![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সূচনাঃ
আমি এমন একটি শহরে বাস করি যেটি- ইতিমধ্যে বসবাসের যোগ্যতা হারিয়েছে, বিশ্বের অন্যতম অযোগ্য শহর, বসবাস অযোগ্যতায় বিশ্ব রাঙ্কিং এ এটির অবস্থান দ্বিতীয়। শহরটির নাম ‘ঢাকা’। সত্যিই আমাদের এই ঢাকা শহরটি ময়লা আবর্জনায় ঢাকা পরে গেছে।
এক সময়ে এই শহরে নিয়ম ছিল খুব ভোরবেলা ময়লার গাড়ি এসে ময়লা তুলে নেবে এবং ভোর থাকতে থাকতেই অর্থাৎ মানুষজন চলাচল শুরু করার আগেই ময়লার গাড়ি ময়লা নিয়ে চলে যাবে। এখন আধুনিক যুগে আর সে নিয়ম নাই। এখন ময়লার গাড়ি কাজ শুরু করে লোকজন চলাচল শুরু করার পর। অর্থাৎ দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে সবার নাকের ডগা দিয়ে ময়লা বোঝাই করে সারাটা রাস্তা সেই ময়লা ফেলতে ফেলতে ওই গাড়ি আমিন বাজারে যায়।
আবার লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, যেখানে ডাস্টবিন থাকার কথা সেখানে না রেখে এটাকে রাখা হয় প্রায় মাঝ রাস্তায়। এই ডাস্টবিনে সারা দিনরাত ময়লা ‘ছুড়ে ফেলা’ চলতে থাকে। এক সময় দেখা যায় ওই ডাস্টবিনের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নগরীর শোভা বর্ধন করছে। সেই ‘শোভা’ এবং তার ‘ঘ্রাণ’ নাকে লাগতে লাগতে মানুষের যেন এমনই অভ্যাস হয়ে গেছে যে, তারা কেউ নাকে কাপড় গোঁজার চেষ্টাটিও করে না। আর একটু খোঁজ করলেই দেখা যায়, এই শহরের ময়লা পরিষ্কারকর্মীরা সকলেই ‘সরকারি’ কর্মচারী। তাই তাদের চাকরি যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। তাঁরা দলবেঁধে সাতসকালেই রাস্তায় চলে আসেন। এসে প্রগৈতিহাসিক সেই মুড়ো ঝাঁটা দিয়েই ঝাড়– দিতে থাকেন। রাস্তার পাশে অর্থাৎ ড্রেন সাইডে ঝাড়– দিয়ে বিশেষ গবেষণা-টবেষণা না করে সোজাসাপ্টা ড্রেনেই ময়লা-আবর্জনার সলীল সমাধি ঘটিয়ে দেয়। এরপর ডিভাইডার সাইডের ময়লা-আবর্জনাগুলো ‘সযত্নে’ জড়ো করে ডিভাইডারের পাশেই স্তুপ করে রাখেন।
আমাদের দেশে সবচেয়ে সমস্যা গুলোর একটা হচ্ছে আবর্জনার অব্যবস্থাপনা। রাস্তার পাশে, বাড়ির সামনে, পুকুরের ধাঁরে সব জায়গায় আমরা শুধু দেখি আবর্জনা আর আবর্জনা। কিছু কিছু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তো নাক ধরে যেতে হয়। এই আবর্জনা আমাদের নগর জীবনের দুর্ভোগের একটি অন্যতম কারণ। রাজধানী ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখন প্রায় অচল, বুড়িগঙ্গা এখন এক বিষাক্ত কালো নদী। এর থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই প্রয়োজন। আমার কাছে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও রিসাইকেলিং-ই এই সমস্যার সমাধান।
আমি থাকি এই আবর্জনার শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্র লালবাগে। লালবাগের ২৮ নং ওয়ার্ডে। আমার বাসায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যে খুব একটা ভালো তা কিন্তু আমি বলতে পারিনা। কারণ ঢাকা শহর যে বসবাসের অযোগ্য তার পেছনে আমাদের ফ্যামিলের ভূমিকা খুব একটা কম নয়। আমাদের ময়লা আবর্জনাগুলো আমরা ঝুড়িতে রাখি এবং ঝুড়ি ভর্তি হয়ে গেলে পলিথিন ব্যাগে করে রাস্তার মাঝখানে রাখা ডাস্টবিনে টুপ করে ফেলে দিয়ে আসি। আর আমাদের ময়লা আবর্জনা এখান থেকে কোথায় যে যায় তা আমি কোন দিন ভেবেও দেখিনি। তবে এখন আমি জানি এর গন্তব্য কোথায় এবং কিভাবে সেখানে পৌঁছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধারণাঃ
বাংলা উইকিপিডিয়ার মতে,
“ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ইংরেজি ভাষায়: Waste management) বলতে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পূণর্ব্যবহার (Recycling) এবং নিষ্কাশনের(Disposal) সমন্বিত প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এই শব্দটি দিয়ে সাধারণত মানুষের কার্যকলাপে সৃষ্ট অপ্রয়োজনীয় বস্তুসমূহ সংক্রান্ত কাজগুলোকে বুঝানো হয়ে থাকে; ঐ বস্তুগুলোর থেকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ক্ষতিকারক প্রভাব প্রশমিত করার জন্য, কিংবা পরিবেশের সৌন্দর্য্য রক্ষার কাজগুলোই এই প্রক্রিয়াতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আবর্জনা থেকে পরিবেশের ক্ষতি রোধ করার কাজ এবং আবর্জনা থেকে পূণর্ব্যবহারযোগ্য বস্তু আহরণ সংক্রান্ত কাজও করা হয়ে থাকে। এতে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি এবং দক্ষতার দ্বারা কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয় বর্জ্য সংক্রান্ত কাজ করা হয়। উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশভেদে, শহর বা গ্রাম্য এলাকাভেদে, আবাসিক বা শিল্প এলাকাভেদে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ধরন আলাদা হয় ”
১৯৯১ সালে Environment Protection Agency (EPA), ল্যান্ডফিল সাইটের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নীতিমালা প্রদান করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হচ্ছেঃ একটি ল্যান্ডফিল সাইটের ৩০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোন জলাশয় থাকা যাবে না, ১৬০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোন খাবার পানির নলকূপ থাকা যাবে না এবং ৬৫ মিটার দূরত্বে কোন ঘরবাড়ি, স্কুল ও পার্ক থাকা যাবে না। যদিও এর কোন তাই ঢাকা শহরে লক্ষ্য করা যায়না। ঢাকা শহরের দুটি ল্যান্ডফিল সাইট (মাতুয়াইল ও আমিনবাজার) এর একটিও এই নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয় নি।
আমাদের দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দুটি প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে এরিয়া মেথড (Area Method) ও ট্রেঞ্চ মেথড (Trench Method)। এরিয়া মেথড এ মাটির উপরে আবর্জনার স্তূপ জমা করে রাখা হয়। প্রতিদিন জমা করার পর এর উপর মাটির আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। অন্যদিকে, ট্রেঞ্চ পদ্ধতিতে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে বর্জ্য জমা করে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। ঢাকা শহরের ল্যান্ডফিল সাইট গুলোতে এরিয়া মেথড প্রয়োগ করা হলেও দিনশেষে এটাকে মাটি দিয়ে ঢাকার বদলে উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা হয়
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণার উদ্দেশ্য ও গুরুত্বঃ
আমার এই গবেষণাটি সবার উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। সবাই উপকৃত হবে। সঠিক ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমাদের দেশের অনেকেই জানেন না। আশা করি তারা খুবই উপকৃত হবেন সম্পূর্ণ বিষয়টি জানার মাধ্যমে। কারণ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মানুষ তাদের ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বর্জ্যরে তুলনায় ডাস্টবিনের সংখ্যাও কম। শুধু রাজধানী ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার কঠিন বর্জ্যরে পরিমাণ ৭ হাজার টনের বেশি। মানুষের অজ্ঞতা ও অসাবধানতার কারণে ডাস্টবিনগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। ফলে বর্জ্য পদার্থ এখানে-সেখানে পড়ে থাকে বাতাসসহ সার্বিক পরিবেশকে দূষিত করে। বর্ষা মৌসুমে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। কঠিন বর্জ্য পদার্থ রাস্তার পাশের ড্রেনে পড়ে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাকে একেবারে অচল করে দেয়।
এমনিতেই দেশের বেশিরভাগ স্থানে তরল বর্জ্য অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত সুয়েজ এবং খোলা ড্রেন নেই; ফলে তরল আবর্জনা বা সুয়েজে নিরাপদ অপসারণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। ড্রেন উপচে পরা এবং রাস্তায় ছড়িয়ে -ছিটিয়ে থাকা তরল বর্জ্য পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি করে চলেছে। পানি ও বায়ুবাহিত নানা রোগ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। একটি এলাকার কঠিন, আধাকঠিন ও তরল বর্জ্য আবর্জনাকে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরাপদ অপসারণ সুনিশ্চিত করাই হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা বর্জ্য পরিচালনা ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন আবর্জনা সংগ্রহ, স্থানান্তর, প্রক্রিয়াকরণ এবং চূড়ান্ত অপসারণ কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য। আর বর্জ্য আবর্জনাকে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা হচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। আমার এই গবেষণা কর্মটুকু আমি বিশ্বাস করি মানুষের উপকারে আসবে। তারা জানবে এবং সচেতন হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এলাকার জনস্বাস্থ্য, কারিগরি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফল কার্যকারিতা নির্ভর করে। আঞ্চলিক পরিবেশ এবং এলাকার জনগণের প্রাত্যহিক জীবনযাপন পদ্ধতিও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করে তোলার বিকল্প নেই। যে কোনো এলাকায় কঠিন ও তরল বর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হয়। কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের লক্ষ্যে প্রতিটি শহর-বন্দরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাস্টবিন করার প্রয়োজন পড়ে। বর্জ্যকে নিরাপদ স্থানে অপসারণ করার জন্য শহরের দূরবর্তী কোনো স্থান নির্বাচন করে সেখানে বর্জ্যরে স্বাস্থ্যসম্মত ট্রিটমেন্ট করা জরুরি। এই সব ভালোভাবে জানার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণার ধরণ ও পদ্ধতিঃ
গবেষণার প্রশ্নঃ
আমার প্রয়োজন অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছি। এদের মধ্যে ছিলেন কাউন্সিলর, এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, ভাড়াটিয়া, পরিচ্ছন্নকর্মী, বর্জ্য পরিবহনে কর্মরত ড্রাইভার প্রমুখ ব্যক্তি বর্গ। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
১। এখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন ??
২। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে আপনার করণীয় কি??
৩। কাউন্সিলর কিংবা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে কি কি পরামর্শ দিয়ে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান ??
৪। নিজ উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু করছেন কি না বা করতে ইচ্ছে করেন ??
গবেষণা ও ফলাফলঃ
আমি আমার এলাকার মানুষদের নানা প্রশ্ন করে বিভিন্ন তথ্য জেনে নেই। আমি নিজের চোখে দেখি এবং ছবি তুলে রাখি। এভাবে আমি ৫ দিন পর্যবেক্ষণ করি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন করে আমার দৃষ্টিগোচর হয়। আমি তাদের সাক্ষাৎকার নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত পরিচ্ছন্ন কর্মী থেকে শুরু করে, পথচারী, ভাড়াটিয়া, ময়লা বহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার, এবং আমার ২৮ নং ওয়ার্ডের সম্মানিত কাউন্সিলর সাহেবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। তাদের বক্তব্য প্রায় একই ছিল। এর মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাক্ষাৎকার নিচে উল্লেখ করা হলো-
গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ ও আলোচনাঃ
আমার নিজ চোখে দেখা এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টেদের তথ্যমতে, আমার এলাকা লালবাগসহ, কামরাঙ্গীরচর, ধানমন্ডি, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, বিজয় স্মরণী, বাড্ডা, তেজগাঁও রেলগেট, মোহাম্মদপুর, গাবতলী এলাকায় অন্তত ১৫টি খোলা ট্রাকে এভাবে বর্জ্য বহন করতে দেখা যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানতে পারি, এগুলোর মধ্যে মাত্র ৩টিতে ত্রিপল ব্যবহার করে। তাও সেগুলো ছেঁড়া। আরও জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৪০ (ডিএসসিসি) টি খোলা ট্রাকে বর্জপরিবহন করে। রাজপথে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে ময়লাবাহী ট্রাকগুলো যায় দুটি গন্তব্যে। ঢাকা দক্ষিণের ময়লা নেওয়া হয় মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে এবং আমিনবাজারের ল্যান্ডফিলে। আমাদের বাসার ঝুড়ি ভর্তি ময়লার সর্বশেষ গন্তব্য স্থল এই জায়গাতেই। তা আমি এই গবেষণার মাধ্যমেই জানতে পারলাম।
আমি পর্যবেক্ষণ করলাম অদক্ষ পরিছন্ন কর্মীরাই রাস্তা নোংরা করছে। বাসায় বাসায় গিয়ে যে ময়লা নিয়ে আশে তারা সেটি করতে গিয়ে আবর্জনা কন্টেইনারে ফেলার আগে তা রাস্তাতেই ফেলেছেন। আশপাশে তা থেকে বেছে বেছে বিক্রি করা যাবে এমন ময়লা রেখে দিচ্ছে কয়েকজন। সিটি কর্পোরেশনের হিসেব মতে ঢাকা শহরে চার হাজারের মতো এমন পাড়া ভিত্তিক কর্মী রয়েছেন যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করেন। এরা সবাই ছোট ছোট বেসরকারি সংস্থা বা আবাসিক সমিতি গুলো দ্বারা পরিচালিত। দিনের বেলাতেই তারা ময়লা সংগ্রহ করছেন। যদিও সেটি হওয়ার কথা সন্ধ্যায়। কিন্তু দিনের বেলাতেই হয়। কিন্তু তৈরি হয় আরো বেশি যার হিসেব তাদের কাছে নেই। তারা ধারনা করছেন শহরে তৈরি ময়লার ৮০ শতাংশই তারা পরিষ্কার করেন।
ঢাকা শহরে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডাম্পিং হয় ৩ হাজার ৮শ মেট্রিক টন। অপর এক বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী, প্রতিদিন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হয় ৫ হাজার ৯শ ৫০ মেট্রিক টন। এছাড়া মেডিকেলসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ৫০ এবং রাস্তাঘাট থেকে ৪শ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। প্রতিদিন নগরীতে মাথাপিছু উৎপাদিত হয় ৫শ ৬০ গ্রাম বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে আছে প্লাস্টিক, কাগজ, কাচ, ধাতু এবং জৈব বর্জ্য। ঢাকা শহরের বিপুল পরিমাণ জনগণের বিপরীতে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে ৭ হাজার ৫শ জন। প্রতি ১ হাজার স্থায়ী নাগরিকের জন্য একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এই কর্মীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য এনে ফেলছেন। অধিকাংশই রাস্তার ওপর, খোলামেলা, যেনতেনভাবে।
আমরা পথচারী আর আশপাশের মানুষের জন্য যা দুঃসহ দুর্ভোগের কারণ। কিছু কাভার্ডভ্যান থাকলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে খোলা ট্রাকে করে এই বর্জ্য নেয়া হয় আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ল্যান্ড ফিল্ডে। যেখানেও নেই নিরাপদ ব্যবস্থাপনা। অপরিকল্পিতভাবে ল্যান্ডফিল সাইটে বর্জ্য স্তূপীকরণের কারণে সৃষ্টি হয় নানারকম সমস্যা। ল্যান্ডফিল সাইটের আশেপাশে দেখা যায় পোকামাকড়ের উপদ্রব, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিস্তার ও দুর্গন্ধ। এছাড়া অব্যবস্থাপনা ফলে বায়ু দূষণ ও পানি দূষণ ব্যাপকতা লাভ করছে। এছাড়া বিভিন্ন উৎস থেকে আসা বর্জ্য পদার্থ কোন রকম বাছাই ছাড়াই একসাথে ডাম্প করা হচ্ছে। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে এখনো আলাদা করা হয়নি মেডিক্যাল বর্জ্যকে।
স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মেডিক্যাল বর্জ্য আলাদা না করে এখনো ফেলা হয় ডাস্টবিন, রাস্তাঘাটসহ যত্রতত্র। নিক্ষিপ্ত বর্জ্যের তালিকায় রয়েছে ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানব-প্রত্যঙ্গ, ওষুধের শিশি, ব্যবহৃত স্যালাইন, রক্তের ব্যাগ এবং রাসায়নিক দ্রব্যসহ সব ধরনের চিকিৎসাজাত ময়লা-আবর্জনা। এসব বর্জ্য যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণ না করায় বিভিন্ন রোগব্যাধি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ সমস্যা সবচেয়ে সহজ সমাধান হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন রঙের কনটেইনারে ভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলা। ট্রাক ড্রাইভারের কাছে শনা যায়, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় তিন বছর আগে প্রতি ঘরে ঘরে লাল, সবুজ ও হলুদ কন্টেইনার বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এসবের ব্যবহার হচ্ছে না।
গৃহস্থালী বর্জ্য, মেটাল, প্লাস্টিক ও ঝুকিপূর্ণ বর্জ্য আলাদা ভাবে ফেললে এগুলো থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। গৃহস্থালী পচনশীল জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্টিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই সার তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া কাগজ, প্লাস্টিক ও মেটালকে রিসাইকেল করা সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা, জনগণের অংশগ্রহণ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এই বর্জ্যকে বদলে দিতে পারে সম্পদে। প্রয়োজন সকলের সদিচ্ছা আর সচেতনতা। অথচ সেদিকে কারো কোনো খেয়েলি নেই।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আমার অবস্থান ও পরামর্শঃ
আমাদের সবার প্রিয় ঢাকা আজ বসবাসের জন্য অযোগ্য । ধূলায় ধূসরিত হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। প্রতিটি সড়ক, অলিগলি এখন ধূলিময়। বিভিন্ন সড়কের বেসরকারি-সরকারি সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি, বিল্ডিংয়ের কাজসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি, ভবন নির্মাণ, ভবন ভাঙ্গা, রাস্তা নির্মাণ, মেরামত, পাইপলাইন বসানোসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ম-কানুন অমান্য করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তাছাড়া নির্মাণসামগ্রী পরিবহন এবং সিটি করপোরেশনের আবর্জনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সময়েও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বাড়ছে ধূলাদূষণ।
চিকিৎসকরা বলেছেন, ধূলাদূষণের কারণে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার,ব্রঙ্কাইটিস,হাপানি ও যক্ষাসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। যার প্রভাব ধুমপানের চেয়েও বেশি। অথচ এই ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
আমি মনে করি রিসাইক্লিং করার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আবর্জনার উপাদানকে ব্যবহারযোগ্য করার পদ্ধতিই হল রিসাইকেলিং। আবর্জনা আমাদের কাছে অব্যবহারযোগ্য কিছু। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বের করেছে আবর্জনা আসলে অব্যবহারযোগ্য না। ৯৫ ভাগের বেশি উপাদান আমরা পুনরায় ব্যবহার করতে পারি। হোক সেটা কালিভরা কাগজ, ভাঙ্গা প্লেট বা বদহজমের পরিনামে আসা মল। আমাদের দেশের আবর্জনার প্রায় ৬২ ভাগ আমাদের গৃহস্থলের তরিতরকারি-খাবারের অতিরিক্ত অংশ ইত্যাদি, কাগজ ও কাগজজাত সামগ্রি ৯ ভাগ , প্লাস্টিক পদার্থ ২০ ভাগ, ধাতব পদার্থ ৩ ভাগ, কাচ ও সিরামিক ০.২৫ ভাগ, কাচ ১ ভাগ ও অন্যান্য প্রায় ৪ ভাগ। আবর্জনার প্রায় ৫৫ ভাগই তরল। তরল উপাদান গন্ধ বেশি ছরায় তাই এগুলো দ্রুত জনবহুল জায়গা থেকে নিরসন না করলে অনেক সমস্যা হয়, যা আমরা রোজই টের পাই।
ইউরোপের দেশগুলো সম্প্রতি বর্জ্য ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। বিশেষ করে সুইডেন। আমরাও এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে আবার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ ও যোগ করা যাবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামের প্রতিটি অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে বর্জ্য নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিতকরণে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের কোনো বিকল্প নেই। শহর-বন্দরে সর্বত্র পর্যাপ্ত সংখ্যক সঠিক মাপের উন্মুক্ত ড্রেন ও ভূগর্ভস্থ সিউয়ার নির্মাণ করতে হবে। ঘরবাড়িতে সেপটিক ট্যাংক ও হাউস ড্রেন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা জরুরি। এসব ড্রেনকে সঠিকভাবে মেইন সিউয়ারের সঙ্গে সংযোগ দিতে হবে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য জনবল কাঠামো বিস্তৃত করতে হবে। বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি সহজে নিষ্কাশিত হওয়ার জন্য রাখতে হবে স্টর্ম-সিউয়ার। কেন্দ্রীয়ভাবে পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করে পরিশোধিত তরল বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণ কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। দখল হয়ে যাওয়া নদী, খাল উদ্ধার করে তা পুনর্খননের ব্যবস্থা নিতে হবে। নদনদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে তার আসল রূপ।
কঠিন বর্জ্যকে রিসাইক্লিং করার জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এসবের নিয়মিত মেরামত ও সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমশক্তিকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সক্রিয় রাখতে দেশের আপামর জনগণকে সচেতন করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করা যেতে পারে। পয়োনিষ্কাশনে জনগণের করণীয় সম্পর্কিত লিফলেট বিতরণ এবং নিয়মিত মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করলে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে পয়োনিষ্কাশন সংশ্লিষ্ট নতুন আইন প্রণয়ন করে তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার কথা ভাবা দরকার এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কেননা আমাদের দেশে প্রচলিত আইন না মেনে চলার একটি প্রবণতা বরাবরই লক্ষ করা গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহর-গ্রামকে পরিচ্ছন্ন, বসবাসযোগ্য, পরিবেশবান্ধব নগরীতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যাশায় দেশবাসী।
প্রতিদিন সৃষ্ট বর্জ্যের অর্ধেকটাই থেকে যায় রাস্তাঘাটে কিংবা বাড়ির আশপাশে। ডাস্টবিনে ময়লা পরে থাকে দিনের পর দিন। বর্জ্য পরিবহনের জন্য ত্রিপলে ঢাকা ট্রাক ব্যবহার করার কথা, কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের ৩৭৮টি ট্রাকে কোনো ত্রিপল নেই। ফলে বর্জ্য পরিবহনের ট্রাকগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং কিছু বর্জ্য ও দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি রাস্তায় পড়ে। এভাবে শহর নোংরা হয়, রোগজীবাণু ছড়ায়। ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য জমা হয়। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সঠিক নিয়মে নির্ধারিত ভাগাড়ে জমা করা হয়। সুতরাং ট্রাকে অবশ্যই ত্রিপল ব্যবহার করতে হবে।
২০ ভাগ স্থানীয়ভাবে বেসরকারি উদ্যোগে বিশেষ করে টোকাইদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং হয়। আর বাকিটা থেকে যায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এবং পরে তা স্থানীয়ভাবেই মাটির সঙ্গে মিশে যায় কিংবা ড্রেনে পড়ে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণযোগ্য নয়। উভয় সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীলতা, দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, সার ইত্যাদি উৎপাদন সম্ভব। সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
সাম্প্রতিক এক খবরে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজধানীর বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে দুটি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে। এই দুটি প্ল্যান্টের মাধ্যমে মহানগরের সব বর্জ্যকে সারে রূপান্তর করা হবে। উদ্যোগটি দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হোক। সে জন্য দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিদিনের বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহনের কাজ আরও সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্নভাবে করতে হবে।
উপসংহারঃ
ইতিমধ্যে গবেষকরা হুশিয়ার দিয়েছে প্রখর ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের ঢাকা। এই দেশটা একার কারো না। দেশটা আপনার আমার সকলের। তাহলে কি সকলেই দেশটাকে দেখবাল করবো না? এই দেশটা কিন্তু আমার আপনার আর আমাদের কাছেই থাকবে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এদেশে যারাই ক্ষমতায় আসীন হয় দেশের প্রতি তাদের কোন দায় দায়িত্ব নেই, থাকলেও তা খুবই সামান্য। দেশটা তো আমাদের। তাই আমাদেরই এগিয়ে আস্তে হবে। আমরা যে যেখানে যেভাবে বাঁচছি সেখান থেকে দেশকে ভালবেসে দেশীয় সম্পদগুলোর যত্ন নিতে শুরু করি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অন্যতম পুরনো এলাকা ২৮ নং ওয়ার্ড। কিন্তু উন্নয়নের মাপকাঠিতে পিছিয়ে অনেক দূর। বস্তিপ্রধান ওয়ার্ড হওয়ায় যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ আর ভয়াবহ মাদকের প্রকোপে মুমূর্ষু এই ওয়ার্ড। পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ময়লার ভ্যান থাকলেও আবর্জনা মজুদের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে নেই কোনো ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার (এসটিএস)। এভাবে চারপাশে ছড়িয়ে পড়লে তা একপর্যায়ে পানির স্রোতে রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে খাল, নদীর মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো শুকিয়ে গেছে অথবা অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে গেছে। ফলে তরল বর্জ্য অপসারণের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবর্জনা সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপদ অপসারণ করা পরিবেশ সুরক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমশক্তিকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেললে পরবর্তীকালে পরিবেশদূষণ হ্রাস পাবে। উপরন্তু পরিবেশসম্মত জৈব সার উৎপাদনের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে। বৃদ্ধি পাবে ফলনও। এ লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করে তোলার বিকল্প নেই। যে কোনো এলাকায় কঠিন ও তরল বর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।
রিকজাভিক, আলাস্কা, সুইজারল্যান্ড, ভ্যাংকুভার, অসলো, হেলসিঙ্কি, স্টকহোম, মন্ট্রিয়াল, মেলবোর্নসহ পৃথিবীর সেরা বাসযোগ্য শহরগুলো কিন্তু ঢাকার আগে প্রতিষ্টিত(জন্ম) হয়নি। অথচ আমাদের এই ঢাকা এখন বাসের অযোগ্য শহর, কেন? আমরাও তো মানুষ। আমরাও তো ভাল করে বাঁচতে চাই বাঁচার মত বাঁচতে চাই। দখল দূষণমুক্ত পরিবেশে এই বাংলাদেশে এই ঢাকাতেই বাঁচতে চাই। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে দেশের সেবায় দেশের মানুষের সম্পদের সেবায় লেগে যাই যে যেখানে আছি সেখান থেকে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে যেন ১৬ জনও বাদ না পরে।
রেফারেন্সঃ
১। বর্জ্য অর্থকারী সম্পদ, সুরাইয়া আক্তার রিমা, র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা।
২। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড. অনিল কুমার ঘোষ, পারুল প্রকাশনী, কলকাতা।
৩। তথ্য বাতায়ন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
৪। বাংলাপিডিয়া।
৫। বাংলা উইকিপিডিয়া।
©somewhere in net ltd.