মিসকে চলে যেতে বললাম।ওকে আমিই পড়িয়ে নিব।কোন পর্যন্ত পড়ানো হয়েছে দেখে নিলাম।
কিন্তু রাত্রে ও বমি করলো।বেশ কাহিল হয়ে পড়লো।আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না কেন হচ্ছে।অবশ্য ও বেশ তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালবেলাতেই স্বাভাবিক।ছুটির দিন।স্বভাবসুলভ দুষ্টামিতে বাসা মাথায় করে রাখলো।
ঈদটা সেবার অনেক ভালো কাটলো।দুষ্টিপাখিকে বড় একটা টেডি বিয়ার ও কিনে দিলাম।ছুটি শেষ হয়ে এল।বুকে পাথর চেপে little princess টা কে বাসায় রেখে ভার্সিটিতে চলে এলাম।
ল্যাব,assignment,class test এর চাপে যখন জর্জরিত এরকম একটা দিনে আম্মু হঠাৎ ফোন দিয়ে বলল…
-“বাপ কালকে তুই বাসায় আসতে পারবি?”
আম্মুর কন্ঠে কি যেন ছিল।আমি ভয় পেয়ে গেলাম…
-কি হয়েছে আম্মু?
.
.
.
দ্বীতিয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন …।
©somewhere in net ltd.