নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২১

সাধক নজরুল গেয়েছিলেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, মুসলিম তাহার নয়নমণি, হিন্দু যে তার প্রাণ’। নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় তিন দিনের সরকারি সফরের সময় শত ব্যস্ততার মাঝেও ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরি মন্দির পরিদর্শন করে গেলেন। সেখানে তিনি পূজা দিয়েছেন। এর আগের কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকা সফরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিখদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান গুরুদুয়ারা নানকশাহী পরিদর্শন করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দও ভারত সফরে গেলে আজমির শরীফে সূফী সাধক খাজা মঈন উদ্দিন হাসান চিশতির মাজার জিয়ারত (পরিদর্শন) করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন। বাংলাদেশ তথা সমগ্র ভারত উপমহাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিটাই এরকম। এ অঞ্চলের সংস্কৃতিই এ রকম যে, হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছেন। কিন্তু এই ধর্মীয় অনুভূতিকে যখনই কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কায়েমী স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে তখনই সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মান্ধতা সৃষ্টি করার কারণে সমাজে শান্তি বিনষ্ট হয়েছে। তাই সমাজ ও মানুষের শান্তির জন্য প্রয়োজন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ তথা রাষ্ট্র যেখানে ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’।



দিল্লীতে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের এ সপ্তাহের বাংলাদেশ সফর এবং এই সফরকালে ঢাকায় তার বিবিধ কর্মসূচি ও সাংবাদিকদেরকে ব্রিফিংএ বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের প্রকাশিত মনোভাবের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ করে যে, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মপ্রাণ। কোনো প্রকার ধর্মান্ধতা নয় বরং এক ধর্মের লোকদের প্রতি অন্য ধর্মের লোকদের সহনশীলতা ও সম্মানবোধ থাকলে এবং এ ব্যাপারে দু’দেশের শীর্ষ নেতারা সচেতন থাকলে এ অঞ্চলে অবশ্যই শান্তির সুবাতাস বইবে। ধর্মান্ধ শক্তির উত্থান এ অঞ্চলের মানুষের কাম্য নয়।



বিগত ৫ই জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এক নতুন প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি ঐতিহ্যগতভাবে ভারতবিরোধী হলেও বিজেপির ক্ষমতায় আসায় তারা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল এই ভেবে যে, ভারত বর্তমান সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কিন্তু বিএনপির সেই আশা ও উচ্ছ্বাস কতটুকু পূরণ হবে, অথবা আদৌ কখনো পূরণ হবে কি-না তা দেখার জন্য হয়তো আরো সময় অপেক্ষা করতে হবে। সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই। তবে সুষমা স্বরাজ শুক্রবার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন সাংবাদিকদের যা জানিয়েছেন তা বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে ধারণা করা যায়। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধর্মজীবী রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে সামগ্রিক পরিবেশকে যেভাবে অশান্ত করে তুলেছিল তাতে তারা ভারত তথা বর্হিবিশ্বের কোনো দেশের কতটুকু সমর্থন পাবে সে ব্যাপারে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সরকার কাজ করবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেবলমাত্র বাংলাদেশের জনগণ। এটা ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনো বিষয় নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের উদ্ধৃতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, সুষমা স্বরাজ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বিজেপি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল ভিত্তি একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। নরেন্দ্র মোদি সরকারও এই আদর্শকে সামনে রেখেই বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিধারণ করবে। তিনি স্মরণ করেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতীয়রাও জীবন দিয়েছে। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী কোনো অবস্থান কিংবা নীতি ভারত সরকার কখনোই গ্রহণ করবে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সফরকারী সুষমা স্বরাজের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার কাছে জানতে চান যে, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে যে দলের শীর্ষনেতাদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে সেই জামাতের সাথে বিএনপির কি সম্পর্ক? এভাবে দেখা যাচ্ছে, ভারতে যে দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশের সাথে তাদের নীতি একই থাকবে। সুষমা স্বরাজ তার বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে এমনটাই আবারো জানিয়ে গেলেন। অর্থাৎ, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ধর্মকে পুঁজি করে সমাজে ধর্মান্ধতা সৃষ্টি করে যারা রাজনীতি করে ক্ষমতায় যেতে চায় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনার বিরুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাদের সাথে যারা থাকবে তারাও কখনো সমাজ ও দেশের জন্য শুভ হতে পারে না। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যই ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপূর্ণ ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির অপতৎপরতায় এদেশে বহু অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে এবং দেশকে পেছনে ফেলে রাখার জন্য এরাই দায়ী। যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় আনার মাধ্যমে এদেশে ধর্মান্ধ শক্তির মুখোশ যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে তা থেকে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে তাই শিক্ষা নেয়ার সময় এসেছে। একাত্তরে এদেশের মানুষের সাথে জীবন দিয়ে এবং সকল ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ভারতীয় রাষ্ট্র ও জনগণ যে কীর্তিগাঁথা রচনা করেছে তাকে ভুলে গিয়ে যে কোনো রাজনীতি এদেশে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হতে বাধ্য। বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগলিকভাবে দুটি রাষ্ট্র হলেও এ বাস্তবতা অস্বীকার কোনো উপায় নেই যে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই বাংলা ভাষায় কথা বলে, একই জল-আবহাওয়ায় তাদের বাস। সব মিলিয়ে বলা চলে. বাংলাদেশ ও ভারত এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। এ দু’দেশের মানুষের মনের মণিকোঠায় যাঁদের স্থান চিরঅম্লান- মোহন চাঁদ করমচাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ বোস, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাধক কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের বেশির ভাগই যে বাঙালি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.