![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তবে নিম্নবর্ণের হিন্দুরাই যে শুধু ধর্মান্তর গ্রহণ করত সেরকম ভাববার কোন কারণ নেই। উচ্চবর্ণের হিন্দুরাও অনেক সময় রাজপদের লোভে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করত। বৃন্দাবন দাস লিখেছেন-
হিন্দুকূলে কেহ যেন হইয়া ব্রাহ্মণ,
আপনে আসিয়া হয় ইচ্ছায় যবন।
হিন্দুরা কি করে তারে তার যেই কর্ম
আপনি যে মৈল তারে মারিয়া কি ধর্ম।
এর থেকে বোঝা যায় ব্রাহ্মণ প্রভৃতি উচ্চ বর্ণের লোকেরাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করত। মুসলমান হলে রাজনৈতিক বৈষম্য থাকত না। জিজিয়া কর দিতে হত না। উচ্চ রাজপদ লাভের সম্ভাবনা বেশী হত। আবার অনেকে হিন্দুধর্মের ছুৎমার্গের জন্যও মুসলমান হতে বাধ্য হত। স্পর্শদোষ, খাদ্যদোষ, দৃষ্টিদোষ, এমনকি ঘ্রাণদোষেও অনেক লোক সমাজে পতিত হত। জেনে হোক আর না জেনেই হোক মুসলমানের ছোঁয়া লাগলে, তাদের খাদ্য খেলে এমনকি সে খাদ্যের ঘ্রাণ নাকে গেলেও গোষ্ঠীসমেত সে সমাজে পতিত বা সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হত। ফলে তার মুসলমান হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকত না।
পূর্ববঙ্গের সমুদ্র-স্পৃহ জনসাধারণের পক্ষে মুসলমান হওয়ার আরও একটি কারণ ছিল। ব্রাহ্মণ্য অনুশাসনে সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ ছিল। অথচ সমুদ্রযাত্রার ওপরই তাদের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করত। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে আর সমুদ্রযাত্রায় কোনরকম অসুবিধা নেই। ফলে তারা ইসলাম ধর্মকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশের কোন রাজা এরকম করেছিলেন কি না জানা নেই। তবে কালিকটের জামোরিন সামুদ্রিক বাণিজ্যের সুবিধার জন্য প্রজাদের মুসলমান হতে উৎসাহ দিতেন। মৎস্যজীবী পরিবারে এক বা একাধিক পুরুষ সদস্যকে মুসলমান হতে হত। রাজ পৃষ্ঠপোষকতাও ইসলাম ধর্মের প্রসারে সাহায্য করেছিল। ষোড়শ শতকে পোর্তুগীজ পর্যটক দুয়ার্তে বার্বোসা লিখেছেন, 'প্রায় প্রতিদিনই কিছু ধর্মহীন লোক শাসকদের অনুগ্রহভাজন, বিশেষ করে অনুগ্রহভাজন হয়ে রাজপদ লাভের জন্য অনেকেই মুসলমান হত। তাছাড়া সুলতান-সুবেদার-নবাবরা অনেকেই সুফী দরবেশ প্রভৃতি ধর্ম প্রচারকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। মসজিদ-মক্তব-মাদ্রাসা-দরগা-সরাইখানা' প্রভৃতি স্থাপন করার জন্য ভূমিদান এবং অর্থ সাহায্য করতেন। সরাইখানা এবং খানকাহগুলিতে আশ্রয় ও ভোজনের ব্যবস্থা থাকত। রাজ এবং অভিজাতদের সক্রিয় সহায়তায় পীর-ফকিরেরা অনেক সময় পুকুর কাটাতেন, চিকিৎসালয় স্থাপন করতেন। এ সব সুযোগ-সুবিধা পাবার জন্য অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করত।
এই ভাবে ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার অবিচারের হাত থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য, ইসলামের সোভ্রাতৃত্বে মিলিত হওয়ার জন্য, শাসকদের অনুগ্রহভাজন হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ মুসলমান হয়ে গেল। এই বাঙালি মুসমানদের অধিকাংশই গ্রামে বাস করে। শহরে মুসলমানদের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। এর থেকেই বোঝা যায় যে অধিকাংশ বাঙালি মুসলমানদের পূর্বপুরুষ বিদেশাগত মুসলমানরা নয়- দেশজ ধর্মান্তরিত মুসলমান। আরও প্রমাণ হয় যে এদের জোর-জবরদস্তি করে মুসলমান করা হয়নি-এরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই মুসলমান হয়েছে।
সুলতান-সুবেদার-নবাব বা তাদের সৈনিক-কর্মচারীরূপে যে সব বিদেশী মুসলমান বাংলায় এসে খেলাত-খেতাব-জায়গীর পেয়েছিলেন তাদের অধিকাংশ গৌড়-পান্ডুয়া-ঢাকা-সোনারগাঁ-মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি রাজধানী-শহরের মধ্যে বা কাছে বসবাস শুরু করেছিলেন। মোগল-সুবেদাররা তো এখান থেকে ধন সম্পদ গুছিয়ে নিয়ে দিল্লী-আগ্রা অঞ্চলে পাড়ি দিত। যারা ছিল তাদের মধ্যেও অনেকেই ইংরেজ কর্তৃক বাংলা অধিকারের পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উত্তর ভারতে চলে যায়। কারণ সেখানে তখনও মুসলমান শাসন প্রচলিত ছিল। ফলে খুব অল্প সংখ্যক বিদেশী মুসলমানই বাংলাদেশে ছিল এবং তারাও ছিল কতকগুলি শহর বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তাদের সংখ্যা প্রায় শূন্য। সেখানকার বিশাল সংখ্যক মুসলমান দেশজ ধর্মান্তরিত মুসলমান।
যদি রাজশক্তির সাহায্য নিয়ে জোর জবরদস্তি করে মুসলমান করা হত তা হলে শহরগুলোতেই এবং তার আশেপাশেই মুসলমানদের সংখ্যা বেশী হত। কারণ সেখানেই মুসলমান শাসকদের ঘাঁটি ছিল। যদি বলপূর্বক ধর্মান্তরই মুসলমানের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণ হত তা হলে বাংলা-পাঞ্জাব-সিন্ধু প্রদেশে না হয়ে দিল্লী-আগ্রাতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশী হত। কিন্তু সবাই জানে সেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘিষ্ঠ, অথচ সিন্ধু-পাঞ্জাব-বাংলায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রশ্ন হতে পারে বাংলাদেশে এত বেশী লোকের মুসলমান হয়ে যাওয়ার কারণ কী? উত্তর ব্রাহ্মণ্য অনুশাসন কর্তৃক সমাজের বিরাট সংখ্যক লোককে সব রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে পতিত, অস্পৃশ্য, দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে বাধ্য করা। ব্রাহ্মণ্য অত্যাচারতো বিহার-উত্তর প্রদেশ অঞ্চলেও ছিল, বাংলা অঞ্চলের থেকে বেশী করেই ছিল।
কিন্তু যেখানে ব্রাহ্মণরা তাদের অনুশাসনগুলোকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পেরেছিল। বাংলাদেশে এক অভিজাত শ্রেণী ছাড়া অন্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। বাংলায় ব্রাহ্মণ্য সংস্কার প্রসারিত হয়েছে অনেক পরে এবং তখনও বাংলার কৌমগত মৌল ধর্মকে তা না পেরেছে দুর করতে, না পেরেছে আত্তীকরণ করে নিতে। বৈদিক যুগ থেকে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের এদেশের লোকের প্রতি একটা অন্যায়-অমুলক-তীব্র ঘৃণা এদেশের সাধারণ লোকের সঙ্গে তাদের একটা বিভেদরেখা টেনে রেখেছিল। এ দেশের লোকদের তারা দস্যু (ঐতরের ব্রাহ্মণ), পক্ষীকল্প (ঐতরের আরণ্যক), স্লেছ (মহাভারত), পাপাশয় (ভাগবৎ পুরাণ) বলে উপহাস অপমান করেছে। স্বল্পকালের জন্যও এদের দেশে এলে প্রায়শ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে (বোধায়ন ধর্মসূত্র)। এ দেশের লোকেরা যাতে জ্বরে ভুগে মরে তার জন্য দেবতার কাছে প্রার্থনা করেছে (অথর্ব বেদ)। এ দেশের লোকের প্রতি তাদের ঘৃণা এতই তীব্র ছিল। সেন-বর্মণ-দেব আমলে সেই ঘৃণাকারীরাই যখন এ দেশের সমাজ ও ধর্মীয় জীবনের দন্ড-মুন্ডের কর্তা হল তখন তাদের প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাব সহজেই অনুমেয়। আর সাধারণ লোকের প্রতি সেই সমাজ বিধাতাদের অত্যাচার-অবিচারের মাত্রাও অনুমানযোগ্য। এ দেশের অর্ধেক লোকের মুসলমান হয়ে যাওয়ার কারণ এখানেই নিহিত। (সমাপ্ত)
উৎস:
বাংলায় হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক ------ ড. নজরুল ইসলাম
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩
একিউমেন০৮ বলেছেন: পিলাস দিলাম।
৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
বিডি আইডল বলেছেন: ড. নজরুল ইসলাম এর পরিচয়টা জানাতে পারবেন?
৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১১
নষ্ট ছেলে বলেছেন: বিডি আইডল বলেছেন: ড. নজরুল ইসলাম এর পরিচয়টা জানাতে পারবেন?
৫| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০৪
রুবেল১৯৮৭ বলেছেন: ড. নজরুল ইসলাম এক জন ইতিহাসবিদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:০৯
আহলান বলেছেন: ভালো পোষ্ট। তবে ইসলামের সউন্দর্য ও ঈমান মানুষ কে কাছে টেনেছে