নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংশপ্তক কামাল লোহানী এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলন

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:৪৮



২৬ জুন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর তারিখ এবং বরেণ্য সাংবাদিক কামাল লোহানীর জন্মের তারিখ। এ বছর জাহানারা ইমামের দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। কামাল লোহানীর জন্মদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়নি। সত্তরে পা রেখেছেন বলে এবার আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কামাল লোহানীর জন্মদিন উদযাপন করছি।

গত মাসে আমরা জাহানারা ইমামের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছি। বয়সে তিনি কামাল লোহানীর চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। কিন্তু বয়সে ছোট হলেও কামাল লোহানীর কর্মজীবনের পরিধি অনেক বড় এবং বর্ণাঢ্য।

বাংলাদেশের সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোগামী নেতা কামাল লোহানী। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক, কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, সত্য প্রকাশে আজীবন থেকেছেন অবিচল, গণমানুষের মুক্তির জন্য লড়ে চলেছেন অবিরল। নিজের কর্মোদ্দীপনাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি পেশার বর্ণোজ্জ্বল জগতে, যেভাবে রেখেছেন তাঁর সমকালীন সহযোগীরা।

ষাটের দশকে পাকিস্তানের সামরিক প্রভু লৌহমানব আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে যখন বাংলাদেশের মানুষ চরম নির্যাতন ও নিষ্পেষণে অতিষ্ঠ সেই সময় কামাল লোহনী গঠন করেছিলেন ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’। ‘ক্রান্তি’ বাংলাদেশের প্রথম সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগঠন, যার কর্মকান্ড বিস্তৃত ছিল গোটা দেশ জুড়ে।

‘ক্রান্তি’র আগে অবশ্য ‘ছায়ানট’ গঠিত হয়েছে, তবে ছায়ানটের কার্যক্রম ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক এবং সঙ্গীতকেন্দ্রিক। ‘ছায়ানট’ গঠিত হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্রের রবীন্দ্রবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সংক্ষুব্ধ শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা সংগঠিত হয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণের অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কামাল লোহানীর ‘ক্রান্তি’র পরিধি ছিল আরও ব্যাপক। গণসঙ্গীতের পাশাপাশি ‘ক্রান্তি’ নাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিয়েছিল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যার মূল অভিব্যক্তি ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধিতা। ক্রান্তির পর একই আদর্শ ও লক্ষ্য সামনে রেখে আÍপ্রকাশ করেছে ‘উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’।

‘ক্রান্তি’ ও ‘উদীচী’ যখন গঠিত হয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভক্তির প্রভাবে দ্বিখণ্ডিত। ‘উদীচী’র পেছনে সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সমর্থন ছিল, কিন্তু ‘ক্রান্তি’ চীনপন্থী কমিউনিস্টদের সহানুভূতি পেলেও বস্তুগত সহযোগিতা কখনও পেয়েছে বলে মনে হয় না। ‘ক্রান্তি’র পুরোধা কামাল লোহানী কখনও বিশেষ পন্থার লক্ষণরেখার গন্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। সব সময় তাঁর আস্থা ছিল সাধারণভাবে বামপন্থার প্রতি এবং তা ছিল দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কামাল লোহানী যোগ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে, স্বাধীন বাংলা বেতারে সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যুদ্ধকালীন বেতারকেন্দ্রে কেউ কখনও নির্দিষ্ট দায়িত্বের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকেন না। কামাল লোহানী সংবাদ বিভাগের পাশাপাশি সঙ্গীত ও অন্যান্য বিভাগে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন, আবিষ্কার করেছেন মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী সঙ্গীত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ আর ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’র রচয়িতা গোবিন্দ হালদারকে।

স্বাধীন বাংলাদেশে কামাল লোহানী ‘ক্রান্তি’র পূর্বতন উদ্দাম ও কর্মযজ্ঞ ধরে রাখতে পারেননি চীনপন্থী কমিউনিস্টদের সংকট ও বিভক্তির কারণে। সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্টরা এক থাকলেও চীনপন্থীরা বাংলাদেশে বার বার বিভক্ত হয়েছেন, যার প্রভাব থেকে ‘ক্রান্তি’ মুক্ত ছিল না। কিন্তু কামাল লোহানী সব সময় এসব রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও দেউলিয়াপনার উর্ধ্বে রেখেছেন নিজেকে। ‘ক্রান্তি’র গতি মন্থর হয়েছে কিন্তু কামাল লোহানী সংগঠনের গন্ডি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গেছেন। তাঁকে আমরা স্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে যে কোন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোভাগে দেখেছি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। কর্মজীবনে কখনও তাঁকে সরকারী মালিকানাধীন পত্রিকায় কাজ করতে হয়েছে, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্বও কিছু সময় পালন করতে হয়েছে, তবে সত্য ও ন্যায়ের ক্ষেত্রে অনড় অবস্থান তাঁকে সরকারী দায়িত্বে বেশি দিন থাকতে দেয়নি।

জাহানারা ইমামের সাহিত্য জীবনের সূচনা ষাটের দশকের মাঝামাঝি হলেও রাজপথের আন্দোলনে নেমেছেন মৃত্যুর মাত্র আড়াই বছর আগে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে যে অভূতপূর্ব গণজাগরণের সূচনা করেছিলেন কামাল লোহানী প্রথম থেকে যুক্ত হয়েছেন এই আন্দোলনের সঙ্গে। মাত্র আড়াই বছর আন্দোলন পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন শহীদ জননী। তাঁর জীবদ্দশায় এই আন্দোলনকে বড় ধরনের কোন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়নি। খালেদা জিয়ার সরকার তাঁকে সহ গণআদালতের চব্বিশ জন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন বটে তবে এতে হিতে বিপরীত হয়েছে, আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে।

নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সমন্বয় কমিটির আন্দোলনে বিপর্যয়ের সূচনা হয়েছে জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর। একদিকে আন্দোলনের প্রধান শরিক রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করে জাতীয় সমন্বয় কমিটির কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ নির্মূল কমিটিকে ভাঙবার জন্য ষড়যন্ত্র করে ট্রয়ের ঘোড়া ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা উপলব্ধি করতে বেশ কিছু সময় কেটে গেছে। ভেতরের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও বাইরে থেকে আন্দোলন ভাঙার চক্রান্ত যেমন থেমে যায়নি, তেমনি জেলা থানা পর্যায়ের নেতা ও সংগঠকদের উপর তৎকালীন বিএনপি সরকার ও তাদের দোসর জামাত-শিবির চক্রের হামলা, নির্যাতন, মিথ্যা মামালা দায়ের অব্যাহত থেকেছে। ২০০১ সালে একাত্তরের ঘাতক-যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অধ্যুষিত বিএনপি-জামাতের জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শহীদ জননীর আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন বহুগুণ বেড়েছে। সুসময়ের অনেক সহযোদ্ধা দুঃসময়ে আন্দোলন থেকে সরে গেছেন নানা যুক্তি প্রদর্শন করে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সুসময় ও দুঃসময়ে আমাদের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে কামাল লোহানী সব সময় রাজপথে মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন এবং এখনও আছেন। জনসমাবেশে তাঁর তেজস্বী ভাষণ তরুণ নেতা ও কর্মীদের সব সময় উদ্দীপিত করেছে।

শহীদ জননীর মৃত্যুর পর তিনিই সম্পাদনা করেছেন জাহানারা ইমাম স্মারক গ্রন্থ, যার শিরোনাম ‘আমরা হারবো না’। এ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা বিজয়ী হলাম। কিন্তু হারালাম অযুত মুক্তিযোদ্ধা আর অগণিত প্রিয়জন। লাখো শহীদের অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম মুক্ত স্বদেশ আর প্রিয়তম স্বাধীনতা। লাল সূর্যের রক্তিম আভায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল একটি পতাকা। বিপুল প্রাণের আশ্বাসে উড়ছে সে পতাকা নিঃসীম নীলিমায়। .... ডেকে বলছে ঃ

“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী

ভয় নাই ওরে ভয় নাই

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”

কবিগুরুর কণ্ঠে উচ্চারিত এ অভয়বাণী মাগো তোমার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে। তাই আমরা তোমার অবাধ্য সন্তানরা প্রস্তুত। লাখো কোটি কণ্ঠে আওয়াজ উঠেছে ঃ “আমরা হারবো না।”

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রবর্তন করেছে ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা। প্রথম বক্তৃতা করেছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। দ্বিতীয় বক্তৃতার জন্য আমরা নির্বাচন করেছিলাম কামাল লোহানীকে।

১৯৯৭ সালের ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে প্রদত্ত তাঁর এই বক্তৃতার শিরোনাম ছিল “বীর প্রসবিনী জাহানারা ইমাম’। লিখিত এই বক্তৃতার সূচনায় তিনি বলেছেন ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটেছে আজকের এই বাংলায়। এদেশের মানুষ জীবন ও সংস্কৃতির যথার্থ প্রতিষ্ঠার অকুতোভয় লড়াইয়ে দস্যু-হার্মাদ দলকে যেভাবে অতীতে পর্যুদস্ত করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে আজও তাঁরা কখনও প্রবল পরাক্রমে কখনও হতাশাগ্রস্ত দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিরোধের মশাল হাতে ছুটে চলেছেন। কিন্তু একদিন, বাংলার মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস ভুলে গিয়ে আমরা কেমন যেন নির্জীব প্রেতাÍার মতন সবকিছু আবার সইতে শুরু করে দিয়েছিলাম। ঠিক এমনি সময় আমাদের চৈতন্যে আঘাত করলেন এক মহিয়সী নারী। রাজনৈতিক প্রগতিশীলতায় উদ্ভাসিত øেহময়ী জননী জাহানারা ইমাম। যাঁকে আমরা ডাকি ‘শহীদ জননী’ বলে। তিনি দেশমাতৃকাকে শত্র“র কবল থেকে মুক্ত করার গৌরবদীপ্ত মুক্তির লড়াইয়ে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্মম হত্যার শিকার তেজোদৃপ্ত তরুণ শহীদ রুমী’র মা। কিন্তু আজ তিনি প্রত্যয়দৃপ্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত নতুন এক লড়াইয়ের প্রধান সেনাপতি, বাংলার সকল মানুষের শহীদ জননী বীরমাতা জাহানারা ইমাম। এই ভূখণ্ডে জীবন্মৃত বাঙালি জাতিকে নতুন পথনির্দেশ করে এই মহান নেত্রী সূচনা করেছিলেন এক নতুন মুক্তিযুদ্ধের। যে যুদ্ধ জয় আমাদের আজও সম্পন্ন হয়নি এবং যে বিজয় আমাদের অনিবার্য। তাকে পূর্ণ করার প্রবল বাসনা প্রাণে পুষে জননী আমাদের ছেড়ে গেছেন কিন্তু তাঁর নির্দেশ আজও অব্যাহত। কারণ তিনি বলেছিলেন ঃ “স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির চক্র আজও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।”

‘তাই বাঙালি জাতির অংশ হিসেবে, গৌরবদীপ্ত অতীতের সংগ্রাম সংক্ষুব্ধ ইতিহাস বুকে ধারণ করে আমরা বারো কোটি মানুষ বেঁচে আছি সোনার বাংলা গড়ে শহীদ জননীর সূচিত গণআন্দোলনের সফল বিজয় স্তম্ভ রচনার নিয়ত যুদ্ধে। যতদিন আমরা এই দেশকে জামাত-শিবির, রাজাকার-আলবদর, আল শামস, ঘাতক দালালদের ঘৃণ্য চক্রান্তের রাহু থেকে মুক্ত না করতে পারবো, ততদিন লাখো শহীদের অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কণ্টকমুক্ত হবে না। তাই শহীদ জননীর সূচিত গণআন্দোলন বাংলার মানুষের প্রাণে যে স্পন্দন সৃষ্টি করেছিল, তাকে আজ আবার জাগ্রত করতে হবে। করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সৎ ও দেশপ্রেমিক জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে। গণঐক্যের দুর্ভেদ্য দূর্গ গড়ে তুলতে হবে আমাদের। তবেই বিনাশ হবে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং তবেই শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।’

এ বছর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক যুগপূর্তি উপলক্ষ্যে রচিত কামাল লোহানীর লেখার শিরোনাম ছিল ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক যুগঃ আবার ১৯ জানুয়ারিতেই সাহস দাও মাগো।’ শহীদ জননীকে উদ্দেশ্য করে এই লেখায় তিনি বর্তমান বৈরী সময়কে চিত্রিত করেছেন এভাবে 

‘জামাত বিএনপিকে নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক পরিচালনা করছে। দেশব্যাপী সংখ্যালঘু নির্যাতন, বাঙালি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করে নিজ সংস্কৃতি অর্থাৎ আরবীয় কালচার কিংবা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বুনিয়াদকে পোক্ত করার জন্য বিদেশী মৌলবাদী অপশক্তি আমদানি করে বাঙালির যা কিছু গৌরবের তাই ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে উঠেপড়ে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। এর বিরুদ্ধে এখনই যদি না রুখে দাঁড়ানো যায়, তবে ক্ষমতার দাপটে এরা বাঙালির ধনমান, শৌর্য-বীর্য সবকিছুকেই তছনছ করে দেবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন যেমন বিকৃত হচ্ছে, ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধকেই হয়তো ছিনতাই করে শতচ্ছিন্ন করে ফেলে দেবে। ইতিমধ্যেই তেমন কর্মকাণ্ড যে তারা শুরু করেনি, তা বলি কি করে? ধর্মের দোহাই দিয়ে একদিকে, অন্যদিকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলোকে জ্বালাতন, হয়রানি, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করে গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে দিচ্ছে। জনগণ ভীতসন্ত্রস্ত জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই জামাত ঘটাচ্ছে বলে সকলেই সন্দেহ করছে। ইদানীং গোলাম আযম পাকিস্তানে গিয়েছিল। পাকিস্তানে যাওয়ার পর তার আনন্দানুভূতি জানতে চাইলে বলেন, আমি যেন দেশেই আছি। আবার পাকিস্তানি জামাত নেতা জাকির হোসেনের কাছ থেকে কি যেন এক ফর্মুলা পেয়েছে, তা এবার সে বাংলাদেশে প্রয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। এদের বিরুদ্ধেই তো শহীদ জননীর মরণপণ সংগ্রাম সূচিত হয়েছিল। আজ সেই শক্তি কিন্তু আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একে প্রতিরোধ করতেই হবে। প্রতিরোধের জন্য গণঐক্য চাই। বিভেদ ভুলে গিয়ে আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। আজ আমাদের কাছে একটিই ইস্যু, পশুশক্তির বিরুদ্ধে একাট্টা হতে হবে সবাইকেই। মাগো, তাই তোমার পানে চেয়ে আজকের এই দিনে নিজেদের শক্তি একাট্টা করার সাহস খুঁজছি। তুমি আমাদের আশীর্বাদ দাও।’ (ভোরের কাগজ, ১৯ জানুয়ারি, ২০০৪)

মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলনে কামাল লোহানীর পদচারণা চল্লিশ বছরেরও বেশি। কখনও তাঁর অনেক সহযাত্রী ছিল, কখনও তিনি ছিলেন একা আন্দোলনের দীপশিখা সব সময় তাঁর হাতে অকম্পিত থেকেছে। চল্লিশ বছর আগে তাঁর ভেতর তারুণ্যের যে উদ্দীপনা ছিল সত্তর বছরে উপনীত হওয়ার পরও সে উদ্দীপনায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। আমরা যারা জাহানারা ইমামের আন্দোলনের সৈনিক তারা নিশ্চিত জানি, সহযোদ্ধা সংশপ্তক কামাল লোহানীর সততা, সাহস ও সন্দীপিত সারথ্য একদিন আমাদের পৌঁছে দেবে ইপ্সিত লক্ষ্যে।

জয়তু কামাল লোহানী। জয়তু জাহানারা ইমাম।



উৎস:

১. শাহরিয়ার কবির লেখা বিভিন্ন বই।

২. একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বিভিন্ন বই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.