![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার শিক্ষাজীবন-একটি পর্যালোচনা
হাতেখড়িঃ
আমার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি হয়েছিলো আমার মায়ের কাছে । বয়স যখন দুই বছর তখন থেকেই মা আমাকে বাংলা,ইংরেজি,আরবি বর্ণমালাগুলো মুখে মুখে পড়াতেন । আমার এখনও মনে পরে আমার বয়স যখন তিনের কাছাকাছি ,তখন রাতে ঘুমানোর সময় বর্ণমালা,ছড়া,আরবি সূরা শুনাতেন এবং আমাকে মুখস্থ করাতেন । প্রায় প্রতিদিন সবগুলো রিভিশন করাতেন ,ভুলে গেলেও আবার মুখস্থ করাতেন । আমি চার বছর বয়সেই আরবি, বাংলা, ইংরেজি বর্ণমালাগুলো মুখস্থ বলতে ও লিখতে পারতাম । এমনকি নামাজ পড়ার জন্য প্রায় নয় দশটি সূরাও শিখেছিলাম।
আমার বাবা বাবস্যার কাজে ঢাকা থাকতেন । তাই তিনি আমাদের বেশি সময় দিতে পারতেন না।
আমার মা ই আমার শিক্ষাজীবনের সাথে বেশি পরিচিত ছিলেন । যাহোক, আমার বয়স যখন পাঁচ তখন মা আমাকে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন । এখানে ভর্তি হবার আগেই আমি শিশুশ্রেণির প্রায় সব সিলেবাস শেষ করে ফেলি । তাই আমি এখানে এক বছরের বেশি পড়িনি । ফলে ছয় বছর বয়সেই আমি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারি
পর্যালোচনাঃ
আমার মা বেশি শিক্ষিত ছিলেন না । তাই শিশুবয়সে যা শিখে ছিলাম তার মধ্যে অনেক শিক্ষণ্ সঠিকভাবে হয়নি । যেমনঃ বর্ণমালা শেখার উচ্চারণ সঠিক ছিল না । কিংবা সঠিকভাবে লেখা শিখতে পারিনি । আবার অনেক কিছু শেখাই হয়নি ,যা পরে উপলদ্ধি করতে পারে । অতএব, আমার মা যদি আরো একটু বেশি শিক্ষিত হতেন তাহলে আর অনেক কিছু শিখতে পারতাম এবং সঠিকভাবে শিখতে পারতাম ।
তবুও আমি মনে করি আমার মায়ের কাছেই সব চেয়ে বেশি কিছু শিখতে পারছিলাম এবং এখনো শিখি । এত সুন্দর হাতেখড়ি না হলে এতদূর আসতেই পারতাম না ।
প্রাথমিক স্কুলজীবনঃ
আমার আজও মনে আছে ,২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি আমার মা আমাকে আমাদের গ্রামের “৭৪ নং দক্ষিণ-পূর্ব ভান্ডারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি করিয়ে দেন ফলে ঐদিন থেকেই শুরু হয় আমার প্রাইমারি স্কুল জীবন ।
ভর্তি হবার পরেরদিন থেকেই আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি । মা আমাকে তখন প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন । স্কুলটি আমাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে ছিলনা ,তবুও তিনি আমাকে নিয়ে যেতেন ও নিয়ে আসতেন । ফলে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে মায়ের একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় । তাই উনারা আমাকে একটু বেশি খেয়াল করতেন। এভাবেই প্রথম শ্রেণিতে পড়ালেখা চলতে থাকে । যথাসময় প্রথম শ্রেণির ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হলো । প্রাথমিক স্কুলজীবনের প্রথম বড় পরিক্ষা । ভালো রেজাল্টের জন্য আমি ও মা চিন্তিত ছিলাম । অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে পরিক্ষা দিলাম । শিক্ষাজীবনের প্রথম আনুষ্ঠানিক পরিক্ষা বলেই সম্ভবত এত বিচলিত হয়েছিলাম । অবশেষে ২৮ দিন পর আমি প্রাথমিক স্কুল জীবনের প্রথম পরিক্ষার রেজাল্ট পেয়েছিলাম । কিন্তু রেজাল্ট ভালো হয়েছিলো না , আমি ৮ম স্থান অর্জন করি ।
যা মা-বাবা মেনে নিতে পারছিলেন না । তারা আরও সামনের দিকে দেখতে চেয়ে ছিলেন । আমার মন ও ভেঙ্গে গেছিলো কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারায়নি । ৮ম স্থান অর্জন করেই আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পা রাখলাম ।
নতুন বই পেয়ে ক্লাস শুরু করি । আগের চেয়ে এ বছর আরও বেশি লেখাপড়া করি । শিক্ষকরাও আমাকে অনেক সাহায্য করতেন,আদর করে ভালোভাবে পড়া বুঝিয়ে দিতেন এবং নিয়মিত পড়া আদায় করে নিতেন ।
নতুন অভিজ্ঞতা হলো এইবছরে, কারণ আমি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য নাম দিয়েছিলাম । আমি কুরআন তিলাওয়াত ও কবিতা আবৃতির জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম ফলে সবাই আমাকে চিনতে শুরু করলো । দ্বিতীয় শ্রেণিতে অনেক সহপাঠীর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো । এমনকি ওদের সাথে খেলাধুলাও শুরু করছিলাম । আবার পড়ালেখাও ঠিক মতো করতাম ।
দ্বিতীয় শ্রেণির ফাইনাল পরিক্ষা আসলো । আমার স্বপ্ন ছিল প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করবো কিন্তু আমি তা পারছিলাম না আমি চতুর্থ স্থান অর্জন করি । সবাই রেজাল্ট মেনে নিয়েছিলেন তবে আরও পড়ার জন্য উপদেশ দিয়েছিলেন । ঐ সফলতা নিয়েই তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছিলাম ।
তৃতীয় শ্রেণিতে একটু বড় হয়েছিলাম । তখন একা একা স্কুলে যেতে পারি । একলা একলা পড়তে পারি । নিয়মিত ক্লাস করি,নিয়মিত পড়ালেখা করি । বন্ধুদের সাথে মিশতেও ভালো লাগছিলো তখন । ওদের সাথে পানিতে গোসল করা,সাঁতার কাটা খুব উপভোগ করতাম ।
তৃতীয় শ্রেণির মাঝে একটু দুষ্টুও হয়েছিলাম যা মনে পরলে আজও হাসি পায়- স্কুলে যাবার পথে একটা বাগান ছিলো । ওইখানে আমরা কিছু বন্ধু স্কুলে না গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম । বাগানটা ছিল লিচু,কলা,আমড়া,আম গাছে ভর্তি । প্রায় চুরি করার মত আমরা না বলে ঐ বাগান থেকে ফল খেতাম ।
এদিকে আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি গেছিলেন । আমার মায়ের কাছে জানতে চাইলেন-আমি স্কুলে যাইনি কেনো । কিন্তু মা তো জানেন আমি স্কুলে গেছি । মায়ের কাছে ঐদিন ধরা পড়ে যাই ।
অবশেষে স্কুলে না গিয়েও স্কুল ছুটি হবার সময়ই বাড়ি গেছিলাম । বাড়ি গেলে মা জানতে চাইলেন স্কুলে গেছিলাম - কি না । মিথ্যা বলছিলাম,স্কুলে গেছিলাম । মা বুঝতে পেরে শুধু বকাবকি করছিলেন । এরপর থেকে আবারও স্কুলে নিয়ে যেতেন ও নিয়ে আসতেন । সবকিছু বাদ দিয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করছিলাম ভালোভাবেই । অর্ধ-বার্ষিক পরিক্ষা দিয়েছিলাম । সেইবার বার্ষিক পরিক্ষায় আমি সেকেন্ড হয়েছিলাম । বাবা-মা খুশি হয়েছিলেন এবং আশেপাশের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াই ছিলেন ।
চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলাম । পড়া একটু বেড়ে গেলো । তখন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস করতাম । অনেক কষ্ট হতো সেই সময়,তবুও ভালো লাগতো । এর কারণ ঐ বছর আমাদের স্কুলে একজন নতুন শিক্ষক এসেছিলেন, যিনি খুব মজার মজার কথা বলতেন । তার কথা শুনে আমরা প্রচুর হাসতাম । আমাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলতেন । সম্ভবত আমাকে একটু বেশিই আদর করতেন । আমি উনার বাড়ি ও গেছিলাম অনেকবার । প্রাইমারি স্কুল জীবনে তিনি আমার সবচেয়ে পছন্দের শিক্ষক ছিলেন । অনেক ভালো লাগতো তাকে,শুধু তার ক্লাসই করার জন্য অনেক সময় স্কুলে যেতাম । অনেক কিছু শিখেছিলাম উনার কাছ থেকে । এমনও অনেক দিন হয়েছেলো -আমি যদি অসুস্থ থাকতাম তিনি আমার খোঁজখবর নিতে আমাদের বাড়ি আসতেন । আমার অনেক খেয়াল করতেন । তাঁর অনুপ্রেরণা ও সাহস পেয়ে আরও একটু বেশি পড়ালেখা করছিলাম । যার জন্য ঐ বছর আমাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারছিলোনা । আমি চতুর্থ শ্রেণিতে ফার্স্ট ই হইছিলাম
পঞ্চম শ্রেণি ছিলো আমার সবচেয়ে খারাপ বছর । ঐ বছর আমার প্রাইমারি স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় স্যার অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যান । অনেক মন খারাপ হয়ে গেছিলো , যার ফলে স্কুলে কম যেতাম । লেখাপড়াও করতাম না । আমার মা , স্কুলের স্যার ম্যাডামেরা আমাকে নিয়ে চিন্তায় পড়লেন । সামনে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনি পাবলিক পরিক্ষা । আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে স্কুলে নিয়ে গেছিলেন । মনমরা হয়ে বসে থাকতাম , শুধু স্যারের কথা ভেবে কান্না করতাম ।
সমাপনি পরিক্ষার এক-দেড়মাস আগে আবার পড়ালেখা শুরু করছিলাম,উদ্দেশ্য ভালো রেজাল্ট । যথাসময় পরিক্ষা শুরু হলো-ভয়ে ছিলাম কি না কি হয়। আল্লাহর রহমতে প্রথম পরিক্ষা ভালো হয়েছিলো । দ্বিতীয় পরিক্ষার দিন শরীর খুব খারাপ ছিলো । ভালো মতো পড়তে পারিনি ঐদিন । কিন্তু আমি যে এত খুশি হবো, এত অবাক হবো তা জানা ছিল না । ঐদিন আমার সবচেয়ে ভালো সেই স্যার ই আমাদের পরিক্ষার রুমে গার্ড দিচ্ছিলেন । আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না । এক দৌড়ে স্যারকে জড়িয়ে ধরছিলাম ,স্যার ও আমাকে উনার কোলে নিয়েছিলেন । সবাই আমাদের এই দৃশ্য উপভোগ করছিলো । অনেক দিন পর স্যারকে দেখছিলাম । সত্যি বলতে কি আমি যে অসুথ ছিলাম তা প্রায় ভুলে ই গেছিলাম । যাহোক, পরিক্ষাও অনেক ভালও হয়েছিলো ।
পঞ্চম শ্রেণির সমাপনি পরিক্ষা শেষ হলে আমরা বেড়াতে ঢাকা আসছিলাম । আমার জীবনে প্রথম ঢাকা আসা । বাবা আমাকে শিশুপার্ক ,চিড়িয়াখানা,যাদুঘর,রমনাপার্ক ইত্যাদি ঘুরেঘুরে দেখিয়েছিলেন । আগে শুধু এগুলো বইয়ে পড়তাম,তখন সরাসরি দেখতে পেরে খুব ভালও লেগেছিলো ।
অবশেষে ১৫ দিন বেড়ানোর পর বাড়ি ফিরে গেলাম পরিক্ষার রেজাল্টের ঠিক ২দিন আগে । খুব ভয় হয়েছিলো-রেজাল্ট কি রকম হয় ।
রেজাল্টের দিন স্যার মাকে ফোন করে বললেন আমি ফার্স্ট ডিভিশন ও স্কুলের মধ্যে ফার্স্ট হইছি । সেইদিনের মত খুশি আর একদিনও হয়েছিলাম না । বাবা খুশি হয়ে আমাকে বাই-সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন । এর জন্য আমি আরও বেশি খুশি হয়েছিলাম ।
পর্যালোচনাঃ
প্রাথমিক স্কুল জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছিলাম ,আবার অনেক কিছু পেয়েছিলাম না । আমাদের স্কুলটি তেমন ভালো ছিলনা । বৃষ্টির দিনে স্কুলের ছাদ থেকে পানি পড়তো আমরা তখন ক্লাস করতে পারতাম না । স্কুলে বিদ্যুৎ ছিল না ফলে গরমের দিনে ক্লাস করতে প্রচুর কষ্ট হত । স্কুলের বড় খেলার মাঠও ছিলনা । তাই আমরা তেমন খেলাধুলা করতে পারতাম না ।
কিন্তু আমাদের শিক্ষকেরা অনেক ভালো ছিলেন । আমাদের কে অনেক ভালোভাবে পড়াতেন । আমাদের কে নিজেদের ছেলেমেয়েদের মত আদর করতেন । তাই বলবো আমি আমার প্রাইমারি স্কুল থেকে অনেক কিছু পেয়েছি ।
আমার মাধ্যমিক স্কুলজীবনঃ
প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো । তাই আমি ঐ স্কুলে আর পড়তে পারিনি । বাবা আমাকে ২০০৮ সালের ২ জানুয়ারি আমাদের গ্রামেরই সবচেয়ে উন্নত এবং ভালো হাই স্কুল ‘’ভান্ডারিয়া বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি করিয়ে দেন । স্কুলটা আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে ই ছিল । কিন্তু আমার বাই-সাইকেল থাকার জন্য তেমন বেগ পেতে হয়ে ছিলনা।
ষষ্ঠশ্রেণিতে ভর্তি হতে পেরে আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম । ঐ স্কুলে ভর্তি হয়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হই ছাত্র-ছাত্রী দেখে ,অনেক ছাত্র-ছাত্রী ছিল ।
আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে তখন ২০০ ছাত্র-ছাত্রী ছিল । এবং ক শাখা , খ শাখা হিসেবে ভাগ করা ছিল । আমি ছিলাম ক-শাখায় । যাহোক,বাই-সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতাম । সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ক্লাস হতো । নতুন স্কুল ,প্রথম দিকে ক্লাসের অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তেমন কথা হতোনা । ক্লাস করতাম ,বাসায় চলে আসতাম । ষষ্ঠ শ্রেণিতে কারো সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ছিলোনা । টিউটরিয়াল,মিডটার্ম পরিক্ষা ভালোভাবে দিয়েছিলাম । একসময় ষষ্ঠ শ্রেণির ফাইনাল পরিক্ষা আসলো , মাধ্যমিক স্কুল জীবনের প্রথম ফাইনাল পরিক্ষা । মোটামোটি ভালোভাবে পড়াশুনা করছিলাম ,পরিক্ষাও ভালো হয়েছিলো । ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরিক্ষার রেজাল্টে আমি টপ টেনেই থাকলাম । পুরস্কার হিসেবে আমাদের প্রথম ১০ জনকে স্কুল থেকে বই দিয়েছিলো । তারচেয়েও বেশি স্কুলের সব শিক্ষকেরা আমাকে চিনতে শুরু করলো । খুব ভালো লাগছিলো তখন ।
এখানেও ৭ম শ্রেণিতে আমি বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করলাম । কিন্তু কোন পুরস্কার পেয়েছিলাম না । একটু খারাপ লাগলেও পরে ঠিক হয়ে গেছিলো । ৭ম শ্রেণিতে পড়ালেখায় আরো মনযোগী হয়েছিলাম । তাছাড়া ঐ বছর আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম । সহপাঠীদের সাথে অনেক ঘনিষ্ঠতাও বেড়ে গেলো । নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করলাম । স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আরও বেশি পরিচিত হয়ে ছিলাম । তারা আমাকে অনেক আদর করতেন । অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে আমি ৭ম শ্রেণিতে ফার্স্ট হয়ে ছিলাম । ২০০ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ফার্স্ট হওয়া কি যে আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না ।
এই অন্য রকম সফলতা নিয়ে ৮ম শ্রেণিতে উঠলাম । বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা তখন পাহাড় সমান । শুধু আমাদের ক্লাস না অন্য সব ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে দেখলেই কথা বলতো । তাই ৮ম শ্রেণিতে একটু স্কুলের বাহিরে ঘোরাঘুরি ও শুরু করছিলাম । স্কুলের পাশে নদী ছিলে সেখানে স্টিমার ঘাট ছিলো । ঐ সব দৃশ্য দেখতাম । জেলেরা মাছ ধরে কিভাবে তাও দেখতাম । অনেক দিন নৌকা ভ্রমনেও যেতাম বন্ধুদের সাথে । খুব উপভোগ্য ছিল সেই দিনগুলো । তবে বেশিদিন ঘোরাঘুরি করতে পারিনা এর কারণ ছিলও সামনে জে এস সি পরিক্ষা । ঐ বছর থেকেই ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরিক্ষা সারা বাংলাদেশে একসাথে শুরু হয়েছিলো প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষার মত । তাই আমাদের কে স্কুল থেকে ক্লাস ছাড়াও অতিরিক্ত পড়াতো । একটু বেশি কষ্ট হয়ে ছিলও তবুও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম । এর প্রধান কারণ ছিল – মা বলে ছিলেন আমি যদি ভাল রেজাল্ট করতে পারি তবে মা আমাকে মোবাইল ফোন কিনে দিবেন । তাই আমিও এর জন্য উঠে পরে লেগেছিলাম । অবশেষে পরিক্ষা শুরু হয়েছিলো । ভালভাবেই পরিক্ষা দিয়েছিলাম । তাঁর পর আবারও ঢাকা বেড়াতে গেছিলাম । ঐ খানে বসেই রেজাল্ট জানতে পারি যে আমি GPA 5 পাইনি । GPA 4.58 পেয়েছি । রেজাল্ট শুনে খুব কেঁদে ছিলাম । মা-বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিলেন । মোবাইল ফোন ও কিন্তু কিনে দিয়েছিলেন । আমিতো মহা খুশি হয়েছিলাম ।
খুশি খুশি মন নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলাম ।
৯ম শ্রেণিতে নিয়মিত ক্লাস , নিয়মত পড়ালেখা করতেছিলাম । লক্ষ্য ছিল জে এস সি পরিক্ষাও তো GPA 5 পেলাম না । সামনে এস এস সি পরিক্ষা যেকোনো মুল্যে GPA 5 পেতে হবে । ঠিক মত স্যারদের কথা শুনতাম তারা যেভাবে পড়াতো,মন দিয়ে পরতাম ।
এমন সময় একদিন খবর পেলাম আমি জে এস সি পরিক্ষায় বৃত্তি পেয়েছে । শুধু আমি না আমাদের স্কুল থেকে আরো ৫/৬ জনের মতো ।
শিক্ষা জীবনের প্রথম কোনো বৃত্তি । অনেক খুশি হয়েছিলাম ।
যাহোক, এস এস সি পরিক্ষা এমন সময় দড়জার কাছে কড়া নাড়ছে । ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করছিলাম । আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে পরিক্ষা দিতে হয়েছিলো । বেশ ভালো করেই পরিক্ষা দিয়েছিলাম । ফলাফল হিসেবে কাংখিত GPA 5 পেয়েছিলাম । যার জন্য স্কুল থেকে আমাকে অনেক পুরস্কার দিয়েছিলো । এমনকি আমরা আমাদের গ্রামের বিভিন্ন হাই স্কুল থেকে যারা যারা ভালো রেজাল্ট করে ছিলাম তাদের সবাইকে আমাদের গ্রামের গন্য মান্য ব্যক্তিরাও উপহার দিয়েছিলেন ।
এভাবেই আমি আমার মাধ্যমিক স্কুল জীবন অনেক সফলতার সাথে শেষ করেছিলাম ।
পর্যালোচনাঃ
আমার শিক্ষাজীবনের একটা বড় অংশ আমি পেয়েছিলাম ঐ স্কুলে লেখাপড়া করে । প্রাইমারি স্কুল থেকে যা শিখেছিলাম বা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম, তাঁর ব্যাপক প্রসার ঘটে মাধ্যমিক স্কুল জীবনে । আধুনিক শিক্ষা বলতে যা বুঝায় সব ই আমি পেয়েছিলাম মাধ্যমিক স্কুল জীবনে ।
তাই আমি মনে করি, আমার শিক্ষা জীবনে যা যা দরকার ছিল তাঁর সব পেয়েছিলাম । কোনো ঘাটতি ছিল বলে আমার মনে পড়েনা । শিক্ষকরা ছিলেন আমার পিতা সমতুল্য । উনারা শুধু আমাকে পুঁথিগত বিদ্যাই শিখিয়েছিলেন না । আদব-কায়দা , ভালো ব্যবহার সব ই শিখে ছিলাম ঐ স্কুল থেকে ও ঐ স্কুলের শ্রদ্ধ্যেয় শিক্ষকদের কাছ থেকে ।
আমার আজীবন মনে থাকবে আমার স্কুল,শিক্ষক, বিশেষ করে বন্ধুদের কথা ।
কলেজ জীবনঃ
আমাদের গ্রামে তেমন ভালো কলেজ ছিলনা । তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ঢাকা আসলাম কলেজে লেখা পড়া করার জন্য । ভালো রেজাল্ট ছিল বলেই ভালো কলেজে ভর্তি হতে পেরেছিলাম । আমি “ঢাকা কলেজে” ভর্তি হই এইচ এস সি করার জন্য । এখানেও অনেক অনেক স্টুডেন্ট । তাঁর চেয়ে বড় কথা হলো এরা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে পড়ালেখা করতে এসেছিল । এবং তারা কোনো না কোনো হাই স্কুলের ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়া ছাত্র । তাদের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগত, একসময় একটা ভালো সম্পর্ক হয় তাদের সাথে ।
যাহোক, নিয়মিত কলেজে আসতাম ,মন দিয়ে শিক্ষকদের কথা শুনতাম । শিক্ষকদের সফলতার গল্প ও শুনতাম । এইরকম চলতে থাকে কলেজ জীবন । একসময় ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষাও আসলো , ভালো করেই পরিক্ষা দিয়েছিলাম । ভালোভাবে পাশ করেই সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম । সেকেন্ড ইয়ারে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করছিলাম । ঢাকায় দর্শনীয় যতো জায়গা ছিল প্রায় সব জায়গাই বন্ধুদের সাথে ঘুরতাম । সবচেয়ে বেশি আসতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । কারণ এখানে পড়তে পারা ছিল আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া ।
সেই লক্ষ্য ভালোভাবে এইচ এস সি পরিক্ষা দিয়েছিলাম । পরিক্ষাগুলো কয়েকটা বিষয় ছাড়া ভালো ভাবেই দিয়েছিলাম ।
এইচ এস সি পরিক্ষা শেষ হবার পরের দিন থেকে নামলাম “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে” । সঠিক ভাবে গাইড লাইন পাওয়ার জন্য একটা নামি দামি ভার্সিটি ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম ।
ঐ খানের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা,সাহস,মনোবল পেয়ে কঠোরভাবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ।
এমন সময় একদিন কানে আসলো এইচ এস সি পরিক্ষার রেজাল্টের কথা । খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম । কারণ আমার পরিক্ষা তুলনা মুলক ভালো হয়ে ছিলনা । রেজাল্ট পেয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে ঙ্জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম । ভাবছিলাম আমার বুঝি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হবে না । আমি GPA 5 পাইনি । GPA 4.58 ছিল আমার HSC রেজাল্ট । সবকিছু ভুলে গিয়ে আরও ভয়ঙ্কর ভাবে পড়া শুরু করি,উদ্দেশ্য যেকোনো মুল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারা ।
অবশেষে সেই মাহিন্দ্র ক্ষণ এসে উপস্থিত । নভেম্বরের ৯ তারিখ ভর্তি পরিক্ষা । প্রস্তুতি ভালই ছিলো ।
পরিক্ষায় যাবার আগে মা-বাবার পা ধরে দোয়া নিয়ে গেছিলাম । পরিক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছিলো । আমি আশাবাদী ছিলাম যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারবো। তখন অপেক্ষা করছিলাম কবে রেজাল্ট দিবে । রেজাল্ট ও পেলাম । রেজাল্ট শুনে এত বেশি খুশি আমি আর জীবনে কোনোদিন হইছিলাম না । যদিও পজিশন তুলনা মুলক একটু পেছনেই ছিল ৮৪৯ তম ।
এরপর অপেক্ষা করতেছিলাম ,কবে ভর্তি হবো,কি বিষয় নিয়ে পড়ব । তাঁর চেয়ে বেশি ছিল নতুন নতুন বন্ধু পাবো ,নতুন নতুন পরিবেশ পাবো ।
এরপর একদিন ভর্তি হবার জন্য আমাকে ডাকল । আমি আমার পছন্দর বিষয় হিসেবে “শিক্ষা ও গবেষণা” বেছে নিলাম ।
তারপর শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা । কবে ক্লাস শুরু হবে ,কবে নতুন বন্ধুদের সাথে কথা বলতে পারবো । কবে থেকে উপভোগ করতে পারবো আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন । হঠাৎ একদিন আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে সুসংবাদ দিল যে ,জানুয়ারির ৭ তারিখ আমাদের নবীন বরণ আর ১০ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু । শুনে যে পরিমাণ খুশি হয়ে ছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় ।
যাহোক, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয় । এখন শুধু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন
উপভোগ করতেছি । তাই আমি মনে করি আমার শিক্ষাজীবনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
পর্যালোচনাঃ
প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলে যা পাইনি তা আমি পেয়েছিলাম ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে । এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন দেশের এবং দেশের বাহিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী । প্রকৃত শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম এই কলেজ থেকে । শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখেই শুনতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু না জানা গল্প । উনাদের গল্প শুনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি । এবং এখন আমি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । এখানে পড়তে পেরে আমি গর্ব বোধ করি । সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আমার বিষয়, আমার ইনস্টিটিউট “শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট” এ পড়তে পেরে ।
বিশেষ করে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ খুবই আন্তরিক । মাত্র ২ মাসের মধ্যেই উনারা আমাদের সবার নাম মুখেস্থ করে ফেলেছেন । সবসময় যেন উনাদের মুখে হাসি আঠার মত লেগেই থাকে ।
সবশেষে আমি বলতে চাই আমার শিক্ষাজীবন নানা রঙে রাঙানো । কোনো ঘাটতি ছিল না বা এখনও নাই ।
>>>>>>>>>>সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.