নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপার কৌটা

জহিরুল হক শাওন

জহিরুল হক শাওন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রেণি বাবস্থাপনা / Classroom Management

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫০


শিক্ষাদান কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষ এবং সেখানকার অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। শিখনকে প্রয়োগমুখী করে গড়ে তোলার জন্য শ্রেণি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণ অর্থে শ্রেণি ব্যবস্থাপনা বলতে বুঝায়, শিক্ষাক্রমের আলোকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া এবং উপযুক্ত পদ্ধতি ও কৌশলের মাধ্যমে পাঠদানকে ফলপ্রসূ করা এবং কার্যকরি পাঠ পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ। সুষ্ঠু শ্রেণি শৃঙ্খলা এবং শ্রেণি ব্যবস্থাপনা ব্যতীত উত্তম পাঠদান তথা আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি প্রবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই পাঠদান পদ্ধতিকে শিক্ষার্থীর হৃদয়গ্রাহী, তথ্যনির্ভর এবং আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষককে শ্রেণি ব্যবস্থাপনার ওপর জোড় দিতে হবে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি হবে সম্পূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। শিক্ষকগণ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টোরের মাধ্যমে শিক্ষাদান করবেন ইহাই কাম্য।
একটি মদেল টপিক ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ বিষয়টি পাঠদানের ক্ষেত্রে আমার কৌশলসমূহ ও পাঠ পরিকল্পনা কেমন হবে তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
পাঠদানের জন্য আমার শ্রেণিতে ৮০ জন শিক্ষার্থী আছে। আমি জানি যে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক কষ্টকর। সাধারণত চল্লিশ জনের অধিক শিক্ষার্থী হলেই তাকে একটি বৃহৎ শ্রেণি বলা যায়। পৃথিবীর বহু দেশের অনেক শ্রেণিকক্ষেই এর চেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ কথা সত্য অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা যে কোনো শিক্ষকের জন্য কঠিন। ফলে শিক্ষক তাঁদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সফল হতে পারছেন না। এটি আমাদের অনেক শিক্ষকের জন্যই চ্যালেঞ্জ। অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কিছু কৌশল অনুসরণ শিক্ষককে এ চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন সক্ষম করে তুলতে পারে । এক্ষেত্রে সফলতার সাথে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমি আমার প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও ব্যবহার করতে পারি।
নিচে আমার সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত কৌশলসমূহ তুলে ধরা হলোঃ-
 ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ এই বিষয় পাঠদানের জন্য শুরুতেই আমি আমার পাঠদানের বিষয়টির উপর নির্দিষ্ট লেকচার প্লান ও পাঠ পরিকল্পনা সুন্দর করে সাজাবো যাতে সহজেই শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি, এবং শিক্ষার্থীরাও ভালোভাবে সহজে বুঝতে পারে;
 এরপর আমি এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত উপাদান ও উপাত্ত সংগ্রহ করবো এবং শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের দেখানোর জন্য এগুলো নিয়ে যাবো। কারণ শিক্ষার্থীরা যে বিষয় পড়বে তা ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে দেখলে শেখার জন্য আগ্রহ দেখাবে;
 বিষয় বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও প্রেষণা সৃষ্টি করবো;
 ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ এই বিষয়ের উপর শ্রেণীকক্ষে গিয়েই শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করবো। এতে করে শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং তারা অনেক মনোযোগ দিবে বিশেষ করে অধিক শিক্ষার্থীর এই ৮০ জনের শ্রেণীকক্ষে;
 প্রয়োজনে পাঠদানের পূর্বে ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ বিষয়ের উপর আমি প্রথমে কিছুই না বলে আমার শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইবো, এরজন্য প্রশ্ন করবো এবং লিখতে দিবো। যেমন; ‘‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ বলতে তোমরা কেউ কিছু জানো কি না ? কাদের কে ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ বলা হয় ? কয়েকটা জাতিসত্তার নাম বলতে বা লিখে দিতে পার কি না ? তারা বাংলাদেশের কোথায় কোথায় থাকে ?” ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তর জানতে চাইব, তারা যদি না পারে তবে তারা এতে জানার জন্য অনেক আগ্রহ দেখাবে। এবং আমি পরে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও সহ তাদের কে দেখাব, তখন যদি তারা খাতায় যা লিখেছে তার সাথে মিলে যায় তবে তারা পুরস্কার পাওয়ার মতো আনন্দ পাবে এবং আরও শেখার জন্য কৌতূহল প্রকাশ করবে। আমি আশা করি এতে করে এই ৮০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ন্ত্রণ করে সহজেই শেখাতে পারবো;

 অনেকেই মনে করেন অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী সম্বলিত শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর শিখন কঠিন। আমার মতে কয়েক বার তারা যদি একই বিষয় অনুশীলন করে তবে অনুশীলনের পর শিক্ষার্থীরা বুঝে ফেলবে তাদের পাঠের বিষয়টি। এভাবে আমিও অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী সম্বলিত শ্রেণিকক্ষকে শান্ত রাখতে পারবো। সময়ও নষ্ট হবেনা ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠদান করানো সম্ভব হবে;
 কেউ কেউ মনে করেন অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী সম্বলিত শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পক্ষে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি মনোযোগ দেওয়া কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি যদি আমরা জোড়ায় বা দলগত কাজের মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করি তা হলে অবশ্যই এটি অর্জন সম্ভব হবে, এক্ষেত্রে কিছু ভালো শিক্ষার্থীর সাথে কিছু অমনোযোগী বা অল্প বুঝে এমন শিক্ষার্থী নিয়ে দলগত কাজ দিতে পারি;
 জোড়ায় জোড়ায় কাজ বা দলগত কাজে বেশি সময় নষ্ট হয়, শোরগোল বেশি হয় বলে কারো কারো ধারণা। একথা সত্য অধিক কথা বার্তা সব সময় খারাপ না যদি তা লেখাপড়া সংক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষক জোড়ায় কাজ বা দলগত কাজ বেছে নিতে পারেন। এধরনের কৌশল ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সহায়তায় শেখার সুযোগ পায় এবং একই সময়ের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন সম্ভব হয়। একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসা শিক্ষার্থীদের জোড়ায় কাজ দিলে এক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায় এটাও প্রমাণিত;

 শ্রেণিতে শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর নাম জানলে এবং নাম ধরে ডেকে ডেকে দায়িত্ব দিলে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হাত-বানানো একটি সাধারণ নামের কার্ড সমাধান দিতে পারে। তাই অল্পকয়েক দিনের চেষ্টায় আমিও প্রায় সকল শিক্ষার্থীর নাম মনে রাখতে পারবো;
 দলীয় কাজের সময় আমার প্রধান কাজ হলো ঘুরেঘুরে দলের কাজ দেখা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। বাড়ির কাজ ভাগ করে মূল্যায়ন করলে যথাযথভাবে করা সম্ভব;
 যথাযথ শিখন-কৌশলের ব্যবহার করবো,
 শিক্ষার্থীর মনোযোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির জন্য কলা-কৌশল আয়ত্ত করবো, যেমন কোন শিক্ষার্থী অনেক দুষ্টুমি করলে তাকে পুরস্কার দেবার মাধ্যমে বা তার পাশের কোন ভালো শিক্ষার্থীর প্রশংসা করার মাধ্যমে দুষ্টু শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব;
 শ্রেণীকক্ষে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা অটিজমে আক্রান্ত শিক্ষার্থী থাকলে তাদের সামনে বসাবো এবং তাদের কোন কাজ করতে দেয়ার মাধ্যমে তাদের প্রশংসা করে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবো;
 বেশি শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তা হলো কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করার সময় শিক্ষক হিসেবে আমি যেভাবে বুঝি সেভাবে ব্যাখ্যা না করে শিক্ষার্থীর বয়স এবং শ্রেণি বিবেচনা করে ব্যাখ্যা করবো। কারণ তাদের বয়সের জন্য তারা অনেক কিছু বুঝতে পারেনা। এবং তারা না বুঝতে পারলে পড়া-লেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই আমি তাদের বয়স অনুযায়ী এবং তাদের চেনা বিষয়ের সাথে মিলিই সব বিষয়গুলো পড়াবো। বিষয়বস্তু অবশ্যই সংক্ষিপ্ত এবং সহজ ভাষায় উপস্থাপন করবো;
 উদাহরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একান্ত জানা পরিবেশ থেকে তুলে আনতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে;
 কোন বিষয় বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বে উপকরণ দেওয়া যাবে না। এতে শিক্ষার্থীরা নির্দেশনা না শুনে উপকরণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। এরজন্য আগে বিষয়টি ভালোভাবে উপকরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিবে এবং পরে তার ব্যবহার শিখিয়ে দিবো;
 কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা খুব একটা সহজ নয়। তাই দীর্ঘ নির্দেশনা না দিয়ে ছোট ছোট নির্দেশনা অনেক বেশি কার্যকর হবে বলে আমি মনে করি। তাই দ্রুত নির্দেশনা না দিয়ে ধীরে ধীরে নির্দেশনা দিলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সুবিধা হয়। সে দিকে অবশ্যই আমি খেয়াল রাখবো;
 শিক্ষার্থীদের কাজ দেওয়ার আগে কোন বিষয় প্রদর্শনের মাধ্যমে কাজটি কীভাবে করতে হবে তা বুঝিয়ে দিলে ভাল হবে। কারণ কোন বিষয় ব্যাখ্যা করার চেয়ে প্রদর্শন করলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সহজ হয়;
 বিষয়বস্তু আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা কতটা বুঝতে পেরেছে তা যাচাইয়ের জন্য প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা সঠিক উত্তর দিতে পারলে আমি মনে করবো আমার বিষয়বস্তু আলোচনা ভাল হয়েছে। আর যদি মনে হয় আমি যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে শিক্ষার্থীরা উত্তর দিতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে আমি পুনরায় বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করবো;
 শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কুশলাদি সম্বন্ধে অবগত হবো। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে কোন শিক্ষার্থীর মন খারাপ থাকলে বা অন্য কোন কারণে মনোযোগ দিতে না পারলে তাদের কাছে জানতে চাইলে কিংবা তাদের সাথে কথা বললে তারা ভালো অনুভব করে। এছাড়াও শিক্ষক তার নিজের কোন আনন্দদায়ক ঘটনা তাদের কাছে বললে তারা আনন্দ পেতে পারে, ফলে শিক্ষক তাদের কাছে সহজেই জনপ্রিয় হয়ে যায়। এতে করে শিক্ষককে প্রায় সব শিক্ষার্থী পছন্দ করতে শুরু করে এবং তার কথা শোনে। শিক্ষকও সহজেই শ্রেণীকক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে;

 একজন ভালো শিক্ষকের প্রফুল্লতা ও রসবোধ থাকতে হয়, তাই আমিও তেমন আচরণ করার চেষ্টা করবো;
 প্রশ্ন সম্বন্ধে কোন সংশয়ের মধ্যে না রেখে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করবো;
 পাঠে একঘেয়েমি পরিহার করে পাঠদানে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করবো;
 পাঠের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে;
 প্রশ্ন করার কৌশল, ধারাবাহিকতা ক্রমোচ্চ কাঠিন্যমান রক্ষা করতে হবে;
 শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা সাড়া প্রদান করবে। এর জন্য আমি প্রয়োজনে ফিডব্যাক দিবো;
 শ্রেণি উপযোগী কণ্ঠস্বর ও উচ্চারণের বিশুদ্ধতা থাকতে হবে;
 সঠিক সময়ে উপকরণ প্রদর্শন করবো;
 শিখন ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নের প্রয়োগ করবো;
 প্রয়োজনে বাড়ির কাজ প্রদান করবো;
 সময় ব্যবস্থাপনা অবশ্যই মাথায় রাখবো;
 তাদেরকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবো;
 পরিশেষে সুন্দর মুখশ্রী দিয়ে ধন্যবাদ প্রদান করে ক্লাস শেষ করবো ।।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.