![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভূমিকাঃ
বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আদেশে ১ম বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়। বাংলা বিভক্ত করে ফেলার ধারণাটি অবশ্য লর্ড কার্জন থেকে শুরু হয়নি। ১৭৬৫ সালের পর থেকেই বিহার ও উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারি প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে।
বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত এখান থেকেই। বঙ্গভঙ্গ অবিভক্ত বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পূর্ব বাংলায় সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের উদ্দেশ্যে লর্ড কার্জন এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ ঘটনা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। বঙ্গভঙ্গ পূর্বে 'বাংলা প্রেসিডেন্সী' নামে যে বৃহৎ আয়তনবিশিষ্ট বঙ্গ প্রদেশ ছিল তার পূর্বাঞ্চলের ৩টি বিভাগ ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম ছিল পশ্চিমাঞ্চলের পশ্চাদভূমি। পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ বহুদিন ধরে এর বিভক্তি কামনা করে আসছিল।
লর্ড কার্জনের নিকট নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ভারতের মুসলিম নেতাদের নিয়ে এর বিভক্তি দাবি করেন। ইংরেজ সরকার কয়েকটি কারণের ওপর ভিত্তি করে ১৯০৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামের সাথে আসামকে যুক্ত করে 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করে ঢাকাকে এর রাজধানী ঘোষণা করে। কিন্তু ১৯১১ সালে, প্রচণ্ড গণআন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বঙ্গভঙ্গ রহিত হয়। দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯৪৭ সালে। এর ফলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়। এই পূর্ববঙ্গই পরবর্তীকালে পাকিস্তানের কাছ থেকে এক রক্তক্ষয়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ও বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে।
বঙ্গভঙ্গর প্রেক্ষাপটঃ
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলেও এর ইতিহাস আরেকটু আগের। ১৮৭৪ সালে আসামকে বাংলার থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক প্রদেশ গড়ে তোলা হয়। তখনই কাছাড়-গোয়ালপাড়া-শ্রীহট্ট বাংলা ভাষাভাষী এই তিন জেলাকেও আসামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়। এর আগে আসাম ‘বঙ্গ’ বা ‘বাঙলা’ প্রেসিডেন্সির অংশ ছিলো।
১৮৭৪ এর পরে ‘বঙ্গ’ প্রেসিডেন্সির অংশ ছিলো বাঙলা, বিহার, উড়িষ্যা ও ছোটনাগপুর। আয়তন ১,৯০,০০০ বর্গমাইল ও লোকসংখ্যা ৭ কোটি ৮ লক্ষ ৫০ হাজার। ১৮৯১ সালে কয়েকজন উচ্চপদস্থ আমলা এই প্রস্তাব করলেন যে, লুশাই পাহাড়-অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম বিভাগ আসামের সঙ্গে মিশে যাওয়া উচিত। ১৮৯২ তে এই সংযোগ সরকার বাহাদুর মেনে নিলেন; কিন্তু তৎকালীন চিফ কমিশনার স্যার উইলিয়াম ওয়ার্ড ১৮৯৬ সালে ঢাকা বিভাগকেও আসামের অংশ করতে চাইলেন, চাইলেন ময়মনসিংহকেও। আর্থিক, বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক সুবিধার ধুয়া তুলে এই সংযোগের প্রস্তাব করা হলেও তাঁর দুরভিসন্ধি মানুষ ধরতে পারে এবং প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবল গণবিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়, ফলে ওয়ার্ড সাহেব পিছু হটতে বাধ্য হন।
১৯০৩ সালে বাংলার ছোটলাট অ্যানড্রু ফ্রেজার বাংলাভাগের নতুন একটা খসড়া প্রস্তাব আনেন। তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রসচিব রিজলি’র মাধ্যমে পেশকৃত প্রস্তাবটিতে (রিজলির পরিকল্পনা বা পত্র নামে খ্যাত) চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাকে আসামের সাথে যুক্ত হওয়ার কথাই বলা হয়। এটিও দিনের আলোয় আসার সাথে সাথেই চারদিকে প্রবল আলোড়ন শুরু হয়ে যায় এবং সরকার বাধ্য হয় পিছিয়ে যেতে। এবারে পরিকল্পনাটিকে ঢেলে সাজানো হয়।
নতুন পরিকল্পনায় স্থির হয়-ঢাকা বিভাগ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং পার্বত্য ত্রিপুরা, মালদহ জেলা ও দার্জিলিং, অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গকে আসামের সাথে যুক্ত করে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে একটি প্রদেশ গড়ে তোলা হবে, এই প্রদেশের রাজধানী হবে ঢাকা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বয়ং লর্ড কার্জন মাঠে নামেন- ঢাকায় এসে মুসলমানদের বুঝানো আরম্ভ করেন- এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মুসলমানদের জন্য কত ভালো হবে। অনেক প্রতিবাদের মুখেও অবশেষে ১৯০৫ সালে সেপ্টেম্বরে বাঙলা ভাগ কার্যকর করা হয়।
বঙ্গভঙ্গের কারণঃ
বিরাট এলাকা ও বিপুল জনসংখ্যার বাংলাকে দুটি প্রদেশে সংগঠিত করার পেছনে নিচের কারণগুলো বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য :
১। প্রশাসনিক কারণ : প্রশাসনিক সুবিধা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা বঙ্গভঙ্গের মূল ও প্রাথমিক কারণ। ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বাংলা প্রদেশকে ভাগ করে দুটি আলাদা প্রদেশ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৮৫৪ সালে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, ছোট নাগপুর ও আসাম নিয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি।
একজন গভর্নরের পক্ষে এত বড় প্রদেশ শাসন করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার ছিল। তাই লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে উত্তর ও পূর্ব বাংলাকে আসামের সাথে যুক্ত করে 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামে এক নতুন প্রদেশ গঠন করেন। নতুন প্রদেশের রাজধানী হলো ঢাকা। নতুন প্রদেশের প্রথম ছোট লাট হলেন ব্যামফিল্ড ফুলার। অপরপ পশ্চিমক্ষে বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে 'পশ্চিম বঙ্গ' প্রদেশ গঠিত হয়।
২। রাজনৈতিক কারণ : পাশ্চাত্যে শিক্ষার প্রসারের ফলে জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। এসব আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা। ঢাকাকে রাজধানী করে সরকার আন্দোলনকে স্থিমিত করতে সচেষ্ট হয়। এছাড়া ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের পেছনে নিম্নোক্ত তিনটি উদ্দেশ্য নিহিত ছিল।
• জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করা : ১৮৮৫ সালে 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস' নামক একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে 'বাংলা প্রেসিডেন্সিতে' জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা শহর। সুচতুর ইংরেজ সরকার এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং আন্দোলনকারীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য বঙ্গভঙ্গ করতে উদ্যোগী হয়। ব্রিটিশ সরকার 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতি অবলম্বন করে।
• মুসলমানদের দাবি : স্যার সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হলে পূর্ববাংলার মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের সুযোগ পাবে। হিন্দু সম্প্রদায় প্রভাবিত কলকাতার উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিভর্রশীলতা হ্রাস পাবে। মুসলমান জনগণ চাকরি ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করতে পারবে।
• আধা-সামন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠা : পূর্ব বাংলায় আধা-সামন্ততান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা প্রয়াসী একটি এলিট শ্রেণি গড়ে ওঠে; তারা বঙ্গভঙ্গের প্রতি সমর্থন জানায়।
৩। অর্থনৈতিক কারণ : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পূর্বে শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রায় সব কিছুই কলকাতার কেন্দ্রিভূত ছিল। ফলে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছিল। অধিকাংশ মুসলমান জনগণ তখন ভাবতে শুরু করে যে, বঙ্গভঙ্গ হলে তারা অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জনের সুযোগ পাবে। এ জন্য পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগণ বঙ্গভঙ্গের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।
৪। সামাজিক কারণ : ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমান সম্প্রদায় নির্মমভাবে শোষিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের প্রতি উদারনীতি এবং মুসলমানদের প্রতি বৈরী নীতি অনুসরণ করতে থাকে। মুসলমানরা সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন একটি দরিদ্র সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। সুতরাং লর্ড কার্জন কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের চিন্তা-ভাবনা শুরু হলে পূর্ববাংলার মুসলমান সম্প্রদায় স্বভাবতই এর প্রতি সমর্থন জানায়। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের মুসলমানগণ তাদের হারানো প্রভাব-প্রতিপত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে থাকে।
০৫। সরকারি চাকরিতে সমস্যা: সে সময়ের হিন্দুরাই সবচেয়ে বেশি সরকারি চাকরির সুবিধা পেত। এক্ষেত্রে মুসলিমরা ছিল পিছিয়ে। মুসলিমরা যাতে সমানভাবে সরকারি চাকরি করতে পারে এ জন্য বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। ঢাকার নওয়াব সলিমুল্লাহ সহ প্রায় সব মুসলিম নেতাগণ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল।
০৬। পাটের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্য: পূর্ব বাংলায় পাট উৎপাদন হতো বেশি কিন্তু পাটকল ছিল না। পাটকল ছিল কলকাতায় ও হুগলিতে। এ জন্য পূর্ববাংলার জনগণ পাটের উপযোক্ত মূল্য পেত না। এ জন্য পূর্ব বাংলার জনগন বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ছিল। আর পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতেই বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছিল।
০৭। ধর্মীয় কারণ : অবিভক্ত বাংলার পূর্ব অংশে মুসলমানগণ ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পশ্চিম অংশে হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে এ দৃষ্টিকোণ থেকেও দুই সম্প্রদায়ের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
০৮। কংগ্রেসকে দুর্বল করা: ১৮৮৫ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতীয় জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। শুরু থেকেই ব্রিটিশ বিরোধীভাবাপন্ন হলেও বঙ্গভঙ্গ যখন প্রস্তাব হয় কংগ্রেস তখন থেকেই এর বিরোধিতা করেন। কার্জন বিশ্বাস করতো কলকাতায় কিছু ষড়যন্ত্রকারী আমার বক্তব্য কংগ্রেসে চালাতো। কাজেই কলকাতার গুরুত্ব হ্রাস করে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করলে ষড়যন্ত্রকারীরা সে সুযোগ আর পাবে না। তারা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে।
বঙ্গভঙ্গের ফলাফলঃ
বঙ্গভঙ্গের ফলাফল সাময়িক হলেও বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় বেশী লাভবান হয়েছিল।
১) মুসলমান সমাজের প্রতিক্রিয়া : বঙ্গভঙ্গের ফলে নতুন প্রদেশ তথা পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী হয় ঢাকা। রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ফলে মুসলমানগণ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা লাভ সম্ভব হয়। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় সুরম্য অট্টালিকা গড়ে ওঠায় ঢাকার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। বঙ্গভঙ্গকে মুসলমানগণ তাদের হৃত গৌরব ও মর্যাদা ফিরে পাবার আনন্দে মেতে ওঠে।
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ পরিকল্পনাটি কার্যকর করার দিন ঢাকার এক জনসভায় বলেন, "বঙ্গভঙ্গ আমাদেরকে নিষ্ক্রিয়তার হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। এটা আমাদের উদ্দীপ্ত করেছে কর্ম সাধনায় এবং সংগ্রামে।" অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হয়।
২) হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া : বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অবস্থান ছিল খুবই কঠিন। বাংলার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দুরাই এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঝড় তুলেছিল। তারা প্রচার করেন যে, বঙ্গভঙ্গ 'বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের সমতুল্য।' জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনায় বিকশিত হিন্দু জনসমাজ মনে করেন যে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছে। হিন্দু লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাগণ বঙ্গভঙ্গকে বাঙালি জাতির বিকাশমান ধারাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করেন। ব্রিটিশ সরকারের এই বিভেদ ও শাসন নীতির বিরুদ্ধে তারা প্রচণ্ড গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফলে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের জন্য স্বদেশী আন্দোলন ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩) ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ : হিন্দুদের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও নেতৃবৃন্দ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এভাবে হিন্দু -মুসলিম সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি হয়।
৪) সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ করে বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ভারতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা বিস্তৃত হয়।
৫) ব্রিটিশদের 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতির বিজয় : বঙ্গভঙ্গের রাজনৈতিক প্রভাবে ব্রিটিশ শাসকদের অনুসৃত 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতি জয়যুক্ত হয়। ফলে হিন্দু ও মুসলমান জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ভারতের বৃহত্তম দুটি সম্প্রদায় এর ফলে চিন্তা-চেতনার দিক থেকে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
৬) ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ : বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে কলকাতা কেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার সুযোগ লাভ করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে সকল পেশাগত শ্রেণী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার কারণ ও প্রভাবঃ
১৯০৫ সালেরে ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিনে কলিকাতার কালিঘাটের বিখ্যাত কালিমন্দিরে হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ করার কারণে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নেন। কলিকাতায় এবং ঢাকায় হিন্দুরা স্বদেশী আন্দোলনের নামে বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য আন্দোলন শুরু করে ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ আরম্ভ করে। হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের ফলে অগ্রমূর্তি ধারণ করে।
হিন্দু মহল এটাকে প্রথমত জাতীয় ঐক্যের প্রতি আঘাত বলে। নানাভাবে এর ব্যাখ্যা দিতে থাকে। যেমন ‘মুসলমানদের পক্ষে সরকারের পক্ষপাতিত্ব মুসলমানদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা’, ‘মা বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করা’, ‘ব্রিটিশ সরকার ও দেশদ্রোহী মুসলমানদের মধ্যে অশুভ আঁতাত’ প্রভৃতি। বঙ্গভঙ্গ রদ করতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য যতো পন্থা অবলম্বন করা হয় তার মধ্যে একটি সন্ত্রাসী আন্দোলন। মনে হয় সারা বিশ্বের সন্ত্রাসী আন্দোলন সর্বপ্রথম বাংলায় শুরু হয় এবং তা এ বঙ্গভঙ্গের পর। অরবন্দিু ঘোষ সন্ত্রাসী তৎপরতার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বরোদা রাজ্যের চাকরি ছেড়ে বাংলায় আসেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদী উম্মাদনার সঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরোপুরি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী দু’টি সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন এবং ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ বাস্তবায়নের দিনকে তিনি ‘রাখিবন্ধন’ দিবস ঘোষণা করেন।
‘রাখিবন্ধন’-এর দিন সকালে গঙ্গা স্থানের মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেন। হিন্দুরা বঙ্গ বিভাগের প্রথম বার্ষিকী ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালন করে। কংগ্রেস এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী অন্যান্য সংগঠন বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য একাট্টা হয়ে উঠে। জন্ম নেয় গুপ্ত ও সন্ত্রাসবাদী অনেক সংগঠন। এসব সংগঠনের প্রতিজ্ঞাপত্রে অন্যতম শর্ত ছিল ‘ধর্মরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। সেই ‘ধর্মরাজ্য’ যে হিন্দু ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি, অনুশীলন সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের উদ্দেশ্যেই ছিল মুসলমানদের উত্থানকে ঠেকিয়ে রেখে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া।
গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি, অনুশীলন সমিতির প্রধান ছিলেন ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র। তার সহযোগী ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, ঠাকুর পরিবারের সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঢাকা শহরেও গুপ্ত সমিতির শাখা সত্যাগ্রহ, ধর্মঘট, পিকেটিং, অনশন প্রভৃতি কৌশল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঢাকা অনুশীলন সমিতির সেক্রেটারী ছিলেন পলিন দাস। ঢাকায় বিপ্লবীদের দীক্ষা দেয়া হত সিদ্বেশ্বরী কালী মন্দিরে।
বৃটিশকে বঙ্গভঙ্গ রদে বাধ্য করার জন্য ‘বৃটিশ পণ্য বর্জন’ করার সিদ্ধান্তের অন্তরালে গড়ে তোলা হয় ‘স্বদেশী আন্দোলন’ এই ‘স্বদেশী আন্দোলন’ই শিক্ষাদেয় রাজনৈতিক হত্যাকান্ড, সন্ত্রাসবাদ, অসহযোগ, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেদিন সেই জোয়ারে ‘জয় মা বলে ভাসা তরী’ গান গেয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন। কিন্তু এই আন্দোলন যে হিংসশ্রয়ী ও মুসলমানদের উত্থানের পরিপন্থী, তা অনেকেই হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। বিপিন চন্দ্র পাল, অশ্বিনী কুমার দত্ত, লবিন্দ ঘোষসহ সবাই ছিলেন এই আন্দোলনের দিকপাল।
১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় বড়লাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করেন। এই প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন নওয়াব মুহসিনুল মুলক, নওয়াব আলী চৌধুরী, এ কে ফজলুল হক। তারা বড় লাটের কাছে মুসলমানদের পক্ষ থেকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট দাবী পেশ করেন। দাবীগুলোর অন্যতম ছিল মুসলমানদের জন্য পৃথক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা। বড়লাট প্রতিনিধিদলের দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন।
এই আশ্বাসই কার্যকর হয়েছিলো ১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো সংস্কার কর্মসূচী নামে খ্যাত সরকারি ঘোষণায়। এই ঘোষণায় মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার দেয়া হয়। কিন্তু কংগ্রেস এই সংস্কার কর্মসূচির বিরোধিতা করে। এমনকি সেদিনের কংগ্রেসী নেতা ‘হিন্দু-মুসলিম মিলন দূতে’র খ্যাতিলাভকারী কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পর্যন্ত এই সংস্কারের বিরোধিতা করেছিলেন। স্যার সলিমুল্লাহ ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন আহবান করেন। আট হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুহসিনুল মূলক ও মাওলানা মুহাম্মদ আলী।
সর্বসম্মতিক্রমে এ সম্মেলনেই সারা ভারতের মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাঙ্গালী হিন্দু সন্ত্রাস ও খুন-খারাবী মাধ্যমে তাদের বিভাগবিরোধী আন্দোলন জোরালো করতে থাকে।
৩০ মে ১৯০৮ কলিকাতার বহুল প্রচারিত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা হিন্দুদের প্রতি এক উদাত্ত আহবান জানিয়ে বঙ্গমাতার খণ্ডনকারীদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে জনতাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। বলা হয়, ‘মা জননী পিপাসার্ত হয়ে নিজ সন্তানদেরকে জিজ্ঞেস করছে একমাত্র কোন বস্তু তার পিপাসা নিবারণ করতে পারে। মানুষের রক্ত এবং হিন্দু মস্তক ব্যতীত অন্য কিছুই শান্ত করতে পারে না। অতএব, জননীর সন্তানদের উচিত মায়ের পূজা করা এবং তার ইপ্সিত বস্তু দিয়ে সন্তুষ্টি বিধান করা....যেদিন গ্রামে গ্রামে এমনিভাবে মায়ের পূজা করা হবে সেদিনই ভারতবাসী স্বর্গীয় শক্তি ও আশীর্বাদে অভিষিক্ত হবে।’ এ আহবানে শুরু হয় হিংসাত্মক কার্যকলাপ ও রক্তের হোলিখেলা।
এ সন্ত্রাসী আন্দোলন বাঙালী হিন্দুদের জন্য সীমিত না রেখে সর্বভারতীয় করায় প্রেরনা সৃষ্টি করা হয়। এসবের পেছনে মুসলিম বিদ্বেষী মানসিকতা বিরাজ করছিল। মুসলমানকে তারা তাদের চিরশত্র“ মনে করে। বঙ্গভঙ্গের পর নতুন প্রদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে এবং তারা কিছুটা সুযোগ সুবিধা লাভ করবে এ তারা কিছুতেই মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলনা। কলিকাতা ও ঢাকাকে কেন্দ্র করে তথাকথিত বিপ্লব আন্দোলন গড়ে উঠে। কলিকাতার বিপ্লববাদীরা যুগান্তর এবং ঢাকার বিপ্লবাদীরা অনুশীলন নামে তাদের সমিতি গঠন করে।
এরা বোমা তৈরী ও অগ্নেয়াস্ত্র আমদানীর ব্যবস্থা করে। মুসলিম স্বার্থবিরোধী এ আন্দোলনে ভাগ্যক্রমে মুসলমানদের জন্য বিরাট কল্যাণ বয়ে আনে। তারা মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার্থে শক্তিশালী কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন। কংগ্রেস ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বঙ্গভঙ্গকে পরিবর্তন ও পুনর্বিন্যাস করার প্রস্তাব দেয়। ১৯০৭ বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন সন্ত্রাসবাদী জঙ্গী রূপ নেয়। বড়লাট ফ্রেজারের গাড়ীতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ১৯০৮ মোজাফফরপুরে খুদিরাম কিংস ফোর্ডের গাড়ীতে বোমা নিক্ষেপ করে। লক্ষ্য ব্যর্থ হয়ে দু’জন মহিলা নিহত। খুদিরাম ধরা পড়ে ও নিরপরাধ মহিলা হত্যার অপরাধে ফাঁসি হয়।
১৪ এপ্রিল ১৯০৯ সন্ত্রাসবাদী অরবিন্দ ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তের ফাঁসির রায় হয়। ১৯০৯ মর্লে-মিন্টো সংস্কারে মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন ও স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বের সুযোগ লাভ করে। এভাবে কয়েক বছর অতিবাহিত হয়। অবশেষে ১৯১১ হিন্দুদের প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে লর্ড হার্ডিঞ্জ ভারত সচিব লর্ড ক্রুড কাছে বঙ্গ বিভাগ সম্পর্কে নতুন সুপারিশ পাঠান। রাজা পঞ্চম জর্জ ডিসেম্বরে প্রথমার্ধে ভারত আগমন করেন। ১২ ডিসেম্বর দিল্লী দরবারে সম্রাট পঞ্চম জজ বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন। একই সাথে কলিকাতার রাজধানীর মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয় এবং দিল্লীতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। ঢাকাও হারায় তার রাজধানীর মর্যাদা।
পূর্ববঙ্গবাসীকে আবার কলিকাতার অধীন করা হয়। বঙ্গভঙ্গ রদের এ অনুষ্ঠানে ইংরেজদের তোষণ করে ভারত ভাগ্য বিধাতা বলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান গাওয়া হয়। বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও হিন্দু নেতৃত্ব পৃথক নির্বাচন এবং মুসলমানদের স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বের বিরোধিতা চালিয়ে যেতে লাগলেন।
উপসংহারঃ
বঙ্গভঙ্গ অবিভক্ত বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পূর্ব বাংলায় সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের উদ্দেশ্যে লর্ড কার্জন এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ ঘটনা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। বঙ্গভঙ্গ যে লক্ষ্যে করা হয় তার পুরোপুরি বাস্তবায়তি হয় নি বা হতে দেইনি তৎকালীন হিন্দু শ্রেণি বা হিন্দু নেত্রীবর্গ। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শুরুতে এর বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ, বাংলা পত্রপত্রিকা, ভারত ও ইংল্যান্ডের ইংরেজি পত্রিকাগুলো প্রতিবাদ করে।
৯ নভেম্বর, ভারতের উদ্দেশে পঞ্চম জর্জ রানি মেরি-সহ ইংলন্ড থেকে রওনা হন এবং ৭ ডিসেম্বর রাজকীয় শোভাযাত্রা সহকারে তিনি দিল্লির দরবারে পৌঁছান। তার ঘোষণার দ্বারাই ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গের আইনটি বাতিল হয়ে যায়। মূলত হিন্দু বাঙালিরা এই আইন বাতিলের কারণে আনন্দিত হন। তাঁরা কলকাতায় ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি, পঞ্চম জর্জকে বিপুল সংবর্ধনা দেন। ১৯১২ সালের ২৫ জুন ভারত শাসন আইন পাশ হয়। মাদ্রাজের সে-সময়কার জনপ্রিয় গভর্নর লর্ড মাইকেল বাংলার গভর্নর হিসেবে ১৯১২ সালের ১ এপ্রিল যোগদান করেন।
©somewhere in net ltd.