নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

Stalingrad থেকে Enemy At Tha Gates...

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৫৬


Stalingrad নামক একটি মুভির কথা অাগেই বলেছি যেটা তৈরী হয় ১৯৭৩ সালে পুনঃরায় সেটাকেই বর্তমানের উপযোগী করে তৈরী করা হয় সম্ভবত ১৯৯৩ কিংবা ২০১৩ সালে। যারা ট্রু ফ্যাক্টের ওয়্যার মুভি দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্যে ছবিটি, এসব দেখার প্রধান সুবিধা হচ্ছে ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা অাসে এবং যুদ্ধ কতোটা ভয়াভহ তার সম্যক ধারনা হয়, পাশাপাশি কোন জাতির চরিত্র কেমন সে সম্পর্কে ও অান্দাজ করা যায়। প্রাণহীন কোন জিনিসের উপর যদি মানুষের মোহ থাকে তা হচ্ছে বই এবং বিলুপ্ত হওয়া সময়ের ইতিহাস, যার প্রথমেই অাসে যুদ্ধ।

যাই হোক 'Enemy of the gate' মুভিটি সেই Russian Soviet Union এর অন্তর্ভুক্ত শহর Stalingrad এর যুদ্ধের ভয়াভহতা বোঝাতেই তৈরী।

এটা ছিলো ১৯৪২/৪৩ এর ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখ, ২য় বিশ্বযুদ্ধের তৃতীয় বছর। হিটলারের জার্মানী প্রায় সমস্তকেই জলে স্থলে অাকাশে ধরাশায়ী করে দিচ্ছে ঠিক তখনই মনে হলো জার্মানীর তৈল সংকট। কি করবে কিরবে, জার্মানীর সবচেয়ে কাছের তৎকালীন তৈল মজুদে সমৃদ্ধ শহরটির নাম Stalingrad, তার সাথে অাবার ওটা রাশিয়ান শহর যারা কিনা উইনিয়ন করে অারো অনেকের সাথে যুদ্ধ করছে ওদেরই বিরুদ্ধে। হিটলারের ব্রেইন বলে কথা, ইরান, পর্তুগাল এবং অারো কয়েকটি মরুভুমির প্রায় ৫০০০ মাইল পথ পার হয়ে জার্মানীর 6th Army ( এই ষষ্ঠ অার্মি হলো জার্মানীর পদাতিক ডিভিশন ) পৌছে গেলো শহরের উপকুলে Stalin নদীর তীরে। শহরে ঢুকতে বেগ পেতে হয়নি, কিছু অার্টিলারী এবং কয়েকদফা বিমান বোম্বিং করতেই রাশিয়ান শহরে ঢুকে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে ত্রাশ সঞ্চার করলো। রাশিয়ান অর্থাৎ। Red Army তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে ব্রিটিশ, ইন্ডিয়া হয়ে অামরিকা, পোল্যাণ্ডের সাথে জার্মান অভিমুখী!

কিন্তু হায় তার অাগেই রাশিয়ান দ্বিতীয় রাজধানী খ্যাত Stalingrad জার্মান্সেরা প্রায় দখল করে ফেলেছে। সেই খবর পেয়ে জার্মানীর দিকে অগ্রসর হওয়া রেড অার্মি যখন উল্টো ঘর বাচাতে ব্যাক করছে তখন জার্মান্সেরা অন্তত চল্লিশ হাজার সিভিলিয়ান্স মেরেই ফেলেছে বোম্বিং এবং নির্বিচারে গুলি করে। একটা শহরকে ঘিরে এটাই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক সোলজার ( ঊভয়ের'ই) এবং সাধারন মানুষের প্রান যায় এ যুদ্ধে। পাথরের তৈরী সমৃদ্ধ শহর Stalingrad এ জার্মানীকে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো সাড়ে পাচ মাস, এই পাচ জার্মান্সেরা ডমিনেট করলেও হুট করে ঘটা একটা ঘটনায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট একদম বদলে গেলো। মাত্র ১৫ দিনেই Red Army'r দৃষ্টান্তমুলক জেগে ওঠায় স্বদেশীরা নিজের শহরে প্রায় ১ লক্ষ্য অত্যান্ত অাধুনিক অস্ত্র সহ স্যারেণ্ডার করতে বাধ্য করলো। ফলে হিটলারের প্রতিটি মিশন শেষে প্রিয় দেশবাসীর সামনে বাজখাই গলায় দেওয়া যে ভাষণ থাকে, তাতে সেবার We fallen Stalingrad না বলে বলতে হয়েছিলো We defeated stalingrad by Red Army ; Russians.

এনিমি অফ দি গেইট ছবিটি হচ্ছে সেই মোড় ঘোরানো ১৫ দিনের গল্প নিয়ে তৈরী। তার অাগে বলে নেওয়া ভালো রেড অার্মির উর্ধতন কর্মকর্তারা নিশ্চিৎ হেরে যাবে জেনে ও জার্মানীর কাছে শহর দেবেনা প্রয়োজনে মরে যাবে প্রতিজ্ঞা করে রাশিয়ান টিনেজার থেকে বৃদ্ধ যারা অাদতে সৈনিক নয়, শুধু বন্দুক চালানো শিখিয়ে সবাইকে ট্রেনে করে প্রতিদিন এনে ফেলছে স্টালিনগ্রাডে। সে যে ভয়ানক দৃশ্য, দেখা যাচ্ছে ট্রেন পৌছুতে পৌছুতে জার্মান বিমানের অাঘাতে ২০ টি বগির ১০ বগি ভরা সৈন্য বোমায় ভষ্ম পুড়ে। এবার কোনমতে ছাউনি দেয়া নৌকায় চেপে মাঝ নদী যেতে যেতে ১০ নৌকার হয়তো দুটি কি তিনটি নৌকা ওপারে পৌছায়। উপর থেকে জার্মান বিমানের এলোপাতাড়ী ফায়ারে পাটাতনে বসা অর্ধেক সোলজার যখন সেকেন্ডে মরে গেলো, তখন অনেক ছেলেরাই ভয়ে পানিতে ঝাপ দিয়ে ফিরে যেতে চাঈলো ওপারে।
তা করতে দিবে না রাশিয়ান কমান্ডেরা। বলে ইউ কাউয়ার্ড, সাথে সাথেই নিজেদের ঝাপ দেয়া সোলজার গুলোকে বুলেটে ঝাঝরা করে দিলো।
কেমন যুদ্ধ চিন্তা করেন?

ওপারে নৌকা ভিড়লেই গুলি আর গুলি, পানি লাল হয়েছে নদীর, সেখানে কথার কোন সুযোগ নেই, শুধু একজনকে কাঠের তৈরী এনফিল্ডের পরের ভার্সন একটি বন্দুক আর পরের জনকে পাচটি গুলি দিয়ে কমান্ডিং অফিসার অনর্গল হ্যান্ড মাইকে বলে যাচ্ছেন-

' রান ফাস্ট এন্ড ক্রস দি এনিমি লাইন , জাস্ট কিল দেম ইফ ওয়ানা লিভ, এন্ড নেভার কামব্যাক সিয়িং ফল দি ম্যান হু রান বিসাইড ইঊ, ইফ ইউ দেন উই কিল ইউ..'

অর্থ -দ্রুত দৌড়াও এবং শত্রুবুহ্য ভেদ করো, ঘুরেই তাদের হত্যা করো, এবং তোসার পাশে দৌড়ানো সবাইকে পড়ে যেতে দেখে যদি তুমি ভয়ে ফিরে অাসতে চাও, আমরা তোমাকে হত্যা করবো ককাপুরুষের দল..

যাই হোক দৌড় শুরু হলো, ওদের মধ্যে একজন বাচলো ওপারের গেইটে দাড়ানো মেশিনগানের গুলি থেকে দৌড়ে নয় হঠাৎ মৃতের দলে শুয়ে পড়ে।
ওর ভাগ্যে পড়েছিল পাচটি গুলি বন্দুক পাশের জনার কাছে, সে মরেছে শুরুতেই অনেক পিছনে। পাচ গুলি নিয়ে বেচে তবে মরার মত হয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটির নাম ভার্সিলি। ও রাশিয়ান অখ্যাত কোন বরফাঞ্চলের শিকারী পরিবারের ছেলে।

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে, এনিমি গেইট বন্ধ করে দিয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সেই মুহুর্তে রেড অার্মির পত্র বহন করে দ্রুত একটি গাড়ী হাকিয়ে অাসে তাতে এক বড় কর্মকর্তার গাড়ী ভর্তি যুদ্ধ বিবিষয়ক হাত পত্রিকা, পৌছুতে হবে নদীর ওইপারে, কিন্তু অার্টিলারী মেরে ধ্বংস করে দিলে ও তিনি বেচে যান লাফিয়ে মাটিতে মরার মত শুয়ে। ঠিক সেখানেই ভার্সিলি ও শোয়া।

দুজনই টের পেলো ওরা জীবিত এবং অফিসারের হাতে অটোমেটিক স্নাইপার, ভার্সিলি সেটা তুললো, অফিসার বলছে দে অার মেনি, প্লীজ ডোন্ট শুট মাই বয়;

কে শোনে কার কথা, ২০-২৫ বছর বয়সী কোন ছেলের এক শহর ভ্রমনের প্রথম অাধঘণ্টার স্মৃতি যদি এমন হয় তবে তার হাতে অস্ত্র মানে হাজার জন অার্মী ও টিকতে পারবেনা যৌবনের প্রথম এই ক্রোধে..

মুহুর্তেই রাশিয়ান ভার্সিলি পজিশন দেখে নিয়ে সেফটি লক খুলে মাত্র ত্রিশ সেকেণ্ডে ১২ জন জার্মান নৃশংস খুনী, পাকা যোদ্ধার কপাল ভেদ করে শট টেনে দিলে বাকি এক থেকে দেড়শো জার্মান সোলজার ভয়ে দৌড়ুলো এই ভেবে যে বোধহয় বিরাট বাহিনী লুকিয়ে টার্গেট করে শুট করছে। চাচা যার প্রাণ সেই বাচা..

সেই প্রথম ভার্সিলির জন্যে Stalingrad এর প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত হলো, সমস্ত অপরিণত যোদ্ধারা ঢুকে গেলো অাটকে পড়া রাশিয়ান সেনা এবং অফিসার দের দল সংঘবদ্ধ হলো, রাত নামলে নতুন দিন অাসবে, এই মৃত শহরের ভিক্টরীর জন্যে দিন বাকি রইলো চোদ্দটি।

পরদিন থেকে জার্মানদের নেতা, বড় যোদ্ধা, পদাতিক, সেনা অফিসার সমানে মরছে এ্যামবুশে, সন্তান হারা বাবা মা, ধর্ষিত বোনেরা, এমনকি শাশার মত ছয় বছরের রাশিয়ান শিশু ও টুক করে জার্মান মারতে অারম্ভ করলো প্রতিদিন।

বেচে যাওয়া সেই অফিসারটি পরদিনের পত্রিকায় প্রকাশ করলেন ভার্সেলির অাধা মিনিটে মারা তুখোড় জার্মান অফিসারদের সেই কাহিনী; যা পড়ে উন্মুক্ত স্টালিনগ্রাডের গেট দিয়ে ঢুকছে হাজার হাজার সব বয়স্ক, নবিন রাশিয়ান রোজ, যুদ্ধ জানেনা ওরা, জানে ওদের তাড়াতে এসেছে ওরা নিজেদের দেশ থেকে।

ওদিকে ফিরে অাসছেরব্রিটিশ এবং রাশিয়ান অার্মি, স্টালিনগ্রাডকে ঘিরে ফেলবে চারপাশ থেকে। এদিকে জার্মান্সেরা সি লেনেভিচ ফ্রাদিয়া নামক এক বীর স্নাইপার বিশারদ কে অানালো মিইনিখ হেড কোয়ার্টার থেকে , ওদের ধারনা হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে সাহস যোগানো ভার্সিলিকে মারতে পারলে Red army ধ্বসে যাবে, পারেনি উল্টো দাদার সাথে বরফে শিকার করে করে বেড়ে ওঠা ভার্সিলির অাঙ্গুলেরর টীপে জার্মান দম্ভের চকচকে কপালে ক্ষুদ্র একটা ফুটো করে বুলেটটি ওপারর খুলি, ঘিলু সব নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

জার্মান অার্মী ডিফিটেড বাই রেড অার্মী অন দি ব্যাটল অফ স্টালিন গ্রাড। প্রায় ৩ লক্ষ্য সৈণ্য ও সাধারন মানুষ, ৩০ হাজার ( ইহুদী) নিহত হয়েছিলো। জার্মানীর সবচেয়ে বেশি বোমা খরচ হলো এই শহরে, সমস্ত সৈণ্য মৃত প্রায়, এই প্রথম হিটলারের মনে যুদ্ধ ভয় ধরালো। জার্মান টিকে থাকবে কি থাকবেনা সে নিয়ে সংশংয়ে হিটলারের শরীর ভাঙ্গতে শুরু করলো। তথ্যটি হিস্টোরী চ্যানেলের ডকুমেন্টারী থেকে পাওয়া, এখানে হিটলারের কোন এ্যাক্টিভিটি নেই।

অনেকদিন অাগে ২০১৬র শেষে কিংনা ১৭ র প্রথমে লাইব্রেরীর পত্রিকার একটা খবরে চোখ অাটকে গেলো, কোথাকার স্টালিনগ্রাড শহরে নাকি এক জমিতে পাচশো কঙ্কাল তুলেছে প্রত্নতাত্বিক বিভাগ, সেদিন এসে স্টালিন গ্রাড সম্পর্কে কৌতুহলী অনুসন্ধান শেষে জানলাম, ওই যুদ্ধের সাড়ে তিনলক্ষ মৃতের কোন সৎকার হয়নি, যে যেই বাংকারে মরেছে তাকে সেখানেই পুতে রাখা হলো, এত্ত যে লাশ কে করবে কার সৎকার! ৭০ বছর পরে অাজো প্রায়ই খুড়ে খুড়ে দেহাবশেষ তোলা হয়, অার্মিদের গলার চেইনের সাথে ঝুলন্ত ব্যাণ্ডে অনেকের পরিচয় পাওয়া যায়, তখন তাদের স্বজন খুজ পেলে ওদের মুক্তি হয়!
দুঃস্বপ্ন হয়ে যা প্রায়ই ওদের দেশ থেকে মরুভুমিতে ঘুরিয়ে মারে, স্ত্রী, বাবা, সন্তানদের কে; এতদিনে ওরা ও বিলুপ্ত...

অামি একদিন ঠিকই লিখবো এই সব অস্থি অার তার সন্ধানে এক প্রজন্ম মিলিয়ে গিয়ে অারেক প্রজন্মের তা খুজে চলা অস্থির সন্ধানের গল্পগুলো..ধন্যবাদ Stalingrad, অামার যুদ্ধে নতুন অারো অনেক বিষ্ময় ঢেলে দেবার জন্যে...

জার্মানিধপতি হিটলার যদি দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু না করতো, তাহলে হিটলারই হয়তো অাব্রাহাম লিংকন হয়ে যেতো, অামেরিকা নয় পৃথিবী শাসন করতো জার্মানী...





মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:২৩

পরম কাঁইজি বলেছেন: বাহ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.