নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পাঠক। পড়তে ভালোবাসি। মাঝেমধ্যে একটু আধটু লিখার চেষ্টা করি। পড়ালেখা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফাইন্যান্স বিভাগে।

জাবির আহমেদ জুবেল

আমি জাবির আহমেদ জুবেল, একটু আধটুকু গল্প লিখি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে বিবিএ পড়ছি ( ব্যাচ ২৪)

জাবির আহমেদ জুবেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল দংশন : সৈয়দ শামসুল হক

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৬

বুক রিভিউ

বই : নীল দংশন
লেখক : সৈয়দ শামসুল হক
জনরা : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ : ১৯৮১

সবসময়ই মুক্তিযুদ্ধ আমার পছন্দের জনরা। মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। "নীল দংশন" ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি উপন্যাস। কিন্তু এ পর্যন্ত যতটা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস পড়ছি, তাঁর থেকে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন, নতুন এবং সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা উপন্যাস। আর এ রকম হওয়ারই তো কথা! সব্যসাচী লেখক বলে খ্যাত সৈয়দ শামসুল হকে উপন্যাস এমন তো হবেই ! অন্যরকম তো হবেই, লিখালিখি নিয়ে নিরীক্ষা যে উনি বরাবরই করে আসছেন।.....
উপন্যাসটা যাকে নিয়ে লিখা তিনি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। দেশের অবস্থা ভালো না দেখে তিনি তার বৌ বাচ্চা কে মার্চের আট তারিখেই তার শ্বশুর বাড়ি জাফরগঞ্জে পাঠিয়ে দেন।....
২৭ শে মার্চ সামান্য সময়ের জন্য কারফিউ ওঠে গেলে সে তাঁর বৌ বাচ্চাকে দেখতে জাফরগঞ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়। কিন্তু বিধি বাম! মিরপুর ব্রিজের ওপর থেকে থাকে মিলিটারি রা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নেয়।....
এই জিজ্ঞাসাবাদটাই একটা উপন্যাস! সৈয়দ হক তাঁর নিপুণহস্তে একটা অনন্যসাধারণ উপন্যাস রচনা করেছেন একটা জিজ্ঞাসাবাদকে কেন্দ্র করে।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নাম পরিচয় জানার পরপরই মিলিটারিরা তাঁকে হঠাৎই প্রশ্ন করে
" কবিতা লিখতে শুরু করেন কবে থেকে ? "
" কবিতা ? "
সে মিলিটারিদের এরকম একটা প্রশ্ন বুঝতে পারে না। তাঁকে কেনইবা এমন প্রশ্ন করা হবে!
তাঁকে অপ্রতিভ দেখে মিলিটারিরা অন্য প্রসঙ্গে যায়। কিন্তু কিছু সময় পরপরই কবিতার প্রসঙ্গই চলে আসে! মিলিটারিরা তাঁর কবিতা সম্পর্কে জানতে চায়! তাঁর কয়টা কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে এসবই জানতে চায় একসময় সে জানায় -
সে কবিতা লিখতে জানে না। সে লজ্জিত বোধ করে আরো জানায় যে সে আসলে কবিতা বুঝতেই পারেনা।
কিন্তু তবুও কবিতা তার পেছন ছাড়ে না। মিলিটারিরা ঘুরেফিরে কবিতার কথাই জানতে চায়।
একসময় এক মিলিটারি অফিসার তার চোখের সামনে একটা কাটা ছাপা কাগজ মেলে ধরে, যে কাগজটা সে কিছুদিন আগে কেটে ছিলো। যে কাগজে ইংরেজি অনুবাদে লিখা
" তোরা সব জয়ধ্বনি কর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর, ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়---" আর নিচে বড় করে লিখা কাজী নজরুল ইসলাম! মুহূর্তেই তাঁর কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁর হাসি পায় যে মিলিটারিরা কত বড় ভুল করছে। তাঁরা তাঁকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভেবেছে! কেননা তাঁর নামও কাজী নজরুল ইসলাম! তাঁর জন্মস্থানও যে বর্ধমানে, '৪৭ এর দেশবিভাগে সে এদেশে এসেছিলো।
সে প্রচন্ড জোরে হাসতে হাসতে বলে আপনার ভুল করছেন। তা বলার সাথে সাথেই একের পর এক ঘুষি এসে পরে কাজী নজরুল ইসলামের উপর! কারণ পাকিস্তানি মিলিটারিরা কখনো ভুল করে না!
এবার আর কাজী নজরুল ইসলাম মিলিটারিদের বুঝাতে পারেন না যে সে কবি নয়! সে একজন সাধারণ মানুষ, সে কবিতা বুঝে না, সে জানেনা কি করে কবিতা লিখতে হয়। তবুও মিলিটারিরা তাকে দিয়ে স্বীকার করাতে চায় সেই কবি! নানা নির্যাতন শুরু হয়!
একসময় তার সামনে একটা কাগজ দেয়া হয়, যা একটা বিবৃতি তাতে লিখা,
" আমি কাজী নজরুল ইসলাম দ্বিধাহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে আমি বাঙালির দেশদ্রোহিতায় আমি আমি ক্রুদ্ধ এবং মর্মাহত। " অতঃপর সেই সেই বিবৃতিতে আরো লিখা তাকে বাঙালি যেনো অস্ত্রো সংবরণ করে, সেনাবাহিনী কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। মিলিটারিরা আমাদের উপন্যাসের নজরুলকে বলে এই বিবৃতিতে দস্তখত দিতে। দস্তখত দিলেই তার মুক্তি হয়ে যাবে সে চলে যেতে পারবে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে। কিন্তু কি একটা ঘটে যায় নজরুলের ভেতর! তাঁর মনের ভেতর একটা প্রশ্ন উদিত হয়, কাজী নজরুল ইসলাম কি সত্যি সত্যি তখন ঐ কাগজে দস্তখত দিতে পারতেন? তখন তার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে বহু বইয়ের মাঝে দেখা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর, যার নামের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছিলেন উপন্যাসের নজরুলের বাবা কাজী সাইফুল ইসলাম।
কাজী নজরুল ইসলাম যেনো নিয়ন্ত্রিত হতে থাকেন তাঁর ভেতরে থাকা অন্যকোনো নজরুল দ্বারা! সে জানে এক নজরুল নাম লিখে দিলে তার মুক্তি নিশ্চিত! তাকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি জাফরগঞ্জে যেতে দেয়া হবে তবুও সে স্বাক্ষর করে না! বহু অত্যাচারের মধ্যেও তাঁকে যেনো কেউ শক্তি জোগাচ্ছে, সবসময়ের ভীরু নজরুল যেনো সাহসী হয়ে উঠেন, তাঁর ভেতর থেকে কেউ যেনো তাঁকে স্বাক্ষর দিতে বারবার নিষেধ করে।......
অতঃপর মিলিটারিরা তাঁকে দিয়ে একটি কবিতা লিখিয়ে নিতে চায়! মিলিটারিদের ভাষায় তাঁকে লিখতে হবে এগিয়ে যাবার কবিতা, মানুষকে সুপথে আনার কবিতা! এই একটি কবিতা লিখলেই তাঁর মুক্তি, সে যেতে পারবে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে।.....
যে নজরুল একসময় দেশ বলতেআ তার চোখের সামনে ভেসে উঠত '৪৭ এ ফেলে আসা বর্ধমান, যে কখনো বাংলাদেশের জন্য টান অনুভব করত না ; আজ তাঁর বিকটা ভরে গেছে বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসায়! একসময় সে যে সালেহাকে ভালবাসতো আজ সে শুধু একজন সালেহাকে ভালবাসে না! আজ সে এই বাংলাদেশকে ভালবাসে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষকে ভালবাসে! আর সে মনেও করে না সে বন্দি! সে ভাবে সে তো মুক্ত! সে তো বাংলাদেশেই আছে! জাফরগঞ্জে যাবার টান অনুভব করে না! কবিতাও লিখে না! আসলে সে চেষ্টা করে কবিতা লিখতে, তবে মিলিটারিদের ফরমায়েশি কবিতা নয় ; কিন্তু সে পারে না, সে জানে না কবিতা লিখতে!
যে নজরুলের ভাবনা শুধু মাত্র তার স্ত্রী সন্তানদের জন্য ছিল, যে রাজনীতি বুঝতো না, যে মিছিলে মিটিংএ যেতো না, যে রক্তকে ভয় করতো বলে মেডিকলে পড়ার সুযোগ পেয়েও পড়েনি! সে যেনো আজ এক নামের কারণেই সম্পূর্ণ পাল্টে যায়! তার থেকে ভয় দূর হয়ে যায়! সে মিলিটারির সামনেই ঘোষণা করে সে পারলে কবিতা লিখত, নজরুলের মতো বিদ্রোহের কবিতাই লিখত! তাঁদের কথা মত কবিতা সে লিখবে না!
এক বৈঠকে পড়ে নেয়ার মতো একটা উপন্যাস। কিছু বই থাকে যা পড়ার পরও তাঁর রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ এটা এমনি এক উপন্যাস। রিভিউ লিখার চেষ্টা করেছি যথাসাধ্য কিন্তু পারিনি! এরকম একটা উপন্যাসের রিভিউ লিখা অাসলেই অনেক বড় কাজ!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৮

হুসাইন হানিফ বলেছেন: অনেক কষ্টের একটা উপন্যাস। দুই বছর আগে পড়েছি। ভাল লেগেছিল। এত সহজ সৈয়দ হককে আমরা খুবই কমই পড়েছি। তার যে রাজসিক গদ্য এই উপন্যাসে তিনি তা ব্যবহার করেন নি। তবে তার গৌরব এতটুকুও ম্লান হয়নি।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৭

জাবির আহমেদ জুবেল বলেছেন: জ্বী!
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ :-) ।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: রিভিউ ভাল হয়েছে।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯

জাবির আহমেদ জুবেল বলেছেন: ধন্যবাদ। আশাকরি বইটি পড়বেন, ইনশাআল্লাহ্ উপন্যাসটি ভালোই লাগবে।

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮

ঘুমন্ত আমি বলেছেন: মানুষের চেতনা কিংবা দেশপ্রেম তার জন্মভুমির জন্য জাগ্রত হবেই।ভালো রিভিও লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.