![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিটা প্রাণ একবারই জন্ম নেয়। একবারই। জেগে ওঠাটা একটা বিপ্লব। বেঁচে থাকার, প্রাণের আকুতি স্বীকার করে নিয়ে স্বীকৃতি দেয়ার বিপ্লব। এমন বিপ্লব ইতিহাস দেখে ক্ষণকালের জন্য। এমন বিপ্লবের আপেক্ষিকতা থাকে কিছু মুহূর্তের জন্য। কিন্তু এর চির লালিত-মানব প্রাণানুভুতি, কাঙ্খিত বিপ্লবের ছাই ঢাকা স্ফুলিঙ্গ বেঁচে থাকে চিরকাল ইতিহাসের প্রতি বাঁকে, প্রতি আবর্তনে। বিপ্লব কখনো ভাঙ্গা শামুকে পা কাটে না। কাদা মাখা পথে কাটা শামুক ছড়িয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সাবধানে পা ফেলে জাগরণের মিছিল শেষতক যাবেই এটাও স্বাভাবিক।
আমাদের প্রাণ আজ শাহবাগে। ওই চৌরাস্তায় মিছিল-মিছিলে, স্লোগান-সূর্যস্লোগানে একাকার কণ্ঠস্বর-বাতাসের তরঙ্গ-স্লোগানের সুর-স্লোগানের প্রতি শব্দ। কাল সন্ধ্যার অস্তমিত সূর্যের আলোয়, শেষ বিকেলের আলো-ছায়া আকাশে সমগ্র শাহবাগ দেখেছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সেই চিরচেনা সংগ্রামী মুখাবয়ব- পেয়েছে আদর্শের আশীর্বাদ। প্রত্যেক বিপ্লবীর প্রাণে প্রাণে পৌঁছে গেছে মাতার বানী। মৃত্যুশয্যায় বলে জানিয়ে যাওয়া মায়ের অমোঘ আদেশ। আম্মা বলে গেছেন,- কথা রাখতে হবে। ৭১ এর ওয়াদা। শহীদ রুমির রক্তের স্রোতে মিশে থাকা ওয়াদা। আম্মা আজ নেই। তবু আম্মা তার সহস্র- লক্ষ বাঙ্গালী সন্তানের ওয়াদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গেছেন। আম্মাকে দেয়া কথা রাখতে হবে। আম্মা এক সোনালী সপ্নের কথা বলে গেছেন। বলে গেছেন এক নতুন রাজাকার মুক্ত দেশের কথা। আম্মা আমাদের মানুষ বলে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। এই মানুষ গুলোর উপর গোলাম আযম এবং তার ৭১ এর দোষর গুলার বিচারের ভার দিয়ে গেছেন। আম্মা এও বলে গেছেন চূড়ান্ত বিজয় আমাদের হবেই!
''My fellow warriors.......You must fulfill your commitment. You must stand united and fight to the very end. Even though I will not be among you. I will know that you--- my millions of Bangalee children---- will live in a free Golden Bengal with your sons and daughters. We still have a long and arduous road ahead. People from all walks of life have joined this battle. People from different political and cultural groups, freedom fighters, women, and students, and youths have all committed themselves to the battle. And I know that there is no one more committed than the people. People are power. So I commit the responsibility of the fight to bring Golam Azam and the war criminals of 1971 to justice and to continue to champion the Spirit of the Liberation War to you--- the people of Bangladesh. For certain, victory will be ours.''
শাহবাগের মোড়ে আন্দোলনরত মানুষ গুলো আম্মার কাছে করা ওয়াদা পালনে ব্যস্ত। সর্বোচ্চ শাস্তি যদি দিতে নাই পারি তবে চূড়ান্ত বিচারে বিজয় আমাদের থাকল না। তাই আজ আম্মার দোহাই শাহবাগে থাকতে না পারেন। তাদের সমর্থন দিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি আদায়ে সাহায্য করুন। তারা রাজপথে আন্দোলন করুক। আর আমরা যারা নানা কারনে পারছি না নিদেনপক্ষে আমাদের ভার্চুয়াল আঙ্গিক থেকে ওই আগুনে ঘি ঢেলে বাস্তবতার যুদ্ধে শামিল হই। এ আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোলন নয়। এ আন্দোলন ট্রাইব্যুনাল বিরোধী আন্দোলন নয়। এটা কাদের মোল্লা সহ অন্যান্য রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আদায়ের আন্দোলন। কোন যুক্তিতেই এটা বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস কিংবা তার উপর অনাস্থা প্রকাশ করছে না। বরং গণদাবিটাকে আদালতের সামনে স্পষ্ট করে তুলছে। আর অনেকে সরকার বিরোধিতার মত বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছেন। সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়ায় এক কথায় বলে দেয়া যায় সরকার একটি গৌণ উপাদান মাত্র। এটা গণদাবী যা সরকার মেটাতে বাধ্য। সরকার জনগনের কাছে, আমাদের কাছে, গণআদালতের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। তাই সরকারের দিকে চোখ না রাঙ্গিয়ে সরকারকে কাজে লাগিয়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারি। আর আদালতের কথা উঠে এসেছে? জনগনের “গণআদালতের” চেয়ে বড় আদালত আর কি হতে পারে। বিচারের ভার জনগণের হাতে। আদালত নিয়মের নিয়ামক মাত্র। তবে এটাও মনেও রাখতে হবে আইনের আদালত আবেগ মানে না পক্ষান্তরে মনের আদালত যুক্তি মানে না।
শাহবাগের এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে স্পষ্ট করে দিতে চাই, আইন সংশোধনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী এই দলটিকে এই দেশের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ৭১ এ যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, মা বোনদের ধর্ষণ করেছে, বুদ্ধিজীবীদের গুম-হত্যা করেছে, তাদের এই দেশে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণের কোন সুযোগ থাকা উচিত না। অতীতে ক্ষমতায় থাকা কালে বিভিন্ন সরকার ঘাতক-দালালদের বিচার না করে যে ভুল করেছে, তার প্রায়শ্চিত্ত করার একমাত্র সুযোগ বর্তমান সরকারের হাতে থাকবে তখনি, যদি তারা আন্দোলনকে দলীয় করনের চেষ্টা না করে, আন্দোলনের দল নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। আবার আওয়ামী লীগ সরকার সব নিয়ে গেল বলে যারা আন্দোলন বিমুখ হয়ে পড়ছেন তাদের বুঝতে হবে একটি আন্দোলনের বিকাশের ধারাই ভবিষ্যতের পাওয়া না পাওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করে দেয়। আন্দোলন বিমুখ মানসিকতা নিয়ে চললে এবং আন্দোলনের সামান্য দায়িত্ব নিজ কাঁধে না নিলে আপনা থেকেই আন্দোলনের ফল ঘরে আসবে এমন আকাশ কুসুম এবং অলস ভাবনা ত্যাগ করাই শ্রেয়।
এখন প্রশ্ন আসবে কেন নিষিদ্ধ করতে হবে এই দলটিকে? উত্তর একদম সহজ। ৭১ সালে গোলাম আযম, সাইদি, নিজামি, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী ইত্যাকার পশুরা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে যে হত্যাযোগ্য চালিয়েছে তা কোনভাবেই সাধারন হত্যাকাণ্ড বলে মেনে নেয়া যায় না। একটা স্বাধীনতাকামী জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল তারা। ত্রিশ লক্ষ নিরপরাধ মুক্তিকামী সাধারন বাঙ্গালী হত্যা-দুই লক্ষাধিক মা বোনকে পাশবিক অত্যাচার করা ছাড়াও ধারবাহিক লুটতরাজ এবং নিরীহ বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক কর্মীদের দিয়ে জোর পূর্বক গান এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করে তারা বিশ্ব মিডিয়াকে দেখাতে চেয়েছে এ দেশে শান্তি বিরাজ করছে। এ সবই প্রমানিত সত্য।
স্বাধীনতা উত্তর কালে দালাল আইন তৈরি হলেও তা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়। এবং সে জন্যই গোলাম আজমের মত নিকৃষ্ট খুনি এবং গণহত্যার প্রত্যক্ষ মদদ দানকারী ১৯৮৮ সালের ৩০ মে সংবাদ সম্মেলনে বলতে পেরেছে-
আমি এই দেশের শাসক , মন্ত্রী বা গভর্নর ছিলাম না। আমি কিভাবে লোক মারলাম! আজ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে মামলা করেছে বলে আমার জানা নেই। আমি কাউকে হত্যা করেছি, হত্যার প্রেরনা দিয়েছি, এসব আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক আক্রমন ছাড়া আর কিছু নয়।
গোলাম আযম ২৫ মার্চের পর ৬ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল টিক্কা খানের সাথে দেখা করেছিল এবং স্বাধীনতার ১৫ দিন পুর্বে ১ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর প্রধান ইয়াহিয়া খানের সাথে একান্তে বৈঠক করেছিল। ১ সেপ্টেম্বর করাচীতে গোলাম আযম বলেছিল-
পাকিস্তান রক্ষার এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।......দেশের সার্বভৌমত্বের উপর হামলার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে আমাদের দেশ প্রেমিক জনগন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
এছাড়া গোলাম আযম একাত্তর কে নিয়ে সে সময় ভয়াবহ কিছু মিথ্যাচার করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ’৭১ গোলাম আযম বলেন-
পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্যই জামায়তে ইসলামী শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে।... সারা প্রদেশ সামরিক বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও যে কয়েক হাজার লোক শহীদ(!) হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই জামায়তের কর্মী।
ওই একই তারিখে গোলাম আযম আরও বলেন-
যে উদ্দেশ্য নিয়ে জামায়েত রাজাকারে লোক পাঠিয়েছে, শান্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছে, সেই উদ্দেশ্যে মন্ত্রী সভায় ও লোক পাঠিয়েছে।
আজকে আমারদেশ পত্রিকা সহ যারা জামায়তের রাজনৈতিক অধিকার নিয়া কথা বলার দুঃসাহস দেখায় তাদের জন্য বলতে হয়। ৩ ডিসেম্বর করাচীতে গোলাম আযম বলেন-
পররাষ্ট্র দফতরের ভার কোন পূর্ব- পাকিস্তানিকে দিতে হবে, কারন এ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পূর্ব পাকিস্তানিই তথাকথিত বাংলাদেশ তামাশা ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারবে।
কথা বলেন, লিখেন, রাজপথে গণজোয়ার তোলেন। যে রাজাকার এই দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিপক্ষে বিদেশে লবিং করেছে। যে রাজাকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটি তামাশা বলে আখ্যা দিয়েছে তার শাস্তি হতেই হবে। তার অন্তত এই দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার বলে কিছু থাকতে পারে না।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তার সূর্য সন্তান শহীদ রুমিকে দেশের স্বাধীনতার জন্য কুরবানি করে দিয়েছেন। শহীদ রুমি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অঙ্গীকার প্রকাশ করলে তিনি বলেছেন –
যা তোকে দেশের জন্য কুরবানি করে দিলাম।
সত্যিই নিজের সন্তানকে দেশের জন্য কুরবানি করে দিয়েছেন শহীদ জননী। ফিরে আসেন নি শহীদ রুমি।
শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগম রমনা থানায় ছেলেকে দেখতে গিয়ে বলে এসেছেন-
যতই অত্যাচার করুক বাবা কারো নাম বলবি না।
শহীদ আজাদ কারো নাম বলেন নি। মা পরদিন ছেলের জন্য ভাত নিয়ে গিয়ে ছেলেকে আর খুজে পান নি। শহীদ আজাদ মৃত্যুর আগে হয়ত ভাত খেতে পান নি। এলভিস প্রিসলির কোন গান শুনতে পান নি।
আজ শহীদ রুমি এবং শহীদ আজাদের রক্ত ধোয়া বাংলার বুকে গোলাম আযম পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরামের দিনাতিপাত করছেন। জেগে উঠুন সবাই। ঘুমিয়ে থাকার দিন শেষ। স্লোগানে স্লোগানে দাবী তুলুন চাই রাজাকার মুক্ত স্বদেশ। চাই শহীদ রুমি, শহীদ আযাদের রক্তের বদলা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বদলা। জেগে উঠো বাংলাদেশ। নিজেকে ইতিহাসের সাক্ষী নয় বরং সারথি করে তোল। জয় বাংলা।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮
মরুবিজয় বলেছেন: যেখানেই রাজাকার সেখানেই প্রতিরোধ - জয় বাংলা