নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপার কৌটা

জহিরুল হক শাওন

জহিরুল হক শাওন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চ্যালেঞ্জিং শিশুদের শিক্ষাদান

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৩৯

ভূমিকাঃ
প্রতিবন্ধী শিশুদের সক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা নেই বলেই আমরা আনেক সময় তাদের প্রতি অবিচার করে ফেলি। প্রথমেই তাকে আমরা সমাজ থেকে আড়াল করার মাধ্যমে শুরু করি তার সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতিবেশীরাও জানে না তাদের পাশের বাড়িতে একটি প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। তাকে এভাবে আড়াল করার মাধ্যমে শিশুর ক্ষতিকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলি। এর ফলে শিশুর সামাজিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটে। অনেক সাধারণ শিশুর বাবা-মা-ই চান না তাদের স্বাভাবিক শিশুটা এ ধরনের শিশুদের সঙ্গে মিশুক। এর ফলে সাধারণ শিশুদের মনেও প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি একটা নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয়।
প্রতিবন্ধী শিশুদের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ই গ্রহণ করতে চায় না। অধিকাংশ বিদ্যালয়ই মনে করে এদের বিদ্যালয়ে সুযোগ দিলে বাড়তি ঝামেলা সৃষ্টি হবে। তাছাড়া শিশুদের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা থাকে বলে এদের নিতে চায় না। অনেক সময় অন্য শিক্ষার্থীদের বাবা-মা এমন শিশুদের সঙ্গে তাদের শিশু পড়ালেখা করবে তা মেনে নিতে চান না। মূলধারার বিদ্যালয়গুলোতে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা কিছুটা সুযোগ পেলেও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু বা বুদ্ধির বিকাশজনিত ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা কোন সুযোগ পায় না। আবার যেসব শিশু বিদ্যালয়ে সুযোগ পায় তাদের অধিকাংশই ঝরে যায়। এর প্রধান কারণ হলো শিক্ষকরা জানেন না তাদের কিভাবে পড়াতে হবে এবং বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবেশ প্রতিবন্ধী শিশুবান্ধব নয়।
বাইরের দেশে শিক্ষার্থীর গ্রহণ ক্ষমতা কেমন তার ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীকক্ষের ডিজাইন করা হয়, আর আমাদের দেশে স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী চলে শিক্ষার্থীরা।
সমাজে অগ্রগতি ও পুর্ণতা নির্ভর করে সমাজের বসবাসকারী সকলের সার্বিক কল্যানে এবং উন্নতির মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের শিশুরা দারিদ্রতার কারণে অবহেলিত। পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষের জন্ম পূর্ববর্তীতে মায়ের অসতর্কতার কারণে বা জন্ম পরবর্তী কোন কারণে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হয়ে জন্মে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু একটি ব্যাপক অর্থ নির্দেশক শব্দ।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর গড় মান সাধারন মানুষের থেকে বেশী হয় আবার কমও হয়। অর্থাৎ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে বুদ্ধির দিক থেকে মেধাবী এবং গুরুতরভাবে প্রতিবন্ধী শিশু উভয়কে বুঝায়। এই দুই ধরনের শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
চ্যালেঞ্জিং শিশুর পরিচয়ঃ
যে সকল শিশুর ইন্দ্রিয় ক্ষমতা বুদ্ধি বা শারীরিক ক্ষমতা এতটাই ভিন্ন যে কারণে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষা বা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন হয়। সেই সকল শিশুকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে সেই সব শিশুদের বুঝায় সমবয়স্কদের তুলনায় যাদের বুদ্ধি সংবেদন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ভাব বিনিময় ক্ষমতা ও সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রার কম বা বেশী হয় তাকেই ব্যতিক্রমী শিশু বলে আখ্যায়িত করা হয়।
অর্থাৎ যারা সাধারণর বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু । বুদ্ধাংকের দিক থেকে বলা যায় যাদের বুদ্ধাংক ৭৫ এর নিচে এবং ১২০ এর উপরে বা বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর লক্ষণাবলী:
১। বুদ্ধি : সাধারন শিশুদের তুলনায় বুদ্ধিমত্তা গড় মানের চেয়ে কম বা বেশি হয়।
২। সংবেদনঃ সংবেদন ক্ষমতার পার্থক্য হয়, এর মধ্যে যেমন চোখ ও কান প্রধান আবার তেমন শোনার ও দেখার পার্থক্য হয়।
৩। ভাববিনিময়ঃ ভাববিনিময় করার ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়।
৪। আচরণগত পার্থক্যঃ আচরনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী শিশুর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
৫। শারীরিক ক্ষমতাঃ শারীরিক নড়াচড়া অর্থাৎ অঙ্গ সঞ্চালন দক্ষতার অক্ষমতা। ইচ্ছামত নড়াচড়া করতে পারে না।
৬। সামাজিক দক্ষতাঃ সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্রে অক্ষম হয় বা পার্থক্য দেখা যায়।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর বৈশিষ্ট্য:
১। অনগ্রসর শিশু প্রধানত পরীক্ষায় কম নম্বর পায়। শ্রেণীতে চুপচাপ থাকে এবং সাধারণ সংশোধনের ব্যাপারেও ধীরগতি প্রদর্শন করে।
২। মানসিক ভাবে অনগ্রসরদের অভিযোজন ক্ষমতা কম হয়। নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোন সক্রিয়তা থাকে না।
৩। সাধারণ ভাবে কোন পাঠ শিখতে যতটুকু সময় লাগার কথা তার চেয়ে বেশী সময় লাগে অথচ কিছু না বুঝলে অপরের সাহায্য গ্রহনেও ততটা আগ্রহ দেখায় না।
৪। ব্যতিক্রমী ছেলে-মেয়েরা সাধারন ও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠে। তবে একটু বড় হবার সাথে সাথে অপরের তুলনায় তাদের গ্রহন ক্ষমতা, কর্মক্ষমতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কম হতে দেখা যায়।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর প্রকারভেদ :
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
(১) প্রতিভাবান শিশু,
(২) প্রতিবন্ধী শিশু।
বিভিন্ন ধরনের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু আমরা দেখতে পাই।
যেমন-
 শারীরিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,
 দৃষ্টিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,
 বাক ও শ্রবণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,
 বুদ্ধির বিকাশজনিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,
 মানসিক ও আবেগিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,
 ধীর শিখনজনিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,
 অটিজম/অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারজনিত,
 সেলিব্রাল-পালসিজনিত,
 ডাউন-সিনড্রোমজনিত ইত্যাদি।
শিশুর আইকিউ ‘ইন্টেলিজেন্ট কৌশেনট’কে সংক্ষেপে ‘আইকিউ’ নামে অভিহিত করা হয়। জার্মান সাইকোলজিস্ট উইলিয়াম স্টার্ন ১৯১২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কারও বুদ্ধির মাত্রা নিরূপণের জন্য আইকিউ স্কোর নির্ণয় করা হয়। এ জন্য নানা ধরনের মানসম্মত টেস্ট আছে। এর যেকোনো একটি ধরে আইকিউ স্কোর করে নেওয়া হয়। আসলে একটি ফর্মুলার ভিত্তিতেই আইকিউ মাপা হয়।
আইকিউ: ১০০ – মন-বয়স/স্বাভাবিক বয়স তবে সারা জীবন একই আইকিউ বহাল রেখে একজন জীবন কাটাতে পারবে এর কোনো স্থির নিশ্চয়তা নেই।
শিশুর বুদ্ধি বিকাশে নানা প্রভাব: আইকিউ নির্ধারণে যেসব ফ্যাক্টর ভূমিকা রাখে:
*সাধারণ বুদ্ধিমত্তা
*মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব
*বংশগত
*পারিবারিক প্রতিবেশ
*গর্ভাবস্থায় শিশুভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের সুবিধা-অসুবিধা *পুষ্টি *লিঙ্গ *জাতিগোষ্ঠী প্রভৃতি। শিশু কীভাবে দক্ষতা অর্জন করে: শিশু যখন কোনো বিষয়ে নৈপুণ্য অর্জন করে, তা নানা ধাপ বেয়ে তবেই অর্জিত হয়।
যেমন,
১. কৌতূহল থেকে নতুন কিছু চেনা।
২. নতুন চেনা থেকে নতুন আবিষ্কার।
৩.আবিষ্কার করে আনন্দ।
৪. আনন্দ পুনঃপুনঃ কর্ম-প্রচেষ্টায় উদ্দীপনা আনে।
৫.পুনঃপুনঃ সম্পাদনা নিয়ে আসে দক্ষতা ও পারঙ্গমতা।
৬. পারঙ্গমতা নতুন দক্ষতার সূত্রপাত ঘটায়।
৭. নতুন দক্ষতা জন্ম দেয় আত্মবিশ্বাসের।
৮. আত্মবিশ্বাস নিজেকে পরখ করার, যাচাইয়ের সুবিধা এনে দেয়।
৯. নিজের ওপর আস্থা ও নিরাপত্তার ভিত খুঁজে পায়।
১০. এ ধরনের নিরাপত্তা, সুরক্ষা আরও সৃজনশীলতা এবং আরও নতুনের খোঁজে উদ্যম আনে।
১১.নিজের নতুন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ওঠে শিশু, বেড়ে ওঠে সে বিকাশের উচ্ছল প্রাণরসে।
নার্সারি বয়সের শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত না হলে সে এসবে পারদর্শিতা দেখাতে পারে:
১.নিজের নাম বলতে পারে। বলতে পারে পরিবারের সদস্যদের নাম।
২.উচ্চারণে ও ভাবভঙ্গি নিয়ে ছড়া আবৃত্তি করতে সক্ষম।
৩. শিশু গানে ও ছড়ার সুরে কণ্ঠ মেলাতে পারে।
৪. নিয়মনীতি মেনে খেলাধুলার আনন্দে অংশ নেয়।
৫. শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম জানাতে পারে।
৬. বিভিন্ন ছবির দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে গল্পের কাঠামো গড়ে নেয়।
৭. নিজের মতো করে নানা গল্প রচনা করে।
৮. প্রকৃতি বর্ণনায় সিদ্ধ; যেমন, ফুল, ফল, পাখি, পশু, গাছপালা চেনে এবং এসব সম্পর্কে বলতে পারে।
১০. অঙ্ক করার পূর্বধাপ হিসেবে ছোট-বড়, কম-বেশি—এসব বোঝাতে সক্ষম।
১১. ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা গুনতে পারে।
১২. সহজ প্রশ্নের উত্তরদানে সমর্থ, তা যদি তার পরিচিত ভুবনের হয়।
১৩.ছোটখাটো নির্দেশনা মেনে চলতে সমর্থ।
১৪.নিজে নিজে কাজ করে সৃষ্টিশীলতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে।
১৫,কীভাবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, তা শিখে যায়।
১৬.খেলা শেষে খেলার সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখতে সক্ষম।
১৭.কতগুলো সামাজিক আচার-ব্যবহার শিখে নেয়; যেমন অভ্যর্থনা জানানো, বড়দের সম্মান দেখানো, ধন্যবাদ জ্ঞাপন ইত্যাদি।
১৮.রাগ, আনন্দ-বেদনা—এসব ভাবাবেগের অনুভূতিও প্রকাশ করতে



এই শিশুদের শিক্ষাদানে বিভিন্ন শিখন তত্ত্বের প্রয়োগঃ
আমি এই শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন শিক্ষণ থিউরি প্রয়োগ করতে পারি। যেমনঃ
 চিরায়ত সাপেক্ষীকরণ
 করণ শিক্ষণ
 পরিহার শিক্ষণ
 অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিক্ষণ
১। চিরায়ত সাপেক্ষীকরণঃ
চিরায়ত সাপেক্ষীকরণের মূল কথা হলো প্রত্যেক প্রাণী স্বাভাবিক ভাবে কতকগুলো উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া করে। এসব উদ্দীপককে স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়াকে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বলে।
কোন স্বাভাবিক উদ্দীপকের সাথে একটি নিরপেক্ষ উদ্দীপক বার বার উপস্থাপন করলে স্বাভাবিক উদ্দীপকের সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তখন নিরপেক্ষ উদ্দীপকটি আর নিরপেক্ষ থাকেনা। কারণ স্বাভাবিক উদ্দীপকের অনুপস্থিতিতে এই উদ্দীপকটি একই প্রাণীর মধ্যে স্বাভাবিক উদ্দীপকের ন্যায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আইভান প্যাভ্লভের এই প্রক্রিয়াকেই বলে সাপেক্ষীকরণ।
• চ্যালেঞ্জিং শিশুর শিক্ষণের উপর প্রয়োগঃ
আমরা জানি যে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর কিছু কিছু অনেক দুষ্টু প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারা শিক্ষণে মনোযোগ দেয়না। শিক্ষক যখন শেখাতে চান তখন খামখেয়ালী করে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে বার বার বাথরুমের নাম করে বাহিরে গিয়ে বসে থাকে। আর শিখতে আসতে চায়না। ক্লাসরুমে কথা বলে। অন্যদের বকা ঝকা করে। গালিও দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এই থিউরির আলোকে আমি একটি ধারণা প্রদান করতে পারি যে, বিশেষ শিশুদের মধ্যে অনেক ভালো শিশু আছে যারা ভালোকরে শিক্ষকের কথা শোনে। ঠিক মতো পড়ালেখা করে। ক্লাসরুমে শিক্ষককে সাহায্য করে। একজন শিক্ষক তখন ভালো শিশুটির বার বার দৃষ্টান্ত দিতে পারেন। ভালো শিশুটিকে পুরস্কার দিয়ে দুষ্টু শিশুটিকেও ভালো করা যেতে পারে। ভালো ব্যবহার, প্রশংসা, বা পুরস্কার পাবার জন্য দুষ্টু শিশুটিও ভালো হয়ে যাবে।
২। আকস্মিক শিক্ষণঃ
সুনির্দিষ্ট প্রেষণা, পূর্ব-পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাড়া শিক্ষণকে আকস্মিক শিক্ষণ বলে। অনেক সময় উদ্দেশ্যহীনভাবে, ঘটনাক্রমে, প্রসঙ্গক্রমে আমরা অনেক কিছু শিখে থাকি, যা এই শিক্ষণের মধ্যে পড়ে।
• চ্যালেঞ্জিং শিশুর শিক্ষণের উপর প্রয়োগঃ
এই ধরণের শিক্ষণকে নৈমিত্তিক শিক্ষণও বলা যায়। মনে করি একটি প্রতিবন্ধী শিশুকে ক্রিকেট খেলা শেখানো হবে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তাকে একটু একটু করে শেখানো শুরু করলো শিক্ষক। শিক্ষক তাকে শিখাতে গিয়ে তার সবটুকু মেধা ব্যবহার করলো। কিন্তু হঠাত করে ক্রিকেট বল গাছে আটকে গেলো। প্রতিবন্ধী শিশুটির তো এমন শিক্ষণ দেয়া হয়নি। সে বুঝতে পারছিলনা কি করবে। গাছে ওঠার মতো সক্ষমতা শিশুটির নাই। তখন শিক্ষক তাকে গাছ থেকে বল তা নিচে নামানোর শিক্ষা দিতে পারেন যেটা অপরিকল্পিতভাবে। শিশুটিও এই পরিস্থিতিতে এই শিক্ষণটা শিখতে অনেক আগ্রহ দেখাবে। তার এই শিক্ষণটুকু ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে।
৩। পরিহার শিক্ষণঃ
প্রাণী যখন কোনো অপ্রীতিকর বা বেদনাদায়ক অবস্থা এড়িয়ে চলতে শিখে তখন একে পরিহার শিক্ষণ বলে। এ ধরণের শিক্ষণে negetive reinforcement দেওয়ার সাহায্যে প্রাণীকে কোন প্রতিক্রিয়া শেখানো যায়।
• চ্যালেঞ্জিং শিশুর শিক্ষণের উপর প্রয়োগঃ
প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণ হতে পারে। আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে প্রতিবন্ধী শিশুদের মুখ দিয়ে লালা পরে বা তারা মুখ দিয়ে আঙুল চুষে। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষক শিশুটির মুখে কিংবা আঙ্গুলে কোন পদার্থ লাগিয়ে দিতে পারেন যেটা প্রতিবন্ধী শিশুটির জন্য শাস্তিজনক হয়। এর ফলে শিশুটি আর এই খারাপ অভ্যাস করবে না। পরিহার করতে শিখবে।
আমরা আরও দেখে থাকি যে কোন কোন প্রতিবন্ধী শিশুকে পড়াতে গেলে তারা বই পত্র ছিঁড়ে ফেলে। এক্ষেত্রেও এই থিউরি প্রয়োগ করা যায়। যাতে করে তারা শাস্তি পেয়ে এ কাজ আর না করে।
৪। অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিক্ষণঃ
এ শিক্ষনে শিক্ষার্থী কোন কিছু শেখার জন্য বার বার ভুল সংশোধনের মাধ্যমে চেষ্টা না করে বরং শিক্ষণীয় বিষয় বা সমস্যাটাকে সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করে অন্তর্দৃষ্টি লাভের মাধ্যমে সমস্যাটির মর্ম উপলদ্ধি করে সমাধানের চেষ্টা করে। এ ধরণের শিক্ষনে অন্ধ অনুশীলনের পরিবর্তে বুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষা লাভের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

• চ্যালেঞ্জিং শিশুর শিক্ষণের উপর প্রয়োগঃ
কথা বলা কিংবা হাঁটাচলার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং শিশুদের উপর এই তত্ত্ব খুবই কার্যকর। একটি স্বাভাবিক শিশু খুব অল্প সময়ে কথা বলতে পারে এবং হাটতে পারে কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশু এর ব্যাতিক্রম। তারা কথা বলতে পারেনা, আস্তে আস্তে তাদের মেধা খাটিয়ে কথা শিখে। চিন্তা ভাবনা করতে শিখে। বার বার চেষ্টার পর তারা এক পা দু পা হাটতে শিখে। মাথা খাটিয়ে তারা সব করতে পারবে বলে আমি মনে করি। কোন পাঠ্য শিক্ষণও তারা গভীর চিন্তা ভাবনা করে করতে পারে। নিজে নিজেই অনেক কিছু শিখতে পারে এবং এমন করে তাদের শেখানো সম্ভব।
শিক্ষকদের গুণাবলিঃ
শিক্ষককে হতে হবে মেধাবী, পেশাজীবী মনোভাবসম্পন্ন, শিক্ষার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। তাকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে প্রতিটি শিশু সম্ভাবনাময় এবং প্রতিটি শিশুই অনন্য। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সহায়তাকল্পে একজন শিক্ষকের কিছু বিশেষ ভূমিকা থাকা আবশ্যক। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষাদান কাজে নিয়োজিত একজন শিক্ষকের শ্রেণীকক্ষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 সব সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং শিশুদের তাদের কথা বা তথ্যটি সম্পূর্ণভাবে বলার সুযোগ দেয়া; এতে তারা উৎসাহ পাবে ও যোগাযোগ করার প্রেরণা পাবে।
 এসব শিশুর পারিবারিক বিষয়ে বেশি করে খোঁজখবর নেয়া এতে অভিভাবকেরা শিক্ষকদের প্রতি আশ্বস্ত হন এবং শিশুদের জড়তা অনেকখানি দূরীভূত হয়।
 প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়ে শ্রেণীকক্ষে যাওয়া এবং আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান করা।
 শ্রেণীকক্ষে এক জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বা বসে না থাকা।
 শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে পাঠ-সংশ্লিষ্ট ছবি,
 সংকেত বা অন্যান্য উপকরণ লাগিয়ে রাখা,
 সম্ভব হলে সব পাঠ উপস্থাপনায় উপকরণ ব্যবহার করা।
 শিশুদের দিকে সরাসরি মুখ করে পাঠদান করা,
 শ্রেণীকক্ষে এমন স্থানে দাঁড়ানো যেন শ্রেণীকক্ষের সব শিক্ষার্থীই বাধাহীনভাবে দেখতে পায়।
 বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রথম সারিতে বসানোর ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনবোধে এমন স্থানে বসানো যাতে শিক্ষক সহজেই তাদের কাছে যেতে পারেন।
 সরল-সহজবোধ্য-সাবলীল ভাষায় পাঠদান করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যথাসম্ভব কথার পুনরাবৃত্তি করা যাতে দৃষ্টি ও শ্রবণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর বুঝতে কোন সমস্যা না হয়।
 পাঠের বিষয়গুলো যথাসম্ভব বোর্ডে লিখে পাঠদানের ব্যবস্থা করা।
 বোর্ডে লেখার সময় স্পষ্ট ও বড় করে লেখা;
 এতে দৃষ্টি কম তীক্ষ্নতাসম্পন্ন শিশুদের দেখতে সুবিধা হয়।
 শিশুদের সব সময় উৎসাহিত করা;
 অপারগ শিক্ষার্থীদের কখনো তিরষ্কার না করা।
 প্রতিবন্ধিতার জন্য কাউকে উপহাস না করা;
 বরং প্রতিবন্ধীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা।
 অন্য সহপাঠীরা যেন তাদের বন্ধু মনে করে সেই জন্য সহপাঠীদের মোটিভেশন দেয়া।
 শুধু পাঠ্য-বইয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবদ্ধ না রেখে পাঠদান কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমও অধিক হারে চালিয়ে যাওয়া।
 শিক্ষার্থীদের কোনভাবেই শারীরিক ও মানসিক শাস্তি না দেয়া।
 শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে দলীয় কাজ প্রদান করা;
 পাঠদান শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক এবং কর্মভিত্তিক হতে হবে।
 পাঠদানের সময় যথাসম্ভব শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও ব্যবহার করতে হবে।
 চলাচলে সমস্যাসম্পন্ন শিশু (হুইলচেয়ার, ক্র্যাচ ব্যবহারকারী) কোন শ্রেণীতে থাকলে সে শ্রেণীকে অবশ্যই নিচতলায় রাখার ব্যবস্থা করা। শ্রেণীকক্ষের ভেতরে চলাচলের জন্য যথাসম্ভব খালি জায়গা রাখতে হবে।
 সব সময় কৃতকার্যের জন্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে বেশি বেশি করে বাহবা দিতে হবে।
 অকৃতকার্যের জন্য তিরষ্কার করা যাবে না বরং যথাসম্ভব বিষয়টি শিশুদের বুঝিয়ে দিতে হবে।
 বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষাদান কাজে একজন শিক্ষককে বিভিন্ন সামাজিক ভূমিকাও পালন করতে হয়। যেমন_ প্রতিবন্ধীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা।
 অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা ও পরামর্শ প্রদান।
 নিয়মিত ও সময়মতো প্রতিবন্ধী শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা;
 অভিভাবকদের সঙ্গে মাসে কমপক্ষে ২/৪ বার যোগাযোগ করা এবং শিক্ষকদের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে চলতে অভিভাবকদের অনুপ্রেরণা প্রদান।
 বিদ্যালয়ের আইন-কানুন, নিয়মশৃঙ্খলা সম্পর্কে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করা।
 শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া;
 এসব শিশুর সঙ্গে অবশ্যই স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে এবং এদের আবেগকে আঘাত দেয়া যাবে না।
 অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
 বাড়ির সকলের সঙ্গে খোলামেলাভাবে মিশতে দেয়া। সব সময় কৌশলে অন্য শিশুদের সঙ্গে এসব শিশুর যোগাযোগ, তথ্যের আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা।
 শিশু যেন সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে মা-বাবাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পরামর্শ দেয়া।
 শিশুর সামাজিকীকরণের জন্য বিদ্যালয়ের ও আশপাশের অন্যদের সঙ্গে মিশতে দেয়া।
 প্রতিদিনের পাঠ বাড়িতে অনুশীলনে সহায়তা করতে অভিভাবকদের অনুরোধ করা।
 পাঠদান কার্যক্রমের সঙ্গে সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।
 বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে বাবা-মাকে পরামর্শ দেয়া।
 এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে গরিব বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিভিন্ন উপকরণ (যেমন : চশমা, হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ, হিয়ারিং ডিভাইস ইত্যাদি) প্রদানের ব্যবস্থা করা।
 প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে অভিভাবককে অনুরোধ করা।


চ্যালেঞ্জিং শিশুদের শিক্ষাদান কৌশল যেমন হবেঃ
একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি আদর্শ স্কুল। বিশ্বের মতো দেশেও বাড়ছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর সংখ্যা। এখন দেশে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে চারজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। অটিজমে আক্রান্ত এসব শিশু সাধারণ শিশুদের চেয়ে ব্যতিক্রম, একেবারেই পৃথক তাদের শিখন কৌশল। ফলে তাদের চাহিদাটা বোঝা এবং আচরণের অস্বাভাবিকতাগুলো দূর করে সাধারণ শিশুদের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক মেলামেশার চেষ্টা করানোটা বিশাল চ্যালেঞ্জের। বিশ্ব অটিজম দিবসে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিখন কৌশল এবং তাদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ মন্তব্য করেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুল বিউটিফুল মাইন্ড-এর সিনিয়র স্পেশাল এডুকেটর সাবরিনা মুস্তারী। ‘আমরা প্রতিটি শিক্ষক সংগ্রাম করে যাচ্ছি যেন এসব শিশুর প্ল্যাটফর্ম শক্ত হয়, ওদের অধিকারগুলো যেন ওরা অর্জন করে নিতে পারে; সাধারণ শিশুদের সঙ্গে যেন তারা মেলামেশা করতে পারে, তাদের সঙ্গে খেলতে পারে, স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা,’ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন তিনি। বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৪ সালে রাজধানীর উত্তরায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিউটিফুল মাইন্ড স্কুল। এই স্কুলটিতে শুরু থেকেই কেবলমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের কাছে এই বিদ্যালয়টি অত্যন্ত সুপরিচিত এর শিক্ষকদের শিখন কৌশলের কারণে। বিউটিফুল মাইন্ড স্কুলের প্রবেশ মুখ ১৫০ জনের ওপরে শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলটির যাত্রা শুরু। বিশেষায়িত এই স্কুলটিতে বিশেষভাবে শিক্ষাদান পদ্ধতিসহ ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং তাদের পরিবারগুলোকে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে থাকে। বিদ্যালয়টির শিক্ষাদান পদ্ধতি অন্যসব বিদ্যালয় থেকে একেবারেই আলাদা জানিয়ে সাবরিনা মুস্তারী বলেন, ‘যেহেতু স্কুলটি বিশেষায়িত শিশুদের জন্য তাই এই স্কুলে আমাদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি প্রতিটি বিশেষ শিশুকেন্দ্রিক। যেহেতু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সমস্যা বা সংকটগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম তাই ক্লাসরুমে একত্রে বসানো হলেও প্রতিটি শিশুর জন্য তার সমস্যা অনুযায়ী উপযোগী শিখন কৌশল প্রয়োগ করতে হয় আমাদের।’  স্কুল ভবন ও মাঠ তিনি বলেন, ‘ আমরা প্রতিটি বিশেষ শিশুকে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রত্যেকের প্রতি শিক্ষকদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হয় এবং খুব ধীরে ধীরে তাদের কোনও একটি বিষয় শেখাতে হয়। এমনও ঘটনা আছে কাউকে হয়তো একটা অভ্যাস বা বিষয় শেখাতে লেগে যেতে পারে দুই তিন বছরও। কিন্তু, আমরা কখনোই হাল ছাড়ি না। সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে তা থেকে একেবারেই ভিন্ন ধরনের শিখন পদ্ধতি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে । চাপ দিয়ে শেখানো বা পড়তে বা বলতে বাধ্য করানো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে একেবারেই যায় না। সাধারণ শিশুদের বুঝিয়ে পড়ানোর যে সুযোগ থাকে বিশেষ শিশুদের ক্ষেত্রে সেটাও নেই। এসব শিশুর বেশিরভাগই আপন খেয়ালে থাকে। তাদের বেশিরভাগই সেনসরি জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে, অন্য কারও সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ও (আই কন্টাক্ট) করতে পারে না। এমন শিশুদের কিভাবে কিছু শেখাবেন, খাওয়াবেন, কিছু বলবেন তা নিয়ে তাদের অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ, যথাযথ কৌশল না জানলে তাদের উন্নতি ঘটানো অত্যন্ত কঠিন। এই স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডা. শামীম মতিন চৌধুরী একজন মনোবিদ। অভিজ্ঞতা থেকে যিনি জানেন এসব বিশেষ শিশুদের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হয়, তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতি কেমন হবে। এ কারণে এই স্কুলের প্রতিটি শিক্ষক এই শিখন কৌশল সম্পর্কে সচেতন। তাদের সবার এ বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ রয়েছে বলে জানান স্কুলটির ভাইস প্রিন্সিপাল মমতাজ সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ এই স্কুলের স্পেশাল এডুকেটররা এই অসম্ভব কঠিন কাজটাই করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন, সাধারণ চোখে যাকে আপনার কোনও কাজ বলে মনে হবে না সেটাই হয়তো এমন কোনও একটি শিশুর জন্য শিখন কৌশল, যা শেখাতে একজন স্পেশাল এডুকেটর লেগে থাকছেন দিনের পর দিন।’ মমতাজ সুলতানা বলেন, এত পরিশ্রমের পর কোনও বিশেষ শিশুকে যখন কিছু শেখানো যায় তার যে তৃপ্তি সেটা আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে শুধু তার অভিভাবক ও স্বজনরাই বুঝতে পারেন। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে অটিজম ইস্যুটিকে প্রাধান্য দেওয়াসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এসব শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে সমাজেও ধীরে ধরে বিশেষ শিশুদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা কমে আসছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, এসব শিশু যাতে স্বাভাবিক শিশুদের মতোই সব কিছু শিখতে পারে সেজন্য আমাদের স্পেশাল এডুকেটররা প্রচণ্ড শ্রম দিয়ে থাকেন। আর সে কারণে তারা লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি নাচ, গান অভিনয়ও শিখছে। এমনকি স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পুরস্কৃতও হচ্ছে। জাতীয় শিশু দিবসে নৃত্য শাখায় চ্যাম্পিয়ন হয় বিউটিফুল মাইন্ড স্কুলের চার শিক্ষার্থী এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত ১৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানে সব জেলার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তার স্কুলের বিশেষ শিশুদের একটি দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও গতমাসে অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লোর হকি চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ টিম রানার্সআপ হয় যেখানে এই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছিল, যার নাম জুনায়েদ ইসলাম। প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান সেখানে কয়েক বছর ধরে অটিস্টিক শিশুদের ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও ছবি সেসব ঈদ কার্ডে ব্যবহার হয়েছে অনেকবার, গতবছরও এই স্কুলের দুজন শিক্ষার্থীর ছবি ছাপা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে। এদের একজন আফিয়া বিনতে আহমেদকে নিজের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এসব সম্ভব হয়েছে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডা. শামীম মতিন চৌধুরীর বিশেষ তত্ত্বাবধানে যিনি একইসঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিক কমিটির চেয়ারপারসন বলে জানান সিনিয়র স্পেশাল এডুকেটর সাবরিনা মুস্তারী। তিনি বলেন, এসব বিশেষ শিশুরা যদি মূলধারার স্কুলগুলোতে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়, তাহলে তাদের বিকাশটাও অনেক ভালো হয়। আমরা অভিভাবকদের সেসব স্কুলগুলোতে যাবার জন্য পরামর্শও দিয়ে থাকি, যেন মাইল্ড অটিজম থাকা শিশুরা সাধারণ স্কুলগুলোতে মানিয়ে নিয়ে পারে। তবে এদের সংখ্যা এখনও খুব কম, আর মূলধারার স্কুলগুলো এ ব্যাপারে খুব একটা আন্তরিক নয়। আমার মতে চ্যালেঞ্জিং শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতি এমন হওয়াই উত্তম।
শ্রেণি ব্যবস্থাপনা যেমন হওয়া উচিতঃ
একীভূত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে আমাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে প্রায় ১০% শিশুর কোন না কোন ধরনের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু একটি ব্যাপক অর্থ-নির্দেশক শব্দ। আমরা সাধারণত অনেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শব্দটি ব্যবহার করি। প্রতিবন্ধী শব্দটি নেতিবাচক, যেখানে একজন ব্যক্তির সক্ষমতাকে খাটো করা হয়। আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শব্দের মাধ্যমে নির্দেশ করা হয়। শিশু বা ব্যক্তির এমন কিছু বিশেষ চাহিদা রয়েছে যা পূরণ করলে সে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবে। যেমন-
 শ্রবণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর চাহিদা হতে পারে হেয়ারিং ডিভাইস,
 দৃষ্টিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর চাহিদা হতে পারে চশমা।
 আমরা যদি তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই, একটু বিশেষ নজর দেই, তবে তাদের মূলধারার শিক্ষায় নিয়ে আসা সম্ভব।
একীভূত শিক্ষা একটি ধারণাগত পরিবর্তনের বিষয় যা মানুষের কর্ম ও আচরণ দ্বারা চর্চা করতে হয়। এ পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যে ব্যক্তিটি তিনি হলেন শিক্ষক। দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া একীভূত শিক্ষার কথা কল্পনাই করা যায় না।
প্রতিবন্ধী শিশুরা মানুষের মতো মানুষ হওয়ার দুর্বার বাসনায় শুধু ইচ্ছাশক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য শত প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে, শত বাধা অতিক্রম করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এখনও অনেক শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এ বঞ্চিত শিশুদের তালিকায় রয়েছে ,
 দরিদ্র শিশু,
 পথশিশু,
 ভবঘুরে শিশু,
 বস্তিবাসী শিশু,
 এতিম শিশু,
 উপজাতি শিশু,
 কর্মজীবী শিশু,
 যৌনকর্মীদের শিশু,
 পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন শিশু,
 যাযাবর-বেদে সম্প্রদায়ের শিশু,
 এইডস আক্রান্ত বাবা-মায়ের শিশু,
 এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত শিশু,
 চা বাগানের শিশু,
 বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ আরও অনেকে।
এসব শিশুকে আলাদা না করে মূলধারার শিক্ষায় এনে তাদের উপযোগী বিদ্যালয়ের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে বিশ্ব্বব্যাপী যে শিক্ষাধারা প্রচলিত হয়েছে তা একীভূত শিক্ষা নামে পরিচিত। সব শিশুকে একই শিক্ষা-কাঠামোর মধ্যে রেখে মূল-ধারার বিদ্যালয়ে একসঙ্গে একই শিক্ষাক্রমের আওতায় গুণগত মানসম্পন্ন শিখন-শেখানো কার্যাবলী পরিচালনা করাই একীভূত শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
নিচে আমার সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত কৌশলসমূহ তুলে ধরা হলোঃ-
 পাঠদানের জন্য শুরুতেই আমি আমার পাঠদানের বিষয়টির উপর নির্দিষ্ট লেকচার প্লান ও পাঠ পরিকল্পনা সুন্দর করে সাজাবো যাতে সহজেই শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি, এবং শিক্ষার্থীরাও ভালোভাবে সহজে বুঝতে পারে;
 এরপর আমি এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত উপাদান ও উপাত্ত সংগ্রহ করবো এবং শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের দেখানোর জন্য এগুলো নিয়ে যাবো। কারণ শিক্ষার্থীরা যে বিষয় পড়বে তা ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে দেখলে শেখার জন্য আগ্রহ দেখাবে;
 বিষয় বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও প্রেষণা সৃষ্টি করবো;
 শ্রেণীকক্ষে গিয়েই শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করবো। এতে করে শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং তারা অনেক মনোযোগ দিবে
 প্রয়োজনে পাঠদানের পূর্বে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আমি প্রথমে কিছুই না বলে আমার শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইবো, এরজন্য প্রশ্ন করবো এবং লিখতে দিবো। যেমন; ‘‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ বলতে তোমরা কেউ কিছু জানো কি না ? কাদের কে ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ বলা হয় ? কয়েকটা জাতিসত্তার নাম বলতে বা লিখে দিতে পার কি না ? তারা বাংলাদেশের কোথায় কোথায় থাকে ?” ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তর জানতে চাইব, তারা যদি না পারে তবে তারা এতে জানার জন্য অনেক আগ্রহ দেখাবে। এবং আমি পরে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও সহ তাদের কে দেখাব, তখন যদি তারা খাতায় যা লিখেছে তার সাথে মিলে যায় তবে তারা পুরস্কার পাওয়ার মতো আনন্দ পাবে এবং আরও শেখার জন্য কৌতূহল প্রকাশ করবে।
 শ্রেণিতে শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর নাম জানলে এবং নাম ধরে ডেকে ডেকে দায়িত্ব দিলে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হাত-বানানো একটি সাধারণ নামের কার্ড সমাধান দিতে পারে। তাই অল্পকয়েক দিনের চেষ্টায় আমিও প্রায় সকল শিক্ষার্থীর নাম মনে রাখতে পারবো;
 শিক্ষার্থীর মনোযোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির জন্য কলা-কৌশল আয়ত্ত করবো, যেমন কোন শিক্ষার্থী অনেক দুষ্টুমি করলে তাকে পুরস্কার দেবার মাধ্যমে বা তার পাশের কোন ভালো শিক্ষার্থীর প্রশংসা করার মাধ্যমে দুষ্টু শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব;
 বেশি শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তা হলো কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করার সময় শিক্ষক হিসেবে আমি যেভাবে বুঝি সেভাবে ব্যাখ্যা না করে শিক্ষার্থীর বয়স এবং শ্রেণি বিবেচনা করে ব্যাখ্যা করবো। কারণ তাদের বয়সের জন্য তারা অনেক কিছু বুঝতে পারেনা। এবং তারা না বুঝতে পারলে পড়া-লেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই আমি তাদের বয়স অনুযায়ী এবং তাদের চেনা বিষয়ের সাথে মিলিই সব বিষয়গুলো পড়াবো। বিষয়বস্তু অবশ্যই সংক্ষিপ্ত এবং সহজ ভাষায় উপস্থাপন করবো;
 উদাহরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একান্ত জানা পরিবেশ থেকে তুলে আনতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে;
 কোন বিষয় বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বে উপকরণ দেওয়া যাবে না। এতে শিক্ষার্থীরা নির্দেশনা না শুনে উপকরণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। এরজন্য আগে বিষয়টি ভালোভাবে উপকরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিবে এবং পরে তার ব্যবহার শিখিয়ে দিবো;
 কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা খুব একটা সহজ নয়। তাই দীর্ঘ নির্দেশনা না দিয়ে ছোট ছোট নির্দেশনা অনেক বেশি কার্যকর হবে বলে আমি মনে করি। তাই দ্রুত নির্দেশনা না দিয়ে ধীরে ধীরে নির্দেশনা দিলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সুবিধা হয়। সে দিকে অবশ্যই আমি খেয়াল রাখবো;
 শিক্ষার্থীদের কাজ দেওয়ার আগে কোন বিষয় প্রদর্শনের মাধ্যমে কাজটি কীভাবে করতে হবে তা বুঝিয়ে দিলে ভাল হবে। কারণ কোন বিষয় ব্যাখ্যা করার চেয়ে প্রদর্শন করলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সহজ হয়;
 বিষয়বস্তু আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা কতটা বুঝতে পেরেছে তা যাচাইয়ের জন্য প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা সঠিক উত্তর দিতে পারলে আমি মনে করবো আমার বিষয়বস্তু আলোচনা ভাল হয়েছে। আর যদি মনে হয় আমি যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে শিক্ষার্থীরা উত্তর দিতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে আমি পুনরায় বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করবো;
 শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কুশলাদি সম্বন্ধে অবগত হবো। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে কোন শিক্ষার্থীর মন খারাপ থাকলে বা অন্য কোন কারণে মনোযোগ দিতে না পারলে তাদের কাছে জানতে চাইলে কিংবা তাদের সাথে কথা বললে তারা ভালো অনুভব করে। এছাড়াও শিক্ষক তার নিজের কোন আনন্দদায়ক ঘটনা তাদের কাছে বললে তারা আনন্দ পেতে পারে, ফলে শিক্ষক তাদের কাছে সহজেই জনপ্রিয় হয়ে যায়। এতে করে শিক্ষককে প্রায় সব শিক্ষার্থী পছন্দ করতে শুরু করে এবং তার কথা শোনে। শিক্ষকও সহজেই শ্রেণীকক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে;
 একজন ভালো শিক্ষকের প্রফুল্লতা ও রসবোধ থাকতে হয়, তাই আমিও তেমন আচরণ করার চেষ্টা করবো;
 প্রশ্ন করার কৌশল, ধারাবাহিকতা ক্রমোচ্চ কাঠিন্যমান রক্ষা করতে হবে;
 শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা সাড়া প্রদান করবে। এর জন্য আমি প্রয়োজনে ফিডব্যাক দিবো;
 শ্রেণি উপযোগী কণ্ঠস্বর ও উচ্চারণের বিশুদ্ধতা থাকতে হবে;
 সঠিক সময়ে উপকরণ প্রদর্শন করবো;
 শিখন ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নের প্রয়োগ করবো;
 প্রয়োজনে বাড়ির কাজ প্রদান করবো;
 সময় ব্যবস্থাপনা অবশ্যই মাথায় রাখবো;
 তাদেরকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবো;
 পরিশেষে সুন্দর মুখশ্রী দিয়ে ধন্যবাদ প্রদান করে ক্লাস শেষ করবো ।।।

প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তাকল্পে অভিভাবকদের কিছু গুণাবলি থাকতে হবেঃ
• ধৈর্য বৃদ্ধি করা; বারবার চেষ্টা করা,
• নমনীয়তা সমপ্রসারিত করা, মমত্বকে এগিয়ে নেয়া,
• কোন বিষয়ের ওপর গোঁড়া সিদ্ধান্তে না থাকা,
• আন্তরিকতা বাড়ানো,
• মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা বৃদ্ধি করা,
• অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
• অবহেলা কমিয়ে দেয়া, মর্যাদা দানের ইচ্ছা বাড়ানো,
• শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া;
• এসব শিশুর সঙ্গে অবশ্যই স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে এবং এদের আবেগকে আঘাত দেয়া যাবে না।
• অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
• কাজকে খাটো করে না দেখা_ পেশার প্রতি ভক্তি বাড়ানো,
• সহানুভূতি সম্প্রসারণ_ শিক্ষক ও বন্ধু এক হয়ে যাওয়া,
• অল্পে সুখী হতে চেষ্টা করা_ শিক্ষার্থীর সামান্য উন্নতিতে সন্তুষ্ট থাকা।

যদি আপনার শিশু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়ে থাকে তাহলে আপনার সবার আগে উচিৎ এই সকল শিশুদের জন্য কাজ করছে এমন সাপোর্ট গ্রুপে যোগদান করা। সাপোর্ট গ্রুপগুলিতে প্রচুর তথ্য থাকে যা এই সকল শিশুদের বেরে উঠার জন্য অনেক উপকারে আসে। তাছাড়া এই সকল গ্রুপে যোগদানের ফলে গ্রুপের অন্যান্য বাবামায়েদের সাথে কথা বলে নানা রকম অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ পাওয়া যায়। নিম্নে এই সকল গ্রুপে কেন যোগদান করবেন তার কয়েকটি কারন তুলে ধরা হল –
• ১) স্কুল, শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা সাধারনত একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষদের নিয়ে এক একটি সাপোর্ট গ্রুপ তৈরি করা উচিৎ। এতে অনেক রকম সুবিধা ভোগ করা যায়। একি এলাকার মানুষ হলে সাধারণত ঐ এলাকার শিশুরা একই স্কুলে যাতায়াত করে। এতে বাবা মাদের শিশুদের শিক্ষা, স্কুল এবং শিক্ষকদের বিষয়ে আলোচনা করতে সুবিধা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়।
• ২) আপনি নিজে কি জানেন? গ্রুপের মানুষদের সাথে আলাপ আলোচনা করে আপনি আরও অনেক রকম তথ্য জানতে পারবেন। কোথায় ভালো ডাক্তারের দেখা মিল্বে, কোথায় ভালো ডেন্টিস্ট আছেন কিংবা কোথায় গেলে আপনার শিশুকে একটা ভালো হেয়ারকাট দিতে পারবেন - এমন হাজারো বিষয় প্রতিনিয়ত জানার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া বাবা মায়েদের সাথে আলোচনা করে জানতে পারবেন - শিশুদের নানা রকম ওষুধ এবং কোন বিশেষ ডায়েট সম্বন্ধে।
• ৩) কিভাবে অন্যরা সাহায্য পাচ্ছেন? অনেক রকম সাপোর্ট গ্রুপ সমাজে কাজ করে। কিন্তু কোন গ্রুপের পক্ষে সকল শিশু বা বাবামায়েদের জন্য কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই অন্য বাবা মায়েদের সাথে আলাপ করুন। জেনে নিন সাপোর্ট গ্রুপগুলিতে জয়েন করতে কিভাবে শুরু করতে হবে এবং কোথায় আবেদন করতে হবে।
• ৪) একতাই বল অনেক সময় আপনার শিশুর জন্য বিশেষভাবে কোন স্কুল বা প্রশিক্ষন কেন্দ্রের নিয়ম পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এই ক্ষেত্রে সাপোর্ট গ্রুপ গুলির ভুমিকা অনেক। যখন অনেক পরিবার বা একই সাপোর্ট গ্রুপের অনেক সদস্য একই সাথে কোন নিয়ম পরিবর্তনের জন্য আওয়াজ তুলবেন তখন অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে বিশেষ শিশুদের সুবিধার্থে নিয়মে পরিবর্তন করতে হবে।
• ৫) যোগাযোগ রাখুন অন্য সাপোর্ট গ্রুপগুলিতে শুধুমাত্র নিজের কমিউনিটিতে কাজ করলেই চলবে না।জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বাড়াতে অন্য গ্রুপগুলিতেও যোগাযোগ রাখুন। অন্য গ্রুপগুলি কিভাবে একসাথে কাজ করছে এবং সাফল্য লাভ করছে সে সম্বন্ধে সবসময় হালনাগাদ করুন।
• ৬) রয়েছে শিশুদের মাঝে বন্ধুত্বের সুযোগ সাপোর্ট গ্রুপে থাকলে আপনি এমন অনেক বাবা মায়েদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন যাদের শিশুরা হয়ত আপনার শিশুর মত একই চাহিদা সম্পন্ন। এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার শিশু এবং অন্য শিশুদের মাঝে বন্ধুত্ব গরে তোলার একটি সুযোগ পাবেন। একই চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মাঝে বন্ধুত্ব করানো, তাদের নিয়ে পার্কে খেলতে যাওয়া এরকম অনেক সুবিধাই আপনি আপনার শিশুকে দিতে পারবেন।
• ৭) শেয়ার করুন অনলাইন জগতে এখন অনেক বাবা মা - ই বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রুপের খোঁজ পাচ্ছেন অনলাইনে বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকে। তাই সবসময় ইন্টারনেটে এরকম ব্লগ এবং সাইটে জয়েন করুন এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা জেনে নিন। একই সাথে আপনার নিজের অভিজ্ঞতাও নিয়মিত অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।
• ৮) হবে নিজের বন্ধু আপনার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্য কাজ করতে করতে আপনি খুঁজে পাবেন আপনার মতই এমন অনেক বাবা মা। অনেক সময় যোগাযোগ রাখতে রাখতে এই সকম বাবা মা হয়ে উঠতে আপনার কাছের বন্ধু।
• ৯) ক্ষতি নেই অন্যকে জানাতে সাপোর্ট গ্রুপে থেকে যাই শিখবেন কখনোই নিজের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে অন্যকে জানাতে পিছপা হবেন না। আপনার শেয়ার করা কোন একটি কথা হয়ত অন্য একজনের অনেক উপকারে আস্তে পারে।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধী শিশু প্রতিবার কিছু দৃষ্টান্তঃ
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ছাত্র চাঁন মিয়া পা দিয়ে লিখে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। বিকলাঙ্গ দুটি হাত নিয়ে জন্ম নেয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী এই অদম্য মেধাবীর জন্ম টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গারট্র গ্রামে। তার বাবা ফজলুল হক এবং মা রত্না বেগম। প্রবাসী বাবা প্রতিনিয়ত ছেলের খোঁজখবর নেন। বাবা-মা এবং শিক্ষকের সহযোগিতা এবং তার ঐকান্তিক ইচ্ছায় সে পা দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আরেক পিইসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার সার্থী। জন্ম থেকে একটি হাত নেই, অন্য হাতটিও অকেজো। তাতে কী হয়েছে? নিজের অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ১১ বছরের এই শিশু। সেও পায়ের আঙ্গুলে কলম ধরে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। সাথী রাজশাহীর পবা উপজেলার মাঝিগ্রামের জাইদুল ইসলামের মেয়ে। সে ব্রাক স্কুলের ছাত্রী। প্রতিবন্ধী হলেও সে অনেক মেধাবী। সে শুধু লেখাপড়াতেই ভালো তা নয়। ৬ বছর বয়সে সে পা দিয়ে ছবি এঁকে রাজশাহী বিভাগের সেরা চিত্রশিল্পীর পুরস্কারও ছিনিয়ে নিয়েছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে এ বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে মো. যোবায়ের হোসেন জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা-কেন্দ্রে হুইল চেয়ারে বসে সে মুখে উত্তর বলেছে; আর পাশে বসে তা পরীক্ষার খাতায় লিখেছে ছোট বোন উম্মে আইমান মারিয়া। যোবায়েরের চার হাত-পা সরু যেন ঝুলে আছে। জন্ম থেকেই দুটি হাত না থাকায় পা দিয়ে লিখে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিম। জসিমের ৪ বছর বয়সে কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান তাকে স্কুলে ভর্তি করে নেন। দুটি হাত না থাকায় তখন থেকেই পায়ের আঙুলের মধ্যে চক ও পেন্সিল দিয়ে একটু একটু করে লেখার অভ্যাস পুরোপুরি আয়ত্ত করে ফেলে সে। বাবা-মার আগ্রহ আর শিক্ষকদের আন্তরিকতায় জসিমকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জসিমের মতো মিরাজুল ইসলামও পা দিয়ে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। জন্ম থেকে তারও দুই হাত নেই। সে চান্দাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। ২০০৮ সালে মিরাজুল যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তখন থেকেই তার পড়ার প্রতি ভীষণ আগ্রহের কথা জানান প্রধান শিক্ষক আসলাম হোসেন। আরেক শিক্ষার্থী রংপুরের জুবায়ের; জন্ম থেকে দু’হাত বিকলাঙ্গ নিয়ে শুধু মনের জোরে সেও পরীক্ষা দিয়েছে। সে একটি কক্ষে বিছানায় শুয়ে মুখে কলম নিয়ে মাথা উঁচু করে খাতায় লিখেছে। সে বালারহাট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।

উপসংহারঃ
শিশু হচ্ছে ছোট্ট ফুলগাছ, আর শিক্ষক হলো ফুল-বাগানের মালি। ভালোবাসা দিয়ে, স্নেহ দিয়ে, যত্ন দিয়ে ছোট্ট ফুল গাছে ফুল ফোটাতে পারলেই শিক্ষক জীবন ধন্য। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সমাজ থেকে আড়াল করে, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে সমাজ তথা দেশের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব নয়। শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবকের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সদিচ্ছাই পারে সাথী, যোবায়ের, জসিম, মিরাজুলের মতো শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব সমাজ ও দেশ সৃষ্টি করতে_ যেখানে তাদের জন্য কল্যাণ নয়, অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে, সহমর্মিতা নয় সহযোগিতা করা হবে। আমরা ধন্যবাদ জানাই সাথী, চান মিয়া, জসিম, মিরাজুল ও জুবায়েরের শিক্ষক ও অভিভাবকদের। এ বছর পিইসি ও জেডিসি পরীক্ষা দিয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিশুরা প্রমাণ করে দিল অদম্য ইচ্ছাশক্তিই পারে সব প্রতিবন্ধিতাকে পরাভূত করতে। তারাও এটাও দেখিয়ে দিল সুযোগ পেলে আর দশটি সুস্থ শিশুর মতো তারাও সমাজের সার্বিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে সফলতার পরিচয় দিতে সক্ষম_ তারা সংসারে বোঝা নয়। আমরা চাই তারা মানুষের মতো মানুষ হোক। তাদের জীবন সাফল্যের আলোয় আলোকিত হোক।

সমাপ্ত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.