নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র: স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধান

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৯

‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা’র আহ্বান করছি।



২৫ মার্চ কালো রাতে অপারেশন সার্চলাইট সংঘটিত হওয়ার সময় যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ হতে গ্রেপ্তার করা হয় তার আগ মুহূর্তে ২৫ মার্চ দিনগত রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ইপিআর এর একটি ছোট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।



এরপর ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র হতে মেজর জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মূলত সেই দিন হতেই বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র রূপে পরিচিতি লাভ করে।



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণগত্যার প্রাক্কালে দেশের সাধারণ মানুষসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ৩০ মার্চের মধ্যেই তাদের অনেকে কলকাতায় সমবেত হন। প্রাদেশিক পরিষদের যে সব সদস্য ১০ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছাতে সক্ষম হন তাদের নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন।



তাজউদ্দীন আহমদের নির্দেশেই অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরো কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রণয়ন করেন। এরপর ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এই ঘোষণাপত্রের আইনগত দিকগুলো সংশোধন করে একে পূর্ণতা দান করেন। এই ঘোষণাপত্রটি প্রথমে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে প্রচার করা হয়।



এরপর আবার ১৭ এপ্রিল তারিখে মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল বৈদ্যনাথতলায় (পরবর্তী নাম মুজিবনগর) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপরিষদের সদস্য অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।



এই ঘোষণার মাধ্যমে নবগঠিত প্রবাসী আইন পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে সাথে সাথে এ ঘোষণাপত্র প্রবাসী সরকারের অবস্থান ও যৌক্তিকতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে।মূলত এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নিয়মানুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।



এদিনই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়া হয় এবং একই সাথে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও বৈধ বলে স্বীকৃত হয়। এ ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ছিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা ঘোষিত এবং এই ঘোষণাপত্রটি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।



প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী কার্যালয়ের সচিবালয় ৮, থিয়েটার রোড, কলকাতা হলেও এই সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ঘোষণা এবং শপথ অনুষ্ঠান হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে মেহেরপুরের মুজিবনগরে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে স্বাধীন বাংলাদেশের বৈধ অভ্যুদয় ঘটে।



এই সরকার গঠনের সাথে সাথে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরূদ্ধতা যুদ্ধের রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা প্রতিভাসিত হয়ে উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এই ঘোষণাপত্রটি বিশ্লেষণ করলে আমরা আমাদের সৃষ্ট অনেক সমস্যার সমাধান দেখতে পাই এবং বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালনায় এর কার্যকারিতা বুঝতে পারি।



২.



বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত একটি ঘোষণাপত্র।



যতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে ততদিন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ছিল।



১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পরও এই ঘোষণাপত্র সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন দেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হয় তখন সংবিধান হিসেবে এর কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটে।



স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই এটা কতটুকু দূরদর্শী ছিল, এমন কি রাষ্ট্র পরিচালনায় ঐ ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন এখনো রয়েছে বলে আমি মনে করি ।



এখানে সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশে প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। এখানে অবাধ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।



বলা হয়েছে বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখণ্ডতা এর কথা, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থ, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।



বাংলাদেশের জনগণকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও ন্যায়ানুগ সরকার প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সব কার্য সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে।



এখানে আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে সেই কথাও বলা হয়েছেঃ ‘জাতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আমাদের উপর যে দায় ও দায়িত্ব বর্তাইবে উহা পালন ও বাস্তবায়ন করার এবং জাতিসংঘের সনদ মানিয়া চলার প্রতিশ্রুতি আমরা দিতেছি’।



বহুল আলোচিত-সমালোচিত স্বাধীনতার ঘোষকের সমাধানও এখানে আছেঃ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতোপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম’।



এই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি যখন ঘোষিত হয়েছিল, সেই ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি সব প্রকার ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে জীবন বাজী রেখে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।



দেশের অনেক ইতিহাস মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে পরিবর্তন সাধন করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি অবিকৃত রয়েছে। তাই স্থান-কাল ভেদে বিতর্কের ঊর্ধ্বেই অবস্থান করছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।



এই ঘোষণাপত্রটি একটি রাষ্ট্র পরিচালনায় জন্য যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। সর্বোপরি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ঘোষণা অনুযায়ী ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকার জনগণ’ এর কল্যাণে ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা’র আহ্বান করছি।



সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীন এই বাংলাদেশ।



স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

স্থানঃ মুজিবনগর, বাংলাদেশ

তারিখঃ ১০ই এপ্রিল ১৯৭১; শনিবার ১২ চৈত্র ১৩৭৭



যেহেতু একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সনের ৭ই ডিসেম্বর হইতে ১৯৭১ সনের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,



এবং

যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯ জন প্রতিনিধির মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জনকে নির্বাচিত করেন,



এবং

যেহেতু সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্য জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণকে ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে মিলিত হইবার জন্য আহ্বান করেন,



এবং

যেহেতু এই আহূত পরিষদ-সভা স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনিভাবে নির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়,



এবং

যেহেতু পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাহাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের সহিত আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় একটি অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে,



এবং

যেহেতু এইরূপ বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান,



এবং

যেহেতু একটি বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ, অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের উপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও গণহত্যার অসংখ্য অপরাধ সংঘটন করিয়াছে এবং এখনো অনবরত করিয়া চলিতেছে,



এবং

যেহেতু পাকিস্তান সরকার একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপাইয়া দিয়া, গণহত্যা করিয়া এবং অন্যান্য দমনমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের পক্ষে একত্রিত হইয়া একটি সংবিধান প্রণয়ন এবং নিজেদের জন্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করিয়া তুলিয়াছে,



এবং

যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাহাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী উদ্দীপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের উপর তাহাদের কার্যকর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিয়াছে।



সেহেতু আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকার জনগণ কর্তৃক আমাদিগকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণপরিষদরূপে গঠন করিলাম,



এবং

পারস্পরিক আলোচনা করিয়া,



এবং

বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করনার্থ, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম এবং তদ্দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতোপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম,



এবং

এতদ্দ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন,



এবং

রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হইবেন, ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন, একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং তাহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন, কর আরোপণ ও অর্থ ব্যয়ন ক্ষমতার অধিকারী হইবেন,

গণপরিষদ আহ্বান ও মূলতবিকরণ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন,



এবং

বাংলাদেশের জনগণকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও ন্যায়ানুগ সরকার প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সকল কার্য করিতে পারিবেন। আমরা বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি না থাকা বা রাষ্ট্রপতি তাহার কার্যভার গ্রহণ করিতে অসমর্থ হওয়া বা তাহার ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে অসমর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির উপর এতদ্দ্বারা অর্পিত সমুদয় ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং তিনি উহা প্রয়োগ ও পালন করিবেন।



আমরা আরো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, জাতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আমাদের উপর যে দায় ও দায়িত্ব বর্তাইবে উহা পালন ও বাস্তবায়ন করার এবং জাতিসংঘের সনদ মানিয়া চলার প্রতিশ্রুতি আমরা দিতেছি।



আমরা আরো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।



আমরা আরও সিদ্ধান্ত করিতেছি যে, এই দলিল কার্যকর করার লক্ষ্যে এবং রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য আমরা অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে আমাদের যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করিলাম।



স্বাক্ষর:

(অধ্যাপক ইউসুফ আলী)

বাংলাদেশের গণপরিষদের ক্ষমতাবলে ও

তদধীনে যথাযথভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি



বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একই দিনে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন। ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সব আইন চালু ছিল, তা রক্ষার্থে এই আদেশ বলবৎ করা হয়।



আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ

স্থানঃ মুজিবনগর, বাংলাদেশ

তারিখঃ ১০ই এপ্রিল ১৯৭১; শনিবার ১২ চৈত্র ১৩৭৭



আমি বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৭১ সালের ১০ ই এপ্রিল তারিখে এ আদেশ জারি করছি যে, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে। এই রাষ্ট্র গঠন বাংলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছায় হয়েছে। এক্ষণে, সকল সরকারি, সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন, তারা এতদিন পর্যন্ত নিয়োগবিধির আওতায় যে শর্তে কাজে বহাল ছিলেন, সেই একই শর্তে তারা চাকুরিতে বহাল থাকবেন। বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত সকল জেলা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধি যারা অন্যত্র অবস্থান করছেন, তারা সকল সরকারি কর্মচারীকে স্ব স্ব এলাকায় আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।



এই আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।



স্বাক্ষর:

(সৈয়দ নজরুল ইসলাম)

মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি,

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার



১০ এপ্রিল ঘোষিত ও অনুমোদিত স্বাধীনতার সনদপত্রে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা রক্ষা, অসামপ্রদায়িকতা, মানবিক মর্যাদাবোধ সমুন্নত রাখার জন্য সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার করা হয়। এই সনদপত্রের ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। সংবিধানে এই সনদপত্রও সন্নিবেশিত করা হয়। সনদপত্রে বাঙালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন ও আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থাৎ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় তুলে ধরা হয়েছে। সরকার গঠনের খবর ১০ এপ্রিল বিকালে প্রথম প্রচারিত হয় আকাশবাণীর কার্সিয়ং ও শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে তারপর কলকাতা ও দিল্লী কেন্দ্র হয়ে বিবিসিসহ বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যম এই খবর প্রচার করে।



প্রথম সরকারে যে সকল মন্ত্রনালয় গঠিত হয়েছিল সেগুলোর নাম ও দায়িত্ব প্রাপ্তদের তালিকা হলঃ



মন্ত্রণালয়সমূহের নাম



১ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

২. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

৩ অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

৪ মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়।

৫ সাধারণ প্রশাসন বিভাগ।

৬ স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

৭ তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়।

৮ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

৯ ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়।

১০ সংসদ বিষয়ক বিভাগ।

১১ কৃষি বিভাগ।

১২ প্রকৌশল বিভাগ।

মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ :

তাজ উদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা, তথ্য ও বেতার এবং টেলিযোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন

শিক্ষা,স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ

সংস্থাপন ও প্রশাসন

যেসব বিষয়ের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদের অন্য কোন সদস্যকে প্রদান করা হয়নি

খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক-পররাষ্ট্র বিষয় আইন ও সংসদ বিষয়

এম মনসুর আলী অর্থ ও জাতীয় রাজস্ব, বাণিজ্য ও শিল্প, পরিবহণ

এ এইচ এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, কৃষি

১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয় এপ্রিল ১০ ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখেই শুরু হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সংগঠন ও সমন্বয়ে, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে এবং, সর্বোপরি এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী দেশ ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনী সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরূদ্ধতা যুদ্ধের রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা হয়ে ওঠে।



সুত্র:

বাংলাদেশের ১৫ খণ্ডের মুক্তিযুদ্ধের দলিলসমূহ।

মঈদুল হাসান (২০০৪). মূলধারা ৭১. ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড

হোসেন তওফিক ইমাম (২০০৪). বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১. আগামী প্রকাশনী.

সিমিন হোসেন রিমি (এপ্রিল ২০০৫). আমার ছেলেবেলা,১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমদ।

নির্মলেন্দু গুণ (ফেব্রুয়ারি ২০০৮). আত্মকথা ১৯৭১ (১ম সম্পাদিত). প্রকাশক: বাংলা প্রকাশ।

উইকিপিডিয়া।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
প্রধান বিরোধীদলটি কখনোই ১৭ এপ্রিল 'মুজিবনগর দিবস' পালন করে না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.