নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পাঠক। পড়তে ভালোবাসি। মাঝেমধ্যে একটু আধটু লিখার চেষ্টা করি। পড়ালেখা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফাইন্যান্স বিভাগে।

জাবির আহমেদ জুবেল

আমি জাবির আহমেদ জুবেল, একটু আধটুকু গল্প লিখি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে বিবিএ পড়ছি ( ব্যাচ ২৪)

জাবির আহমেদ জুবেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পালোচনাঃ মেহেদী ধ্রুব \'র গল্প \'কুড়ানো কথা\'

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৭



১.
মেহেদী ধ্রুব, বর্তমান শতকের প্রথম দশকের একজন উজ্জ্বল গল্পকার। লিখালিখি করেছেন প্রায় ১০ বছর ধরে দেশের প্রায় সব প্রখ্যাত লিটল ম্যগাজিন এবং সাহিত্য পত্রিকায়; দৈনিকেও এখন তাঁর সরব উপস্থিতি রয়েছে। মেহেদী ধ্রুবের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘মেঘ ও মানুষের গল্প’ এবারের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’ এ ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। মোট নয়টি গল্প নিয়ে সাজানো এই গল্পগ্রন্থের প্রত্যেকটি গল্পই বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে।
মেহেদী ধ্রুব তাঁর গল্পে অনেক প্রতীক এবং সংকেতের ব্যবহার করেন। তাঁর দশকের গল্পকারদের মধ্যে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে সফলভাবে প্রতীক এবং সংকেতের ব্যবহার করেছেন। তাঁর গল্পে প্রচুর প্রতীকের ব্যবহার রয়েছে, এমনি গল্প রয়েছে যা সম্পূর্ণটাই প্রতীক দিয়ে সাজানো সেজন্য সাধারণ পাঠকদের হয়তো গল্প বুঝতে বেগ পেতে হয় কিন্তু বোদ্ধা পাঠক সমালোচকরা ঠিকই গল্পের ভেতর দিয়ে চিনে নেন নিকট ভবিষ্যতের শক্তিশালী গল্পস্বরকে।
মেহেদী ধ্রুব অনেক রাজনীতি সচেতন একজন গল্পকার তাঁর গল্পে সমকালীন রাজনীতির দারুণ ব্যবহার রয়েছে, তবে সেগুলো ইঙ্গিত আর সংকেতের ডাকা থাকে। তাঁর প্রায় সব গল্পেই মুক্তিযুদ্ধ কোনো না কোনো ভাবে চলে আসে, গল্পে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, এমনকি তিনি দারুণ সৌকর্যে হাজির করেন দেশভাগে কারো কারো সাম্প্রদায়িক বলি হওয়াকে। ধ্রুব ইতিহাসকে যেমন উপেক্ষা করেন না, তেমনি তাঁর গল্পে বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। বিভিন্ন লোকজ মিথ, প্রবাদ, পুঁথির ব্যবহার তাঁর গল্পকে অনন্য করে তুলেছে।
গল্পের ভেতরে গল্প বলার প্রবণতা মেহেদী ধ্রুবের অনেক বেশি, তাঁর গল্পগ্রন্থটি পড়লেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি একটি গল্পের ভেতরে অনেকগুলো গল্প সাজান এবং শেষে সবগুলো গল্প মিলে একটা কেন্দ্রীয় গল্প হয়ে দাঁড়ায়। এই গল্পকারের গল্পে জাদুবাস্তববাদের ব্যবহারে চেষ্টাটি কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। তিনি তাঁর অনেক গল্পেই সেটার প্রয়োগ করেছেন। আমি সাহিত্যের ছাত্র না তাই আমি বলতে পারবো না তিনি কতটুকু সফলভাবে করতে পেরেছেন সেটা আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। তবে আমার যতোটুকু মনে হয় তাঁকে এই জায়গায় আরো অনেক কাজ করতে হবে নয়তো ব্যপারটা সঠিকভাবে আসবে না।
মেহেদী ধ্রুব সময়কে ধরতে পেরেছেন, ধরতে পেরেছেন মানুষকে সেজন্যই অনেক দারুণ গল্প তাঁর হাত দিয়ে আমাদের কাছে চলে আসতে পেরেছে, নিশ্চয়ই আরো দারুণ কিছু আমরা তাঁর কাছ থেকে পাবো।
২.
আগেই বলেছি ‘মেঘ ও মানুষের গল্প’ গ্রন্থের সবগুলো গল্পই আলোচনার দাবীদার। কিন্তু সবগুলো গল্প নিয়ে আলোচনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না, কেননা সবগুলো গল্পই দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। আমি আলোচনা করবো গ্রন্থভুক্ত দ্বিতীয় গল্প ‘কুড়ানো কথা’ নিয়ে। আলোচ্য গল্পটি প্রতীক আর সংকেতে ভরপুর সুতরাং একই অনেক সময় অনেক অর্থ বহন করে, তাই আমার এই আলোচানাই শেষ নয় বরং এটা সূচনা মাত্র, বোদ্ধারা এই গল্প নিয়ে আরো নানাভাবে আলোচনা করতে পারেন।
এই গল্পের শুরুটা অনেক অদ্ভুত এক ব্যাপার নিয়ে। দেখা যায় এক কোটিপতি প্রফেসর বাড়ি ঘর ছেড়ে এক গাঙ্গের পাড়ে আস্তানা গড়েছে এবং প্রফেসর ভাত না খেয়ে লতাপাতা খায় আরো আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই প্রফেসর একজন মানুষকে একটি গল্প বলে উক্ত মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ কিংবা অভ্যাস সম্পর্কেও বলে দিতে পারে, পারে যেকোনো সমস্যা সমাধান করে দিতে। প্রফেসরের কাছে উপছে পড়া মানুষের ভিড় সবাই আসে কোনো না কোনো সমস্যা নিয়ে সামাধানের জন্য। এই প্রফেসরের কাছে গল্পকথকেরা ৫ জন মিলে একবার যায় তাঁদের গল্প শোনার জন্য। তাঁদের একজন সাজে উত্তরের লোক, একজন দক্ষিণের, একজন পুবের লোক, একজন পশ্চিম এবং একজনের নাম সাম্য জাহান।
প্রফেসর এই পাঁচ জনকেই আজগুবি কিছু গল্প শোনান যা আপাতদৃষ্টিতে রূপকথাই মনে হবে। যেমন প্রথমেই সাম্য জাহানকে শোনান এক কাঠ ঠোকরার গল্প। যেই কাঠ ঠোকরা মামার বাড়িতে খায়-দায়, ঘুরে আর মামা মামিকে বড় বড় কথা শোনায়। মামা মামিদের বলে তাঁদের প্রত্যেককে সে কাঠ দিয়ে নৌকা বানিয়ে দিবে কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা যায় ভিন্ন কিছু, দেখা যায় কাঠ ঠোকরার মুখের কথাই সার। কাজের কাজ সে করে না, এবং মামা মামিদেরকে দেখায় যে তাঁদের নৌকার দরকার নেই। এভাবেই এই গল্পটা শেষ হয়।
পরবর্তীতে পশ্চিমের লোককে পাঠানো হলে তাঁকে শোনানো হয় বাদুর মুখ দিয়ে হাগে কেন সেই গল্প। গল্পে প্রফেসর বলেন মানুষ বনে আগুন লাগালে বনের সবাই মিলে মানুষের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে কিন্তু বনের বাদুর ভাবে মানুষের সাথে কীভাবে বনের পশুপাখি পেরে উঠবে? সুতরাং তাঁরা মানুষের পক্ষ নেয়, যেন জিতে গিয়ে বন শাসন করতে পারে। আর সেজন্য মানুষকে বনের সকল তথ্য ও খবরাখবর জানাতে গাছের আগডালে ঝুলে থাকে। এভাবে সাত দিন ঝুলে থাকার পর তাঁর পায়ুপথ বন্ধ হয়ে গিয়ে মুখ দিয়ে হাগা বের হয় তারপর দেখা যায় যুদ্ধের নয়দিনের মাথায় মানুষ বন ছেড়ে পালায়। যুদ্ধজয়ী পশুপাখি বাদুরের উপর হামলা করলে তাঁরা কেউ আশ্রয় নেন মানুষের পরিত্যক্ত বাড়িতে আবার কিছু বড় বড় বাদুর ঝুলে থাকে বনের বড় বড় বটগাছে।
তারপর গল্প শোনান উত্তরের লোককে। এখানে আমরা দেখি এক রাজাকে। যে রাজাকে তাঁর উজির নাজির সবাই তোষামোদ করতেই ব্যস্ত , কোনো কাজই তাঁরা করতে পারে না। এই অবস্থায় রাজা দেশের সবচেয়ে বুদ্ধিমান যুবককে খুঁজে বের করেন কিন্তু পরে দেখা যায় এই বুদ্ধিমান যুবকই একই রকম, রাজার কোনো কথা ছাড়া একটা কাজ করতে পারে না। রাজা যা বলে শুধু তাই করতে থাকে।
পুবের লোককে শোনার একসময়ের সবচেয়ে বিষধর ঢোঁড়া সাপ আজ কেন নির্বিষ সেই গল্প। গল্পে আমরা দেখতে পাই ঢোঁড়া সাপ জন্মের পর নয় বছরে মানুষ মেরেছে হাজার হাজার। এক সময়ে তাঁর ভেতরে একটা উপলব্ধি জাগে, ভাবে অনেক অনেক পাপ সে করে ফেলেছে। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে সে যায় এক দার্শনিকের কাছে এবং তাঁর কথা মতো কাউকে ছোবল মারা বন্ধ করে। ধীরে ধীরে সময় গেলে ঢোঁড়া সাপকে সবাই নানাভাবে মারে, কেউ হয়তো তাঁকে দড়ির মতো ব্যবহার করে, কেউ হয়তো তাঁর উপর দিয়ে পাড়িয়ে চলে যায় তবুও ছোবল দেয় না, ফোঁস ফাঁস করে না এবং একসময় দেখা যায় এই ঢোঁড়া সাপকে মানুষ এতোটাই কম ভয় পায় যে তাঁর বিষ দাঁতও মানুষ উঠিয়ে নিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে নির্বিষ হয়ে যায় একসময়ের সবচেয়ে বিষধর সাপ।
সর্বশেষ গল্প শোনান গল্প কথককে, অর্থাৎ দক্ষিণের লোককে। তাঁকে শোনানো হয় তেলাপোকা কেন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, কেন তাঁকে সর্বত্র পাওয়া যায়? সেই গল্পই শোনান। দেখা যায় একদিন ডাইনোসরের মগজে লাখ লাখ মশা ঢুকে পড়লে একটি তেলাপোকাকে পাঠানো হয় এবং সাথে সাথে হাজার হাজার তেলাপোকাও তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে ঢুকে যায়। সেই প্রথম তেলাপোকা ডাইনোসরের মগজে ১৩৫ টা মগজ দেখে কিন্তু একসময় সে আরো একটা মগজ আবিষ্কার করে তাঁর কাছে এই মগজের এক একটা রেখা হাজির হয় পদ্মা, মেঘনা কিংবা যমুনা হয়ে। তাঁর রক্তের শিরা যেন লাল, যেন গাড় সবুজ। ডাইনোসরের মগজে মশার সাথে যুদ্ধে তেলাপোকা জিতে যায়, ১৩৬ নাম্বার মগজে তাঁরা বন্দি করে ৯৩ হাজার মশা। এক সময় তেলাপোকা ডাইনোসরের মগজ থেকে বের হয়ে আসে কিন্থু ১৩৬ তম মগজকে গল্পের কথক এবং বীর তেলাপোকা ভুলতে পারে না। যান বা এই মগজ তাঁকে মাতাল করে রাখে। এবং একদিন সেই তেলাপোকা ডাইনোসরের মগজে ঢুকে ১৩৬ নাম্বার মগজ বাহিরে নিয়ে চলে আসে এবং মৃত্যু হয় ডাইনোসরের। আর সেই সাথে তেলাপোকারা পায় খুঁটে খাওয়ার এক আশ্চর্য মগজ।
এই হলো গল্পের ভেতরে খণ্ড খণ্ড গল্প। কিন্তু এই গল্পগুলো কেমন? কোনো রূপকথাই মনে হয়। কিন্তু পাঠক যদি দেশের ইতিহাস সচেতন থাকে, সে যদি রাজনীতি সচেতন হয় তাহলে গল্পটাকে সে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করবে, দেখতে পারবে এই গল্পটা কতটা রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে ভরপুর একটা গল্প। রূপকথা কিংবা পরাবাস্তবতার আড়ালে লেখক যা বুঝাতে চেয়েছেন তা এখানকার সর্বশেষ গল্পে বেশ স্পষ্ট, এই প্রতীকগুলো আমরা একটু সচেতন হলেই বুঝতে পারবো। এই গল্পের ৯৩ হাজার কিংবা ১৩৫ টা মগজের পর ১৩৬ তম মগজের আবিষ্কার এই সব সূত্রকে মাথায় রেখে আমরা যেতে পারি প্রথম গল্পে, যেতে পারি ‘সাম্য জাহানের’ কাছে। নামের মধ্যেই যেন এর পরিচয়টা লুকিয়ে আছে। সাম্য শব্দটার দিকে আলাদা করে নজর দিলে আমরা বুঝতে পারি সেটা দিয়ে এই দেশের কিছু বাম রাজনৈতিকদেরই বুঝানো হয়েছে। তাঁরা মুখে সাম্যের গান গায়। তাঁরা সমাজ পালটে দেয়ার স্বপ্ন দেখায়। আমাদের দেশের এই সব ভণ্ড এবং পল্টিবাজ বাম রাজনীতিবিদরা বড় বড় কথা বলতেই পারে, বড় বড় স্বপ্ন দেখায় কিন্তু কোনো কাজ করতে পারে না। যখনি কাজ করতে বলা হয় তখন তাঁর অজুহাত দেখায়, প্রয়োজনহীনতার কথা বলে। যেমন এই গল্পে কাঠ ঠোকরো তাঁর মামা মামিকে অজুহাত দেখায় তেমনি। প্রফেসর তাই সাম্য জাহানের কাছে বলে দিয়েছেন তাঁদের খাসালত, অতীত-বর্তমান।
তারপর আমরা তাকাতে পারি পশ্চিমের লোকের দিকে। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবো সে এদেশের রাজাকারদের প্রতিনিধি। এখানে মানুষের ৯ দিনের দিন পালিয়ে যাওয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানীদের ৯ মাসের মাথায় হেরে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে। বাদুড় যেমন বনে থেকে বনের পশু পাখির বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের পক্ষ নিয়ে ছিলো তেমনি রাজাকাররাও এই দেশে থেকে পাক হানাদারদের সাহায্য করেছিলো এবং যুদ্ধ শেষে তাঁরা সবাই দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যায়নি কিংবা নিজের চরিত্র বদলায়নি। তাঁদের বড় বড় নেতারা বড় বড় বাদুড়ের বট গাছে ঝুলে থাকার মতো বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা দলের আশ্রয়ে এদেশেই শেকড় গেড়েছিলো।
উত্তরের লোকের গল্পটা আমাদের বর্তমান ভগ্ন শাসন ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে। এই দেশের অবস্থা এখন এমনি হয়েছে যে সবাই শুধু সরকারের তোষামোদেই ব্যস্ত, কীভাবে সরকারপ্রধানকে খুশি করা যায় সেই চিন্তা। সরকারপ্রধান অখুশি হতে পারে ভেবে তাঁর কথার বাহিরে এই মানুষগুলো একটা কাজও করে না। এমনকি সরকার প্রধান যখন তাঁর কাজে সাহায্য করার জন্য দেশের সবচেয়ে মেধাবীকে নিয়ে আসেন তখন তাঁর অবস্থাও একই হয়ে যায়। এই সিস্টেমে পড়ে সেও হয়ে যায় গোলাম, সেও সরকারপ্রধানের কথার বাহিরে ভিন্ন কোনো কাজ করে না।
এবার আসে পুবের লোকের গল্প। একটি বিষধর সাপের নয় বছর ধরে হাজার হাজার মানুষ মারার পর বর্তমানে এমনি এক অবস্থা যাকে সবাই উষ্টায়! একটু খুঁজে দেখুন কোন স্বৈরশাসক নয় বছর এই দেশের মানুষ মেরেছে? আশাকরি উত্তরটা পেয়ে গেছেন। মিলিয়ে দেখেন সেই দলের বর্তমান অবস্থাটা, এবং দেখন মানুষ কীভাবে তাঁকে পা দিয়ে উষ্টায়।
দক্ষিণের লোককে শোনানো হয়েছে আমাদের কিছু সূর্যসন্তানের নষ্ট হয়ে যাওয়ার গল্প। এই দেশের লাখ লাখ মানুষের আত্মদানের ফল এই বাংলাদেশ, যার আত্মপ্রকাশ হয় পৃথিবীর ১৩৬ তম স্বাধীন দেশ হিসেবে। অথচ কিছু মানুষ এখন বীর সেজে এই লাখো মানুষের যুদ্ধের ফসলকে একান্ত নিজের করে নিয়েছে। সেই বীর পদবীটা ব্যবহার করে যাচ্ছেতাইভাবে দেশকে খাবলে খাবলে খাচ্ছে। এই গল্পই শুনিয়েছেন গল্পকার।
এবার আশা যাক সেই প্রফেসরের প্রসঙ্গে। বেশ কিছুদিন পর দেখা যায় প্রফেসরের আস্তানা খারাপ কাজের আস্তানা, নাস্তিকদের আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু প্রফেসর এই সব কথার কোনো উত্তর দেয় না, বরং একসময় সে আস্তানাটা এক পুণ্যবান ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে পালিয়ে যায়। নতুন যে আস্তানাটার ক্ষমতা পায়, সে ক্রমেই নিজেকে ধর্মীয় শক্তি হিসেবে উপস্তাপন করে। ভেঙে ফেলে পুরনো নাট্যশালা, চিত্রশালা কিংবা ভাস্কর্য তাঁর জায়গায় করা হয় কারুকার্যময় উপসনালয়। তারপর দেখা যায় সেই পুণ্যবান ব্যক্তি দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠেন। তিনি কথা বলেন দেশ সব ব্যাপারে, চলাফেরা করেন হেলিকাপ্টারে করে। এবং একসময় সেই সাম্য জাহান সেই উত্তরের কিংবা দক্ষিণের কিংবা পুব পশ্চিমের লোকেরাও তাঁর সাথে গোপনে দেখা করে।
এখন প্রশ্ন হলো কে এই প্রফেসর? কে এই পুণ্যবান ব্যক্তি? আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সাথে এই প্রফেসর মিলে যান। দেখা যাবে এই সব বুদ্ধিজীবীরা, সুশীলরা দেশের মানুষকে, সরকারকে নানা পরামর্শ দেয়। তাঁরা দেশের কথা বলে, ঐতিহ্যর কথা বলে, বলে এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। তাঁরা প্রগতিশীলতার কথা বলে, তাঁরা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির কথা বলে। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় তাঁরা নিজস্ব স্বার্থের কারণে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তাঁরাও হাত মেলায় মৌলবাদী শক্তির কাছে। এক সময় তাঁদের এবং মৌলবাদীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে, একজন আরেকজনের প্রতিভূ হিসেবে আবির্ভুত হয়। যেমনটা আমরা দেখি আলোচ্য গল্পে। দেখি এই সুশীলরা আস্তানা বিক্রি করার নামে প্রকারন্তে নিজেদেরই বিক্রি করে দেয় এবং উত্থান ঘটায় এমন এক শক্তির তাঁরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ধ্বংস করে দেশের শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান দর্শনকে। এই সব মানুষের প্রভাব এতোই বাড়তে থাকে যে দেশের মানুষ তাঁদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ধর্মের লেবাস পড়ে এই সব কথিত পুণ্যাত্মা মানুষকে আমরা মাথায় তুলে রাখি, নিজেরাই গুরুত্বপূর্ণ করে তুলি। দেখা যায় তাঁরা তখন রাষ্ট্রর সব কিছু নিয়েই কথা বলে সেই সব কথা বার্তা আমাদের প্রিন্ট মিডিয়া হলাও প্রচার করে। যেহেতু দেশের সাধারণ মানুষ ধর্মের ব্যাপারে অনেক আবেগপ্রবণ সেহেতু তাঁরা ভোটের ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ভোট মাঠে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠায় আমাদের দেশের রাজনৈতিকদের প্রতীক হিসবে ব্যবহার করা ‘সাম্য জাহান’ ‘উত্তরের মানুষ’ ‘দক্ষিণের মানুষ’ ‘পশ্চিমের মানুষ’ ‘পুবের মানুষ’ হাত মেলায় সেই মৌলবাদীদের সাথে। একটা রাষ্ট্র হয়ে পড়ে মৌলবাদী শক্তির কাছে দাস। তাঁদের কথায় সরকার প্রধান সবকিছুই করেন।
৩.
মেহেদী ধ্রুবের ‘কুড়ানো কথা’ গল্পটি আমাদের বর্তমান সময়ের দেশ ও রাজনীতির এক অসাধারণ গল্প। তরুণ এই গল্পকার দেশকে খুঁজেছেন মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে। দেশকে দেখেছেন শিল্প সাহিত্য দর্শনের ভেতর দিয়ে। কিন্তু এই দেশের রাজনৈতিক এবং মৌলবাদী শক্তির কারণে তিনি পেয়েছেন দেশের একটা ভগ্ন রূপ। যা হয়তো পীড়িত করে, কাঁদায়। সেই কান্না থেকেই এই গল্পের জন্ম। সম্পূর্ণ প্রতীকের আশ্রয় নিয়ে বলে গেছেন দেশ রাজনীতির গল্প, কেননা সময় এখন এমনি যে প্রতীক ভিন্ন সরাসরি কথা বলা বড়ই দুষ্কর।

মেহেদী ধ্রুব 'র গল্প গ্রন্থ ' মেঘ ও মানুষের গল্প' অনলাইনে কিনুনঃ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: শুভ কামনা রইল।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪১

জাবির আহমেদ জুবেল বলেছেন: গল্পকারের হয়ে ধন্যবাদ।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: বইটি সংগ্রহ করবো।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪১

জাবির আহমেদ জুবেল বলেছেন: করুন।
ভাল বই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.