![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।
এক
একদিন পরে বাপ্পির খোঁজ পাওয়া গেল। একদিন পরে বাপ্পিকে হঠাত এভাবে পাওয়া যাবে সেটা কেউ ভাবে নি। কালকের হাসিমাখা বাপ্পি আজ লাশ হয়ে আছে। সেটা সবাই ভেবে অবাক।
আজ সকালে নদীর ধারে বাপ্পির লাশ পাওয়া গেল। প্রথমে বাপ্পির লাশ দেখতে পেয়েই চিনতে পেরে যায়। বাপ্পিকে এলাকায় চিনত না এমন লোক খুব কমই আছে।
বাপ্পির বাবা মা খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। ছেলের লাশ দেখে তারা কিছু বলতে পারছে না। তাই তারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার বাবা মায়ের সাথে এলাকার সবাইও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পুলিশকে খবর দেওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ চলে এসেছে। বাপ্পির সাথে পুলিশদের ও যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক ছিল। এলাকার একজন ভাল নেতা সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক রাখে। বাপ্পির সাথে তেমনই সবার ভাল সম্পর্ক ছিল।
পুলিশ বাপ্পির লাশ গাড়িতে তুলতে গিয়ে থেমে গেল। বাপ্পির গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে পেটের কাছে হালকা একটা আঘাতের চিহ্ন আছে।
পুলিশ বাপ্পির লাশ গাড়িতে নিয়ে চলে গেল। সবাই সেদিকে তাকিয়ে থেকে যার যার মত বাড়ি চলে গেল।
★★
আজ কয়েকদিন নয়নকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে সায়েম তারপরে বাপ্পি, আর এখন নয়ন! এলাকার সবাই অবাক। কারন তারা তিনজন বন্ধু একসাথে এইরকম হবে সেটা ধারনার বাইরে।
সায়েম আর বাপ্পি খুব ভাল বন্ধু। তারা তাদের রাজনৈতিক কাজগুলো একসাথে করে এসেছে। নয়নের এসব পছন্দ নয়, তাই সে দুজনের রাজনৈতিক কাজ থেকে দুরে থেকেছে। তবুও তারা কেউ বন্ধুত্ত থেকে দুরে যায় নি।
এভাবে নয়নের হঠাত নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পিছনে কি কোন কারন আছে! নাকি সেও বাপ্পির মত খুন হল? রহস্যগুলো নিয়ে অনেকেই ভেবে দেখছে।
দুই
সায়েম বাড়িতে এসে একটু অবাক হয়ে গেল। বাসার কলিংবেল বাজিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখল বাপ্পি ড্রয়িংরুম এ বসে টিভি দেখছে। শায়লাকে একটু অপ্রস্তুত মনেহল।
সায়েম বাপ্পির পাশে বসে বলল
-কিরে কখন এলি?
-একটু আগে আসলাম। তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-তা হঠাত কি মনে করে এলি?
-আমাদের ওই রায় বাড়ির প্রজেক্টটার কাজ কালকে শুরু করব।
-এটা তো ফোনেই বলতে পারতি।
-ফোনে বললে তো আর ভাবির হাতের এক কাপ চা খেতে পারতাম না।
সায়েম মুচকি হেসে বলল
-চা খেয়েছিস নাকি?
-ভাল কথা বলেছিস। শায়লা আমাদের দুই কাপ চা নিয়ে আস।
-যাই বলিস আমাদের এই প্রজেক্ট এ অনেক লাভ হবে।
-তা হবেই।
শায়লা তিন কাপ চা এনে দুই কাপ বাপ্পি আর সায়েমকে দিল। বাপ্পি চায়ে চুমুক দিয়ে বলল
-যাই বল ভাবি। তোমার হাতের চা কিন্তু খুব চমৎকার।
-কি যে বল তুমি। তাহলে দুপুরের খাবার খেয়ে যাও।
-না ভাবি আজ উঠি। যাই রে, কালকে দেখা হবে।
★★
সায়েম বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কিছু পথ আসতেই বাপ্পি ফোন দিল। সায়েম ফোন ধরতেই বাপ্পি বলল
-কোথায় রে তুই?
-এইত বাসা থেকে বের হয়েছি।
-আচ্ছা তাহলে যা বিকেলে দেখা হবে। তুই বাসায় আসবি কখন?
-দুপুরের দিকে।
-আচ্ছা যা।
কিছুদুর যেতেই সায়েমের মনেহল প্রজেক্ট এর ফাইল বাসায় রেখে এসেছে। তাই সে আবার বাসার দিকে রওনা দিল।
বাসার দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। হয়ত লাগানোর কথা ভুলে গেছে। সায়লাকে ডাকার দরকার নেই। বেডরুম থেকে ফাইলটা নিয়ে নিলেই হল।
বেডরুমে ঢুকেই সায়েম চমকে গেল। সে এটা কি দেখছে! বাপ্পি আর শায়লা এক বিছানায়! সায়েম কিছু না বলে একটা চিৎকার দিল। বাপ্পি তারাতারি সেখান থেকে চলে গেল।
সায়েমের সামনে এখন সব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সায়েমের কাছে বাপ্পি বাড়িতে আসার খবর নেওয়া,সেদিন ঘরে ঢুকে বাপ্পিকে দেখা। সব এখন সায়েম বুঝতে পারছে। বুঝে বাপ্পি কিছু বলতে পারছে না। একদিক এ বন্ধু অন্যদিকে স্ত্রি।
★★
সন্ধার সময় সায়েম ঘরে বসে আছে। সকালের ব্যাপারটা হওয়ার পরে সায়লার সাথে কোন কথা হয় নি। সারাদিন ঘরে বসে ভাবছে বাপ্পির ব্যাপার। বাপ্পিকে শাস্তি দিবে নাকি ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেবে?
বাপ্পির ফোন পেয়ে সায়েম বাস্তবে ফিরল। সায়েম ফোন ধরে কানের কাছে নিতেই বাপ্পি বলল
-শোন ফোন কাটিস না। আমি তোকে কিছু কথা বলব। মানুষ তো ভুল করেই। আমিও ভুল করেছি। দেহের ক্ষুধায় বন্ধুত্তের টান ভুলে গিয়েছিলাম। আমি এখন অনুতপ্ত। আমি তোর সাথে সরাসরি দেখা করতে চাই। আয় প্লিজ।
★★
সায়েম না চাইতেও চলে আসল। হয়ত বন্ধুত্তের টান সায়েমকে আনতে বাধ্য করল। বাপ্পির কাছে এসে সায়েম চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।
বাপ্পি বলল
-দেখ আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি মাফ চাচ্ছি। মাফ করে দে।
-………
-কথা বল। আয় সামনের দিকে যাই।
সায়েম আর বাপ্পি অন্ধকার এর মধ্যে চলে এল। কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। বাপ্পি বলল
-আমাকে মাফ করে দে।
সায়েম চুপচাপ শুধু শুনে যেতে থাকল। কিছু বলল না।
বাপ্পি পিস্তলটা সায়েমের পেটে ঠেকিয়ে দুই দিনটা গুলি সায়েমের শরিরে চালিয়ে দিল। বাপ্পি বলল
-মাফ করে দিস বন্ধু। নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে বন্ধুত্ত রক্ষা করা হল না।
সায়েমকে অন্ধকার এ ফেলে রেখেই বাপ্পি চলে এল। বাপ্পি নিজেকে বাচানোর জন্য সায়েমকে মেরে দিল। কারন সায়েম বাপ্পিকে অত সহজে ছাড়ত না। একদিন এর জন্য শাস্তি পেতে হত।
আজ হয়ত বাপ্পিকে ক্ষমা করে দিত। কিন্তু মনের মাঝে ক্ষোভ থেকে যেত। সেই ক্ষোভ একদিন ভয়ংকর হতে পারত। তাই সায়েমকে মেরে অন্ধকার এ রেখে বাপ্পি নিজেকে রক্ষা করল।
তিন
নয়ন বাপ্পিকে বাসায় ডেকে আনল। বাপ্পির সাথে সায়েমকেও ডাকত। কিন্তু কাল সন্ধ্যা থেকে সায়েমের খোজ নেই।
বাপ্পি নয়নকে বলল
-কিরে ডেকে আনলি কেন?
-অনেকদিন আড্ডা দেই না। তাই আজ আড্ডা দিতে ইচ্ছা হল।
-সায়েমের কোন খোজ জানিস?
-আরেহ দেখ কোথায় ডুব মেরে আছে। আবার চলে আসবে।
-তাই যেন হয়।
-ওর জন্য সময় নষ্ট করে লাভ নাই। নে মদা খা।
নয়ন বাপ্পিকে গ্লাসে মদ ঢেলে দিচ্ছে। বাপ্পি শুধু গিলে যাচ্ছে। বাপ্পি এতক্ষণে টাল হয়ে গেছে সেটা তার কথার ভাবেই বুবোঝা যাচ্ছে।
নয়ন বাপ্পিকে বলল
-তুই সায়েমের সাথে এমন করলি!
-কি করলাম?
-তুই সায়েমকে মেরে দিলি!
-কি বলিস! আমি সায়েমকে মারি নি।
-তুই বন্ধুত্তের মুল্য এভাবে দিলি!! সায়েমকে বললেই তো সে তোকে মাফ করে দিত। লাগলে আমি তোর হয়ে পায়ে ধরতাম।
-চুপ।
-কথাগুলো অসহ্য লাগছে? তুই এইরকম করার আগে আমাদের বন্ধুত্ত ভাবলি না!
-চুপ শালা একদম চুপ।
বাপ্পি রেগে গিয়ে নয়নকে মারতে আসল। নয়ন বাপ্পির পেটে লাথি মারতেই উল্টাদিক দিয়ে সোফার পাশির সাথে ধাক্কা খেল। টাল হয়ে আঘাত পাওয়ায় বাপ্পি আর উঠতে পারছে না।
নয়ন বাপ্পির কাছে গিয়ে আরেক বোতল মদ দিয়ে বলল
-এই নে খা।
-উ
-মদ খা। আর চল আমরা বাইরে যাই ঘুরে আসি।
নয়ন বাপ্পিকে ধরে বাইরে নিয়ে এল। দুজন একসাথে নদীর দিকে রওনা দিল।
★★
বাপ্পি বিষের জালায় ছটফট করছে। শেষ গ্লাসের সাথে মেশানো বিষ ভালই কাজ করেছে। নয়ন বাপ্পিকে ধরে আছে। বাপ্পির এদিকে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নয়ন বাপ্পিকে বলল
-ছোটবেলায় আমরা তিনজন এই নদীতে গোসল করতাম। তোর মনে আছে?
-আমাকে বাচা। আমি বাঁচতে চাই।
-বাঁচাবি!! আচ্ছা যা।
নয়ন বাপ্পিকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিল। বাপ্পি নয়নের সামনে থাকলে বাপ্পিকে কষ্ট দিত, নয়ন নিজেও কষ্ট পেত। তাই বাপ্পিকে নদীতে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল।
নয়ন হেটে যেতে যেতে বাপ্পিকে বলল
"ক্ষমা করিস বন্ধু। আমি বেঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। বন্ধু হয়ে তুই বন্ধুর সাথে বেঈমানি করলি বলে, আমিও তাই করলাম "
নয়ন হাসি দিয়ে সামনের দিকে চলে যাচ্ছে। এখন তার খারাপ লাগছে না।
কারন সে একজন বন্ধুকে হত্যা করে নি। হত্যা করেছে বন্ধু নামের বেঈমানকে।
তিন বন্ধু একসাথে হাসিখুশি থাকবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু বাপ্পি আর সায়েমকে হারিয়ে নয়ন ভাল থাকবে না। তাই বাপ্পি আর সায়েমের মত নয়নও আজ হারিয়ে যাবে।
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৪১
শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চমৎকার বিশ্বাসঘাতকতার গল্প।তবে নয়নের ব্যাপারটা আরেকটু খোলসা করা উচিত ছিল ।
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০২
সুমন কর বলেছেন: গল্প ভালোই ছিল কিন্তু উপস্থাপন নিয়ে একটু ভাবতে হবে। গল্প খুব দ্রুত হয়ে গেছে।
৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৩
আহা রুবন বলেছেন: নয়নের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় তারা হরিহর-আত্মা ছিল তাই নয়ন বাপ্পিকে হত্যা করতেই পারে। কিন্তু নয়ন কিসের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়েছিল যে বাপ্পি সায়েমকে খুন করেছে? পরিষ্কার নয়। ১.বন্ধুত্ব ২. সায়েম-বাপ্পির ঘনিষ্ঠতার জন্য অবচেতনভাবে নয়নের ঈর্ষা ৩. বিশ্বাস নষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ-স্পৃহা... এগুলো মাথায় নিয়ে একটু বড় করে গল্পটি আবার লিখুন--আমরা অসাধারণ একটি গল্প পাব। আপনার উৎকর্ষ কামনা করি।
৫| ০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৭
জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: নয়নের জানার ব্যাপার টা লুকানো হয়েছে।
সবাইকে ধন্যবাদ। পরের বারে ঠিক লিখব।
ধন্যবাদ সবার মন্তব্যের জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:১৮
জনৈক অচম ভুত বলেছেন: নয়ন একদম ঠিক কাজ করেছে।

কিন্তু সে জানল কি করে যে বাপ্পিই সায়েমকে খুন করেছে?