![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাভারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের মাগফিরাত কামনা করছি।
৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবী সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই ১৩ই এপ্রিল উক্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে আল্লামা আহমদ শফি ১৩ দফার পুনঃবিন্যাস করেন এর মাঝে কিছু ‘যুগোপযোগী’ রদবদলও করা হয়েছে বলে বলা হযেছে, কিছু সংযোজনও করা হয়েছে। দৈনিক পূর্বকোণে এই রিপোর্টটি বিস্তারিতভাবে ছাপানো হয়েছে। যে কোন পর্যবেক্ষকের জন্য বিষয়টি অবশ্যই প্রনিধানযোগ্য। প্রশ্ন জাগে, এত আয়োজন, এত দীর্ঘ প্রস্তুতির পর যে ১৩ দফা ৬ এপ্রিল উপস্থাপন করা হয়। এর ৭ দিন পার হতে না হতেই এগুলোকে পরিবর্ধিত ও যুগোপযোগী করতে হল কেন?
সে যাই হোক, তাদের
১ নম্বর দাবী হচ্ছে,
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্যটি পুনঃস্থাপন করতে হবে। আমাদের প্রশ্ন হল, কেন পুনঃস্থাপন করতে হবে? এই লিখিত বাক্যটি পুনঃস্থাপন না করলে কি মুসলমানদের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাবে? যেসব দেশের সংবিধানে এ বাক্যটি সংযোজিত নেই সেদেশের মুসলমান কি দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলমান নাকি তাদের ঈমানের ব্যাপারে হেফাজতীদের সন্দেহ আছে? ১৪ শ বছর ধরে ক’টি দেশের ক’টি সংবিধানে এ বাক্যটি লেখা ছিল? এ বাক্যটি না থাকা সত্ত্বেও যদি মুসলমানরা ১৪শ বছর উন্নতি করে থাকে সেক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এ বাক্যটি বাংলাদেশের সংবিধানে না থাকলেও ইসলামে কোন ক্ষতি হবে না । বরং নোংরা রাজনীতির মিশ্রণের আশঙ্কা থেকে পবিত্র ইসলামকে দূরে রাখা হয়েছে বলে আমরা এ বিষয়টিকে সমর্থন করি।
ধর্ম নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে হুজুররা সমানে কথা বলে থাকেন। অথচ রাষ্ট্র পরিচালনার সময় নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ থাকার নাম ধর্ম নিরপেক্ষতা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের প্রতি সমান ও ন্যায় আচরণ করার আদেশ আল্লাহ স্বয়ং কোরআন শরীফে দান করেছেন। মদিনা সনদে সকল নাগরিকের সমান অধিকার মহানবী (দ.) নিজে সংরক্ষণ করেছেন। অতএব ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের নীতি হিসাবে অবলম্বন করা ধর্মহীনতা নয় বরং ইসলামেরই শিক্ষা।
২ নম্বর দফায় তাদের দাবী হচ্ছে,
‘আল্লাহ্, রাসূল (দ.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করতে হবে।’
ইসলাম ধর্ম কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার শিক্ষা দেয় না। বরং আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্ম-জগতের সবচেয়ে গর্হিত অপরাধ র্শিক বা প্রতিমা ও প্রতিমাপূজাকেও গালমন্দ করতে নিষেধ করেছে। যদি ধর্ম অবমাননার কথাই বলতে হয় তাহলে আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরিক করা কি ধর্ম অবমাননা নয়? একইভাবে চিন্তা করে দেখুন, একজন ইহুদী বা একজন খ্রিষ্টান বা একজন হিন্দু কেন মুসলমান হন না? এর মূল কারণ হচ্ছে, তিনি এবং তাদের সমাজ বিশ্বনবী মহানবী(দ.)-কে সত্য বলে বিশ্বাস করেন না। যদি রসূল(দ.)-কে কেউ মিথ্যা বলে মনে করে তাহলে হুজুরদের মতে এটি কি রসূল অবমাননা নয়? একইভাবে যারা ইসলাম গ্রহণ করে নি তারা এ কারণেই গ্রহণ করেনি কারণ তাদের কাছে ইসলাম গ্রহণযোগ্য কোন ধর্ম নয়। অতএব যে কোন প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এটিকে ধর্ম অবমাননা হিসাবে চালিয়ে দিতে পারে। একবার এই আইন প্রনয়ণ করা হলে কারও আর রক্ষা নাই। বুঝা গেল, দুই নম্বর দফাটি আমাদের হাজার বছরের লালিত সৌহার্দ্যপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ, সহিষ্ণু বাঙালী সমাজকে রাজনৈতিক মোল্লার হাতে জিম্মি করে দেয়ার হাতিয়ার।
আমাদের এই বক্তব্যে কেউ যেন একথা মনে না করে, আমরা বুঝি ধর্ম অবমাননাকে সমর্থন করি। নাউযুবিল্লাহ। আমরা তা কখনও সমর্থন করি না। শুধু এতটুকু বলতে চাই, যেসব বিষয় ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে সম্পর্কিত সেগুলোর সম্মান আল্লাহ নিজে প্রদান ও সংরক্ষন করেন। কেউ তার মুখের কথায় বা আচরণে মহান আল্লাহ, তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রসূল হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর মনোনীত ধর্ম ইসলামের কোন অবমাননা করতে পারে না। কেউ এই অপচেষ্টা চালালে সে নিজেই অপদস্ত ও অপমানিত হয়। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি খোলাসা করার চেষ্টা করি।। কোন পিতামাতার হতভাগা সন্তানরা যদি পিতামাতাকে গালি দেয় বা অবমাননা করে এতে পিতামাতার সম্মান মোটেও ক্ষুন্ন হয় না বরং সেই হতভাগা সন্তানরা ছোট এবং হেয় প্রতিপন্ন হয়। কথায় বলে, চাঁদে থুথু দিলে সে থুথু নিজের মুখেই পড়ে। ধর্ম অবমাননার বিষয়টিও ঠিক এরূপ।
৩ নম্বর দফা,
গণজাগরণের সংগঠক তথাকথিত নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের শাস্তি প্রসঙ্গে, এখানেও ‘আল্লাহ, রসূল, ইসলাম এবং মুসলমানদের অবমাননা’- প্রসঙ্গ টেনে তাদের শাস্তির দাবী করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ২ নম্বর দফার আলোচনায় আমরা আমাদের অভিমত নীতিগতভাবে ব্যক্ত করে দিয়েছি। শুধু বাড়তি দু’টো কথা উল্লেখ করতে চাই। কোন ব্যক্তি যদি ভুল বোঝাবুঝি বা তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আল্লাহ, রসূল(দ.) বা ইসলাম প্রসঙ্গে ভুল ধারণা পোষণ করে বা ব্যক্ত করেÑ এর চিকিৎসা কি তাকে হত্যা করা, কিংবা তাকে শাস্তি দেয়া? কখনও নয়, বরং তাকে সুপথে আমন্ত্রণ জানাতে হবে, যুক্তির মাধ্যমে উৎকৃষ্ট প্রমান উপস্থাপন করার মাধ্যমে, উত্তম আচরণের মাধ্যমে।এ প্রসংগে আল্লাহর নির্দেশ হল:
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ﴿النحل: ١٢٥﴾
‘তুমি তোমার প্রভুর মনোনীত পথের দিকে মানুষকে আহ্বান জানাও প্রজ্ঞার সাথে এবং উত্তম উপদেশ দানের মাধ্যমে।’ কই, কোথাও তো কোন খড়গ ব্যবহার করার নির্দেশ নেই? এই তথাকথিত ‘নাস্তিক’ ও ‘ধর্মদ্রোহীরা’ হেফাজতীদের কথা অনুযায়ী যদি ধর্ম ও রসূল অবমাননা করেই থাকে যা হেফাজতের ছাপানো বিজ্ঞাপন অনুযায়ী পৌনে তিন বছর পূর্বের ঘটনা, তখন এর যৌক্তিক কোন উত্তর কেন দেয়া হল না? আজ যখন শাহবাগে নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের কোণঠাসা করে ফেলেছে তখন কেন হঠাৎ করে আপনাদের ইসলাম ও রসূল অবমাননার কথা মনে পড়ল? এ প্রশ্নের উত্তর তারা কি দিবেন জানি না। তবে এ প্রশ্নের উত্তর দেশবাসী খুব ভালই জানে ।
আল্লাহ্র সমকক্ষ দাঁড় করানো ধর্মীয় দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় অপরাধ। কোরআন শরীফে আল্লাহর শরিক করার বা অবমাননা করার উদাহরণ অনেক আছে যেমন লেখা আছে,
﴿التوبة: ٣٠﴾... وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّه
...قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ﴿الكهف: ٤﴾
অর্থঃ আর ইহুদীরা বলে উযায়র আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে মসীহ আল্লাহর পুত্র।
...তারা বলে আল্লাহ পুত্র সন্তান গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু কোথাও আল্লাহ প্রতি পুত্র আরোপ করার বা তার সমকক্ষ দাঁড় করার জন্য কোন রকম জাগতিক শাস্তির বিধান দেন নি। একইভাবে কোরআনে মহানবী (সা.)-কে কাফেরদের পক্ষ থেকে যে ভাষায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো তারও অনেক উদাহরণ দেয়া আছে। যেমন লেখা আছে,
وَعَجِبُوا أَن جَاءَهُم مُّنذِرٌ مِّنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ ﴿ص: ٤﴾
وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ ﴿الحجر: ٦﴾
إِذْ يَقُولُ الظَّالِمُونَ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا رَجُلًا مَّسْحُورًا ﴿الإسراء: ٤٧﴾...
কিন্তু কোরআনের কোন স্থানে এসব অবমাননাকর কথার জন্য জাগতিক কোন শাস্তির নির্দেশ বা বিধান দেয়া হয় নি। কোরআন কি অসম্পূর্ণ বিধান যে আজ নতুন করে এমন বিধান করতে হবে? তাও আবার কোরআনের সম্মান রক্ষার্থে, আল্লাহ-রসূলের সম্মান রক্ষার্থে? যুক্তির আঘাত পাল্টা যুক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে কলমের আক্রমন প্রতিহত করতে হবে কলম দিয়ে। কলমের আক্রমন প্রতিহত করার জন্য যে দৈহিক আক্রমণ বা বলপ্রয়োগ করে সে বাস্তবে নিজের দৈন্যতাই প্রকাশ করে। আশা করি হেফাজতীরা এ বিষয়টি অনুধাবন করবেন।
৪ নম্বর দফায়
এবার তারা নারী জাতির উন্নয়নের নাম নিয়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নতুন করে উপস্থাপন করেছেন। অথচ ৬ এপ্রিল তারিখে তাদের থলের বিড়াল বেড়িয়ে গেছে। এখন তারা যতই ইনিয়ে-বিনিয়ে ব্যাখ্যা করুক না কেন তারা কি বলতে চেয়েছেন তা জাতি ৬ এপ্রিল তারিখে দেখেছে ও শুনেছে। ইসলাম একটি ইতিবাচক জীবন ব্যবস্থা। নারী জাতিকে অন্ধকার থেকে তুলে সম্মানের স্থানে বসিয়েছে ইসলাম। অতএব দেশীয় আইন করে জোর করে, নারীদের পর্দা করানো-এটা ইসলামী শিক্ষা নয়। এবার তাদের বোধদয় হয়েছে। এবার তারা ৪র্থ দফায় এজন্যে‘উদ্বুদ্ধকরণ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। মনে রাখবেন, ‘উদ্বুদ্ধকরণ’ আইন করেও হয় না রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগেও হয় না। হয় ভেতরের পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে। আর এর জন্য চাই পবিত্রকরণ শক্তি। পবিত্রকরণ শক্তি ছাড়া কাউকে পবিত্র করা যায় না। তাই আমি আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানাই, পবিত্রতা অর্জন ও পবিত্রতা বিস্তারের বিষয়ে মনোযোগী হন। তারা কি নিজেরা পবিত্র? তাহলে তাদের সংস্পর্শে যারা আসবে তারা পবিত্র হবে, তাদের আদর্শ মত চলবে। কিন্তু যেহেতু তাদের মধ্যে পবিত্রতার নেই তাই তাদের ওয়াজ-নসিহত কোন কাজে আসে না, আর তাই তাদের দরকার রাষ্ট্রীয় আইন।
এখানে এদের একটি বাক্য লক্ষনীয়, ‘কাজেই হিজাব পালন করে, অথবা যৌন উদ্দীপনা তৈরি করে না এমন শোভনীয় পোশাক পরে নারীরা নিরাপদে কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে বা ঘর থেকে বের হতে কোন বাধা নেই।’ এরপর তারা বলেছেন, ‘নারীদের আলাদা কর্মক্ষেত্র তৈরির দাবীতে আপত্তি তোলার যুক্তি থাকতে পারে না।’ তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন হল, ‘যৌন উদ্দীপনা তৈরি করে না এমন পোশাক’ দয়া করে প্রথমে নির্ধারণ করুন। ‘নারীদের জন্য আলাদা কর্মক্ষেত্র’ তৈরির দাবী বলতে তারা কি বলতে চেয়েছেন দয়া করে ব্যাখ্যা করে বলুন। আমাদের এ কথার উদ্দেশ্য হল, কয়েকদিন ধরে তারা যে বিশ্লেষণ দিচ্ছেন তাতে অনেক সরলমনা মানুষ মনে করছে নারী বিরোধী অবস্থান থেকে এরা সরে এসেছে। কিন্তু আমরা তাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়ে দেখেছি তাতে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার হয়েছে যেগুলো ঘুরে ফিরে নারীদের কোণঠাসা করারই নামান্তর বলে প্রতিয়মান হয়।
৫ নম্বর দফায়
জাতীয় নারী-নীতি ও শিক্ষা-নীতির ইসলাম বিরোধী ধারা বিলুপ্ত করার দাবী করা হয়েছে।Ñ তাদের কাছে আবেদন, দয়া করে পরিষ্কার করে বলুন, সেই ধারাগুলো কি কি? নারী-নীতি ও শিক্ষা-নীতির কোন কোন ধারাগুলো তাদের দৃষ্টিতে ইসলাম বিরোধী তা জনগণের সামনে প্রকাশ্যে খুলে বলুন। আবার তারা ধর্মীয় শিক্ষাকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার দাবী করেছেন। যেহেতু একটি মুসলমান পরিবারের সন্তানরা নিজ নিজ গন্ডিতে কোন না কোনভাবে কিছু না কিছু ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেই থাকে, এজন্য এ বিষয়টিকে আবশ্যক করার কোন কারণ নেই। যার ইচ্ছা, ধর্মীয় বিষয়কে আবশ্যক হিসাবে নিতে পারে বা অন্য কোন বিষয় নিয়েও পড়তে পারে।
৬ নম্বর দফা,
‘ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের নামে শিরক সংস্কৃতিসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে প্রথম কথা হল, বাঙালী সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি নয় এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে যেসব জিনিষ শিরক বা খোদার অংশিবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়েছে সেটিকে হঠাৎ করে শিরকী সংস্কৃতি বলা নোংরা রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়। বুখারী শরীফের শুরুতেই রয়েছে বিখ্যাত হাদীস, ইন্নামাল আ’মালু বিন্নিয়্যাত। মূর্তি মানেই শিরকের উপকরণ নয়। হযরত আয়শা (রা.)-এর ঘরে খেলনার ঘোড়ার ছোট মূর্তি রাখা ছিল। কই রসূল (সা.) তো নিষেধ করেন নি। এই ছোট পুতুল বা মূর্তি পূজার জন্য ছিল না বরং খেলার জন্য ছিল। তাই রসূল (সা.) নিষেধ করেন নি। একইভাবে যেসব ভাস্কর্য সৌন্দর্য চর্চা ও রূচিশীলতার পরিচয় বা ঐতিহাসিক কোন ঘটনার স্মৃতিফলক হিসাবে স্থাপিত হয় তা ইসলামী শিক্ষানুযায়ী নিষিদ্ধ নয়।
আগুন প্রজ্জ্বলন মাত্রই যদি শিরক হয় তাহলে মক্কা বিজয়ের আগের রাতে মহানবী (সা.) মুসলিম সেনাদলের প্রত্যেক তাবুর সামনে আগুন জ্বলাতে বলেছিলেন কেন? পূজা দেয়ার উদ্দেশ্যে? (নাউযুবিল্লাহ)। নিশ্চয় নয়।
৭ নম্বর দফা
প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হল, দাড়ি টুপি ওয়ালারা যদি নিজেদের আচার আচরণ সুন্দর ও আদর্শ আকর্ষণীয় করে দেখান তাহলে গণ-মাধ্যমেও সেগুলো সেভাবে প্রতিফলিত হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে দাড়ি টুপির আড়ালে রাজাকার আলবদরের ঘৃণ্য কার্যক্রম দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলা সাংস্কৃতিক মহলে ও গণমাধ্যমে দাড়ি টুপি একটি নেতিবাচক চরিত্রের পরিচায়ক। এ কলঙ্ক দূর করতে হলে প্রকৃত ধর্মসেবীদের অনেক পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সাথে তাদের দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে দাড়ি টুপির নেতিবাচক যে স্মৃতি জাতি লালন করছে তা মোছা সম্ভব হবে।
৮ নম্বর দফা,
মুসলমানদের যে কোন মসজিদে যাবার ও নামায আদায়ে পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে হিফাজতিদের দাবীর সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু মসজিদে নামায আদায়ের বাহানায় কোন সন্ত্রাসী যদি মসজিদকে অবলম্বন করে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় সেক্ষেত্রে মসজিদের একটি ফটক বন্ধ করে নয় বরং একাধিক ফটক বন্ধ করে পাহারা বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকার কর্তৃপক্ষের বা সরকারের আছে। এক্ষেত্রে ১৯৭৯ সালে পবিত্র মসজিদে হারামকে একদল সন্ত্রাসী কর্তৃক দখল করে সেখানে অবস্থান গ্রহণের প্রেক্ষিতে রায়তুল্লাহ শরীফকে পুনরুদ্ধারে সৌদী সরকারের ভূমিকা সবার জানা। মসজিদ পুনরুদ্ধারের জন্য সৌদী সরকারকে হেরেম শরীফের ভেতরে সন্ত্রাসীদের গুলি করে, বোমা মেরে হত্যা করতে হয়েছে। তখন আপনারা হিফাজতিরা নীরব ছিলেন। মসজিদ আল্লাহ্র ঘর, এর পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য। মসজিদে নোংরা রাজনীতি, কূটনীতি, মিছিল-আন্দোলন, ককটেল, বোমা, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা শোভা পায় না। একই কথা মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৯ নম্বর দফা,
‘দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ঈমান ও দেশ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত এনজিও ও খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তরকরণসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।’Ñএ বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। এনজিও এবং খ্রিষ্টানরা নিজ নিজ গন্ডিতে যে কাজ করেন এর সাথে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখন্ডতার কি দ্বন্দ দয়া করে বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন। নাকি তারা এদেরকে বিদেশী এজেন্ট মনে করেন। ধর্মান্তরিত হবার স্বাধীনতা কি বিবেকবান মানুষের নেই? নাকি জোর করে মানুষকে কোন বিশ্বাসে আটকে রাখা যায়? কোরআন শরীফের ‘লা ইকরাহা ফিদ্বীন’-এর বিধান কি মুসলমানদের সন্তানদের ইহুদী মতবাদে, ইহুদী বিশ্বাসে গড়ে ওঠার প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয় নি? তাহলে খ্রিস্টানরাও যদি বলে কেউ খ্রিস্টান তেকে মুসলমান হলে তাকে কতল করা হবে- তাহলে তো কোন খ্রিস্টানকে আমরা আর মুসলমান বানাতে পারবো না। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতি হবে ইসলামেরই। এই হেফাজতি মোল্লারা হয়তো খ্রিস্টানদের পরামর্শেই এই আত্মঘাতি দাবী করছে।
১০ম দফা,
কাদিয়ানীদের বিষয়ে তাদের দাবী হল, এদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে, এদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।’ এই কাদিয়ানীরা বাংলার মাটিতে আজ থেকে ১০০বছর আগে জামাত প্রতিষ্ঠা করে। এ বছর বাংলার মাটিতে তারা তাদের প্রতিষ্ঠা শতবার্ষিকী পালন করেছে। খুব সম্ভব এ কারণেই আপনাদের কারো কারো মনে হিংসা ও ঈর্ষা জেগে উঠেছে। তা না হলে কলেমা পাঠকারী একদল মানুষকে “সরকারী কাফের” বানানোর আন্দোলনে নামার কারণ কি? বলি, ৪২বছর আগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হত্যাকান্ডের মত জঘন্য অপরাধ যদি আপনাদের দৃষ্টিতে তামাদি হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে ১০০ বছর পুরোনো একটি কাহিনি কাদিয়ানী প্রসঙ্গ আপনারা বার বার তুলে আনেন কেন? শত বছর পুরোনো একটি জামাতকে আক্রমণের লক্ষ্যস্থল না বানালেই কি নয়? আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। এরপর অন্য প্রসঙ্গ।
এ সরকার আহমদীয়া মুসলিম জামাতকে কাফের ঘোষণা করবে কীভাবে? এ সরকার বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আস্তিক-নাস্তিক সকলের সম্মিলিত ভোটে নির্বাচিত এবং মুসলিম-অমুসলিম সকলের সমন্বয়ে গঠিত। অতএব এ কাজটি বর্তমান সরকারকে দিয়ে হবে না। হ্যাঁ নির্বাচনি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন সাধন করে ইসলামের বিষয়ে কর্তৃত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেক্ষেত্রে তাদেরকে বলে দেখা যেতে পারে। তাই হেফাজত বা অন্য যারাই এ দাবী করছে তাদের উচিত হবে, ইসলামী রাষ্ট্র (মুসলিম রাষ্ট্র নয়) প্রতিষ্ঠার ম্যন্ডেট নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে এসে এসব কর্ম করা। যদি তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান করতে চায় আর দুই তৃতীয়াংশ ভোটার এ বিষয়ে তাদের ভোট দেয় তাহলে তা হতে পারে।
১১ নম্বর দফা,
রসূল প্রেমিক ও ধার্মিক খোদাভীরু আলেমের বিরুদ্ধে, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণের কারণে কেউ নিপীড়ন চালাক তা আমরাও চাই না। এটা কারও কাম্য হতে পারে না। কিন্তু ধর্মের ধ্বজাধারী সেজে ধর্মের ছদ্বাবরণে সরলমনা নিরীহ মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং তাদেরকে রাজপথে নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা ধার্মিকতার লক্ষণ নয়। এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যে কোন সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।
১২ নম্বর দফা,
আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা যদি নির্দোষ হন তাহলে তারা ছাড়া পেয়ে যাবেন আর তারা যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা মোটেও ইসলাম বিরোধী নয়।
১৩ নম্বর দফায়
আপনারা বাংলাদেশকে নতুন একটি সম্প্রদায় উপহার দিচ্ছেন আর সেটা হলো ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়। আপনারা চাতুরতার সাথে বাংলাদেশকে ধর্মীয় ভিত্তিতে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু দু’ভাগে বিভক্ত করতে চাইছেন। অথচ বাংলাদেশ ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীন হয়েছিল। তাই ধর্মীয় আঙ্গিকে এদেশে কোন ‘সংখ্যালঘু’ বা ‘সংখ্যাগুরু’ নাই, থাকতে পারে না। আপনারা সুচতুরভাবে সেই বিভক্তিই সৃষ্টি করার কৌশল অবলম্বন করেছেন। সবারই দাবী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। কিন্তু আপনারা ‘সংখ্যালঘুদের’ অধিকার দাবী করে কেবল রাজনৈতিকভাবে ‘হিরো’ সাজার চেষ্টা করছেন। তবে আপনাদের এ চালাকি এদেশের মানুষ বুঝে গেছে। এদেশে ‘সংখ্যালঘু’ তারা যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আর এদেশে ‘সংখ্যাগুরু’ তারা যারা স্বাধীনতার পক্ষে। অতএব হিফাজতিদেরকে সংখ্যাগুরুদের সমর্থনে নিজেদের অবস্থান গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ‘উচিত বিচার’ নিশ্চিত করার আন্দোলনে একাত্ম হবার আহবান করছি।
সরকারের কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই চক্রের ফাঁদে পা দিবেন না। একবার এই চোরাবালিতে যে দেশ বা যারা পা দিয়েছে তারা আর নিস্তার পায় নি। এদের তের দফা মানলে বাংলাদেশের বারটা নয় নির্ঘাত তেরটা বেজে যাবে। মহান আল্লাহ্ বাস্তবতা উপলব্ধি করার সৌভাগ্য দিন, আমীন। সংবাদ সম্মেলন এখানেই শেষ করছি। সকলকে ধন্যবাদ।
২| ১৩ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৩
মুর্তজা হাসান খালিদ বলেছেন: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু বিশেষণে বিভেদটা আসলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা করে থাকে তাদের ভোটের রাজনীতির ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে, যদি তারা কোনোভাবে নির্যাতিত হয় তাহলে তাদেরকে হাইলাইট করা হয় সংখ্যালঘু হিসেবে। আমার পোস্টটি পড়ে দেখার অনুরোধ করছি
৩| ১৩ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৭
দায়িত্ববান নাগরিক বলেছেন: পড়লাম। খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারের নতুন করে ফাদে পা দেয়ার আর কোনো সুযোগ নাই।
৪| ১৩ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩০
মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভাল বিশ্লেষণ
৫| ১৩ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৯
মুহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান শরীফ বলেছেন: ১৩ দফা নিয়ে যে যার ইচ্ছা মত ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে আরো কেউ নতুন ব্যাখ্যা দিবে হয়ত।
৬| ১৩ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৩
মাইন রানা বলেছেন: যে যার মত ব্যাখ্যা দিচ্ছে !!!!
মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের সাথে যে হাজার হাজার আলেম ওলামা আছে তারা কিচ্ছু জানে না।
অধুনিক প্রগতিশীলরাই সব জানে!! তারাই ইসলাম বিশেষজ্ঞ
৭| ১৩ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯
রুবেল১৯৮৭ বলেছেন: ভাই আলেমরা তো আপনের আমার মতো BLOG বুঝেনা। তাই তারা এসে কোন ব্যাখ্যা দিবেনা।
আমার দেওয়া লেখাটি আলেমদের সাথে কথা বলে লেখ।
৮| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৯
মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: ভাদরা ভাদর মতই বলে...
নিজেই নিজের সুবিধা বাদি যুক্তি...
১নং এবং ২য় যুক্তি পরস্পর বিরোধি..
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:১৭
বাঙ্গাল৭১ বলেছেন: ভাল লেখা