নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ, গণজাগরণ মঞ্চের দর্পণ

০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৫১

সত্যিকারের জন-মানুষের মনের একেবারে গভীরতম প্রদেশ থেকে উত্থিত যুদ্ধপরাধীদের প্রত্যাশিত ফাঁসির দাবীতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ৪র্থ দিন পেরিয়ে গেল। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে ট্রাইবুনালের যে রায় তার বিরুদ্ধে সর্বশ্রেণির মানুষের যে পুঞ্জিভুত ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিল ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩র বিকেলে, সারাদেশ আজ সে দাবীর সাথে একাত্ততা পোষণ করে রাজপথে নেমে এসেছে। যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির রায়, মূলত সকলেরই প্রত্যাশিত চাওয়া। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ গণমানুষের চেতনার এ চাওয়াকে ধারণ করেই ৪র্থ দিবস-রজনী অতিক্রম করলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হিসেবে আমরা অনেকেই রাজপথে এসে স্লোগান দিচ্ছি, আন্দোলনের সাথে একাত্ততা পোষণ করছি, শাহবাগে আসতে না পারার কারণে ঘরে বসে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গণজাগরণ মঞ্চের কাভারেজ দেখছি এবং আকুন্ঠ সমর্থন দিচ্ছি। নানাজনে নানাভাবে আলোচনা করছি, বিশ্লেষণ করছি এর সম্ভাব্য পরিনতি।আনন্দে উদ্বেলিত হচ্ছি, কখনও কষ্ট পাচ্ছি, কখনও বা হচ্ছি শিহরিত । কখনও কাঙ্খিত অর্জন দেখে খুশী হচ্ছি, আবার কখনও তা না পেয়ে নানান পরামর্শমূলক মন্তব্য করছি । সবই ঠিক আছে। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যারা একটানা দিবস-রজনী এই মঞ্চকে পরিচালনা করে যাচ্ছেন তাদের কি অবস্থা হচ্ছে? আমাদের স্লোগান কন্যাগুলির কি অবস্থা? এখন পর্যন্ত তারাতো সংখ্যায় খুব বেশী না।

আমরা যারা একেবারে প্রথম থেকেই এটির সাথে যুক্ত আছি অর্থাৎ শুরু থেকেই যারা এই প্রতিবাদের যায়গাটিকে সংগঠিত করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখছি তাদের অবস্থাটা কি সেটাও একবার ভেবে দেখা দরকার। আমি সেই ৫ই ফেব্রুয়ারী দুপুর থেকে আছি। ঐ দিন সাড়ে তিনটায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী ছিল বলে জানিয়েছিল যুদ্ধপরাধ বিচার মঞ্চের সমন্বয়ক খালেদুর রবমান শাকিল। খবর পেয়ে ওখানে চলে যাই। সেখানে ডা. ইমরানকে না দেখে তার সাথে ফোনে কথা বলি, সে আমাকে শাহবাগে চলে আসতে বলে। ততক্ষণে প্রেস ক্লাবের সামনে অনেক লোক জমে গেছে। আমি দ্রুত আমার বক্তব্য শেষ করে রিক্সায় শাহবাগে চলে আসি। সেই থেকেই আছি। এভাবে আছেন আরো অনেকেই।

আমি আমার গতকালের অভিজ্ঞতার সামান্য একটু বর্ণনা দিচ্ছি। রাত তখন প্রায় আটটা বাজে। একটা গ্রুপের বেশ কয়েকজন ক্রমাগত স্লোগান দিয়ে চলেছে। কথা বলে জানলাম তখনও তাদের দুপুরের খাওয়া হয়নি। অগত্যা তাদের খাবার ব্যবস্থা করলাম। এদের কেউ কেউ আমার সন্তানসম। জিজ্ঞেস করলাম, বাসায় যাওনি। কয়েকজন মেয়ে বলল, এখানে আসার পরে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। যদিও বাসায় কিছু না বলেই চলে এসেছি। চারদিনধরে এখানেই আছি। জরুরি প্রয়োজনে হলে চলে যাচ্ছি, ওখানে যারা পরিচিত আছে তারাও আছে আমাদের সাথে। মিলে মিশে আছি আর কি।

আলাপ করে জানলাম, রাত্রে একজনের পিঠে আরেকজন হেলান দিয়ে বসে বসেই জণজাগরণ মঞ্চের রাজপথে রাত পার করে দিচ্ছে। কারো মোবাইলেই চার্জ নাই। পকেটেও টাকা নেই। গোসল করার অবসর নেই। এক কাপড়েই চলছে। কারো দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। প্রত্যেকের চেহারায়ই ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ঠ। অথচ মনের জোর আকাশ চুম্বি। শরীরের কোন দূর্বলতা স্লোগানের উপরে প্রভাব ফেলছে না।

খাওয়া-দাওয়ার কি ব্যাবস্থা করেছ জিজ্ঞেস করতে বলল, আপনারমতো কোন সিনিয়রা জিজ্ঞেস করে যখন আমাদের অবস্থাটা ফিল করে তখন কিছুটা হেল্প করে। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোন কোন ব্যক্তি বা সংস্থা মাঝে মধ্যে একটু-আধটু খাবার নিয়ে আসে। নিজেদের মধ্যে যার কাছে যা আছে তা দিয়ে চালিয়ে নেই। তবে কোনটিই নিয়মিত নয়, এমনকি যেভাবে খাদ্য-খাবারের ব্যবস্থা চলছে তাকে অনিয়মিতও বলা যাবে না, বলা যায় মাঝেমধ্যে খাই। স্লোগানের পর স্লোগান দিয়ে যাচ্ছি, সে অর্থে খাওয়া-দাওয়া প্রায় হচ্ছেই না। অনেকটা অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে। এভাবেই চলছে। অথচ আমি খেয়াল করলাম, তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনার একটুও কমতি নেই। ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছে, গাচ্ছে গণসঙ্গীত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গান, পথ-নাটক করছে, সাথে আরো কতকি? মনের গভীরের সুপ্ত চেতনার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলেছে জাতিকে চাঙ্গা করার দীপ্ত প্রয়াসে।

কিন্তু কতক্ষণ পারা যায়? একটানা ওরা আর কত পারবে? ওদেরওতো শরীর!! ওদেরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে, ভাবতে হবে সমগ্র বিবেকবান মানুষকেই। ওদের এ উৎসাহকে ধরে রাখার জন্য করণীয় সবকিছুই করতে হবে। যারযার অবস্থান থেকে সে সে ভাবুন কি করা যায়। আমি বিষয়টি আন্তরীকভাবে বিবেচনা করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকলকে বিনীত অনুরোধ করছি।

আমি একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট, তাও প্রথম সারির নয়, একেবারে তলানীর দিকের। আমার আর্থিক সঙ্গতি তেমন নেই যা দিয়ে এদেরকে বড় আকারের সহযোগিতা করতে পারি। পরিচিত যারা আছেন তাদের মাধ্যমে চেষ্টা করছি আমার সামর্থ অনুযায়ি সহযোগিতা করার। গত পরষু একটি সংস্থার প্রধানকে বলে গতকাল থেকে সমাবেশের আশেপাশে ৪টি মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করেছি। এতে সমাবেশে আগত নারী-পুরুষদের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকেও দু’টি মোবাইল টয়লেট দেওয়া হয়েছে। নিজের কাছে টাকা-পয়সা যা ছিল তা প্রায় শেষ করে এখন বন্ধুদেরকাছে হাত পাতছি এবং অনুরোধ করছি তারাও যেন কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে। আমারমতো স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এভাবে অনেকেই করছেন, অনেকে বরং অনেক বেশী বেশীই করছেন। নইলেতো এ সমাবেশ এভাবে টিকে থাকার কথা নয়। যারা এ সমাবেশটি পরিচালনা করছেন তাদের কষ্ট ও প্রয়োজনের কথা ভেবে অনেকেই এভাবে মনের তাড়নায় এগিয়ে এসেছেন।

গণজাগরণ মঞ্চের জন্য গতকাল আরো কয়েকটি নতুন স্লোগান দিয়ে এসেছি, দিয়েছেন আরো অনেকেই। আজ থেকে লক্ষ কন্ঠে সেগুলো সমাবেশে উচ্চারিত হবে। স্লোগানগুলিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চে পাঠিয়েছি তাদের অনুরোধে, তারা এগুলো তাদের সমাবেশে প্রয়োজন অনুযায়ি ব্যবহার করছে।

যে কয়েকজনের আর্টিস্টিক স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠছে সমগ্র সমাবেশ, কাঁপছে টিভির রুপালী পর্দা এবং তা ধনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে কাঁপিয়ে তুলছে সমগ্র জাতির বিবেক; সেই স্লোগানের লীডে থাকা লাকি ও সুমনার যে কি অবস্থা তা বলে বোঝানো যাবে না। সুমনা কথা বলতে পারছে না। তার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না, গলা ভেঙ্গে ব্যাথায় একাকার। এই চারদিন-রাত সে ওখানেই আছে। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে, তারপরেও মনে এতোটুকু ক্লান্তি নেই। ব্যস্ততার ফাঁকে সুমনাকে পেয়ে গেছি বলে তার কথা এখানে বলতে পারছি। অন্যদের অবস্থা হয়তো আরো খারাপ, আমার সাথে দেখা হয়নি বলে তাদের সম্পর্কে বলতেও পারছি না।

দুঘন্টারও বেশী সময় পাশাপাশি বসে আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলাম, সুমনার সাথে। বহুবার বললাম, তোমার কথা বলার দরকার নেই, ভোকাল রেষ্ট দাও। বার বার তার একই উত্তর কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। বললাম তুমি ও তোমরা অসুস্থ হয়ে গেলে চলবে কিভাবে? বলল, অসুস্থ হলেও জীবনতো থাকবে, জীবন থাকলে স্লোগানও চলবে। তার মনের জোরের কাছে আমার সহমর্মিতা পরাজিত হল। গতকাল মধ্য রাত্রের পরে আমি যখন বাসায় ফিরি তখন সে তার সতীর্থদের সাথে ওখানে কিভাবে রাত কাটাবে সে প্ল্যান করছে।

মেয়েদের কতো কি শারিরীক বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে, এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে ওরা কি করবে তা ভেবে স্বস্থি পাচ্ছি না। কিভাবে ওদেরকে সাপোর্ট করা যায় সে বিষয়টি যদি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে মাথায় রেখে ও সম্মান করে কেউ একটু আগুয়ান হন, তাহলে ভাল হয় কিনা তাও বুঝতে পারছিনা। ওদের যে কেউ, যে কোন সময় অসুস্থও হয়ে যেতে পারে, তখন বিশেষ ধরণের মেডিকেল সাপোর্ট নিশ্চিত করা দরকার। ওদের সাথে যদি কেউ যোগাযোগ করতে চান তাহলে গণজাগরণ মঞ্চে যেতে হবে, কারণ ওদের অধিকাংশের মোবাইলেই চার্জ নেই, এজন্য বাইরে থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের স্লোগানের মধ্যে রিংটোন বা ভাইব্রেশন কোনটাই শোনা সম্ভব নয়। উপস্থিত হয়ে স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে কত মানুষ স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে আজ রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে এই প্রজন্ম চত্বরে জড় হয়েছে।

সবশেষে আমি যেটুকু বলে প্রথম পর্বের সমাপ্তি টানতে চাই তা হলো, একাত্তরে যেভাবে বাবা-মা তাদের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন, এখন সেভাবে ওদেরকেও সহযোগিতা করুন। এটা আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ। আপনার সন্তান শাহবাগে ইতিহাস সৃষ্টি করছে, ওদেরকে এ ইতিহাস লিখতে দিন। ওরা যে প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করে বা চকিুরী করে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান যেন ওদের এ অনুপস্থিকে যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে সম্মান দেখায় সেটি নিশ্চিত করুন। তা না হলে ওদের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। যদি তা না-ও হয় তাহলে এর জন্য এখানের অংশগ্রহণকারীরা পরে দুর্ভোগ পোহাতে পারে। কেন তা পোহাবে? নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সমগ্র জাতির বিবেককে চলমান রাখার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে যারা পরিশ্রম করে চলেছে, এতোটুকু ইরেগুলারিটির জন্য কেন তারা পরে বিব্রত হবে? জাতির বৃহত্তর মুক্তির স্বার্থে কসাই কাদেরের বিচারের রায় রিভিউ হওয়াটা যেমন জরুরি, ওদের ব্যক্তি জীবনের জন্য এই সামান্য বিষয়টুকুও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সংশ্লিষ্ঠ সবার প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, ওদের জন্য যথাযথ বিকল্প সুযোগের ব্যবস্থা করুন, যাতে ওরা আরো বেশী উৎসাহিত হয়।



এ আন্দোলন আমাদের, এ দাবী গণমানুষের। জেগেছে নতুন প্রজন্ম। বিজয় সুর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবে না। বিজয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা। (৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)।



বিষয়: অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক হন, স্বপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে কিভাবে কাজে লাগাবেন সেটা ভাবুন

৬ষ্ঠ দিনে প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে শহরতলীর সীমানা ছাড়িয়ে শ্যামল বাংলার নিভৃত জনপদে। নব প্রজন্ম আজ উত্তাল আবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। স্কুলে-স্কুলে, কলেজে-কলেজে সমস্ত ছাত্রসমাজ আজ যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে সোচ্চার। ইংরেজী মাধ্যমে পড়া যে সন্তানটিকে মা ভাত মাখিয়ে খাইয়ে না দিলে খেতে পারে না, সে ছেলেটিও আজ রাজপথে। আজ তার মাথায়ও ‘যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই’ লেখা ব্যানার।সেও আজ স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে তুলছে গণজাগরণের প্রজন্ম চত্বর। স্বাধীনতা যুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্তির দৃপ্ত শপথের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত আজ নব প্রজন্ম। যে মা তার ছেলেকে মিছিলে না যাওয়ার দোহাই দিয়েছে, সেই মা নিজেই আজ ছেলেকে নিয়ে রাজপথে। একটাই দাবী; ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই।

শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। একাত্তরে পরাজিত ঐ সমস্ত রক্তচোষা হায়নার দল আবারও নেমেছে ষড়যন্ত্রে। ষড়যন্ত্র পরিচালনার জন্য এই খুনী, ধর্ষকেরা ভয়ে ভীত হয়ে রাজপথ ছেড়ে বেছে নিয়েছে সাইবার জগৎ। খুলেছে অনেক লিঙ্ক, ছদ্মবেশে ঢুকে গেছে আমাদের অনেক লিঙ্কে। ভালমানুষির ছদ্মবেশে, যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির স্বপক্ষে থাকার ভান করে রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, বাসে বসা পাশের লোকটিকে টার্গেট করে নিস্পাপ আলাপের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে ছড়িয়ে দিচ্ছে নানান নেতিবাচক মন্তব্য। আপনারা সতর্ক থাকুন। এ মিথ্যাচার তাদের পুরোনো কৌশল। একাত্তরে জনগণ তাদের মিথ্যাচারের জাল ছিন্নকরে বেরিয়ে এসেছিল। আজও বেরিয়ে আসবে।

গতকাল পঞ্চম দিনে গণজাগরণ মঞ্চে আরো নতুন কিছু স্লোগান যুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি ছিল এমন;

* ‘জামাতে ইসলাম – মেড ইন পাকিস্তান’

* ‘একাত্তরের প্রেতাত্বা – পাকিস্তানে ফিরে যা’

* ‘আমি মুক্তি – তুই রাজাকার

আমি মানুষ – তুই জানোয়ার’

* ‘বাশের লাঠি তৈরী করো – জামাত শিবির ধোলাই করো’

* ‘রসি ধরে দেব টান – ফাঁসি দিয়ে নেব জান’

* ‘র তে রেটিনা – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’

* ‘রস্বই তে ইসলামী ব্যংক – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’

* ‘ফ তে ফোকাস কোচিং – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’

* ‘রস্বই তে ইবনেসিনা – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’… ইত্যাদি।

এরমধ্যে কয়েকটি স্লোগান আগে উচ্চারিত হলেও গতকাল তার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়া বিশেষ করে কিছু বিদেশী মিডিয়া যুদ্ধপরাধীদের তল্পিবাহকেরমতো কাজ করছে। এগুলোর ব্যপারে সজাগ থাকুন। উল্লেখযোগ্য ভূয়া খবরের মধ্যে কয়েকটি হলো;

- গণজাগরণ মঞ্চে আসা এক মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ধর্ষণ করেছে ছাত্র লীগের ছেলেরা,

- এ সমস্ত ওলামাদের (রাজাকারদের) বিরুদ্ধে ফাঁসির মহড়া দিতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে গণজাগরণ মঞ্চে একজনের মৃত্যু হয়েছে,

- সমন্বয়কারী ইমরান এইচ সরকার আওয়ামীলীগের নাটক মঞ্চস্থ করছে, এ মঞ্চ আওয়ামীলীগের সাজানো নাটক…ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে কাজ করাতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চ দেশের মানুষের ইমোশনকে এক করে সংগঠিত করছে, চর্চার মাধ্যমে সে ইমোশনকে আরো ধারালো করছে, কিন্তু এ মঞ্চ নিজে নিজেই আইন সংশোধন করতে পারবে না, খুনীদের ফাঁসি দিতে পারবে না। রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে এনে তাকে দিয়েই এই কাজটি করাতে হবে। কে সেই রাজনৈতিক শক্তি সেটি খুঁজে বের করতে ভুল করলে আবারও আমাদের অর্জন আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হবো। আমাদের কাজে ও কথায় সেই রাজনৈতিক শক্তিকে যেন ছোট না করে ফেলি সেদিকে সতর্ক হতে হবে। এটা ঠিক যে, প্রত্যাশিত সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলি আমাদের অনেক প্রত্যাশাই পুরণ করতে পারেনি, তাদের প্রতি আমাদের অনেক ক্ষোভ আছে, অনুরাগ আছে, বিরাগ আছে। তার পরেও সেটির মাধ্যমেই কাজটি করতে হবে। অতি ইমোশনাল হয়ে যেন আমরা সকলকে মঞ্চত্যাগ না করাই। প্লিজ, বিষয়টিকে যৌক্তিকভাবে ভাবেন। সাফল্য ঘরে তোলার জন্য যাদের সম্ভাব্য সমর্থন প্রয়োজন, গণজাগরণ মঞ্চে তাদের প্রবেশের দরজা খোলা রাখার বিষয়ে আমরা যেন কৌশুলী হই।



এ আন্দোলন আমাদের, এ আন্দোলন গণমানুষের, এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তির, বিজয় আমাদের হবেই। (১০ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)























বিষয়: সাবধান, কারো কারো অতিবিপ্লবীতা মঞ্চের ক্ষতির কারণ হতে পারে।



প্রজন্ম চত্তর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ৭ম দিন অতিক্রান্ত হলো। মঞ্চের উত্তাপে আজ উত্তপ্ত সমগ্র জাতি। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেমন ইট-কাদা-বালি-কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে সানন্দে ২১ শে ফেব্রুয়ারী পালন করে শহীদদের প্রতি শদ্ধা পালন ও ঘাতকদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে, আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেভাবে রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে জনরোষের দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছে। সারা দেশের রাজপথ, মেঠোপথ আজ স্বেচ্ছাক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের দখলে। এ ক্ষোভ রাজাকারদের বিরেুদ্ধে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবীতে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে। শ্যামল বাংলার আকাশ বাতাসের ইথারে আজ একটাই স্লোগান ধনিত প্রতিধনিত, ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই’। নিষিদ্ধ চাই, নিষিদ্ধ চাই, আইন করে নিষিদ্ধ চাই, জামাত শিবিরের রাজনীতি।



বিগত বিয়াল্লিশ বছর ধরে আগ্নেয়গিরির বদ্ধ ও উত্তপ্ত লাভার মতো যে ক্ষোভ সমগ্র জাতির বিবেককে খামচে ধরে কুরে কুরে পুড়াচ্ছিল, সে আত্মবিক্ষেবের সম্মিলিত প্রতিফলন এ গণজাগরণ মঞ্চ, যার প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া আজ সমগ্র দেশের আকাশে, বাতাসে, অন্তরীক্ষে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত। জন-মানুষের অন্তরের সুপ্ত প্রত্যাশার কাঙ্খিত বাস্তবায়ন আজ সময়ের অপেক্ষা। বিভিন্ন মিডিয়ায় আপনারা সেটি প্রত্যক্ষ করেছেন। মহান জাতীয় সংসদ এ প্রত্যাশা ও দাবীর সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ দাবী বাস্তবায়নের সকল প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ঠ সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন।



আমার লেখার দ্বিতীয় পর্বে আমি বলেছিলাম যে, গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে কাজ করাতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চ দেশের মানুষের ইমোশনকে এক করে সংগঠিত করছে, চর্চার মাধ্যমে সে ইমোশনকে আরো ধারালো করছে কিন্তু এ মঞ্চ নিজে নিজেই আইন সংশোধন করতে পারবে না, খুনীদের ফাঁসি দিতে পারবে না। রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে এনে তাকে দিয়েই এই কাজটি করাতে হবে। কে সেই রাজনৈতিক শক্তি সেটি খুঁজে বের করতে ভুল করলে আবারও আমাদের অর্জন আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হবো। আমাদের কাজে ও কথায় সেই রাজনৈতিক শক্তিকে যেন ছোট না করে ফেলি সেদিকে খুব সতর্ক হতে হবে। এটা ঠিক যে, প্রত্যাশিত সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলি আমাদের অনেক প্রত্যাশাই পুরণ করতে পারেনি, তাদের প্রতি আমাদের অনেক ক্ষোভ আছে, অনুরাগ আছে, বিরাগ আছে। তার পরেও সেটির মাধ্যমেই কাজটি করতে হবে। অতি ইমোশনাল হয়ে যেন আমরা সকলকে মঞ্চত্যাগ না করাই।সাফল্য ঘরে তোলার জন্য যাদের সম্ভাব্য সমর্থন প্রযোজন তাদের দরজা খোলা রাখার বিষয়ে আমরা যেন কৌশুলী হই। সেটি আবারও আমি জোর দিয়ে বলছি। কারো কারো অতিবিপ্লবীতা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কৌশুলী হওয়া মানে পরাজয় নয়, কার্যউদ্ধারে সহমত পোষণ করা মানে আপোস নয়।



আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, গণজাগরণ মঞ্চ সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। কারো অপ্রোয়জনীয় অতি-উচ্ছাসের আধিক্য যেন আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ না করতে পারে সে বিষয়ে মঞ্চ পরিচালনা কারীরা অত্যন্ত সচেতন। রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে থেকে জনমানুষের অভ্যন্তরীন চেতনাকে ধারণ করে কাঙ্খিত সেই রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা পুরণে গণজাগরণ মঞ্চ বদ্ধ পরিকর।



রাজনৈতিক বৃত্তের ছায়াতলে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা কোন অতি-প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি বা গোষ্ঠি অথবা হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এ ধরণের অরাজনৈতিক কোন অপশক্তির ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চ অত্যান্ত সচেতন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকেও যারা এ মঞ্চে এসেছেন বা মঞ্চের সাথে একাত্ততা পোষণ করেছেন তারা তাদের রাজনৈতিক পরিচয়কে পিছনে রেখে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে, সাধারণ মানুষ হিসেবেই আসছেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়টি এখানে মুখ্য নয়। তারাও মানুষ। এখানে কারো কোন বিভেদ নেই, নেই কোন প্রতিযোগিতা, এটি স্বতস্ফুর্ত মানুষের প্রত্যাশা পুরণের স্বতস্ফুর্ত মঞ্চ।



স্লোগানকন্যা লাকিকে যে আঘাত করেছে সে কোনভাবেই কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট কোন ব্যক্তি হতে পারে না। অন্ততঃ যে সমস্ত দল বা দলের প্রতিনিধিরা সংহতি প্রকাশ করতে এসেছেন তারাতো নয়ই। এটি ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ছদ্মবেশী কোন ব্যক্তির কুচক্রি অপকর্ম। তবে যে-ই করুক না কেন তাকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যপারে মঞ্চকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং মঞ্চ সেটি করবে। লাকি শুধু একটি নাম নয়, লাকি একটি প্রতীক।লাকির মতো আরো যে সমস্ত স্লোগানকন্যা যেমন রিনা, সুস্মিতা, বর্ষা, শোভা, সুমনা আছেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও মঞ্চকে সচেতন থাকতে হবে। ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তি যে কোন সময়ে অপঘাত হানতে পারে।



গতকাল গণজাগরণ মঞ্চের সংযোজন ছিল ঝাড়ু মিছিল। হাজার হাজার মানুষের ঝাড়ৃ মিছিল। যুদ্ধপরাধীদের ধিক্কার জানাতে আসা সাধারণ মানুষের এ মিছিলটি ছিল ঘৃনা প্রকাশের নতুন সংযোজন। আগেও এটি হয়েছে তবে গতকাল এর প্রকাশটি ছিল ব্যপক। এটি গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজন করেনি। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এটি আয়োজন করেছেন এবং সংহতি জানাতে মঞ্চে চলে এসেছেন।



মঞ্চের চারিদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল। আনাচে-কানাচে সর্বত্র উপচে পড়া প্রতিবাদী মানুষ। উপস্থিত জনতার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উত্তোলন এবং ফাঁসির দাবীর পক্ষে সম্মিলিত কন্ঠে গগনবিদারী ‘হ্যাঁ’ বোধক স্বীকৃতির মাধ্যমে যুদ্ধপরাধীদের প্রতীকি ফাঁসির বিষয়টি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। প্রতীকি হলেও লাখো জনতা করতালি দিয়ে স্বাগতম জানিয়েছেন ফাঁসির এ মহড়া।



ষড়যন্ত্র থেমে নেই। চিহ্নিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল মরিয়া হয়ে নেমেছে এ ষড়যন্ত্রে। তারা তাদের দলীয় সভা-সমাবেশে, মিডিয়ায় যেমন মঞ্চ বিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তেমনি চালিয়ে যাচ্ছেন সাইবার জগতে। কৌশলটি পুরোনো। যদিও তাদের এ অপকৌশল মানুষ ধরে ফেলেছে, তার পরেও সাবধানের মার নেই। এদের ব্যপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। চোখ খোলা রাখুন।



রাজপথ হোক আমাদের শান্ত নীড়ে ফেরার প্রতিবাদী মঞ্চ। গণমানুষের এ দাবী পূরণ হবেই। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১১ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয়: গণজাগরণ মঞ্চের পাশে গেলে গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। নিজের মধ্যেই শুরু হয় শুদ্ধি চর্চা

টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া

ফাঁসির দাবী দেশ জুড়িয়া।।

ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই

রাজাকারের ফাঁসি চাই।।



প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ৯ম দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। আগের চেয়েও মঞ্চের উত্তাপে সমভাবে উত্তপ্ত আজ সমগ্র জাতি। বাংলার আকাশে বাতাসে আজ একটাই স্লোগান ধনিত প্রতিধনিত, ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’।

মঞ্চকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি অভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন। এ পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেতনাধারী পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। তবে এরা প্রচলিত মূল ধারার রাজনীতির বাইরের মানুষ। এখানে কোন রাজনীতিবিদদের রাখা হয়নি। গোপনীয়তার স্বার্থে আমি এ উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন তাদের নাম প্রকাশ করছি না। প্রথম থেকে যে সমস্ত স্লোগানকন্যাগণ স্লোগানে স্লোগানে মঞ্চ মুখরিত করে চলেছেন তাদের উপরে চাপ কমানোর জন্য সমমনা ও আগ্রহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের প্রত্যেকটি থেকে ৪ জন করে সদস্য নিয়ে একটি স্লোগান প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এটি একটি কার্যকরী সিদ্ধান্ত।

গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে তথ্যকেন্দ্র গঠন করা হয়েছে এবং সেটি পুরোদমে কাজ করে চলেছে। এখানে বেশ কয়েকটি ল্যাপটপসহ অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। সমমনা ওয়েভ লিঙ্ক ও বিরুদ্ধ লিঙ্কগুলির যতটা তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে তথ্যকেন্দ্র থেকে সেগুলি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তা ঘোষণা করা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটির ডকুমেন্টেশনের বিষয়টিও জরুরি। তথ্যকেন্দ্র সে কাজটি করে যাচ্ছে।



স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে গণজাগরণ মঞ্চ চিকিৎসাকেন্দ্র। বেশ কয়েকজন ডাক্তার সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে কাজ করে চলেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোন সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেণ, সেটি বিবেচনায় রেখেই স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় এগিয়ে এসেছেন চিকিৎসক সমাজে।

বেশ কয়েকটি জায়ান্ট স্ক্রীনে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামান্যচিত্র, গান ও মুভি দেখানো হচ্ছে। গঠিত হয়েছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির স্বপক্ষে এবং জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। সেখানে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী।কিছু কিছু স্বেচ্ছাবেক পানি পানের বুব্যবস্থা করেছেন।

প্রতিনিয়তই আসছে নতুন নতুন স্লোগান। স্যপোটাজের বিষয়টি বারবার উচ্চারিত হয়েছে মঞ্চে। স্যপোটাজের বিষয়ে প্রজন্ম চত্বরসহ সারাদেশে অবস্থিত স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদী গণজাগরণ মঞ্চকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

উপচে পড়ছে মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষ। প্রথমদিকে মহাসমাবেশে যত মানুষ হয়েছিল এখন স্বাভাবিকভাবেই সার্বক্ষণিক স্বতস্ফুর্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশী।

গণজাগরণ মঞ্চের পাশে গেলে গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। নিজের মধ্যেই শুরু হয় শুদ্ধি চর্চা। রাজাকারদের ফাঁসি দিয়ে সমাজকে কলুষমুক্ত করার জন্য এ চর্চা বড় জরুরি। সাথে থাকুন। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : ঘরে বাইরে প্রতিরোধ জামাত-শিবির অবরোধ

‘ফাঁসি চাই’ ফাঁসি চাই, ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ১৩ম দিন অতিক্রান্ত হল। সেই প্রথম থেকেই মঞ্চের উত্তাপে উত্তপ্ত সমগ্র জাতি। ক্রমান্বয়ে তা আরো বাড়ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

মঞ্চকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করার জন্য আরো কিছু নতুন ইনিশিয়েটিভ নেওয়া হয়েছে। বর্জব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যেই মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

জনতা স্ব উদ্দোগে মোবাইল টয়লেটগুলির নতুন নামকরণ করেছে । নামগুলি মাঝে-মধ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে। গতকাল কয়েকটি নাম ছিল এমন; কাদের মোল্লা শৌচাগার, সাকা গু খানা, নিজামি গণ শৌচাগার, সাইদী টয়লেট, গো.আজম শৌচাগার। গণজাগরণে আগত জনতা যাতে সহজে মোবাইল টয়লেটগুলি খুঁজে পায় সে জন্য বিভিন্ন যায়গায় এ্যরো দিয়ে ইন্ডিকেটর দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে ‘গো.আজম গু খানা এই দিকে’।

উঁইপোকার পাখা গজায় মরিবার তরে। জামাত-শিবির অস্তিত্ত সঙ্কটে পড়ে এখন তাদের শেষ কামড় দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টেষ্ট ব্যসিসে তারা ঝটিকা আক্রমনের মহড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আক্রমনের দ্বারা চুড়ান্ত কামড় দেবার চর্চা করছে বলে গণজাগরণ মঞ্চে আগত জনতা আলাপ করছিলেন। তারা বলছিলেন, ঝটিকা আক্রমনের সময়ে ধরা পড়া জামাত-শিবিরের জানোয়ারেরা থানা থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে বা কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করা দরকার। মোবাইল কোর্ট চালু করে সাথে সাথে এদের জেলে দিয়ে দেওয়া উচিৎ বলে মতামত দিয়েছেন অনেকে।

মানুষের মধ্যে যে প্রবল মানষিক শক্তি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় বৃষ্টি হলেও গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মানুষ নড়বে না, হয়তো সাময়িকভাবে কিছুক্ষণ অবস্থানের জন্য আশেপাশের কোথাও যেতে পারেন মাত্র। তবে এতো মানুষের দাড়াবার যায়গা পাওয়া মুষকিল। সে কারণে বৃষ্টি হলে, বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থানরত জনতা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। রোদ্রের তীব্রতাও দিন দিন বাড়ছে এ অবস্থায় শাহবাগে রেইন প্রোটেক্টেড শেড দেওয়া দরকার। নুন্যতম পক্ষে ছাতা সরবরাহ করাটা জরুরি। সমর্থবান কেউ যদি বিষয়টির সমাধানকল্পে এগিয়ে আসেন তাহলে খুব ভাল হয়। এ বিষয়ে আমি সকলকে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

আজ যখন আমি এই লেখাটি লিখছি তখন প্রজন্ম চত্বর, গণজাগরণ মঞ্চের ১৩ম দিন চলছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাত-শিবির তাদের চরিত্রসুলভ জ্বালাও-পোড়াও ঘৃন্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু দিন থেকেই। এ অপশক্তিকে প্রতিরোধের জন্য জনগণের উচিৎ হবে ঘরে ঘরে জামাত-শিবির প্রতিরোধ-দুর্গ গড়ে তোলা। জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা পুলিশের তাড়া খেয়ে কোথাও লুকালে যেন সেগুলিরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এরা দেশদ্রোহী, আপনার আমার চিহ্নিত শত্রু। অনেক জায়গাতেই বীর জনতা এ সাহসিকাতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের সাহস অন্যদেরকেও অনুপ্রাণীত করছে।

কয়েকটি নতুন স্লোগান:

টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া

ফাঁসির দাবী দেশ জুড়িয়া ।।



ঘরে বাইরে প্রতিরোধ

জামাত-শিবির অবরোধ।।



কই পালাবি-কই পালাবি

জনতারই ধোলাই খাবি।।



বীর জনতা ক্ষেপেছে

জামাত-শিবির পেদাইছে।।



আমি মুক্তি – তুই রাজাকার

আমি মানুষ – তুই জানোয়ার।।



জামাত-শিবিরের পিকেটার

মোবাইল কোর্টে জেলে ভর।।



শাহবাগের ডাক এসেছে-

সব সাথীরে খবর দে।

সারা বাংলা ঘেরাও করে-

রাজাকারদের কবর দে।।



গণজাগরণ মঞ্চ জনগণের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন। সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এ আন্দোলনে জনগণের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : ফ্যানাটিক জামাত-শিবির গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে, রাজপথে নামুন ওদের প্রতিরোধ করুন



গণজাগরণ মঞ্চের আজ ১৪তম দিন। রক্ত-চোষক জামাত-শিবির তাদের স্ব-সজ্ঞায়িত ‘ইসলাম’ নিয়ে মাঠে নেমেছে। ওরা আল্লা-নবীর ইসলাম নয়, জামায়াতে ইসলাম নামক এক হিংস্র সমাজ কায়েম করে তাকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেবার লড়াইয়ে ইসলামী বেশে মাঠে নেমেছে ঐ হয়েনার দল। সমগ্র দেশেই ওরা ধ্বংস-তান্ডব চালানোর চেষ্টা করছে। জনসমর্থন না থাকায় সেটি করতে পারছে না। কোথাও কোথাও ওরা আশপাশ থেকে ওদের অশুরীয় শক্তিগুলিকে জড় করে একত্রে সঙ্গবদ্ধ হয়ে হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণ করে সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলছে। এভাবে দেশের কয়েকটি যায়গায় ওরা হিংস্রতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে জনসাধারণকে আতঙ্কিত করে চলেছে।

ওদের দ্বারা পরিচালিত সারা দেশের হিংস্র কর্মকান্ড একাত্তর সালে ওদের কৃতকর্মের কথাকেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মানুষের মনে আজ প্রশ্ন জাগছে, স্বাধীন দেশে এতো ক্ষুদ্র শক্তি নিয়েও যারা এই পরিমান ধ্বংস সাধন করতে পারে, তারা পাকিস্তানী সরকার ও মিলিটারীর সহযোগিতায় কি নির্মমতাই না করেছে। ওদের এ নৃশংস কর্মকান্ড বয়স্ক মানুষদের স্মৃতিকে যেমন একাত্তরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে তেমনি নবপ্রজন্মকে ওদেরই দ্বারা কৃত একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলির বিভিষিকা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যাচ্ছে।

আমাকে একটি জরুরি কাজে রংপুর যেতে হয়েছিল। সেখানে আমার ৪ দিনের কাজ ছিল, তাড়ুহুড়ো করে ২ দিনে শেষ করে ঢাকায় চলে এসেছি। ব্লগারস এন্ড অনলাইন এ্যকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে এবং প্রতিদিন প্রজন্ম চত্তর, গণজাগরণ মঞ্চে যাবার অভিজ্ঞতার আলোকে ওখানের গণজাগরণ মঞ্চ পরিচালনার সাথে যুক্তদেরকে কিছুটা পরামর্শ দেবার সুযোগ এসেছিল। আমি তাদের মঞ্চ আরো ভালভাবে পরিচালনার জন্য আমার স্বচক্ষে দেখা ঢাকার বিষয়াবলি সেখানে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। পরামর্শগুলি হুবহু অনুস্মরণ না করে স্থানীয় বাস্তবতার আলোকে বাস্তবায়নের উপরেই বেশী গুরুত্ব দেবার অনুরোধ করেছি।

রংপুরে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থা দেখে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে এখন সেন্ট্রাল মঞ্চ থেকে সারা দেশের মঞ্চে মঞ্চে ট্যুর করে মঞ্চ পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিনিময় করাটা জরুরি। এর মাধ্যমে অন্যান্য মঞ্চ আয়োজকদেরকে আরো বেশী উজ্জীবিত করা সম্ভব হবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ অহিংস আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার ব্যপারে সহযোগিতা করা যাবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সমন্বিতভাবে একটি ট্যুর প্ল্যান করে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চগুলিতে ট্যুর করলে তা গণজাগরণের ক্ষেত্রে আরো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। ট্যুর প্ল্যানটা অবশ্যই গোপনীয় থাকবে। মানুষ তার মানবিক ইমোশনের প্রতিফলনের প্রতিবাদ জানাতে দেশের বিভিন্ন যায়গায় গণজাগরণ মঞ্চ তৈরী করেছে। এখন এ ইমোশন থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল আনার লক্ষ্যে বৃহত জনগোষ্ঠিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করাটা খুব জরুরি। পরিচালনার দৃর্বলতার কারণে কোথাও কোথাও মঞ্চগুলি আরো গর্জে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে হয়েছে।

জামাত শিবির একাত্তর সালের মতো সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদকে টার্গেট করে সেখানে মঞ্চ সম্পর্কে যাচ্ছেতাই রটনা রটাচ্ছে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলছে, যারা মঞ্চে যায় তারা কুকুর, বিড়াল এবং কাফের।মুসল্লিদেরকে ধোকা দিয়ে আল্লার নামে প্রতিজ্ঞা করানো হচ্ছে যেন তারা কোন গণজাগরণ মঞ্চে না যান। গত বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পরে ঢাকার পীরেরবাগের কয়েকটি মসজিদেও এই কাজ করা হয়েছে। মসজিদকে কেন্দ্র করে এমন জঘন্য অপপ্রচারণা জামাত-শিবিরের জন্য নতুন নয়। ওরা মিথ্যাবাজ বলেই প্রচারিত। দেশের বিভিন্নস্থানে জনগণ স্বপ্রনোদিত হয়েই জামাত-শিবিরের এ মিথ্যাচার প্রতিহত করছে। তারপরেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যে কেন্দ্রীয় গণজাগরণ মঞ্চ থেকে একটা সতর্কবাণী ঘোষণা করা দরকার, যেন এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটলে জনগণ স্বপ্রোনোদিত হয়েই তা প্রতিহত করে।

জামাত-শিবির গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে। পুলিশ, মঞ্চকর্মী তথা সাধারণ মানুষ এদের নৃশংতার বলি হচ্ছে। পুলিশ রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের অংশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দোলনের সময়েও এভাবে কখনও পুলিশ মারা হয়নি। এখন মারা হচ্ছে। মারছে জামাত-শিবির। এটি সুস্পষ্ঠ দেশ বিরোধীতা। ওরা বাববার প্রমান করছে ওরা এ দেশকে মানে না। যেহেতু ওরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করছে, ওদের রক্ত নেশার বলি হতে পারে আরো অনেকে। আরো অনেকেই হতে পারে ওদের গুপ্ত হত্যার বলি। রক্ত খেকোরা রক্ত ছাড়া বাঁচে না। ওরাও রক্তখেকো। ওরাও বাঁচার জন্য এখন রক্ত পান করতে শুরু করেছে। যে কোন যায়গায়, যে কোন ধরণের স্যাপোটাজ হতে পারে। সকলকে এ বিষয়ে সাবধান ও সকর্ত থাকতে হবে।

আসুন রাজপথে নামি। প্রতিহত করি জামাত-শিবির। এ আন্দোলনে স্বতস্ফুর্ত জনগণের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৬ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : সাবধান, যৌন স্যপোটাজের ফাঁদে ফেলানোর জন্য গণজাগরণ মঞ্চে নেমেছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও তাদের ভাড়াটে যৌককর্মী





“ইসলামী ছাত্রী সংস্থা

স্যাপোটাজের নীলনক্সা”



জামাতের পুরুষ ছাও “ইসলামী ছাত্র শিবির” যেমন আধুনিক মারনাস্ত্র হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত মানুষকে হত্যার জন্য, তেমনি তাদের মহিলা ছাও “ইসলামী ছাত্রী সংস্থা”ও মাঠে নেমেছে তাদের নিজ নারী শরীরকে যৌন-অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে গণজাগরণ মঞ্চকে স্যাপোটাজের কুতসিৎ চক্রান্তে ফেলার ষড়যন্ত্রে। এ কাজে জামাত শিবির ভাড়াটে যৌনকর্মীও ব্যবহার করছে।



শিবির যেমন এখন ফ্যাসনে আল্ট্রা, ওদের চেনা দায়; তেমনি ছাত্রী সংস্থাও এখন ছুল-সুরতে ওয়েস্টার্ন মর্ডান। “ছাত্রী সংস্হা”র এভাবে মাঠে নামার মিশনকে অনেকে "সেক্স মিশন" বলে অবিহিত করছেন। পরপুরুষের সামনে উদ্দেশ্যমূলক ও ইঙ্গিতর্পর্ণ যৌন-আচরণ করে, এলিয়ে-মেলিয়ে নিজস্ব শরীরের দর্শন দেখিয়ে এরা একবারে "এক ঢিলে দুই পাখি" মেরে গণজাগরণ মঞ্চকে ভন্ডুল করার পায়তারা করছে। এই-ই তাদের সেক্স মিশন।



লোকজনের সাথে কথা বলে যেটুকু ধারণা পাওয়া গেছে তাতে ছাত্রী সংস্হা’র বর্তমান মিশনটি নিম্নরূপ। মিশন বাস্তবায়নে এই মুহুর্তে তারা শাহবাগের সমাবেশকে টার্গেট করেছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য মঞ্চেও তারা তাদের মিশনকে এক্সপান্ড করতে পারে। টার্গেট অনুযায়ি তারা গণজাগরণ মঞ্চের জমায়েতের মধ্যে কোন একজন পুরূষ ব্লগার বা অন-লাইন এ্যকটিভিস্ট বা আন্দোলনকর্মীকে টার্গেট করছে। টার্গেট করার পরে ছাত্রী সংস্থার কর্মীটি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীটিকে বিপদে ফেলার জন্য যে কাজগুলি করছে সেগুলি মোটামুটি এ রকম। ছাত্রীটি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার শরীরকে ব্যবহার করছে। সে হঠাৎই তার শরীরে হাত দিয়েছে বা এ জাতীয় কিছু বলে চিত্‍কার চেঁচামেচি শুরু করে ফাঁদে ফেঁলার চেষ্টা করছে।



যুদ্ধাপরাধীদের কৌশল অনুযায়ি ছাত্রী সংস্থা এ ধরণের ঘটনা একবার ঘটায় দিতে পারলেই হল। এরপর যা করার তা তাদের মূল সংগঠন জামাত ইসলাম তাদের মিত্রশক্তিদেরকে সাথে নিয়েই করে ফেলবে। তাদের নিয়ন্ত্রীত মিডিয়াসমুহ এবং মাথা ওয়াস হওয়া তৃণমূল আন্দোলনকারীরা এই ঘটনার সাথে তাল মিশিয়ে সেটাকে ভয়াবহ দুর্গন্ধে পরিনত করবে। এরপরে সেই দুর্গন্ধ তাদের নিজস্ব মানবমুখ-স্প্রে দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবে।



এমনতো হতেই পারে যে, আমাদের স্বপক্ষের লোক-জনই ঘটনার প্যাঁচ বুঝতে না পেরে ঘোট পকানো মহিলার কথার উপরে নির্ভর করে তার ফাঁদে পা দিয়ে টার্গেট করা নির্দোষ যুবককে মারধর করতে পারে। আর এমন হলেই কেল্লা ফতে। একেবারে খেল খতম। সমানে প্রচার চলতে থাকবে, শাহবাগে যৌন নিপীড়ন চলছে, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা চরিত্রহীন। ফলশ্রুতিতে অনেক মেয়েরাই গণজাগরণমঞ্চে যেতে ভয় পাবে। কেউ সাহস করে যেতে চাইলেও ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিবাবক তাদের মেয়েকে হয়তো যেতে দিবেন না।



যদি ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে, তাহলে ঘটনা হয়তো উল্টো ঘটবে, উপস্থিত জনতা তখন ফাঁদে পড়া তরুণকে কিছু না বলে ঐ ছাত্রী সংস্হার কর্মীকে ধোলাই দেবে। এতেও জামাত ও তাদের মিত্রদের লাভ। এরা প্রচার চালাবে, শাহবাগে মেয়েরা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা আরো বেশী লাঞ্ছিত হচ্ছে। সাথে সাথে সাক্ষাতকার দেওয়া হবে সাজানো লাঞ্ছিত মহিলার। এমন ঘটনা ঘটলেও আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ি, মেয়েরা আন্দোলন থেকে সরে যাবে আর শাহবাগে তরুণ যুবকরা হয়ে যাবে চরিত্রহীন। কি প্ল্যান!হায়রে জামাতি।



ফরিদপুর থেকে আমার ভাতিজা ফোন করে জানাল যে, সেখানে জামাতিরা ছড়াচ্ছে - গণজাগরণ মঞ্চে পাঁচশ’ করে টাকা এবং বিরানীর প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। যে যাচ্ছে তাকেই দেওয়া হচ্ছে। এর জন্যে সারাক্ষণ ওখানে এতো ভিড়। সে উত্তর দিয়েছে, ‘আমি আমার কাকার সাথে শাহবাগে গেছিলাম, আমি দেখছি আমার কাকা নিজেই খেতে পাচ্ছে না, যা যোগাড় করেতে পারছে তা সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খাচ্ছে।’



সাধু সাবধান!!! যা করার ভেবে চিন্তে করবেন। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মালিক জনগণ। মালিক-পক্ষই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ চায়। সরকারকে মালিকপক্ষের এ দাবী মানতে হবে।



“জামাত শিবির রাজাকার

রক্তচোষা জানোয়ার”



“বাংলার তালেবান

জামাতে ইসলাম”



গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মালিক এ দেশের আপামর জনগণ। সেই জনগণ অর্থাৎ মালিকেরাই আজ রাজপথে অবস্থান নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বদ্ধের সকল প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানাচ্ছে। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত মালিকপক্ষ রাজপথ ছাড়বেনা। সরকারকে মালিকপক্ষের এ দাবী মানতেই হবে। যারা এ দাবীর বিপক্ষে তারা জণগণকে সকল ক্ষমতার উৎস মনে করে না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদেরকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করে এবং জনগণকে মনে করে তাদের সেবাদাস-দাসী। এ মতামত গণজাগরণমঞ্চে আগত সবারই।



যে কোন দেশের সংবিধান সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে প্রতিফলিত করে। মানুষের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য মানুষ না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবী জানানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ এবং রাজপথে অবস্থান নিয়ে সে প্রতিবাদকে পুঞ্জিভুত রূপ প্রদান। রাজপথে থেকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে এখন একটি দাবীই করছে, তা হলো - যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বদ্ধের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকারপক্ষ সাড়া দিতে শুরু করেছে। গলতে শুরু করেছে হিমবাহের বরফ। এ বরফ গলাতে যথেষ্ট উত্তাপ ছড়াতে হয়েছে এবং হচ্ছে। জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনকে যারা কটাক্ষ করে দেখছেন, তারা কি সঠিক কথা বলছেন বা সঠিক কাজটি করছেন? গণজাগরণ মঞ্চে আসা অনেকের মুখেই কথাগুলি প্রতিফলিত হচ্ছিল।



গণজাগরণ মঞ্চে আগত অনেকেই আলোচনা করছিলেন, জামাত এখন জাতীয় প্রচার মাধ্যম দখলের প্রস্ত্রতি নিচ্ছে। তালেবানী স্টাইলে সসস্ত্র হামলা চালিয়ে এসব প্রচার মাধ্যম দখলের পায়তারা করছে তারা।



প্রতিপক্ষের সাইবার যুদ্ধ পরিচালনাকারীদের হিট লিস্ট প্রস্তুত করে তারা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। ব্লগার ও অনলাইন এ্যকটিভিস্ট, স্থপতি রাজিব হত্যা তাদের এ পরিকল্পনার প্রথম সাফল্য। তাদের এ হিটলিস্ট প্রতিনিয়ত রিভাইজ এবং স্প্রেড হচ্ছে।



সুইসাইডাল এ্যাটাকের মাধ্যমে প্রজন্ম চত্বর উড়িয়ে দেওয়া তাদের আরেক মহাপরিকল্পনা। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিপক্ষ কলম যোদ্ধা এবং ব্লগার ও অনলাইন এ্যকটিভিস্ট হত্যাকরে আল্লা-নবীর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদেরকে সে ধর্ম ছেড়ে দিয়ে পুনরায় জামাতে ইসলাম নামক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার মহাপরিকল্পনায় নেমেছে তারা।



অনর্গল মিথ্যা বলা ও কুৎসা রটনায় পারদর্শী, আল্লা-নবীর ইসলাম ধর্ম ছেড়ে জামাতে ইসলাম নামক ধর্মে দীক্ষিত হওয়া এসব কুমানবেরা মিথ্যার বিষবাস্প ছড়ানোর পাশাপাশি ইতিমধ্যে আবার র‌্যাব, পুলিশের পোষাক পরিধান করে মানুষ হত্যার নীলনক্সার আরেক ধোকাবাজিতে নেমেছে।

সকলে সাবধান থাকবেন!!! ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। ভয় পাবেন না। আমাদের ভয় মানে ওদের অতি বাড় বাড়া। যত হিংস্রই হোক না কেন, গুটিকয়েক হিংস্র মানুষ এতোবড় জনসংখ্যার কাছে কিছু না। অপশক্তিকে দমন করতেই হবে।



একাত্তর সালে তৎকালীন পাকি সরকার ছিল ওদের সমর্থক, প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত পাক আর্মি ছিল ওদের দোসর, তখন দেশের মানুষ ছিল সাড়ে সাত কোটি। তারপরেও গণপ্রতিরোধের কাছে তারা পরাজিত হয়েছিল। আজ এ দেশের মানুষ ষোল কোটি, জামাতিদের পক্ষে আজ আর পাক বাহিনীর মাঠে নামার সুযোগ নেই। এতোবড় গণপ্রতিরোধের বিপরীতে তাদের জেতার কোন সম্ভাবরা নেই। বিজয় আমাদেরই হবে হবেই হবে। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৯শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : ধর্মাশ্রয়ী, কুপমন্ডুক জামাত-শিবির ক্রমাগত মিথ্যার সৃষ্টি করে, অনর্গল মিথ্যে বলার মাধ্যমে তা সরলমনা মানুষের ভিতরে ছড়িয়ে দিতে নিখুঁত পারদর্শী । এ তাদের পুরানো কৌশল।



“একাত্তরে হয়নি সাজা, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি শেষ

জেগে ওঠো বীর বাঙ্গালী, গর্জে গঠো বাংলাদেশ”



“বীর বাঙ্গালী জেগে ওঠো, পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ো

পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ো, জামাত শিবির ধোলাই করো”



একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। এক মহা কুপমন্ডুকের জীবন কাটে সারাক্ষণই তারই গৃহপালিত একটি ভেড়ার সান্নিদ্ধে। তার চিন্তা-চেতনা-জগৎ-মহাজগৎ সবই ঐ ভেড়া কেন্দ্রীক। হবারই কথা, কারণ তার জীবনে অন্যকোন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার কোনই সুযোগ হয়নি। সামাজিক বুদ্ধি-জ্ঞান, যুক্তিবোধ, সুস্থ চেতনা এসব তার মধ্যে কাজ করে না। সে সুযোগও নেই। যা হোক, একবার এক অপকর্ম করে সে কাজির বিচারের মুখোমুখি হলো। কাজি তাকে তিনটে প্রশ্ন দিলেন এবং তার উত্তর খোঁজার জন্য তিনদিন সময় দিয়ে বললেন, ‘তুমি যদি এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারো তাহলে তোমাকে মাফ করা হবে, অন্যথায় সাজা।’ তিনদিন পরে বুদ্ধি-জ্ঞান, যুক্তিবোধ ও সুবোধ চেতনা বিহীন লোকটি হাজির হলো কাজির দরবারে। কোন্ প্রশ্নের কি উত্তর দেবে তা বারবার ঝালাই করে সে প্রস্তুত হয়েই এসেছে। শুরু হলো প্রশ্ন-উত্তরের বিচার পর্ব।

কাজির ১ম প্রশ্নঃ পৃথিবীতে সবচে শক্তিশালী কি?

কুপমন্ডুকের উত্তরঃ হুজুর আমার ভেড়া। তার মতো এতো শক্তিশালী ভেড়া এ দুনিয়ায় আপনি দ্বিতীয়টি পাবেন না।



কাজির ২য় প্রশ্নঃ পৃথিবীতে সবচে মোটা কি?

কুপমন্ডুকের উত্তরঃ হুজুর আমার ভেড়া। তার মতো এতো মোটা ভেড়া আপনি আল্লার জাহানে দ্বিতীয়টি পাবেন না। আমি সারাক্ষণ নিজে তার যত্ন নেই। খাওয়াই-দাওয়াই, খালপাড়ের বাতাস লাগাই।

কাজির ৩য় প্রশ্নঃ পৃথিবীতে সবচে দ্রুতগামী কি?

কুপমন্ডুকের উত্তরঃ হুজুর আমার ভেড়া। তার মতো এতো দ্রুতগামী ভেড়া আপনি আল্লা-নবীর জাহানে দ্বিতীয়টি পাবেন না। আমি নিজেও তার সাথে দৌড়ায় পারিনা। হুজুর নিজে না হয় একবার দৌড়ায় দেখেন।

কাজির বিচারে কি রায় হয়েছিল তা আমি জানিনা। তবে গল্পটির শিখন থেকে আমি যা বলতে চাই তা হলো, একশ্রেণীর ধর্মান্ধ কুপমন্ডুকেরা বরাবরের মতো আবারও তাদের অপকর্মের স্বপক্ষে এবং রাজনৈতিক স্ব-স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে পবিত্র ধর্মকে অপদস্থ করা শুরু করেছে। এরা এদের বিপক্ষে যা-ই দেখে না কেন, তাকেই একটা ধর্মীয় লেবাস দিয়ে ধর্ম গেল, ধর্ম গেল বলে ফাল পাড়ে। এখনও তার ব্যতিক্রম নেই। সাধারণ মানুষের সুপ্ত চেতনার সাহসী প্রকাশের ফলে জন্ম নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চ এ মুহুর্তে তাদের মূল টার্গেট। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তাদের অপকর্মের বিরোধীতা করা হচ্ছে বলে, ধর্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে - এটাই এখন তাদের দিবানিশি প্রচারণা। তাদের এ প্রচারণার মাধ্যমে তারা মানুষের মনের ভেতরে ধারণ করা পবিত্র ধর্ম এবং তাদের নিজেদের কৃত অপকর্ম এ দুটোকে সমার্থক করে ফেলেছে। এ বৈসাদৃশ সমার্থক তুলনায় কি ধর্ম যাচ্ছে না?

প্রজন্ম চত্তরের গণজাগরণ মঞ্চে আগত মানুষেরা গভীর নিশিথে সেখানে পাইকাড়ি হারে যৌনকর্ম করে ওটাকে যৌন-মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে, ফলে ধর্ম শেষ হয়ে গেল বলে তাদের উৎকন্ঠার শেষ নেই। ক্রমাগত মিথ্যার সৃষ্টি করা, সরলভাবে অনর্গল মিথ্যে বলায় পারদর্শী এবং তার যথেচ্ছ ব্যবহারে নিখুঁত কৌশুলী এ সমস্ত মহান ভন্ড ধর্মবিদগণ ফটোশপের কারসাজিতে এরকম বহু অবাঞ্চিত মিথ্যা ছবি বানিয়েও প্রচার করে চলেছেন। ছবি প্রিন্ট করে গ্রাম-গঞ্জের সহজ-সরল কোমলমতি মানুষদের মনে মিথ্যে ঘৃনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়ে চলেছেন। তাদের এ মিথ্যা চর্চায় বুঝি ধর্ম যাচ্ছে না!! ধর্ম ও তারা কি সমার্থক হয়ে গেছে? তারা যা করবে সেটাই ধর্ম, তাদের বিপক্ষে গেলেই ধর্মনাশ? এ কোন ধর্মচর্চা? একাত্তরে জাতির যে সমস্ত মহান সুর্য সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, এদের তৎকালীন প্রচারে সে সব সুর্য সন্তানেরাও ছিল কাফের, ভারতের দালাল এবং ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী। কুফরী কাজে সহায়তা করার কারণে নামাজের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হতো। কাজটি করতো এরাই, যারা এখন নিজেদের গায়ে ধর্মের লেবাস লাগিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। অথচ সেই কাফেরদের দ্বারা স্বাধীন হওয়া কাফেরদের দেশ ছেড়ে এরা যাচ্ছে না। বরং নতুন প্রজন্মের গায়ে আবারও কাফের উপাধি লাগিয়ে তাদের হত্যা করছে এবং সে হত্যার বৈধতা তৈরী করছে।

এ সমস্ত কুলাঙ্গারেরা ব্লগার ও অন-লাইন এ্যাকটিভিস্ট স্থপতি রাজিবকে হত্যা করে, সেই হত্যাকে জায়েজ করার জন্য শুরু করেছে বহুমুখী অপপ্রচার। রাজিব আস্তিক ছিল না নাস্তিক ছিল, স্ত্রীমুখী ছিল না গার্লফ্রেন্ডমুখী ছিল, এ জাতীয় বহুবিধ জল্পনা-কল্পনার সৃস্টি ও অপপ্রচারে তারা তাদের ঘুম হারাম করে ফেলছে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরও ঘুম হারাম করার পর্যায়ে নিয়ে যাবার পায়তারায় আছে। একজন ব্যক্তি লম্বা-খাটো, ফর্সা-কলো, সাংস্কৃতিক-অসাস্কৃতিক, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, চালাক-বোকা, আস্তিক-নাস্তিক, স্ত্রীগামী-বেশ্যাগামী যা-ই হোক না কেন, সুনির্দষ্ট কোন ইস্যুতে তার মতামত রাখার সুযোগ ও অধিকার আছে। ইস্যুটি যৌক্তিক কি অযৌক্তিক সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে কারো ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয়কে রামছিলা দিয়ে ধর্মের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধকে ধামাচাপা দিয়ে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর প্রয়াসেই তাদের এ ধর্ম গেল ধর্ম গেল নামক প্রসব ব্যাথা।



সাধু সাবধান। বিজয় আমাদের। জয় বাংলা। জয় জনতা। (২০শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

















বিষয় : তখনকার মন্ত্রণালয়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে জামাতের চারজন মন্ত্রী ছিল। সুতরাং দল হিসেবে জামাত শুধু কোলাবরেটরই নয়, যুদ্ধাপরাধেরও প্রত্যক্ষ অংশীদার







“জামাত শিবির রাজাকার,

বাংলা কি তোর বাপ দাদার?”



সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবী আবারও সর্বমহলে ভীষণ জোরেসোরে উচ্চারিত। সাধারণ মানুষের সোজা-সাপ্টা কথা, যে দলটি এ দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, সে দলের এ দেশে রাজনীতি করার প্রশ্নই আসে না। তাদের উল্টো প্রশ্ন, স্বাধীনতা বিরোধী জামাত কেন স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার অধিকার পাবে? যদি কোনো আইনের বলে তারা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার পায়, তবে সেটা আইনের দুর্বলতা, মানুষের চাওয়া নয়।



যারা জাতির জন্যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করে দেশের স্বাধীনতা এনেছে তাদের স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন কেন বজায় থাকবে? এমনটিও থাকতে পারে না। স্বাধীনতার পর থেকে এতোদিন পর্যন্ত এমন কোন কিছু যদি থেকেও থাকে তবে তা সমুলে মুছে ফেলতে হবে, এটাই এ প্রজন্মের দাবী। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালনকারী প্রজন্ম চত্বরের এ প্রজন্মের প্রতিনিধিগণ দেশের সর্বত্র গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ ও আপামর জনসাধারণের বুকের মধ্যে ধারণ করা সে দাবীটিকেই আবার প্রতিফলিত করলো।



স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য এরকম নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং স্বাধীনতাকামী মানুষের বিরুদ্ধে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, ইসলামে ধর্মের নামে এমন অপপ্রচার চালিয়েছে, তাদের রাজনীতি করাতো দূরে থাক, তারা এ দেশে থাকারই অধিরার রাখে না বলে মনে করে এ প্রজন্মের তারুন্য। জামাত সে সময়ে যত ধরণের অপপ্রচার করেছিল তারমধ্যে মাত্র দু’টি এখানে উল্লেখ করছি। -



(১) একটি অপপ্রচার ছিল, যারা মুক্তিবাহিনীতে গেছে তারা সব নাস্তিক, ভারতের দালাল, অমুসলিম, ইহুদী, কাফের, নাছারা। এদের আত্মীয়-স্বজনরা মসজিদে থাকলে মুমিনদের নামাজ হবে না। এই ফতোয়ার বলে তৎকালীন জামাতীরা যুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনকে মসজিদ থেকে বের করে দিত।



(২) আরেকটি অপপ্রচার ছিল, কাফেরদের সাথে মুসলমানের বিয়ে বৈধ না, সুতরাং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তাদের সকলের বউ তালাক হয়ে গেছে। এদের কালেমা পড়ে মুসলমান হতে হবে এবং হিল্লা বিয়ে দিয়ে বউকে ঘরে তুলতে হবে। এদের প্রচারনামতে, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে যেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা কালেমা পড়ে পুনরায় মুসলমান হয়নি এবং তাদের স্ত্রীদেরকে হিল্লা বিয়ে দিয়ে পুনরায় বিয়ে করে ঘরে তোলেনি, সেহেতু এ প্রজন্মের সবাই জারজ। তাদের ব্যাখ্যামতে আমরা সকলে নাস্তিক জারজ সন্তান, শুধুমাত্র তারা জামাতীরা এবং জামাতী ছাগুরা আস্তিক বৈধ মুসলমান। একারণে তারা গণজাগরণ মঞ্চে আগত সকলকে আবারও নাস্তিক, কাফের, নাছারা বলে জামাত-মুমিনীয় অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।



দল হিসেবে জামাতকে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী পাকিস্তানের কোলাবরেটর বললে তাদের রাজনৈতিক অপকর্মটি ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না, অপরাধের তুলনায় অনেক কম বলা হয়। সে সময়ে জামাত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার ছিল। তখনকার মন্ত্রণালয়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে জামাতের চারজন মন্ত্রী ছিল। সুতরাং দল হিসেবে জামাত শুধু কোলাবরেটরই নয়, যুদ্ধাপরাধেরও প্রত্যক্ষ অংশীদার। ব্যক্তি হিসেবে এই দলের সাথে যুক্তরা যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধ করেছে তেমনি দল হিসেবে জামাতও দলীয় যুদ্ধাপরাধ করেছে। সংসদীয় একটি দলকে সে দায়ভার নিতেই হবে। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি সহ যে সকল কোলাবরেটিভ দল গঠন করা হয়েছিল সেগুলিও জামাতের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করতো। এ কারণে মানুষের বিবেচনায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাত অবশ্য অবশ্যই যুদ্ধাপরাধী। স্বভাবতই ব্যক্তি হিসেবে ঐ দলের সাথে যুক্তরা যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে, দল হিসেবে জামাত ইসলামীও সর্বোচ্চ দলগত সাজা ভোগ করবে। দল যদি সর্বোচ্চ সাজা পায় তাহলে এ দলের সাথে সম্পৃক্ত একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মও সে দায়ভার বহন করবে। জেনেশেুনে খারাপ কাজে যোগ দেবার সাজা পাওয়া উচিৎ বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে।



জামাত সব সময়েই জনমতের বিরুদ্ধবাদী অবস্থানে থাকা একটি কু-রাজনৈতিক দল। যদিও প্রত্যেকটি অপকর্মের পরে পিঠ বাঁচানোর জন্য পরগাছারমতো এর-ওর পিঠে উঠে ঝোপ বুঝে আবার কোপ মারার দলগত ইতিহাসও এদের খুবই সমৃদ্ধ। সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তখন মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। মিথ্যে অধ্যাপক খ্যাত গো. আযম তাদেরই একজন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফারও তারা তীব্র বিরোধিতা করে।



১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বর একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়।সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

জামাতে ইসলামীর মৌলিক আকিদাগুলির ধারা-২ এর ১ থেকে ৫ এ প্রায় একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছে। ২ এর ৫ এ বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও আসলেই না।’ - এটি কোন মর্ত্যের সাংবিধানিক কথা হতে পারে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। বিতর্কহীনভাবে এটি স্বর্গালোকের কোন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কথা-বার্তা হওয়া সম্ভব। শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর সকল সভ্য দেশের সংবিধানের সাথেই এ কথাগুলি সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কথা নিয়ে যাদের সাংগাঠনিক গঠনতন্ত্র তারা রাজনীতি করে কিভাবে? প্রশ্নটি এখন মুখে মুখে।



বর্তমান জামাত ইসলামী পরগাছারমতো বিএনপি’র সাথে গাঁটছাড়া হয়ে আছে। এখানে লেজ কুকুর নাড়াচ্ছে নাকি কুকুর লেজ নাড়াচ্ছে নাকি লেজ ও কুকুর পরস্পরের সম্মতিতে যৌথভাবে নড়ছে সে বিষয়টিকে দুইটি দল টেকনিক্যালী যতোই ধোয়াসা রাখার চেষ্টা করুক না কেন, পাবলিকে এইবার ঠিকই ধোয়াসা চিরে আসল জিনিসটা বুঝে ফেলেছে। সামনে জাতীয় ইলেকশন। হেরে যাবার ভয়ে দল দুটির ইলেকশন এড়ানোর তালবাহানা ও নানা রকম আদিখ্যেতার মিডিয়া গর্জন দেখলে বিষয়টি পাবলিকের কাছে আরো বেশী সুস্পষ্ট হবে।



আসুন প্রজন্ম চত্বর ঘোষিত ৬ দফার সাথে নিজে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ি এবং সকলকে জড়িয়ে ফেলি। সবাই-ই আছে আমাদের সাথে, বিনি সুতোর দাবী-মাল্যটা শুধু ঠিকমতো গাঁথতে হবে। বিজয় আমাদেরই।জয় বাংলা। জয় জনতা। (২২শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : কালের কান্না শুনিতে কি পাও?



(এই পর্বটি একটি বিশেষ পর্ব। এখানে লেখকের মতামত প্রতিফলিত হয়নি, প্রতিফলিত হয়েছে তাদেরই মতামত যারা গণজাগরণ মঞ্চকে হৃদয়ে ধারণ করেণ। বিশ্লেষণগুলি খুবই ক্রিটিক্যাল। জানার জন্য পর্বটি পড়ার চেষ্টা করুন, হয়তো পেয়ে যাবেন আপনার নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন বা তার উল্টোটি।)



[ছবিটি War in the Indian Ocean by Vice Admiral Mihir K. Roy বইটি থেকে সংগ্রহীত। লেখক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কালীন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর নৌ সেক্টরের প্রধান ছিলেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সুইসাইডাল নৌ কমান্ডো ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল ভারতে, এটি সেই ট্রেনিংরত মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি। ছবিতে মাইন সামনে নিয়ে বসা ডান দিক থেকে যিনি প্রথম, তিনি আমার সহোদর মেঝো ভাই। ১৯৭১ সালে মোংলাতে অপারেশন জ্যকপট নামে যে অপারেশনে পাকিস্তানী যুদ্ধ জাহাজকে ডুবিয়ে দিয়ে তাদের নৌ-ব্রিগেডকে ধংস করে দেওয়া হয়, যাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ বিজয়ের একটি মাইলফলক হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই অপারেশনের কমান্ডার ছিলেন আমার মেঝো ভাই। প্রচণ্ড শীতে ১টি মাত্র সৃইমিং কস্টিউম পরে একা ডুবিয়ে গিয়ে, রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে, পাকিস্তানী যুদ্ধ জাহাজের তলায় মাইন সেট করে, সে মাইনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, বৃষ্টি গুলির মধ্য থেকে জীবিত ফিরে এসেছিলেন। এজন্য প্রবাসী বাংলাদেশী সরকার সে সময়ে কলকাতায় তাকে লাল গালিচা সম্বর্ধণা দেয়।]



সামাজিক মানুষের পক্ষে দলছুটভাবে বাঁচা যেমন কষ্টের। সমাজ পরিবর্তনের জন্য সত্যিকার অর্থে যা হওয়া উচিৎ সে কাঙ্খিত কাজটি যদি সমর্থিত দল না করে, তবে বিবেকী মানুষের পক্ষে সে দলের সাথে থাকাটা আরো বেশী কষ্টের। সে ক্ষেত্রে দলের সাথে থাকার চেয়ে দলছুট থেকে মুত্যুকে বেঁছে নেওয়াও শ্রেয় মনে হয়।



যে সকল সচেতন মানুষ সরাসরি কোন দলের সাথে জড়িত নয় অথবা সেভাবে জড়িত থাকারমতো কোন বাস্তবতার মধ্যেও নাই, তারাও সামাজিকভাবে যে সমস্ত লোকজনের সাথে ওঠাবসা করে সে সমস্ত লোকেরাও কোন না কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী। ভাবাদর্শের সাথে মিল থাকার উপরে নির্ভর করেই মূলত ব্যক্তি জীবনের ঐ সমস্ত এ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠে। ব্যক্তিজীবনের এসব এ্যাসোসিয়েশনে নানান দলমতের সমন্বয়ের লোকজন থাকলেও, সমাজের কোন ক্রান্তিলগ্নে আল্টিমেটলি সকলে এক-সহাবস্থানে থাকতে পারে না, অন্তর্নিহিত আদর্শে মিল থাকা লোকজনের সাথেই তখন সখ্যতা কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়। অন্যরা তখন শুধু দূরেই সরে যায়না, দুর্বলতা জানার সুযোগ নিয়ে বন্ধুঘাতিও হয়ে পড়ে।



প্রজন্ম চত্বর শাহবাগকে ঘিরে আমাদের অনেকেরই তেমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা আমি নিজে যেমন ফিল করছি, তেমনি দুপুর থেকে সতীর্থদের মুহুর্মুহু ফোনে তার প্রতিচ্ছবিও দেখতে পাচ্ছি। মনের ভেতরে দ্রোহের গর্জন সত্তেও কেন যেন সবাই একটু অসহায় বোধ করছে। এ অসহায়ত্ব বোধের অনুভুতি কেন অনুভুত হচ্ছে সে প্রশ্ন উঠে আসাটা হয়তো অবান্তর নয় বরং স্বাভাবিক। আমি নিজের মত প্রকাশ না করে তাদের মতামতগুলিকেই অনেকটা সঙ্কলন আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমি নিজে থেকে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। আগেই রলে রাখছি এ লেখায় আমার সতীর্থরা হয়তো কষ্ট পাবেন। তবে সে জন্য আমাকে গালি না দিয়ে বরং কষ্টকে করণীয় হিসেবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ি কাজ করার প্রত্যয় গ্রহণ করাটাই উত্তম হবে বলে মনে করছি। এ মুহুর্তে তাদের কাছে সেটাই প্রত্যাশিত।



কসাই কাদেরের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় সকল সুবোধ-সম্পন্ন মানুষ মনের ক্ষোভে স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল। এখনও তারা রাজপথেই আছে, কৌশলগত কারণে একাধারে প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান না নিয়ে একটু ভিন্নভাবে অবস্থান নিয়ে আছে আরকি। প্রজন্ম চত্বর আপাতত স্লোগান বিহীন মনে করলেও আসলে তা নয়। স্বতস্ফুর্ত লোকজন ঐ পবিত্র যায়গা ছেড়ে যাচ্ছেনা। তারপরেও প্রজন্ম চত্বরের ঘোষনার মধ্যে এই যে এতোটুকু কৌশলগত শুন্যতা, এরই মধ্যে জামাত শিবির মাঠ দখল করে ফেলছে। ঘোষণা দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম স্থগিত করার সাথে সাথেই যুদ্ধবিরোধীদের দ্বারা রাজপথ দখলের বিষয়টিতে গণজাগরণমঞ্চের সাথে সংহতি ও আত্মার সম্পর্ক আছে এমন অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকশিত জামাত-শিবিরের তান্ডবলীলার খবর দেখে তাদের মধ্যে এ ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।



কসাই কাদেরের রায়ের পরে মানুষ রাস্তায় নেমেছে নিজ গরজে। মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগত অনুভুতিতে আঘাত লাগার কারণেই তারা স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে নেমে এসছিল। মানুষের এ সুপ্ত চেতনাকে সত্যিকারঅর্থে ধারণ করলে আওয়ামীলীগেরই এ গণজাগরণ ঘটানোর কথা, অন্য কেউ নয়। বরং সেটিই প্রত্যাশিত ছিল। বিগত নির্বাচনে জনগণ সে ম্যান্ডেটও আওয়ামীলীগকে দিয়েছে। অথচ তেমন গণজাগরণ করতে আওয়ামীলীগ ব্যর্থ হয়েছে। তার পক্ষে কাজটি করে দিয়েছে সাধারণ জনগণ। আওয়ামীলীগ কাজটি করতে পারলে মানুষের এভাবে মাঠে নামতে হতো না, সব ফেলে আমাদেরও এভাবে দিবানিশি পড়ে থাকতে হতোনা।



কোন এক পর্যায়ে এসে হয়তো আওয়ামীলীগ বা তার অঙ্গ এবং সমমনা সংগঠনগুলি পরোক্ষভাবে গনজাগরণের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, তবে সেটুকই পর্যাপ্ত নয় বলে অনেকের অভিমত। এতোবড় একটি দল এতটুকু করলেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। তাদের মতে গণজাগরণের এ কাজটি করাই ছিল আওয়ামীলীগের দায়িত্ব, অথচ সেটি করে দিয়েছে আমজনতা। তারা স্পষ্ট করেই জানে গণজাগরণের ফলাফল শেষ পর্যন্ত যাবে আওয়ামীলীগেরই ঘরে। কারোরই এতে কোন আক্ষেপ নাই। বরং তারা খুশী। আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদেরকে ভালভাবে নিশ্চিন্ন করে ক্ষমতায় থাক সেটাই তাদের চাওয়া। অনেকের আত্মীয়-স্বজনই এই দলটি করেই একাত্তরে শহীদ হয়েছে, সে কারণেই বোধ হয় দলটির প্রতি তাদের এ প্রত্যাশার যায়গাটি অভিমানে রূপ নিচ্ছে। কারণ তাদের প্রত্যাশিত চাওয়াটি কাঙ্খিতভাবে বাস্তবায়নের দিকটি সম্পর্কে তারা শঙ্কামুক্ত হতে পারছেনা। সে ভরশার যায়গাটিকে শক্ত করার দায়িত্ব আওয়ামীলীগেরই। ক্ষোভের কারণে অনেকই বলছে, বর্তমান অবস্থায় যেহেতু আওয়ামীলীগের কোন বিকল্প নাই, তাই বাধ্য হয়েই এর পক্ষে আছি এবং এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদেরকে এভাবে ঠেকিয়ে সমর্থক বানিয়ে রাখার থেকে বরং আমাদের অনুভুতির যাগাটিকে জয় করেই আওয়ামীলীগ তাদের দায়িত্ব পালন করলে ভাল হতো।



গণজাগরণ মঞ্চে আগত মতামত প্রদানকারীদের সকলে একটি ব্যপারে একমত যে, এ সময়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না থেকে অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে এমন একটি গণজাগরণের কথা স্বপ্নেও কল্পনা করা যেতনা। এমন প্লটই তৈরী হতো না, গণজাগরণতো দূরের কথা। এ কৃতিত্ব অবশ্যই আওয়ামীলীগের, তবে সেই কৃতিত্বের জন্য আত্মতুষ্টিতে ভুগে বরাবরেমতো এবারেও ফলাফল ঘরে তোলার বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনাও উজ্জল হয়ে দেখা দিচ্ছে। এভাবে বারবার ফলাফল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।



গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মানুষ ঘরে উঠতে না উঠতেই কেন মাঠ জামাত শিবিরের দখলে? এটি একটি ক্ষুব্ধ প্রশ্ন। কাল রাত্রেই মাত্র জনতা মঞ্চ ছেড়ে ঘরে উঠেছে, আর আজ সকালেই জামাত শিবিরের আক্রমনে সেই শাহবাগেই পুলিশ আহত! সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙ্গচুর! সাংবাদিক আহত। মসজিদে মসজিদে নারায়ে তকবীর স্লোগান। কিন্তু কেন? কোথায় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কর্মতৎপরতা?



ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল স্তরের রাজপথ স্বতস্ফুর্ত জনতা দখল করে আওয়ামীলীগের হাতে তুলে দিয়ে তারপরে তারা ঘরে ফিরে গেছে। এরফলে সকল রাজপথ আজ আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের দখলে থাকাটাই ছিল প্রত্যাশিত। সেটা হয়নি। কেন হয়নি, এ প্রশ্নটি মতামত প্রদানকারীদের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসছে। আওয়ামীলীগের সংগঠনের কর্মীর পরিবর্তে মাঠে আছে পুলিশ। কেন? সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে পুলিশ থাকতে পারে, কিন্তু মূল ভূমিকায় কেন পুলিশ আছে? পুলিশ কি আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কাজ করে দেবে? পুলিশ করবে সরকারের কাজ, আওয়ামীলীগের কাজ নয়। জামাত শিবিরের দখলে চলে যাওয়া মাঠ জনগণ দখল করে দেবার পরেও এখন কেন সে মাঠ আওয়ামীলীগের দখলে নেই? এ প্রশ্ন সকলের।



আওয়ামীলীগের একটা বড় সুবিধা হলো সাধারণ মানুষ যা চায় এই দলটি সেই ধারার রাজনীতিটই করে। ফলে কি করতে হবে জনগণকে সে কথাটি আর আওয়ামীলীগকে বুঝিয়ে বলতে হয় না, বলার আগেই জনগণ চাওয়ার ব্যপারে একমত হয়ে প্রত্যাশা পুরণের জন্য অপেক্ষায় থাকে। কিচ্ছু করতে হয়না আওয়ামীলীগকে, শুধু মাথা নাড়ালেই চলে। তার পরেও আওয়ামীলীগ বারবার ব্যর্থ হয়। একবার নয়, বারবার। আসলে কি দলটি রাজনীতি বোঝে? এ দলের সমর্থক হয়েও সতীর্থদের মাঝে এ ক্ষুব্ধ প্রশ্ন প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খাচ্ছে। জনগণই সব যোগাড় করে এনে গালে তুলে খাওয়ায় দিচ্ছে, তারপরেও আওয়ামীলীগ তা খেতে পারছে না। উগরে দিচ্ছে। এটি খুবই হতাশার।



দলে কতবেশী অপরিপক্ক লোকের প্রাধান্য থাকলে এটি হয়?? এতোটা অপরিপক্ক মানুষ নিয়ে কি আওয়ামীলীগেরমতো দল চলে, নাকি চলা উচিৎ? কারা চালায় দলটি? জামাতের লোক ঘাপটি মেরে বসে নেইতো? জামাতের কোটি কোটি পেট্রোডলারের বদৌলতে সুপ্ত মীর জাফরের ঘাঁটি হয়ে যায়নিতো আওয়ামীলীগ? ১৮ দল যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে কয়েন হিসেবে এই আওয়ামীলীগারদের মধ্য থেকেই কয়েক নেতা পল্টি খেয়ে উল্টে যাবে নাতো? দলের মধ্যে আরো কয়েকজন সুপ্ত কাদের সিদ্দিকী থাকাটা অপ্রত্যাশিত হলেও অস্বাভাবিকতো কিছু নয়! দলটিকে খুববেশী ভালবাসে এমন সমর্থকেরাই ব্যাথিত হয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে এ প্রশ্নটি করছে। বিএনপিরমতো আমলা-ব্যবসায়ি নির্ভর হওয়া কি দীর্ঘমেয়াদী আওয়ামীলীগকে কিছু দিল?



নিজেদের মধ্যে মারামারি, দলাদলি, গ্রুপিং, লবিং করতে এবং দুর্বল মানুষকে মারতে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা যতোটা সিদ্ধহস্ত, বিপক্ষ দলকে দেখলে এরা ঠিক ততোটাই ভীত। এরা একজন প্রিন্সিপালকে ধরে রাস্তায় মারতে পারে অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পানির ট্যাঙ্কির মধ্যে শিবিরের হত্যায় সহকর্মীর গলিত লাশ দেখেও সেখানে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে পারে না। আমাদের মতো আমজনতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন মাসের পর মাস ‘যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ’ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জনগণকে সচেতন করি, মাত্র কয়েকজন মানুষ প্রেস ক্লাবের সামনে দাড়িয়ে ওদের বিচার চেয়ে হুঙ্কার দেই, গাঁটের পয়সা খরচ করে খালি পকেটে ঘুরি, তখন এই দলের বা এর অঙ্গ সংগঠনের একজন নেতা-কর্মীকেও ঔষধ খেতেও সাথে পাইনা। তাদের জন্য খোলা যায়গায় প্রোটেকশন ছাড়া ওভাবে আসাটা নাকি রিস্কি। তাদের জন্য রিস্কি আর আমাদের জন্য ফুলশয্যা? সারা জীবন ভরে খেটে-খুটে ফলাফল এনে দেবার কাজে থাকবো আমরা আর তা খাবার বেলায় খাবে দলেরই অন্যরা! এমন হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। জামাত-শিবিরের হাতে চারিদিকে মরছে আওয়ামীলীগ, মরবেও তারা, অন্য কেউ নয়। গণজাগরণের এ আন্দোলন এ দলটির যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কিত অবস্থানেরই প্রতিফলন; তারপরেও কেন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উচ্চারিত দাবীর স্বপক্ষে শক্ত অবস্থান না নিয়ে বরং তার ব্যর্থতার দায় নেবারমতো কাজ করছে আওয়ামীলীগ? এ ক্ষোভ অনেকেরই।



গরজাগরণ মঞ্চ আপাততঃ স্থগিত করা হয়েছে। তারপরেও আজকে অনেক আবেগী ও উৎসাহি জনতাই স্বতস্ফুর্তভাবে সেখানে বসে আছেন। আমিও তাদের মধ্যে একজন। এরা খাঁটি সোনা। আমরাই এরা। আমরা কিছু চাইনা। আওয়ামীলীগ ভালভাবে ক্ষমতায় থাকুক, আমরা শুধু এটুকুই দেখতে চাই। পুলিশ ও জণগণের কাঁধে সাংগঠনিক কাজের ভার না চাপিয়ে ক্ষমতায় যাবার জন্য আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের লোকজন প্রকৃত অর্থেই কিছু করার উদ্যোগ নিক এটাই সবার প্রত্যাশা। আমরাও সেখানে থাকবো। সাংগঠনিক দায়িত্বে যে সব বাঘা বাঘা নেতারা আছেন তারা আর বেড়ালের মতো বসে থাকবেন না। এবার যদি গণগনের মনোবল ভাঙ্গে তবে আপনারাও রেহাই পাবেন না। প্লিজ কিছু করুন। জয় বাংলা। জয় জনতা।



(২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : মওদুদীর ইসলাম বনাম প্রকৃত ইসলামের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং মদিনা সনদ



প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামাত/শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা আবু আ’লা মওদুদিকে এ অঞ্চলের ওলামা, মাশায়েখরা অমুসলিম বলে উল্লেখ করে আসছেন। এর মূল কারণ হিসেবে তারা বলেন, মওদুদির ঘোষিত ইসলাম মূল ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। জামাত শিবির সেই সাংঘর্ষিক ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্যই যতসব অইসলামিক কার্যক্রম করে আসছে। আসুন আমরা প্রকৃত ইসলাম এবং মওদুদীর ইসলামের একটা তুলনামূলক আলোচনা করি এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেই, পবিত্র ইসলাম ধর্মকে বাঁচানোর জন্য আমরা জামাত শিবিরকে প্রতিহত করবো কি করবো না। -



১. মওদুদী বর্ণিত ইসলামে আল্লাহ পাক সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ

“যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)। - (তাফহীমাত, ২য় খণ্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)।



২. মওদুদী বর্ণিত ইসলামে ফেরেশতা সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ

“ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) - (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)।



৩. মওদুদী বর্ণিত ইসলামে নবীদের সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ কয়েকটি উদাহরণ -

৩.১. আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)। - (তাফহীমাত, ২য় খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)।



৩.২. হযরত মুসা আঃ সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ

৩.২.১. যে নিজের অধীনতদের নির্দেশ দেয়া ছাড়াই মার্চ করতে করতে চলে যায়, আর পিছনে জংলার অগ্নির মত বিজিত এলাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে যায়। (নাউজুবিল্লাহ)।-(রেসালায়ে তরজুমানুল কুরআন-২৯/৪-৫)।



৩.২.২. “নবী হওয়ার পূর্বে মুসা আলাইহিওয়াস সাল্লাম দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” - (রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খণ্ড, ৩১ পৃ.)।



৩.৩. হযরত দাউদ আঃ সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ

৩.৩.১. হযরত দাউদ আঃ তার এলাকার ইসরাইলীদের সাধারণ রেওয়াজের বশবর্তী হয়ে উরিয়ার কাছ থেকে তালাকের আবেদন করেন। (নাউজুবিল্লাহ)। - (তাফহীমাত-২/৪২, দ্বিতীয় প্রকাশ, তাফহিমুল কোরআন (উর্দু):৪র্থ খণ্ড, সুরা সাদ, ৩২৭ পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং)।



৩.৩.২. হযরত দাউদ আঃ যে কাজটি করেছিলেন তাতে প্রবৃত্তির কামনার কিছু দখল ছিল, শাসন ক্ষমতার অসংগত ব্যবহারের সাথেও তার কিছু সম্পর্ক ছিল, এবং তা এমন কোন কাজ ছিল যা কোন ন্যায়নিষ্ঠ শাসকের জন্য শোভনীয় ছিল না। -(তাফহীমুল কুরআন-১৩/৯৫, আধুনিক প্রকাশনী, ১১শ প্রকাশ)



৩.৪. হযরত আদম আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরহ আদম আলাইহিওয়াস সাল্লাম মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরিৎ জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” - (তাফহিমুল কোরআন (উর্দু): ৩য় খণ্ড, ১২৩ পৃ.)



৩.৫. হযরত নূহ আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরত নূহ আলাইহিওয়াস সাল্লাম চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” - (তাফহিমুল কোরআন: ২য়খণ্ড, ৩৪৪ পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং)।



৩.৬. হযরত ইব্রাহীম আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিওয়াস সাল্লাম যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন, তখন সাময়িকভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” - (তাফহিমুল কোরআন ১মখণ্ড, ৫৫৮ পৃ.)।



৩.৭. হযরত ইউসুফ আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” -

(তাফহীমাত: ২য় খণ্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খণ্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং)।



৩.৮. হযরত ইউনুস আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরত ইউনুস আলাইহিওয়াস সাল্লাম এর দ্বারা রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” -(তাফহিমুল কোরআন: ২য়খণ্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং)।



৩.৯. হযরত ঈসা আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরত ঈসা আলাইহিওয়াস সাল্লাম মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” -(তাফহিমুল কোরআন ১মখণ্ড (সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.)।



৩.১০. মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদাঃ

৩.১০.১. “আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিংবা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” - (তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খণ্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনেঃ ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং এবং কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা (বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী: জুন ২০০২)।



৩.১০.২. “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” - (তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ. ও তরজমানুস্ সুন্নাহ, ৩য় খণ্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)।



৩.১০.৩. “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষণ করেছেন।” -(তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী)।



৩.১০.৪. হযরত মুহাম্মদ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।-(তাফহীমুল কুরআন, সুরায়ে নসর এর তাফসীর)।



৪. সাহাবা কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ

ইসলাম বলে–

ক) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা হল-সাহাবায়ে কেরাম সমলোচনার উর্দ্ধে। তাদের দোষ বর্ণনা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ”। -(শরহুল আকায়েদ পৃষ্ঠা ৩৫২)।

খ) মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করিয়াছেন -আমি তাদের (সাহাবাদের)প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আমার অনুগত। -(সূরা তাওবা-১০০)।

গ) রাসূল সাঃ সাহাবাদের সম্পর্কে বলেন -আমার সাহাবীরা তারকাতুল্য। তোমরা যারই অনুসরণ করবে হেদায়েত পেয়ে যাবে। -কানুযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০০২, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২৪৩৫৫)।



মওদুদী বলে-

ক) “সাহাবায়ে কেরাম সমলোচনার বাহিরে নন। তাদের দোষ বর্ণনা করা যায়। সাহাবাদের সম্মান করার জন্য যদি ইহা জরুরী মনে করা হয় যে, কোনভাবেই তাদের দোষ বর্ণনা করা যাবে না তবে আমার (মওদুদী) দৃষ্টিতে ইহা সম্মান নয় বরং মূর্তি পূজা। যার মূলোৎপাটন এর লক্ষ্যেই জামাতে ইসলামীর জন্ম”। -(তরজুমানুল কুরআন ৩৫শ’ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৩২৭)।

খ) “সাহাবায়ে কিরাম অনেকে মনগড়া হাদিস বর্ণনা করেছেন।” -(তরজমানুল কোরআন ৩৫ সংখ্যা) ঙ/৩)।

গ) “সাহাবাদের মধ্যে জাহেলিয়াতের বদ-স্বভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটে।” -(তাফহীমাত ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃষ্ঠা)।

ঘ) “হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন”। -(তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: পৃষ্ঠা ২২,)।

ঙ) “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাতের সময় ব্যাক্তিসম্মানের কু-মনোবৃত্তি হযরত উমর (রঃ)কে পরাভূত করেছিল। -(তরজুমানুল কুরআন, রবিউস সানি ৩৫৭ হিজরী)।

চ) “হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু এর মাঝে সজন-প্রীতির বদগুণ বিদ্যমান ছিল। -(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ৯৯)।

ছ) “হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খেলাফতকালে এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নেই।-(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৪৬/১৪৩)।

জ) “হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বার্থবাদী, গনিমতের মাল আত্মসাৎকারী, মিথ্যা সাক্ষ্যগ্রহকারী ও অত্যাচারী ছিলেন”। -(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৭৩)।



৫. পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদাঃ কোরআন করিম হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়।” -(তাফহিমাত, ১ম খণ্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা)।



৬. হাদীস সম্পর্কে মওদুদীর ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যঃ “হাদীস কিছু লোক থেকে কিছু লোক পর্যন্ত অর্থাৎ মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে আসছে। এসবকে বড়জোর সঠিক বলে ধারণা করা যেতে পারে কিন্তু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার কোন অবকাশ নেই। আর একথা স্পষ্ট যে, আল্লাহর দীনের যে সকল বিষয় এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলোর দ্বারা ঈমান ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য নির্ণীত হয় সেগুলো গুটিকয়েক লোকের বর্ণনার উপর নির্ভর করে মানুষকে বিপদগ্রস্ত করা আল্লাহ তায়ালা কখনো পছন্দ করতে পারেন না।” -(রাসায়েল ও মাসায়েল, ৬৭ পৃষ্ঠা)।



৭. মওদূদীর পবিত্র ইসলাম বিরোধী কয়েকটি ভ্রান্ত মতবাদঃ



৭.১. পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন ইত্যাদি সম্পর্কেঃ

ইসলাম বলে -ইসলামী পোশাক-পরিচ্ছদ-প্রকৃতি চাল-চলন ইত্যাদি গ্রহণ করবে। এসব ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করবে না। (এমদাদুল মুফতিয়ীন, ২য় খণ্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা)।



মওদুদী বলে -“পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন, আকৃতি-প্রকৃতি চুল কার্টিং ইত্যাদির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করতে কোন দোষ নেই”। -(তরজুমানুল কুরআন, ছফর সংখ্যা, ১৩৬৯ হিজরী)।



৭.২. দাড়ি কাটা ও রাখা ইত্যাদি সম্পর্কেঃ

ইসলাম বলে –

ক) ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-তোমরা গোফ খাট কর আর দাড়ি লম্বা কর। -(তিররমিযী শরীফ, হাদিস নং-২৭৬৩)।

খ) এছাড়া অন্য হাদিসে এসেছে -পুরুষদের স্বাভাবিক প্রকৃতি হল সে তার দাড়ি লম্বা রাখবে। -(আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫৩)।

গ) দাড়ি লম্বা করার কথা হয়েছে হাদিসে। কাটার কথা কোথাও নেই। তাই সাহাবায়ে কিরামের আমলই আমাদের একমাত্র ভরসা এই ক্ষেত্রে যে, দাড়ি কতটুকু বড় রাখতে হবে? মুসান্নাফে ইবনে শাইবাতে এসেছে-হযরত ইবনে ওমর রা. এর আমল ছিল-তিনি দাড়ি এক মুষ্টি পরিমাণ রাখতেন। সুতরাং দাড়ি এক মুষ্টি পরিমাণ রাখা ওয়াজিব। এর চে’ কম দাড়ি রাখা আর চেছে ফেলার মাঝে কোন পার্থক্য নাই। যেমন জোহরের ফরজ নামায চার রাকাত। দুই রাকাত সারা জীবন পড়লেও যেমন জোহর কোনদিনও আদায় হবেনা। তেমনি এক মুষ্টির কম দাড়ি রাখলে তা কোনদিনও দাড়ি রাখা বলে সাব্যস্ত হবেনা।



মওদুদী বলে -“দাড়ি কাটা ছাঁটা জায়িয। কেটে ছেঁটে এক মুষ্টির কম হলেও ক্ষতি নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এর অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়”। -(রাছায়েল মাছায়েল, ১ম খণ্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা)।



৭.৩. সুন্নতে রাসূল সম্পর্কে মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদঃ

ইসলাম বলে –হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদত,আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র আমাদের অনুকরণের জন্য উত্তম নমুনা বা সুন্নত। মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-তোমাদের জন্য নবীজীর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ২১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫৪৪)।



মওদুদী বলে -“হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদত, আখলাককে সুন্নত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরনের বিদয়াত ও মারাত্মক ধর্ম বিকৃতি। -(রাছায়েল মাছায়েল, ২৪৮ পৃষ্ঠা)।



৭.৪. দ্বীনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদঃ

ইসলাম বলে -দ্বীনের আসল মকছুদ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কায়েম করা। ইসলামী হুকমত উক্ত মকছুদ অর্জনে সহায়ক। -(শরহুল আকায়েদ, ৩০৪ পৃষ্ঠা)।



মওদুদী বলে -“দ্বীনের আসল মকছুদ হলো ইসলামী হুকুমত। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সমস্ত ইবাদত হলো উক্ত মকছুদ অর্জনের মাধ্যম”। -(আকাবেরে উম্মত কী নজরমে, ৬৪ পৃষ্ঠা)।





ঐতিহাসিক মদিনা সনদঃ



১) মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।

২) হযরত মোহাম্মদ (সা:) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকারবলে তিনি মদিনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় কর্তা হবেন।

৩) পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে; কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৪) স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায়কে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা সমবেত প্রচেষ্টায় বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করবে।

৫) বহিঃশত্রুর আক্রমণে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলো স্ব-স্ব যুদ্ধ-ব্যয়ভার বহন করবে।

৬) স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হবে; এর জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দোষী করা চলবে না।

৭) মদিনা শহরকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হলো এবং রক্তপাত, হত্যা, বলাৎকার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।

৮) অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার পাপী বা অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।

৯) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।

১০) ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।

১১) দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

১২) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

১৩) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।

জয় বাংলা। জয় জনতা।(২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)





সত্যিকারের জন-মানুষের মনের একেবারে গভীরতম প্রদেশ থেকে উত্থিত যুদ্ধপরাধীদের প্রত্যাশিত ফাঁসির দাবীতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ৪র্থ দিন পেরিয়ে গেল। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে ট্রাইবুনালের যে রায় তার বিরুদ্ধে সর্বশ্রেণির মানুষের যে পুঞ্জিভুত ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিল ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩র বিকেলে, সারাদেশ আজ সে দাবীর সাথে একাত্ততা পোষণ করে রাজপথে নেমে এসেছে। যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির রায়, মূলত সকলেরই প্রত্যাশিত চাওয়া। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ গণমানুষের চেতনার এ চাওয়াকে ধারণ করেই ৪র্থ দিবস-রজনী অতিক্রম করলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হিসেবে আমরা অনেকেই রাজপথে এসে স্লোগান দিচ্ছি, আন্দোলনের সাথে একাত্ততা পোষণ করছি, শাহবাগে আসতে না পারার কারণে ঘরে বসে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গণজাগরণ মঞ্চের কাভারেজ দেখছি এবং আকুন্ঠ সমর্থন দিচ্ছি। নানাজনে নানাভাবে আলোচনা করছি, বিশ্লেষণ করছি এর সম্ভাব্য পরিনতি।আনন্দে উদ্বেলিত হচ্ছি, কখনও কষ্ট পাচ্ছি, কখনও বা হচ্ছি শিহরিত । কখনও কাঙ্খিত অর্জন দেখে খুশী হচ্ছি, আবার কখনও তা না পেয়ে নানান পরামর্শমূলক মন্তব্য করছি । সবই ঠিক আছে। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যারা একটানা দিবস-রজনী এই মঞ্চকে পরিচালনা করে যাচ্ছেন তাদের কি অবস্থা হচ্ছে? আমাদের স্লোগান কন্যাগুলির কি অবস্থা? এখন পর্যন্ত তারাতো সংখ্যায় খুব বেশী না।

আমরা যারা একেবারে প্রথম থেকেই এটির সাথে যুক্ত আছি অর্থাৎ শুরু থেকেই যারা এই প্রতিবাদের যায়গাটিকে সংগঠিত করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখছি তাদের অবস্থাটা কি সেটাও একবার ভেবে দেখা দরকার। আমি সেই ৫ই ফেব্রুয়ারী দুপুর থেকে আছি। ঐ দিন সাড়ে তিনটায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী ছিল বলে জানিয়েছিল যুদ্ধপরাধ বিচার মঞ্চের সমন্বয়ক খালেদুর রবমান শাকিল। খবর পেয়ে ওখানে চলে যাই। সেখানে ডা. ইমরানকে না দেখে তার সাথে ফোনে কথা বলি, সে আমাকে শাহবাগে চলে আসতে বলে। ততক্ষণে প্রেস ক্লাবের সামনে অনেক লোক জমে গেছে। আমি দ্রুত আমার বক্তব্য শেষ করে রিক্সায় শাহবাগে চলে আসি। সেই থেকেই আছি। এভাবে আছেন আরো অনেকেই।

আমি আমার গতকালের অভিজ্ঞতার সামান্য একটু বর্ণনা দিচ্ছি। রাত তখন প্রায় আটটা বাজে। একটা গ্রুপের বেশ কয়েকজন ক্রমাগত স্লোগান দিয়ে চলেছে। কথা বলে জানলাম তখনও তাদের দুপুরের খাওয়া হয়নি। অগত্যা তাদের খাবার ব্যবস্থা করলাম। এদের কেউ কেউ আমার সন্তানসম। জিজ্ঞেস করলাম, বাসায় যাওনি। কয়েকজন মেয়ে বলল, এখানে আসার পরে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। যদিও বাসায় কিছু না বলেই চলে এসেছি। চারদিনধরে এখানেই আছি। জরুরি প্রয়োজনে হলে চলে যাচ্ছি, ওখানে যারা পরিচিত আছে তারাও আছে আমাদের সাথে। মিলে মিশে আছি আর কি।

আলাপ করে জানলাম, রাত্রে একজনের পিঠে আরেকজন হেলান দিয়ে বসে বসেই জণজাগরণ মঞ্চের রাজপথে রাত পার করে দিচ্ছে। কারো মোবাইলেই চার্জ নাই। পকেটেও টাকা নেই। গোসল করার অবসর নেই। এক কাপড়েই চলছে। কারো দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। প্রত্যেকের চেহারায়ই ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ঠ। অথচ মনের জোর আকাশ চুম্বি। শরীরের কোন দূর্বলতা স্লোগানের উপরে প্রভাব ফেলছে না।

খাওয়া-দাওয়ার কি ব্যাবস্থা করেছ জিজ্ঞেস করতে বলল, আপনারমতো কোন সিনিয়রা জিজ্ঞেস করে যখন আমাদের অবস্থাটা ফিল করে তখন কিছুটা হেল্প করে। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোন কোন ব্যক্তি বা সংস্থা মাঝে মধ্যে একটু-আধটু খাবার নিয়ে আসে। নিজেদের মধ্যে যার কাছে যা আছে তা দিয়ে চালিয়ে নেই। তবে কোনটিই নিয়মিত নয়, এমনকি যেভাবে খাদ্য-খাবারের ব্যবস্থা চলছে তাকে অনিয়মিতও বলা যাবে না, বলা যায় মাঝেমধ্যে খাই। স্লোগানের পর স্লোগান দিয়ে যাচ্ছি, সে অর্থে খাওয়া-দাওয়া প্রায় হচ্ছেই না। অনেকটা অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে। এভাবেই চলছে। অথচ আমি খেয়াল করলাম, তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনার একটুও কমতি নেই। ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছে, গাচ্ছে গণসঙ্গীত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গান, পথ-নাটক করছে, সাথে আরো কতকি? মনের গভীরের সুপ্ত চেতনার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলেছে জাতিকে চাঙ্গা করার দীপ্ত প্রয়াসে।

কিন্তু কতক্ষণ পারা যায়? একটানা ওরা আর কত পারবে? ওদেরওতো শরীর!! ওদেরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে, ভাবতে হবে সমগ্র বিবেকবান মানুষকেই। ওদের এ উৎসাহকে ধরে রাখার জন্য করণীয় সবকিছুই করতে হবে। যারযার অবস্থান থেকে সে সে ভাবুন কি করা যায়। আমি বিষয়টি আন্তরীকভাবে বিবেচনা করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকলকে বিনীত অনুরোধ করছি।

আমি একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট, তাও প্রথম সারির নয়, একেবারে তলানীর দিকের। আমার আর্থিক সঙ্গতি তেমন নেই যা দিয়ে এদেরকে বড় আকারের সহযোগিতা করতে পারি। পরিচিত যারা আছেন তাদের মাধ্যমে চেষ্টা করছি আমার সামর্থ অনুযায়ি সহযোগিতা করার। গত পরষু একটি সংস্থার প্রধানকে বলে গতকাল থেকে সমাবেশের আশেপাশে ৪টি মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করেছি। এতে সমাবেশে আগত নারী-পুরুষদের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকেও দু’টি মোবাইল টয়লেট দেওয়া হয়েছে। নিজের কাছে টাকা-পয়সা যা ছিল তা প্রায় শেষ করে এখন বন্ধুদেরকাছে হাত পাতছি এবং অনুরোধ করছি তারাও যেন কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে। আমারমতো স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এভাবে অনেকেই করছেন, অনেকে বরং অনেক বেশী বেশীই করছেন। নইলেতো এ সমাবেশ এভাবে টিকে থাকার কথা নয়। যারা এ সমাবেশটি পরিচালনা করছেন তাদের কষ্ট ও প্রয়োজনের কথা ভেবে অনেকেই এভাবে মনের তাড়নায় এগিয়ে এসেছেন।

গণজাগরণ মঞ্চের জন্য গতকাল আরো কয়েকটি নতুন স্লোগান দিয়ে এসেছি, দিয়েছেন আরো অনেকেই। আজ থেকে লক্ষ কন্ঠে সেগুলো সমাবেশে উচ্চারিত হবে। স্লোগানগুলিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চে পাঠিয়েছি তাদের অনুরোধে, তারা এগুলো তাদের সমাবেশে প্রয়োজন অনুযায়ি ব্যবহার করছে।

যে কয়েকজনের আর্টিস্টিক স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠছে সমগ্র সমাবেশ, কাঁপছে টিভির রুপালী পর্দা এবং তা ধনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে কাঁপিয়ে তুলছে সমগ্র জাতির বিবেক; সেই স্লোগানের লীডে থাকা লাকি ও সুমনার যে কি অবস্থা তা বলে বোঝানো যাবে না। সুমনা কথা বলতে পারছে না। তার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না, গলা ভেঙ্গে ব্যাথায় একাকার। এই চারদিন-রাত সে ওখানেই আছে। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে, তারপরেও মনে এতোটুকু ক্লান্তি নেই। ব্যস্ততার ফাঁকে সুমনাকে পেয়ে গেছি বলে তার কথা এখানে বলতে পারছি। অন্যদের অবস্থা হয়তো আরো খারাপ, আমার সাথে দেখা হয়নি বলে তাদের সম্পর্কে বলতেও পারছি না।

দুঘন্টারও বেশী সময় পাশাপাশি বসে আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলাম, সুমনার সাথে। বহুবার বললাম, তোমার কথা বলার দরকার নেই, ভোকাল রেষ্ট দাও। বার বার তার একই উত্তর কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। বললাম তুমি ও তোমরা অসুস্থ হয়ে গেলে চলবে কিভাবে? বলল, অসুস্থ হলেও জীবনতো থাকবে, জীবন থাকলে স্লোগানও চলবে। তার মনের জোরের কাছে আমার সহমর্মিতা পরাজিত হল। গতকাল মধ্য রাত্রের পরে আমি যখন বাসায় ফিরি তখন সে তার সতীর্থদের সাথে ওখানে কিভাবে রাত কাটাবে সে প্ল্যান করছে।

মেয়েদের কতো কি শারিরীক বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে, এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে ওরা কি করবে তা ভেবে স্বস্থি পাচ্ছি না। কিভাবে ওদেরকে সাপোর্ট করা যায় সে বিষয়টি যদি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে মাথায় রেখে ও সম্মান করে কেউ একটু আগুয়ান হন, তাহলে ভাল হয় কিনা তাও বুঝতে পারছিনা। ওদের যে কেউ, যে কোন সময় অসুস্থও হয়ে যেতে পারে, তখন বিশেষ ধরণের মেডিকেল সাপোর্ট নিশ্চিত করা দরকার। ওদের সাথে যদি কেউ যোগাযোগ করতে চান তাহলে গণজাগরণ মঞ্চে যেতে হবে, কারণ ওদের অধিকাংশের মোবাইলেই চার্জ নেই, এজন্য বাইরে থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের স্লোগানের মধ্যে রিংটোন বা ভাইব্রেশন কোনটাই শোনা সম্ভব নয়। উপস্থিত হয়ে স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে কত মানুষ স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে আজ রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে এই প্রজন্ম চত্বরে জড় হয়েছে।

সবশেষে আমি যেটুকু বলে প্রথম পর্বের সমাপ্তি টানতে চাই তা হলো, একাত্তরে যেভাবে বাবা-মা তাদের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন, এখন সেভাবে ওদেরকেও সহযোগিতা করুন। এটা আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ। আপনার সন্তান শাহবাগে ইতিহাস সৃষ্টি করছে, ওদেরকে এ ইতিহাস লিখতে দিন। ওরা যে প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করে বা চকিুরী করে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান যেন ওদের এ অনুপস্থিকে যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে সম্মান দেখায় সেটি নিশ্চিত করুন। তা না হলে ওদের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। যদি তা না-ও হয় তাহলে এর জন্য এখানের অংশগ্রহণকারীরা পরে দুর্ভোগ পোহাতে পারে। কেন তা পোহাবে? নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সমগ্র জাতির বিবেককে চলমান রাখার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে যারা পরিশ্রম করে চলেছে, এতোটুকু ইরেগুলারিটির জন্য কেন তারা পরে বিব্রত হবে? জাতির বৃহত্তর মুক্তির স্বার্থে কসাই কাদেরের বিচারের রায় রিভিউ হওয়াটা যেমন জরুরি, ওদের ব্যক্তি জীবনের জন্য এই সামান্য বিষয়টুকুও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সংশ্লিষ্ঠ সবার প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, ওদের জন্য যথাযথ বিকল্প সুযোগের ব্যবস্থা করুন, যাতে ওরা আরো বেশী উৎসাহিত হয়।



এ আন্দোলন আমাদের, এ দাবী গণমানুষের। জেগেছে নতুন প্রজন্ম। বিজয় সুর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবে না। বিজয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা। (৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)।



বিষয়: অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক হন, স্বপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে কিভাবে কাজে লাগাবেন সেটা ভাবুন

৬ষ্ঠ দিনে প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে শহরতলীর সীমানা ছাড়িয়ে শ্যামল বাংলার নিভৃত জনপদে। নব প্রজন্ম আজ উত্তাল আবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। স্কুলে-স্কুলে, কলেজে-কলেজে সমস্ত ছাত্রসমাজ আজ যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে সোচ্চার। ইংরেজী মাধ্যমে পড়া যে সন্তানটিকে মা ভাত মাখিয়ে খাইয়ে না দিলে খেতে পারে না, সে ছেলেটিও আজ রাজপথে। আজ তার মাথায়ও ‘যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই’ লেখা ব্যানার।সেও আজ স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে তুলছে গণজাগরণের প্রজন্ম চত্বর। স্বাধীনতা যুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্তির দৃপ্ত শপথের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত আজ নব প্রজন্ম। যে মা তার ছেলেকে মিছিলে না যাওয়ার দোহাই দিয়েছে, সেই মা নিজেই আজ ছেলেকে নিয়ে রাজপথে। একটাই দাবী; ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই।

শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। একাত্তরে পরাজিত ঐ সমস্ত রক্তচোষা হায়নার দল আবারও নেমেছে ষড়যন্ত্রে। ষড়যন্ত্র পরিচালনার জন্য এই খুনী, ধর্ষকেরা ভয়ে ভীত হয়ে রাজপথ ছেড়ে বেছে নিয়েছে সাইবার জগৎ। খুলেছে অনেক লিঙ্ক, ছদ্মবেশে ঢুকে গেছে আমাদের অনেক লিঙ্কে। ভালমানুষির ছদ্মবেশে, যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির স্বপক্ষে থাকার ভান করে রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, বাসে বসা পাশের লোকটিকে টার্গেট করে নিস্পাপ আলাপের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে ছড়িয়ে দিচ্ছে নানান নেতিবাচক মন্তব্য। আপনারা সতর্ক থাকুন। এ মিথ্যাচার তাদের পুরোনো কৌশল। একাত্তরে জনগণ তাদের মিথ্যাচারের জাল ছিন্নকরে বেরিয়ে এসেছিল। আজও বেরিয়ে আসবে।

গতকাল পঞ্চম দিনে গণজাগরণ মঞ্চে আরো নতুন কিছু স্লোগান যুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি ছিল এমন;

* ‘জামাতে ইসলাম – মেড ইন পাকিস্তান’

* ‘একাত্তরের প্রেতাত্বা – পাকিস্তানে ফিরে যা’

* ‘আমি মুক্তি – তুই রাজাকার

আমি মানুষ – তুই জানোয়ার’

* ‘বাশের লাঠি তৈরী করো – জামাত শিবির ধোলাই করো’

* ‘রসি ধরে দেব টান – ফাঁসি দিয়ে নেব জান’

* ‘র তে রেটিনা – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’

* ‘রস্বই তে ইসলামী ব্যংক – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’

* ‘ফ তে ফোকাস কোচিং – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’

* ‘রস্বই তে ইবনেসিনা – তুই রাজাকার তুই রাজাকার’… ইত্যাদি।

এরমধ্যে কয়েকটি স্লোগান আগে উচ্চারিত হলেও গতকাল তার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়া বিশেষ করে কিছু বিদেশী মিডিয়া যুদ্ধপরাধীদের তল্পিবাহকেরমতো কাজ করছে। এগুলোর ব্যপারে সজাগ থাকুন। উল্লেখযোগ্য ভূয়া খবরের মধ্যে কয়েকটি হলো;

- গণজাগরণ মঞ্চে আসা এক মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ধর্ষণ করেছে ছাত্র লীগের ছেলেরা,

- এ সমস্ত ওলামাদের (রাজাকারদের) বিরুদ্ধে ফাঁসির মহড়া দিতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে গণজাগরণ মঞ্চে একজনের মৃত্যু হয়েছে,

- সমন্বয়কারী ইমরান এইচ সরকার আওয়ামীলীগের নাটক মঞ্চস্থ করছে, এ মঞ্চ আওয়ামীলীগের সাজানো নাটক…ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে কাজ করাতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চ দেশের মানুষের ইমোশনকে এক করে সংগঠিত করছে, চর্চার মাধ্যমে সে ইমোশনকে আরো ধারালো করছে, কিন্তু এ মঞ্চ নিজে নিজেই আইন সংশোধন করতে পারবে না, খুনীদের ফাঁসি দিতে পারবে না। রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে এনে তাকে দিয়েই এই কাজটি করাতে হবে। কে সেই রাজনৈতিক শক্তি সেটি খুঁজে বের করতে ভুল করলে আবারও আমাদের অর্জন আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হবো। আমাদের কাজে ও কথায় সেই রাজনৈতিক শক্তিকে যেন ছোট না করে ফেলি সেদিকে সতর্ক হতে হবে। এটা ঠিক যে, প্রত্যাশিত সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলি আমাদের অনেক প্রত্যাশাই পুরণ করতে পারেনি, তাদের প্রতি আমাদের অনেক ক্ষোভ আছে, অনুরাগ আছে, বিরাগ আছে। তার পরেও সেটির মাধ্যমেই কাজটি করতে হবে। অতি ইমোশনাল হয়ে যেন আমরা সকলকে মঞ্চত্যাগ না করাই। প্লিজ, বিষয়টিকে যৌক্তিকভাবে ভাবেন। সাফল্য ঘরে তোলার জন্য যাদের সম্ভাব্য সমর্থন প্রয়োজন, গণজাগরণ মঞ্চে তাদের প্রবেশের দরজা খোলা রাখার বিষয়ে আমরা যেন কৌশুলী হই।



এ আন্দোলন আমাদের, এ আন্দোলন গণমানুষের, এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তির, বিজয় আমাদের হবেই। (১০ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)























বিষয়: সাবধান, কারো কারো অতিবিপ্লবীতা মঞ্চের ক্ষতির কারণ হতে পারে।



প্রজন্ম চত্তর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ৭ম দিন অতিক্রান্ত হলো। মঞ্চের উত্তাপে আজ উত্তপ্ত সমগ্র জাতি। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেমন ইট-কাদা-বালি-কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে সানন্দে ২১ শে ফেব্রুয়ারী পালন করে শহীদদের প্রতি শদ্ধা পালন ও ঘাতকদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে, আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেভাবে রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে জনরোষের দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছে। সারা দেশের রাজপথ, মেঠোপথ আজ স্বেচ্ছাক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের দখলে। এ ক্ষোভ রাজাকারদের বিরেুদ্ধে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবীতে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে। শ্যামল বাংলার আকাশ বাতাসের ইথারে আজ একটাই স্লোগান ধনিত প্রতিধনিত, ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই’। নিষিদ্ধ চাই, নিষিদ্ধ চাই, আইন করে নিষিদ্ধ চাই, জামাত শিবিরের রাজনীতি।



বিগত বিয়াল্লিশ বছর ধরে আগ্নেয়গিরির বদ্ধ ও উত্তপ্ত লাভার মতো যে ক্ষোভ সমগ্র জাতির বিবেককে খামচে ধরে কুরে কুরে পুড়াচ্ছিল, সে আত্মবিক্ষেবের সম্মিলিত প্রতিফলন এ গণজাগরণ মঞ্চ, যার প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া আজ সমগ্র দেশের আকাশে, বাতাসে, অন্তরীক্ষে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত। জন-মানুষের অন্তরের সুপ্ত প্রত্যাশার কাঙ্খিত বাস্তবায়ন আজ সময়ের অপেক্ষা। বিভিন্ন মিডিয়ায় আপনারা সেটি প্রত্যক্ষ করেছেন। মহান জাতীয় সংসদ এ প্রত্যাশা ও দাবীর সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ দাবী বাস্তবায়নের সকল প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ঠ সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন।



আমার লেখার দ্বিতীয় পর্বে আমি বলেছিলাম যে, গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে কাজ করাতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চ দেশের মানুষের ইমোশনকে এক করে সংগঠিত করছে, চর্চার মাধ্যমে সে ইমোশনকে আরো ধারালো করছে কিন্তু এ মঞ্চ নিজে নিজেই আইন সংশোধন করতে পারবে না, খুনীদের ফাঁসি দিতে পারবে না। রাজনৈতিক শক্তিকে এর পক্ষে এনে তাকে দিয়েই এই কাজটি করাতে হবে। কে সেই রাজনৈতিক শক্তি সেটি খুঁজে বের করতে ভুল করলে আবারও আমাদের অর্জন আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হবো। আমাদের কাজে ও কথায় সেই রাজনৈতিক শক্তিকে যেন ছোট না করে ফেলি সেদিকে খুব সতর্ক হতে হবে। এটা ঠিক যে, প্রত্যাশিত সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলি আমাদের অনেক প্রত্যাশাই পুরণ করতে পারেনি, তাদের প্রতি আমাদের অনেক ক্ষোভ আছে, অনুরাগ আছে, বিরাগ আছে। তার পরেও সেটির মাধ্যমেই কাজটি করতে হবে। অতি ইমোশনাল হয়ে যেন আমরা সকলকে মঞ্চত্যাগ না করাই।সাফল্য ঘরে তোলার জন্য যাদের সম্ভাব্য সমর্থন প্রযোজন তাদের দরজা খোলা রাখার বিষয়ে আমরা যেন কৌশুলী হই। সেটি আবারও আমি জোর দিয়ে বলছি। কারো কারো অতিবিপ্লবীতা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কৌশুলী হওয়া মানে পরাজয় নয়, কার্যউদ্ধারে সহমত পোষণ করা মানে আপোস নয়।



আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, গণজাগরণ মঞ্চ সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। কারো অপ্রোয়জনীয় অতি-উচ্ছাসের আধিক্য যেন আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ না করতে পারে সে বিষয়ে মঞ্চ পরিচালনা কারীরা অত্যন্ত সচেতন। রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে থেকে জনমানুষের অভ্যন্তরীন চেতনাকে ধারণ করে কাঙ্খিত সেই রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা পুরণে গণজাগরণ মঞ্চ বদ্ধ পরিকর।



রাজনৈতিক বৃত্তের ছায়াতলে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা কোন অতি-প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি বা গোষ্ঠি অথবা হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এ ধরণের অরাজনৈতিক কোন অপশক্তির ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চ অত্যান্ত সচেতন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকেও যারা এ মঞ্চে এসেছেন বা মঞ্চের সাথে একাত্ততা পোষণ করেছেন তারা তাদের রাজনৈতিক পরিচয়কে পিছনে রেখে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে, সাধারণ মানুষ হিসেবেই আসছেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়টি এখানে মুখ্য নয়। তারাও মানুষ। এখানে কারো কোন বিভেদ নেই, নেই কোন প্রতিযোগিতা, এটি স্বতস্ফুর্ত মানুষের প্রত্যাশা পুরণের স্বতস্ফুর্ত মঞ্চ।



স্লোগানকন্যা লাকিকে যে আঘাত করেছে সে কোনভাবেই কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট কোন ব্যক্তি হতে পারে না। অন্ততঃ যে সমস্ত দল বা দলের প্রতিনিধিরা সংহতি প্রকাশ করতে এসেছেন তারাতো নয়ই। এটি ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ছদ্মবেশী কোন ব্যক্তির কুচক্রি অপকর্ম। তবে যে-ই করুক না কেন তাকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যপারে মঞ্চকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং মঞ্চ সেটি করবে। লাকি শুধু একটি নাম নয়, লাকি একটি প্রতীক।লাকির মতো আরো যে সমস্ত স্লোগানকন্যা যেমন রিনা, সুস্মিতা, বর্ষা, শোভা, সুমনা আছেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও মঞ্চকে সচেতন থাকতে হবে। ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তি যে কোন সময়ে অপঘাত হানতে পারে।



গতকাল গণজাগরণ মঞ্চের সংযোজন ছিল ঝাড়ু মিছিল। হাজার হাজার মানুষের ঝাড়ৃ মিছিল। যুদ্ধপরাধীদের ধিক্কার জানাতে আসা সাধারণ মানুষের এ মিছিলটি ছিল ঘৃনা প্রকাশের নতুন সংযোজন। আগেও এটি হয়েছে তবে গতকাল এর প্রকাশটি ছিল ব্যপক। এটি গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজন করেনি। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এটি আয়োজন করেছেন এবং সংহতি জানাতে মঞ্চে চলে এসেছেন।



মঞ্চের চারিদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল। আনাচে-কানাচে সর্বত্র উপচে পড়া প্রতিবাদী মানুষ। উপস্থিত জনতার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উত্তোলন এবং ফাঁসির দাবীর পক্ষে সম্মিলিত কন্ঠে গগনবিদারী ‘হ্যাঁ’ বোধক স্বীকৃতির মাধ্যমে যুদ্ধপরাধীদের প্রতীকি ফাঁসির বিষয়টি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। প্রতীকি হলেও লাখো জনতা করতালি দিয়ে স্বাগতম জানিয়েছেন ফাঁসির এ মহড়া।



ষড়যন্ত্র থেমে নেই। চিহ্নিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল মরিয়া হয়ে নেমেছে এ ষড়যন্ত্রে। তারা তাদের দলীয় সভা-সমাবেশে, মিডিয়ায় যেমন মঞ্চ বিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তেমনি চালিয়ে যাচ্ছেন সাইবার জগতে। কৌশলটি পুরোনো। যদিও তাদের এ অপকৌশল মানুষ ধরে ফেলেছে, তার পরেও সাবধানের মার নেই। এদের ব্যপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। চোখ খোলা রাখুন।



রাজপথ হোক আমাদের শান্ত নীড়ে ফেরার প্রতিবাদী মঞ্চ। গণমানুষের এ দাবী পূরণ হবেই। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১১ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয়: গণজাগরণ মঞ্চের পাশে গেলে গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। নিজের মধ্যেই শুরু হয় শুদ্ধি চর্চা

টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া

ফাঁসির দাবী দেশ জুড়িয়া।।

ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই

রাজাকারের ফাঁসি চাই।।



প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ৯ম দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। আগের চেয়েও মঞ্চের উত্তাপে সমভাবে উত্তপ্ত আজ সমগ্র জাতি। বাংলার আকাশে বাতাসে আজ একটাই স্লোগান ধনিত প্রতিধনিত, ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’।

মঞ্চকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি অভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন। এ পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেতনাধারী পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। তবে এরা প্রচলিত মূল ধারার রাজনীতির বাইরের মানুষ। এখানে কোন রাজনীতিবিদদের রাখা হয়নি। গোপনীয়তার স্বার্থে আমি এ উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন তাদের নাম প্রকাশ করছি না। প্রথম থেকে যে সমস্ত স্লোগানকন্যাগণ স্লোগানে স্লোগানে মঞ্চ মুখরিত করে চলেছেন তাদের উপরে চাপ কমানোর জন্য সমমনা ও আগ্রহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের প্রত্যেকটি থেকে ৪ জন করে সদস্য নিয়ে একটি স্লোগান প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এটি একটি কার্যকরী সিদ্ধান্ত।

গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে তথ্যকেন্দ্র গঠন করা হয়েছে এবং সেটি পুরোদমে কাজ করে চলেছে। এখানে বেশ কয়েকটি ল্যাপটপসহ অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। সমমনা ওয়েভ লিঙ্ক ও বিরুদ্ধ লিঙ্কগুলির যতটা তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে তথ্যকেন্দ্র থেকে সেগুলি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তা ঘোষণা করা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটির ডকুমেন্টেশনের বিষয়টিও জরুরি। তথ্যকেন্দ্র সে কাজটি করে যাচ্ছে।



স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে গণজাগরণ মঞ্চ চিকিৎসাকেন্দ্র। বেশ কয়েকজন ডাক্তার সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে কাজ করে চলেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোন সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেণ, সেটি বিবেচনায় রেখেই স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় এগিয়ে এসেছেন চিকিৎসক সমাজে।

বেশ কয়েকটি জায়ান্ট স্ক্রীনে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামান্যচিত্র, গান ও মুভি দেখানো হচ্ছে। গঠিত হয়েছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির স্বপক্ষে এবং জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। সেখানে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী।কিছু কিছু স্বেচ্ছাবেক পানি পানের বুব্যবস্থা করেছেন।

প্রতিনিয়তই আসছে নতুন নতুন স্লোগান। স্যপোটাজের বিষয়টি বারবার উচ্চারিত হয়েছে মঞ্চে। স্যপোটাজের বিষয়ে প্রজন্ম চত্বরসহ সারাদেশে অবস্থিত স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদী গণজাগরণ মঞ্চকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

উপচে পড়ছে মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষ। প্রথমদিকে মহাসমাবেশে যত মানুষ হয়েছিল এখন স্বাভাবিকভাবেই সার্বক্ষণিক স্বতস্ফুর্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশী।

গণজাগরণ মঞ্চের পাশে গেলে গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। নিজের মধ্যেই শুরু হয় শুদ্ধি চর্চা। রাজাকারদের ফাঁসি দিয়ে সমাজকে কলুষমুক্ত করার জন্য এ চর্চা বড় জরুরি। সাথে থাকুন। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : ঘরে বাইরে প্রতিরোধ জামাত-শিবির অবরোধ

‘ফাঁসি চাই’ ফাঁসি চাই, ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ১৩ম দিন অতিক্রান্ত হল। সেই প্রথম থেকেই মঞ্চের উত্তাপে উত্তপ্ত সমগ্র জাতি। ক্রমান্বয়ে তা আরো বাড়ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

মঞ্চকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করার জন্য আরো কিছু নতুন ইনিশিয়েটিভ নেওয়া হয়েছে। বর্জব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যেই মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

জনতা স্ব উদ্দোগে মোবাইল টয়লেটগুলির নতুন নামকরণ করেছে । নামগুলি মাঝে-মধ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে। গতকাল কয়েকটি নাম ছিল এমন; কাদের মোল্লা শৌচাগার, সাকা গু খানা, নিজামি গণ শৌচাগার, সাইদী টয়লেট, গো.আজম শৌচাগার। গণজাগরণে আগত জনতা যাতে সহজে মোবাইল টয়লেটগুলি খুঁজে পায় সে জন্য বিভিন্ন যায়গায় এ্যরো দিয়ে ইন্ডিকেটর দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে ‘গো.আজম গু খানা এই দিকে’।

উঁইপোকার পাখা গজায় মরিবার তরে। জামাত-শিবির অস্তিত্ত সঙ্কটে পড়ে এখন তাদের শেষ কামড় দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টেষ্ট ব্যসিসে তারা ঝটিকা আক্রমনের মহড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আক্রমনের দ্বারা চুড়ান্ত কামড় দেবার চর্চা করছে বলে গণজাগরণ মঞ্চে আগত জনতা আলাপ করছিলেন। তারা বলছিলেন, ঝটিকা আক্রমনের সময়ে ধরা পড়া জামাত-শিবিরের জানোয়ারেরা থানা থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে বা কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করা দরকার। মোবাইল কোর্ট চালু করে সাথে সাথে এদের জেলে দিয়ে দেওয়া উচিৎ বলে মতামত দিয়েছেন অনেকে।

মানুষের মধ্যে যে প্রবল মানষিক শক্তি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় বৃষ্টি হলেও গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মানুষ নড়বে না, হয়তো সাময়িকভাবে কিছুক্ষণ অবস্থানের জন্য আশেপাশের কোথাও যেতে পারেন মাত্র। তবে এতো মানুষের দাড়াবার যায়গা পাওয়া মুষকিল। সে কারণে বৃষ্টি হলে, বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থানরত জনতা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। রোদ্রের তীব্রতাও দিন দিন বাড়ছে এ অবস্থায় শাহবাগে রেইন প্রোটেক্টেড শেড দেওয়া দরকার। নুন্যতম পক্ষে ছাতা সরবরাহ করাটা জরুরি। সমর্থবান কেউ যদি বিষয়টির সমাধানকল্পে এগিয়ে আসেন তাহলে খুব ভাল হয়। এ বিষয়ে আমি সকলকে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

আজ যখন আমি এই লেখাটি লিখছি তখন প্রজন্ম চত্বর, গণজাগরণ মঞ্চের ১৩ম দিন চলছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাত-শিবির তাদের চরিত্রসুলভ জ্বালাও-পোড়াও ঘৃন্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু দিন থেকেই। এ অপশক্তিকে প্রতিরোধের জন্য জনগণের উচিৎ হবে ঘরে ঘরে জামাত-শিবির প্রতিরোধ-দুর্গ গড়ে তোলা। জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা পুলিশের তাড়া খেয়ে কোথাও লুকালে যেন সেগুলিরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এরা দেশদ্রোহী, আপনার আমার চিহ্নিত শত্রু। অনেক জায়গাতেই বীর জনতা এ সাহসিকাতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের সাহস অন্যদেরকেও অনুপ্রাণীত করছে।

কয়েকটি নতুন স্লোগান:

টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া

ফাঁসির দাবী দেশ জুড়িয়া ।।



ঘরে বাইরে প্রতিরোধ

জামাত-শিবির অবরোধ।।



কই পালাবি-কই পালাবি

জনতারই ধোলাই খাবি।।



বীর জনতা ক্ষেপেছে

জামাত-শিবির পেদাইছে।।



আমি মুক্তি – তুই রাজাকার

আমি মানুষ – তুই জানোয়ার।।



জামাত-শিবিরের পিকেটার

মোবাইল কোর্টে জেলে ভর।।



শাহবাগের ডাক এসেছে-

সব সাথীরে খবর দে।

সারা বাংলা ঘেরাও করে-

রাজাকারদের কবর দে।।



গণজাগরণ মঞ্চ জনগণের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন। সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এ আন্দোলনে জনগণের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : ফ্যানাটিক জামাত-শিবির গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে, রাজপথে নামুন ওদের প্রতিরোধ করুন



গণজাগরণ মঞ্চের আজ ১৪তম দিন। রক্ত-চোষক জামাত-শিবির তাদের স্ব-সজ্ঞায়িত ‘ইসলাম’ নিয়ে মাঠে নেমেছে। ওরা আল্লা-নবীর ইসলাম নয়, জামায়াতে ইসলাম নামক এক হিংস্র সমাজ কায়েম করে তাকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেবার লড়াইয়ে ইসলামী বেশে মাঠে নেমেছে ঐ হয়েনার দল। সমগ্র দেশেই ওরা ধ্বংস-তান্ডব চালানোর চেষ্টা করছে। জনসমর্থন না থাকায় সেটি করতে পারছে না। কোথাও কোথাও ওরা আশপাশ থেকে ওদের অশুরীয় শক্তিগুলিকে জড় করে একত্রে সঙ্গবদ্ধ হয়ে হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণ করে সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলছে। এভাবে দেশের কয়েকটি যায়গায় ওরা হিংস্রতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে জনসাধারণকে আতঙ্কিত করে চলেছে।

ওদের দ্বারা পরিচালিত সারা দেশের হিংস্র কর্মকান্ড একাত্তর সালে ওদের কৃতকর্মের কথাকেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মানুষের মনে আজ প্রশ্ন জাগছে, স্বাধীন দেশে এতো ক্ষুদ্র শক্তি নিয়েও যারা এই পরিমান ধ্বংস সাধন করতে পারে, তারা পাকিস্তানী সরকার ও মিলিটারীর সহযোগিতায় কি নির্মমতাই না করেছে। ওদের এ নৃশংস কর্মকান্ড বয়স্ক মানুষদের স্মৃতিকে যেমন একাত্তরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে তেমনি নবপ্রজন্মকে ওদেরই দ্বারা কৃত একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলির বিভিষিকা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যাচ্ছে।

আমাকে একটি জরুরি কাজে রংপুর যেতে হয়েছিল। সেখানে আমার ৪ দিনের কাজ ছিল, তাড়ুহুড়ো করে ২ দিনে শেষ করে ঢাকায় চলে এসেছি। ব্লগারস এন্ড অনলাইন এ্যকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে এবং প্রতিদিন প্রজন্ম চত্তর, গণজাগরণ মঞ্চে যাবার অভিজ্ঞতার আলোকে ওখানের গণজাগরণ মঞ্চ পরিচালনার সাথে যুক্তদেরকে কিছুটা পরামর্শ দেবার সুযোগ এসেছিল। আমি তাদের মঞ্চ আরো ভালভাবে পরিচালনার জন্য আমার স্বচক্ষে দেখা ঢাকার বিষয়াবলি সেখানে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। পরামর্শগুলি হুবহু অনুস্মরণ না করে স্থানীয় বাস্তবতার আলোকে বাস্তবায়নের উপরেই বেশী গুরুত্ব দেবার অনুরোধ করেছি।

রংপুরে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থা দেখে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে এখন সেন্ট্রাল মঞ্চ থেকে সারা দেশের মঞ্চে মঞ্চে ট্যুর করে মঞ্চ পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিনিময় করাটা জরুরি। এর মাধ্যমে অন্যান্য মঞ্চ আয়োজকদেরকে আরো বেশী উজ্জীবিত করা সম্ভব হবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ অহিংস আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার ব্যপারে সহযোগিতা করা যাবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সমন্বিতভাবে একটি ট্যুর প্ল্যান করে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চগুলিতে ট্যুর করলে তা গণজাগরণের ক্ষেত্রে আরো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। ট্যুর প্ল্যানটা অবশ্যই গোপনীয় থাকবে। মানুষ তার মানবিক ইমোশনের প্রতিফলনের প্রতিবাদ জানাতে দেশের বিভিন্ন যায়গায় গণজাগরণ মঞ্চ তৈরী করেছে। এখন এ ইমোশন থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল আনার লক্ষ্যে বৃহত জনগোষ্ঠিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করাটা খুব জরুরি। পরিচালনার দৃর্বলতার কারণে কোথাও কোথাও মঞ্চগুলি আরো গর্জে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে হয়েছে।

জামাত শিবির একাত্তর সালের মতো সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদকে টার্গেট করে সেখানে মঞ্চ সম্পর্কে যাচ্ছেতাই রটনা রটাচ্ছে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলছে, যারা মঞ্চে যায় তারা কুকুর, বিড়াল এবং কাফের।মুসল্লিদেরকে ধোকা দিয়ে আল্লার নামে প্রতিজ্ঞা করানো হচ্ছে যেন তারা কোন গণজাগরণ মঞ্চে না যান। গত বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পরে ঢাকার পীরেরবাগের কয়েকটি মসজিদেও এই কাজ করা হয়েছে। মসজিদকে কেন্দ্র করে এমন জঘন্য অপপ্রচারণা জামাত-শিবিরের জন্য নতুন নয়। ওরা মিথ্যাবাজ বলেই প্রচারিত। দেশের বিভিন্নস্থানে জনগণ স্বপ্রনোদিত হয়েই জামাত-শিবিরের এ মিথ্যাচার প্রতিহত করছে। তারপরেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যে কেন্দ্রীয় গণজাগরণ মঞ্চ থেকে একটা সতর্কবাণী ঘোষণা করা দরকার, যেন এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটলে জনগণ স্বপ্রোনোদিত হয়েই তা প্রতিহত করে।

জামাত-শিবির গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে। পুলিশ, মঞ্চকর্মী তথা সাধারণ মানুষ এদের নৃশংতার বলি হচ্ছে। পুলিশ রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের অংশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দোলনের সময়েও এভাবে কখনও পুলিশ মারা হয়নি। এখন মারা হচ্ছে। মারছে জামাত-শিবির। এটি সুস্পষ্ঠ দেশ বিরোধীতা। ওরা বাববার প্রমান করছে ওরা এ দেশকে মানে না। যেহেতু ওরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করছে, ওদের রক্ত নেশার বলি হতে পারে আরো অনেকে। আরো অনেকেই হতে পারে ওদের গুপ্ত হত্যার বলি। রক্ত খেকোরা রক্ত ছাড়া বাঁচে না। ওরাও রক্তখেকো। ওরাও বাঁচার জন্য এখন রক্ত পান করতে শুরু করেছে। যে কোন যায়গায়, যে কোন ধরণের স্যাপোটাজ হতে পারে। সকলকে এ বিষয়ে সাবধান ও সকর্ত থাকতে হবে।

আসুন রাজপথে নামি। প্রতিহত করি জামাত-শিবির। এ আন্দোলনে স্বতস্ফুর্ত জনগণের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৬ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : সাবধান, যৌন স্যপোটাজের ফাঁদে ফেলানোর জন্য গণজাগরণ মঞ্চে নেমেছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও তাদের ভাড়াটে যৌককর্মী





“ইসলামী ছাত্রী সংস্থা

স্যাপোটাজের নীলনক্সা”



জামাতের পুরুষ ছাও “ইসলামী ছাত্র শিবির” যেমন আধুনিক মারনাস্ত্র হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত মানুষকে হত্যার জন্য, তেমনি তাদের মহিলা ছাও “ইসলামী ছাত্রী সংস্থা”ও মাঠে নেমেছে তাদের নিজ নারী শরীরকে যৌন-অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে গণজাগরণ মঞ্চকে স্যাপোটাজের কুতসিৎ চক্রান্তে ফেলার ষড়যন্ত্রে। এ কাজে জামাত শিবির ভাড়াটে যৌনকর্মীও ব্যবহার করছে।



শিবির যেমন এখন ফ্যাসনে আল্ট্রা, ওদের চেনা দায়; তেমনি ছাত্রী সংস্থাও এখন ছুল-সুরতে ওয়েস্টার্ন মর্ডান। “ছাত্রী সংস্হা”র এভাবে মাঠে নামার মিশনকে অনেকে "সেক্স মিশন" বলে অবিহিত করছেন। পরপুরুষের সামনে উদ্দেশ্যমূলক ও ইঙ্গিতর্পর্ণ যৌন-আচরণ করে, এলিয়ে-মেলিয়ে নিজস্ব শরীরের দর্শন দেখিয়ে এরা একবারে "এক ঢিলে দুই পাখি" মেরে গণজাগরণ মঞ্চকে ভন্ডুল করার পায়তারা করছে। এই-ই তাদের সেক্স মিশন।



লোকজনের সাথে কথা বলে যেটুকু ধারণা পাওয়া গেছে তাতে ছাত্রী সংস্হা’র বর্তমান মিশনটি নিম্নরূপ। মিশন বাস্তবায়নে এই মুহুর্তে তারা শাহবাগের সমাবেশকে টার্গেট করেছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য মঞ্চেও তারা তাদের মিশনকে এক্সপান্ড করতে পারে। টার্গেট অনুযায়ি তারা গণজাগরণ মঞ্চের জমায়েতের মধ্যে কোন একজন পুরূষ ব্লগার বা অন-লাইন এ্যকটিভিস্ট বা আন্দোলনকর্মীকে টার্গেট করছে। টার্গেট করার পরে ছাত্রী সংস্থার কর্মীটি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীটিকে বিপদে ফেলার জন্য যে কাজগুলি করছে সেগুলি মোটামুটি এ রকম। ছাত্রীটি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার শরীরকে ব্যবহার করছে। সে হঠাৎই তার শরীরে হাত দিয়েছে বা এ জাতীয় কিছু বলে চিত্‍কার চেঁচামেচি শুরু করে ফাঁদে ফেঁলার চেষ্টা করছে।



যুদ্ধাপরাধীদের কৌশল অনুযায়ি ছাত্রী সংস্থা এ ধরণের ঘটনা একবার ঘটায় দিতে পারলেই হল। এরপর যা করার তা তাদের মূল সংগঠন জামাত ইসলাম তাদের মিত্রশক্তিদেরকে সাথে নিয়েই করে ফেলবে। তাদের নিয়ন্ত্রীত মিডিয়াসমুহ এবং মাথা ওয়াস হওয়া তৃণমূল আন্দোলনকারীরা এই ঘটনার সাথে তাল মিশিয়ে সেটাকে ভয়াবহ দুর্গন্ধে পরিনত করবে। এরপরে সেই দুর্গন্ধ তাদের নিজস্ব মানবমুখ-স্প্রে দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবে।



এমনতো হতেই পারে যে, আমাদের স্বপক্ষের লোক-জনই ঘটনার প্যাঁচ বুঝতে না পেরে ঘোট পকানো মহিলার কথার উপরে নির্ভর করে তার ফাঁদে পা দিয়ে টার্গেট করা নির্দোষ যুবককে মারধর করতে পারে। আর এমন হলেই কেল্লা ফতে। একেবারে খেল খতম। সমানে প্রচার চলতে থাকবে, শাহবাগে যৌন নিপীড়ন চলছে, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা চরিত্রহীন। ফলশ্রুতিতে অনেক মেয়েরাই গণজাগরণমঞ্চে যেতে ভয় পাবে। কেউ সাহস করে যেতে চাইলেও ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিবাবক তাদের মেয়েকে হয়তো যেতে দিবেন না।



যদি ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে, তাহলে ঘটনা হয়তো উল্টো ঘটবে, উপস্থিত জনতা তখন ফাঁদে পড়া তরুণকে কিছু না বলে ঐ ছাত্রী সংস্হার কর্মীকে ধোলাই দেবে। এতেও জামাত ও তাদের মিত্রদের লাভ। এরা প্রচার চালাবে, শাহবাগে মেয়েরা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা আরো বেশী লাঞ্ছিত হচ্ছে। সাথে সাথে সাক্ষাতকার দেওয়া হবে সাজানো লাঞ্ছিত মহিলার। এমন ঘটনা ঘটলেও আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ি, মেয়েরা আন্দোলন থেকে সরে যাবে আর শাহবাগে তরুণ যুবকরা হয়ে যাবে চরিত্রহীন। কি প্ল্যান!হায়রে জামাতি।



ফরিদপুর থেকে আমার ভাতিজা ফোন করে জানাল যে, সেখানে জামাতিরা ছড়াচ্ছে - গণজাগরণ মঞ্চে পাঁচশ’ করে টাকা এবং বিরানীর প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। যে যাচ্ছে তাকেই দেওয়া হচ্ছে। এর জন্যে সারাক্ষণ ওখানে এতো ভিড়। সে উত্তর দিয়েছে, ‘আমি আমার কাকার সাথে শাহবাগে গেছিলাম, আমি দেখছি আমার কাকা নিজেই খেতে পাচ্ছে না, যা যোগাড় করেতে পারছে তা সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খাচ্ছে।’



সাধু সাবধান!!! যা করার ভেবে চিন্তে করবেন। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মালিক জনগণ। মালিক-পক্ষই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ চায়। সরকারকে মালিকপক্ষের এ দাবী মানতে হবে।



“জামাত শিবির রাজাকার

রক্তচোষা জানোয়ার”



“বাংলার তালেবান

জামাতে ইসলাম”



গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মালিক এ দেশের আপামর জনগণ। সেই জনগণ অর্থাৎ মালিকেরাই আজ রাজপথে অবস্থান নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বদ্ধের সকল প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানাচ্ছে। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত মালিকপক্ষ রাজপথ ছাড়বেনা। সরকারকে মালিকপক্ষের এ দাবী মানতেই হবে। যারা এ দাবীর বিপক্ষে তারা জণগণকে সকল ক্ষমতার উৎস মনে করে না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদেরকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করে এবং জনগণকে মনে করে তাদের সেবাদাস-দাসী। এ মতামত গণজাগরণমঞ্চে আগত সবারই।



যে কোন দেশের সংবিধান সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে প্রতিফলিত করে। মানুষের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য মানুষ না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবী জানানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ এবং রাজপথে অবস্থান নিয়ে সে প্রতিবাদকে পুঞ্জিভুত রূপ প্রদান। রাজপথে থেকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে এখন একটি দাবীই করছে, তা হলো - যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বদ্ধের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকারপক্ষ সাড়া দিতে শুরু করেছে। গলতে শুরু করেছে হিমবাহের বরফ। এ বরফ গলাতে যথেষ্ট উত্তাপ ছড়াতে হয়েছে এবং হচ্ছে। জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনকে যারা কটাক্ষ করে দেখছেন, তারা কি সঠিক কথা বলছেন বা সঠিক কাজটি করছেন? গণজাগরণ মঞ্চে আসা অনেকের মুখেই কথাগুলি প্রতিফলিত হচ্ছিল।



গণজাগরণ মঞ্চে আগত অনেকেই আলোচনা করছিলেন, জামাত এখন জাতীয় প্রচার মাধ্যম দখলের প্রস্ত্রতি নিচ্ছে। তালেবানী স্টাইলে সসস্ত্র হামলা চালিয়ে এসব প্রচার মাধ্যম দখলের পায়তারা করছে তারা।



প্রতিপক্ষের সাইবার যুদ্ধ পরিচালনাকারীদের হিট লিস্ট প্রস্তুত করে তারা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। ব্লগার ও অনলাইন এ্যকটিভিস্ট, স্থপতি রাজিব হত্যা তাদের এ পরিকল্পনার প্রথম সাফল্য। তাদের এ হিটলিস্ট প্রতিনিয়ত রিভাইজ এবং স্প্রেড হচ্ছে।



সুইসাইডাল এ্যাটাকের মাধ্যমে প্রজন্ম চত্বর উড়িয়ে দেওয়া তাদের আরেক মহাপরিকল্পনা। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিপক্ষ কলম যোদ্ধা এবং ব্লগার ও অনলাইন এ্যকটিভিস্ট হত্যাকরে আল্লা-নবীর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদেরকে সে ধর্ম ছেড়ে দিয়ে পুনরায় জামাতে ইসলাম নামক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার মহাপরিকল্পনায় নেমেছে তারা।



অনর্গল মিথ্যা বলা ও কুৎসা রটনায় পারদর্শী, আল্লা-নবীর ইসলাম ধর্ম ছেড়ে জামাতে ইসলাম নামক ধর্মে দীক্ষিত হওয়া এসব কুমানবেরা মিথ্যার বিষবাস্প ছড়ানোর পাশাপাশি ইতিমধ্যে আবার র‌্যাব, পুলিশের পোষাক পরিধান করে মানুষ হত্যার নীলনক্সার আরেক ধোকাবাজিতে নেমেছে।

সকলে সাবধান থাকবেন!!! ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। ভয় পাবেন না। আমাদের ভয় মানে ওদের অতি বাড় বাড়া। যত হিংস্রই হোক না কেন, গুটিকয়েক হিংস্র মানুষ এতোবড় জনসংখ্যার কাছে কিছু না। অপশক্তিকে দমন করতেই হবে।



একাত্তর সালে তৎকালীন পাকি সরকার ছিল ওদের সমর্থক, প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত পাক আর্মি ছিল ওদের দোসর, তখন দেশের মানুষ ছিল সাড়ে সাত কোটি। তারপরেও গণপ্রতিরোধের কাছে তারা পরাজিত হয়েছিল। আজ এ দেশের মানুষ ষোল কোটি, জামাতিদের পক্ষে আজ আর পাক বাহিনীর মাঠে নামার সুযোগ নেই। এতোবড় গণপ্রতিরোধের বিপরীতে তাদের জেতার কোন সম্ভাবরা নেই। বিজয় আমাদেরই হবে হবেই হবে। জয় বাংলা। জয় জনতা। (১৯শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : ধর্মাশ্রয়ী, কুপমন্ডুক জামাত-শিবির ক্রমাগত মিথ্যার সৃষ্টি করে, অনর্গল মিথ্যে বলার মাধ্যমে তা সরলমনা মানুষের ভিতরে ছড়িয়ে দিতে নিখুঁত পারদর্শী । এ তাদের পুরানো কৌশল।



“একাত্তরে হয়নি সাজা, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি শেষ

জেগে ওঠো বীর বাঙ্গালী, গর্জে গঠো বাংলাদেশ”



“বীর বাঙ্গালী জেগে ওঠো, পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ো

পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ো, জামাত শিবির ধোলাই করো”



একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। এক মহা কুপমন্ডুকের জীবন কাটে সারাক্ষণই তারই গৃহপালিত একটি ভেড়ার সান্নিদ্ধে। তার চিন্তা-চেতনা-জগৎ-মহাজগৎ সবই ঐ ভেড়া কেন্দ্রীক। হবারই কথা, কারণ তার জীবনে অন্যকোন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার কোনই সুযোগ হয়নি। সামাজিক বুদ্ধি-জ্ঞান, যুক্তিবোধ, সুস্থ চেতনা এসব তার মধ্যে কাজ করে না। সে সুযোগও নেই। যা হোক, একবার এক অপকর্ম করে সে কাজির বিচারের মুখোমুখি হলো। কাজি তাকে তিনটে প্রশ্ন দিলেন এবং তার উত্তর খোঁজার জন্য তিনদিন সময় দিয়ে বললেন, ‘তুমি যদি এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারো তাহলে তোমাকে মাফ করা হবে, অন্যথায় সাজা।’ তিনদিন পরে বুদ্ধি-জ্ঞান, যুক্তিবোধ ও সুবোধ চেতনা বিহীন লোকটি হাজির হলো কাজির দরবারে। কোন্ প্রশ্নের কি উত্তর দেবে তা বারবার ঝালাই করে সে প্রস্তুত হয়েই এসেছে। শুরু হলো প্রশ্ন-উত্তরের বিচার পর্ব।

কাজির ১ম প্রশ্নঃ পৃথিবীতে সবচে শক্তিশালী কি?

কুপমন্ডুকের উত্তরঃ হুজুর আমার ভেড়া। তার মতো এতো শক্তিশালী ভেড়া এ দুনিয়ায় আপনি দ্বিতীয়টি পাবেন না।



কাজির ২য় প্রশ্নঃ পৃথিবীতে সবচে মোটা কি?

কুপমন্ডুকের উত্তরঃ হুজুর আমার ভেড়া। তার মতো এতো মোটা ভেড়া আপনি আল্লার জাহানে দ্বিতীয়টি পাবেন না। আমি সারাক্ষণ নিজে তার যত্ন নেই। খাওয়াই-দাওয়াই, খালপাড়ের বাতাস লাগাই।

কাজির ৩য় প্রশ্নঃ পৃথিবীতে সবচে দ্রুতগামী কি?

কুপমন্ডুকের উত্তরঃ হুজুর আমার ভেড়া। তার মতো এতো দ্রুতগামী ভেড়া আপনি আল্লা-নবীর জাহানে দ্বিতীয়টি পাবেন না। আমি নিজেও তার সাথে দৌড়ায় পারিনা। হুজুর নিজে না হয় একবার দৌড়ায় দেখেন।

কাজির বিচারে কি রায় হয়েছিল তা আমি জানিনা। তবে গল্পটির শিখন থেকে আমি যা বলতে চাই তা হলো, একশ্রেণীর ধর্মান্ধ কুপমন্ডুকেরা বরাবরের মতো আবারও তাদের অপকর্মের স্বপক্ষে এবং রাজনৈতিক স্ব-স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে পবিত্র ধর্মকে অপদস্থ করা শুরু করেছে। এরা এদের বিপক্ষে যা-ই দেখে না কেন, তাকেই একটা ধর্মীয় লেবাস দিয়ে ধর্ম গেল, ধর্ম গেল বলে ফাল পাড়ে। এখনও তার ব্যতিক্রম নেই। সাধারণ মানুষের সুপ্ত চেতনার সাহসী প্রকাশের ফলে জন্ম নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চ এ মুহুর্তে তাদের মূল টার্গেট। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তাদের অপকর্মের বিরোধীতা করা হচ্ছে বলে, ধর্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে - এটাই এখন তাদের দিবানিশি প্রচারণা। তাদের এ প্রচারণার মাধ্যমে তারা মানুষের মনের ভেতরে ধারণ করা পবিত্র ধর্ম এবং তাদের নিজেদের কৃত অপকর্ম এ দুটোকে সমার্থক করে ফেলেছে। এ বৈসাদৃশ সমার্থক তুলনায় কি ধর্ম যাচ্ছে না?

প্রজন্ম চত্তরের গণজাগরণ মঞ্চে আগত মানুষেরা গভীর নিশিথে সেখানে পাইকাড়ি হারে যৌনকর্ম করে ওটাকে যৌন-মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে, ফলে ধর্ম শেষ হয়ে গেল বলে তাদের উৎকন্ঠার শেষ নেই। ক্রমাগত মিথ্যার সৃষ্টি করা, সরলভাবে অনর্গল মিথ্যে বলায় পারদর্শী এবং তার যথেচ্ছ ব্যবহারে নিখুঁত কৌশুলী এ সমস্ত মহান ভন্ড ধর্মবিদগণ ফটোশপের কারসাজিতে এরকম বহু অবাঞ্চিত মিথ্যা ছবি বানিয়েও প্রচার করে চলেছেন। ছবি প্রিন্ট করে গ্রাম-গঞ্জের সহজ-সরল কোমলমতি মানুষদের মনে মিথ্যে ঘৃনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়ে চলেছেন। তাদের এ মিথ্যা চর্চায় বুঝি ধর্ম যাচ্ছে না!! ধর্ম ও তারা কি সমার্থক হয়ে গেছে? তারা যা করবে সেটাই ধর্ম, তাদের বিপক্ষে গেলেই ধর্মনাশ? এ কোন ধর্মচর্চা? একাত্তরে জাতির যে সমস্ত মহান সুর্য সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, এদের তৎকালীন প্রচারে সে সব সুর্য সন্তানেরাও ছিল কাফের, ভারতের দালাল এবং ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী। কুফরী কাজে সহায়তা করার কারণে নামাজের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হতো। কাজটি করতো এরাই, যারা এখন নিজেদের গায়ে ধর্মের লেবাস লাগিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। অথচ সেই কাফেরদের দ্বারা স্বাধীন হওয়া কাফেরদের দেশ ছেড়ে এরা যাচ্ছে না। বরং নতুন প্রজন্মের গায়ে আবারও কাফের উপাধি লাগিয়ে তাদের হত্যা করছে এবং সে হত্যার বৈধতা তৈরী করছে।

এ সমস্ত কুলাঙ্গারেরা ব্লগার ও অন-লাইন এ্যাকটিভিস্ট স্থপতি রাজিবকে হত্যা করে, সেই হত্যাকে জায়েজ করার জন্য শুরু করেছে বহুমুখী অপপ্রচার। রাজিব আস্তিক ছিল না নাস্তিক ছিল, স্ত্রীমুখী ছিল না গার্লফ্রেন্ডমুখী ছিল, এ জাতীয় বহুবিধ জল্পনা-কল্পনার সৃস্টি ও অপপ্রচারে তারা তাদের ঘুম হারাম করে ফেলছে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরও ঘুম হারাম করার পর্যায়ে নিয়ে যাবার পায়তারায় আছে। একজন ব্যক্তি লম্বা-খাটো, ফর্সা-কলো, সাংস্কৃতিক-অসাস্কৃতিক, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, চালাক-বোকা, আস্তিক-নাস্তিক, স্ত্রীগামী-বেশ্যাগামী যা-ই হোক না কেন, সুনির্দষ্ট কোন ইস্যুতে তার মতামত রাখার সুযোগ ও অধিকার আছে। ইস্যুটি যৌক্তিক কি অযৌক্তিক সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে কারো ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয়কে রামছিলা দিয়ে ধর্মের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধকে ধামাচাপা দিয়ে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর প্রয়াসেই তাদের এ ধর্ম গেল ধর্ম গেল নামক প্রসব ব্যাথা।



সাধু সাবধান। বিজয় আমাদের। জয় বাংলা। জয় জনতা। (২০শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

















বিষয় : তখনকার মন্ত্রণালয়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে জামাতের চারজন মন্ত্রী ছিল। সুতরাং দল হিসেবে জামাত শুধু কোলাবরেটরই নয়, যুদ্ধাপরাধেরও প্রত্যক্ষ অংশীদার







“জামাত শিবির রাজাকার,

বাংলা কি তোর বাপ দাদার?”



সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবী আবারও সর্বমহলে ভীষণ জোরেসোরে উচ্চারিত। সাধারণ মানুষের সোজা-সাপ্টা কথা, যে দলটি এ দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, সে দলের এ দেশে রাজনীতি করার প্রশ্নই আসে না। তাদের উল্টো প্রশ্ন, স্বাধীনতা বিরোধী জামাত কেন স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার অধিকার পাবে? যদি কোনো আইনের বলে তারা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার পায়, তবে সেটা আইনের দুর্বলতা, মানুষের চাওয়া নয়।



যারা জাতির জন্যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করে দেশের স্বাধীনতা এনেছে তাদের স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন কেন বজায় থাকবে? এমনটিও থাকতে পারে না। স্বাধীনতার পর থেকে এতোদিন পর্যন্ত এমন কোন কিছু যদি থেকেও থাকে তবে তা সমুলে মুছে ফেলতে হবে, এটাই এ প্রজন্মের দাবী। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালনকারী প্রজন্ম চত্বরের এ প্রজন্মের প্রতিনিধিগণ দেশের সর্বত্র গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ ও আপামর জনসাধারণের বুকের মধ্যে ধারণ করা সে দাবীটিকেই আবার প্রতিফলিত করলো।



স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য এরকম নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং স্বাধীনতাকামী মানুষের বিরুদ্ধে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, ইসলামে ধর্মের নামে এমন অপপ্রচার চালিয়েছে, তাদের রাজনীতি করাতো দূরে থাক, তারা এ দেশে থাকারই অধিরার রাখে না বলে মনে করে এ প্রজন্মের তারুন্য। জামাত সে সময়ে যত ধরণের অপপ্রচার করেছিল তারমধ্যে মাত্র দু’টি এখানে উল্লেখ করছি। -



(১) একটি অপপ্রচার ছিল, যারা মুক্তিবাহিনীতে গেছে তারা সব নাস্তিক, ভারতের দালাল, অমুসলিম, ইহুদী, কাফের, নাছারা। এদের আত্মীয়-স্বজনরা মসজিদে থাকলে মুমিনদের নামাজ হবে না। এই ফতোয়ার বলে তৎকালীন জামাতীরা যুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনকে মসজিদ থেকে বের করে দিত।



(২) আরেকটি অপপ্রচার ছিল, কাফেরদের সাথে মুসলমানের বিয়ে বৈধ না, সুতরাং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তাদের সকলের বউ তালাক হয়ে গেছে। এদের কালেমা পড়ে মুসলমান হতে হবে এবং হিল্লা বিয়ে দিয়ে বউকে ঘরে তুলতে হবে। এদের প্রচারনামতে, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে যেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা কালেমা পড়ে পুনরায় মুসলমান হয়নি এবং তাদের স্ত্রীদেরকে হিল্লা বিয়ে দিয়ে পুনরায় বিয়ে করে ঘরে তোলেনি, সেহেতু এ প্রজন্মের সবাই জারজ। তাদের ব্যাখ্যামতে আমরা সকলে নাস্তিক জারজ সন্তান, শুধুমাত্র তারা জামাতীরা এবং জামাতী ছাগুরা আস্তিক বৈধ মুসলমান। একারণে তারা গণজাগরণ মঞ্চে আগত সকলকে আবারও নাস্তিক, কাফের, নাছারা বলে জামাত-মুমিনীয় অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।



দল হিসেবে জামাতকে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী পাকিস্তানের কোলাবরেটর বললে তাদের রাজনৈতিক অপকর্মটি ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না, অপরাধের তুলনায় অনেক কম বলা হয়। সে সময়ে জামাত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার ছিল। তখনকার মন্ত্রণালয়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে জামাতের চারজন মন্ত্রী ছিল। সুতরাং দল হিসেবে জামাত শুধু কোলাবরেটরই নয়, যুদ্ধাপরাধেরও প্রত্যক্ষ অংশীদার। ব্যক্তি হিসেবে এই দলের সাথে যুক্তরা যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধ করেছে তেমনি দল হিসেবে জামাতও দলীয় যুদ্ধাপরাধ করেছে। সংসদীয় একটি দলকে সে দায়ভার নিতেই হবে। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি সহ যে সকল কোলাবরেটিভ দল গঠন করা হয়েছিল সেগুলিও জামাতের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করতো। এ কারণে মানুষের বিবেচনায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাত অবশ্য অবশ্যই যুদ্ধাপরাধী। স্বভাবতই ব্যক্তি হিসেবে ঐ দলের সাথে যুক্তরা যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে, দল হিসেবে জামাত ইসলামীও সর্বোচ্চ দলগত সাজা ভোগ করবে। দল যদি সর্বোচ্চ সাজা পায় তাহলে এ দলের সাথে সম্পৃক্ত একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মও সে দায়ভার বহন করবে। জেনেশেুনে খারাপ কাজে যোগ দেবার সাজা পাওয়া উচিৎ বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে।



জামাত সব সময়েই জনমতের বিরুদ্ধবাদী অবস্থানে থাকা একটি কু-রাজনৈতিক দল। যদিও প্রত্যেকটি অপকর্মের পরে পিঠ বাঁচানোর জন্য পরগাছারমতো এর-ওর পিঠে উঠে ঝোপ বুঝে আবার কোপ মারার দলগত ইতিহাসও এদের খুবই সমৃদ্ধ। সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তখন মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। মিথ্যে অধ্যাপক খ্যাত গো. আযম তাদেরই একজন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফারও তারা তীব্র বিরোধিতা করে।



১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বর একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়।সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

জামাতে ইসলামীর মৌলিক আকিদাগুলির ধারা-২ এর ১ থেকে ৫ এ প্রায় একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছে। ২ এর ৫ এ বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও আসলেই না।’ - এটি কোন মর্ত্যের সাংবিধানিক কথা হতে পারে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। বিতর্কহীনভাবে এটি স্বর্গালোকের কোন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কথা-বার্তা হওয়া সম্ভব। শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর সকল সভ্য দেশের সংবিধানের সাথেই এ কথাগুলি সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কথা নিয়ে যাদের সাংগাঠনিক গঠনতন্ত্র তারা রাজনীতি করে কিভাবে? প্রশ্নটি এখন মুখে মুখে।



বর্তমান জামাত ইসলামী পরগাছারমতো বিএনপি’র সাথে গাঁটছাড়া হয়ে আছে। এখানে লেজ কুকুর নাড়াচ্ছে নাকি কুকুর লেজ নাড়াচ্ছে নাকি লেজ ও কুকুর পরস্পরের সম্মতিতে যৌথভাবে নড়ছে সে বিষয়টিকে দুইটি দল টেকনিক্যালী যতোই ধোয়াসা রাখার চেষ্টা করুক না কেন, পাবলিকে এইবার ঠিকই ধোয়াসা চিরে আসল জিনিসটা বুঝে ফেলেছে। সামনে জাতীয় ইলেকশন। হেরে যাবার ভয়ে দল দুটির ইলেকশন এড়ানোর তালবাহানা ও নানা রকম আদিখ্যেতার মিডিয়া গর্জন দেখলে বিষয়টি পাবলিকের কাছে আরো বেশী সুস্পষ্ট হবে।



আসুন প্রজন্ম চত্বর ঘোষিত ৬ দফার সাথে নিজে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ি এবং সকলকে জড়িয়ে ফেলি। সবাই-ই আছে আমাদের সাথে, বিনি সুতোর দাবী-মাল্যটা শুধু ঠিকমতো গাঁথতে হবে। বিজয় আমাদেরই।জয় বাংলা। জয় জনতা। (২২শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : কালের কান্না শুনিতে কি পাও?



(এই পর্বটি একটি বিশেষ পর্ব। এখানে লেখকের মতামত প্রতিফলিত হয়নি, প্রতিফলিত হয়েছে তাদেরই মতামত যারা গণজাগরণ মঞ্চকে হৃদয়ে ধারণ করেণ। বিশ্লেষণগুলি খুবই ক্রিটিক্যাল। জানার জন্য পর্বটি পড়ার চেষ্টা করুন, হয়তো পেয়ে যাবেন আপনার নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন বা তার উল্টোটি।)



সামাজিক মানুষের পক্ষে দলছুটভাবে বাঁচা যেমন কষ্টের। সমাজ পরিবর্তনের জন্য সত্যিকার অর্থে যা হওয়া উচিৎ সে কাঙ্খিত কাজটি যদি সমর্থিত দল না করে, তবে বিবেকী মানুষের পক্ষে সে দলের সাথে থাকাটা আরো বেশী কষ্টের। সে ক্ষেত্রে দলের সাথে থাকার চেয়ে দলছুট থেকে মুত্যুকে বেঁছে নেওয়াও শ্রেয় মনে হয়।



যে সকল সচেতন মানুষ সরাসরি কোন দলের সাথে জড়িত নয় অথবা সেভাবে জড়িত থাকারমতো কোন বাস্তবতার মধ্যেও নাই, তারাও সামাজিকভাবে যে সমস্ত লোকজনের সাথে ওঠাবসা করে সে সমস্ত লোকেরাও কোন না কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী। ভাবাদর্শের সাথে মিল থাকার উপরে নির্ভর করেই মূলত ব্যক্তি জীবনের ঐ সমস্ত এ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠে। ব্যক্তিজীবনের এসব এ্যাসোসিয়েশনে নানান দলমতের সমন্বয়ের লোকজন থাকলেও, সমাজের কোন ক্রান্তিলগ্নে আল্টিমেটলি সকলে এক-সহাবস্থানে থাকতে পারে না, অন্তর্নিহিত আদর্শে মিল থাকা লোকজনের সাথেই তখন সখ্যতা কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়। অন্যরা তখন শুধু দূরেই সরে যায়না, দুর্বলতা জানার সুযোগ নিয়ে বন্ধুঘাতিও হয়ে পড়ে।



প্রজন্ম চত্বর শাহবাগকে ঘিরে আমাদের অনেকেরই তেমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা আমি নিজে যেমন ফিল করছি, তেমনি দুপুর থেকে সতীর্থদের মুহুর্মুহু ফোনে তার প্রতিচ্ছবিও দেখতে পাচ্ছি। মনের ভেতরে দ্রোহের গর্জন সত্তেও কেন যেন সবাই একটু অসহায় বোধ করছে। এ অসহায়ত্ব বোধের অনুভুতি কেন অনুভুত হচ্ছে সে প্রশ্ন উঠে আসাটা হয়তো অবান্তর নয় বরং স্বাভাবিক। আমি নিজের মত প্রকাশ না করে তাদের মতামতগুলিকেই অনেকটা সঙ্কলন আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমি নিজে থেকে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। আগেই রলে রাখছি এ লেখায় আমার সতীর্থরা হয়তো কষ্ট পাবেন। তবে সে জন্য আমাকে গালি না দিয়ে বরং কষ্টকে করণীয় হিসেবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ি কাজ করার প্রত্যয় গ্রহণ করাটাই উত্তম হবে বলে মনে করছি। এ মুহুর্তে তাদের কাছে সেটাই প্রত্যাশিত।



কসাই কাদেরের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় সকল সুবোধ-সম্পন্ন মানুষ মনের ক্ষোভে স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল। এখনও তারা রাজপথেই আছে, কৌশলগত কারণে একাধারে প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান না নিয়ে একটু ভিন্নভাবে অবস্থান নিয়ে আছে আরকি। প্রজন্ম চত্বর আপাতত স্লোগান বিহীন মনে করলেও আসলে তা নয়। স্বতস্ফুর্ত লোকজন ঐ পবিত্র যায়গা ছেড়ে যাচ্ছেনা। তারপরেও প্রজন্ম চত্বরের ঘোষনার মধ্যে এই যে এতোটুকু কৌশলগত শুন্যতা, এরই মধ্যে জামাত শিবির মাঠ দখল করে ফেলছে। ঘোষণা দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম স্থগিত করার সাথে সাথেই যুদ্ধবিরোধীদের দ্বারা রাজপথ দখলের বিষয়টিতে গণজাগরণমঞ্চের সাথে সংহতি ও আত্মার সম্পর্ক আছে এমন অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকশিত জামাত-শিবিরের তান্ডবলীলার খবর দেখে তাদের মধ্যে এ ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।



কসাই কাদেরের রায়ের পরে মানুষ রাস্তায় নেমেছে নিজ গরজে। মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগত অনুভুতিতে আঘাত লাগার কারণেই তারা স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে নেমে এসছিল। মানুষের এ সুপ্ত চেতনাকে সত্যিকারঅর্থে ধারণ করলে আওয়ামীলীগেরই এ গণজাগরণ ঘটানোর কথা, অন্য কেউ নয়। বরং সেটিই প্রত্যাশিত ছিল। বিগত নির্বাচনে জনগণ সে ম্যান্ডেটও আওয়ামীলীগকে দিয়েছে। অথচ তেমন গণজাগরণ করতে আওয়ামীলীগ ব্যর্থ হয়েছে। তার পক্ষে কাজটি করে দিয়েছে সাধারণ জনগণ। আওয়ামীলীগ কাজটি করতে পারলে মানুষের এভাবে মাঠে নামতে হতো না, সব ফেলে আমাদেরও এভাবে দিবানিশি পড়ে থাকতে হতোনা।



কোন এক পর্যায়ে এসে হয়তো আওয়ামীলীগ বা তার অঙ্গ এবং সমমনা সংগঠনগুলি পরোক্ষভাবে গনজাগরণের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, তবে সেটুকই পর্যাপ্ত নয় বলে অনেকের অভিমত। এতোবড় একটি দল এতটুকু করলেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। তাদের মতে গণজাগরণের এ কাজটি করাই ছিল আওয়ামীলীগের দায়িত্ব, অথচ সেটি করে দিয়েছে আমজনতা। তারা স্পষ্ট করেই জানে গণজাগরণের ফলাফল শেষ পর্যন্ত যাবে আওয়ামীলীগেরই ঘরে। কারোরই এতে কোন আক্ষেপ নাই। বরং তারা খুশী। আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদেরকে ভালভাবে নিশ্চিন্ন করে ক্ষমতায় থাক সেটাই তাদের চাওয়া। অনেকের আত্মীয়-স্বজনই এই দলটি করেই একাত্তরে শহীদ হয়েছে, সে কারণেই বোধ হয় দলটির প্রতি তাদের এ প্রত্যাশার যায়গাটি অভিমানে রূপ নিচ্ছে। কারণ তাদের প্রত্যাশিত চাওয়াটি কাঙ্খিতভাবে বাস্তবায়নের দিকটি সম্পর্কে তারা শঙ্কামুক্ত হতে পারছেনা। সে ভরশার যায়গাটিকে শক্ত করার দায়িত্ব আওয়ামীলীগেরই। ক্ষোভের কারণে অনেকই বলছে, বর্তমান অবস্থায় যেহেতু আওয়ামীলীগের কোন বিকল্প নাই, তাই বাধ্য হয়েই এর পক্ষে আছি এবং এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদেরকে এভাবে ঠেকিয়ে সমর্থক বানিয়ে রাখার থেকে বরং আমাদের অনুভুতির যাগাটিকে জয় করেই আওয়ামীলীগ তাদের দায়িত্ব পালন করলে ভাল হতো।



গণজাগরণ মঞ্চে আগত মতামত প্রদানকারীদের সকলে একটি ব্যপারে একমত যে, এ সময়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না থেকে অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে এমন একটি গণজাগরণের কথা স্বপ্নেও কল্পনা করা যেতনা। এমন প্লটই তৈরী হতো না, গণজাগরণতো দূরের কথা। এ কৃতিত্ব অবশ্যই আওয়ামীলীগের, তবে সেই কৃতিত্বের জন্য আত্মতুষ্টিতে ভুগে বরাবরেমতো এবারেও ফলাফল ঘরে তোলার বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনাও উজ্জল হয়ে দেখা দিচ্ছে। এভাবে বারবার ফলাফল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।



গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মানুষ ঘরে উঠতে না উঠতেই কেন মাঠ জামাত শিবিরের দখলে? এটি একটি ক্ষুব্ধ প্রশ্ন। কাল রাত্রেই মাত্র জনতা মঞ্চ ছেড়ে ঘরে উঠেছে, আর আজ সকালেই জামাত শিবিরের আক্রমনে সেই শাহবাগেই পুলিশ আহত! সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙ্গচুর! সাংবাদিক আহত। মসজিদে মসজিদে নারায়ে তকবীর স্লোগান। কিন্তু কেন? কোথায় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কর্মতৎপরতা?



ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল স্তরের রাজপথ স্বতস্ফুর্ত জনতা দখল করে আওয়ামীলীগের হাতে তুলে দিয়ে তারপরে তারা ঘরে ফিরে গেছে। এরফলে সকল রাজপথ আজ আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের দখলে থাকাটাই ছিল প্রত্যাশিত। সেটা হয়নি। কেন হয়নি, এ প্রশ্নটি মতামত প্রদানকারীদের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসছে। আওয়ামীলীগের সংগঠনের কর্মীর পরিবর্তে মাঠে আছে পুলিশ। কেন? সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে পুলিশ থাকতে পারে, কিন্তু মূল ভূমিকায় কেন পুলিশ আছে? পুলিশ কি আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কাজ করে দেবে? পুলিশ করবে সরকারের কাজ, আওয়ামীলীগের কাজ নয়। জামাত শিবিরের দখলে চলে যাওয়া মাঠ জনগণ দখল করে দেবার পরেও এখন কেন সে মাঠ আওয়ামীলীগের দখলে নেই? এ প্রশ্ন সকলের।



আওয়ামীলীগের একটা বড় সুবিধা হলো সাধারণ মানুষ যা চায় এই দলটি সেই ধারার রাজনীতিটই করে। ফলে কি করতে হবে জনগণকে সে কথাটি আর আওয়ামীলীগকে বুঝিয়ে বলতে হয় না, বলার আগেই জনগণ চাওয়ার ব্যপারে একমত হয়ে প্রত্যাশা পুরণের জন্য অপেক্ষায় থাকে। কিচ্ছু করতে হয়না আওয়ামীলীগকে, শুধু মাথা নাড়ালেই চলে। তার পরেও আওয়ামীলীগ বারবার ব্যর্থ হয়। একবার নয়, বারবার। আসলে কি দলটি রাজনীতি বোঝে? এ দলের সমর্থক হয়েও সতীর্থদের মাঝে এ ক্ষুব্ধ প্রশ্ন প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খাচ্ছে। জনগণই সব যোগাড় করে এনে গালে তুলে খাওয়ায় দিচ্ছে, তারপরেও আওয়ামীলীগ তা খেতে পারছে না। উগরে দিচ্ছে। এটি খুবই হতাশার।



দলে কতবেশী অপরিপক্ক লোকের প্রাধান্য থাকলে এটি হয়?? এতোটা অপরিপক্ক মানুষ নিয়ে কি আওয়ামীলীগেরমতো দল চলে, নাকি চলা উচিৎ? কারা চালায় দলটি? জামাতের লোক ঘাপটি মেরে বসে নেইতো? জামাতের কোটি কোটি পেট্রোডলারের বদৌলতে সুপ্ত মীর জাফরের ঘাঁটি হয়ে যায়নিতো আওয়ামীলীগ? ১৮ দল যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে কয়েন হিসেবে এই আওয়ামীলীগারদের মধ্য থেকেই কয়েক নেতা পল্টি খেয়ে উল্টে যাবে নাতো? দলের মধ্যে আরো কয়েকজন সুপ্ত কাদের সিদ্দিকী থাকাটা অপ্রত্যাশিত হলেও অস্বাভাবিকতো কিছু নয়! দলটিকে খুববেশী ভালবাসে এমন সমর্থকেরাই ব্যাথিত হয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে এ প্রশ্নটি করছে। বিএনপিরমতো আমলা-ব্যবসায়ি নির্ভর হওয়া কি দীর্ঘমেয়াদী আওয়ামীলীগকে কিছু দিল?



নিজেদের মধ্যে মারামারি, দলাদলি, গ্রুপিং, লবিং করতে এবং দুর্বল মানুষকে মারতে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা যতোটা সিদ্ধহস্ত, বিপক্ষ দলকে দেখলে এরা ঠিক ততোটাই ভীত। এরা একজন প্রিন্সিপালকে ধরে রাস্তায় মারতে পারে অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পানির ট্যাঙ্কির মধ্যে শিবিরের হত্যায় সহকর্মীর গলিত লাশ দেখেও সেখানে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে পারে না। আমাদের মতো আমজনতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন মাসের পর মাস ‘যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ’ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জনগণকে সচেতন করি, মাত্র কয়েকজন মানুষ প্রেস ক্লাবের সামনে দাড়িয়ে ওদের বিচার চেয়ে হুঙ্কার দেই, গাঁটের পয়সা খরচ করে খালি পকেটে ঘুরি, তখন এই দলের বা এর অঙ্গ সংগঠনের একজন নেতা-কর্মীকেও ঔষধ খেতেও সাথে পাইনা। তাদের জন্য খোলা যায়গায় প্রোটেকশন ছাড়া ওভাবে আসাটা নাকি রিস্কি। তাদের জন্য রিস্কি আর আমাদের জন্য ফুলশয্যা? সারা জীবন ভরে খেটে-খুটে ফলাফল এনে দেবার কাজে থাকবো আমরা আর তা খাবার বেলায় খাবে দলেরই অন্যরা! এমন হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। জামাত-শিবিরের হাতে চারিদিকে মরছে আওয়ামীলীগ, মরবেও তারা, অন্য কেউ নয়। গণজাগরণের এ আন্দোলন এ দলটির যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কিত অবস্থানেরই প্রতিফলন; তারপরেও কেন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উচ্চারিত দাবীর স্বপক্ষে শক্ত অবস্থান না নিয়ে বরং তার ব্যর্থতার দায় নেবারমতো কাজ করছে আওয়ামীলীগ? এ ক্ষোভ অনেকেরই।



গরজাগরণ মঞ্চ আপাততঃ স্থগিত করা হয়েছে। তারপরেও আজকে অনেক আবেগী ও উৎসাহি জনতাই স্বতস্ফুর্তভাবে সেখানে বসে আছেন। আমিও তাদের মধ্যে একজন। এরা খাঁটি সোনা। আমরাই এরা। আমরা কিছু চাইনা। আওয়ামীলীগ ভালভাবে ক্ষমতায় থাকুক, আমরা শুধু এটুকুই দেখতে চাই। পুলিশ ও জণগণের কাঁধে সাংগঠনিক কাজের ভার না চাপিয়ে ক্ষমতায় যাবার জন্য আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের লোকজন প্রকৃত অর্থেই কিছু করার উদ্যোগ নিক এটাই সবার প্রত্যাশা। আমরাও সেখানে থাকবো। সাংগঠনিক দায়িত্বে যে সব বাঘা বাঘা নেতারা আছেন তারা আর বেড়ালের মতো বসে থাকবেন না। এবার যদি গণগনের মনোবল ভাঙ্গে তবে আপনারাও রেহাই পাবেন না। প্লিজ কিছু করুন। জয় বাংলা। জয় জনতা।



(২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)



বিষয় : মওদুদীর ইসলাম বনাম প্রকৃত ইসলামের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং মদিনা সনদ



প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামাত/শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা আবু আ’লা মওদুদিকে এ অঞ্চলের ওলামা, মাশায়েখরা অমুসলিম বলে উল্লেখ করে আসছেন। এর মূল কারণ হিসেবে তারা বলেন, মওদুদির ঘোষিত ইসলাম মূল ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। জামাত শিবির সেই সাংঘর্ষিক ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্যই যতসব অইসলামিক কার্যক্রম করে আসছে। আসুন আমরা প্রকৃত ইসলাম এবং মওদুদীর ইসলামের একটা তুলনামূলক আলোচনা করি এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেই, পবিত্র ইসলাম ধর্মকে বাঁচানোর জন্য আমরা জামাত শিবিরকে প্রতিহত করবো কি করবো না। -



১. মওদুদী বর্ণিত ইসলামে আল্লাহ পাক সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ

“যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)। - (তাফহীমাত, ২য় খণ্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)।



২. মওদুদী বর্ণিত ইসলামে ফেরেশতা সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ

“ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) - (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)।



৩. মওদুদী বর্ণিত ইসলামে নবীদের সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ কয়েকটি উদাহরণ -

৩.১. আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)। - (তাফহীমাত, ২য় খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)।



৩.২. হযরত মুসা আঃ সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ

৩.২.১. যে নিজের অধীনতদের নির্দেশ দেয়া ছাড়াই মার্চ করতে করতে চলে যায়, আর পিছনে জংলার অগ্নির মত বিজিত এলাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে যায়। (নাউজুবিল্লাহ)।-(রেসালায়ে তরজুমানুল কুরআন-২৯/৪-৫)।



৩.২.২. “নবী হওয়ার পূর্বে মুসা আলাইহিওয়াস সাল্লাম দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” - (রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খণ্ড, ৩১ পৃ.)।



৩.৩. হযরত দাউদ আঃ সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ

৩.৩.১. হযরত দাউদ আঃ তার এলাকার ইসরাইলীদের সাধারণ রেওয়াজের বশবর্তী হয়ে উরিয়ার কাছ থেকে তালাকের আবেদন করেন। (নাউজুবিল্লাহ)। - (তাফহীমাত-২/৪২, দ্বিতীয় প্রকাশ, তাফহিমুল কোরআন (উর্দু):৪র্থ খণ্ড, সুরা সাদ, ৩২৭ পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং)।



৩.৩.২. হযরত দাউদ আঃ যে কাজটি করেছিলেন তাতে প্রবৃত্তির কামনার কিছু দখল ছিল, শাসন ক্ষমতার অসংগত ব্যবহারের সাথেও তার কিছু সম্পর্ক ছিল, এবং তা এমন কোন কাজ ছিল যা কোন ন্যায়নিষ্ঠ শাসকের জন্য শোভনীয় ছিল না। -(তাফহীমুল কুরআন-১৩/৯৫, আধুনিক প্রকাশনী, ১১শ প্রকাশ)



৩.৪. হযরত আদম আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরহ আদম আলাইহিওয়াস সাল্লাম মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরিৎ জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” - (তাফহিমুল কোরআন (উর্দু): ৩য় খণ্ড, ১২৩ পৃ.)



৩.৫. হযরত নূহ আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরত নূহ আলাইহিওয়াস সাল্লাম চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” - (তাফহিমুল কোরআন: ২য়খণ্ড, ৩৪৪ পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং)।



৩.৬. হযরত ইব্রাহীম আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিওয়াস সাল্লাম যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন, তখন সাময়িকভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” - (তাফহিমুল কোরআন ১মখণ্ড, ৫৫৮ পৃ.)।



৩.৭. হযরত ইউসুফ আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” -

(তাফহীমাত: ২য় খণ্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খণ্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং)।



৩.৮. হযরত ইউনুস আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরত ইউনুস আলাইহিওয়াস সাল্লাম এর দ্বারা রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” -(তাফহিমুল কোরআন: ২য়খণ্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং)।



৩.৯. হযরত ঈসা আলাইহিওয়াস সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “হযরত ঈসা আলাইহিওয়াস সাল্লাম মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” -(তাফহিমুল কোরআন ১মখণ্ড (সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.)।



৩.১০. মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদাঃ

৩.১০.১. “আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিংবা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” - (তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খণ্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনেঃ ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং এবং কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা (বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী: জুন ২০০২)।



৩.১০.২. “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” - (তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ. ও তরজমানুস্ সুন্নাহ, ৩য় খণ্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)।



৩.১০.৩. “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষণ করেছেন।” -(তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী)।



৩.১০.৪. হযরত মুহাম্মদ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।-(তাফহীমুল কুরআন, সুরায়ে নসর এর তাফসীর)।



৪. সাহাবা কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ

ইসলাম বলে–

ক) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা হল-সাহাবায়ে কেরাম সমলোচনার উর্দ্ধে। তাদের দোষ বর্ণনা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ”। -(শরহুল আকায়েদ পৃষ্ঠা ৩৫২)।

খ) মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করিয়াছেন -আমি তাদের (সাহাবাদের)প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আমার অনুগত। -(সূরা তাওবা-১০০)।

গ) রাসূল সাঃ সাহাবাদের সম্পর্কে বলেন -আমার সাহাবীরা তারকাতুল্য। তোমরা যারই অনুসরণ করবে হেদায়েত পেয়ে যাবে। -কানুযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০০২, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২৪৩৫৫)।



মওদুদী বলে-

ক) “সাহাবায়ে কেরাম সমলোচনার বাহিরে নন। তাদের দোষ বর্ণনা করা যায়। সাহাবাদের সম্মান করার জন্য যদি ইহা জরুরী মনে করা হয় যে, কোনভাবেই তাদের দোষ বর্ণনা করা যাবে না তবে আমার (মওদুদী) দৃষ্টিতে ইহা সম্মান নয় বরং মূর্তি পূজা। যার মূলোৎপাটন এর লক্ষ্যেই জামাতে ইসলামীর জন্ম”। -(তরজুমানুল কুরআন ৩৫শ’ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৩২৭)।

খ) “সাহাবায়ে কিরাম অনেকে মনগড়া হাদিস বর্ণনা করেছেন।” -(তরজমানুল কোরআন ৩৫ সংখ্যা) ঙ/৩)।

গ) “সাহাবাদের মধ্যে জাহেলিয়াতের বদ-স্বভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটে।” -(তাফহীমাত ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃষ্ঠা)।

ঘ) “হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন”। -(তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: পৃষ্ঠা ২২,)।

ঙ) “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাতের সময় ব্যাক্তিসম্মানের কু-মনোবৃত্তি হযরত উমর (রঃ)কে পরাভূত করেছিল। -(তরজুমানুল কুরআন, রবিউস সানি ৩৫৭ হিজরী)।

চ) “হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু এর মাঝে সজন-প্রীতির বদগুণ বিদ্যমান ছিল। -(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ৯৯)।

ছ) “হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খেলাফতকালে এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নেই।-(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৪৬/১৪৩)।

জ) “হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বার্থবাদী, গনিমতের মাল আত্মসাৎকারী, মিথ্যা সাক্ষ্যগ্রহকারী ও অত্যাচারী ছিলেন”। -(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৭৩)।



৫. পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে মওদুদীর কুফরী আক্বীদাঃ কোরআন করিম হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়।” -(তাফহিমাত, ১ম খণ্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা)।



৬. হাদীস সম্পর্কে মওদুদীর ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যঃ “হাদীস কিছু লোক থেকে কিছু লোক পর্যন্ত অর্থাৎ মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে আসছে। এসবকে বড়জোর সঠিক বলে ধারণা করা যেতে পারে কিন্তু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার কোন অবকাশ নেই। আর একথা স্পষ্ট যে, আল্লাহর দীনের যে সকল বিষয় এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলোর দ্বারা ঈমান ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য নির্ণীত হয় সেগুলো গুটিকয়েক লোকের বর্ণনার উপর নির্ভর করে মানুষকে বিপদগ্রস্ত করা আল্লাহ তায়ালা কখনো পছন্দ করতে পারেন না।” -(রাসায়েল ও মাসায়েল, ৬৭ পৃষ্ঠা)।



৭. মওদূদীর পবিত্র ইসলাম বিরোধী কয়েকটি ভ্রান্ত মতবাদঃ



৭.১. পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন ইত্যাদি সম্পর্কেঃ

ইসলাম বলে -ইসলামী পোশাক-পরিচ্ছদ-প্রকৃতি চাল-চলন ইত্যাদি গ্রহণ করবে। এসব ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করবে না। (এমদাদুল মুফতিয়ীন, ২য় খণ্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা)।



মওদুদী বলে -“পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন, আকৃতি-প্রকৃতি চুল কার্টিং ইত্যাদির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করতে কোন দোষ নেই”। -(তরজুমানুল কুরআন, ছফর সংখ্যা, ১৩৬৯ হিজরী)।



৭.২. দাড়ি কাটা ও রাখা ইত্যাদি সম্পর্কেঃ

ইসলাম বলে –

ক) ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-তোমরা গোফ খাট কর আর দাড়ি লম্বা কর। -(তিররমিযী শরীফ, হাদিস নং-২৭৬৩)।

খ) এছাড়া অন্য হাদিসে এসেছে -পুরুষদের স্বাভাবিক প্রকৃতি হল সে তার দাড়ি লম্বা রাখবে। -(আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৫৩)।

গ) দাড়ি লম্বা করার কথা হয়েছে হাদিসে। কাটার কথা কোথাও নেই। তাই সাহাবায়ে কিরামের আমলই আমাদের একমাত্র ভরসা এই ক্ষেত্রে যে, দাড়ি কতটুকু বড় রাখতে হবে? মুসান্নাফে ইবনে শাইবাতে এসেছে-হযরত ইবনে ওমর রা. এর আমল ছিল-তিনি দাড়ি এক মুষ্টি পরিমাণ রাখতেন। সুতরাং দাড়ি এক মুষ্টি পরিমাণ রাখা ওয়াজিব। এর চে’ কম দাড়ি রাখা আর চেছে ফেলার মাঝে কোন পার্থক্য নাই। যেমন জোহরের ফরজ নামায চার রাকাত। দুই রাকাত সারা জীবন পড়লেও যেমন জোহর কোনদিনও আদায় হবেনা। তেমনি এক মুষ্টির কম দাড়ি রাখলে তা কোনদিনও দাড়ি রাখা বলে সাব্যস্ত হবেনা।



মওদুদী বলে -“দাড়ি কাটা ছাঁটা জায়িয। কেটে ছেঁটে এক মুষ্টির কম হলেও ক্ষতি নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এর অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়”। -(রাছায়েল মাছায়েল, ১ম খণ্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা)।



৭.৩. সুন্নতে রাসূল সম্পর্কে মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদঃ

ইসলাম বলে –হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদত,আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র আমাদের অনুকরণের জন্য উত্তম নমুনা বা সুন্নত। মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-তোমাদের জন্য নবীজীর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ২১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫৪৪)।



মওদুদী বলে -“হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদত, আখলাককে সুন্নত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরনের বিদয়াত ও মারাত্মক ধর্ম বিকৃতি। -(রাছায়েল মাছায়েল, ২৪৮ পৃষ্ঠা)।



৭.৪. দ্বীনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদঃ

ইসলাম বলে -দ্বীনের আসল মকছুদ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কায়েম করা। ইসলামী হুকমত উক্ত মকছুদ অর্জনে সহায়ক। -(শরহুল আকায়েদ, ৩০৪ পৃষ্ঠা)।



মওদুদী বলে -“দ্বীনের আসল মকছুদ হলো ইসলামী হুকুমত। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সমস্ত ইবাদত হলো উক্ত মকছুদ অর্জনের মাধ্যম”। -(আকাবেরে উম্মত কী নজরমে, ৬৪ পৃষ্ঠা)।





ঐতিহাসিক মদিনা সনদঃ



১) মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।

২) হযরত মোহাম্মদ (সা:) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকারবলে তিনি মদিনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় কর্তা হবেন।

৩) পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে; কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৪) স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায়কে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা সমবেত প্রচেষ্টায় বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করবে।

৫) বহিঃশত্রুর আক্রমণে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলো স্ব-স্ব যুদ্ধ-ব্যয়ভার বহন করবে।

৬) স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হবে; এর জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দোষী করা চলবে না।

৭) মদিনা শহরকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হলো এবং রক্তপাত, হত্যা, বলাৎকার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।

৮) অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার পাপী বা অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।

৯) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।

১০) ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।

১১) দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

১২) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

১৩) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।

জয় বাংলা। জয় জনতা।(২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১০

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: ভাই এইডা কিসের কিচ্ছা শুনাইলেন?

চরম বিতর্কিত এই আন্দোলনের কারনে দেশ আজ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। অসংখ্য মেধাবী তরুন হারিয়ে গেছে আমাদের মাঝ থেকে। দেশে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া এই আন্দোলনের কারনে রাজনৈতিক সহিংসতায় কত মানুষের অকাল প্রাণ গেছে তার হিসাব আপনাদের কাছেই ভাল আছে। চরম বিতর্কিত এই আন্দোলন থেকে প্রথম সাড়ীর কিছু মিডিয়াকে আক্রমন করা হয়েছে নগ্ন ভাবে। সর্বশেষ আওয়ামীলিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল চরম বিতর্কিত এই আন্দোলনকে প্রশ্রয় ও রাষ্ট্রিয় প্রঢৌকল দেওয়া, ফলাফল হল ৫ টি সিটিতে ন্যাক্কারজনক ভাবে পরাজয় বরণ করা। এখনও সময় আছে আওয়ামীলীগের ভূল স্বীকার করে দেশের জনগনের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১৯

রুবেল১৯৮৭ বলেছেন: ভাই মোমেরমানুষ৭১ এই আন্দোলন যদি বিতর্কতি হয়, তা আপনেদের কিছু অশিক্ষিত মানুষেরে জন্য। আমাদের এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে এই আন্দোলন প্রাণের আন্দোলন।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২২

মোরশেদ পারভেজ বলেছেন: 'আমরা কিছু চাইনা। আওয়ামীলীগ ভালভাবে ক্ষমতায় থাকুক, আমরা শুধু এটুকুই দেখতে চাই। '----- আপনার মতো আরো অনেক লীগার এর এই চাওয়ার জন্য আমি এবং আমার মতো জনতা মন্চ ত্যাগ করেছি।

মন্চের দাবী সরকারের কাছে , সরকার-ই তা সমর্থন করে....... এমন অদ্ভুত আন্দোলন কল্পনাও কষ্টকর।

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৫২

মোহাম্মাদ রাকিবুল হাসান বলেছেন: বিরিয়ানির সাপ্লাই বন্ধ!!!! এটা সরকার ঠিক করলো না... :(

৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪২

চাক বলেছেন: - সমন্বয়কারী ইমরান এইচ সরকার আওয়ামীলীগের নাটক মঞ্চস্থ করছে, এ মঞ্চ আওয়ামীলীগের সাজানো নাটক

এইটাই কি এখোনো কোনো সন্দেহ আছে নাকি...........

মোহাম্মাদ রাকিবুল হাসান ভাই ঠিক বলছেন...

হাহাহাহাহহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা....................

কিছু লোকের লাজ লজ্ঝা কম তাই এখোনো এইটার সাফাই গা্য়.........

৬| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯

চাক বলেছেন: ঐ খানে রাজনিতির বাইরের জারা গেছিল তারা ফেসবুকের জন্ন ছবি তুলতে গেছিল.............ফাউল সব লোক জন।

there are a lot of problem in our country....but there is very hard to find a single person to protest about those.

if you are telling about those we will the rajakar............

৭| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৩০

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
শাহাবাগ গনজাগরন মঞ্চ, আন্দোলনে যা পেলাম।
আমার এই লেখাটিও পড়ুন -
Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.