![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজীরা ইসলামের বিধান অনুযায়ী বিচার করতেন। রাষ্ট্রের ভিত্তি ধর্মীয় হওয়ায় অমুসলমানদের সমানাধিকার ছিল না। তবে তাদের সহ্য করা হত, শাসন কার্যেও নিযুক্ত করা হত। ‘স্বাধীন সুলতানদের আমলে শুধু মুসলমানরা নহে, হিন্দুরাও শাসনকার্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ করিতেন। এমন কি, তাহারা বহু মুসলমান কর্মচারীর উপরে ‘ওয়ালি’ (প্রধান তত্ত্বাবধায়ক)-ও নিযুক্ত হইতেন। বাংলার সুলতানের মন্ত্রী, সেক্রেটারী, এমন কি সেনাপতির পদেও বহু হিন্দু নিযুক্ত হইয়াছিলেন।’
সেন শাসনের উচ্ছেদে জনসাধারণের মনে কোন ক্ষোভের সঞ্চার হয়নি। বৌদ্ধরা তো খুশীই হয়েছিল। রাজরোষ এবং ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তাদের ওপরই হত সব থেকে বেশী। স্বাভাবিকভাবেই মুসলমান আক্রমণকারীদের তারা ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষাকর্তা বা উদ্ধারকর্তা ভেবেছিল। রামাই পন্ডিতের শূন্যপুরাণের ‘নিরঞ্জনের রুস্মা’ ছড়াটিতে সেই রকম মনোভাবই ব্যক্ত হয়েছে:
জাজপুর বাদি, সোল শা ঘর বেদি,
বেদি লয় কন্ন এ লগুন।
দক্ষিণ্যা মাগিতে জায়, জার ঘরে নাহি পায়
শাপ দিয়া পোড়ায় ভুবন ॥
মালদহে লাগে কর, ন চিনে আপন পর
জালের নহিক দিশপাশ।
বলিষ্ঠ হইয়া বড়, দশ বিশ হৈয়্যা জড়,
সদ্ধর্মীরে করে বিনাশ ॥
বেদে করি উচ্চরণ, বের্যা অগ্নি ঘনে ঘন,
দেখিয়া সভায় কম্পমান।
মনেতে পাইয়া মর্ম, সবে বোলে রাখ ধর্ম,
তোমা বিনা কে করে পরিত্রাণ ॥
এইরূপে দ্বিজগন,করে ছিষ্টি সংহরণ,
বড় হইল অবিচার।
বৈকুন্ঠে থাকিয়া ধর্ম, মনেতে পাইয়া মর্ম,
মায়াত হইল অন্ধকার ॥
ধর্ম হৈলা জবনরূপী মাথায়েত কাল টুপি
হাতে শোভে ত্রিকচ কামান।
চাপিয়া উত্তম হয় ত্রিভুবনে লাগে ভয়
খোদা বলিয়া এক নাম ॥
নিরঞ্জন নিরাকার হৈলা ভেস্ত অবতার
মুখেতে বলে দম্বদার।
জথেত দেবতাগণ সভে?হৈয়্যা এক মন
আনন্দেত পারিলা ইজার ॥
ব্রহ্মা হৈল্যা মহামদ বিষ্ণু হৈল্যা নেকাম্বর
আদসু হইলা শূলপাণি।
গণেশ হইলা গাজী কার্তিক হইলা কাজী
ফকির হইলা জথ মুনি ॥
তেজিআ আপন ভেক, নারদ হইলা শেক ,
পুরন্দর হইল মলনা।
চন্দ্র সুর্য আদি দেবে, পদাতিক সেবে
সভে মিলে বাজায় বাজনা ॥
আপনি চন্ডিকা দেবী, তিঁহ হৈলা হায়া ববি,
পদ্মাবতী হৈলা বিবি ন্যুর।
জথেক দেবতাগণ, সভে হয়্যা একমন,
প্রবেশ করিল জাজপুর ॥
দেউল দেহাড়া ভাঙ্গে, কাড্যা দিড়্যা খাএ রঙ্গে
পাখড় পাখড় বোলে বোল।
ধরিয়া ধর্মের পাত্র, রামাঞ্চি পন্ডিত গায়,
ই বড় বিষম গন্ডগোল ॥
‘ধর্ম কথা’র ‘ঘর ভাঙ্গার’ ছড়াতেও একই ইঙ্গিত:
ব্রাহ্মণের জাতি ধ্বংস হেতু নিরঞ্জন,
সাম্বাইল জাজপুর হইয়া যবন।
দেউল দেহারা ভাঙ্গে গোহাড়ের ঘায়,
হাতে পুথি কব্যা কত দেয়াসি পালায়।
ভালের তিলক যত পুঁছিয়া ফেলিল,
ধর্মের গাজনে ভাই যবন আইল।
দেউল-দেহারা যত ছিল ঠাঁই ঠাঁই,
ভগ্ন করি পাড়ে তারে না মানে দোহাই।
তারানাথের বিবরণী থেকে জানা যায় যে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বখতিয়ার খলজীর গুপ্তচরের কাজ করেছিল। তথাকথিত নিম্নবর্গের জনসাধারণ বা অন্ত্যজ পতিতদেরও সেন শাসনের প্রতি কোন রকম মোহ ছিল না। বরং মুসলমান শাসন তাদের ব্রাহ্মণ্য নির্যাতন এবং সামাজিক অপমানের হাত থেকে নিষ্কৃতির সুযোগ দিল। সমুদ্রযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার ফলে যে সব মৎস্যজীবীরা সাগরে যেতে পারছিল না তারাও খুশী হল। ব্রাহ্মণ্য বর্ণাশ্রমী সমাজে যে সব অস্পৃশ্য লোকেরা এত দিন মানুষের সম্মান পায়নি, ইসলাম তাদের সামনে আশার আলো নিয়ে এল। দলে দলে তারা মুসলমান হয়ে যেতে লাগল। রাজশক্তির অভাবে ব্রাহ্মণেরাই সমাজরক্ষায় মন দিল। একদিকে যেমন শ্রীনাথশুলপানি-রঘুনন্দন-কৃষ্ণানন্দ নব্য স্মৃতির বেড়া দিয়ে ব্রাহ্মণ্য সমাজকে বাঁধতে চাইলেন অপরদিকে তেমনি চৈতন্য-অদ্বৈত নিত্যনন্দ আচন্ডালে প্রেম দিয়ে উচ্চ-নীচ সকলকে স্বীকৃতি দিতে চাইলেন। ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-বৈদ্য প্রভৃতি উচ্চ বর্ণের অনেক লোকও মুসলিম রাজ দরবারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভের জন্য মুসলমান শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। লক্ষ্মণ সেনের সভাপন্ডিত হলায়ুধের ভণিতায় রচিত ‘শেক শুভদয়া’র প্রামাণিকতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। কিন্তু লক্ষণ সেনের সভার পঞ্চরত্নের অপর রত্ন উমাপতি ধর যে বখতিয়ারের স্তুতিবাদ করে শ্লোক রচনা করেছিলেন তাতে কোন রকম সন্দেহ নেই।
অষ্টম শতকে ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের ফলে আরবদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি হয়। আরব বণিকগণ ভারতবর্ষ এবং চীন এমন কি দূর প্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করে। বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরগুলোতে আরব বসতি স্থাপিত হয়। চীনের ক্যন্টন বন্দরে আরবদের সংখ্যা এত বেশী ছিল যে সম্রাট তাদের নিজেদের মধ্যেকার বিবাদ বিসম্বাদ মীমাংসার জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে থেকেই কাজী নিযুক্ত করার অনুমতি দিয়েছিলেন। অষ্টম শতকেই বাংলার চট্টগ্রাম বন্দরে একটি আরব বসতি গড়ে উঠেছিল। যে সব আরব বণিক এখানে এসেছিল তারা বাণিজ্য করতেই এসেছিল। দেশ জয় কিংবা ধর্মপ্রচার এদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু নবম শতক থেকে যে সব সূফী দরবেশ এদেশে আসতে থাকেন তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মপ্রচার।
মুহাম্মদ (সঃ)’র মৃত্যুর পর খলিফাদের আমলে ইসলাম ধর্ম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। দামাস্কাসের ওমায়েদ বংশীয় খলিফাদের আমলে বলতে গেলে ইসলাম সর্বাধিক বিস্তৃতি লাভ করে। দেশের পর দেশ বিজিত হয়। খলিফাদের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ, ভোগ-বিলাসিতা দেখে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাঁদের ধর্মগুরু বলে মানতে পারে না। বাহ্যিক আচার বর্জন করে এক শ্রেণীর লোকেরা রহস্যময় গুহ্য সাধনার দ্বারা আল্লাহ্-এর সঙ্গে মিলিত হতে চাইল। সুখ বা রুক্ষ পশমের জোব্বা পরত বলে এরা সূফী নামে পরিচিত হল। (চলবে)
উৎস:
বাংলায় হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক ------ ড. নজরুল ইসলাম
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪১
নিকষ বলেছেন: আরব পৌত্তলিক বংশে জন্মগ্রহন করা আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলীরা যেমনে মুসলিম হইসে; পৌত্তলিক বাঙ্গালিরাও অমনেই মুসলিম হইসে।
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০৪
হারকিউলিস বলেছেন: শিরোনাম টা এমন ভাবে লিখা হয়েছে যে মনে হচ্ছে বাঙ্গালী মুসলিম হয়ে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে।
৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯
জগ বলেছেন: সুশীল
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:০৩
রামন বলেছেন:
না মানতে পারলাম না; বাঙালি ইংরেজ, ,পার্সি বা আরবি হয়ে যাইনি। তবে এটা সত্য বাঙালি তার আদি ধর্ম ( হিন্দু , বেদ ,বৌদ্ধ ) পরিবর্তন করেছে কিন্তু বাঙালির জাতিসত্বার পরিবর্তন হয়নি।
আমার মনে হয় শিরোনামটি "বাঙালি কি করে ধর্ম পরিবর্তন করল" এ ভাবে লিখলে লেখাটা যথাযত হত। অনেক সময় বিতর্কিত শিরোনামের কারণে ভালো লেখার গুনগত মান ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।