![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভূমিকাঃ
আমরা জানি প্রতিটি শিশুই একাধিক বুদ্ধিমত্তা অধিকারী । শিশুর এই প্রবলতম বুদ্ধিমত্তাসমূহ ব্যবহার করে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করলে শিখন দ্রুত ও স্থায়ী হয়। শিশু তার প্রবলতম বুদ্ধিমত্তাগুলো ব্যবহার করে শিখনে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে তার আগ্রহ, প্রবণতা বেড়ে যায়। তাছাড়া শিশু শ্রেণিকক্ষে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করে। এক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী শিখন কৌশলগুলোর সংমিশ্রণে পাঠদান করা হয় বলে কোন না কোনভাবে শ্রেণির সকল শিশুর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
বহুমূখী বুদ্ধিমত্তার ধারণাঃ
১৯৮৩ সালে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার বহুমূখী বুদ্ধিমত্তা (multiple intelligence) এর ধারণা প্রধান করেন। মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার প্রদত্ত মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায় যে, শিশুর পছন্দ বা সামর্থের অবস্থান মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্থান নির্দেশ করে।
বহুমুখী মেধাতত্ত্বে বিশ্বাসী এই মনোবিজ্ঞানীর মতে মানুষের কমপক্ষে আট ধরণের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এ বুদ্ধিমত্তার মাত্রাও সকলের সমান নয়। প্রত্যেকেই একাধিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী । সাধারণত কেউ কোনটাতে প্রবল আবার অন্যটিতে দুর্বল।
হাওয়ার্ড গার্ডনারের ৮ ধরণের বুদ্ধিমত্তা হলোঃ
১) মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা,
২) যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা,
৩) দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা,
৪) অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা,
৫) ছন্দ ও সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তা,
৬) আন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা,
৭)অন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা,
৮)প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা।
বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগঃ
এ পদ্ধতিতে শিশুর বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী শিখন কৌশলগুলো চিহ্নিত করে পাঠ পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা যায় । আমার পছন্দের স্তর হচ্ছে প্রাথমিক স্তর। আমি চতুর্থ শ্রেণির উপর এই তত্ত্বের প্রয়োগ করতে চাই। বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তার আলোকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শিক্ষণ পরিকল্পনা বানাতে চাই।
শিখন শেখানো কার্যক্রমকে সহজ ও ফলপ্রসূ করার জন্য শিক্ষণ পরিকল্পনার বিকল্প নাই। সুন্দর করে শ্রেণিকক্ষে উপস্হাপন করার কৌশলই হচ্ছে শিক্ষণ পরিকল্পনা।
মূল কাজে ফেরা যাক, আমি চতুর্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের "পরিবেশ দূষণ" বিষয়টি নিয়ে পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে চাই বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বর আলোকে।
হাওয়ার্ড গার্ডনারের ৮ টি বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শিক্ষণ পরিকল্পনাটি নিচে তৈরি করা হলোঃ
পরিবেষ দূষণ কি ? কীভাবে পরিবেশ দূষিত হয় ? পরিবেশ দূষণ রোধের পায় কী কী ?
এই বিষয়টি পাঠদানের জন্য ৮ ধরণের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যায়।
১) মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা:
যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা জটিল বিষয়ও সহজভাবে কথায় লিখে প্রকাশ করতে পারে। তাদের ভাষা থাকে প্রঞ্জল ও সাবলীল। তারা বই পড়া, কবিতা বা গল্প লেখা, আলোচনায় অংশগ্রহণ করা, কৌতুক বলা, সাহিত্য সৃষ্টি করা ইত্যাদি বেশি পছন্দ করে। তারা নতুন শব্দ লিখতে ভালবাসে। সুতরং এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কে এভাবে বিষয়টি শেখানে যায়।
২) যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা:
যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সমস্যা সহজে বুঝতে পারে এবং যুক্তি প্রয়োগ করে তা সমাধান করতে চায়। তারা সংখ্যা ও গাণিতিক সংগা ও ফর্মুলা সহজে আয়ত্ব করে। এরা যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং বিশ্লেষণগত কাজ নিয়ে বেশি চিন্তা করে। আমি এসব শিক্ষার্ধীদের যৌক্তিক , পরিসংখ্যান, জ্যামিতিক, গাণিতিক ধারণা দিয়ে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারি।
৩) দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা:
এমন ধরণের শিক্ষার্থী আছে যারা সহজে রূপ কল্পনা করে এবং পরিবেশের বিভিন্ন বস্তু, তাদের আকৃতি, রং, গঠন প্রভৃতি নিয়ে অধিক চিন্তা করে। তারা আকর্ষণীয় ডিজাইন ও প্যাটার্ন পছন্দ করে। এ ছাড়া সহজে নকশা, চার্ট ও মানচিত্র দেখে বুঝতে পারে। আমার মতে তাদের খুব সহজেই পড়ানো যায়। তাদেরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পরিবেশ দূষণ পর্য়বেক্ষণের মাধ্যমে শেখানো সম্ভব।
৪) অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা:
এই ধরণের বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা যারা স্নায়ুবিক ভাবে অতি সচেতন। স্পর্শ মাত্রই অনুভব করে। এরা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন, নাচ, অভিনয় ইত্যাদি বেশি পছন্দ করে। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দ্বারা বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার সহজে মনের ভাব প্রকাশ করে এবং বিষয়বস্তু বুঝতে পারে। এরা খেলাধুলা পছন্দ করে এবং দীর্ঘ সময় এক স্থানে স্থির হয়ে বসে থাকতে চায় না। তাদের জন্য আমি ভূমিকাবিনয়ের আয়েজন করতে পারি, অভিনয়ের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ বিষয়টি অতি সহজ ভাবে বুঝাতে পারা যাবে। তারা অনুভব করতে পারবে এবং শিখে ফেলবে।
৫) ছন্দ ও সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তাঃ
যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা কন্ঠ সংগীত ও বাদ্য বাজানো ভালবাসে। পরিবেশের বিভিন্ন শব্দ ও ছন্দ তাদের মনে ও দেহে প্রভাব বিস্তার করে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ, ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ইত্যাদি এদেরকে আকৃষ্ট করে। এরা সংগীত রচনা করতে, সূর দিতে এবং বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সমন্বয় করে সংগীত অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে সক্ষম। তাদের ক্ষেত্রে আমি পরিবেশ দূষণ বিষয়টি কবিতার ছন্দ, গান, গল্পের ছন্দে ছন্দে শেখাতে পারি।
৬) আন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা:
যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সাধারণত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়বস্তু সহজে আয়ত্ব করে। এরা সহজে বন্ধু-বান্ধব জোটায় এবং দলে কাজ করতে আনন্দ পায়। দলে অন্যদেরকে অংশগ্রহণে সহায়তা করে। এই পদ্ধতিতে শেখানো সহজ। দলীয় কাজ, বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ বিষয়টি শেখানো সম্ভব বলে আমি মনে করি।
৭) প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা:
প্রকৃতির সাথে মিতালী আছে এমন শিক্ষার্থী অনেক আছে। বিশেষ করে গ্রামে। এরা উদ্ভিদ, প্রাণী ও প্রকৃতির বিভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্য ও সম্পর্ক সহজে বুঝে। তাই উদ্ভিদ, প্রাণী ও প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা করতে ভালবাসে। এদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শ্রেণীকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা সর্বাধিক প্রয়োগ হয়। পরিবেশ দূষণ কী, কেন হয় ? এই ধরণের শিক্ষার্থীরা তা সবচেয়ে ভালো বুঝবে। তাদের শুধু বিষয়টির সাথে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারলেই হবে।
৮) অন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা:
অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সাধারণত লাজুক ধরণের হয় এবং একাকী থাকতে ও একা একা কাজ করতে পছন্দ করে। ফলে এরা নিজেরা নিজে নিজেই প্রভাবিত হয়। বাহিরের প্রভাব এদের মনে কম। এদেরকে শেখানো একটু আলাদা। তাদের সাথে মিশতে হবে, তাদেরকে কোনো হ্যান্ডনোট দেয়া যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ বিষয়টি তারা পড়ার মাধ্যমে পড়ে নিজে নিজে বুঝতে সক্ষম হবে। আমার পরিকল্পনাও হবে এ রকমি।
সুতরং, বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বর মাধ্যমে আমি শিক্ষার্থীদের এভাবে শেখাতে পারি। তাদের জন্য পাঠ পরিকল্পনা করতে পারি। এতে করে তারা সহজেই শিখতে পারবে। বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো ভাবে শেখানো যায়। এটা খুবই কার্যকরী একটি শিক্ষণ পদ্ধতি।
©somewhere in net ltd.