নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপার কৌটা

জহিরুল হক শাওন

জহিরুল হক শাওন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৯


পরিচিতিঃ
দিনটি ছিল শুক্রবার। যেদিন আমি পৃথিবীতে আসি। আমার পরিবারের সবাই ভারী খুশি হয়েছিলো কেনোনা আমি ছেলে হিসেবে তাদের কাছে এসেছিলাম। আমার জন্ম পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া গ্রামে ১৯৯৬ সালের ১৯ শে জুলাই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। আমার বড় একজন বোন আছে। আমার বাব-মায়ের প্রথম সন্তান হিসেবে যখন আমার বোন জন্ম গ্রহণ করে তখন তারা তেমন খুশি হয়নি। তারা চেয়েছিল একটা ছেলে হবে।
যাই হোক, আমার বাবা আব্দুল লতিফ চৌধুরী একজন মাঝারি ব্যবসায়ী এবং আমার মা নাসিমা বেগম একজন গৃহিণী আবার একজন দর্জি ও। এছাড়াও তিনি একজন ধার্মিক মহিলা যাকে আমি আমার আদর্শ হিসেবে মানি। আমি তার সাহচার্যেই বড় হচ্ছি।
জন্ম গ্রহণ করার এক বছর পর থেকেই আমরা ( বাবা-মা, আমার বোন ও আমি) ঢাকা থাকা শুরু করি। কারণটা আমার বাবা, তাকে সাহায্য করার জন্যই। এখানে পাঁচ বছরের মত থেকে আমরা আবার বাড়ি ফিরে আসি। বাবা একাই ঢাকা থাকে। আমি আমার বাড়ি ভান্ডারিয়ায় গিয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হই। এস এস সি পরিক্ষা পর্যন্ত বাড়িতেই থাকি। আবার ঢাকা এসে কলেজে ভর্তি হই। এভেবেই আমার শিক্ষাজীবন চলতে থাকে। এখন আমি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বিষয়ে লেখাপড়া করছি।
আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে যেসব মাধ্যম গুলো কাজ করেছে তাদের সম্পর্কে যদি বলি, তাহলে সবার আগে আমার পরিবারের কথা বলতে হয়, আমার পরিবার আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে বেশি ভূমিকা পালন করেছে , বিশেষ করে আমার মা। বাবা বেশির ভাগ সময়ই তার ব্যবসার জন্য দূরে থেকেছে।
এরপরের মাধ্যম গুলো হলো- আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমার বন্ধুরা, মসজিদ, আমার কালচার, টেলিভিশন-রেডিও, বই, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট , ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি।
সামাজিকীকরণের ধারণাঃ
একান্তই ইন্দ্রিয় সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে মানব শিশুর জন্ম। ইন্দ্রিয় দ্বারা তাড়িত হলেও ধীরে ধীরে সে নানা ভাবে নানা প্রক্রিয়ায় একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে এবং তার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ ঘটে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ পুরোপুরি সামাজিক মানুষ হিসেবে পরিনত হয়।
সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিশুর জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ায় জীবন চলতে থাকে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি যখন এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে প্রবেশ করে তখন তাকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে, নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। এ খাপ খাওয়ানো প্রক্রিয়ার ফলে তার আচরণ ও সত্ত্বায় পরিবর্তন আসে।
নতুন নিয়মকানুন, রীতিনীতি এবং নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলার প্রক্রিয়ার নাম সামাজিকীকরণ।
 সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, “সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না”

 অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, “সামাজিকীকরণ ছাড়া সমাজে জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশার সামাজিক মূল্য বজায় রাখে”

সুতরাং আমি বলতে পারি, সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানব শিশু ক্রমেই ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ যে সামাজিক প্রক্রিয়াকে মানুষের সামাজিক প্রগতির উন্মেষ, বিকাশ হয় তাকেই সামাজিকীকরণ বলা হয়।
আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশঃ
আমরা জানি সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ সাধিত হয়। আমিও এর ব্যতিক্রম নয়। আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে সামাজিকীকরণের নানা মাধ্যম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর আমি এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমেই আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ আলোচনা করবো।
ক) আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে পরিবারের ভূমিকাঃ
যে সকল মাধ্যমে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সাধিত হয় তার মধ্যে সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম পরিবার। আমি আমার পরিবার থেকে শিখেছে কীভাবে কথা বলতে হয়, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা হয় । অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জীবনের জীবনযুদ্ধে যেন মুখোমুখি হতে পারি ।
আমার চলাফেরা, কথাবার্তা, ভাষা শিক্ষা দেওয়া, আচার-আচরণ শিক্ষা দেওয়া, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দান করে আমার পরিবার। আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশের মাধ্যমে সমাজের একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমার পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি।
নিচে আমার পরিবারের ভূমিকার বিবরণ দেওয়া হল:-
• আমার ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান যুগিয়েছে, সংস্কৃতির নকশা অঙ্কন করেছে এবং পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করছে।

• আমার দৈহিক, মানসিক এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত যাবতীয় প্রয়োজন পরিবার থেকেই মেটাচ্ছে। পরিবারেই আমার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠিত হচ্ছে। এবং আমার সুকোমল বৃত্তিগুলি এবং সুপ্ত প্রতিভা পরিবারের মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে।


আমি পরিবার থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও গ্রহণ করি, পরিবার থেকেই আমি আচার-আচরণ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করি।
আমি বিশ্বাস করি একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে পরিবারের তিনটি বিষয়ের উপর। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি কারণ এই তিনটির প্রতিটিই আমার পরিবারে বিদ্যমান ছিল। বিষয় তিনটি হলো-
(ক) আমার মা-বাবার সম্পর্ক,
(খ) মা-বাবা ও আমার মধ্যে সম্পর্ক,
(গ) আমার পরিবারের আমার বোন ও অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে পরস্পরের সম্পর্ক,

উল্লিখিত এই সম্পর্কগুলি আমার জীবনে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক। এর জন্যই আমি সৎ, ব্যক্তিত্বপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠেছি এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারছি। আমার সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা সামাজিক সত্ত্বার পূণ বিকাশও হয়েছে। আমার পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্ক মধুর আছে। আর এজন্য আমি আমার সুন্দর পারিবারিক পরিবেশে নিজের ব্যক্তিত্ব গঠন করতে সক্ষম হচ্ছি। অন্যদিকে যদি পিতা-মাতার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, মারামারি বা পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করতো তাহলে আমি আজ এতদূর পর্যন্ত আসতেই পারতাম না। আমি লেখাপড়া করতে পারতাম না। আমি বিপথগামী হয়ে যেতে পারতাম।
বাবা-মা ও আমার মধ্যে এখনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমি কোন সমস্যায় পরলে আমি সবার আগে আমার পরিবারকে বলি এবং তারা আমাকে সাহায্য করে। আর তাদের এই সহায়তার জন্যই আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠেছি। সুতরাং আমি মনে করি প্রতিটি শিশুর সামাজিকীকরণের সংস্থা হিসেবে পরিবারের পক্ষে যা করা সম্ভব অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে তা অচিন্তনীয়।
আমার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি হয়েছিলো আমার মায়ের কাছে । বয়স যখন দুই বছর তখন থেকেই মা আমাকে বাংলা, ইংরেজি, আরবি বর্ণমালাগুলো মুখে মুখে পড়াতেন । আমার এখনও মনে পরে আমার বয়স যখন তিনের কাছাকাছি ,তখন রাতে ঘুমানোর সময় বর্ণমালা, ছড়া, আরবি সূরা শুনাতেন এবং আমাকে মুখস্থ করাতেন । প্রায় প্রতিদিন সবগুলো রিভিশন করাতেন, ভুলে গেলেও আবার মুখস্থ করাতেন। আমি চার বছর বয়সেই আরবি, বাংলা, ইংরেজি বর্ণমালাগুলো মুখস্থ বলতে ও লিখতে পারতাম।
এমনকি নামাজ পড়ার জন্য প্রায় নয় দশটি সূরাও শিখেছিলাম। আমার বাবা ব্যবসার কাজে ঢাকা থাকতেন । তাই তিনি আমাদের বেশি সময় দিতে পারতেন না। আমার মা ই আমার শিক্ষাজীবনের সাথে বেশি পরিচিত ছিলেন। আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ শুরু হয় আমার পরিবারের থেকেই। যা এখনো চলছে।
খ) আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাঃ
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের প্রতিটি মানুষ যাতে সামাজিক মূল্য, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে পারে সেজন্য প্রত্যেক সমাজ প্রতিটি নাগরিক কে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের জন্য শিক্ষাদান করে। সমাজ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে।
আমার আজও মনে আছে, ২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি আমার মা আমাকে আমাদের গ্রামের “৭৪ নং দক্ষিণ-পূর্ব ভান্ডারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি করিয়ে দেন ফলে ঐদিন থেকেই শুরু হয় আমার প্রাইমারি স্কুল জীবন।
ভর্তি হবার পরেরদিন থেকেই আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি। মা আমাকে তখন প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। স্কুলটি আমাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে ছিলনা, তবুও তিনি আমাকে নিয়ে যেতেন ও নিয়ে আসতেন। ফলে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে মায়ের একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই উনারা আমাকে একটু বেশি খেয়াল করতেন।
নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছিলো ঐইবছরে, কারণ আমি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য নাম দিয়েছিলাম। আমি কুরআন তিলাওয়াত ও কবিতা আবৃতির জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম ফলে সবাই আমাকে চিনতে শুরু করলো। দ্বিতীয় শ্রেণিতে অনেক সহপাঠীর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো। এমনকি ওদের সাথে খেলাধুলাও শুরু করছিলাম। আবার পড়ালেখাও ঠিক মতো করতাম। আমি তখন থেকেই সবার সাথে মিলতে চেষ্টা করেছিলাম। যা আজ পর্যন্ত আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আমার শিক্ষাজীবনের একটা বড় অংশ আমি পেয়েছিলাম মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করে। প্রাইমারি স্কুল থেকে যা শিখেছিলাম বা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম, তাঁর ব্যাপক প্রসার ঘটে মাধ্যমিক স্কুল জীবনে। আধুনিক শিক্ষা বলতে যা বুঝায় সব ই আমি পেয়েছিলাম মাধ্যমিক স্কুল জীবনে।

শিক্ষকরা ছিলেন আমার পিতা-মাতার সমতুল্য। উনারা শুধু আমাকে পুঁথিগত বিদ্যাই শিখিয়েছিলেন না। আদব-কায়দা, ভালো ব্যবহার সব ই শিখে ছিলাম ঐ স্কুল থেকে ও ঐ স্কুলের শ্রদ্ধ্যেয় শিক্ষকদের কাছ থেকে। আমি তাদেরকে অনুসরণ করতাম। এখনো অনেক শিক্ষকের কথা মনে আছে তাদের উপদেশ গুলো। হয়তোবা এমনও মনে হয় তাদের অনুপ্রেরণা না পেলে আমি আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজে পড়ার। তখন নিয়মিত কলেজে আসতাম, মন দিয়ে শিক্ষকদের কথা শুনতাম । শিক্ষকদের সফলতার গল্প ও শুনতাম । যা শুনে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হই। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলে যা পাইনি তা আমি পেয়েছিলাম ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে। এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন দেশের এবং দেশের বাহিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী।
প্রকৃত শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম এই কলেজ থেকে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখেই শুনতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অজানা গল্প । উনাদের গল্প শুনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি । আমার মধ্যে লুকানো সত্ত্বাটা যেন আরও উদ্যমী হয়ে উঠেছিল। এবং এখন আমি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখানে পড়তে পেরে আমি গর্ব বোধ করি। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আমার বিষয়, আমার ইনস্টিটিউট “শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট” এ পড়তে পেরে ।
বিশেষ করে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ খুবই আন্তরিক। সবসময় যেন ওনাদের মুখে হাসি আঠার মত লেগেই থাকে ।
সবশেষে আমি বলতে চাই আমার শিক্ষাজীবন নানা রঙে রাঙানো । কোনো ঘাটতি ছিল না বা এখনও নাই ।
গ) আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে সহপাঠী ও বন্ধুদের ভূমিকাঃ
শিশুর সামাজিকীকরণে তার সঙ্গী বা খেলার সঙ্গীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। শিশু তার খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি পরিস্ফুট হয়। সে স্বাবলম্বী হতে শেখে।
আমার কথা যদি বলি , আমি তৃতীয় শ্রেণিতে যখন একটু বড় হয়েছিলাম । তখন একা একা স্কুলে যেতে পারি । একলা একলা পড়তে পারি । নিয়মিত ক্লাস করি, নিয়মিত পড়ালেখা করি । বন্ধুদের সাথে মিশতেও ভালো লেগেছিলো তখন । ওদের সাথে পানিতে গোসল করা, সাঁতার কাটা খুব উপভোগ করতাম । নতুন করে একটা সত্ত্বা যেন আমার মধ্যে তৈরি হয়েছিল তখন থেকে।

তৃতীয় শ্রেণির মাঝে একটু দুষ্টুও হয়েছিলাম যা মনে পরলে আজও হাসি পায়- স্কুলে যাবার পথে একটা বাগান ছিলো। ওখানে আমরা কিছু বন্ধু স্কুলে না গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম । বাগানটা ছিল লিচু, কলা, আমড়া, আম গাছে ভর্তি । প্রায় চুরি করার মত আমরা না বলে ঐ বাগান থেকে ফল খেতাম ।
এদিকে আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি গেছিলেন । আমার মায়ের কাছে জানতে চাইলেন-আমি স্কুলে যাইনি কেনো । কিন্তু মা তো জানেন আমি স্কুলে গেছি । মায়ের কাছে ঐদিন ধরা পড়ে যাই ।
অবশেষে স্কুলে না গিয়েও স্কুল ছুটি হবার সময়ই বাড়ি গেছিলাম । বাড়ি গেলে মা জানতে চাইলেন স্কুলে গেছিলাম - কি না । মিথ্যা বলছিলাম,স্কুলে গেছিলাম। মা ঐদিন আমাকে খুব মেরেছিল। তখন আমি বুঝতে পারি আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলছি। ওইদিনের পর থেকে আর ওইসব খারাপ বন্ধুদের সাথে আর কোথাও যাইনি। আমি মনে করতাম ওদের সাথে চললে বুঝি খারাপ হয়ে যাবো। অনেক দিন আবার একা একা ছিলাম। পড়ালেখা ছাড়া আর কোন কাজ ছিলনা।
৭ম শ্রেণিতে পড়ালেখায় আরো মনযোগী হয়েছিলাম । তাছাড়া ঐ বছর আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম । সহপাঠীদের সাথে অনেক ঘনিষ্ঠতাও বেড়ে গেলো । নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করলাম। স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আরও বেশি পরিচিত হয়ে ছিলাম । তারা আমাকে অনেক আদর করতেন।
ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায় একটু একটু নেতৃত্ব দেয়ার ভাব ও আমার মধ্যে চলে আসতে শুরু করে। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি সামনে থেকে সবকিছু পরিচালনা করতে শুরু করেছিলাম। আমাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও প্রধান শিক্ষকের কাছে আমিই যেতাম। এর জন্য তিনি আমাকে খুব আদর করতেন। আমাকে তার সন্তানের মতই জানতেন এবং খুব ভালো করে চিনতেন।

৮ম শ্রেণিতে উঠে আবার একটু স্কুলের বাহিরে ঘোরাঘুরি করতাম । স্কুলের পাশে নদী ছিলে সেখানে স্টিমার ঘাট ছিলো । ঐ সব দৃশ্য দেখতাম । জেলেরা মাছ ধরে কিভাবে তাও দেখতাম । অনেক দিন নৌকা ভ্রমনেও যেতাম বন্ধুদের সাথে । খুব উপভোগ্য ছিল সেই দিনগুলো ।
ঢাকা কলেজে যখন পড়তাম তখনকার বন্ধুরা ছিল আরও অনেক মেধাবী । তাঁর চেয়ে বড় কথা হলো এরা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে পড়ালেখা করতে এসেছিল । এবং তারা কোনো না কোনো হাই স্কুলের ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়া ছাত্র । তাদের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগত, একসময় একটা ভালো সম্পর্ক হয় তাদের সাথে ।
তাদের সাথে মিশে অনেক কিছু শিখেছে। সবার ভালোলাগা, খারাপ লাগা, কে কোন ধারণায় বিশ্বাস করে তা নিজের মধ্যে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছি।
কলেজে যখন সেকেন্ড ইয়ারে উঠি তখন অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করছিলাম । ঢাকায় দর্শনীয় যতো জায়গা ছিল প্রায় সব জায়গাই বন্ধুদের সাথে ঘুরতাম । সবচেয়ে বেশি আসতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । কারণ এখানে পড়তে পারা ছিল আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া।

ঘ) সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে মসজিদ ও ধর্মীয় প্রভাবঃ
ধর্মীয় অনুশাসন মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শৈশবকাল থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ব্যক্তি সেই ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লালিত হয় এবং সেই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তীকালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়। ধর্ম মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধ তথা সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয়। এককথায়, ধর্মীয় আচর-অনুষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
আমার জন্ম হয় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। আমার পরিবার থেকেই আমি ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করি সবার আগে। এক্ষেত্রে আমার মা বেশি ভূমিকা পালন করেন। তিনি অনেক ধার্মিক। এছাড়াও আমার বাড়ির সামনেই মসজিদ। মসজিদ থেকেই আরবি শিক্ষা লাভ করেছি। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি ছোটবেলা থেকেই এবং কুরাআন তিলাওয়াত করা শিখিছিলাম। মসজিদে অনেক ধর্মীয় নিয়ম-কানুন শিখেছে যা এখনো আমার মধ্যে প্রবাহিত। আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে ধর্মীয় প্রভাব অত্যান্ত শক্তিশালী।
ঙ) সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকাঃ
আমি যেসব গণমাধ্যমের দ্বারা প্রবাহিত হই সেগুলো হলো-
সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি যেগুলো আমার সামাজিকীকরণে গৌণ ভূমিকা পালন করে। কারণ সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে আমার পরিবার, খেলার সাথী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানত মৌলিক ভূমিকা পালন করে। নিচে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো-
১। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন :

সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, জার্নাল প্রভৃতি গণমাধ্যমে পরিবেশিত তথ্যগুলো সমাজের মূল্যবোধ, প্রথা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচিত হয়। এছাড়া সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে এমন কিছু শিক্ষামূলক তথ্য প্রচার করা হয়, যার দ্বারা আমি অনেক কিছু শিখতে পারি। আমার বাসায় সবসময় সংবাদপত্র রাখা হত। বড়দের পড়ার পর আমি এগুলো পড়তাম।

সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সংবাদপত্র জনশিক্ষার একটি প্রধান মাধ্যম। আপন সমাজ ও বিশ্ব সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে তা মানুষের মনের সংকীর্ণতা দূর করে। এমনকি সবার মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও বিশ্বজনীনতাবোধ সৃষ্টি করে।

২। রেডিও :
ছোটবেলায় আমার একটা প্রিয় শখ ছিল রেডিও শোনা। আমাদের বাসায় টিভি ছিলনা। আমি এই রেডিওতে গান শুনতাম , খবর শুনতাম। এছাড়া প্রতি সোম ও শুক্রবার শিক্ষামূলক নাটক হতো। রেডিও শুনে অনেক গান মুখস্থ করেছিলাম। এখনো পারি । তাই আমি মনে করি আমার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সত্ত্বার বিকাশে রেডিওর ভূমিকাও কম নয়।
৩। টেলিভিশন :
আমি টিভি দেখি বছর তিনেক ধরে। আগে রেডিওর মাধ্যমে যা যা করতাম তা এখন টিভিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সকাল বেলা রবীন্দ্র সঙ্গিত ও দেশের গান না শুনলে মনে কোন তৃপ্তি পাইনা। যখন সময় পাই রিমোট নিয়ে বসে যাই দেশ বিদেশের খবর জানার জন্য। বর্তমানে আমার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে সবচেয়ে বড় অবদান এই টেলিভিশনের।
কেনোনা দর্শন ও শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে একই সঙ্গে তথ্য সংগৃহীত হওয়ায় অন্যান্য গণমাধ্যমের তুলনায় টেলিভিশন পরিবেশিত তথ্য সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আমি খুব আনন্দ পাই এবং আগ্রহ সহকারে সবকিছু উপভোগ করি। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতির অনুকূলে নানা ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে টেলিভিশন সামাজিকীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪। ইন্টারনেট ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে বোঝায় সেই প্রযুক্তি, যার সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ ও তা ব্যবহার করা যায়। যেমন_ ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন, ইউটিউব, ফেসবুক প্রভৃতি ইন্টারনেট প্রযুক্তি বর্তমানে দেশ বা দেশের বাইরে এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের যোগাযোগকে খুবই সহজ করে দিয়েছে। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভাববিনিময়, পরস্পরের খোঁজখবর নেয়া কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের সঙ্গে পণ্য বিনিময়সংক্রান্ত আলোচনা, চুক্তি ইত্যাদি এখন ঘরে বসে অল্প সময়েই করা যায়।

আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি অনেক অংশ জুড়ে রয়েছে। কিছুদিন আগেও যা ভাবা যেত না। আজকের দিনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এভাবে আমার সামাজিকীকরণে ও সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির সবকিছুর স্বাদ একসাথে পেতে ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির বিকল্প নেই। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনের মাধ্যমে সব কিছু জানা যায়না। অনেক সীমাবদ্ধতাও থাকে। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন যা দেখায় আমরা তাই দেখি। তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে।

কিন্তু আমারা যা কিছু দেখতে চাই ও জানতে তাই ইন্টারনেট তাই দেখায়। আমি যদি বলি তাহলে আমি বলবো, বর্তমানে আমি সবচেয়ে বেশি ভক্ত ইউটিউবের। কারণ, আমি বর্তমানে অনেক নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করতেছি এই ইউটিউব এর মাধ্যমে। আমাদের পৃথিবী যে কত বিস্ময়কর তা আমি কোনদিনও জানতে পারতাম না এই ইন্টারনেট, ইউটিউব না থাকলে।
উপসংহারঃ
আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশে যেসব মাধ্যম আমাকে পরিচালনা করেছে তাদের কাছে আমি সত্যিই ঋণী। এগুলোর কোনটি যদি আমার মধ্যে কাজ না করতো হয়তোবা আমি এতদূরে কোনদিনও আসতে পারতাম না। আমার পরিবার যদি আমার ভিত্তি গড়ে না দিতো আমি দুমড়ে মুচরে ভেঙ্গে যেতাম। তাদের অবদান পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে পরিমাপ করা যায়না।
পৃথিবীর সব মা-বাবা তার সন্তানদের ভালই চান। তবে আমরা অনেক অঘটন ও দেখে থাকি। তাদের সন্তানরা শিক্ষা থেকে দূরে থাকে। তার সমাজ, তার দেশ, তার পৃথিবী সম্পর্কে তাদের মধ্যে ধারণার বীজ অঙ্কুরিত হতে পারেনা। আল্লাহর দেয়া এ পৃথিবী তাদের অজানায় থেকে যায় সঠিক ও সুস্থ সামাজিকীকরণের অভাবে।
আমার পরিবার আমার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পর এর পরিপূর্ণতা আমি পাই আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বন্ধুদের মাধ্যমে। এই দুইটি মাধ্যম আমাকে পূর্ণতা দিচ্ছে। আমাকে শেখাচ্ছে জীবনের রঙ, জীবনের বৈচিত্র্যতা ও বাস্তবতা। প্রতি মুহূর্তেই আমি নতুন কিছু শিখছি। নিজেকে জেনেই চলেছি। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে মিশে আছে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমার শিক্ষক, আমার সহপাঠী-বন্ধুরা।
আমি খুবই প্রযুক্তি প্রেমী। প্রযুক্তির ছোঁয়া আমার সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। আমি সর্বদা জানতে চেষ্টা করি। পৃথিবীতে আর কি আবিষ্কৃত হলো নতুন করে। কোনটা আমার অজানা থেকে গেল কিনা। আমি ওত পেতে বসে থাকি ফেসবুকে নতুন কিছু জানার জন্য, ইউটিউবে গিয়ে আর আসতে চাইনা।
অতএব, আমি বলতে চাই আমার সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ ঘটেছে, এবং প্রতিনিয়ত ঘটছে সামাজিকীকরণের উপরে বর্ণিত মাধ্যম গুলোর কল্যাণে। আমি এগুলোর প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস কোনটা যদি ছুটে যেত তাহলেও আমিও থাকতাম আজ বঞ্চিত। আমার মধ্যে যে সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ লাভ করেছে, তা ছিল অসম্ভব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.