নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতাঃ বেলা শেষের কথকতা

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৯

দিবাকর যতই আলো ছড়িয়ে রাখুক সারাটা আকাশব্যাপী,
বেলাশেষে রৌদ্রকরোজ্জ্বল সেই আকাশেও আঁধার নামে,
ধীরে ধীরে, প্রকাশ্যে। বৃক্ষের শাখায় শাখায় ঝুলে থাকে
যেসব পাকা ফল- আনত, ভূমীমুখি, দোদুল্যমান,
মৃদুমন্দ বাতাসেও ওরা টুপ করে ঝরে পড়ে বেখেয়ালে।

প্রকৃতির রীতিই জীবনের নীতি।
পুরনোরা ভূমিতলে যাবে, নতুনরা ভূমিষ্ঠ হবে।
শব্দরা চলে যাবে, শূন্যতা ঘিরে রবে।
হে ষাটোর্ধ্ব বালক, তবে স্বেচ্ছায় প্রস্তুত হও-
একান্ত, বিবিক্ত, নিঃসঙ্গ, নির্জন জীবনের জন্য!

যতই তুমি উজ্জ্বল তারকা হওনা কেন, তোমার দ্যূতি
এখন দ্রুত ম্লান হয়ে যাবে। থেমে যাবে জীবনের কলরব,
নিভৃতে পড়ে রবে তুমি লোকচক্ষুর অগোচরে। এখন কিভাবে
নির্জন কোণে একেলা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তা শিখে নাও!
কোন ঈর্ষা নয়, অভিযোগ নয়- সবকিছু মেনে নিতে শেখো।

তোমার বিজন ঘরে হঠাৎ আসতে পারে কোন নোটিশ ছাড়াই
প্রাণঘাতী জটিল ব্যাধি। ভারসাম্যহীন, পতিত দেহের ভাঙা হাড়
তোমাকে কষ্ট দিতে পারে আমৃত্যু। অপত্য স্নেহের দাবী নিয়ে
হৃদনালীতে বসতি গড়তে পারে বর্জ্য স্নেহ, কর্কটের অদৃশ্য কীট
কিলবিল করে ছড়িয়ে যেতে পারে যকৃতে, বৃক্কে, মূত্রগ্রন্থিতে।

হে ষাটোর্ধ্ব বালক, তুমি প্রস্তুত হও-
মস্তিষ্ক ক্ষয়ে যাবে, স্মৃতিভম হবে। আর কখনো ফিরে পাবে না
তুমি ব্যাধিহীন জীবন। যতটুকু পার, অনুশীলন কর, ব্যত্যয়হীন।
যা করে আনন্দ পাও, সেটাই কর। আবার তুমি শিশুকালে ফিরে যাবে,
তবে এবারে মাতৃহীন। নার্সনির্ভর শয্যামুখি জীবনের জন্য প্রস্তুত হও!

এতকাল গড়ে তোলা তোমার সম্পদের মৌবনে আকৃষ্ট হবে মৌলোভী
নানা ভ্রমর। ফন্দি ফিকিরে, মিষ্টি কথায় তোমাকে ভোলাবে অনুক্ষণ।
যতক্ষণ জ্ঞান থাকে, তাদেরে পরিহার করো। জীবনের শেষ পথটুকু চলা
বড় কষ্টের হয়, অনুজ্জ্বল, অস্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি নিয়ে। কোন অভিযোগ নয়,
কোন গর্ব নয়, বিনীত হও; প্রকৃতির রীতিই জীবনের নীতি- মেনে নাও!


মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০


পাদটীকাঃ চীনা ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং চিন্তাবিদ Zhou Daxin তার “The Sky Gets Dark, Slowly” নিবন্ধে লিখেছেন, মধ্য বয়সের পর থেকে কিভাবে মানুষ ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে থাকে। ষাটোর্ধ্ব মানুষ কিভাবে বয়স বাড়ার এ প্রক্রিয়াকে সাবলীল মাধুর্যে, শোভন ও মার্জিত আচরণে আত্মস্থ করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বয়সে তিনি আমার চেয়ে দুই বছরের বড়, তাই বোধহয় প্রায় সমবয়সী হবার কারণে তার কথাগুলোকে আমি অতি সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। তার এ নিবন্ধটি পড়ার পর, আমি আমার ভাবনাগুলোকে নিজের মত করে সাজিয়ে নিলাম, মূলতঃ তারই কথাগুলো স্মরণ করে। কবিতাটি তারই প্রতিফলন।

Zhou Daxin নিজের আসল নাম ছাড়াও ‘Pudu’ ছদ্মনামে লিখে থাকেন। চীনের Henan প্রদেশের Dengzhou এ তিনি একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭০ সালে উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি চীনা গণমুক্তি ফৌযে যোগদান করেছিলেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছিলেন। খাদ্যাভাব তাকে পীড়িত করেছিল, তাই মূলতঃ বিনামূল্যে খাদ্য লাভের আশায়ই তিনি চীনা গণমুক্তি ফৌযে যোগদান করেছিলেন, একথা তার অনেক লেখায় বলেছেন। সেখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি তার লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি Xi’an Institute of Politics থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং Lu Xun Literary Academy তে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি China Writers’ Association এ যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে চীনের Henan Literature Academy এর প্রেসিডেন্ট এর পদ অলংকৃত করেন। ২০০৮ সালে তিনি The Scenery of the Lake and the Mountain উপন্যাসের জন্য প্রখ্যাত Mao Dun সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে। অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

বহুদিন পর আপনাকে পেলাম। আপনার পোষ্ট পেলাম।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রেরণাদায়ক প্রথম মন্তব্যটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এতদিন হাতের কাছে ল্যাপটপের সুবিধে ছিলনা বলে লিখতে পারিনি।

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:


যে সমাজে টোকাই থাকবে, সেই সমাজ ষাটোর্ধদের জন্য ভাববে না; আজকে যারা সাঁকো তৈরি করেনি, তাদেরকে কাদাজল পেরিয়ে যেতে হবে।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আজকে যারা সাঁকো তৈরি করেনি, তাদেরকে কাদাজল পেরিয়ে যেতে হবে - কথাটা ঠিক বলেছেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২২

সোহানী বলেছেন: হয়তো সেভাবে ভাবতে পারি না কারন সে বয়সে পৈাছাইনি বলে।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৪:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: তাই? হয়তো তাই।
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আছে, আলাদা আলাদা ব্যথা বেদনা আছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। একমাত্র প্লাসটি পেয়ে অনুপ্রাণিত।

৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মনোরম ও মনোহর লেখা।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, লেখার প্রশংসায় প্রাণিত হ'লাম।
শুভেচ্ছা রইলো---

৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান,




সময় বড় নিষ্ঠুর!

প্রথম স্তবকটি সবচে' বেশী সুন্দর হয়েছে।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: সময় বড় নিষ্ঠুর! - সত্য কথা, বাস্তবতা!
প্রথম স্তবকটি'র প্রশংসা পেয়ে প্রাণিত হ'লাম।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা!!!!

৬| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৮

ঢাকার লোক বলেছেন: চিরসত্যের সুন্দর উপস্থাপনা! তিনিই বুূ্দ্ধিমাণ যিনি সময় থাকতেই তা অনুধাবন করেন এবং তার প্রস্তুতি নেন।
আশা করি মেলবোর্নে আপনার দিনগুলো আনন্দে কাটছে!শুভেচ্ছা সতত।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: তিনিই বুূ্দ্ধিমাণ যিনি সময় থাকতেই তা অনুধাবন করেন এবং তার প্রস্তুতি নেন - ঠিক বলেছেন। মানসিক এবং শারীরিক- উভয় প্রকার প্রস্তুতির দরকার আছে, সেই সাথে আর্থিক প্রস্তুতিও।
মেলবোর্নে আমার দিনগুলো ভালই কাটছে। কিছুদিন আগে এক বন্ধুর আমন্ত্রণে নিউ জীল্যান্ড থেকে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য ঘুরে এলাম।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০২

এম এ হানিফ বলেছেন: দুপুর বেলার সূর্যটা ঠিক যেমন হয়, যেমন করে প্রচণ্ড উত্তাপে জ্বালিয়ে রাখে জগতের হিসেব নিকেশ, বয়সের বিচারে আমিও ঠিক তেমনি আছি যৌবনের উতাল মহাসমুদ্রে ভেসে। বার্ধক্যের এসব সমীকরণ এখনো জানা হয় নাই। আপনার লেখার মাঝে ডুবে কল্পনাপ্রসূত আবেগে ভাবতে লাগলাম হয়ত কাল ফুরালে একদিন সে অভিজ্ঞতাটুকু হবে। সেদিনটা যেন আসতে লেট হয়, প্রতিবার উৎসবের সময় যেভাবে আমাদের ট্রেন গুলো লেট করে আসত সেভাবেই লেট করে যেন আসে।

কবিতাটি ভাল লাগলো। প্রথম দিকে গদ্য পদ্যের একটা মিশ্রণ মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ভালই হয়েছে।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথম দিকে গদ্য পদ্যের একটা মিশ্রণ মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ভালই হয়েছে - যাক, এবারের মত উতরে গেলাম তাহলে! :)
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৮| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১৭

মুক্তা নীল বলেছেন:
শ্রদ্ধেয় ,
বেলাশেষের কথকথায় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যে উপলব্ধি আপনি অনুভব করেছেন সত্যিই যেন ভবিষ্যতের সুস্পষ্ট সত্য।
কোন গর্ব নয়, বিনীত হও; প্রকৃতির রীতিই জীবনের নীতি- মেনে নাও!
মূল্যবান উপলব্ধি পড়ে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।
অশেষ শুভকামনা ও ধন্যবাদ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৫:২১

খায়রুল আহসান বলেছেন: কবিতাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দেয়ায় এবং কবিতার মর্মকথা আপনার ভাল লেগেছে, একথা জানানোর জন্য খুশী হলাম।

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫১

জুন বলেছেন: এখন কিভাবে একলা কোনে নির্জনে দাড়িয়ে থাকতে হয় তা শিখে নাও
বড্ড নিষ্ঠুর চরণ কবিতার তবে ভীষণ বাস্তব।

অনেক অনেক ভালোলাগা রইলো চিন্তায় চেতনায় দাগ কেটে যাওয়া কবিতায় খায়রুল আহসান।
শুভকামনা সতত।
+

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: জুন, আপনি ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, কথাটা নিষ্ঠুর হলেও, এটাই বাস্তবতা!
মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্বেই আলাদা আলাদা কষ্ট আছে, আনন্দও আছে। বয়সের সাথে সাথে আমরা শিখে নেই, কষ্টগুলোকে কিভাবে মেনে নিয়ে জীবন যাপনে সমন্বয় সাধন করতে হয়। যারা তা করতে পারি, তারা মাধুর্যময় সাবলীলতার সাথে বয়সকে মেনে নিয়ে শেষ গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতে পারি। বাকীদের অভিযোগ করতে করতে সময় কেটে যায়।
কবিতার এ চরণটি লেখার সময় আমি নিজেও খানিক থমকে ছিলাম। আপনাকেও এটা স্পর্শ করেছে জেনে প্রীত হ'লাম, আশ্বস্তও হ'লাম।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অনেক, অনেক শুভেচ্ছা----

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.