নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা কোথায় যাচ্ছি ....!

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫২

বিষয় আসক্তি না ছাড়তে পারলে দয়াল পাওয়া/হওয়া যাবে না। বিষয় হলো এক কথায় দুনিয়াতে চলতে গেলে যা যা লাগে (খাদ্য, অর্থ ও বিপরীত সঙ্গ)। এসবের ভিতরে থেকেও এর কোন স্পর্শ লাগতে দেয়া যাবে না বা ঠিক যতটুকু না হলেই নয়।



এ জগতে মানুষ ৪ (চার) টি আবরণের সমন্বিত রূপ - বায়ুম-ল (বিষয় আচ্ছন্নতা), পোষাক, দেহ এবং আত্মা।



মানুষের মূল কাজ ও চিরন্তণ আকুতি হলো, আত্মার সন্ধান ও এর সাথে নিজেকে বিলীন করে দেয়া। অর্থাৎ মূল বিষয় হচ্ছে আমি কে? কোথায় ছিলাম, কোথায় যাব? কেন আসলাম? এই রহস্য উন্মোচন করা বা আত্মপরিচয় লাভ করা। এই সত্যের সন্ধান করতে হলে অবশ্যই উল্লেখিত ৩টি আবরণ ভেদ করতে হবে পরিপূর্ণ ও নিখুঁতভাবে। এর মধ্যে শক্তিশালী আবরণ হচ্ছে বায়ুম-ল বা বিষয় আসক্তি। এই আবরণ ভেদ করতে পারলে বাকিগুলো এমনিতেই উন্মুক্ত হয়ে যায়। এজন্য প্রয়োজন একজন সত্যিকারের গুণী মহাজনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান। যিনি এই খাদ্য, অর্থ ও বিরপীত সঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত সুকঠিন আবরণী চক্রকে ভেদ করে ধারণ করছেন পরম সত্য, যা কিনা তার পরিশুদ্ধ জীবনাচারের মধ্য দিয়ে সহজেই প্রকাশ বা অনুমেয়।



যেমন একটি ডিম (ডিমই হচ্ছে সৃষ্টির মূল রহস্য)। এর বাহ্যিক খোলসটা কতইনা শক্ত কিন্তু দক্ষতার সাথে ভাঙতে পারলে আসল বস্তুটি আপনা আপনিই বেরিয়ে আসে। যদি কেউ ভাঙতে গিয়ে গলদ সৃষ্ট করে আর খোলসের অতি ক্ষুদ্র অংশও ভিতরের অংশে থেকে যায় আর তা যদি কেউ ভক্ষণ করে তবে তার হজম জনিত সমস্যা হওয়া সুনিশ্চিত। ঠিক তেমনি মানুষ যতদিন পর্যন্ত এই বিষয় আচ্ছন্নের আবরণ সম্পূর্ণরূপে ভেদ করতে না পরবে তত দিন পর্যন্ত বিষয় আচ্ছন্নতার মহাঘোরে ঘোরপাক খেতেই থাকবে।



সমাজের এক শ্রেণির সুকৌশলী কতিপয় মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বিষয় আচ্ছন্নতার আবরণ ভেদ করার নামে দুর্বল চিত্তের সাধারণ মানুষদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লোক দেখানো ধর্ম কর্ম পালনে মহাব্যস্ত হয়ে আছে অথচ সূক্ষ্ম বিচারে তারা নিজেরাই আটকা পরে আছে সেই মায়াবী জালে আবার অন্যদিকে যে গুটিকয় মানুষ এই আবরণ ভেদ করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন, সকলে তাদের বাহ্যিকতাকে নিয়ে অতি মাত্রায় লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতার মাতামাতিতে ব্যস্ত, অথচ নিজেদেরকেও যে এই কঠিন দুর্ভেদ্য আবরণ ভেদ করতে হবে সে দিকে কারও ভ্রুক্ষেপই থাকছে না।



ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বরং লোক দেখানো কর্মের ব্যপকতার প্রভাব এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে প্রতিনিয়ত দুরূহ সমস্যার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এই বিষয় আসক্তির কারণেই কালে-কালে, যুগে-যুগে, মানুষে-মানুষে, দেশে-দেশে এত জাত-সম্প্রদায়ের আবির্ভাব আর এ নিয়েই চলতে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত।



আত্মা নামক পরম সত্তা মানুষকে নিত্য আহ্বান করছেন। কিন্তু মানুষ উপরের বিষয় আসক্তির খোলস কিছুতেই ভাঙতে পারছে না আর পরম সত্তার ডাকও শুনতে পারছে না। ভাঙবেতো দুরে থাক ভাঙার চেষ্টা পর্যন্ত করছে না বরং যত্নে আগলে রাখছে। যেমন - পরিবারের নুতন একটি শিশুর জন্ম হলো। তাকে ঘিরে পরিবারের সকলের মনে সেকি আনন্দ! প্রত্যেকেই তাকে নিয়ে দেখতে থাকে আশা-আকাঙ্খার সোনালী স্বপ্ন। এমনি করে সকলের আদর যত্নে শিশুটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে লেখা পড়া শিখানোর জন্য শুরু হয় প্রস্তুতি। কিছুদিন পর তাকে ভর্তি করানো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে শোয়ার আগ পর্যন্ত চলে খেলাধুলা, লেখাপড়া আর খাওয়া-দাওয়ার চাপ। এমনিভাবে তার শিক্ষা জীবনের অনেকটা ধাপ শেষ হয়ে যায়। এর পাশাপাশি সে পরিবার ও সমাজ থেকে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাময় কিছু আচার উৎসবের শিক্ষা পেয়ে থাকে এবং এর মধ্যে সমাজ তাকে আরও শিক্ষা দেয় যে এ সমাজে টিকে থাকতে হলে ৩টি বিষয়ের প্রয়োজন। যথাঃ ১। খাদ্য, ২। অর্থ এবং ৩। বিপরীত সঙ্গ (নারী/পুরুষ) যা বিষয় আচ্ছন্নতার দুষ্ট মায়াচক্র বা আবরণ অথচ সমাজ যেন কিছুতেই সেটি বুঝতে চায় না। এর অবশ্য কারণও আছে, বিষয় আচ্ছন্নে মানুষগুলোই কিনা এই সমাজের অধিপতি, প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী ও পরিচালক। খাদ্য সংগ্রহের তাগিদ থেকে শুরু হয় এ চক্রের প্রারম্ভিকতা। সুতরাং দেখা যায় এই খাদ্য সংগ্রহ করতে প্রয়োজন অর্থের আর অর্থ বা সহায় সম্পত্তি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন বিপরীত সঙ্গের। এই উপলব্ধিকে সামনে রেখে সে শিক্ষা জীবন শেষ করে। এরপর চলতে থাকে কর্মজীবন। শুরু হয় বিষয় আচ্ছন্ন দুষ্টু চক্রের অশুভ খেলা। সেখানে তার মাথায় সর্বক্ষণ একটাই চিন্তা কাজ করতে থাকে কিভাবে কম সময় আর স্বল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ, ক্ষমতা, নাম-যশ অর্জন ও টিকিয়ে রাখা যায়। প্রয়োজনে সে যে কোন ধরনের অনৈতিকতার আশ্রয় নিতেও দ্বিধাবোধ করতে চায় না কারণ তখন তার এ ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায়ও জানা থাকে না যেহেতু সে এ সমাজে নিজের ব্যক্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপিরকর। অবশেষে ব্যক্তিত্ব্ব, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে পরিবার, সমাজ এমনকি নিজস্ব তাগিদে বিপরীত সঙ্গে আবদ্ধ হয়। শুরু হয় জীবনে আর এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সেখানে স্ত্রী/স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজ এমন কি নিজস্ব তাগিদে বিপরীত সঙ্গে আবদ্ধ হয়। শুরু হয় জীবনে আর এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সেখানে স্ত্রী/স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজ, দেশ প্রত্যেকটি বিষয় থেকে আলাদা-আলাদা নতুন নতুন সমস্যা সামাধান বা সীমাহীন চাহিদা পূরণ বা সামাজিকতা রক্ষার দায়বদ্ধতায় লোক দেখানো কর্ম সাধন কল্পে সর্বদাই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়, ঘুম থেকে উঠে পুনরায় ঘুমুতে যাবার আগ পর্যন্ত, এমন কি কখনও কখনও ঘুমের রাজ্যেও। সহ্য করতে হয় সীমাহীন মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা। যতই দিন যেতে থাকে ততই যেন সমস্যা বা বিষয় আচ্ছন্নতার কালো মেঘ জীবনাকাশকে ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলতে থাকে। মনে হয় সে যেন এক অদৃশ্য বন্দিশালার নিরীহ বন্দি। কোন এক অদৃশ্য শিকল যেন সর্বদাই তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছুতেই যেন সে এখান থেকে মুক্ত হতে পারছে না। এমনি করেই প্রতিনিয়ত জীবনের খাতা থেকে হারিয়ে যেতে থাকে এক একটি মহামূল্যবান দিন, প্রতিটি মুহূর্ত।



জীবনের শেষ দিকে এসে মনে হয় কে যেন চুপি চুপি এসে তার জীবনের সমস্ত মূল্যবান সময়গুলোকে চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-উল্লাস আর ভোগ বিলাসিতার আড়ালে অতি সূক্ষ্মতার সাথে চুরি করে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার আর কিছুই করার নেই। এরই মধ্যে তার সমস্ত দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি তাদের স্থায়ী বসতি গড়ে নিয়েছে। সারাটা জীবন ধরে যাদের জন্য নিজের জীবনের সর্বস্ব বাজি রেখে উপার্জন ও সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করেছে তাদের কাছে আজ সে শুধুই করুণার পাত্র। আজ সে বড়ই একা। এখন তার দিন কাটে পুরানো স্মৃতি ও জীবনের না মেলা হিসাব খাতার পাতা উল্টিয়ে আর যতটা সম্ভব মিছে সান্তনাপূর্ণ ধর্ম-কর্ম পালনে। অধরাই থেকে যায় তার মুক্ত হওয়ার বা বিষয় আচ্ছন্নতা ভেদ করে পরম সত্তার সন্ধান লাভের সুযোগ। বিষয় আচ্ছন্নতার মায়া মোহে আবদ্ধ থাকার ফলে দেহাভ্যন্তরে বিরাজমান আত্মারূপে পরম সত্তার নিত্য ডাক তার কর্ণমূলে পৌঁছায়নি আর যখন পৌঁছেছে তখন আর সময় নেই। এজন্যেই কি সে পৃথিবীতে এসেছিল? তখন তার ব্যথিত হৃদয়ের গহীন থেকে কে যেন কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে চিৎকার করে বলতে চায়।



'মুক্ত হতে এসে আমি



হইলাম বন্দি,



উপায় অন্ত না দেখিয়া



নির্জনেতে কান্দি।'



এরই মধ্যে একদিন সে মহাকালের চিরন্তন ডাকে সাড়া দিয়ে চিরদিনের মত বিদায় জানায় এই বিষয় আচ্ছন্ন মোহাবিষ্ট জীবন মঞ্চকে। থেকে যায় তার স্বল্প জীবনের মঞ্চায়িত নাটকের অমিমাংসিত পালা। রেখে যায় তার অমিমাংসিত কাজের স্বাক্ষী হিসেবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে। আর সেই প্রজন্ম সমাজ সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আবারও সেই একই পরিণতির দিকে ধাবিত হতে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম! তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি ....!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.