নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামের দৃষ্টিতে পর্যালোচনাঃ জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার আছে কি?

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:০০

শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন এখন শহর ছাড়িয়ে, গ্রাম তথা পুরো বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙালিকে আন্দোলিত করছে। বেস্নাগারদের ঘোষিত সকল কর্মসূচি পালিত হচ্ছে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শহীদ ব্লোগার রাজীবের বাসায় গিয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘‘বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার অধিকার নেই’’। প্রথমেই দেখা যাক, ইসলামে কি ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ চাইতে নিষেধ করেছে? না তা হারাম ঘোষণা করেছে? ইসলাম ছাড়াও পৃথিবীর যত সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় আইন আছে (এমনকি প্রথিবীর প্রাচীন শাসক ব্যাবিলনের ‘হাম্বুরাববী’র আইনেও) কোন আইনেই ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ করতে নিষেধ করেনি। বর্তমানকালে, মধ্যযুগে, এমনকি ইসলামের প্রাথমিক যুগেও মুসলমানদের সাথে নন-মুসলিমদের যত যুদ্ধ হয়েছে, জয়লাভের পর মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত কাউকে ‘নিঃশর্তে ক্ষমা’ করা হয়নি, কেবল শর্তের বিনিময়েই ক্ষমা করা হয়েছে। আজকের আলোচ্য প্রবন্ধে দেখার চেষ্টা করবো, নবী মুহম্মদ (স.) এর সময়ে নবী তথা ইসলামের বিরোধীতাকারী দলগুলোর সঙ্গে বিজয়ের পর নবীর আচরণ কি ছিল? তাহলেই বাঙালি জাতির কাছে সুষ্পষ্ট হবে একাত্তরে পরাজয়ের পর জামায়াতের সঙ্গে এ জাতির করণীয় কি? ধরা যাক, নবীর একটি দল যার নাম ইসলাম, যা ন্যায় ও সত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত ছিল। অপরপক্ষে ঐ সময় আরব এলাকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচয় ছিল নিম্নরূপ।



মক্কার ক্ষমতাসীন কুরাইশদের প্রধান দেবতা ছিল ‘উজজা’ ও ‘হুবল’ । তায়েফের কাছাকাছি মন্দিরে স্থাপিত ছিল ‘লাত’-দেবীর মূর্তি। ইয়ামেনের হিমার গোত্র ও বাইরাইনের মানুষ ছিল ‘সূর্যপূজক’। কেনানা গোত্র ‘চন্দ্রপূজা’ করতো। বনী তামিম গোত্র ‘দুররান’ দেবতার পূজক ছিল। কায়েস গোত্র ‘উতারুন’ নক্ষত্রের ও নজমের, জুযাম গোত্র ‘মুশতরী’ নক্ষত্রের উপাসনা করতো। তায়েফের ছাকীফ গোত্র ‘লাতদেবীর’, মদীনার আওছ, খাযরছ ও গাস্সান গোত্র ‘মানাত’ দেবীর, দুমাতুল জান্দালের কলন গোত্র ‘ওয়াব্দ দেবতার’, হুযাইল গোত্র ‘ছুওয়া’ দেবতার, মযহজ গোত্র ‘ইয়াগোছ’ দেবতার, মাহদান গোত্র ‘ইয়াউক’ দেবতার উপাসক ছিল। ‘মানাত’কে কাদীদ নামক স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল। আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকের মানাতের নামে ‘বলিদান’ করতো। দাওমাতুল জান্দালের ‘ওয়ান্দ’ ছিল কালব গোত্রের দেবমূর্তি, ‘সুয়া’ ছিল হুয়াউল গোত্রের দেবমূর্তি, জাউফের ‘ইয়াগুস’ ছিল মুরাদ ও বানি গাতিফের দেবমূর্তি, ‘ইয়াউক’ ছিল হামদান গোত্রের দেবমূর্তি, ‘নাস’ ছিল যুলকালা গোত্রের হিমইয়ার শাখার দেবমূর্তি, তামিম গোত্র ছিল পার্সী তথা ‘অগ্নি উপাসক’। ঐ গোত্র প্রধান জারারা তামিমী পার্সী ধর্ম অনুসারে নিজ কন্যাকে বিয়ে করেছিলো, দাউস গোত্র ‘যুলখালাসা মূর্তির পূজা করতো (বুখারী-৬৬১৭, ৪৫৫১)। কিন্তু মক্কা বিজয় তথা নবীর নেতৃত্বে ইসলাম নামক রাজনৈতিক দলটির বিজয়ের পর উপরোক্ত বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসক গোত্রগুলোকে ইসলাম তথা নবী এই শর্তে ক্ষমা করেন যে, তারা তাদের পূর্বতন ধর্ম ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা ত্যাগ করে, ইসলাম তথা সত্য গ্রহণ করবে এবং ইসলামী চেতনায় আরবে বসবাস করবে। অপর দিকে নাজরান ও ফিদকের ইহুদীরা ইসলাম গ্রহণ না করায় তাদেরকে আরব ভূমি থেকে বহিস্কার করা হয় (দাউদ-৩০২৪)। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী হওয়ায় নবী ইবনে খাত্তালকে (আবদুল উযযা/আবদুলস্নাহ আবু বারযা) কাবার গেলাফ ধরা অবস্থায় হত্যার নির্দেশ দেন (দাউদ-২৬৭৬)। মক্কা বিজয়ের দিন কুরাইশ নেতারা কা’বাঘরে জীবন রক্ষার্থে এসে নবীর কাছে বায়াত নেন (দাউদ-৩০১৪)। নবী কিন্তু কুরাইশদের এ শর্তে ক্ষমা করেননি, যে তারা কাবাঘরের নেতা থাকবে এবং লাত, উজ্জা দেবীর পূজা আগের মতোই করবে, বরং তাদের পূর্বতন চিন্তাধারা ত্যাগ করে নবীর সৎ চিন্তাধারায় সণাত হবে। আবার, ইসলাম গ্রহণের পর উকল গোত্রের ৮-লোক তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে নবীর সম্মতিতে একটি উটের পালের সঙ্গে বসবাস শুরু করলো। উটের দুধ ও মূত্রপানে স্বাস্থ্য উন্নতির পর রাখালকে হত্যা করে তারা উটগুলো নিয়ে পালালে, নবী তাদেরকে পাকড়াও করে, তাদের হাত-পা কেটে, গরম লৌহ শলাকা চোখে বিদ্ধ করে, মরুভূমিতে ফেলে রাখার নির্দেশ দিলেন, সেখানে ঐ অবস্থায় তারা পানির অভাবে মাটি চাটতে চাটতে মৃত্যুবরণ করলো (বোখারী-২৭৯৬)। এ ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ করার পরও কৃত অপরাধের জন্য নবী উকল গোত্রের লোকদের শাসিত্ম দেন। মক্কা বিজয়ের দিন গোয়েন্দাগিরি করতে এসে গ্রেফতারের পর আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করে [যার ছেলে মুয়াবিয়া ও নাতি ইয়াজিদ] (বুখারী-৩৯৪৫)। এ ক্ষেত্রে আবু সুফিয়ান গংরা তাদের পূর্ববর্তী চিন্তাধারা ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপরও আবু সুয়িান কুরাইশদের একজন বড় নেতা হওয়া সত্বেও নবীর আমলে মূলত ক্ষমতাহীনই ছিল। মুসায়লামা তার অসৎ পথ ত্যাগ করে নবীর পথ গ্রহণ না করার কারণে তাকেও হত্যা করা হয় (বুখারী-৩৭৬৭)।



মক্কা বিজয়ের পর নবী (সঃ) তাদেরকেই ক্ষমা করেছেন, যারা তাদের প্রচলিত বাপ-দাদার পুরণো ধর্মমত, রাজনীতি ও সামাজিক রীতিনীতেকে ছেড়ে নবী (স.) এর নতুন ধর্ম ইসলাম ও তঁার রাজনীততে দীক্ষেত হয়েছেন তাদের। এ ক্ষেত্রে যদি কাফেররা বলতো যে, ‘ঠিক আছে আমরা আমাদের প্রাচীন বাপ-দাদার ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতি আগের মতই মেলে চলবো, আমাদের ক্ষমা করা হোক’, তবে কি নবী (স.) তাদেরকে ক্ষমা করতেন? অবশ্যই না। সেই যুক্তিতে জামাতী রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরা কেবল এই শর্তে ক্ষমা চাইতে পারতো যে, তারা আর তাদের আগের দল (জামায়াত) তথা পাকিসত্মানী রাজনীতি করবে না, বরং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে তারা বাংলাদেশে বসবাস করতে চায় ও ক্ষমা চাইছে তাদের ঘৃণ্য কৃতকর্মের জন্যে। তাহলে বাংলাদেশে তাদের মর্যদা হতো আবু সুফিয়ানের মতো ২য় শ্রেণির কিন্তু জামায়াত এখন পর্যন্ত তা করেনি অর্থাৎ বাংলাদেশে ২য় শ্রেণির নাগরিক হওয়ার অধিকারও অর্জন করেনি।



পৃথিবীর সব যুদ্ধের ইতিহাসে দেখা গেছে, যুদ্ধে পরাজিত সব প্রতিপক্ষ মৃত্যুদন্ড বা অন্য কোন শাস্তি পেয়েছে বিজয়ী দল কর্তৃক কিন্তু সব ‘সম্ভবের এই অদ্ভুৎ বাংলাদেশে’ কোন দন্ড ভোগ না করেই যুদ্ধাপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এতোদিন, এমনকি তাদের মানবতা বিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতিরও বিচার চাওয়াও অপরাধ ছিল এই বাংলাদেশে (উদাহরণ রাজদ্রোহী মামলার আসামীগণ)। একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকর, দুর্নীতিমুক্ত ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বিভাজনহীন সেক্যুলার বাংলাদেশ দরকার আমাদের। যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান হওয়া উচিত মানবতা বিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধের বিচার। ইসলাম যাকে পূর্ণ সমর্থন করে, যার বেশ কয়েকটি উদাহরণ উপরে দেয়া হলো। সে দৃষ্টিতে শাহবাগের নতুন প্রজন্মের আন্দোলনকে সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান যেমন প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য, তেমন কর্তব্য প্রত্যেকটি বাঙালির। কারণ ইসলামেই বলা হয়েছে, ‘‘দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ, যার দেশপ্রেম নেই তার ঈমান নেই’’। সে ক্ষেত্রে জামায়াত-রাজাকারের দেশপ্রেম না থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে নন-জামাত, নন-রাজাকারদের কি ঈমান থাকবে না এই বাংলাদেশে? এবং তা যে আছে তার প্রমাণ তারা দিয়ে যাচ্ছে অব্যাহত দিন-রাত ২৪-ঘণ্টা ধরে শাহবাগ চৌরাস্তায়। যে রাস্তার প্রবেশপথে একটি বোর্ড লাগানো হয়েছে, ‘‘স্বাধীনতার নতুন প্রজন্মের মহাসড়ক নির্মাণের জন্য রাসত্মা সাময়িকভাবে বন্ধ’’। আমরা নতুন চেতনার মহাসড়কের নির্মাণ কাজের প্রত্যাশায় দিন গুণছি! সূর্যালোকের আর কতদূর!



শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন এখন শহর ছাড়িয়ে, গ্রাম তথা পুরো বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙালিকে আন্দোলিত করছে। বেস্নাগারদের ঘোষিত সকল কর্মসূচি পালিত হচ্ছে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শহীদ ব্লোগার রাজীবের বাসায় গিয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘‘বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার অধিকার নেই’’। প্রথমেই দেখা যাক, ইসলামে কি ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ চাইতে নিষেধ করেছে? না তা হারাম ঘোষণা করেছে? ইসলাম ছাড়াও পৃথিবীর যত সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় আইন আছে (এমনকি প্রথিবীর প্রাচীন শাসক ব্যাবিলনের ‘হাম্বুরাববী’র আইনেও) কোন আইনেই ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ করতে নিষেধ করেনি। বর্তমানকালে, মধ্যযুগে, এমনকি ইসলামের প্রাথমিক যুগেও মুসলমানদের সাথে নন-মুসলিমদের যত যুদ্ধ হয়েছে, জয়লাভের পর মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত কাউকে ‘নিঃশর্তে ক্ষমা’ করা হয়নি, কেবল শর্তের বিনিময়েই ক্ষমা করা হয়েছে। আজকের আলোচ্য প্রবন্ধে দেখার চেষ্টা করবো, নবী মুহম্মদ (স.) এর সময়ে নবী তথা ইসলামের বিরোধীতাকারী দলগুলোর সঙ্গে বিজয়ের পর নবীর আচরণ কি ছিল? তাহলেই বাঙালি জাতির কাছে সুষ্পষ্ট হবে একাত্তরে পরাজয়ের পর জামায়াতের সঙ্গে এ জাতির করণীয় কি? ধরা যাক, নবীর একটি দল যার নাম ইসলাম, যা ন্যায় ও সত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত ছিল। অপরপক্ষে ঐ সময় আরব এলাকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচয় ছিল নিম্নরূপ।



মক্কার ক্ষমতাসীন কুরাইশদের প্রধান দেবতা ছিল ‘উজজা’ ও ‘হুবল’ । তায়েফের কাছাকাছি মন্দিরে স্থাপিত ছিল ‘লাত’-দেবীর মূর্তি। ইয়ামেনের হিমার গোত্র ও বাইরাইনের মানুষ ছিল ‘সূর্যপূজক’। কেনানা গোত্র ‘চন্দ্রপূজা’ করতো। বনী তামিম গোত্র ‘দুররান’ দেবতার পূজক ছিল। কায়েস গোত্র ‘উতারুন’ নক্ষত্রের ও নজমের, জুযাম গোত্র ‘মুশতরী’ নক্ষত্রের উপাসনা করতো। তায়েফের ছাকীফ গোত্র ‘লাতদেবীর’, মদীনার আওছ, খাযরছ ও গাস্সান গোত্র ‘মানাত’ দেবীর, দুমাতুল জান্দালের কলন গোত্র ‘ওয়াব্দ দেবতার’, হুযাইল গোত্র ‘ছুওয়া’ দেবতার, মযহজ গোত্র ‘ইয়াগোছ’ দেবতার, মাহদান গোত্র ‘ইয়াউক’ দেবতার উপাসক ছিল। ‘মানাত’কে কাদীদ নামক স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল। আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকের মানাতের নামে ‘বলিদান’ করতো। দাওমাতুল জান্দালের ‘ওয়ান্দ’ ছিল কালব গোত্রের দেবমূর্তি, ‘সুয়া’ ছিল হুয়াউল গোত্রের দেবমূর্তি, জাউফের ‘ইয়াগুস’ ছিল মুরাদ ও বানি গাতিফের দেবমূর্তি, ‘ইয়াউক’ ছিল হামদান গোত্রের দেবমূর্তি, ‘নাস’ ছিল যুলকালা গোত্রের হিমইয়ার শাখার দেবমূর্তি, তামিম গোত্র ছিল পার্সী তথা ‘অগ্নি উপাসক’। ঐ গোত্র প্রধান জারারা তামিমী পার্সী ধর্ম অনুসারে নিজ কন্যাকে বিয়ে করেছিলো, দাউস গোত্র ‘যুলখালাসা মূর্তির পূজা করতো (বুখারী-৬৬১৭, ৪৫৫১)। কিন্তু মক্কা বিজয় তথা নবীর নেতৃত্বে ইসলাম নামক রাজনৈতিক দলটির বিজয়ের পর উপরোক্ত বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসক গোত্রগুলোকে ইসলাম তথা নবী এই শর্তে ক্ষমা করেন যে, তারা তাদের পূর্বতন ধর্ম ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা ত্যাগ করে, ইসলাম তথা সত্য গ্রহণ করবে এবং ইসলামী চেতনায় আরবে বসবাস করবে। অপর দিকে নাজরান ও ফিদকের ইহুদীরা ইসলাম গ্রহণ না করায় তাদেরকে আরব ভূমি থেকে বহিস্কার করা হয় (দাউদ-৩০২৪)। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী হওয়ায় নবী ইবনে খাত্তালকে (আবদুল উযযা/আবদুলস্নাহ আবু বারযা) কাবার গেলাফ ধরা অবস্থায় হত্যার নির্দেশ দেন (দাউদ-২৬৭৬)। মক্কা বিজয়ের দিন কুরাইশ নেতারা কা’বাঘরে জীবন রক্ষার্থে এসে নবীর কাছে বায়াত নেন (দাউদ-৩০১৪)। নবী কিন্তু কুরাইশদের এ শর্তে ক্ষমা করেননি, যে তারা কাবাঘরের নেতা থাকবে এবং লাত, উজ্জা দেবীর পূজা আগের মতোই করবে, বরং তাদের পূর্বতন চিন্তাধারা ত্যাগ করে নবীর সৎ চিন্তাধারায় সণাত হবে। আবার, ইসলাম গ্রহণের পর উকল গোত্রের ৮-লোক তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে নবীর সম্মতিতে একটি উটের পালের সঙ্গে বসবাস শুরু করলো। উটের দুধ ও মূত্রপানে স্বাস্থ্য উন্নতির পর রাখালকে হত্যা করে তারা উটগুলো নিয়ে পালালে, নবী তাদেরকে পাকড়াও করে, তাদের হাত-পা কেটে, গরম লৌহ শলাকা চোখে বিদ্ধ করে, মরুভূমিতে ফেলে রাখার নির্দেশ দিলেন, সেখানে ঐ অবস্থায় তারা পানির অভাবে মাটি চাটতে চাটতে মৃত্যুবরণ করলো (বোখারী-২৭৯৬)। এ ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ করার পরও কৃত অপরাধের জন্য নবী উকল গোত্রের লোকদের শাসিত্ম দেন। মক্কা বিজয়ের দিন গোয়েন্দাগিরি করতে এসে গ্রেফতারের পর আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করে [যার ছেলে মুয়াবিয়া ও নাতি ইয়াজিদ] (বুখারী-৩৯৪৫)। এ ক্ষেত্রে আবু সুফিয়ান গংরা তাদের পূর্ববর্তী চিন্তাধারা ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপরও আবু সুয়িান কুরাইশদের একজন বড় নেতা হওয়া সত্বেও নবীর আমলে মূলত ক্ষমতাহীনই ছিল। মুসায়লামা তার অসৎ পথ ত্যাগ করে নবীর পথ গ্রহণ না করার কারণে তাকেও হত্যা করা হয় (বুখারী-৩৭৬৭)।



মক্কা বিজয়ের পর নবী (সঃ) তাদেরকেই ক্ষমা করেছেন, যারা তাদের প্রচলিত বাপ-দাদার পুরণো ধর্মমত, রাজনীতি ও সামাজিক রীতিনীতেকে ছেড়ে নবী (স.) এর নতুন ধর্ম ইসলাম ও তঁার রাজনীততে দীক্ষেত হয়েছেন তাদের। এ ক্ষেত্রে যদি কাফেররা বলতো যে, ‘ঠিক আছে আমরা আমাদের প্রাচীন বাপ-দাদার ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতি আগের মতই মেলে চলবো, আমাদের ক্ষমা করা হোক’, তবে কি নবী (স.) তাদেরকে ক্ষমা করতেন? অবশ্যই না। সেই যুক্তিতে জামাতী রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরা কেবল এই শর্তে ক্ষমা চাইতে পারতো যে, তারা আর তাদের আগের দল (জামায়াত) তথা পাকিসত্মানী রাজনীতি করবে না, বরং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে তারা বাংলাদেশে বসবাস করতে চায় ও ক্ষমা চাইছে তাদের ঘৃণ্য কৃতকর্মের জন্যে। তাহলে বাংলাদেশে তাদের মর্যদা হতো আবু সুফিয়ানের মতো ২য় শ্রেণির কিন্তু জামায়াত এখন পর্যন্ত তা করেনি অর্থাৎ বাংলাদেশে ২য় শ্রেণির নাগরিক হওয়ার অধিকারও অর্জন করেনি।



পৃথিবীর সব যুদ্ধের ইতিহাসে দেখা গেছে, যুদ্ধে পরাজিত সব প্রতিপক্ষ মৃত্যুদন্ড বা অন্য কোন শাস্তি পেয়েছে বিজয়ী দল কর্তৃক কিন্তু সব ‘সম্ভবের এই অদ্ভুৎ বাংলাদেশে’ কোন দন্ড ভোগ না করেই যুদ্ধাপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এতোদিন, এমনকি তাদের মানবতা বিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতিরও বিচার চাওয়াও অপরাধ ছিল এই বাংলাদেশে (উদাহরণ রাজদ্রোহী মামলার আসামীগণ)। একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকর, দুর্নীতিমুক্ত ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বিভাজনহীন সেক্যুলার বাংলাদেশ দরকার আমাদের। যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান হওয়া উচিত মানবতা বিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধের বিচার। ইসলাম যাকে পূর্ণ সমর্থন করে, যার বেশ কয়েকটি উদাহরণ উপরে দেয়া হলো। সে দৃষ্টিতে শাহবাগের নতুন প্রজন্মের আন্দোলনকে সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান যেমন প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য, তেমন কর্তব্য প্রত্যেকটি বাঙালির। কারণ ইসলামেই বলা হয়েছে, ‘‘দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ, যার দেশপ্রেম নেই তার ঈমান নেই’’। সে ক্ষেত্রে জামায়াত-রাজাকারের দেশপ্রেম না থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে নন-জামাত, নন-রাজাকারদের কি ঈমান থাকবে না এই বাংলাদেশে? এবং তা যে আছে তার প্রমাণ তারা দিয়ে যাচ্ছে অব্যাহত দিন-রাত ২৪-ঘণ্টা ধরে শাহবাগ চৌরাস্তায়। যে রাস্তার প্রবেশপথে একটি বোর্ড লাগানো হয়েছে, ‘‘স্বাধীনতার নতুন প্রজন্মের মহাসড়ক নির্মাণের জন্য রাসত্মা সাময়িকভাবে বন্ধ’’। আমরা নতুন চেতনার মহাসড়কের নির্মাণ কাজের প্রত্যাশায় দিন গুণছি! সূর্যালোকের আর কতদূর!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১৯

বুড়া শাহরীয়ার বলেছেন: বুখারী-৬৬১৭, ৪৫৫১
দাউদ-৩০২৪
দাউদ-২৬৭৬
দাউদ-৩০১৪
বোখারী-২৭৯৬

ভাই এই গুলার মানে কি?
রেফেরেন্স দিলে অনলাইন রেফেরেন্স দিলে ভাল হই......আজাইরা এই ধরনের রেফেরেন্স এর কনো মানে নাই।

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১২

কি বোর্ড বলেছেন: বুখারী-৬৬১৭, ৪৫৫১
দাউদ-৩০২৪
দাউদ-২৬৭৬
দাউদ-৩০১৪
বোখারী-২৭৯
ভাই এই গুলার মানে কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.