নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কথা -২১

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৬

"আমার কথা -২০" পড়তে হলে এখানে ক্লিক করুনঃ "আমার কথা -২০"

পকেট মানি’র অবিশ্বাস্য বরকতঃ
প্রতি টার্মের শুরুতে আমাদের অভিভাবকদেরকে আমাদের পকেট মানি বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট ৫০.০০ (পঞ্চাশ টাকা মাত্র) পাঠাতে হতো। আজকের দিনে কি এটা বিশ্বাস করা যাবে, যে তিন মাসের জন্য মাত্র পঞ্চাশ টাকা হাতখরচ? অথচ তখন এই ক্ষুদ্র এমাউন্ট থেকেও কিছুটা হলেও বাঁচানো সম্ভব হতো। কোন দুষ্টামির কারণে কিংবা কোন কিছু হারিয়ে ফেলার কারণে কারো কোন মাইনর ফাইন হলে সেটাও এখান থেকে মিটানো হতো। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় হাউস মাস্টারের রুমের সামনে ক্লাসওয়াইজ ডাক পড়তো। এখন দু'টাকা ফকিরকে দিলেও নিতে চায় না, অথচ তখন আমরা একে একে ভেতরে ঢুকে সাপ্তাহিক হাতখরচ বাবদ দু’টাকা পকেটে ভরে মহা আনন্দে বেরিয়ে আসতাম। পরেরদিন রোববার ইন্সপেকশন এর পর পরই দৌড়াতাম ক্যান্টিনে, যেটা আমাদের হাউস অর্থাৎ ফজলুল হক হাউস থেকে ছিলো সর্বনিকটে। ক্যান্টিনে আসার প্রতিযোগিতায় তাই অন্য দুই হাউসের ক্যাডেটরা কিছুটা পিছিয়েই থাকতো। ক্যান্টিনের দায়িত্বে ছিলেন একজন মোটা সোটা মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক, যার নামটা এ মুহূর্তে স্মরণে আসছেনা। তিনি মাঝে মাঝে একাধারে স্পোর্টস গুডস স্টোরেরও দায়িত্বে ছিলেন। তার মুখটা ফর্সা এবং মাথাটা প্রায় চুলশূন্য ছিলো, তখন দেখতে অনেকটা এখনকার অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মত লাগতো, শুধু বয়সের ছাপটা বাদে।

ইন্সপেকশনটা ভালোয় ভালোয় পার করতে পারলে ইন্সপেকশনের পরের মুহুর্তগুলোকেই মনে হতো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছোট ছোট পীয়ার গ্রুপ আগেই ঠিক করে রাখতো কে কী খেলবে। ক্রিকেটে উৎসাহী কেউ দায়িত্ব পেতো স্পোর্টস স্টোর থেকে ব্যাট, বল, প্যাড, উইকেট ইত্যাদি সংগ্রহ করার, কেউ ফুটবল, কেউ ভলিবল, টেনিস অথবা বাস্কেটবল। আমাদের সময়ে সফট বলও খেলা হতো, তবে সেটা কখনোই ততটা জনপ্রিয় খেলা ছিলো না। যারা ইনডোর গেমস এর প্রতি উৎসাহী থাকতো, তারা ছুটতো কমন রুমের দিকে, টেবিল টেনিস আর ক্যারম বোর্ড দখলে নিতে। কিন্তু পকেট যেহেতু গরম থাকতো (মাত্র দুটি টাকাতেই) সেহেতু ক্যান্টিনেও ছুটার তাগিদ থাকতো। জীবনে যতপ্রকার “দৌড়” এর মধ্যে থেকেছি, তার মধ্যে তখনকার ঐ ধরনের দৌড় গুলোতে থাকাটাই বোধকরি সবচেয়ে সুখের ছিলো। তখন একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস এর কাঁচের বোতলের দাম ছিলো চল্লিশ পয়সা, যা ঐ সময়ের তুলনায় একটু বেশীই ছিলো। আর প্রথম প্রথম ক্যান্টিনে কোন ফ্রীজ না থাকাতে কোল্ড ড্রিঙ্কস কখনো কোল্ড পাওয়া যেতনা, তথাপি তা ছিলো অমৃতসমান। টাঙ্গাইলের একটা চমচম পাওয়া যেতো মাত্র চার আনায়, অর্থাৎ ২৫ পয়সায়। এছাড়া চকলেট/বিস্কুটও পাওয়া যেতো। এত কিছুর পরও দু’টাকার মধ্যে দু’চার আনা পকেটে থেকে যেতো।

কিছু অবিস্মরণীয় নাম না জানা মুখের স্মৃতিঃ
আজ প্রায় ৪৮ বছর হতে চললো, তবু পেছন ফিরে তাকালে কিছু অবিস্মরণীয় নাম না জানা মুখের স্মৃতি ভেসে ওঠে। আমাদের সময় নিয়ম ছিলো, প্রতি শনিবার রাতে ধোবী ঠিকাদার স্বয়ং কিংবা তার নিয়োগকৃত লোক এসে আমাদের ময়লা কাপড় চোপড় গুলো নিয়ে যেতো। সপ্তাহের মাঝখানে কোন একদিন ইস্ত্রী করা কাপড়গুলো বিভিন্ন হাউসে দিয়ে যেতো। একটা কালো, হ্যাংলা পাতলা ১৭/১৮ বছরের কিশোর ছিলো, যে আমাকে দেখা মাত্র আমার কাপড়গুলো খুঁজে বের করে আমার হাতে এনে দিতো। আমাকে আর কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হতোনা। সবার ক্যাডেট নাম্বার তার মুখস্থ ছিলো। যেসব কাপড় ধৌত করার জন্য দিতাম, আমাদেরকে দুই ফর্দে তার একটা তালিকা লিখতে হতো। একটা থাকতো ধোবীর কাছে, আরেকটা আমাদের কাছে। একদিন আমি খুব তাড়াহুড়োর মাঝে তালিকা তৈরী করতে গিয়ে দুই একটা কাপড়ের নাম ভুলে বাদ দিয়েছিলাম। ছেলেটা যেদিন কাপড় নিয়ে এলো, আমাকে একটু আলাদা করে ডেকে বললো, ভাইয়া, আপনার তো অনেক পেমেন্ট লেগে যেতো। আমি ছিলাম বলে আপনার কাপড়গুলো ঠিকঠাক মত পাচ্ছেন। আপনি তো তালিকায় অনেক কম লিখেছিলেন। এই বলে সে তালিকাটা দেখালো। দেখলাম, আমি যা যা লিখেছিলাম, তার সাথে আরো কয়েকটা নাম লেখা হয়েছে। সে নিজহাতে ওগুলো লিখে দিয়েছে। আর কি সুন্দর তার হাতের লেখা, ইংরেজীতেও! মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করছে। হাতের লেখা দেখে মুগ্ধ হয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওগুলো কার হাতের লেখা। যখন সে বললো তারই লেখা, তখন আমার প্রশ্ন সে কতটুকু লেখাপড়া করেছে। সে জানালো, নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে অর্থাভাবে পড়াশোনা বাদ দিয়েছে। এর পর থেকেই তার সাথে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে টুকটাক সৌহার্দ্যমূলক কথাবার্তা হতো। সে জানাতো, আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনটা দেখতে তার খুব ভালো লাগতো। তার মনে গভীর বিশ্বাস ছিলো যে আমরা অর্থাৎ ক্যাডেটরা খুব ভালো মানুষ, বড় হয়ে আমরা দেশের বড় নেতা হবো। এ কথাটা সে আমাকে প্রায়ই বলে থাকতো। আমি একথা ভেবে খুবই কষ্ট পেতাম এই ভেবে যে আমরা যখন মোটা খাকী কাপড়ের উপর জার্সি পুল ওভার গায়ে চড়িয়েও শীত কাটাতে পারতাম না, তখন শীতের সাত সকালে সে খালি গায়ে আমাদের কাপড় চোপড় ধৌত করার জন্য ধোবীঘাটে নেমে পড়তো। কলেজ মাঠের যে প্রান্তে স্টাফ কোয়ার্টার্স, বেকারী, ধোবীঘাট ইত্যাদি ছিলো, সে প্রান্তের রাস্তায় বিকেলের গেমসের হুইসেল বাজার সাথে সাথে সে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতো। ঐ মাঠগুলোতে সাধারণতঃ জুনিয়ররা, অর্থাৎ ক্লাস সেভেন এইটের ক্যাডেটরা খেলতো। ঐ সব পিচ্চিদের খেলা দেখেও সে পরম আনন্দ লাভ করতো। সে সারাদিন ধরে ঝটপট তার কাজগুলো সেরে রাখতো, যেন বিকেলে গেমস পিরিয়ডে সে ক্যাডেটদের খেলা দেখার জন্য ঠিকাদারের অনুমতি পায়।

এখন যেটা কলেজ হাসপাতাল, এক সময়ে তার চার পাশে বেশ গভীর জঙ্গলই ছিলো। জঙ্গল কেটে রাস্তা বানানো হয়েছিলো। যখন রাস্তাটা তৈরী হচ্ছিলো, তখন অনেক সাপ টাপও মারা হয়েছিলো। আমরা মাঝে মাঝে খবর পেয়ে সেগুলো দেখতে যেতাম। হাসপাতাল নির্মাণের কাজ যখন প্রায় শেষের পথে, তখন রাস্তাটা বিটুমিন করা হচ্ছিলো। কালো আলকাতরা জ্বাল দিয়ে তার সাথে পাথরের কুচি মিশিয়ে যখন রাস্তায় ঢালা হচ্ছিলো, তখন কি করে যেন তা এক শ্রমিকের গায়ে পড়ে যায়। তার আর্ত চীৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। তাকে অবশ্য কলেজের গাড়ীতে করে মির্জাপুরের কুমুদিনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে তার অবস্থা বেশ সিরিয়াস হয়ে ওঠে। সভ্যতার পেছনে এমন ধরণের কত যে বেদনা লুকিয়ে থাকে, তার খবর কেই বা রাখে! এর পর থেকে আমি যতবার কলেজ হাসপাতালের ঐ রাস্তাটাতে পা মাড়িয়েছি, ততবারই আমার মানসপটে ঐ শ্রমিকের ভয়াবহ যন্ত্রণাকাতর মুখচ্ছবি ভেসে উঠেছে, এখনও ওঠে।

স্বাধীনতার পরে আমাদের কলেজে একজন হিরো টাইপের যুবক স্টেশনারী স্টোর কীপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলো। তার নাম ছিলো শাজাহান, তার পিতা ছিলেন এমসিসি’র তৎকালীন প্রধান করণিক মজিবর রহমান। তার কাছে আমাদেরকে খাতা, পেন্সিল, ইরেজার ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য যেতে হতো। তখন বেলবটমের যুগ হলেও সে একটা টেডী ফুলপ্যান্ট পড়ে থাকতো, কিন্তু চুলগুলোকে নায়ক রাজ্জাকের মত পরিপাটি করে ব্যাকব্রাশ করে রাখতো। তখন শুনেছিলাম, মির্জাপুরের তৎকালীন এম পি ফারুক সাহেবের তদবিরে সে কলেজে নিয়োগ লাভ করেছিলো। এজন্য টাইম টেবিলের ব্যাপারে সে খুব একটা পরোয়া করতো না। যখন আমাদের স্টেশনারী সংগ্রহের সময়, তখন প্রায়ই দেখতাম সে স্টোর তালাবদ্ধ রেখে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। চেহারায় সে একটা ব্যর্থ প্রেমিক ধরণের আদল ধরে রাখতো, এবং আসলেই সে একজন আদর্শ ব্যর্থ প্রেমিক ছিলো। তার মনটা খুব নরম ছিলো, একটু ভোলাভালা প্রকৃতির ছিলো। সুযোগ পেলেই সে আমাদেরকে তার ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী শোনাতে চাইতো। কেউ যদি সদয় হয়ে তাকে কিছুটা সময় দিতো, তবে সে তার কাহিনী বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলতো। সব কাহিনীর শেষে থাকতো তার স্বকন্ঠে গীত গান, “আমার সে প্রেম, আমাকে ফিরিয়ে দাও”! তখন সে দাবী করতো, এ গানটা তারই লেখা। সেটা বিশ্বাস করতেই আমার ভালো লাগতো, তাই কোনদিন যাচাই করতে যাইনি। এখন গুগলের যুগে যে কেউ অবশ্য যাচাই করে নিতে পারেন। তবে সেটা মিথ্যে হলেও, একজন জেনুইন ব্যর্থ প্রেমিক এ গানের কথায় এতটাই নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন যে তিনি নিজেকেই সে গানের রচয়িতা ভাবছেন, এ কথা মনে হলে তার বিরুদ্ধে আর কোন নেতিবাচক ধারণা পোষণ করার ইচ্ছে জাগতোনা।

চলবে…


ঢাকা
৩০ অগাস্ট ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
(ইতোপূর্বে প্রকাশিত)

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৮

রাতুল_শাহ বলেছেন: এই পর্বটার জন্য খুব একটা অপেক্ষা করতে হল না।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: তা ঠিক বলেছেন।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৮

আরজু পনি বলেছেন:
পকেট মানির অংশটা বেশি ভালো লাগলো পড়তে ।

খেতে বসে যতো দারুণ খাবারই পাই না কেন, সেখানেও থাকে অনেক চাপা কান্না ।
ধোবীর ব্যাপারটাতে এই কথাটা মনে হলো ।

অনেকদিন পর লিখলেন "আমার কথা"
অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেকদিন পর লিখলেন "আমার কথা" --কেন, মাত্র পরশুদিনই তো লিখলাম "আমার কথা-২০"। অবশ্য হ্যাঁ, তার আগে একটা নাতিদীর্ঘ গ্যাপ ছিল।
লেখাটা 'লাইক' করায় ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হয়েছি।

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৯

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: অসাধারণ শেয়ার ।

শুভেচ্ছা রইল

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, নাজমুল হাসান মজুমদার। উচ্চ প্রশংসায় উচ্চে উঠে গেলাম, :)

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

সাধারণ মানুষকে পড়ার সুযোগ না দিয়ে আপনাদের পেছনে পাকী সরকার টাকা ঢেলেছে।

৩ মাসে, ৫০ টাকা খরচ করেছেন পকেট মানি হিসেবে; তখন ৫০/৬০ টাকা বেতন পেতেন কেরানীরা।

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩১

প্রামানিক বলেছেন: এ পর্বও পড়ে ভাল লাগল। হাত খরচের ৫০ টাকা বর্তমানে কিছু না হলেও তখনকার সময় অনেক। আড়াই মণ পাটের মূল্য।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, প্রামানিক। আপনি হিসেবটা ঠিকই করেছেন, তখনকার দিনে ৫০ টাকার মূল্য অনেক ছিল। এ টাকাটা আমাদেরকে সরকার বা কলেজ দিত না। এটা ক্যাডেটদের পিতামাতা/অভিভাবকদেরকে দিতে হতো। সাপ্তাহিক দু'টাকা হিসেবে একেকটা টার্মে আমরা এর প্রায় অর্ধেকের মত খরচ করতাম। বাকীটা রয়ে যেত কোন জরুরী খরচ মেটানোর জন্য। খরচ না হলে ছুটিতে বাড়ী যাবার সময় আমাদের টাকা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হতো। এটাই ছিলো তখনকার নিয়ম। পরে কলেজে একটা ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হলে আমরা নিজ নিজ নামে একাউন্ট খুলে নিয়েছিলাম। সপ্তাহে একদিন একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারতাম।

৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩৫

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: সভ্যতার পেছনে এমন ধরণের কত যে বেদনা লুকিয়ে থাকে, তার খবর কেই বা রাখে!

আসলেই আমরা কেউই তাদের খবর রাখিনা।

হিরো টাইপের যুবক স্টেশনারী স্টোর কীপার

তার কথাগুলো জেনে মজা পেয়েছি। আর ধোবী ছেলেটির কথা আর কি বলব , এইতো তাদের জীবন। আগেও যা, এখনো তা । তাদের জীবনের কোন পরিবর্তন নেই।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার প্রতিটি কথাই ভালো লাগলো, ফেরদৌসা রুহী। ধোবী ছেলেটি তার কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য এবং নিষ্পাপ ধ্যান ধারণার জন্য আজও আমার হৃদয়ে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত।
মন্তব্যে প্রীত হয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ।

৭| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২১

আরজু পনি বলেছেন:

অফটপিক:
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর একজন এমডির ড্রাইভার যে পরিমাণ বেতন পান তা অনেক কলেজের শিক্ষকও পাননা, কাজেই অর্থ ব্যবস্থায় সমাজে কারো সাথে কারো তুলনা করা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হয় না ।



এটা আপনি চাইলে মুছে ফেলতে পারেন ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: Quality versus quantity এর দ্বন্দ্ব চিরকালই ছিল, আছে এবং থাকবে, আরজুপনি। সেকালের নেতারা এবং পরবর্তীকালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতাও সঙ্গত কারণেই কোয়ালিটিকেই বেছে নিয়েছিলেন।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৮| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৭

সাথিয়া বলেছেন: আপনার জীবনের সত্য কাহিনী নাকি ভাইয়া? পড়তে খুব ভালোলাগছিল। দুই টাকা পকেটমানি! আর তাই দিয়ে এত কিছু কিনতেন! ভালোলাগা দিলাম :)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার কোন লেখায় আপনি বুঝি এই প্রথম এলেন, সাথিয়া, তাই আমার ব্লগে আপনাকে সুস্বাগতম!
লেখাটা পড়ে একটুও কি কোথাও মিথ্যে মিথ্যে মনে হয়েছে, কেবল সাপ্তাহিক দু'টাকার পকেট মানির ব্যাপারটা ছাড়া? আর হ্যাঁ, এখন অবিশ্বাস্য মনে হলেও তখন এ দু'টাকার বরাদ্দটাই চরম সত্য ছিল।
উত্তম পুরুষে লেখা, তাই কাহিনীটা আমার জীবনের তো বটেই, অন্য কারো নয়। শিরোনামটাও তো তাই বলে-- "আমার কথা"।
প্রথম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আশা রাখছি, সময় করে আরো দু'চারটা পর্বের কথা পড়ে নেবেন।

৯| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

বনজ্যোৎস্নার কাব্য বলেছেন: ভালো লাগলো পড়তে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ, বনজ্যোৎস্নার কাব্য। প্রীত হ'লাম।

১০| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: ২০ , ২১ দুটাই পড়লাম ।/
Do not sell yourself to anybody. আপনার স্যারের এই কথাটা ভাল লেগেছে।
এটা পালন করতে অনেক মূল্য দিতে হয় ।
পকেট মানিতে মজা পেয়েছি :)
আমি হলে মনে হয় সব খরচ করে ফেলতাম । :)
ভাল থাকবেন ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: দুটোই পড়ার জন্য ধন্যবাদ, মাহমুদ০০৭। প্রীত হ'লাম।
সেদিন আপনার বার্তাটা পড়ে শেষ করার আগেই কি করে জানি কোথায় হারিয়ে গেলো। আর খুঁজে পাচ্ছিনা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। দয়া করে আইডিটা দিবেন অথবা আবার পাঠান, রাজী হওয়াটা আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার হবে বৈকি।

১১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: নাম না জানা স্মৃতির কথা গুলো পড়ে ভালো খারাপ দুটোই লাগলো। স্পেশালি ধোবি ছেলেটার কথা।
আমার ছেলেও গতবছর থেকে পকেট মানি পকেট মানি বলে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছে যদিও সে হোস্টেল এ থাকে না।তাই তাকে নিজের কাজ গুলো নিজে করতে পারলে বা আমার কাজে হেল্প করতে পারলে পকেট মানি দেয়া যেতে পারে আশ্বাস দেয়া হয়েছে যদিও সেই মানি আর আপনার আমলের মানির অংকে অনেক তফাত হবে B-)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ, অপর্ণা মম্ময়। মন্তব্যে প্রীত হয়েছি।
হ্যাঁ, তফাত তো হবেই, প্রায় অর্ধ শতাব্দীর ফারাক। আপনার বাবুই এর জন্য শুভকামনা রইলো। মায়ের নজরে থাকলে ছেলেরা বখে যেতে পারেনা। আবার অতি নজরে অকর্মণ্য হয়। আপনি তাকে এখন থেকেই স্বাবলম্বী হবার শিক্ষা দিচ্ছেন জেনে ভালো লাগলো।

১২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি চাইলে আমার মন্তব্য মুছে দিতে পারেন।

১৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৮

জুন বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ পড়ে আমিও নিজের কিছু পুরনো স্মৃতির ধুলো ঝেড়ে নিয়ে দেখতে বসলাম ভাই খায়রুল আহসান । সত্যি আমাদের সময় দু টাকার অনেক মুল্য ছিল, সারাদিনেও খরচ করে শেষ হতো না । সেই বড়ই চালতার আচার, গোলাপী রঙের হাওয়াই মিঠাই , সেই বিখ্যাত হজমী কটকটি ইত্যাদি ।
আহারে কোথায় গেল সেই রঙ্গীন দিনগুলো ?
সাথে আছি , লিখতে থাকুন ।
+

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

খায়রুল আহসান বলেছেন: আহারে কোথায় গেল সেই রঙ্গীন দিনগুলো? -- দিন একবার চলে গেলে আর ফেরে না।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 'লাইক' এ অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভেচ্ছা জানবেন, জুন।

১৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: বয়স তো বেশ হলো, তারপরও খাবারের কথাতে রসনা ..

//আর প্রথম প্রথম ক্যান্টিনে কোন ফ্রীজ না থাকাতে কোল্ড ড্রিঙ্কস কখনো কোল্ড পাওয়া যেতনা, তথাপি তা ছিলো অমৃতসমান। টাঙ্গাইলের একটা চমচম পাওয়া যেতো মাত্র চার আনায়, অর্থাৎ ২৫ পয়সায়। এছাড়া চকলেট/বিস্কুটও পাওয়া যেতো। এত কিছুর পরও দু’টাকার মধ্যে দু’চার আনা পকেটে থেকে যেতো।//

//কিছু অবিস্মরণীয় নাম না জানা মুখের স্মৃতিঃ// - শিরোনামে লেখাটাকে আমার হৃদয়কে আর্দ্রতায় ভাসিয়েছে। আপনার প্রতি তার বিশেষ মনোযোগ থেকে বুঝা যায়, সুন্দর হাতের লেখা ও সুন্দর মনের সংবেদনশীল সেই কিশোরও আপনার সহানুভূতিশীল মনের খোঁজ পেয়েছিল।

//একটা কালো, হ্যাংলা পাতলা ১৭/১৮ বছরের কিশোর ছিলো, যে আমাকে দেখা মাত্র আমার কাপড়গুলো খুঁজে বের করে আমার হাতে এনে দিতো। আমাকে আর কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হতোনা। সবার ক্যাডেট নাম্বার তার মুখস্থ ছিলো। //

................

নাম না জানা কত মানুষ সভ্যতার বলি হচ্ছে, আজো। তবে আর কিছু না হোক আপনার মত করে তাদের স্মরণ করলে এবং সামর্থ্য থাকলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পরিবারের কষ্ট লাঘব করা যায়।

//সভ্যতার পেছনে এমন ধরণের কত যে বেদনা লুকিয়ে থাকে, তার খবর কেই বা রাখে! এর পর থেকে আমি যতবার কলেজ হাসপাতালের ঐ রাস্তাটাতে পা মাড়িয়েছি, ততবারই আমার মানসপটে ঐ শ্রমিকের ভয়াবহ যন্ত্রণাকাতর মুখচ্ছবি ভেসে উঠেছে, এখনও ওঠে। //

আপনার লেখায় বেলবটমের কথায় সে যুগের ফ্যাসনের আভাস পেলাম, সেই সাথে আপনার চমৎকার ক্ষমা সুন্দর সংবেদনশীল মনের পরিচয় আবারও পেলামঃ

//তখন বেলবটমের যুগ হলেও সে একটা টেডী ফুলপ্যান্ট পড়ে থাকতো, কিন্তু চুলগুলোকে নায়ক রাজ্জাকের মত পরিপাটি করে ব্যাকব্রাশ করে রাখতো।//

....................

// সব কাহিনীর শেষে থাকতো তার স্বকন্ঠে গীত গান, “আমার সে প্রেম, আমাকে ফিরিয়ে দাও”!তখন সে দাবী করতো, এ গানটা তারই লেখা। সেটা বিশ্বাস করতেই আমার ভালো লাগতো, তাই কোনদিন যাচাই করতে যাইনি।//

ভাল থাকুন। সবসময়।








(একসময় বেশ ভাল ফুটবল খেলতাম। অনেকেই বলে, আমার বডি ডজ খুব সুন্দর ছিল। অপ্রিয় বিষয় গুলো এড়িয়ে যাবার আপনার ডজিংটা আমার পছন্দ হয়েছে।)

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার এই মনোযোগী পাঠ আর সমব্যথী অনুভূতিসম্পন্ন মন্তব্যগুলোও আমার হৃদয়কে আর্দ্রতায় ভাসিয়ে গেলো, শামছুল ইসলাম।
ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা।

১৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

ইমতি২৪ বলেছেন: তার মনে গভীর বিশ্বাস ছিলো যে আমরা অর্থাৎ ক্যাডেটরা খুব ভালো মানুষ, বড় হয়ে আমরা দেশের বড় নেতা হবো। :(

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখা থেকে এই উদ্ধৃতিটুকুর জন্য অনেক ধন্যবাদ, ইমতি২৪। শুভেচ্ছা জানবেন।

১৬| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৫৫

কালীদাস বলেছেন: মেজর একটা পয়েন্ট বারবার ভুলে যাচ্ছি, মাসে কয়বার চুল কাটতে হত আপনাদের? আমার মডেল স্কুলে মুটামুটি মাসে একবার কাটতেই হত, চুল সামাণ্য বড় পেলেও চুলে ধরে তুলে আছাড় মারতেন ড্রিল টিচাররা। এখন অবশ্য ফিল করি সেই রুলস রেগুলেশনগুলো কতটা জরুরি ছিল আর্লি লাইফে।

এনিওয়ে, তিনমাসের জন্য হলেও পকেট মানি ৫০ টাকা মানে তখনকার দিনে অনেক টাকা হওয়ার কথা।

ফিরিয়ে দাও, মাইলসের এই বিখ্যাত গানের রচয়িতা নতুন লোক হয়ে যাচ্ছে দেখা যায়। হা হা :)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমাদের সময়ে মাসে দুইবার চুল কাটাতে হতো। তবে যাদের চুল বাড়ে বেশী, তারা প্রতি সপ্তাহেই কাটাতো, সোমবার দিন "প্রিন্সিপ্যাল'স প্যারেড ডে" হওয়াতে রবিবার রাতের মধ্যে অন্ততঃ কানের দু'পাশে একটু ক্ষুর-কাঁচি বুলিয়ে নিত।
আমি যে গানটির কথা উল্লেখ করেছি, সেটা ছিল কন্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের গাওয়া "আমার সে প্রেম আমাকে ফিরিয়ে দাও" - লেইট সিক্সটীজ এর একটি জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার গান। সেটা মাইলস এর ফিরিয়ে দাও গানটি নয়।
পুরনো পোস্ট খুঁজে বের করে পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। এতটা বিলম্বে উত্তর দেয়ার জন্য যারপরনাই দুঃখিত।

১৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১১

জাহিদ অনিক বলেছেন: আপনার ডায়েরী পড়তে বেশ লাগলো।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: হঠাৎ করে পুরনো "ডায়েরী"টা পড়েছেন বলে খুব খুশী হ'লাম। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.