![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বন্ধ কর এই বিচার প্রহসন
বাংলাদেশের মুক্ত এলাকার সংগ্রামী মানুষ, অবরুদ্ধ এলাকার মৃত্যুঞ্জয়ী জনতা এবং তার সংগে বিশ্ব বিবেকের সোচ্চার কণ্ঠ মিলিত ধ্বনী তুলছে :
*বন্ধ কর এ বিচার প্রহসন
*বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত কর
*বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ
মাঠে, ময়দানে, কলে কারখানায় দেয়ালে দেয়ালে সেই কণ্ঠের সোচ্চার ধ্বনী তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছেদুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় অভিযান। এক মুজিবের কণ্ঠ থেকে কোটি কণ্ঠে বজ্রের মত ধ্বনিত হচ্ছে : জয় বাংলাবাংলার জয়।
শিশুঘাতী, নারীঘাতী, গণহত্যাকারী ইয়াহিয়া চক্র কোটি কোটি মানুষের মুক্তি-মন্ত্রের দীক্ষাগুরু, গণতান্ত্রিক জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিচার প্রহসন শুরু করেছে, গোপনে চোরের মত রুদ্ধদ্বার কক্ষে। অথচ গণতন্ত্রের হত্যাকারী দশ লক্ষ বাঙালীর রক্তøাত দানব ইয়াহিয়া চক্রেরই বিচার হওয়া উচিত লোক চক্ষুর আড়ালে নয়বিশ্ব বিবেকের গণ আদলতে।
ইয়াহিয়ার ঘাতক বাহিনী অবশ্য এই বিচারের রায় দিয়ে দিয়েছে আগেই,২৫শে মার্চের মধ্যরাতে কাপুরুষের মত বাঙালী নিধন যজ্ঞে অবতীর্ণ হয়ে। আর সেই কলংকিত অধ্যায়কে চাপা দেবার জন্যে তারা বসিয়েছে বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসন। তারা বন্দুকের নল উদ্যত রেখে বিচারকের আসনে বসেছে তাদেরই নিজেদের মনগড়া অভিযোগের বিচার করতে। তাই শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র এশিয়ার শান্তি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করার জন্যে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সারা বিশ্বের।
স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক একনায়কত্বনা গণতন্ত্র, সামরিক জান্তার পশুশক্তিনা জনগণ? মানুষ কোনটি বেছে নেবে, বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসন আজ বিশ্ব বিবেকের কাছে এই মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে।
বাংলার নব অগ্নিযুগের স্রষ্টা শোষিত মানুষের মুক্তির মূর্ত প্রতীক স্বাধীনতার তুর্যবাদক লক্ষ কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের তথাকথিত বিচারের নামে পাক জল্লাদ সরকার যে প্রহসন শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের কোটি কণ্ঠ আজ সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
সভ্যতার ইতিহাসে বৃহত্তম ট্র্যাজেডি
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ইসলামাবাদের জঙ্গীচক্র কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিচারের নামে যে বিচারের প্রহসন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সভ্যতার ইতিহাসে তা বৃহত্তম ট্রাজেডি ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিবৃতিতে তিনি ন্যায়, সভ্যতা, গণতন্ত্র ও মানবতার নামে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং জাতি-সংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উথান্টের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং তাঁর পরিবারবর্গের বিনাশর্তে মুক্তির জন্য হস্তক্ষেপ করার দাবি করা হয়েছে।
উথান্টের গভীর উদ্বেগ
জাতিসংঘের জনৈক মুখপাত্র বলেন যে, সংঘের সেক্রেটারী জেনারেল মিঃ উথান্ট এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, শেখ মুজিবের ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোন পরিণতি পাকিস্তানের সীমানা ছাড়িয়ে সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করবে।
মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন
শেখ মুজিবের বিচারের নামে খুনী ইয়াহিয়া সরকার যে অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে তাতে মানবিক কারণেই মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রেস অফিসার জন কিং বলেছেন, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা বাংলাদেশে ‘শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আদান প্রদানের’ সম্ভবনার উপর যে খারাপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সেজন্যও মার্কিণরা উদ্বিগ্ন।
ভারত উৎকণ্ঠিত
ভারত সরকার গত ৯ই আগষ্ট (সোমবার) নয়াদিল্লীতে এই বলে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, শেখ মুজিবর রহমানের কোর্ট মার্শাল হলে পাক জঙ্গীশাহীকে তার সমুচিত ফল ভোগ করতে হবে। পর-রাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ স্বরণ সিং লোকসভায় একথা ঘোষণা করেন এবং তার সঙ্গে সঙ্গে পাক জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের সময় শেখ মুজিব জীবিত নাও থাকতে পারেন বলে ইয়াহিয়া খান যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধেও ভারতের তীব্র ক্ষোভের কথা ব্যক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক জ্যুরিষ্ট কমিশনের প্রতিবাদ
জেনেভা থেকে গত ১০ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক জ্যুরিষ্ট কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়াহিয়ার কাছে শেখ মুজিবের বিচারের প্রতিবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে।
কমিমনের সেক্রেটারী জেনারেল নিয়াল ম্যাকডেরমট স্বাক্ষরিত ঐ বার্তায় বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক জ্যুরিষ্ট কমিশন সামরিক আদলতে গোপনে শেখ মুজিবের বিচারের প্রতিবাদ করেছে। বিচারের ক্ষেত্রে গোপন করার কিছু নেই।
আরব সাধারণতন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ
সংযুক্ত আরব সাধারণতন্ত্র পাকিস্তানের জঙ্গীশাহী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমনের বিচারের তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আধা সরকারী সংবাদপত্র আল্-আহ্রাম এক সম্পাদকীয়তে বলেছেন, সামরিক বা গোপন আদালতে বিচারের দ্বারা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব নয়; অস্ত্রবলের সাহায্যেও কখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতকে দাবিয়ে রাখা যায় না।
জয়বাংলা (১) ১ ঃ ১৪ ১৩ আগস্ট ১৯৭১
©somewhere in net ltd.