নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ..

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩২

১)
জর্জ হ্যারিসন নামের মানুষটার কি যেন আজ? আমি ওনাকে চিনি না, গান ও শোনা হয় নাই কোনদিন। তবে কোথায় যেন দেখেছি বলে মনে হয়।
অনেকটা ভাবার পরে মনে পড়লো, ইউরেকা, আমি ওনাকে বিটিভিতে দেখেছি সামান্য কিছুক্ষণ।
বিটিভি কে আমরা এখন যত্তই পচা বলি, র্যাগ দেইনা কেনো, তাতে নব্বই দশকের বিটিভি'র জনপ্রিয়তায় কোন ভাটা পড়বেনা। চ্যানেল বলতে তখন একটাই। সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নার নাটক গুলিতে মির্যা বাড়ির অন্তু মিয়াকে কাটাকুটা বাইছা খাইতে বলা হতো?
এখনো বাবার সাথে খেতে বসলে উনি এটা শোনান। যেদিন আকরাম, পাইলট, দূর্জয়ের খেলা থাকতো, সেদিন সমগ্র দিনটাই বিটভির ক্যামেরা ম্যানদের স্টেডিয়ামেই কেটে যেতো !
আস্তে আস্তে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বিটিভির কি দোষ?
স্বাধীনতার মাসে, বিজয় দিবসে, পলাশ রাঙ্গা ফেব্রুয়ারীর ছড়ানো বর্ণমালার দিন গুলোতে বিটিভি মুক্তি যুদ্ধের ছবি গুলো দেখাতো বারবার রিলে করে। তবে ওসব ছবি হাজার বার দেখলেও আমার কাছে পুরোনো হতো নাহ?
ওরা এগারোজনের প্রায় শেষের দিকে খসরু সাহেব হাফপ্যান্ট পরে তারকাটার বেড়ার ফাক দিয়ে গলে হানদারদের যে এ্যামবুশ টা করতো- ওহহ, আমার মনে হতো ওটা আমিই করতেছি !
আবার আগুনের পরশমনিতে ক্রাক আসাদুজ্জামান ও তার নীল সিডান ভর্তি চার যোদ্ধা গ্রেনেড ছুড়ে পালাইবার সময় যখন গাড়ীটার স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেতো- তখন আমার ও শ্বাস প্রায় বন্ধ, মনে মনে ভাবতাম, আল্লাহ ওরা কি করে? এখনো যাচ্ছে না কেন? দিলো তো পিছন দিয়ে মাইরা? দিলেই তো যোদ্ধারা মরবে নে?
তখন নায়ক বলতে সুন্দর চেহারার রাজ্জাক সাহেব নতুবা আলমগীর এবং বড়ই অনিচ্ছার সহিত জসীমের মুখটা ভেসে আসতো। তবে যুদ্ধের ছবিগুলোতে মাল কাছা দেওয়া কালো কুচকুচে কৃষাণটাকে ও যখন রাইফেল হাতে হামাগুড়ি দিতে দেখতাম, মনে হইতো, উনিই বড় নায়ক- তাহার উপরে নাই কেউ, থাক্তেই পারেনা?
একটা আফসোস খুব হতো, খুব?
এখনো হয় সমানে।
ইশশশ আমি কেন ৭১ এ জন্মাইনী?
আমি সব খাকী মাইরা সাফ কর্তাম?
( শিশু মন কত কিছুই না ভাবে? )
তবে এই বুড়ো মনটাও কম যায় না এ ব্যাপারে!
২)
যাই হউক, যা বলতে চাইছিলাম। আলী ঈমামের প্রযোজনা এবং উপস্থাপনায় বিজয়ের মাসগুলোতে একটা আলোচনা অনুষ্ঠান হইতো। ওখানে যোদ্ধা এবং বোদ্ধারা থাকতো। নামটা মনে আসেনা অনুষ্ঠানের?
এই অনুষ্ঠানের শুরু আর শেষে কিছু গোলাগুলী, মৃত লাশ, শেখ মুজিবকে রেসকোর্সে এক ঝলক, এবং এই জর্জ হ্যারিসনের গীটার হাতে, উষ্ক খুস্ক চুলে, মুখ ভর্তি দাড়ী নিয়ে দুই লাইন গাইতে শুনতাম- Bangladesh,
Bangladrsh.
দুলাইনের ওই টানটুকু শুনলে কেমন জানি শক্তি শক্তি লাগতো?
বোঝানো যাবে নাহ।
লোকটাকে দেখেই বোঝা যেত, আর যাই হোক ইনি বাংলাদেশী নন। এটাও বোঝা যেতো এই গানটা সেই সময়ে গাওয়া হয়েছে। পুরো গান এবং ওটার ভিডিও টা দেখতে মনটা আকু পাকু করতো?
মাস ঘুরতো, সময় পেরুতো, ওসব ভুলে যেতাম। আবারো সময় ঘুরে ফিরে বিজয়ের মাস, একুশ আসলেই তৃষ্ণা টা জাগতো?
তবে তখন ইন্টার্নেট, টিউব, চ্যানেল আসেনি। আমারো আর দেখা হয়ে ওঠেনি। কারন বিটিভি দু লাইনের বেশী আমায় শোনায় নি?
একজন জর্জ হ্যারিসন সেই সন্ধ্যায় হেরোইন সেবন না করার জ্বালা শরীরে নিয়ে যখন কন্ঠে আগুন ঝরালেন, Concert for Bangadesh, 71 এ, গিটারের তার আর আঙ্গুলের ঘর্ষণে ভাঙ্গতে চাইলেন সমস্ত অনিয়ম, আমার ছোট্ট সবুজ জনপদের জন্যে,,,
৩)
সে রাতেই ভারত সীমান্ত ছোয়া মেলাঘর ট্রেনিং ক্যাম্পে সারাদিনের যুদ্ধ প্রস্তুতির ক্লান্তি নেমেছিলো নীরবে হয়তো। পোকা ওয়ালা আটার অর্ধসিদ্ধ একটা/দুটো শুকনো রুটি আর কয়েক আজলা পুকুরের পানি খেয়েছে বদি, রুমী, আজাদ, মায়া, আলতাফ মাহমুদ এবং নাম না জানা অসংখ্য যোদ্ধা'রা।
একটু বিশ্রাম চায় দেহ। লাশের স্তূপ দেখতে দেখতে এসে মিলেছে এই ক্যাম্পে? শক্তি আর সাহসের সাথে মনোবল যোগ হয়ে খেয়ে না খেয়ে সারাদিনের ট্রেনিং ওরা শেষ করেছে ঠিকই, তবে রাত্রি বাড়লেই ওদের মনে ভয় জেকে আস কেন জানি?
আর কিছুই ভালো লাগেনা!
পাকিদের হাতের আগ্নেয়াস্ত্র আধুনিক, বীপরীতে আমাদের পুরোনো কটা রাইফেল, নতুন ছেলেপুলে আর বাশের কিছু লাঠি?
পারবো তো আমরা দাড়াতে?
সন্দেহ জমতে শুরু করে মনে?
না চাইতেও চোখের কোণাগুলি ভরে আসে।
হঠাৎ মাটির মধ্যিখানে টীনের একটা হাড়ী কে তবলা'র মত বাজাতে আরম্ভ করেছে একজন, গলায় তার অদ্ভুৎ টান। হতাশায় ডুবতে বসা বদী-রুমী দের এক ঝটকায় ফেলে দিতে চায়, হিমালয়ের চূড়ো থেকে বাংলার সুন্দরবনের গভীরে?
গলা চেনা লাগে?
কে সে, ঢাকার আজম খান নয় তো?
ক্রাকেরা আস্তে আস্তে গায়কের পাশে গোল হয়ে বসে পড়ে, গায়কের সাথে গলা ছাড়ে, রাত গাড় হয়, ক্রাকেদের হাত, চোয়াল শক্ত হতে থাকে।
ওরা বুঝে নেয়, উপায় এখন একটাই, মরণ টরণ তুচ্ছ, ওদের পারতেই হবে?
সেই গান চলতো মাঝরাত, সারারাত, কোন কোন দিন সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত।
এভাবেই হয়তো স্বাধীনের সূর্যটা একদিন এসে যাবে, আশার দানা গুলো ভেতরে বীজ, শেকড় ছড়াতে আরম্ভ করেছে..।
৩)
জর্জ হ্যারিসনের সেই সন্ধ্যা কিংবা আজম আজম খানের মেলাঘরের সেই দীর্ঘ আশাজন্মা রাতের গান গুলো একপেষে আটকে পড়া বাঙ্গালীরা শুনতে পেতনা। তবে ইন্ডিয়ান জঙ্গলে ট্রান্সমিটার বসিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই আয়োজনা গুলো ছিলো, মনে মনে মরে যাওয়া বাঙ্গালীর নিশুতি রাতের বেচে থাকার শেষ প্রেরণা?
নানাজান বলতেন, ওসব রাতে যদি কোনদিন শোনা যেত, কোথাও কোন পাকি ট্রাক ব্লাস্ট, অথবা মরেছে দুই একটা? তখন ক্যামোন যে লাগতো, এইতো স্বাধীন হচ্ছে, হবেই হবে.. বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলোকে জোরে চেপে ধরে বলতো, আর এক্টু ধৈর্য্য ধর তোরা, রি এ্যাকশন শুরু হইছে, ওরা বোঝেনি কি জিনিস আমরা?
স্বাধীন বাংলা বেতারের আওয়াজে,
আশায় বাচতে থাকা এক জনপদের গল্প।
আমায় বলতে হবে।
মা যখন বলতো, স্বাধীনতায় মুক্তির গানের বিরাট ভূমিকা ছিলো, সাহস যোগাইছে ঢের। বুঝিনা তখন কিছুই। আজম খান কিংবা জর্জ হ্যারিসন তো কল্পনাতেও আসবেনা আমার।
তবুও, "মোরা একটি ফুলকে বাচাবো বলে যুদধ করি" জাতীয় গানের লাইনে কেন জানি গায়ের লোম সবগুলো দাড়ায় যাইতো?
৪)
এই মাত্র দেখা গেলো আজম খান, রুমী, বদী, জুয়েল, আজাদ ও অন্যানেরা, জর্জ হ্যারিসনের স্বর্গালোকের বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। পেছন থেকে এক ঝলক দেখলাম, তবে কি জানেন, এই অন্ধকারেই ওদের শরীর থেকে অদ্বূত আলোচ্ছটা বেরুচ্ছে..
চোখ ফিরিয়ে নিলাম,
অত্ত পবিত্র আলোতে তাকানোর সাধ্যি আমার নাই...
# আমিই_বাংলাদেশ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:০০

বাংলার ফেসবুক বলেছেন: বিজয়ের মাস আপনার সফলতাও বিজয় হউক ক্রিকেট নিয়ে অনেক সুন্দর কথা লেখেছেন। সব মিলে সুন্দর।

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৫১

blackant বলেছেন: অজান্তে চোখের কোনে পানি এসে গেল ভাই ,sorry for that WE HAVE TO be more BRAVE . WE HAVE TO DO SOMETHING more TO MODERATE THE AGONY OF THE UNDONE NATION .
my A FAKE FB ID NAME IS ALSO আমিই বাংলাদেশ .
BLISS BE UPON U.

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আস্তে আস্তে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বিটিভির কি দোষ?---সহমত।

স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দিলেনঃ

//স্বাধীনতার মাসে, বিজয় দিবসে, পলাশ রাঙ্গা ফেব্রুয়ারীর ছড়ানো বর্ণমালার দিন গুলোতে বিটিভি মুক্তি যুদ্ধের ছবি গুলো দেখাতো বারবার রিলে করে। তবে ওসব ছবি হাজার বার দেখলেও আমার কাছে পুরোনো হতো নাহ?//

ওহ,দারুন বলেছেনঃ

//ওরা এগারোজনের প্রায় শেষের দিকে খসরু সাহেব হাফপ্যান্ট পরে তারকাটার বেড়ার ফাক দিয়ে গলে হানদারদের যে এ্যামবুশ টা করতো- ওহহ, আমার মনে হতো ওটা আমিই করতেছি !//

শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতিঃ

//আবার আগুনের পরশমনিতে ক্রাক আসাদুজ্জামান ও তার নীল সিডান ভর্তি চার যোদ্ধা গ্রেনেড ছুড়ে পালাইবার সময় যখন গাড়ীটার স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেতো- তখন আমার ও শ্বাস প্রায় বন্ধ, মনে মনে ভাবতাম, আল্লাহ ওরা কি করে? এখনো যাচ্ছে না কেন? দিলো তো পিছন দিয়ে মাইরা? দিলেই তো যোদ্ধারা মরবে নে?//


আপনার অনুভূতি গুলোকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারছি নাঃ

//তবে যুদ্ধের ছবিগুলোতে মাল কাছা দেওয়া কালো কুচকুচে কৃষাণটাকে ও যখন রাইফেল হাতে হামাগুড়ি দিতে দেখতাম, মনে হইতো, উনিই বড় নায়ক- তাহার উপরে নাই কেউ, থাক্তেই পারেনা?//
..............
//একটা আফসোস খুব হতো, খুব?
এখনো হয় সমানে।
ইশশশ আমি কেন ৭১ এ জন্মাইনী?
আমি সব খাকী মাইরা সাফ কর্তাম?
( শিশু মন কত কিছুই না ভাবে? )
তবে এই বুড়ো মনটাও কম যায় না এ ব্যাপারে!//


স্মৃতিরা জেগে থাকুক অনন্তকালঃ

//আলী ঈমামের প্রযোজনা এবং উপস্থাপনায় বিজয়ের মাসগুলোতে একটা আলোচনা অনুষ্ঠান হইতো।//
..................
//এই অনুষ্ঠানের শুরু আর শেষে কিছু গোলাগুলী, মৃত লাশ, শেখ মুজিবকে রেসকোর্সে এক ঝলক, এবং এই জর্জ হ্যারিসনের গীটার হাতে, উষ্ক খুস্ক চুলে, মুখ ভর্তি দাড়ী নিয়ে দুই লাইন গাইতে শুনতাম- Bangladesh,
Bangladrsh.
দুলাইনের ওই টানটুকু শুনলে কেমন জানি শক্তি শক্তি লাগতো?
বোঝানো যাবে নাহ।//

............

প্রাণপ্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি গুলো এঁকেছেন অসামান্য কুশলতায়ঃ

//পোকা ওয়ালা আটার অর্ধসিদ্ধ একটা/দুটো শুকনো রুটি আর কয়েক আজলা পুকুরের পানি খেয়েছে বদি, রুমী, আজাদ, মায়া, আলতাফ মাহমুদ এবং নাম না জানা অসংখ্য যোদ্ধা'রা।//

আশা-নিরাশার দোলাচলে আজম খানের গান নতুন আশার আলো জ্বালে।

//সেই গান চলতো মাঝরাত, সারারাত, কোন কোন দিন সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত।
এভাবেই হয়তো স্বাধীনের সূর্যটা একদিন এসে যাবে, আশার দানা গুলো ভেতরে বীজ, শেকড় ছড়াতে আরম্ভ করেছে..।//


হ্যাঁ, জিকো ভাই,আপনি গল্পটা বলুন, আমরা শুনছিঃ

//স্বাধীন বাংলা বেতারের আওয়াজে,
আশায় বাচতে থাকা এক জনপদের গল্প।
আমায় বলতে হবে।//


এত চমৎকার একটা লেখার শেষটা এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারেনাঃ

//এই মাত্র দেখা গেলো আজম খান, রুমী, বদী, জুয়েল, আজাদ ও অন্যানেরা, জর্জ হ্যারিসনের স্বর্গালোকের বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। পেছন থেকে এক ঝলক দেখলাম, তবে কি জানেন, এই অন্ধকারেই ওদের শরীর থেকে অদ্বূত আলোচ্ছটা বেরুচ্ছে..
চোখ ফিরিয়ে নিলাম,
অত্ত পবিত্র আলোতে তাকানোর সাধ্যি আমার নাই...//


ভাল থাকুন। সবসময়।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৮

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: ওহহহহ, ধন্যবাদ ভাই, আমরাই বাংলাদেশ... ♥

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.