নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে.... (২)

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩

(কৈফিয়ৎঃ ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ, তাই একটু বেশী ডিটেইলসে লেখা, শব্দসংখ্যাঃ ২১০৫। ব্যস্ত পাঠকের কাছে অনেক কথা অপ্রাসঙ্গিক, এবং লেখাটা অতি দীর্ঘ মনে হতে পারে।)
ঘরে ফেরার এর আগের পর্বটি দেখতে পাবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে....(১)

অবশেষে বেলা বারটার কিছু আগে বোর্ডিং এর নির্দেশ এলো। আমরা ঝটপট মুখে মাস্ক লাগিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। আমার বেশ অসুবিধে হচ্ছিল মাস্ক পরে থাকতে। নিজের গরম প্রশ্বাস মুখের উপর ছড়িয়ে পড়াতে অস্বস্তি বোধ করছিলাম, তা ছাড়া প্রশ্বাসের কারণে চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে আসছিল, সেটাও একটা অস্বস্তির কারণ। আমি তাই একটুখানি পর পর মাস্কটাকে নামিয়ে রেখে নির্মল শ্বাস নিচ্ছিলাম, চশমার কাঁচকেও স্বচ্ছ হবার সুযোগ দিচ্ছিলাম। গিন্নী আড়চোখে তাকিয়ে চোখের ইঙ্গিতে এমনটি না করার নির্দেশ দিলেন, আমিও কষ্ট হলেও, সুবোধ বালকের মত তা মেনে চলার চেষ্টা করতে থাকলাম। প্লেনের দরজায় প্রবেশ পথের দু’পাশে দেখি দু’জন একটি ছোট্ট মেশিন হাতে ধরে আছে। অতিক্রম করা প্রতিটি যাত্রীর কানের কাছে সেটা ধরে ক্লিক করছে। অনুমান করলাম, সেটা হয়তো জ্বর মাপার জন্য কোন থার্মাল স্ক্যানার হবে, নয়তো মগজ ধোলাই এর কোন মেশিন! চীনাদের কথা তো, বলা যায় না। নির্বিঘ্নে সে স্ক্যানিং পার হ’লাম। আমি বরাবর জানালার পাশে বসতে ভালবাসি, গিন্নী সেটা জানেন বলে মাঝে মাঝে ছাড় দেন, মাঝে মাঝে দেন না। প্লেনের ভেতরে ঢুকে দেখি আমাদের আসন পড়েছে দু’পাশের জানালার কোন পাশেই নয়, প্লেনের মাঝখানে যে চারটি করে আসনের সারি রয়েছে, সেখানেই পাশাপাশি দু’টি আসনে। জানালার পাশে বসতে পারলাম না বলে মনটা কিছুটা খারাপ হলো, তবে বয়সের সাথে সাথে আমি দিন দিন অদৃষ্টবাদী হয়ে উঠছি বলে সহজেই তা মেনে নিলাম।

প্লেনে আসন গ্রহণ করেই ছেলেকে তা ফোনে জানালাম। জিজ্ঞেস করলাম, সে ঘরে পৌঁছেছে কিনা। সে জানালো সে পথে একটা গ্যাস স্টেশনে (পেট্রোল পাম্পে) গাড়ী পরিস্কার করছে। চোখের পর্দায় তার গাড়ী পরিস্কার করার ছবিটা ভেসে উঠলো। আসার কয়েকদিন আগে আমি ওকে বলেছিলাম, গাড়ীটা ময়লা হয়ে গেছে। গ্যাস স্টেশনে গাড়ী পরিস্কার করার সরঞ্জামাদি থাকে, একটু সময় করে পরিস্কার করে নিও। সে কথাটা মনে রেখে সে কাজটি করছে, একথা ভেবে ভাল লাগলো। আর তাছাড়া একটি কাজে ব্যস্ত রয়েছে বলে মন খারাপের কথাও ভুলে থাকবে, একথা ভেবেও স্বস্তি পেলাম। কাজের ফাঁকে কথার মাঝে বারে বারে সে আমায় স্মরণ করিয়ে দিল, সব সময় যেন মাস্ক আর গ্লোভস পরে থাকি, গুয়াংঝুতে পৌঁছে যেন যেভাবেই হোক, শুধু আমাদের পোঁছানোর এবং সম্ভব হলে পরবর্তী ফ্লাইটে আসন গ্রহণের খবরটা জানানোর পন্থা খুঁজে বের করে খবরটা তাকে জানাই। বলা বাহুল্য, তার এ আকুলতায় আমিও সামান্য বিচলিত হয়ে পড়লাম।

একটা বিষয় লক্ষ্য করে অবাক হ’লাম যে পায় প্লেনভর্তি যাত্রীদের মাঝে কেবলমাত্র আমরাই বোধহয় ছিলাম অচৈনিক, বাকী সবাই চীনা। এমনকি কাউকে দেখে আমাদের উপমহাদেশের অন্য কোন দেশের যাত্রী বলেও সনাক্ত করতে পারলাম না। সেদিনটি ছিল সোমবার, কমপ্লিট লকডাউন শুরু হবার ঠিক প্রথম দিন। অস্ট্রেলিয়ায় এখন প্রচুর সংখ্যক চীনা বংশোদ্ভুত নাগরিক বাস করে। আমার মনে হয় আর কিছুদিন পর ওরাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর ভয়ে চীনারা দলে দলে দেশে ফিরে যাচ্ছিল। চার আসনের সারিতে আমরা দু’জন বসার পর আর কেউ বসেনি বলে দুটো আসন খালি ছিল। আমরা আমাদের মাঝে একটি আসন ফাঁক রেখে বসলাম, তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথাটা মাথায় রেখে। ঠিক ১২টা ২৫ মিনিটে প্লেনপক্ষীটি একটু নড়ে চড়ে উঠে ডানা মেলে রানওয়েতে বিচরণ শুরু করলো এবং ১২টা ৪৫ মিনিটে ভূমিত্যাগ করে আকাশে উড্ডয়ন করলো। যে ভূমিতে নাড়ির টান রেখে গেলাম, দূরের জানালা দিয়ে দেখছিলাম সে ভূমি ছেড়ে ক্রমান্বয়ে উপরে উঠে যাচ্ছি। এক সময় সে ভূমি অদৃশ্য হয়ে গেল, আমি তখনো বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।

সম্বিত ফিরে পেলাম বিমানবালার ডাকে। তাকিয়ে দেখি অন্য সময়ের মত তাদের মুখে সেই কৃত্রিম হাসিটি নেই, তাদের অজান্তেই যেন তাদের মুখে একটা সিরিয়াস ভাবের ছাপ লেগে ছিল। তিনি আমাকে জামার আস্তিন গুটিয়ে একটি হাত বের করে দিতে বললেন। আমি তা দিলে তিনি কব্জির একটু ওপরে একটি মেশিন ধরলেন, পাশে দাঁড়ানো অপর বিমানবালা তার হাতে ধরা একটি গ্রাফশীটে কিছু লিখে নিলেন। বুঝতে পারলাম, আবারো জ্বর মাপা হলো, একে একে সব যাত্রীর। একটানা সোয়া নয় ঘন্টার এই বিমান যাত্রায় চায়না সাউদার্নের বিমানবালারা তিন ঘন্টা পরপর মোট তিনবার এসে নিষ্ঠার সাথে এই সুকর্মটি করে গিয়েছিলেন, তাদের ভাষায় যাত্রীদের স্বার্থে, সর্বোপরি মানবতার স্বার্থে। এই তাপমাত্রার রেকর্ড যে সাথে সাথে বিমান থেকেই গুয়াংঝু বিমান বন্দর তথা চীনা স্বাস্থ্য বিভাগে জানিয়ে দেয়া হচ্ছিল, তা তাদের তৎপরতা থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল। একটু পরে দেখলাম, একজন বিমানবালা তার নিজস্ব সেলফোন বের করে দেয়াল ঘড়ির মত একটা কিছুর ছবি বের করে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, আর চীনা যাত্রীরা সেটা থেকে তাদের নিজ নিজ ফোনে সেটার ছবি তুলে রাখছেন। সেটা কী হতে পারে, অবাক বিস্ময়ে তা ভাবতে থাকলাম। কোন কূল কিনারা না পেয়ে আমিও আপাততঃ আমার ফোনে সেটার একটা ছবি তুলে রাখলাম। পরে, বিমানবালাদের মুখের দিকে তাকিয়ে যাকে আমার কাছে সবচেয়ে ফ্রেন্ডলী বলে মনে হলো, অপেক্ষা করতে থাকলাম তিনি কখন আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যান। যখন সুযোগ পেলাম, আমার ফোনের ছবিটা তাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এটা দিয়ে আমাকে কী করতে হবে! তিনি তার হাতে ধরা একটি কাগজে লেখা তালিকা মিলিয়ে দেখে হেসে আমাকে বল্লেন, “ইউ ডোন্ট নীড ইট”! আমি কম কথা বলা লোক, তাই আর কিছু না বলে অধিকতর বিস্ময়ে সেলফোনটি বন্ধ করে রাখলাম।

প্লেনে তৈয়ম্মুম করে নামায পড়ার জন্য সাথে একটি মাটির ঢেলা বহন করছিলাম, আপাততঃ তা দিয়েই তৈয়ম্মুম করে আমরা উভয়ে যোহরের নামায পড়ে নিলাম। এরই মধ্যে একটি মুখ বাঁধা মোটা পলিথিন ব্যাগে (কোন বক্সে নয়) বিমানবালারা লাঞ্চ সরবরাহ করে গিয়েছিলেন। সবার জন্য একই ব্যাগ, কোন ‘মুসলিম ফুড’ (চীনারা হালাল খাবারকে এ নামেই ডাকে), ইংলিশ ফুড, কন্টিনেন্টাল ফুড ইত্যাদির বালাই নেই। বিমানবালারা বলে গিয়েছিল, ওরা কোন ওয়েস্ট কালেক্ট করবে না, লাঞ্চ শেষে আমরা যেন খালি পাত্রগুলো ঐ ব্যাগেই রেখে মুখ বেঁধে ব্যাগটি যার যার আসনের নীচে রেখে দেই। খুলে দেখি, ব্যাগের মধ্যে আস্ত কমলা, আপেল, কাপ কেক, টিনড বীনস, বিস্কুট ইত্যাদির একটি এ্যাসোর্টেড প্যাক। ইতোমধ্যে বিমানবালা দুটো ফর্ম দিয়ে গিয়েছিল, যা প্লেন থেকে বের হবার আগেই পূরণ করে রাখতে হবে। সেসব ফর্মে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ছাড়াও গত ১৪ দিনে আমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা ফর্ম দুটো পূরণ ও স্বাক্ষর করে পাসপোর্টের ভেতর ঢুকিয়ে রাখলাম। চীনে অবতরণের পর সামনের কয়েকটি ঘন্টা অতিরিক্ত উদ্বেগজনক এবং উত্তেজনাকর হতে পারে, এই ভেবে চেষ্টা করতে থাকলাম একটা লম্বা ঘুম দিতে। একাধিকবার বিমানবালাদের জ্বর মাপার তাগিদে সে ঘুমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও, প্লেন যখন অবতরণ করা শুরু করলো, তখন নিজেকে বেশ ফ্রেশ অনুভব করছিলাম। অবতরণ শুরু হবার আগেই বিমানবালারা এসে যাত্রীদের পাসপোর্টের পেছনে একটি করে গোল স্টিকার লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, কারোটায় লাল রঙের, কারোটায় হলুদ। আমাদেরটায় হলুদ স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছিল।

স্থানীয় সময় সন্ধ্যে পৌনে সাতটায়, পুনঃনির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগে প্লেনটি গুয়াংঝু বিমান বন্দরের বোর্ডিং ব্রীজে এসে থামলো। প্লেনের অভ্যন্তরীন মাইকে চীনা ভাষায় কিছু ঘোষণা করা হচ্ছিল। আমি অপেক্ষা করছিলাম ইংরেজী ঘোষণার জন্য। লক্ষ্য করলাম, লম্বা চীনা ঘোষণার পর মাত্র একটি ইংরেজী বাক্যে ঘোষণাটি সমাপ্ত হলো, আর তা হচ্ছে, বিমানবালার নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত যেন কেউ কেবিন থেকে হ্যান্ডলাগেজ নামানোর জন্য আসন ছেড়ে উঠে না দাঁড়াই। বুঝলাম, ইংরেজীতে অনেক কিছুই বলা হলো না, যা চীনাদের জন্য বলা হয়েছে। প্লেন বোর্ডিং ব্রীজে থেমে আছে, যাত্রীরা সবাই সুশৃঙ্খলভাবে যার যার আসনে বসে আছে- এমন দৃশ্য আমি জীবনে আর কখনো কোথাও দেখি নাই। আমেরিকায়ও দেখেছি প্লেন রানওয়ে টাচ করার সাথে সাথে যাত্রীরা সবাই একত্রে করতালি দিয়ে পাইলটকে অভিনন্দন জানায় এবং প্লেনের গতি শূন্যে নামার আগেই যাত্রীরা কেবিন লাগেজ নামাতে উঠে দাঁড়ায়। আমরা সবাই বসেই থাকলাম। কিছুক্ষণ পর পর একেকবার একেক ধরণের পোষাকে সজ্জিত লোকজন এসে কেবিন ক্রুদেরকে কি যেন নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিল এবং তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে যাচ্ছিল। প্রায় দশ বার মিনিট ঠায় বসে থাকার পর আবার মাইকে চীনা ভাষায় কিছু বলা হলো। তার পরে পরেই দেখি, সিরিয়ালী নয়, বিক্ষিপ্ত কিছু আসন থেকে লোকজন উঠে তাদের কেবিন লাগেজ নামিয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হতে থাকলো। এবারে ইংরেজী ভাষায় ঘোষণার কোন তরজমা শোনানো হলোনা বলে আমি কনফিউজড হয়ে বসেই থাকলাম।

প্লেনে আবার নিস্তব্ধতা, একটি ছোট্ট দল নেমে যাবার পর সবাই যার যার আসনে নিশ্চুপ বসে আছে। আবার একটি ঘোষণা, শুধু চীনা ভাষায়, আবার আরেকটি চীনা দলের স্বয়ংক্রিয় পুতুলের মত উঠে দাঁড়ানো, লাগেজ নামানো এবং দরজার দিকে অগ্রসর হওয়া। কী হচ্ছে, চিন্তা করতে করতে আমি অস্থির। একেতো প্লেন এক ঘন্টা বিলম্বে ছেড়েছে, তার উপর থামার পরেও প্লেনের ভেতরে বসেই আছি আধ ঘন্টা ধরে- এতে যে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে পারার সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, সে চিন্তাটাই ছিল অস্থিরতার কারণ। এবারে নভোচারীদের মত কিছু সাদা পোষাকধারীদের প্রবেশ, বিমানবালাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ এবং তারা নেমে যাবার পর আবার চীনা ভাষায় ঘোষোণা। ঘোষণার পর নামার জন্য অগ্রসরমান এই তৃতীয় দলটির শেষ ব্যক্তির পিছু পিছু আমিও বোর্ডিং পাস, পাসপোর্ট আর সেই পূরণকৃত ফর্মদুটো হাতে ধরে অগ্রসর হতে থাকলাম। দরজার কাছে পোঁছেই পেলাম সেই ‘ফ্রেন্ডলী’ বিমানবালাকে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা চীনা ভাষায় ঘোষণায় কী বলছো, আমি তো তার কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কানেক্টিং ফ্লাইট নং CZ391। এভাবে এখানে বসে থাকলে তো আমি ফ্লাইট মিস করবো। উনি আমার পাসপোর্টটি উল্টিয়ে তার লাগিয়ে দেয়া সেই স্টিকারটি দেখে বললেন, দয়া করে আসন গ্রহণ করুন। এটা একটা স্পেশাল সিচুয়েশন, আপনাদের অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। তবে যা কিছু করা হচ্ছে, তা আপনাদের স্বার্থেই। আমি বললাম, আমি চীনা ভাষায় ঘোষণা বুঝতে পারছিনা, আমার যখন নামার ডাক আসবে, দয়া করে আমার আসনের কাছে এসে তা আমাকে জানিয়ে যাবেন। উনি রাজী হলেন এবং আমি ফিরে এসে আসন গ্রহণ করলাম।

একজন ইংরেজী জানা চীনা মহিলা আমার অস্থিরতা লক্ষ্য করেছিলেন। চতুর্থ ঘোষণার পর তিনিও উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাকে বললেন, এবারে আপনি নামতে পারবেন, আপনি আসুন। আমি তার কথা শুনে বিমানবালার জন্য অপেক্ষা না করে তার পিছু নিলাম। পিছে পিছে গিন্নী। ঠিকই এবারে বের হতে পারলাম। বের হবার পর একজন স্বাস্থ্যকর্মী আমাদের পাসপোর্টের সেই হলুদ স্টিকারে দুটো ক্রমিক নং বসিয়ে দিলেন। আরেকটু অগ্রসর হতে আরেকজন স্টাফ হাতে একটা ফরম ধরিয়ে দিয়ে চীনা ভাষায় এবং সেই সাথে ফিতে দিয়ে ঘেরা একটা এলাকা দেখিয়ে ইশারায় বললেন, সেখানে সবাই বসে যেভাবে ফর্ম পূরণ করছে, আমাকেও তা করতে। আমি ফর্মটার দিকে তাকিয়ে দেখি, সেটা শুধু চীনা ভাষায় লেখা। ইংরেজীতে কোন কিছু লেখা নেই। আমি সেই ইংরেজী জানা চীনা মহিলাকে অনতিদূরে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলাম। উনি ফর্মটি নিয়ে যিনি ফরমটি হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তার কাছে গিয়ে কিছু বলছিলেন। তাদের কথোপকথন এর ভাবভঙ্গী এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ লক্ষ্য করে বুঝলাম, লোকটি কোন ছাড় না দিতে অনড়। উনি ম্লানমুখে ফিরে এলেন, ওনার পেছনে তখন বয়স্ক তিনজন চীনা দাঁড়িয়ে, সম্ভবতঃ অশিক্ষিত, নিজেরা ফর্ম পূরণ করতে অক্ষম। উনি বললেন, ঐ তিনজনকে সাহায্য করার পর তিনি আমাকে সাহায্য করবেন।

এদিকে কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করার সম্ভাবনায় আমার ঘাম ছোটা শুরু হয়েছে। আমি উপায়ান্তর না দেখে সাহায্যের আশায় কাছে থাকা এক চীনা তরুণীর সাথে ইংরেজীতে আলাপচারিতা শুরু করলাম। উনি মেলবোর্নের মনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী, লকডাউনের কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। সারারাত লাউঞ্জে কাটিয়ে পরেরদিন ফ্লাইট ধরে নিজ শহরে যাবেন। উনি প্রথমেই আমাকে বললেন, আপনি এ ফ্লাইট ধরতে পারবেন না, কারণ এখনো অনেক প্রক্রিয়া বাকী আছে। এখানকার কেউই তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে পারবে না, যদিনা কানেক্টিং ফ্লাইটের ব্যবধান ৭/৮ ঘন্টার বেশী হয়। উনি আমাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায় রাজী হলেন চীনা ফর্ম পূরণে আমাকে সাহায্য করতে। তবে উনি সঙ্গত কারণেই বললেন, উনি নিজ হাতে কিছু লিখবেন না, উনি শুধু অনুবাদ করে বলে দিবেন কোথায় কী লিখতে হবে। ওনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি দুটো ফর্মই দ্রুত পূরণ করে ফেললাম। উনি বললেন, ফর্ম জমা দেয়ার সময় আমি যেন অবশ্যই উল্লেখ করি যে আমি চীনা ভাষা জানি না এবং ফর্ম পূরণে অন্যের সাহায্য নিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যদি জিজ্ঞেস করে আমি কার সাহায্য নিয়েছি, তবে আমি যেন তাকে দেখিয়ে দেই, এবং এজন্য উনি লাইনে আমাদের সামনে ওনার অবস্থান ছেড়ে দিয়ে আমার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ালেন।

আমার যখন ফর্ম জমা দেয়ার পালা এলো, আমি আর গিন্নী একসাথেই এগিয়ে গেলাম এবং এক সাথেই দুটো পাসপোর্ট জমা দিলাম। কর্তৃপক্ষ কিছু জিজ্ঞেস করলো না, তবুও আমি নিজ থেকে তাকে জানালাম যে চীনা ভাষা না জানার কারণে ফর্মগুলো পূরণে আমি অন্যের সাহায্য নিয়েছি। প্লেনে বসে যে ফর্ম দুটো পূরণ করেছিলাম, তার সাথে চীনা ভাষার ফর্মটি উনি মিলিয়ে নিয়ে বোর্ডিং পাস দেখতে চাইলেন। আমি কানেক্টিং ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস এগিয়ে দিলে উনি বললেন, মেলবোর্ন থেকে যে ফ্লাইটে এসেছেন, সেটার বোর্ডিং পাস দেখান। আমি তটস্থ হয়ে এ পকেট ও পকেট, ব্যাগপকেট, পাসপোর্টের প্রতিটি পৃষ্ঠার ফাঁক হাতড়েও আর সে বোর্ডিং পাস খুঁজে পাচ্ছিলাম না। উনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কাছে বোর্ডিং পাস নেই? আমি বললাম, আছে তো অবশ্যই, তবে এ মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছিনা। উনি জানতে চাইলেন, আমাদের আসন নং কত ছিল। ভাগ্য ভাল যে ফর্ম পূরণ করতে করতে পাসপোর্ট নম্বর, আসন নম্বর, ফ্লাইট নম্বর ইত্যাদি সব মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। ঝটপট বলে ফেল্লাম। উনি আমাদের পূরণকৃত ফর্মের ফটোকপি করে তা পাসপোর্টের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ইশারায় আরেকটি ফিতে দিয়ে ঘেরা এলাকা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করুন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। আপাততঃ আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

এতক্ষণ অন্যকিছু ভাবার সময় পাই নি। এখন মনে হলো, ছেলে বার বার করে বলেছিল, যে করেই হোক, গুয়াংঝু থেকে যেন একটা বার্তা দেই। অনেক সংকোচ নিয়ে সেই মায়াবতী তরুণীটিকে জানালাম, মেলবোর্নে আমার ছেলে ও বৌমা থাকে, ওরা সারারাত আমার কাছ থেকে একটি বার্তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে জানার জন্য, যে গুয়াংঝুতে আমরা কী অবস্থায় আছি। উনি সাথে সাথে সেলফোন বের করে আমার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে ছেলেকে মিলিয়ে দিলেন। কখন লাইন কেটে যায়, এই ভয়ে আমি নাকে মুখে সংক্ষেপে ছেলেকে চলমান ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করে বললাম, সে যেন ঢাকায় তার ছোট ভাইকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে আমরা ফ্লাইট মিস করবো, সুতরাং সে যেন আমাদেরকে নিতে এই মধ্যরাতে বিমান বন্দরে না আসে। আমি এই কথাটুকু বলার পর যেন আমার বুকের উপর থেকে হিমালয় পাহাড় সরে গেল। এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফলাফল কী আসবে, সে ব্যাপারে মোটেই আমার কোন মাথাব্যথা থাকলো না। আমি নিয়তির উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে হৃষ্টচিত্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ডাকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।

ঢাকা
০৩ এপ্রিল ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ২১০৫



বিমান বালার হাতে ধরা সেলফোনে এই সেই রহস্যময় ছবি, যার মর্মার্থ তখন নয়, পরে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম। সময়টা তার ফোনেই দেখা যাচ্ছে, দুপুর বারটা দশ (২৩ মার্চ ২০২০)।

মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম ।
আজ প্রার্থনা দিবস। লেখাটিতে পরে সময় করে আসব ইনসাল্লাহ।
শুভেচ্ছা রইল

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ আলী ভাই। আমার জন্যেও দোয়া করবেন। আল্লাহতা'লা যেন বাকীটা জীবন আমাকে সপরিবারে জটিলতা মুক্ত রাখেন, সুস্থতায় রাখেন।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৪

মা.হাসান বলেছেন:
আমার কাছে চিনা-জাপানি-কোরিয়ান-থাই-মালয়ি-সিঙ্গাপুরি সবার চেহারা একই রকম লাগে, এমনকি একজনের সাথে আরেকজনের চেহারার পার্থক্য করাও আমার জন্য কঠিন । আপনি বুঝতে পেরেছেন সবাই চিনে, অন্য কোন জাতের না; আমার কাছে এটা বিশাল ব্যাপার।
এই সংকটকালে কেউ কেউ নিজের জ্বর ঢাকার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেয়ে এয়ারপোর্টে বিমান ধরতে এসেছে এমন ঘটনা বেশ কিছু ঘটার কথা শোনা যায়। এজন্যই সম্ভবত দফায় দফায় জ্বর মাপা হয়েছে।

শতকরা ১০০ ভাগ বাংলা ভাষাভাষী যাত্রীদের নিয়ে চলা বিমানে বাংলা ভাষায় ঘোষণা শোনার সুযোগ হয়নি । তবে চীনেদের মুখে ইংরেজি না শোনাই মনে হয় ভালো হয়েছে - এদের ইংরেজির একটা নমুনা নিচে দিলাম:



এরকম পরিস্থিতিতে ভ্রমণ কালীন সময়ে অজুর প্রস্তুতির জন্য আমি চামড়ার মোজা ব্যবহার করি। তবে হাতের গ্লাভস থাকলে কি হবে জানা নেই । সুযোগমতো আপনার স্থানীয় মসজিদের ইমামের সাথে আলাপ করে নিতে পারেন।

ছবির রহস্য আশাকরি পরের পর্বে উম্মোচন হবে ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার কাছে চিনা-জাপানি-কোরিয়ান-থাই-মালয়ি-সিঙ্গাপুরি সবার চেহারা একই রকম লাগে - জ্বী, আমারও তাই। আমি অবচেতন মনেই বোধ হয় ওদের সবাইকে এক কাতারে ফেলেছিলাম। কমিশন হোক আর ওমিশন হোক, ভুলটা আপনার তীক্ষ্ণ নজর এড়ায়নি। বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমান পাঠক এ জন্যেই একজন লেখকের প্রকৃত বন্ধু। ধন্যবাদ, ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য।

প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেয়ে এয়ারপোর্টে বিমান ধরতে এসেছে এমন ঘটনা বেশ কিছু ঘটার কথা শোনা যায় - ওদের কাছে এসব ফাঁকি জুকি দেয়া সম্ভব নয় বলেই আমার মনে হয়েছে।

এদের ইংরেজির একটা নমুনা নিচে দিলাম - এরকম কিছু নমুনা ফেইসবুক এবং অন্যান্য বিভিন্ন ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে হর হামেশা পাই। চীনারা তো কখনো ইংরেজ কর্তৃক শাসিত হয়নি, ভারতবর্ষ প্রায় দুইশ' বছর ধরে শাসিত হয়েছিল। তার পরেও, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ইংরেজীর দৈন্য দশার প্রমাণ স্বরূপ কিছু সাইনবোর্ডের নমুনা দেখেছি, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।
দেখুন, চীন এত বিরাট একটি দেশ, এত বিশাল তার জনসংখ্যা! এরকম ত্রুটিপূর্ণ সাইনবোর্ড এখানে সেখানে থাকতেই পারে। তবু যে তারা পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে কিছু একটা দাঁড় করিয়েছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ দিতে হয়।

চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনে এর আগেরবারেও (যাওয়ার পথে) গিয়েছি। তাদের ইংরেজী ঘোষণার মান মোটেই খারাপ ছিল না। কেবিন ক্রুদের মধ্যে সবাই ইংরেজী বলতে পারে না, তবে যারা পারে তারা ভালভাবেই পারে। গুয়াংঝুতে ওরা মাত্র একটি বাক্যে ঘোষণা শেষ করেছিল, এর কারণ হয়তো হবে যাদের জন্য এ ঘোষণা, তাদের হয়তো এর চেয়ে বেশী কিছু জানার ছিল না। একটি বাক্যে হলেও, ঘোষণাটি শুদ্ধ বাক্যেই ছিল। আর বিমান বন্দরের লাউঞ্জেও দেখেছি, ট্র্যাশ বিন গুলোতে তিনটা আধার আলাদা আলাদা করে রাখা হয়েছে, যার উপরে শুদ্ধ ইংরেজীতে লেখা আছেঃ Recyclable objects- Harmful Objects- Other objects ।
জ্বী, ছবির রহস্য পরের পর্বে উম্মোচিত হবে।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা---

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোস্ট টি মন দিয়ে পড়লাম।
অনেক কিছু জানা হলো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্ট টি মন দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রীত হ'লাম।

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নান্দনিক লেখনী । মানুষ মানুষের জন্য l

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১১

খায়রুল আহসান বলেছেন: মানুষ মানুষের জন্য - জ্বী, ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যটাও মনোমুগ্ধকর।

৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: লাইফ টাইম অভিজ্ঞতা যাকে বলে !! অবশ্য সমস্ত পৃথিবী ই এমন নতুন অভিজ্ঞতার মাঝে যাচ্ছে, করোনা পরবর্তী বিশ্ব কেমন হবে সে ও আরেক বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে।
উফফফ কী পরিমাণ উদ্বেগে কেটেছে আপনার এবং আপনার পরিবারের সময়। যাক সব শেষে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে নিজ গৃহে অবস্থান করছেন এ খবর টুকু আনন্দের।

শুভ কামনা আপনাদের জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: লাইফ টাইম অভিজ্ঞতা যাকে বলে - জ্বী, এমন অভিজ্ঞতা লাভ জীবনে একবারের জন্যই যথেষ্ট। তবে আমি যে কোন পরিস্থিতি থেকে সর্বোৎকৃষ্ট প্রাপ্যটাকেই তুলে আনতে চাই। তাই এবাররের অভিজ্ঞতাটাকেও আমি নেতিবাচক বলবো না, কারণ এ অভিজ্ঞতা থেকেও আমি জীবনের সঞ্চয়ের ঝুলিতে অনেক কিছু তুলে আনতে পেরেছি, যা হয়তো আগামী একটি বা দুটি পর্বে বিবৃত হবে।
করোনা পরবর্তী বিশ্ব কেমন হবে সে ও আরেক বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে - আপনার এ পর্যবেক্ষণ অনেকটাই যৌক্তিক। তবে আমার কেন যেন মনে হয়, বিস্ময় নয়, বিভীষিকা আগামী বিশ্বের জন্য অপেক্ষা করছে।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত।

৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমার কেন যেন মনে হয়, বিস্ময় নয়, বিভীষিকা আগামী বিশ্বের জন্য অপেক্ষা করছে
হ্যাঁ , সঠিক শব্দ চয়ন বিভীষিকা ই ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ। নিরাপদে থাকুন সপরিবারে।

৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫৭

সোহানী বলেছেন: আপনি সবচেয়ে কঠিন সময়ে জার্নি করেছেন এবং সবচেয়ে কঠিন দেশের ট্রানজিট নিয়েছেন।

শুধু অস্ট্রেলিয়া নয় সারা বিশ্বেই চীনা অভিবাসী জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। নিজের দেশের অনিশ্চয়তায় ওরা যে যেভাবে পারে দেশ ছেড়ে পালায়। কানাডার কিছু প্রভিন্স এ ৮০ ভাগের উপর চীনা। ব্যবসা বানিচ্য চাকরী সব কিছুর সিংহভাগ ওদের দখলে। ইউরোপ ও সেইম। সারা বিশ্বে ওদের আধিপত্ব বেড়েই চলছে। এটাও ওদের রাস্ট্রীয় পলিসির অংশ বলেই মনে করি।

ভালো থাকুন যেখানেই থাকুন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি সবচেয়ে কঠিন সময়ে জার্নি করেছেন - জ্বী, সঠিক। বলতে পারেন, কঠিন সময়ে জার্নি করতে বাধ্য হয়েছি। অনেক হিসেব নিকেশ করেই আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন এর উপরে ভরসা রেখে এ কঠিন সময়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। হাতে আরো একান্ন দিনের ভিসার মেয়াদ ছিল, কারণ একই ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয়বার প্রবেশের পর থেকে নতুন করে তিন মাসের হিসেব শুরু হয়। কিন্তু এই একান্ন দিনে যে পরিস্থিতির আরো আবনতি ঘটতো না, সে কথা কে হলফ করে বলতে পারে? এখন তো আরো সে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে নিশ্চিত হ'লাম, যখন ই-খবরে পড়লাম যে গতকাল অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন অস্ট্রেলিয়া সফররত পর্যটকদেরকে এবং এমন কি স্টুডেন্ট ভিসায় আগত সেসব ছাত্রদেরকে যাদের পকেটে এক বছর নিজের খরচে চালানোর মত যথেষ্ট টাকাকড়ি নেই তাদেরকে, অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করে নিজভূমে ফিরে যেতে বলেছেন এ কথা বলে- "সময় ভাল হলে প্রয়োজনে আবার আসবেন"।
সবচেয়ে কঠিন দেশের ট্রানজিট নিয়েছেন - এ কথাটাও একদিক দিয়ে ঠিক, এবং এর অন্য তাৎপর্যও রয়েছে। আমি মনে করি, সেটা শাপে বর হয়েছিল দুটো কারণেঃ
১। যদি কোথাও আটকা পড়তেই হয়, তবে এই কঠিন দেশটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। নিখুঁত তাদের কর্ম-পদ্ধতি, যেটা তাদের লক্ষ্য, সেটা তারা অর্জন করেই ছাড়ে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে ওরা ক্ষুদ্রতর ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুযোগ সুবিধার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। লক্ষ্য করে থাকবেন হয়তো, এ দুটো পর্বের কোথাও আমি তাদের কোন অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করিনি, শুধুমাত্র একজন ইংরেজী না বোঝা চীনা স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া। তিনিও অসহযোগিতা করেছেন এ কথা বলা যাবেনা, কারণ তিনি তার উপর আরোপিত দায়িত্বে অনড় ছিলেন। ইংরেজী জানলে হয়তো তিনিও আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।
২। ভবিতব্য না জেনেই সেই কঠিন দেশটির এয়ারলাইনে টিকেট করেছিলাম বলেই আমি দেশে ফিরতে পেরেছি। কারণ সেই দেশটিই একমাত্র কমন দেশ যার ফ্লাইট দৈবক্রমে এখন অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ- উভয় দেশে যুগপৎ সচল। ট্রানজিট যাত্রীদের বিলম্বটাই ছিল একমাত্র কষ্ট। ওটাকে যারা সহজে আত্মস্থ করে নিতে পেরেছিলেন, তারা গুয়াংঝুতে ট্রানজিট আমার মতই উপভোগ করেছিলেন বলে আমার বিশ্বাস। কেননা, খাওয়া দাওয়াসহ যাত্রীদের যেকোন অসুবিধার প্রতি এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ সদয় ছিলেন।
এটাও ওদের রাস্ট্রীয় পলিসির অংশ বলেই মনে করি - অবস্থাদৃষ্টে এখন আমিও তাই মনে করি।
আপনার মন্তব্যে মৌলিক ভাবনা প্রতিফলিত হয়, তাই ভাল লাগে। ধন্যবাদ, মন্তব্য এবং প্লাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য।

৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৪৮

আনমোনা বলেছেন: কি উদ্বেগপূর্ণ যাত্রা। ভালো থাকুন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি তো গদ্য(গল্প)প্রেমী। আশাকরি এর আগের পর্বটাও পড়ে দেখবেন, এবং পরেরগুলোও।
অনেকদিন পর প্রাপ্ত মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

৯| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৩৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: রেস্পেক্টেড স্যার,

আজকের পর্বটি ঠিক ভ্রমণ কাহিনী নয়, মনে হলো রহস্য রোমাঞ্চে ভরা। টানটান উত্তেজনায় পড়া শেষ করলাম। আশাকরি গুয়াংজু বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হবেন। নির্মল হৃদয়ের চিনা বালাকে ধন্যবাদ। ভাষা সমস্যায় পড়া ভিনদেশী মানুষকে এভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
পাশাপাশি আরেকটি কথা বলার, মানুষের মাথার খুলির গঠন বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথিবীর সমগ্র জনগোষ্ঠীকে যে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি মঙ্গালয়েড(মঙ্গোলিয়) জনগোষ্ঠী। মূলত হিমালয় সংলগ্ন এলাকা, চীন জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার 1 বিস্তীর্ণ এলাকায় বসবাস। ভৌগলিক গত কারণে এদের জাতিগত ভিন্নতা থাকলেও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর কাছে এদেরকে সকলকে চীনা বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কারণে @মা.হাসান ভাই ও আপনার মত আমাদের সবার কাছে গায়ের রং হলুদ, চোখ নাক চ্যাপ্টা মানুষগুলি সকলকে চিনা বলেই মনে হয়।


পোস্টে সপ্তম লাইক ।

শুভেচ্ছা নিয়েন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: টানটান উত্তেজনায় পড়া শেষ করলাম - ট্রাভেলার তো টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়েই সে সময়টা অতিবাহিত করেছিলেন, সুতরাং, তার বর্ণনা পাঠ করে যদি পাঠকেরাও সে উত্তেজনা অনুভব করতে পারেন, তবেই না তার লেখা সার্থক হয়ে ওঠে। অনেক ধন্যবাদ, মনযোগ দিয়ে এ দীর্ঘ পোস্টটি পাঠ করে প্লাস সহ এখানে আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়াটুকু জানিয়ে যাবার জন্য।
আপনার স্কুলও তো নিশ্চয়ই এখন বন্ধ। ভাল থাকুন সপরিবারে, শুভকামনা।

১০| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ++++++

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

১১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৯

সোহানী বলেছেন: "আপনার মন্তব্যে মৌলিক ভাবনা প্রতিফলিত হয়, তাই ভাল লাগে।"........

মন ভালো করে দেয়ার মতো প্রতি মন্তব্য।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রীত হ'লাম।

১২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:১৩

অন্তরন্তর বলেছেন: পৃথিবীর খারাপ সময়ে আপনার ভ্রমণ ছিল শ্রদ্ধেয় ব্লগার। আপনার পোস্ট পড়া হয় কিন্তু আসলে সবসময় মন্তব্য করা হয় না। খুব সাবলীলভাবে আপনি বর্ণনা করেছেন আপনার অভিজ্ঞতা। আমি কোথাও গেলে তা গুছিয়ে লিখতে পারিনা। আপনি এখন বাংলাদেশে আছেন এবং সুস্থভাবে দেশে পৌঁছেছেন এটাই আসল কথা। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলের মঙ্গল করুন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার পোস্ট পড়া হয় কিন্তু আসলে সবসময় মন্তব্য করা হয় না - আমার পোস্টগুলো আপনার পড়া হয়, এটুকু জেনেই আমি সন্তুষ্ট। যদিও পাঠকের মন্তব্য তথা পাঠ প্রতিক্রিয়া পেতে যেকোন লেখকেরই ভাল লাগে, তথাপি আমি এ বিষয়ে খুব বেশী আকাঙ্খী নই। আমি যেমন মাঝে মাঝে অনেক লেখকের দশ বার বছরের পুরনো লেখাও খুঁজে বের করে পড়ি, আমার বিশ্বাস, আমার লেখাও বছর দশেক পরেও হয়তো কেউ কোনদিন খুঁজে বের করে পড়তে পারে। সুতরাং, এ ব্যাপারে কোন তাড়াহুড়ো নেই। আপনি এ ব্লগে সাড়ে আট বছরের পুরনো ব্লগার। আপনি তো ভাল করেই জানেন যে মন্তব্যের কিংবা 'লাইক' এর সংখ্যাধিক্য কোন লেখার মানদন্ড নয়, তবে এটা একজন ব্লগারের জনপ্রিয়তার ইন্ডিকেটর হতে পারে।
দুর্ভাগ্য যে আপনার ব্লগে অনেকদিন ধরেই কোন পোস্ট প্রদর্শিত হচ্ছে না। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও আমি আপনার লেখার সাথে পরিচিত হতে পারছি না।
ধন্যবাদ, মন্তব্য এবং প্লাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য।

১৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: পোস্ট টি মন দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রীত হ'লাম।

একমাস আগে একজন ব্লগার আমার বাসায় আসলেন। আমি উনাকে চিনি না। আমার বাসার কাছে এসে ফোণ দিলেন। আমি তাকে বাসায় নিয়ে এলাম। উনি মেলবোর্ন থাকেন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২১

খায়রুল আহসান বলেছেন: মেলবোর্নে থাকেন, এমন একজন ব্লগারের সাথে ব্লগপোস্টে মত বিনিময় হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আরেকজন ব্লগারের সাথে আমার মত বিনিময় হয়েছে ব্লগপোস্টে, কিন্তু তিনি ঠিক কোথায় থাকেন, তা জানা হয়নি।
যাকে আপনার বাসায় নিয়ে এলেন, তার নাম জিজ্ঞেস করেন নি?

১৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৫

মোঃমোজাম হক বলেছেন: এই বয়সে এমন উদ্বেগপূর্ণ যাত্রা হজম করা কষ্টকর, বিশেষকরে আপনার সঙ্গিনীর কথাই ভাবছি।তিনি নিশ্চই খুব ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন।
আপনার এই ভ্রমন কাহিনী পড়ে সত্যিই রোমাঞ্চিত হচ্ছি। পরের পর্বের জন্য প্রতীক্ষায় থাকলাম, যেমনটি একসময় মাসুদরানা সিরিজের জন্য থাকতাম B-)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: তিনি নিশ্চই খুব ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন - হ্যাঁ, তিনি ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন বটে, তবে আমাকে শান্ত থাকতে দেখে তিনি সাহস ফিরে পেয়েছিলেন।
দেশে ফিরে আসার এ সিরিজটি পড়ে আপনি রোমাঞ্চিত হচ্ছেন জেনে আমিও আনন্দিত হ'লাম। মন্তব্যে অনুপ্রাণিত।

১৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩৪

মুক্তা নীল বলেছেন:
শ্রদ্ধেয় ,
খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম আপনার এই অস্বস্তিকর জার্নি
এবং অভিজ্ঞতা । একটা বিষয় খুবই ভালো লাগলো,
এই অবস্থার মাঝেও আপনি এবং ভাবি ধৈর্যের পরীক্ষায়
হয়েছেন । ভালো ও নিরাপদে থাকুন আপনারা ।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: জার্নি টা উদ্বেগের হলেও এবং অভিজ্ঞতাগুলো বিচিত্র হলেও, শিক্ষণীয় ছিল। আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা ছিল একটা ধৈর্যের পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত সে পরীক্ষায় আমরা সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি।
ধন্যবাদ, মন্তব্য এবং প্লাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য।

১৬| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৫

জুন বলেছেন: সুন্দর সাবলীল লেখা খায়রুল আহসান। পড়লাম রুদ্ধশ্বাসে। আমি জানি না কেন কোথাও যাবার আগ পর্যন্ত খুব টেন্সড থাকি কিন্ত বাসা থেকে বের হলেই রিলাক্স। কোন কিছুতেই আর টেনশন ফিল করি না। মনে হয় যা কিছু হয় হোক। কিন্ত আমার স্বামী এত ধীর স্থির মানুষ সেই ব্যাক্তি সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও গন্তব্যে না পৌছা পর্যন্ত টেন্সড থাকে। তবে আমি কেদেছিলাম দিল্লী স্টেশনে পাসপোর্ট চুরি হয়ে যাবার পর যে হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল সেই কয়েকটি দিন তখন।
সুবার্নভুম এয়ারপোর্টে চীনা ভাষায় একটা এনাউন্সমেন্ট শুনি তার শেষ বাক্যটি থাকে "তাঞ্চি হো তাঞ্চি" এই টাইপ। গুগুলে সার্চ দিয়েও এর অর্থ বের করতে পারলাম না।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
+

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: দিল্লী স্টেশনে পাসপোর্ট চুরি হয়ে যাবার পর আপনাদের যে ভোগান্তি হয়েছিল, সেকথা আপনার একটি পুরনো পোস্ট পড়ে জেনেছিলাম, এবং ব্যথিত হয়েছিলাম।
অর্থ যাই হোক, "তাঞ্চি হো তাঞ্চি" কথাটা শুনতে তো ভালই লাগলো। অর্থও নিশ্চয়ই ভালই হবে।
ধন্যবাদ, পোস্ট পড়ে মন্তব্য এবং প্লাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য।

১৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
কঠীন সময়ের কঠীন জার্নী ,বর্ণনা সাবলীল ।
সাম্প্রতিক করুনা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ব্যবস্থাপনার হালচিত্র ও যাত্রীদের ভোগান্তির একটি চিত্র
উঠে এসেছে লেখাটতে ।
শুভেচ্ছা রইল ।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: দীর্ঘ পোস্ট। কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ডঃ এম এ আলী
করোনা ভাইরাসের মারণ ছোবল অতিক্রম করে আমরা কে কতদিন এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবো তা জানি না। তবে আমার এ সিরিজটাতে এ ভাইরাসের কারণে মানুষের কতটা ভোগান্তি হয়েছে, ফ্লাইট মিস করা যাত্রীদের মেঝেতে শুয়ে বসে রাত কাটানোর কিছুটা বর্ণনা দিয়ে তার সামান্য একটা রেকর্ড রেখে গেলাম। অন্যান্য ভোগান্তির কথা হয়তো আলাদা করে শুধু করোনা নিয়ে লেখা একটা সিরিজে উল্লেখ করবো, ইন শা আল্লাহ।

১৮| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান,




স্বাভাবিক সময়ে বার কয়েক চায়না ছুঁয়ে অন্যত্র যেতে হয়েছে । কুনমিঙ- সাংহাই কিম্বা গুয়াংজু হয়ে। এয়ারপোর্টের লোকজনদের মুখে কুলুপ আঁটা, শুধু আকার ইঙ্গিত। পদে পদে পরীক্ষা। মনে হচ্ছিলো যেন জেলখানার কয়েদী। আর আপনি গিয়ে পড়েছেন এক ক্রাইসিস কালে। কি মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যে পুলসিরাতটি পার হচ্ছেন বুঝতে পারছি।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার কাছে ওদেরকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী বন্ধুসুলভ মনে হয়েছে। কম্যুনিস্ট হলেও, কর্পোরেট সংস্কৃতি ধীরে ধীরে ওদের মাঝেও ভিত গেড়েছে। হয়তো এটা আগামীতে নিয়ন্ত্রিতভাবে হলেও, প্রসারিত হবে।
ক্রাইসিস কালে ছিলেম বলেই হয়তো বা ওদেরকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশী করে চিনতে পেরেছি। ওরা কর্তব্যপরায়ন, কিন্তু অভদ্র নয়, অন্ততঃ এবারে আমার কাছে তা মনে হয়নি।।
সময় করে এসে লেখাটি পড়ে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি, পরের পর্বগুলোও একে একে পড়ে যাবেন সময় করে।

১৯| ১৭ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৪১

করুণাধারা বলেছেন: জানিনা কিভাবে এই লেখা মিস করলাম!!! রমজান মাসে ব্লগে কম আসা হয়েছে, কিন্তু এই লেখা তো রমজান মাসের আগে লেখা...

ধন্যবাদ আপনাকে লিঙ্ক দেবার জন্য, এই করোনা কালের বিমান ভ্রমণ সম্পর্কে জানা গেল। চাইনিজরা বিদেশাগত প্রত্যেক যাত্রীকে যেভাবে পরীক্ষা করে ছেড়েছে, জেনে অবাক হলাম। আমাদের বিমান ফ্লাইট শুরু করেছে, ঠিক কিভাবে ওরা নিশ্চিত হচ্ছেন যে কোন যাত্রী কোভিড আক্রান্ত কিনা, তা যাচাইয়ের মাপকাঠি জানিনা...

আপনার বর্ণনায় কোন ফাঁকফোকর ছিল না, খুঁটিনাটি সব কিছুর বর্ণনা এত নিখুঁত ভাবে দিয়েছেন যে সমস্ত কিছু মনে হচ্ছিল দেখতে পাচ্ছিলাম। মোবাইলে ঘড়ির ছবির রহস্য জানতে আগ্রহী, দেখি আগামী পর্বে গিয়ে।

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মেয়েটিকে খুব ভালো লাগলো। আসলে সবাই কখনো খারাপ হতে পারে না, সেটা যে কোনো জাতি বা সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রুদ্ধ শ্বাসে পড়া কাহিনীর শেষে মেয়েটি এক ঝলক হাওয়া হয়ে এলো...

১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: যাক, কিছুটা দেরীতে হলেও পড়েছেন এবং পড়ে একটা সুন্দর মন্তব্য রেখে গেছেন, প্লাসও দিয়েছেন, এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি যে আড়াই দিন গুয়াংঝু বিমান বন্দরে আটকা পড়েছিলাম, সে সময়টুকুতে আমি মনে মনে নিশ্চিত ছিলাম যে অন্ততঃ ওখানে থাকতে আমরা করোনাক্রান্ত হবো না। ওদের যান্ত্রিকভাবে নিয়ম পালন এবং নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থাপনা দেখে আমার সিক্সথ সেন্স বলছিল, কেউ যদি আগে থেকে আক্রান্ত না হয়ে আসে, তবে ওখানে থাকা কালে তার আর আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই। তাই ওখানে যতক্ষণ ছিলাম, বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলাম। এবং আনন্দেও ছিলাম। কেন, তা পরের তিনটি পর্ব (৪,৫,৬) পড়লেই বুঝতে পারবেন।
আপনার বর্ণনায় কোন ফাঁকফোকর ছিল না, খুঁটিনাটি সব কিছুর বর্ণনা এত নিখুঁত ভাবে দিয়েছেন যে সমস্ত কিছু মনে হচ্ছিল দেখতে পাচ্ছিলাম - আমি সাধারণতঃ চেষ্টা করে থাকি, এ দু'চোখ দিয়ে যেটুকু দেখি তার সবটুকুই আমার লেখায় উল্লেখ করে রাখতে। কারণ, একটি ছোট্ট কথায়ও একটি গল্প লুকিয়ে থাকতে পারে এবং আর কিছুদিন পরে হয়তো চেষ্টা করলেও অনেক কিছুই স্মরণ করতে পারবো না।
মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মেয়েটিকে খুব ভালো লাগলো - আমাদের মাঝেও এমন অনেক বাঙালি মেয়ে আছে না, যারা মেধাবী কিন্তু তাদের চেহারা দেখে তা বোঝা যায় না, যারা মানবিক, কিন্তু ততটা সামাজিক নয় যা দেখে কেউ তাদের এই গুণের গভীরতা ঠাহর করতে পারবে, যারা নিরহংকার এবং নীরবে পরোপকারী, সেই মেয়েটি ছিল সে রকম।

২০| ১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৩০

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:



এখানে সবিনয়ে বলে রাখি যে, বর্তমান পাঠকের জন্য লেখাটি দীর্ঘ হলেও ভ্রমণের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সময়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে। একসময় অমূল্য দলিল হবে, হয়তো আপনার জন্য নয় - অনাগত পাঠক এবং পরিবারের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।

অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত চৈনিকদের হতাশায় স্বদেশে ফেরা, কেবিনক্রুদের মুখে হাসি না থাকা, সহযাত্রীর সাথে কথোপকথন, প্যান্ডেমিকের কারণে অনাকাঙিক্ষত স্বাস্থ্যপরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতার কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয়গুলো একসময় কালজয়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: "একসময় অমূল্য দলিল হবে, হয়তো আপনার জন্য নয় - অনাগত পাঠক এবং পরিবারের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য" - পোস্টের এমন একটি চমৎকার মূল্যায়নে অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হ'লাম। অনেক ধন্যবাদ এতটা মন দিয়ে পোস্টটা পড়ে এমন উদারভাবে মূল্যায়ন করার জন্য।
আপনার মন্তব্যটা সময়মতই পড়েছিলাম, সেটা লাইকও করেছিলাম, কিন্তু কিভাবে যেন উত্তর দেয়াটা মিস হয়ে গিয়েছিল। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.