নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
গল্পের পূর্বকাহিনী- নির্দোষ বিনোদনঃ
এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। ২৩ জুন ২০১৮ এর বিকেলে থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশের “মূ পা” বা Wild Boars (বন্য শুকর) ফুটবল দলের ১২ জন ক্ষুদে ফুটবলার আর তাদের ২৫ বছর বয়স্ক প্রশিক্ষক Tham Luang Nang Non (সংক্ষেপে ‘থাম লুয়াং’) নামের একটি গিরিগুহার বাইরের সমতল মাঠে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলছিল। Tham Luang Nang Non গুহাটি দই নাং নন (Doi Nang Non) নামের ১০ কিঃমিঃ ব্যাপী বিস্তৃত একটি পর্বতশ্রেণীর পাদদেশে অবস্থিত। সেই ক্ষুদে ফুটবলারদের সবার বয়স ছিল ১১ থেকে ১৭ এর মধ্যে। সেদিনটি আবার ছিল ওদের মধ্যে যে ছেলেটা সবচেয়ে বড়, সেই ১৭ বছরের Peerapat Sompiangjai এর ১৭ তম জন্মদিন। ছেলেটার ডাক নাম ছিল নাইট (Night)। আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল যে ঐদিন অনুশীলন ম্যাচ শেষে ওরা সবাই থাম লুয়াং গিরি গুহায় নাইটের ১৭তম জন্মদিন উদযাপন করবে। এজন্য ওরা ম্যাচ শুরু হবার আগেই স্ন্যাক্স এবং ড্রিঙ্কস সাথে করে এনেছিল, আর এনেছিল নাইটের জন্য কিছু উপহার। গুহাটা ওদের কাছে পূর্ব-পরিচিত ছিল, কারণ এর আগেও ওরা অনেক সময় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বশতঃ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সন্ধানে গুহায় প্রবেশ করে অনেক দূর পর্যন্ত যেত, আবার সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসতো।
পূর্ব পরিকল্পনা মতই ওরা অনুশীলন শেষে ওদের সাইকেল আর ব্যাগগুলো গুহার বাইরে রেখে খাদ্য ও পানীয় নিয়ে গুহামুখে প্রবেশ করলো। এমন সময় শুরু হলো অঝোর ধারায় বৃষ্টি। ওরা ভেবেছিল, বৃষ্টি হয়তো অচিরেই থেমে যাবে, আর ততক্ষণে ওদের পার্টিও শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বিধি বাম! ক্রমেই বৃষ্টির ধারা ভারী হতে থাকলো, গুহামুখে পানি জমে ধীরে ধীরে তা গুহাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকলো। ওরাও একটু একটু করে পিছাতে থাকলো। এক সময় পানির বেগ তীব্র হতে থাকলো, ওরাও দৌড়াতে দৌড়াতে পিছাতে থাকলো। ধাবমান জলস্রোত বন্যার আকার নিতে শুরু করলো, ওরাও পিছাতে পিছাতে ভয়ে, শঙ্কায় এবং দৌড়ের ক্লান্তিতে নিস্তেজ হতে থাকলো। গুহার ভেতরের কিছু জায়গা খুবই বিপজ্জনক ছিল, যেখানে দৌড় তো দূরের কথা, হামাগুড়িও দেয়া যায়না। সরীসৃ্পের মত বুক আর কনুইয়ের উপর ভর করে এগোতে হয়।
ঐদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ “মূ পা” ফুটবল দলের হেড কোচ Nopparat Khanthavong তার সেলফোন বের করে দেখেন যে ২০টি মিসড কল জমা হয়ে আছে। ক্ষুদে ফুটবলারদের শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন মা বাবারা তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন যে ওরা তখনো ঘরে ফেরেনি। উনি সাথে সাথে সহকারী কোচ Ekapol Chantawong (Ake) কে ফোন দিলেন, কিন্তু ফোনে তাকে পাওয়া যাচ্ছিলনা। একে একে অনেকগুলো ক্ষুদে ফুটবলারদের ফোনেও তিনি কল দিতে থাকলেন, কিন্তু কাউকেই পেলেন না। অবশেষে Songpol Kanthawong নামের একটি ১৩ বছরের ছেলেকে তিনি ফোনে পেলেন, যে তাকে জানায় যে খেলাশেষে তাকে মাঠ থেকে তুলে আনা হয়েছিল, তাই সে অন্যদের সাথে জন্মদিন উদযাপন পার্টিতে যোগ দিতে পারেনি। বাদ বাকী সবাই থাম লুয়াং গুহার ভেতরে নাইটের জন্মদিন পালন করছে। সাথে সাথে প্রধান প্রশিক্ষক ছুটলেন সেই গুহা অভিমুখে। গুহার সামনে তিনি দেখতে পেলেন ছেলেদের রাখা সাইকেল আর ব্যাগগুলো। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেন।
অনুসন্ধানঃ
সৌভাগ্যক্রমে,থাম লুয়াং গুহার নিকটেই থাকতেন Vern Unsworth নামের এক গুহা অনুসন্ধানকারী, যার শখই ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন গুহা চষে বেড়ানো। তিনি থাম লুয়াং গুহাটি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করেছিলেন এবং এ গুহার যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য তার সংগ্রহে ছিল। তিনি পরেরদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক তথ্য সরেজমিনে যাচাই করে পরামর্শ দেন যে থাই সরকারের উচিত হবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও প্রশিক্ষিত এবং চৌকষ ডুবুরী ও উদ্ধারসামগ্রীর সাহায্য চাওয়া। ‘থাই নেভী সীল’ এর প্রশিক্ষিত ডুবুরীরা অনুসন্ধান চালিয়ে জানান যে সেখানকার পানি এতই ক্লেদাক্ত ও ঘোলা হয়ে গেছে যে তারা শক্তিশালি সার্চ লাইট জ্বালিয়েও কোন কূল কিনারা পাচ্ছেন না। অবিরাম বর্ষণের কারণে বন্যা হচ্ছিল এবং সে কারণে অনুসন্ধান কাজ দফায় দফায় স্থগিত রাখতে হচ্ছিল। ঘটনার চারদিন পর আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড থেকে এবং ব্রিটিশ ‘গুহা ডুবুরী বিশেষজ্ঞ দল’ এর কিছু সদস্য মিলে মোট ৩০ জনের একটি অতিরিক্ত ডুবুরীদল উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। ওরা ‘থাই নেভী সীল’ এর পাশাপাশি অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকে। থাই পুলিশের প্রশিক্ষিত কুকুরবাহিনী বাইরে থেকে গুহামুখ অনুসন্ধান করতে থাকে যা সম্ভাব্য বিকল্প প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অনুসন্ধানে ড্রোন এবং রোবটও ব্যবহার করা হয়, কিন্তু গুহার গভীর ভেতর থেকে খনিজ শিলা কিংবা ধাতুর সন্ধান লাভের প্রযুক্তি মানুষের হাতে থাকলেও, মানুষ অনুসন্ধানের প্রযুক্তি এখনো আসেনি।
অবশেষে গত ০২ জুলাই ২০১৮ তারিখে, হারিয়ে যাবার নয়দিন পর, রাত দশটায় Stanton and Volanthen নামের দু’জন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ ডুবুরী যারা গুহার বাইরে থেকে দেয়া ৭০ বছর বয়স্ক বিশেষজ্ঞ Robert Harper এর তদারকি এবং আদেশাধীনে কাজ করছিলেন, ছেলেগুলোর সন্ধান পান। Volanthen গুহার ভেতরে নেভিগেশনাল সাইন পোস্টিং লাগাচ্ছিলেন, যা অন্যান্য ডুবুরীদের চলাচলে সহায়ক হবে। তার সামগ্রী ফুরিয়ে যাওয়াতে তিনি তাড়াতাড়ি করে সাঁতরে ফিরে আসছিলেন। এমন সময় অলৌকিকভাবেই তিনি হারিয়ে যাওয়া দলটির সন্ধান লাভ করেন। এ সন্ধান তিনি পান কোন কিছু দেখে নয়, কোন আওয়াজ শুনে নয়, তার তীব্র নাকের ঘ্রাণশক্তি দিয়ে। গুহাভ্যন্তরে তাক এর মত যে জায়গাটিতে তিনি তাদের সন্ধান পান, তা ছিল প্রবেশমুখ থেকে প্রায় ৪ কিঃমিঃ ভেতরে। ফেইসবুকে থাই নেভী সীল কর্তৃক পোস্টকৃত এ সংক্রান্ত ভিডিও ক্লিপ থেকে বোঝা যায় যে হত বিহ্বল ছেলেগুলো ভুলেই গিয়েছিল যে ওরা কতদিন ধরে গুহায় আটকা পড়ে ছিল। তারা বারবার উদ্ধারকারীদেরকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘আজ কী বার? আজ কয় তারিখ’?
কারা ছিল এরা?
এতদিনে হয়তো আপনারা সবাই জেনে গেছেন, হারিয়ে যাওয়া এরা কারা ছিল। গল্পের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে, এটা জানা সত্তেও এই তের তরুণ সম্পর্কে জেনে আমি এতটাই অভিভূত হয়েছি, যে তা শেয়ার করার লোভ সম্বরণ করতে পারছিনাঃ
১। Chanin Vibulrungruang, যার ডাকনাম Titan- ১১ বছরের টাইটান ছিল দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, কিন্তু খেলে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে। সাত বছর বয়স থেকে সে স্কুল টীমে খেলতো; তার খেলা দেখে মূ পা ক্লাব তাকে আমন্ত্রণ জানায় তাদের ক্লাবে যোগ দিতে।
২। Panumas Sangdee, যার ডাকনাম Mig - ১৩ বছরের মিগকে দেখতে তার সমবয়সীদের তুলনায় একটু বড় মনে হয়। সে অত্যন্ত ক্ষিপ্র একজন খেলোয়াড়, মূ পা দলের ডিফেন্ডার হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
৩। Duganpet Promtep যার ডাকনাম Dom - বয়স মাত্র ১৩ হলেও Dom ই ছিল দলনেতা বা টীম ক্যাপ্টেন। এই পুচকে স্ট্রাইকারের খেলা দেখে থাইল্যান্ডের বেশ কয়েকটা ক্লাব ওকে বুক করতে উদ্যত হয়েছে বলে জানা যায়। বয়স এত কম হলেও, সে দলের একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়, দলের একজন চৌকষ উদ্বুদ্ধকারী (motivator) এবং সতীর্থদের নিকট তার ফুটবল দক্ষতা ও কৌশলের জন্য অত্যন্ত সম্মানীয়। "Players on the field need a captain like this because sometimes the coach can't get in to solve their problems" – তার সম্পর্কে হেড কোচ Nopparat Khanthavong এ কথাগুলো বিবিসি নিউজ কে জানান।
৪। Somepong Jaiwong যার ডাকনাম Pong - ১৩ বছরের Pong সম্বন্ধে তার শিক্ষক Manutsanun Kuntun এক সাক্ষাৎকারে AFP কে জানিয়েছেন, "Pong is a cheerful boy, he likes football, and every sport. He dreams of becoming a footballer for the Thai national team"। উদ্ধারের সময় এই left winger তারা মা বাবাকে এক চিরকুটে লিখে জানিয়েছিল, "I love Dad and Mum. Don't worry about me, I'm safe." তার মা বাবা উত্তরে জানিয়েছিলঃ "Take good care of yourself and be strong - Dad, Mum and everyone are waiting for you"।
৫। Mongkol Booneiam যার ডাকনাম Mark – দুর্ভাগ্যক্রমে ১২ বা ১৩ বছরের মার্ক নামের এই ছেলেটি এখনো রাষ্ট্রহীন, তারা মায়ানমার থেকে আগত ভাসমান শরনার্থী। উদ্ধারকৃত প্রথম চারজনের দলের মধ্যে সেও একজন ছিল। মার্ক সম্পর্কে তার শিক্ষক Bunjob Chai-arm বিবিসি কে বলেছেনঃ "He's cheerful, energetic, very friendly, and likes football and volleyball" । তার বাবা বলেছেন, সে একটি ভাল ছেলে, যে ফুটবল ভলিবলের পাশাপাশি পড়াশোনাও সমানভাবে ভালবাসে।
৬। Nattawut Takamrong যার ডাকনাম Tern - ১৪ বছরের Tern ডিফেন্ডার হিসেবে খেলে। সেও উদ্ধারকৃত প্রথম চারজনের দলের মধ্যে একজন ছিল। গুহা থেকে চিরকুটে সে লিখেছিল যে সে বাবা মাকে খুব মিস করছে, সাথে যোগ করেছিল, “চিন্তা করোনা, Tern নিজের টেক কেয়ার করতে জানে”। তার বাবা মা জবাবে লিখেছিল, তারা সবাই তার জন্য গুহামুখে অপেক্ষা করছে, আর "Dad and mum are not angry at you and do not blame you"
৭। Ekarat Wongsukchan যার ডাকনাম Bew- বিউ ছিল দলের গোলরক্ষক। ১৪ বছরের এই বিউ চিরকুটে তার মাকে প্রমিজ করে, উদ্ধার পেলে সে তার দোকানে বসে তাকে সাহায্য করবে।
৮। Adul Sam-on - মায়ানমারে জন্মগ্রহণকারী ১৪ বছরের এই আদুল তার মা বাবাকে মায়ানমারের Wa State এ রেখে উন্নততর শিক্ষালাভের আশায় থাইল্যান্ডে চলে আসে। সেও রাষ্ট্রহীন, ভাসমান শরনার্থী। তবে পুরো দলের মধ্যে একমাত্র সেই কিছুটা ইংরেজী জানার কারণে উদ্ধারকারী দলের সাথে প্রাথমিক আলাপচারিতায় অংশ নিতে পারে এবং বাকীদের সাথে দোভাষীর কাজ করে। সে একজন ডিফেন্ডার।
৯। Prajak Sutham যার ডাকনাম Note – ১৫ বছর বয়সী এই নোটের বাবা একজন গ্যারেজ মেকানিক। তার সম্বন্ধে তার বাবা বলেছেন, সে খুবই বুদ্ধিমান, যেকোন যান্ত্রিক সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হয় তা তাকে একবার দেখিয়ে দিলেই সে প্রথম প্রচেষ্টায় একই ধরণের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। সে খুব কাইন্ড এবং কেয়ারিং, দু’বছরের ছোট বোনটাকে সে দেখে রাখে এবং তার ছোটভাইটার সাথেও সময় পেলেই খেলাধুলা করে। সেও উদ্ধারকৃত প্রথম চারজনের দলের মধ্যে একজন ছিল।
১০। Pipat Pho যার ডাকনাম Nick - ১৫ বছর বয়সী এই নিকও উদ্ধারকৃত প্রথম চারজনের দলের মধ্যে একজন ছিল। গুহা থেকে পাঠানো চিরকুটে একটি হার্টের ছবি এঁকে সে জানায় যে সে তার বাবা, মা আর ভাইবোনদেরকে ভালবাসে। গুহা থেকে বের হয়ে সে থাই বারবিকিউ এ যেতে চেয়েছে।
১১। Pornchai Kamluang যার ডাকনাম Tee – মূ পা দলের একজন ডিফেন্ডার। ১৬ বছরের এ ছেলেটিও রাষ্ট্রবিহীন, থাইল্যান্ডে ভাসমান শরনার্থী হিসেবে তার বাস। "Don't worry, I'm very happy" – চিরকুটে সে তার মা-বাবাকে জানিয়েছিল।
১২। Peerapat Sompiangjai যার ডাকনাম Night, এই নাইটই ছিল সেদিনের বার্থ ডে বয়, সেদিন ছিল তার ১৭তম জন্মদিন। ফুটবল আর সাইক্লিং ছিল দলের right winger নাইটের প্যাশন, প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এ দুটো বিষয়ের উপরই নিবদ্ধ থাকতো ওর সমস্ত ধ্যান ধারণা, চিন্তা চেতনা। ওর সাথে একই সাইক্লিং ক্লাবের সতীর্থ Sittthisak Sawanrak জানায়, ”সে ছিল শান্ত স্বভাবের, কথা বেশী বলতোনা, তবে অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী”। গুহা থেকে তার বাবা মায়ের কাছে পাঠানো এক চিরকুটের শেষে সে লিখেছিল, "Night loves everyone" - যেটা পড়ে দেশ বিদেশের মানুষের চোখে অশ্রু গড়িয়েছিল।
১৩। Ekapol Chantawong যার ডাকে নাম Ake, দলের আরেকজন রাষ্ট্র পরিচয়হীন সদস্য। ২৫ বছর বয়সী এই আকে দলের সহকারী কোচ। মাত্র ১০ বছর বয়সে সে মা বাবা উভয়কে হারিয়ে এতিম হয়ে যায়। মায়ানমারে জন্মগ্রহণকারী আকে ফুটবল কোচ হবার আগে বেশ ক’বছর বৌদ্ধ সন্যাসীর ব্রত পালন করে। তখন সে শিখেছিল, কিভাবে নড়াচড়া ও অঙ্গ সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে ধ্যানের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় ও সংরক্ষণ করা যায়। স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী সে তার এই অমূল্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা গুহার ভেতরে আটকে পড়া ছেলেদেরকে শিখিয়েছিল এবং এভাবে তাদেরকে সাহস যুগিয়েছিল। এ ছাড়া নাইটের জন্মদিন উপলক্ষে আনা খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী মিতব্যয়িতার সাথে ব্যবহার করে তাদেরকে শক্তি সংরক্ষণের দীক্ষা দিয়েছিল। চিরকুটে আকে ছেলেপুলেদেরকে নিয়ে গুহায় যাবার জন্য তাদের মা বাবার কাছে ক্ষমাভিক্ষা করে তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে জানায়ঃ "I promise I will take care of the kids as best as I can"। উদ্ধারকারী দল জানায় যে তারা আকে কে সবচেয়ে বেশী দুর্বল ও নিস্তেজ দেখতে পায়। সে খাবার দাবারগুলো নিজে না খেয়ে বা খুবই স্বল্প পরিমাণে খেয়ে ছেলেদেরকে দিয়ে দিত।
বলাবাহুল্য,উপরে চিরকুটের কথাগুলো ইংরেজীতে লেখা হলেও সেগুলো ছেলেরা লিখেছিল থাই ভাষায়। ইংরেজী অনুবাদ করেছে বিবিসি নিউজ। কিছু কথা যেগুলো বাংলায় লেখা হয়েছে, সেগুলো ইংরেজী থেকে ভাষান্তর করেছি আমি।
উজ্জ্বল সাফল্যের পেছনে শোকের কালো ছায়াঃ
প্রায় ১৭ দিনের একটি শ্বাসরুদ্ধকর কিন্তু সফল অভিযান শেষে ‘থাম লুয়াং’ গুহায় হারিয়ে যাওয়া ১৩ জন ক্ষুদে ফুটবলারদের সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এই সাফল্যের পেছনে বহু লোক ও প্রতিষ্ঠানের অবদান চিরস্মরণীয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী স্মরণীয় এবং নমস্য হয়ে থাকবেন ৩৮ বছর বয়স্ক থাই নেভী সীল এর প্রাক্তন Petty Officer First Class, Saman Kunam। উনি অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন, কিন্তু তবুও খবরটা শুনে উনি স্বেচ্ছাসেবক ডুবুরী হিসেবে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন। উনি গুহাভ্যন্তরে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসাচ্ছিলেন, যেন উদ্ধারকারী এবং উদ্ধারকৃত দলের ফিরতি পথে অক্সিজেন এর কোন সমস্যা না হয়। কিন্তু এক সময় তার নিজের ট্যাঙ্কেরই অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে ফেরার সময় গত ০৬ জুলাই তারিখে রাত একটা থেকে দুটোর মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার এই মৃত্যু এক বীরোচিত মৃত্যু। মানবতার সেবায় স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে গভীর রাতেও কাজ করার সময় তিনি প্রাণ ত্যাগ করেন। আমি আশা করবো, থাই সরকার তাদের এই বীরকে যথাযথ সম্মান জানাবেন, তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াবেন। প্রাণের বিনিময়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তাকে আন্তর্জাতিকভাবেও সম্মানিত করা উচিত বলে আমি মনে করি।
সামান কুনাম ছাড়াও, উদ্ধারকাজে কর্তব্য পালনকালে আরেকজন ব্যক্তির জীবনে শোকের ছায়া নেমে আসে। থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার একজন চিকিৎসক রিচার্ড হ্যারিস, এ্যানেস্থেটিস্ট। শিশুদের আটকে পড়ার খবর শোনার পর মি. হ্যারিস থাইল্যান্ডে তার অবকাশ যাপন বাতিল করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তাদেরকে উদ্ধারে তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করবেন। কিশোরদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে তিনি নিজে গুহার ভেতরে যান। এ কাজটি তিনি করতে পেরেছিলেন কারণ, চিকিৎসক হওয়া ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ডুবুরী এবং পৃ্থিবীর নানা জায়গায় উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে ছিল। তিনি গুহা থেকে বেরিয়ে না এসে শিশুদের সাথে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর গুহার ভেতরে তিনদিন ছিলেন তিনি। শিশুদের সবাইকে গুহার ভেতর থেকে সফলভাবে বের করা আনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। প্রথমে যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছেলেদেরকে বের করে আনা হয়েছিল সেটা হয়েছিল তারই নির্দেশনায়। ড. হ্যারিস, সবার কাছে যিনি পরিচিত হ্যারি নামে, গুহার ভেতর থেকে সবার শেষে বেরিয়ে এসেছিলেন। সব শিশুদেরকে যখন গুহার ভেতর থেকে নিরাপদে বের করে আনা হলো, তার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই হ্যারি’র বাবা মারা যান। হ্যারি তখনো গুহার ভেতরে, তিনি অন্যান্য ডুবুরীদের নিয়ে সবার শেষে বেরিয়ে আসেন। এজন্য সাথে সাথে তাকে খবরটা জানানো যায়নি। বের হয়ে আসার কিছু পরে তার বাবার মৃত্যু সংবাদ তাকে জানানো হলে অভিযানে সাফল্যের জন্য আয়োজিত আনন্দ অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিতে পারেননি। কর্তব্য পালন শেষে বেদনাবিধুর চিত্তে ফিরে যান তিন অস্ট্রেলিয়ায়, যেখানে তার বাবার শেষকৃ্ত্যানুষ্ঠান তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
কুসংস্কারে বিশ্বাসঃ
থাইবাসীরা এমনিতেই নানা কুসংস্কারে প্রচন্ডভাবে বিশ্বাসী। ১৩ কে তারা ভীষণ আনলাকী বলে মনে করে। এজন্য তাদের বোর্ডিং পাসে ১৩ নম্বর কোন সীট থাকেনা, ১৩ নম্বর কোন বাড়ী বা সড়ক থাকেনা, স্কুলে ১৩ নম্বরে কোন রোল নম্বর থাকেনা। এ ঘটনার পরে তাদের এ অপবিশ্বাস আরো দৃঢ় হতে পারে, কারণ ঐ অপয়া সংখ্যাটা; ঐ ১৩ জন খেলোয়াড়/কোচ! এ ছাড়া হারিয়ে যাবার ১৩ দিন পর অভিযানের একমাত্র প্রাণত্যাগের ঘটনাটি ঘটে, সানাম কুনামের, ০৬ জুলাই তারিখে। থাইরা বিশ্বাস করে যে এক সুন্দরী রাজকুমারী একবার এক সাধারণ লোককে বিয়ে করলে রাজা তাদের উভয়কে মেরে ফেলার হুকুম দেয়। এ খবর পেয়ে রাজকুমারী আত্মহত্যা করে। তার দুঃখে দুঃখী হয়ে থাম লুয়াং পাহাড়টি “শায়িত রাজকুমারীর” আকৃতি ধারণ করে এবং সেজন্য থাইবাসীরা ঐ পাহাড়ের নাম দিয়ছে “দ্য স্লীপিং প্রিন্সেস”।
মানবতার ডাকে সাড়াঃ
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করলো এক অভূতপূর্ব বিশ্ব ভ্রাতৃ্ত্বের বন্ধন এবং মানবতার ডাকে মানবের সাড়া। অন্যের বাচ্চাকে বাঁচাতে কোন কোন নিঃস্বার্থ মানুষ কতদূর যেতে পারে, এ যেন তারই এক চিত্ররূপ। মানবতার এ ডাকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যারা সাড়া দিয়েছিলেনঃ
১। অস্ট্রেলিয়া থেকে ২০ সদস্যের একটি সাহায্যকারী দল, যাদের মধ্যে ডুবুরী, ডাক্তার, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন ও সাহায্য সামগ্রী ছিল।
২। বেলজিয়ামের নাগরিক Ben Reymenants, যিনি ফুকেট এর একটি ডাইভিং স্কুলের মালিক, ডাইভিং সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।
৩। কানাডার ভ্যাঙ্কুভার থেকে আগত ডুবুরী প্রশিক্ষক Erik Brown এই উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিলেন।
৪। চীন থেকে ৬ সদস্যের একটি ডুবুরী দল ডুবসামগ্রী সহ রোবট এবং ত্রিমাত্রিক ইমেজার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। এ ছাড়াও চীনের কিছু বেসরকারী ক্লাবের সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশ নিতে এসেছিল।
৫। চেক রিপাবলিক সরকার একটি হাই পারফর্ম্যান্স পাম্প দিয়ে সাহায্য করেছিল যা প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ লিটার বা প্রতি ঘন্টায় প্রায় চার লক্ষ গ্যালন পানি উৎক্ষেপন করতে সক্ষম। ওদের আছেই এরকম মাত্র চারটি পাম্প।
৬। দুইজন ড্যানিশ ডুবুরী Ivan Karadzic এবং Claus Rasmussen উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিলেন।
৭। ফিনল্যান্ড থেকে Mikko Paasi নামে একজন ডুবুরী উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন।
৮। ভারত থেকে Kirlosker Brothers' Limited's (KBL) নামে একটা কোম্পানীর পরামর্শক পাম্প পানিমুক্ত করার বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন।
৯। ইসরায়েলী ডুবুরী Rafael Aroush তাদের Maxtech NetWorks কোম্পানী কর্তৃক দানকৃত সামগ্রী নিয়ে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
১০। জাপানী ড্রেনেজ বিশেষজ্ঞ Shigeki Miyake এর অধীনে কয়েকজন ডুবুরী ও প্রকৌশলী অভিযানে অংশ নেন।
১১। লাওস থেকে একটা উদ্ধার ক্লাবের কিছু সদস্য অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
১২। নেদারল্যান্ডস থেকেও কয়েকজন ড্রেনেজ বিশেষজ্ঞ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
১৩। একজন উদ্ধার বিশেষজ্ঞের অধীনে রাশিয়া কয়েকজন উদ্ধারকর্মীকে পাঠিয়েছিল।
১৪। ইউ কে আটজন অতি অভিজ্ঞ ডুবুরী ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞকে পাঠায়। ওরাই সবার আগে হারিয়ে যাওয়া দলটির উপস্থিতির স্থান সনাক্ত করে এবং সাফল্যের সাথে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করে।
১৫। ২৮ জুন ২০১৮ তারিখে ইউএসএ তার ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড এর অধীন ওকিনাওয়া বেইজ এর 353rd Special Operations Group থেকে এবং 31st Rescue Squadron থেকে মোট ৩৬ জন সেনাকে নিয়োজিত করে। তারা আগে থেকে সেখানে কাজ করা আরও ৭ জনের সাথে মিলিত হয়ে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে।
১৬। উপরোক্ত দেশগুলো ছাড়াও জার্মানী, মায়ানমার, ফিলিপিনস, সিঙ্গাপুর, স্পেন, সুইডেন ও ইউক্রেন থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবক ও কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল অভিযানে অংশগ্রহণ করে। ফ্রান্সও একটি দল পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু ততদিনে থাই সরকার তাদেরকে জানায় যে তাদের হাতে পর্যাপ্ত জনবল, বিশেষজ্ঞ দল এবং উদ্ধার সামগ্রী পৌঁছে গেছে।
১৭। ফিফা প্রেসিডেন্ট থাই ফুটবল এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্টকে লিখিতভাবে ঐ আটকে পড়া দলের প্রত্যেককে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১৮ এর ফাইনাল খেলা দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
১৮। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব আটক দল এবং উদ্ধারকারী দলকে আগামী মওশুমে ওল্ড ট্রাফোর্ডে একটি খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানায়। দলের ডিফেন্ডার Kyle Andrew Walker যখন টিভি সংবাদে লক্ষ্য করলেন যে ক্ষুদে ফুটবলারদের মধ্যে একজন দলের "Three Lions" জারসি পড়ে আছে তখন তিনি ঘোষণা দেন যে বাচ্চাদের জন্য তিনি কিছু শার্ট পাঠাবেন।
স্বজাতির সাড়াঃ
চিয়াং রাই প্রদেশের স্থানীয় অধিবাসীরা স্বতঃ প্রণোদিত হয়ে গুহামুখের সামনে উদ্ধারকারীদের জন্য রান্না করা খাবার সরবরাহ করেছিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে প্রতিদিন এলাকাটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছিলেন। এত বড় উদ্ধারকারী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জন্য স্থাপিত অস্থায়ী টয়লেটগুলো প্রতিদিন স্বেচ্ছাসেবকরা এসে ঝকঝকে তকতকে করে পরিষ্কার করে রাখতো। এছাড়া তারা নিখোঁজ সদস্যদের পরিবারকে সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত খাবার দাবার এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। নিখোঁজ ছেলেদের ক্লাসমেট ও শিক্ষকগণ উপাসনালয়ে তাদের মুক্তির জন্য মন্ত্র জপে চলেন। যেহেতু বেশীরভাগ ছেলেরাই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছিল এবং তাদের উদ্বিগ্ন মা বাবা কাজে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছিলেন, সেহেতু স্থানীয় স্কুলগুলো তাদের মা বাবার কাছে অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। জনগণ ও পুলিশের কেউ কেউ ছেলেদের, বিশেষ করে সহকারী কোচের বিরুদ্ধে অবহেলা ও অসতর্কতার অভিযোগ আনতে চাইলেও, বেশ কয়েকজন আইনজীবি তার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন, কারণ থাই আইন অনুযায়ী অপরাধীর কোন malicious intent ছিল কিনা তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। মিডিয়াতে দেখানো ও জানানো হয়েছে যে সহকারী কোচ তার নিজের খাবার ছেলেদেরকে দিয়ে দিয়েছিল। তাদেরকে শান্ত থাকার ও নিয়ন্ত্রণে রাখার যথাযথ চেষ্টা করেছিল, তাদেরকে প্লাবনের ঘোলা পানির বদলে গুহার দেয়াল থেকে চুইয়ে পড়া পরিষ্কার পানি মুখ লাগিয়ে পান করতে পরামর্শ দিয়েছিল, যার কারণে তাদের শরীরে খুব বেশী জলাভাব দেখা দেয় নাই। চোয়া পানিতে খনিজ পদার্থ থাকায় তাদের শরীরে অনেক খনিজ ঘাটতিও পূরণ হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চানোচা জনগণকে কারো প্রতি দোষারোপ না করে বরং উদ্ধারকাজে কিভাবে সাহায্য করা যায়, সে বিষয়ে মনোনিবেশ করার জন্য পরামর্শ দেন।
ঘটনাত্তোর উপলব্ধি ও সিদ্ধান্তঃ
চিয়াং রাই প্রদেশের প্রাক্তন গভর্ণর এবং উদ্ধার মিশনের প্রধান নারংসাক অসত্যানাকর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন যে ‘থাম লুয়াং’ গুহা সিস্টেমকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে, যেখানে ভবিষ্যৎ দর্শনার্থীদের নিকট আজকের এ সফল উদ্ধার অভিযানকে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী তার এ বিবৃতি সমর্থন করলেও পর্যটকদেরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের ব্যাপারে আরও অনেক কাজ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেন। থাই নেভী সীল তাদের প্রশিক্ষণ সিলেবাসে কেইভ ডাইভিং কে আরো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে। এ ঘটনার পর থাইল্যান্ডের কিছু রাষ্ট্রহীন শরনার্থী পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা দেশবাসী জানতে পেরেছে। জনগণের পক্ষ থেকে জোর দাবী উচ্চারিত হচ্ছে তাদের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য। থাই সরকারের একজন মুখপাত্র এটা নিশচিত করেছেন যে উদ্বাস্তু ছাত্র এবং সহকারী কোচকে থাইল্যান্ডের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়া হবে। থাই সরকার কথা দিয়েছেন যে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে থাইল্যান্ডে বসবাসকারী সকল উদ্বাস্তুদের রাষ্ট্রহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়া হবে।
ওল্ড ইজ গোল্ডঃ
এই অভিযানে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সাফল্য পান ব্রিটিশ ডুবুরী ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞ দল। দলের নেতা ৭০ বছর বয়স্ক Robert Harper এর কমান্ডে তারা কাজ করেন। দলনেতার তত্বাবধানে যখন প্রথম সাফল্য এলো, নিখোঁজদের অবস্থান জানা গেল, বুড়ো তখন বুঝে গেলেন তাঁর কাজ শেষ। বাকীটা তার দলের অন্য সদস্যরা সম্পন্ন করতে পারবেন। এরই নাম অভিজ্ঞতা। পরের দিনই তিনি টিকেট কেটে স্বদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তবে তার আগে তার সঙ্গে থাকা থাই ক্রীড়া মন্ত্রী Weerasak Kowsurat তাঁকে “dedication to duty and professionalism” এর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁকে ডিনারে নিয়ে যান এবং সুপেয় থাই প্রণ স্যুপ Tom Yum Goong দিয়ে আপ্যায়ন করেন। “ওল্ড ইজ গোল্ড” কথাটা মোটেই মিথ্যে নয়। তাই তরুণ যুবা প্রৌঢ় সবারই উচিত বুড়ো মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তাদের জ্ঞান গরিমা ও অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।
থাইল্যান্ডের প্লাবিত গুহাভ্যন্তর থেকে আটকে পড়া ১৩ ক্ষুদে ফুটবলারকে জীবিত এই উদ্ধারযজ্ঞ ইতিহাস হয়ে থাকবে। স্তম্ভিত বিশ্ব বিস্ময়াভিভূত হয়ে দেখলো শ্বাসরুদ্ধকর এক সফল উদ্ধার অভিযান! আমেরিকান মুভি কোম্পানী Pure Flix গত ১০ জুলাই ২০১৮ তারিখে ঘোষণা করেছে যে তারা এই অভিযান চিত্রায়ন করে একটি ফীচার ফিল্ম বানাবে এবং তা বিশ্বব্যাপী একসাথে রিলিজ দেবে। এস কে গ্লোবাল এন্টারটেইনমেন্ট এর Ivanhoe Pictures ও এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশাকরি এ ছবি একদিন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবে।
(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিবিসি নিউজ। এ লেখায় আমার নিজের কোন কৃতিত্ব নেই, শুধু পড়া গল্প আর শোনা গল্প নিজের ভাষায় লেখা ছাড়া, অনেকটা আমার নিজের মত করে গল্প বলার ঢঙে।)
ঢাকা
১৪ জুলাই ২০১৮
থাই নেভী সীল এর প্রাক্তন ডুবুরী ৩৮ বছর বয়স্ক Petty Officer First Class, Saman Kunam, যিনি অবসরে ছিলেন, কিন্তু মূ পা ক্লাবের ১৩ জন সদস্যের থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ার খবর শোনার সাথে সাথে তাদের উদ্ধারকাজে অংশ নেয়ার জন্য ছুটে আসেন। আটকে পড়া লোকদের জন্য অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিছানোর সময় তার নিজের ট্যাঙ্কের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়াতে তিনি দম বন্ধ হয়ে গুহার ভেতরে জলে সাঁতরানো অবস্থায় মারা যান। এভাবে একটি মহত কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি থাই ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
ছবিসূত্রঃ ছবিটি থাই নেভী সীল এর ফেইসবুক পেইজ থেকে ডাউনলোড করে নেয়া হয়েছে।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথম মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। লেখাটা 'প্রিয়'তে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
অন্তর্জালে প্রাপ্ত তথ্যাবলী সমন্বয় ও পরীক্ষা করে এ সংকলনটি প্রস্তুত করতে আমার অনেক সময় লেগেছে, পরিশ্রমও করতে হয়েছে। তবে যাক, সে শ্রমটা সার্থক হলো প্রথম পাঠক কর্তৃক পোস্টটাকে 'প্রিয়'তে তুলে নেয়ায়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা!
২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
জাতির কষ্টের সময়ে থাইরা ঐক্যবদ্ধ ছিলো, জাতির বলিষ্ঠ চরিত্র ফুটে উঠেছে এই ঘটনায়; নেভীর দায়িত্ববোধ, শৃংখলা, নিবেদিত প্রাণ প্রচেষ্টা জাতিকে সন্মান এনে দিয়েছে।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: অল্প কথা বলেছেন, কিন্তু সলিড কথা বলেছেন। অসাধারণ এই মন্তব্যের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১১
রাকু হাসান বলেছেন: দীর্ঘ পোস্ট হলেও পড়তে খারাপ লাগে নি আামার । saman kuman এর প্রাণ ত্যাগের বিষয়টি খারাপ লাগছে । যে মানুষ অন্যের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে কাজ করছিলেন তিনিই একই সমস্যায় প্রাণ হারায় ,অদ্ভূত বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ । তাঁকে যথাথত সম্মান দেওয়া হোক ।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২
খায়রুল আহসান বলেছেন: অদ্ভূত বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ । তাঁকে যথাথত সম্মান দেওয়া হোক - আপনার এ দাবী ন্যায্য, তাই সহমত।
চমৎকার মন্তব্য এবং প্রথম প্লাসের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হ'লাম।
৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:২৮
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ মুল্যবান তথ্যসমুহ সুন্দর করে গ্রথিত করে এখানে উপস্থাপনের জন্য ।
উদ্ধারকারী দলের সকলের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা , ওল্ড ইজ গোল্ডের প্রতি রইল
বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা । উদ্ধারকৃত কিশোর ফুটবলারদের সুস্বাস্থ্য ও উজ্জল
ভবিষ্যত কামনা করি । স্বেচ্ছা প্রনোদিত উদ্ধারকারী দেশ সমুহের মধ্যে
কোন মুসলিম দেশের নাম না দেখে বুঝা গেল মুসলিম দেশ সমুহ এখনো
কত পিছনে পরে আছে । সকলের মাঝে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে প্রযুক্তি
ও মানবিক মুল্যবোধ জাগ্রত হোক এ কামনাই রইল । অরো একটি বিষয়
উল্লেখ না করলেই নয় তা হলো এই এত বড় বিপজ্জনক গুহা যেখানে
অনেক স্থানীয় পর্যটক মাঝে মধ্যে ডুকে যায় (যেমনটি জানা জানা জুনাপু"র
পোষ্টে আমার মন্তব্যের প্রতি উত্তরে জানা যায় তিনি নীজেও এ বছরের শুরুতে
এই গুহার ভিতরে কিছুদুর প্রবেশ করছিলেন এবং সত্যিই গুহাটিকে দারুন
বলে মনে হয়েছিল । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করা যায় এমন বিপজ্জনক
একটি গুহা থাইল্যান্ডের মত পর্যটন সচেতন একটি দেশে অরক্ষিত থাকে
কি করে? যাহোক, একটি বিষয় লক্ষনীয়, থাইদের এই চরম বিপদের সময়ে
সেখানকার কেও কাওকে এর জন্য দুশারোপ করেনি ।বিষয়ট ভাল লেগেছে।
অবশ্য জাতীয় বিপর্যয়ের সময় একে অপরকে দুশারোপের
কালচার থাইদের মধ্যে বলতে গেলে নেই । বিষয়টি অনুকরনীয়।
তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্টটি প্রিয়তে গেল ।
শুভেচ্ছা রইল ।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার ও দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ডঃ এম এ আলী। লেখাটা 'প্রিয়'তে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
স্বেচ্ছা প্রনোদিত উদ্ধারকারী দেশ সমুহের মধ্যে কোন মুসলিম দেশের নাম না দেখে বুঝা গেল মুসলিম দেশ সমুহ এখনো কত পিছনে পরে আছে - অথচ ভাল কাজের জন্য আমাদের ধর্মে কতবার তাগিদ দেয়া হয়েছে! অন্ততঃ থাইল্যান্ডের কাছের দেশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার উচিত ছিল ত্বরিত সাড়া দেওয়া।
আপনি এখন কেমন আছেন? সাইটিকার/ডিস্ক প্রলাপ্স এর ব্যথা কিছুটা কমেছে কি?
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা!!!
৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অসাধারণ একটি পোস্ট।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:২২
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনারা যারা এ দীর্ঘ পোস্টটা এতক্ষণ ধরে পড়েছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। যারা এখানে মন্তব্য করেছেন, ইন শা আল্লাহ, আগামী কাল থেকে সব মন্তব্যের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। সবাইকে শুভরাত্রি---
৭| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৫৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: গতকাল ছিল ১৩ তারিখ। মন খারাপের দিন।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১০
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমার জন্য অবশ্য ১৩ সংখ্যাটা খুব শুভ বলেই মনে হয়।
৮| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:১১
শাহিন বিন রফিক বলেছেন:
আপাতত প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম পরে মন দিয়ে পড়ব, আপনিসহ বেশ কয়েকজনের লেখা আমি কখনও তাড়াতাড়ি পড়ি না, কারণ আমি মনে করি আপনাদের কয়েকজনের লেখা মন দিয়ে পড়লে কিছু না কিছু পাবই।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা 'প্রিয়'তে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। প্রেরণাদায়ক এ মন্তব্যটি মন ছুঁয়ে গেল!
আপনার পুরনো পোস্ট "তোমার জন্য উপহার" এবং "জীবন মানে গল্প নয়" পড়ে দুটো মন্তব্য রেখে এসেছিলাম, যা হয়তো নোটিফিকেশনের অভাবে আপনি এখনো পড়েন নি। আশাকরি একবার সময় করে পড়ে নেবেন।
৯| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়া কাঁপানো একটি অভি্যান !!!!
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: সত্যিই তাই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১০| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১৬
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: পুরো পোস্ট পড়লাম।
বিশদভাবে অনেক কিছু জানা হল।
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: ধৈর্য নিয়ে পুরো পোস্ট পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মন্তব্যে অনেক অনুপ্রাণিত।
শুভকামনা---
১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার একাত্তরের স্মরণীয় ভিন দেশী সুহৃদগন -৩ পড়ে দুটো মন্তব্য রেখে এসেছিলাম। আজ মন্তব্য করলাম আমও গেলো ছালাও গেলো! পোস্টে।
একবার সময় করে দেখে নিলে খুশী হবো।
১১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৩৮
সনেট কবি বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৭:০৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
১২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আসলেই রুপকথার মতছিলো!!!!
মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।থাই সরকার সেই গুহাকে মিউজিয়াম বানানোর পরিকল্পপনা করেছেন।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: থাই সরকার সেই গুহাকে মিউজিয়াম বানানোর পরিকল্পপনা করেছেন - জ্বী, আমিও এ কথাটি "ঘটনাত্তোর উপলব্ধি ও সিদ্ধান্ত" উপশিরোনামে প্রথমেই বলেছি। তবে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই তবে জাদুঘর চালু করতে হবে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---
১৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২১
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইয়া।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০০
খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---
১৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২
জুন বলেছেন: ধারাবাহিক ভাবে ঘটনাটি বর্ননা করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ খায়রুল আহসান । খানিক পর পর আপডেট দিতে গিয়ে আমার লেখাটি একটু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছিল । তাই ভেবেছিলাম পুরো কাহিনীটি ধারাবাহিক ভাবে লিখবো । আপনি সেই কাজটি নিখুতভাবে করেছেন যা আমি পারতামনা হয়তো বা। অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা।
এখন তারা সেই নিরবিচ্ছিন্ন শান্তির জীবন ফিরে পাক এটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকলো ।তাদের উদ্ধারে এসে নেভী সীলের প্রাক্তন সদস্য সামান গুনানের মৃত্যুর কথা শুনে তারা অনেক কেদেছে এবং ভালো ছেলে হয়ে তাকে সন্মান জানাবে তারা। তার একটি বিশাল মুর্তি তৈরী করছে ওয়াট রঙ খুন স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক শ্বেত শুভ্র মন্দির ওয়াট রঙ খুন মন্দিরের নির্মাতা থাইল্যান্ডের বিখ্যাত শিল্পী Chalermchai Kositpipat, যা স্থাপিত হবে থাম লুয়াং যাদুঘরের সামনে ।
গুহা থেকে পানি সেচের ফলে বিঘার পর বিঘা জমির আবাদ নষ্ট হওয়ার পরও ১৯ জন কৃষক সরকারী ভর্তুকি ফিরিয়ে দিয়েছে ।
এক মহিলা কৃষক যিনি গুহায় উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার প্রস্তত করছিলেন তিনি তার জমির সব ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার পরো উত্তর দিয়েছেন "It doesn't matter. It's fine. I just want the children to get out alive," she says. কি বদান্যতা, কি বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এই মহিলা কৃষক সত্যি ভাবতেও আশ্চর্য্য লাগে।
অত্যন্ত মনোগ্রাহী একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন যে ঘটনাটি আমি দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৪শে জুন থেকে পাঠক হিসেবে অনুসরন করছিলাম বাংকক পোষ্ট পত্রিকা থেকে, তার একটি অবিশাষ্য এই উদ্ধার অভিযানের সাফল্যজনক পরিসমাপ্তির জন্য হাজারো শুকরিয়া । আবারো জানাই ধন্যবাদ । শুভকামনা ও ভালো থাকবেন।
+
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৫২
খায়রুল আহসান বলেছেন: থাই জনগণকে তাদের নম্রতার জন্য, ভব্যতার জন্য, সুশীলতার জন্য, বিনয়ের জন্য আমার আগে থেকেই ভাল লাগতো। কর্মজীবনে কয়েক জায়গায় আমি তাদের সাথে একসাথে কাজ করেছি। ওরা খুব ভাল বন্ধু হতে পারে। এ ঘটনার পরে তাদের আরেকটা পরিচয় পেলাম, জাতি হিসেবে তাদের বলিষ্ঠতার। চাঁদগাজী এর ২ নং মন্তব্যটাই আমি এখানে পুনর্বার উল্লেখ করতে চাই; জাতির কষ্টের সময়ে থাইরা ঐক্যবদ্ধ ছিলো, জাতির বলিষ্ঠ চরিত্র ফুটে উঠেছে এই ঘটনায়; নেভীর দায়িত্ববোধ, শৃংখলা, নিবেদিত প্রাণ প্রচেষ্টা জাতিকে সন্মান এনে দিয়েছে।
সেই মহিলা কৃষকের কথা শুনে আমার এ বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো।
আপনার জন্যেই আমরা সবাই, বিশেষ করে আমি এ ঘটনা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি, কারণ আমি এখন টিভি খবর শোনা ছেড়ে দিয়েছি, সংবাদপত্র পড়াও ছেড়ে দিয়েছি। আপনার ব্লগ পড়ার পর থেকে থাই নেভী সীল এর ফেইসবুক পেইজে মাঝে মাঝে চোখ বুলিয়েছি। ছবিটাও ওখান থেকে নেওয়া। আপনি যেভাবে নিষ্ঠার সাথে বিষয়টির উপর আপডেট দিয়ে গেছেন, সেভাবে আর কেউ পারতো বলে আমার মনে হয় না। এজন্য কোন ধন্যবাদই আপনার জন্য যথেষ্ট নয়।
দীর্ঘ মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা....
১৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৬
করুণাধারা বলেছেন: গুহাটিতে কিশোর ফুটবল দলের আটকে পড়ার ঘটনা এবং তাদের বিস্ময়কর উদ্ধারকাজ- এর পুরোটা আপনি এই পোস্টে বিষদ বর্ণনা করেছেন। যেভাবে নানা খুঁটিনাটি বিষয় এনেছেন দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই পোস্ট তৈরি করতে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এতে লাভবান হলাম আমরা সামুর পাঠকেরা, ভবিষ্যতে রেফারেন্সের জন্য আমিও এই পোস্ট বুকমার্ক করে রাখলাম।
পোস্ট দীর্ঘই, আমি দুবারে পড়ে শেষ করেছি। কারণ এত তথ্য একবারে মাথায় ধারণ করতে পারি না। আমার মনে হয়েছে কিছু ছবি দিলে আরো ভালো লাগতো। সম্ভবত পোস্ট দীর্ঘতর হতো দেখে আপনি ছবি দেননি।
ভালো লাগলো কিশোরদের এবং তাদের কোচের পুরো পরিচয় পেয়ে। আন্তর্জাতিক সাহায্যকারীদের পরিচয় বিষদভাবে দিয়েছেন, এটা আমার খুব দরকার ছিল।
এই চমৎকার পোস্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ, দু'বারে হলেও পোস্টটি পুরো পড়ার জন্য এবং পড়ার পর এখানে এত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।
কিছু ছবি দিলে অবশ্যই পোস্টটা আরও আকর্ষণীয় হতো, তবে আপনি ঠিকই ধরেছেন যে পোস্টের দৈর্ঘের কথা বিবেচনা করে প্রথমে কোন ছবি দেই নি। তবে আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হলো, অন্ততঃ একটা ছবি হলেও পোস্টে সংযোজন করা উচিত। তাই, এ পুরো ঘটনায় যার আত্মোৎসর্গে আমি সবচেয়ে বেশী অভিভূত ও বিমোহিত হয়েছি, সেই নেভী সীলের প্রাক্তন সদস্য সামান কুনামের একটা ছবি পরে যোগ করে দিয়েছি। আবারো সামান কুনাম এর প্রতি শ্রদ্ধা!
আসলেই, এই পোস্ট তৈরি করতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রায় পুরো একটা দিন লেগে গেছে (খাবার আর নামাযের সময় বাদে) এ পোস্ট সাজাতে। তবে আপনাদের মত বিদগ্ধ পাঠক সেটা বুঝতে পেরে এখানে তা একনলেজ করে গেলেন, এতেই আমার সকল শ্রম সার্থক হয়ে গেলো।
মন্তব্যের জন্য অনেক, অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা----
১৬| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৪৮
আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান ,
একটা ডকুমেন্টারী ।
জুন যেমন ধারাভাষ্যে ( প্রতিনিয়ত ছবি সহ আপডেট দিয়ে দিয়ে ) অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন তেমনি আপনিও পুরো ঘটনাটা তুলে এনে গল্পটাকে আসলেই বাস্তব করে তুললেন । ধন্যবাদ ।
অঃটঃ - আর আপনার দেখানো পথ ধরে ভাবছি , আমার পুরোনো সব পোস্টেই কিছুদিন পরপর একবার করে ঢুঁ মেরে আসবো । অনেকেই পুরোনো লেখাতে মন্তব্য করেন অথচ নোটিফিকেশান আসেনা বলে তাদের মন্তব্যের উত্তর দেয়াটা হয়ে ওঠেনা যেটাকে মন্তব্যকারী অবহেলা বলে ধরে নিতেই পারেন । আমার মনে হয় এই নোটিফিকেশানের ঝামেলা সকলের বেলাতেই ঘটে । তাই আপনার এপিক বুদ্ধিটাকে কাজে লাগাবো ।
শুভেচ্ছান্তে ।
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:০৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনিও পুরো ঘটনাটা তুলে এনে গল্পটাকে আসলেই বাস্তব করে তুললেন। ধন্যবাদ - এত দীর্ঘ গল্পটা পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
নোটিফিকেশনের বিভ্রান্তি যতদিন পর্যন্ত দূর না হবে, ততদিন পর্যন্ত সেটাই হবে সর্বোত্তম পন্থা বলে আমি মনে করি।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা----
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:১৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার পুরনো পোস্ট (মে/২০১১) চিকিৎসক- রোগী: একটি জটিল মনঃস্তত্ব পড়ে খুব ভাল লেগেছে।
১৭| ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:২১
পলক শাহরিয়ার বলেছেন: বেশ দেরীতে চোখে পড়ল পোস্টটা। গল্পের মত করে লিখেছেন। বড় লেখাটাও কখন শেষ হয়ে গেল পড়া। অনেক কিছু জানলাম।
আহমেদ জিএস বলেছেন, ঠিক যেন একটা ডকুমেন্টারি। ঠিক তাই। অনেক খুটিনাটি ব্যাপার তুলে এনেছেন কষ্ট করে।
কি হয়েছে? এর উত্তর আমরা প্রায় সবাই জানতাম। কিন্তু কেন হলো বা কিভাবে হলো-তার উত্তর অনেকেরই জানা ছিলনা এভাবে।
১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০
খায়রুল আহসান বলেছেন: এ দীর্ঘ কাহিনীটা পড়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ। বলা বাহুল্য, লেখার প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়েছি, পোস্টের সর্বশেষ প্লাসটি পেয়েও।
ভাল থাকুন, শুভকামনা রইলো---
১৮| ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
স্যার, ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটলে কি হতে পারত এটা কি একবার কল্পনা করেছেন?
মনে আছে শাহজাহানপুরের শিশু জেহাদের কথা। সে ওয়াসার খোলা পাইপ দিয়ে মাটির নীচে পড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশে তাকে তুলতে পারেনি। তার লাশ তুলেছে অপেশাদার যুবকরা ।
১৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৪৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটলে কি হতে পারতো - এটা কল্পনা করতে গেলেও গা শিউরে ওঠে। তবে থাইল্যান্ডের ঐ বাচ্চাগুলোকে কিন্তু থাইরা উদ্ধার করেনি। ওদের অবস্থান প্রথম সনাক্ত করে ব্রিটিশ গুহাডুবুরী দল, উদ্ধারও করে তারা আরো অন্য অনেকের সহায়তায়, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এ্যানেস্থেটিস্ট চিকিৎসক রিচার্ড হ্যারিস।
আমাদের সরকারও যদি সকল সম্পদ মোবিলাইজ করে কূটনৈ্তিক চ্যানেলে বিশ্ব সহায়তা আহ্বান করতো, তবে আমাদের সরকারও সাড়া পেতো বলেই আমার বিশ্বাস।
এ দীর্ঘ লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে অনুপ্রাণিত।
১৯| ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০১
নীলপরি বলেছেন: এই পোষ্টটা পড়তে দেরী হয়ে গেলো । যদিও ঘটনাটা সবার জানা । তাও আপনার এই মানবিক উপস্থাপন দেখে অনুপ্রাণিত হলাম ।
ধন্যবাদ ।
১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫০
খায়রুল আহসান বলেছেন: পোষ্টটা পড়তে কিছুটা দেরী হলেও আপনি এত দীর্ঘ লেখাটা পড়ে মন্তব্য করে গেলেন, প্লাস দিয়ে গেলেন, এতেই লেখাটা যেন সার্থক হলো। অনেক, অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা, প্রেরণাদায়ক এ মন্তব্যের জন্য।
ভাল থাকুন, সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০০
স্রাঞ্জি সে বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম।
অর্ধেক পড়েছি। ভালই লেগেছে।
এদের সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ ছিল। আপনার থেকে জানতে পেরেছি।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নিরন্তর শুভকামনা ভাইয়া।