নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কি করে বাঙালি মুসলমান হয়ে গেল! - ৩

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩

সূফী সাধনার ওপর বৌদ্ধদের সাধন-পদ্ধতি এবং খ্রীস্টানদের মরমী সাধনার প্রভাব আছে।

কোরানের মধ্যেই সূফী সাধনার বীজ নিহিত আছে। পঞ্চদশ সুরা ‘হিজ্‌র’-এর তৃতীয় রুকুর ঊনত্রিশতম আয়াতে আছে, আল্লাহ্‌ মানুষের মধ্যে তাঁর রুহ্‌ (প্রাণ) সঞ্চার করেছেন। অতএব বাইরে থেকে আলাদা মনে হলেও প্রেমিক মানুষ এবং প্রেমাস্পদ আল্লাহ্‌-র মধ্যে একই স্বরূপ নিহিত আছে। আমিত্বের বিলোপ ঘটিয়ে (ফানা) আল্লাহ্‌-র সঙ্গে মিলিত হওয়াই (বাকা) সূফীর সাধনা। ধুল নুন অল-মিশরি, আবু সয়ীদ অল খবরাজ, বায়েজীদ অল বস্তামী, অল হসল বসরী, রাবেয়া, অল গজালী প্রভৃতি সাধকদের প্রচারের ফলে এই অদ্বৈতবাদী ধর্মীয় দর্শন বেশ প্রসার লাভ করল। সূফীরা বিভিন্ন দেশে তাঁদের মত প্রচারের জন্য বেরিয়ে পড়লেন। ভারতেও অনেক সূফী এলেন। এঁদের মধ্য লাহোরের সেখ ফরীদ এবং দিল্লীর নিজামুদ্দিন আউলিয়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

নবম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে বায়েজীদ বস্তামী, মীর সৈয়দ সুলতান মাহমুদ সাহী-সওয়ার, শাহ নিয়ামতুল্লাহ বুৎসকিন প্রমূখ। সূফী সাধক শেখ জালালুদ্দিন তাবরেজী পান্ডুয়ায় ধর্ম প্রচার করতে আসেন। তাঁর কেরামত অর্থাৎ অলৌকিক কার্যকলাপে মুগ্ধ হয়ে লক্ষণ সেন তাঁকে পান্ডুয়ায় একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন এবং প্রচুর ভু-সম্পত্তি দান করেন। তিনি বহু লোককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক বাংলা জয়ের পুর্বেই এ দেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিল এবং কিছু লোক সে ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমানও হয়েছিল। তবে তাদের সংখ্যা নিশ্চয় তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। দেশে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই ধর্মান্তরের গতি বৃদ্ধি পায় আর বাইরে থেকে মুসলমানরাও বেশী সংখ্যায় আসতে থাকে। দেশের অর্ধেক লোক মুসলমান হয়ে যায়।

যে সব মুসলমান ধর্মপ্রচারক এদেশে ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন এবং যে সব মুসলমান প্রশাসক ১২০৪ থেকে ১৭৫৭ পর্যন্ত বাংলা দেশ শাসন করেছিলেন তাঁরাই ছিলেন বাংলায় মুসলমান সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। সাড়ে পাঁচ শ বছর ধরে মুসলমানরা এখানকার শাসনকর্তা সুলতান বা সুবেদার বা নবাব ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সেনাবাহিনীতে, বিচার বিভাগে এবং রাজস্ব বিভাগে যেমন স্থানীয় লোকদের নিয়োগ করা হতো, তেমনি বাইরে থেকে অনেক মুসলমান নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে প্রবেশ করেছিল। তাদের অনেকে বাংলায় আশ্রয় লাভ করেছিল। আবার দিল্লী ভারতের মধ্যে প্রধান মুসলমান কেন্দ্র হলেও সেখানে সব সময় ষড়যন্ত্র-শঠতা-হত্যা আর রাজনৈতিক গোলযোগ লেগেই থাকত। বাংলা ছিল তুলনায় নিরাপদ। ফলে অনেক আমীর-ওমরাহ নিরাপত্তার আকর্ষণে বাংলায় চলে আসত। ফলে বেশ কিছু সংখ্যক অবাঙালি (আরবী, ইরানী, তুর্কী, আফগানী, হাবশী, মোগল, পাঞ্জাবী, বিহারী প্রভৃতি) মুসলমান বাংলায় বসবাস করতে শুরু করে। এ সবের উপর নির্ভর করেই খোন্দকার ফজলে রাব্বি তাঁর ফারসী গ্রন্থ ‘হকিকত-ই-মুসলমান-ই বাঙ্গালা’-এ দাবী করেছেন যে বাংলার অধিকাংশ মুসলমান বিদেশাগত আরবী, ইরানী, তুর্কী, আফগানী মুসলমানদের বংশধর। কিন্তু তাঁর এ দাবী মেনে নেয়া যায় না।

বাঙালি মুসলমানদের অধিকাংশই দেশজ অর্থাৎ ধর্মান্তরিত মুসলমান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রচারের ফলে এদেশে একটি ধারণা আছে যে এক হাতে কুরআন এবং অন্য হাতে কৃপাণ নিয়ে এ দেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করা হয়েছে। এ দেশের লোকদের বলপূর্বক ধর্মান্তর গ্রহণ করানো হত। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। সাড়ে পাঁচ শ বছরের শাসনে ধর্মান্তর গ্রহণের জন্য কোথাও কোন রকম বলপ্রয়োগ করা হয়নি এরকম দাবী করা যায় না। তবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রকৃত কারণ অন্যত্র নিহিত ছিল।

এ দেশের মুসলমান হয়ে যাওয়ার সব থেকে বড় কারণ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া আকুতি। পাল আমলে দেশে অনেক বৌদ্ধ ছিল। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক সেন-বর্মন- দেব আমলে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হত। সেই অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাবার আশায় তুর্কী আক্রমণকারীদের তারা দেবতার আসনে বসিয়ে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বহু সংখ্যক বৌদ্ধ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। বাংলার যে উত্তর ও পূর্ব অংশে বৌদ্ধদের সংখ্যা বেশে ছিল সেই উত্তর ও পূর্ব অংশে পরবর্তীকালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ছিলেন মুন্ডিত মস্তক অর্থাৎ ন্যাড়া। তাই তাদের নেড়ে বলে বিদ্রূপ করা হত। পরে তাঁরা যখন মুসলমান হলেন তাঁদের সূত্র ধরে সব মুসলমানকেই নেড়ে বলে উপহাস করার উন্নাসিকতা প্রচলিত হল।

সেন আমলে ব্রাহ্মণরা নব্য স্মৃতি বিধানে সমাজকে এমনভাবে বেঁধেছিল যে সাধারণ মানুষ পদে পদে শোষিত, বঞ্চিত এবং অপমানিত হত।‘.... সমাজপতিদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ও ধর্ম-ব্যবসায়ীরা মানুষের বিচার-শক্তি,মনন ও মনুষত্বকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। স্মৃতি-পুরাণ বলে অভিহিত ধর্মশাস্ত্রগুলি অংশ বিশেষ চতুর বিদ্বানরা এমনভাবে রচনা করেছিল যাতে ধর্ম বা শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষের বৃহত্তর অংশকে অনায়াসে মানসিক ভাবে নিজেদের দাস শ্রেণীতে পরিণত করা যায় এবং সমস্ত রকম মানবিক ও সামাজিক অধিকারগুলি বা প্রাপ্যগুলি থেকে বঞ্চিত করে তাদের শ্রম,তাদের ভূমি ও তাদের নারী ভোগ করা যায়।’ সমাজে তাদের ছোয়াঁ তো দুরের কথা, ছায়া মাড়ালেই উচ্চ বর্ণের লোকেরা কলুষিত হয়ে যেত এবং প্রায়শ্চিত করতে হত। উচ্চবর্ণের লোকেরা যাতে তাদের ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলেতে পারে তার জন্য অস্পৃশ্যদের গলায় ঘন্টি ঝুলিয়ে চলতে হত। কিন্তু সে যদি মুসলমান হয়ে যেত, তাহলে কী হত?

পৃথিবীর কোন ধর্মই সম্পুর্ণ সাম্যবাদী নয়-ইসলাম ধর্মও নয়। তবে তৎকালে প্রচলিত ব্রাক্ষণ্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্ম মানুষকে অনেক বেশী সমানাধিকার দেয়। মুসলমান হলে সে অন্তত তত্বগতভাবে আর যে কোন মুসলমানের সঙ্গে সমান। তার ছোঁয়া লাগলে তার সমাজে আর কারও জাত যায় না। কুরআন পড়তে তার কোন বাধা নেই। মসজিদের জামাতে সে যে কোন সম্ভ্রান্ত লোকের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারে। আর ঘটনাক্রমে যদি দেশের বাদশাহও তার পিছনের সারিতে দাঁড়ান, তবে সিজদা দেওয়ার সময় তাঁর মাথা তার পায়ের কাছে এসে পড়ে। ব্রাহ্মণ্য সমাজ যাদের পতিত, অস্পৃশ্য অর্থাৎ ছোয়ারও অযোগ্য করে দুরে সরিয়ে রেখেছিল, ইসলাম তাদের সবরকম শৃঙ্খলমুক্ত করে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিল। সমাজের নিু বর্গের লোকদের মুসলমান হওয়ার এতটাই প্রলোভন ছিল।

সুফী দরবেশরা এই কাজটাই করতেন। যে লোকটাকে ব্রাহ্মণ্য সমাজ জীবনের সব রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে পতিত, অস্পৃশ্য করে গলায় অপমানের ঘন্টা বেঁধে চলতে বাধ্য করেছিল সুফীরা তার গলার ঘন্টা খুলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অন্তত ধর্মীয় অধিকারের ক্ষেত্রে দেশের শাসকের পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে নিু বর্ণের অত্যাচারিত মানুষেরা দলে দলে মুসলমান হয়ে যাচ্ছিল।

বাংলায় মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই সুফীরা আসতে শুরু করেছিলেন। মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাঁদের সংখ্যা আরও বাড়তে লাগল। বিভিন্ন জায়গায় খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করলেন। ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত বাংলায় সুফী প্রচারের স্বর্ণযুগ। ত্রয়োদশ শতকে বীরভুমে আবদুল্লাহ কিরমানী, বর্ধমানে মখদুম শাহ গজনবী ওরফে বাহীপীর, পান্ডুয়ায় দরবেশ শাহ সফিউদ্দিন, পান্ডুয়া-ত্রিবেণী অঞ্চলে জাফর খাঁ, চব্বিশ পরগনায় সৈয়দ আব্বাস আল্লী মক্কী ওরফে পীর গোরাচাঁদ, যশোরে বড় খাঁ গাজী, বাঁকড়ায় মুবারক গাজী, ঘুটিয়ারী শরীফে শরীফ শাহ, পাবনায় মখদুম শাহ দৌলা, দিনাজপুরে পীর বদরুদ্দিন, ঢাকায় সৈয়দ আলী তবারকী, মীরপুরে সুলতানুল আউলিয়া শাহ আলী বাগদাদী, নোয়াখালিতে সৈয়দ মৌলানা আহমদ তনুরী, সন্দ্বীপে বখতিয়ার মৈসুরী, ফরিদপুরে ফরিদুদ্দিন শফর গঞ্জ, শ্রীহট্টে শাহ জালাল, চট্টগ্রামে বদরুদ্দিন আল্লামহ প্রকাশ বদর শাহ প্রমূখ সূফী সাধকগণের চেষ্টায় ইসলাম বিস্তার লাভ করতে থাকে।

চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। এই দুই শতকে গৌড়ের আখি সিরাজুদ্দিন, আলউল হক, নূর কুতুব আলম, শেখ হুসেন, গৌড়-পান্ডুয়া-সোনারগাঁয়ে শেখ জাহিদ, শেখ রাজা বিয়াবানী, শাহ আল্লাহ, ফুরফুরায় শাহ্‌, আনোয়ার কুলী কলবী, কালনায় পীর বদরুদ্দিন বদর-ই-আলম, বীরভুমে মখদুম শাহ জাহিরুদ্দিন, মেদিনীপুরে পীর মাহাজীও, দিনাজপুরে সৈয়দ নেকমর্দান, চিহিল গাজী, রংপুরে মাহীগাজী শাহ জালাল বোখরী, রাজশাহীতে মৌলানা শহদৌলা, হামিদ দানিশমন্দ, বারাসাতের একদিল শাহ, খুলনার উলুখ খানি-ই-জাহান, সোনারগাঁয়ে পীর মাল্লা শাহ, হাজীবাবা সালেহ, বাখেরগঞ্জের দরবেশ খৈদুল আরেফীন, চট্টগ্রামে শাহ মহসীন আউলিয়া, শাহপীর, শাহ চাঁদ আউলিয়া, ত্রিপুরায় হজরত রাস্তী শাহ, নোয়াখালীতে হজরত ফয়জুল্লাহ শাহ প্রমূখ সূফী সাধকরা তাঁদের শিষ্য সহচর নিয়ে ইসলাম প্রচারে ব্যাপৃত ছিলেন।

ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের ফলে সমাজে সূফীদের প্রভাব অনেক কমে যায়। তবুও তাদের আগমন ও ধর্ম প্রচার অব্যাহত ছিল। আরব ইরান-তুরান থেকে এই যে সব সূফীরা এসেছিলেন তাঁরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিলেন। আজমীরের মুইনুদ্দিন চিশতী চিশতিয়া সম্প্রদায়ের সূফী ছিলেন। শেখ বাহাউদ্দিন ধকরিয়া মুলতানী সোহরাওয়ার্দীয়া সমপ্রদায়ের সূফী ছিলেন। চিশতিয়া ও সোহরাওয়ার্দীয়া ছাড়া পঞ্চদশ শতকে কাদেরিয়া এবং নকশবন্দীয়া নামে আরও দুটি সমপ্রদায়ের সূফীরা এদেশে আসেন। কাদেরিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা বাগদাদের আবদুল কাদের জিলানি। সৈয়দ মুহম্মদ গৌথ ভারতে এই মত প্রচার করেন। তুর্কীস্তানের খাজাউদ্দিন নকশবন্দ নকশবন্দীয়া সমপ্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। ভারতে এই সমপ্রদায়ের আদি প্রচারক হজরত মহমদ বাকী বিল্লাহ।

আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরীতে হাবীবী, তয়ফুরী, ফরখী, মকতী, জুনয়দী, কায়রূনী, তুর্সী, ফেরদৌসী, সোহরাওয়ার্দী, যায়দী, ইয়াজী, আহমদী, হুবয়বী, চিশতি এই চৌদ্দটি সূফী সমপ্রদায়’র উল্লেখ আছে। ষোড়শ শতক নাগাত ভারতে শাওরী এবং মাদারী সমপ্রদায়ও প্রাধান্য অর্জন করেছিল। বাংলাদেশে চিশতিয়া, সোহরাওয়ার্দীয়া, কলন্দরিয়া, আহমদীয়া, মাদরীয়া, নকশবন্দীয়া, কাদেরিয়া সমপ্রদায় বিশেষ প্রভাবশালী ছিল। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে শাত্তারিয়া এই সমপ্রদায়ের মত প্রচার করেন। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে বাংলায় সব চাইতে বেশী প্রভাব ছিল কলন্দরিয়া সমপ্রদায়ের। পান্ডুয়ার শাহ সফিউদ্দিন এই মত প্রচার করেন। ষোড়শ-শতকে এই সমপ্রদায় এত প্রসার লাভ করে যে লোক মুসলমান সাধক বলতেই কলন্দর বুঝত। তাই মুকুন্দরাম লিখেছেন, ‘কলন্দর হয়্যা কেহ ফিরে দিবা-রাতি।’ সপ্তদশ শতকে মুসলমানরাও কলন্দর অর্থে সকল সূফী ও মুসলমান সাধককে বুঝত। চট্টগ্রাম থেকে আরবী হরফে মুদ্রিত ‘যোগ কলন্দর’ নামক পুথি আবিষ্কৃত হয়েছে।

কয়েক শ’ বছর ধরে এই সব ধর্মপ্রাণ সূফীদের প্রচারের ফলে দলে দলে লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। সূফীদের সাধনায় বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমে ভারতীয় যোগের প্রভাব পড়েছিল। আবার অন্যদিকে তাঁদের আগমনের পূর্বে এখানে তান্ত্রিক ধর্মকর্ম প্রচলিত ছিল। তান্ত্রিক গুরুদের লোকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করত। সূফী দরবেশদের সাধনাও ছিল তান্ত্রিক গুরুদের মত। ফলে এখানকার সাধারণ লোক খুব সহজেই সূফীদের তান্ত্রিক গুরুদের আসনে বসালো। সূফীরা ইসলামের শরিয়তী বিধান মেনে চলতেন না এবং তাঁদের ধর্মীয় গোঁড়ামী ছিল না। ফলে খুব সহজেই সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হত। ‘হিন্দু সমাজের নিম্নশ্রেণীর লোকেরা নানা অসুবিধা ও অপমান সহ্য করিত। কিন্তু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলে যোগ্যতা অনুসারে রাজ্য ও সমাজে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করার পক্ষেও তাহাদের কোন বাধা ছিল না। বখতিয়ার খিলজীর একজন মেচজাতীয় অনুচর গৌড়ের সম্রাট হইয়াছিলেন। এই সকল দৃষ্টান্তে উৎসাহিত হইয়া যে নিম্নশ্রেণীর হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিত ইহাতে আশ্চর্য বোধ করিবার কিছু নাই।’(চলবে)



উৎস:

বাংলায় হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক ------ ড. নজরুল ইসলাম

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: আপনার এই সিরিজ লেখাটা পড়ছি। ভালো লাগছে।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫

মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।।

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: এদেশে হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মের আগে মানুষ কি ধর্ম পালন করত ? হয়ত করত হয়ত না ! আমার জানা নেই।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে হিন্দু ধর্ম পালন করে এরা বাংগালী থেকে হিন্দু হয়ে যায় নি?

বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে বাংগালী থেকে বৌদ্ধ হয়ে যায় নি ?


নাকি শুধু মাত্র ইসলাম ধর্ম পালন করলেই বাংগালী থাকা যায় না ?

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮

রাখালছেলে বলেছেন: একটা অভিযোগ থাকল, আপনি আপনার পোষ্টে কখনও প্রতিউত্তর দেন না । কারনটা কি জানতে পারি। আমাদের তো কোন প্রশ্ন থাকতে পারে তাহলে..?

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৩৯

রুবেল১৯৮৭ বলেছেন: প্রশ্ন করেত পারেন সবাই। আিম উত্তর দিতে বাধ্য।

৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২২

বাবু>বাবুয়া>বাবুই বলেছেন: উৎস:
বাংলায় হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক ------ ড. নজরুল ইসলাম

এই পোষ্টে মন্তব্যের উত্তর পেতে হলে ড. নজরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এখানে আলোচনার কোন সুযোগ দেখছি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.