নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
এর আগের পর্বটি দেখতে পাবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে.... (২)
অবশেষে আমাদের “স্বাস্থ্য পরীক্ষা”র জন্য ডাক এলো। আমাদের পিছে পিছে সেই চীনা সাহায্যকারী মহিলাও ছিলেন। তিনি কাছাকাছি আছেন দেখে একটু ভরসা পাচ্ছিলাম। আমি আর গিন্নী পাশাপাশি দুটো টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে উপবিষ্ট হ’লাম। দুটো টেবিলেরই ওপারে চীনা স্বাস্থ্য দপ্তরের দু’জন নারী বসা। আমরা আমাদের পাসপোর্ট এবং সাথে থাকা অন্যান্য কাগজপত্র মেলে ধরলাম। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম, তাদের কাছে রক্ত নেয়ার কোন সরঞ্জামাদি আছে কিনা। দেখলাম, নেই। ভাবলাম, এখান থেকে ওনারা হয়তো আমাদেরকে কোন মেডিকাল ইন্সপেকশন রুমে পাঠাবেন। ওনারা স্পষ্ট ইংরেজীতে আমাদেরকে কিছু মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। কোন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছি কিনা জিজ্ঞেস করলেন। গত ১৪ দিন কোথায় কোথায় ছিলাম, তা জানতে চাইলেন। তারপর হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে যেতে বললেন। সেই কাগজটিতে চীনা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজীতে লেখা ছিলঃ “The passenger has passed quarantine procedure”। জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবো? নিকটস্থ দাঁড়ানো একটা লোককে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ওদিকে। যাবার আগে চারিদিকে তাকিয়ে সেই চীনা সাহায্যকারী মেয়েটাকে খুঁজলাম, কিন্তু কোথাও তার দেখা পেলাম না। দুঃসময়ে তার কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যের ঋণ জীবনে ভোলার নয়। ঠান্ডা, শান্ত শিষ্ট আচরণের সেই মেয়েটি আমার অন্তরে একজন স্নেহাস্পদের আসন গড়ে নিয়েছিল। তাকে অন্ততঃ মৌখিকভাবে একটা ধন্যবাদ জানাতে পারলে শান্তি পেতাম, অন্তরে তো বহুদিন তার জন্য দোয়া থাকবেই। জীবনে চলার পথে আমরা এমনিভাবে কতজনের সাথে দয়ামায়া, স্নেহভালবাসা, সাহায্য-সহমর্মিতার ঋণে আবদ্ধ হয়ে যাই, অথচ তার জন্য কোন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়না, কৃতজ্ঞতাবোধটুকুও অপ্রকাশিতই রয়ে যায়!
ট্রান্সফার ডেস্ক হয়ে আমরা চেক-ইন কাউন্টারের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম। টিমটিমে আলোয় দেখতে পেলাম, কাউন্টারে একজন নারী এবং একজন পুরুষ তাদের ল্যাপটপ খুলে বসে আছেন। আমরা পুরুষটির দিকে অগ্রসর হ’লাম। উনি আমাদের পাসপোর্ট এবং বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে অদূরে রাখা চেয়ারে বসতে বলে ল্যাপটপে মনোনিবেশ করলেন। ওনার ভাবসাব দেখে মনে একটা ক্ষীণ আশার সঞ্চার হলো, হয়তো কানেক্টিং ফ্লাইটটা ডিলেয়েডও হতে পারে, উনি হয়তো ল্যাপটপে আমাদের তথ্য সংযোজন করছেন। একটু পরে উনি আমাদের ডেকে বললেন, আপনারা একই ফ্লাইটে যাবেন, কিন্তু ৪৮ ঘন্টা পর। আপনাদের আজকের যে ফ্লাইটে যাবার কথা ছিল, সেটা এখন আকাশে, ঢাকার পথে। ফ্লাইট মিস হতে পারে, সেটা মাথায় ছিল, কিন্তু ৪৮ ঘন্টা বিরতির কথা শোনার পর মাথায় নতুন করে বজ্রাঘাত হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমরা এখন কোথায় থাকবো? উনি বললেন, এয়ারপোর্ট ট্রাঞ্জিট লাউঞ্জে, সেখানে চায়না সাউদার্ন এর জন্য আলাদা জায়গা চিহ্নিত করা আছে, সেখানেই আপনারা থাকবেন। আমি বললাম, যেহেতু আমাদের কোন ত্রুটির কারণে আমরা ফ্লাইট মিস করিনি, সেহেতু এ পরিস্থিতিতে আমাদের খাওয়া দাওয়া এবং হোটেল ব্যবস্থা তো এয়ারলাইনেরই করার কথা। উনি বললেন, জ্বী তা করার কথা এবং আপনি চাইলে তা আমরা করতেও পারি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে হোটেলগুলো সব বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থিত। ভেতরেও একটা ট্রানজিট হোটেল ছিল, কিন্তু চীন সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সেটাকে কোয়ারেন্টাইন হসপিটালে পরিণত করা হয়েছে। এয়ারপোর্টে যেসব যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদেরকে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোন যাত্রী একবার বিমান বন্দরের বাইরে গেলে ১৪ দিন হেলথ কোয়ারেন্টাইনে কাটানোর আগে তিনি আবার বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন না। এখন আপনিই ঠিক করুন আপনি কোথায় থাকবেন। দিস ইজ স্পেশাল সিচুয়েশন, ইউ সী!
বুঝলাম, গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়েছি। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা এয়ারপোর্টে কাটাতে হবে শুনে গিন্নীও মুষড়ে পড়লেন। সেটা দেখে আমিও অনেক দুর্বল বোধ করতে থাকলাম। মনে মনে আবার সেই আপ্তবাক্য আওড়ালাম, “carpe diem”, “carpe diem”! গিন্নীকে প্রবোধ দিতে থাকলাম, এ মুহূর্তে মন শক্ত করো। মন ভেঙে পড়লে শরীরও অচিরেই ভেঙে পড়বে, তাতে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করবে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের খাওয়া দাওয়ার কী ব্যবস্থা? উনি বললেন, আমি দুঃখিত যে এ মুহূর্তে আমাদের মীল টাইম অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আজ রাতের জন্য কোন মীল দিতে আমরা অপারগ। তবে আপনি যেখানে থাকবেন, সেখানে স্ন্যাক্স জাতীয় কিছু খাদ্য এবং পানীয় সব সময়ের জন্য ফ্রী পাওয়া যাবে। আগামীকাল এবং পরশু আপনাদেরকে লাঞ্চ এবং ডিনার সার্ভ করা হবে, কোন ব্রেকফাস্ট নয়। কথা পরিস্কার, তাই পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও আপাততঃ আশ্বস্ত হ’লাম। লোকটা ওয়াকি টকিতে একজন নিরাপত্তা কর্মীকে ডেকে এনে বললেন, ওনাদের ক্যারী-অন লাগেজগুলো পুনরায় স্ক্রীনিং করিয়ে নাও। এ কথা শুনে মনে পড়ে গেল, মেলবোর্নে চেক-ইন করার সময় কাউন্টারের মহিলা আমাকে চেক-ইন লাগেজের ট্যাগগুলো বোর্ডিং পাসের সাথে আটকে দিয়ে বলেছিলেন, এগুলো সরাসরি ঢাকায় চলে যাবে। গুয়াংঝুতে আপনার এসব খোঁজ করার প্রয়োজন নেই। মনে শঙ্কা জাগলো, লাগেজগুলো যদি ঢাকায় চলে যায়, তবে সেগুলো আনক্লেইমড লাগেজ হিসেবে লাগেজ কোয়ারেন্টাইনে চলে যাবে। পরে সেখান থেকে সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করা আমার জন্য জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আমি মনে এই শঙ্কা নিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের চেকড-ইন লাগেজগুলোর কী হবে? উনি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ওগুলো এখানেই থাকবে এবং আপনার সাথে একই ফ্লাইটে যাবে। কিন্তু কেন যেন আমি তার এ আশ্বাসের উপর ভরসা রাখতে পারলাম না। মনে হলো, উনি আমাকে বুঝ দেয়ার জন্যেই এ কথাগুলো বলেছেন।
সেই নিরাপত্তা কর্মীর পিছু পিছু হেঁটে আমরা পুনরায় একটি তল্লাশী এলাকায় প্রবেশ করলাম। সেখানে আমাদের হ্যান্ড লাগেজ এবং আমাদের দেহ তল্লাশী করা হলো। তারপরে আমাদেরকে আরেকজন মহিলা নিরাপত্তা কর্মীর কাছে হস্তান্তর করা হলো। উনি আমাদের বোর্ডিং পাস চাইলেন। সেগুলো তিনি তার হাতে নিয়ে আমাদেরকে অনুসরণ করতে বললেন। আমরা ট্রানজিট এরিয়াতে চলে এলাম। সেখানে দায়িত্ব পালনরত আরেকজন মহিলার কাছে তিনি আমাদের বোর্ডিং পাস দুটো এবং আমাদেরকে হস্তান্তর করে উনি চলে যাচ্ছিলেন। আমি ওনাকে আমাদের বোর্ডিং পাস দুটোর কথা জিজ্ঞেস করলাম। উনি বললেন, ও দুটো কাউন্টারে রক্ষিত থাকবে। আমি কাউন্টারের মহিলার দিকে তাকালাম। উনিও একই কথা বলে আমাকে আশ্বস্ত করলেন। তারপর উনি আমাদেরকে ফিতে দিয়ে ঘেরা একটি এলাকার ভেতর প্রবেশ করিয়ে দিয়ে বললেন, আপনারা এ দু’দিন এখানেই থাকবেন। আর এ এলাকার প্রবেশ মুখে ২৪ ঘন্টা আমি অথবা আমাদের কোন স্টাফ থাকবে। আপনাদের যে কোন প্রয়োজনে আমাদেরকে জানাবেন, আমরা যথসাধ্য চেষ্টা করবো আপনাদেরকে সাহায্য করতে। কিছু রিক্লাইনিং ইজী চেয়ার দেখিয়ে বললেন, আমি জানি আপনারা ক্লান্ত। এসব চেয়ারে বসে চেয়ারের সাথে সংযুক্ত মেশিন দিয়ে আপনারা ব্যাক, নেক এবং কাফ মাসল ম্যাসেজ করিয়ে নিতে পারবেন, তবে তার জন্য একটা QR Code আপনাদের সেলফোনে কপি করে নিতে হবে। আমি তাকে বললাম, অন্য কোন কিছুর আগে এখন আমার প্রয়োজন ওয়াই ফাই সংযোগ। এখানে দেখলাম যে লেখা আছে ফ্রী ওয়াই ফাই সংযোগ পাওয়া যাবে, কিন্তু আমি তো পাচ্ছি না। উনি একটা কাউন্টার দেখিয়ে বললেন, ওখান থেকে আগে পাসপোর্ট স্ক্যানিং করিয়ে আনতে হবে। আমি জানি, আমার জন্য এসব ঝামেলার ব্যাপার, তাই আমি এ ব্যাপারে তার সাহায্য চাইলাম। উনি হাসিমুখে তা করে দিলেন। আমার দেখাদেখি গিন্নীও তার সেলফোনটা এগিয়ে দিলেন। মহিলা আমার কাছ থেকে তার পাসপোর্ট টা চেয়ে নিয়ে তারটাও করে দিলেন। আমরা উভয়ে আমাদের সেলফোনে ওয়াই-ফাই সংযোগ পেলাম।
ওয়াই-ফাই সংযোগ পাবার পর গিন্নী ভেবেছিলেন, যতক্ষণ ঘুম আসবেনা, ততক্ষণ তিনি অন্ততঃ ফেইসবুকিং করে সময় কাটাতে পারবেন। কিন্তু উনি তো জানতেন না যে চীনে ফেইসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার, সবই অচল। আমি তা জানলেও ঐ মুহূর্তে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। আমরা দু’জনেই এসব ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যর্থ হ’লাম। তখন আমার স্মরণ হলো যে এসব এখানে ব্যবহার করা যাবেনা। গিন্নীকেও তা জানালাম। ইতোমধ্যে কাউন্টারের স্টাফ এর শিফট পরিবর্তন হলো। প্রথমে যিনি ছিলেন, তিনি ভাল ছিলেন, খুব হেলপফুল ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, তার সাথে ইংরেজীতে কমিউনিকেট করতে কোনই অসুবিধে হচ্ছিল না। পরে যিনি এলেন, তিনি ওনার তুলনায় একটু গম্ভীর প্রকৃতির। আমার সেলফোনের চার্জ শেষ হয়ে এসেছিল। ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় চার্জ দেয়া যাবে। উনি দূরে কয়েকটি চেয়ার দেখিয়ে বললেন, ওখানকার চেয়ারগুলোর হাতলের নীচে প্লাগ-ইন এর ব্যবস্থা রয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম, একটাতেও আমার প্লাগ ফিট হচ্ছেনা। ফিরে এসে ওনাকে বললাম। উনি উঠে আমাকে নিয়ে আবার সেখানে গেলেন। উনি নিজেও চেষ্টা করে দেখলেন, কিন্তু ফিট করতে পারলেন না। তখন উনি বুদ্ধি করে প্লাগ থেকে আমার USB Port টা খুলে শুধুমাত্র USB Port লাগানোর জন্য একটি কানেকশন পয়েন্টে সেটা লাগিয়ে দিলেন। পরে আমি নিজেই কিভাবে সেটা লাগাবো, সেটাও দেখিয়ে দিলেন।
ফোন চার্জ করে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ইন্টারনেট ব্রাউজিং এ মনোনিবেশ করলাম। কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না বলে ভাল লাগছিল না। ই-মেইল খোলার সাথে সাথে ঢাকা থেকে ছোট ছেলের পাঠানো একটি মেইল পেয়ে বোধোদয় হলো যে অন্ততঃ এখান থেকে ই-মেইলে সবার সাথে যোগাযোগ করা যাবে। ছেলে মেইলে একটা ছবি সংযুক্ত করে লিখেছে (বঙ্গানুবাদ), “বাবা, এটা আমার কলীগ রাফিদ এর WeChat এর একটা QR Code, চীনে সবাই কমিউনিকেশন এর জন্য এই এ্যাপ টা ব্যবহার করে। তুমি কারো সাহায্য নিয়ে এই কোডটা স্ক্যান করে আমার কলীগের সাথে প্রয়োজনে WeChat এ যোগাযোগ করতে পারো”। আমি এর আগে QR Code কিংবা WeChat, কোনটার সাথেই পরিচিত ছিলাম না। অগত্যা আবার সেই কাউন্টারের মহিলার সাহায্য চাওয়া! ওনার কাছে গিয়ে দেখি উনি নিজেও সেলফোনে কার সাথে যেন চ্যাট করছেন, এবং চীনে চ্যাট করার একমাত্র উপায় WeChat। ভেবেছিলাম, উনি বিরক্ত হবেন, কিন্তু না, উনি মোটেই তা হলেন না। উনি আমার সেলফোনটা চাইলেন, অনেকক্ষণ ধরে এটা ওটা করে অবশেষে ফোনটি আমার হাতে ফেরত দিয়ে বললেন, আপনারটা আই-ফোন। আই-ফোনে কিছু সমস্যা হয়, কোডটার সাথে কানেক্ট করতে পারলাম না। আমি বিফল মনোরথ হয়ে আমার জায়গায় ফিরে এলাম।
একটু পরে সেই মহিলা হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এলেন। আমাকে জানালেন, আমার মেইল থেকে তিনি কোডটা ট্রান্সফার করে ওনার নিজের সেলফোন থেকে কানেক্ট করার চেষ্টা করছিলেন এবং কেউ একজন কলটা ধরেছেন। এই বলে উনি ওনার ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি এক অপরিচিত মুখ দৃশ্যমান। হ্যালো হ্যালো করতেই উনি সালাম দিয়ে বললেন, আঙ্কেল আমি আপনার ছেলের বন্ধু রাফিদ। ছেলের বল্ধু বলাতে আমি তাকে তুমি করেই সম্বোধন করে সংক্ষেপে আমার বৃত্তান্ত বললাম এবং সেসব তথ্য আমার ছেলেকে জানিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। সে বললো, ঠিক আছে আঙ্কেল আমি অবশ্যই তাকে বলবো, কিন্তু আপনি একটু অপেক্ষা করেন, আমি ওর সাথে কানেক্ট করার চেষ্টা করছি। আমি ফোনটা ধরে থাকলাম, একটু পরেই আমার ছেলের কন্ঠে “হ্যালো বাবা” ডাকটা শুনতে পেলাম। সেই সাথে ওর চেহারাটাও ফোনের পর্দায় ভেসে উঠলো। ওর চেহারাটা দেখে এবং ওর সাথে কথা বলে জানটা ঠান্ডা হলো। হোয়াটসএ্যাপে আমাদের একটা ফ্যামিলী গ্রুপ আছে, যেটার মাধ্যমে আমরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকি। আমি ওকে সবিস্তারে সব বৃত্তান্ত জানিয়ে বললাম কথাগুলো ফ্যামিলী গ্রুপে জানিয়ে দিতে, যেন ছেলেরা, বৌমারা, সবাই সবকিছু জানতে পারে। বিশেষ করে মেলবোর্নে থাকা ছেলেকে যেন সে রাতেই ফোন করে জানিয়ে দেয়, কারণ আমি জানি ওখানে তখন প্রায় শেষরাত হলেও ওরা দু’জনেই আমাদের একটা খবর পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে জেগে থাকবে। পরে জেনেছি, সে রাতে কথা বলার সময়ে আমার ছোট ছেলে কোনরকমে আমার ছবির একটা স্ক্রীনশট নিয়েছিল। সে ছবিটাতে আমার পুরো মুখ আসেনি, চুল থেকে নাকের নীচ পর্যন্ত এসেছিল। ও সেটাই ফ্যামিলী মেইল গ্রুপে পোস্ট করেছিল। ঐ অর্ধেক মুখের ছবিটা দেখেই সবাই খুশী হয়েছিল এবং তার পরদিন সকালে দেখি ছেলেদের কাছ থেকে অনুরোধ এসেছে, ‘মায়ের ছবি পাঠাও’।
ছেলের সাথে কথা বলার পর মনে ভীষণ শান্তি অনুভব করেছিলাম। এই শান্তি শান্তি ভাব নিয়েই ইজী চেয়ারে বসে ঘুমাবার প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। চেয়ারে বসে মনে হলো, চায়না সাউদার্নের সেই স্টাফের কথাটা- “আমি জানি আপনারা ক্লান্ত। এসব চেয়ারে বসে চেয়ারের সাথে সংযুক্ত মেশিন দিয়ে আপনারা ব্যাক, নেক এবং কাফ মাসল ম্যাসেজ করিয়ে নিতে পারবেন”। আমি ঊঠে কাউন্টারের মহিলার কাছে গিয়ে বললাম, আমরা চেয়ার-ম্যাসেজ নিতে চাই, কিন্তু QR Code এর সাথে পরিচিত নই। উনি একটুও বিরক্ত না হয়ে উঠে এলেন এবং ওনার ফোন দিয়ে দুটো চেয়ারের ম্যাসেজ মেশিন চালু করে দিলেন। ম্যাসেজ শেষে আমরা অনুভব করলাম, শরীরের ব্যথা বেদনা সব দূর হয়ে গেছে। আমরা যে জায়গাটায় ঘুমাবো বলে মনস্থির করলাম, সেটা একটা স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের সংলগ্ন ছিল, যার বাইরেই এয়ারপোর্টের রানওয়ে, টারম্যাক এবং বোর্ডিং ব্রীজ টারমিনাল দেখা যায়। সারারাত চারিদিকে উজ্জ্বল আলো জ্বলে, প্লেন আসে, প্লেন যায়। আমার অবশ্য আলোতে ঘুমাতে মোটেই অসুবিধে হয় না, প্যান্ট শার্ট পরে ঘুমাতেও অসুবিধে হয় না, কিন্তু গিন্নীর কথা ভেবে চিন্তিত হচ্ছিলাম।
ট্রানজিট এলাকায় প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম, একেবারে কাচের দেয়াল ঘেঁষে একটি জায়গায়, মেঝেতে একটি বিছানার চাদর বিছিয়ে দু’জন মহিলা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওনাদের সাথে কম্বল বালিশও ছিল, খুব সম্ভবতঃ ওনারা ব্যাকপ্যাকার। এলাকাটিতে চায়না সাউদার্নের এর সেই স্টাফ ছাড়া ওনারা দুইজন এবং আমরা দুইজন, এই চারজনই সে রাতে উপস্থিত ছিলাম। মহিলা দু’জনের একজন মধ্যবয়স্কা, তিনি শ্বেতাঙ্গিণী, ককেইশান। তার সাথের জনের বয়স আনুমানিক ২৫/৩০ এর মধ্যে হবে, কিন্তু তিনি শ্যামাঙ্গিণী। যেহেতু আমরা সবাই একই মেঝেতে ঘুমাবো, আমরা দু’জনেই তাদের সাথে হ্যালো বলে পরিচিত হয়ে নিলাম। জানলাম, ওনারা আমেরিকান, যাবেন লস এঞ্জেলিস এ। ওনাদের ট্রানজিট ৩৪ ঘন্টার জন্য, যাবেন পরের রাত নয়টায়। ওনারা এতক্ষণ আমাদের দুর্গতির কথা কান পেতে শুনছিলেন বলে মনে হলো, কারণ ওনারা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনভাবে ওনারা আমাদেরকে সাহায্য করতে পারেন কিনা। আমি ধন্যবাদ দিয়ে না বলাতে ওনারা আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে খুবই আন্তরিকতার সাথে বললেন, আমরা যদি চাই, তবে ওনারা আমাদেরকে সে রাতের জন্য একটা কম্বল আর একটা বালিশ ধার দিতে পারেন। আমি ওনাদের এ কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। ওনারা বলেন কি! করোনার ভয়ে সবাই ঘন ঘন হাত ধুচ্ছে, একে অপরের থেকে ৫/৬ ফুট দূরত্বে অবস্থান করছে, নাকে মুখে মাস্ক লাগাচ্ছে, হাতে গ্লাভস লাগাচ্ছে, আর ওনারা এই অপরিচিত দু’জন ভিনদেশীকে কম্বল আর বালিশ অফার করছেন? একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম তাদের এ প্রস্তাবের কথা শুনে। শুধু বিনয়ের সাথে না করলাম, কিন্তু যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারলাম না।
আমরা শুয়ে পড়লাম, অনেকক্ষণ পর হাল্কা ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। হঠাৎ শুনি, একটি পুরুষ কন্ঠ এবং দু’টি নারীকন্ঠ কথা বলছে। চোখ বন্ধ করেই তাদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম, নতুন ট্রানজিট যাত্রী এসেছে। ওদের কথাবার্তা শুনে গিন্নীও জেগে গিয়েছিলেন। একটু পরে ওনারা মেঝেতে শুয়ে পড়লেন, মহিলা দু’জন পাশাপাশি, পুরুষটি একটু দূরে। গিন্নী আমাকে জেগে থাকতে বলে ওযু করতে গেলেন। পুরুষটি খানিক পর আমার কাছে উঠে এসে বললেন, ওনারা অস্ট্রেলিয়ান, এসেছেন ক্যাম্বোডিয়া ও লাওস সফর করে, যাবেন সিডনীতে, পরের দিন রাত সাড়ে নয়টায়। ওনার স্ত্রীর ঠান্ডা লাগছে। ঠান্ডা লাগলে ওনার নাক দিয়ে পানি পড়ে, আর নাক দিয়ে পানি পড়লে ওনাদের পরের দিনের যাত্রা বাতিল হতে পারে। উনি অনুরোধ করে জানতে চাইলেন, আমরা ওনার স্ত্রীকে গলায় পেচানোর জন্য স্কার্ফ জাতীয় কোন কিছু দিয়ে সাহায্য করতে পারি কিনা। সম্ভবতঃ আমার স্ত্রীর মাথায় হিজাব দেখে তিনি অনুমান করেছিলেন, তার কাছে এক্সট্রা স্কার্ফ থাকতে পারে। আমি তাকে বললাম, আমার স্ত্রী ওয়াশরুমে গেছেন। উনি ফিরে এলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করবো। যদি থাকে, তবে অবশ্যই দিব। গিন্নী ফিরে এলে আমি তার কাছে কথাটা পাড়লাম। উনি বললেন, দেখো, লস এঞ্জেলিসের সেই মহিলা দু’জন আমাদেরকে কম্বল ও বালিশ পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলেন, আর এনারা তো শুধু একটা স্কার্ফ চাচ্ছেন। কোন ব্যাপার না, এই বলে তিনি সাথে থাকা ক্যারী অন লাগেজ থেকে একটা স্কার্ফ বের করে আমাকে বললেন, যাও দিয়ে আসো। আমি ভদ্রলোককে ডেকে সেটা তাকে দিলাম। উনি অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেটা নিয়ে গিয়ে তার ঘুমন্ত স্ত্রীর গলা থেকে বুক পর্যন্ত ঢেকে দিলেন। চরম দুঃসময়ে এসব ছোট ছোট মানবিকতার স্মৃতি আমার সঞ্চয়ে জমা হতে থাকলো, যা আমি আমার পাঠকদের জানানোর ইচ্ছে সংবরণ করতে পারলাম না।
ঢাকা
০৪ এপিল ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ২২৪৬
আমাদের ট্রানজিট অবস্থান থেকে ইজী চেয়ারে বসে কিংবা শুয়ে থাকলে মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে মোটা কাঁচের দেয়ালের বাইরের এসব দৃশ্য দেখতাম। সারা দিন, সারা রাত ধরে বিভিন্ন আকার ও প্রকারের প্লেন আসতো, যেত। বোর্ডিং ব্রীজে লাগানো চায়না সাউদার্নের এই সম্মুখের প্লেনটির ভ্যাকুয়াম ক্লীনিং চলছিল। প্লেনটি রাতে অকল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এসব চেয়ারে বসে বাইরের দৃশ্য দেখতাম, একই সাথে সেলফোনের সাহায্যে কিউ আর কোড দিয়ে চেয়ারের ডান হাতলে রাখা ঐ ছোট্ট মেশিনটি চালু করে ঘাড়, পিঠ কোমর এবং পায়ের কাফ মাসল ম্যাসেজ করানো যেত।
পিপিই (PPE) পরিহিত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত বাইয়ুন বিমানবন্দর, গুয়াংঝু এর স্টাফ।
একজন মুসাফির
শত ক্লান্তির মাঝেও এদের নির্মল হাসি মনকে প্রফুল্ল করতো।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২১
খায়রুল আহসান বলেছেন: দুঃসময়ে এই স্মৃতিগুলো একদিন কোন একটি মহৎ কাজের অনুপ্রেরনা দিবে - তা অবশ্যই দিতে পারে, স্বপ্নের শঙ্খচিল।
পোস্ট পড়ে প্রথম মন্তব্যটি রেখে যাবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৭
সোহানী বলেছেন: ও মাই গড! ৪৮ ঘন্টা এয়ারপোর্টে। তার উপর দীর্ঘ হ্যাসেল শেষে!!! আমি ভাবতেই পারছি না। জানি, এছাড়া আপনাদের করার কিছুই ছিল না।
জীবনে একবারেই ১৪ ঘন্টা ছিলাম দুবাই এয়ারপোর্টে, গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড। আমি এয়ারপোর্ট হোটেল নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাথে যেহেতু বড় বড় বসেরা ছিলেন এবং উনারা যেতে চান নাই তাই আমার পক্ষে একা যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেই ১৪ ঘন্টা আমার কাছে বিভীষিকা মনে হয়েছিল। এরপর থেকে যত ঝামেলাই থাকুক ট্রানজিট বেশী কোনভাবেই নেই না।
আর সত্য যে, কখন কে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে তা আপনি হয়তো জানেন না। এ সাহায্যটুকুর জন্যই তো আমরা হিউম্যান পশু নয়। আমার জীবনে এরকম সাহায্য পেয়েছি অসংখ্যবার।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: জানি, এছাড়া আপনাদের করার কিছুই ছিল না - পরিস্থিতি যখন এরকম হয়, যখন পরিস্থিতি পরিবর্তনে নিজের করার কিছুই থাকে না, তখন 'Try to make the best out of the situation'। আমিও তাই করে চলেছিলাম। সেটাই আমাকে সক্রিয় রেখেছিল।
এরপর থেকে যত ঝামেলাই থাকুক ট্রানজিট বেশী কোনভাবেই নেই না - আমার হিসেবে, ৪/৫ ঘন্টার ট্রানজিট নিরাপদ, ৫/৬ ঘন্টা পর্যন্ত সহনীয়। তিন ঘন্টার কম হলে, যদি অরিজিনাল ফ্লাইট সামান্যও বিলম্বিত হয়, তবে বিপদ হতে পারে।
আর সত্য যে, কখন কে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে তা আপনি হয়তো জানেন না। এ সাহায্যটুকুর জন্যই তো আমরা হিউম্যান পশু নয়। আমার জীবনে এরকম সাহায্য পেয়েছি অসংখ্যবার - কথাটা ঠিক বলেছেন। আমিও পেয়েছি বহুবার। তার কিছু কিছু আমার ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে উল্লেখও করেছি। আমেরিকার ডালাস Fortworth International Airport (DFW) এ একবার আটকা পড়েছিলাম প্রায় ২৪ ঘন্টারও বেশী, হঠাৎ করে তাদের সব কম্পিউটার বিকল হয়ে যাবার জন্য। ঘন্টায় ঘন্টায় ঝাঁকে ঝাঁকে প্লেন এসে নামছিল ডালাসের রানওয়েতে, কিন্তু তারা আর ফিরে যেতে পারছিল না। সমগ্র বিমান বন্দর লাউঞ্জ যাত্রীদের ঠাসাঠাসিতে অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। ঐ সময়ে ভ্যালেরী নামে একজন আমেরিকা মহিলা এবারের সেই চীনা তরুণীটির মতই আমাদেরকে অসামান্য সাহায্য করে ঋণের বাঁধনে বেঁধেছিল। সে অভিজ্ঞতাটি নিয়ে এ ব্লগেই আমি একটা পোস্ট লিখেছিলাম। সেটা আপনি পড়েন নি বলে সেটার লিঙ্ক এখানে দিলামঃ
অজানা পথে অচেনা সাথী, স্মৃতির আকরে আজো আছে গাঁথি...... । আশাকরি, এটাও একসময় পড়ে দেখবেন।
প্রথম প্লাস এবং দ্বিতীয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত।
৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৫৪
তানভীরএফওয়ান বলেছেন: je kono bipod apode dui rakat namaz pore ALLAH kache sahajjo chapen.THANKS.
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী, ধন্যবাদ।
রুকু ও সিজদাহ এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন এর নিকট ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা মুশকিল আসানের সর্বোত্তম পন্থা। তবে বসে বসে মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করলেও তিনি সাড়া না দিয়ে পারেন না। সার্বভৌম সে সত্ত্বার কাছে অনুগত প্রাণের আকুল আবেদন কখনো বিফলে যায় না।
৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৯
মা.হাসান বলেছেন: ৪৮ ঘন্টা এয়ারপোর্টে অবস্থান ভয়াবহ ব্যাপার। তবে আপনি ১৪ দিন চিনে ফ্রি থাকার একটা সুযোগ মনে হয় হাত ছাড়া করলেন।
আইফোনে ফেসটাইম নামে একটা অপশন আছে, ভিডিও চ্যাটের জন্য , তবে আপনার ছেলেরও আই ফোন থাকা দরকার সেক্ষেত্রে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর, দশ মাস চেষ্টা করেও আমাদের মাননীয় পোস্ট ও টেলিকম মন্ত্রী (প্রাক্তন আই সি টি মন্ত্রী) আপনাকে ভিপিএন এর ব্যবহার শেখাতে পারেন নি , ফোনে ভি পি এন থাকলে সম্ভবত চিনা এয়ারপোর্টে যাওয়া-আসার সময় দু দফায় আপনার এই কষ্ট হতো না।
সুসময়ে অনেকেই হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। দুঃসময়ে হাত বাড়াতে কলিজা লাগে।
এই দুর্যোগ কালে চারিদিকে মানুষের নিষ্ঠুরতা আর লোভের কথা শুনে খুব খারাপ লাগে। ভাইরাসে মানুষ যত মারা যাচ্ছে, মানবতার মৃত্যু তার চেয়ে বেশি হচ্ছে, অথচ এটাই সময় ছিলো মনুষত্বের প্রসার ঘটানোর।
সহযাত্রি মেয়েটি, এয়ারপোর্টের স্টাফ এবং আটকা পড়া মানুষগুলোর আচরনের সুন্দর অংশগুলো খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আগের পর্বের ছবির রহস্য কবে উম্মোচন হবে?
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: ১৪ দিন চিনে ফ্রি থাকা, নাকি ১৪ দিন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থেকে শরীরে অনেক সূঁচ ফুটিয়ে অবশেষে চীনের কিছু না দেখেই আবার সেখানে ফিরে আসা যেখানে আমরা ৪৮ ঘন্টা ছিলাম?
ফেইসটাইম তো আমাদের দু'জনেরই ছিল, কিন্তু সম্ভবতঃ সেটাও অন্যান্য সব কিছুর মতই অকার্যকর ছিল। অবশ্য সেটার কথা মোটেও মনে ছিল না, কাজেই সে চেষ্টাও করিনি।
সেলফোনে ভিপিএন এর ব্যবহার ইচ্ছে করেই শিখিনি, তবে সেটা আমার ল্যাপটপে ছিল, যা সাথে রাখিনি, চেকড-ইন লাগেজে ছিল। তবে সেই অস্ট্রেলিয়ান লোকটির সৌজন্যে গুয়াংঝু থেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে ফেইসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ফ্যামিলী গ্রুপের সবার সাথে চ্যাট করতে পেরেছিলাম। কিভাবে, সেটা আসছে পরের পর্বটিতে।
সহযাত্রি মেয়েটি, এয়ারপোর্টের স্টাফ এবং আটকা পড়া মানুষগুলোর আচরনের সুন্দর অংশগুলো খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন - অনেক ধন্যবাদ, পোস্টটি মনযোগ দিয়ে পড়ে এমন সুন্দর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে তুলে ধরার জন্যে। ২ নং প্রতিমন্তব্যে এ রকম আরেকজন সুন্দর মনের মানুষের সাহায্যের কথা স্মরণ করে আমার লেখা একটি পোস্টের লিঙ্ক দিয়েছি। আশাকরি, একবার সময় করে তা পড়ে দেখবেন এবং আপনার মন্তব্য জানাবেন।
আগের পর্বের ছবির রহস্য কবে উম্মোচন হবে? - ওহ, তাই তো! এখনই হবে। ঐ ছবিটা আসলে ছিল একটি কিউ আর কোড এর, যা দিয়ে চীনা নাগরিকরা উইচ্যাট এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের হেলথ কার্ডটি পূরণ করে জমা দিতে পারতেন, আমার মত হার্ড কপিতে না করে। আপনার হয়তো স্মরণ আছে যে আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম, মোট চারটি দফায় প্লেনের যাত্রীদেরকে নামানো হয়েছিল। প্রথম দফায় কিউ আর কোডে জমা দেয়া যাত্রীদেরকে, যারা এয়ারপোর্টে নেমে বাইরে চলে যাবে। দ্বিতীয় দফায় হার্ড কপি পূরণকৃত দের, যারা এয়ারপোর্টে নেমে বাইরে চলে যাবে। তৃতীয় দফায় কিউ আর কোডে জমা দেয়া যাত্রীদেরকে, যারা কানেক্টিং ফ্লাইট ধরবে (ডমেস্টিক অথবা ইন্টারন্যাশনাল, উভয়টি)। চতুর্থ দফায় হার্ড কপি পূরণকৃত দের, যারা কানেক্টিং ফ্লাইট ধরবে (ডমেস্টিক অথবা ইন্টারন্যাশনাল, উভয়টি)।
৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: ৪৮ ঘন্টা !!!
আসলে এক জাগায় ্দীর্ঘ সময় থাকা খুব যন্ত্রনার।
পোষ্টের সাথে ছবি দিলে বেশি ভালো লাগে।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: পোষ্টের সাথে ছবি দিলে বেশি ভালো লাগে - পাঠকের অনুরোধে দিলাম কয়েকটা ছবি। বলুন এখন কেমন লাগে।
৬| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভয়ংকর কঠিন, চীনের এয়ারপোর্টে ৪৮ ঘন্টা!
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় লাগলেও, দিনশেষে আমাদের অভিজ্ঞতাটা আনন্দদায়ক ছিল, স্মরণীয় হয়ে উঠেছিল।
চীনাদেরকে খারাপ বলতে পারি না, কারণ আমরা ওদের কাছ থেকে কোন খারাপ ব্যবহার পাইনি।
৭| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: এয়ারপোর্টে বসে থাকলে সময় কাটতে চায় না। ছবি দেখলে মজা পেতাম
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: ছবি দিয়েছি। আশাকরি, এবারে পোস্টটা আপনার ভাল লাগবে।
৮| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:১৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: অনেক ধৈর্য্য ধরে আপনি পরিস্থিতি সামলাতে সফল হয়েছেন। আপনি তো পেরেছেন। অভিনন্দন আপনাকে।
সুন্দর শেয়ারে অনেক ধন্যবাদ।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি তো পেরেছেন। অভিনন্দন আপনাকে - আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, এমন সুন্দর একটি কমপ্লিমেন্ট এখানে আমর জন্য রেখে যাবার জন্যে।
আল্লাহতা'লা সবরকারীদের সহায় হন এবং অদৃশ্য অঙ্গণ থেকে তাদের জন্যে সাহায্যকারী পাঠান। আমার এ সিরিজে ইতোমধ্যে এর প্রমাণ পেয়েছেন এবং আগামীতেও আরো পাবেন। শোকর আলহামদুলিল্লাহ!
৯| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২০
মোঃমোজাম হক বলেছেন: সুন্দর আর সাবলীল লেখার জন্য মনে হচ্ছে, আমিও আপনার পাশেই আছি।
আপনি এই বয়সে এসে এমন অভিজ্ঞতাগুলি কুঁড়িয়ে নিচ্ছেন, ভালইতো।তবে একাকি থাকলে ভয়ংকর লাগতো।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: তবে একাকি থাকলে ভয়ংকর লাগতো - জ্বী, অবশ্যই তা লাগতো। এজন্য আমি কখনো একাকী ভ্রমণ করি না। আমার বেশীরভাগ বিদেশ সফর হয়েছে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুসহ সস্ত্রীক আমরা চারজন। চারজন হলে ট্যাক্সি খরচের সাশ্রয় হয়।
আমার এ সিরিজের সবগুলো পর্ব পড়ে মন্তব্য করে যাবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
১০| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৯
অন্তরন্তর বলেছেন: ৪৮ ঘণ্টা এয়ারপোর্ট থাকা যে কত কষ্টের তা ভুক্তভুগিরা ভালভাবে জানে। একটা কঠিন সময়ে ভ্রমণকাহিনী পড়ছি আপনার সাবলীল লিখার মাধ্যমে। তবে এ পর্যন্ত চীনাদের কোন খারাপ ব্যাবহার লিখাতে পাইনি। আপনার স্ত্রীর স্কার্ফ দেয়ার কথাটা পড়ে মনটা খুশীতে ভরে উঠল। শ্রদ্ধেয় লেখক পৃথিবী থেকে মানবিকতা উঠে যায়নি বলেই এখনও আমরা বেশ শান্তিতে আছি। ক্রিটিকেল সময়ে একজন আর একজনের পাশে দাঁড়াচ্ছে এখনও। লিখা চলুক। শুভ কামনা।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: তবে এ পর্যন্ত চীনাদের কোন খারাপ ব্যাবহার লিখাতে পাইনি - সেটা পাননি, কারণ চীনারা সেটা করেও নি। ওরা যা কিছু করেছে, এ মুহূর্তে বিশ্ব নিরাপত্তা এবং মানব কল্যানের বৃহত্তর স্বার্থে সেটুকু করণীয় ছিল।
পৃথিবী থেকে মানবিকতা উঠে যায়নি বলেই এখনও আমরা বেশ শান্তিতে আছি। ক্রিটিকেল সময়ে একজন আর একজনের পাশে দাঁড়াচ্ছে এখনও - জ্বী, মানুষের এ ইতিবাচক মনোভাব এবং কার্যকলাপ চরম দুঃসময়েও মানুষকে আশার আলো দেখিয়ে যায়।
সর্দি লাগলে সেই অস্ট্রেলীয় মহিলার নিজ দেশে ফিরে যাওয়া নিঃসন্দেহে বিলম্বিত হতো। তাই, সেটা জেনে এমনিতেও হয়তো আমার স্ত্রী তার নিজের স্কার্ফটা ওনাকে দিয়ে দিতেন, তবে লস এঞ্জেলিসগামী সেই মহিলাদ্বয়ের কম্বল ও বালিশ আমাদেরকে অফার করার ঘটনাটাও নিশ্চয় তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবান্বিত করেছিল। একটা ভাল কাজ এভাবেই অন্যকে আরেকটা ভাল কাজ করতে প্রভাবিত করে।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
১১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: গুয়াংজু এয়ারপোর্ট ২০১৭ থেকে আমাদের পরিবারের জন্য এক বিভীষিকার নাম। আমার ভাগ্নে কানাডা পড়তে যাবার সময় ট্রানজিট ছিল। ইউ এস ভিসা না থাকায় পরবর্তী ট্রানজিটের আগে ওকে ৫ ঘণ্টা বসে থাকতে বাধ্য করে নো টয়লেট নো ফুড ওর বয়স তখন ১৭। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর জামি কে আমরা নতুন করে ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাঠালে ওকে হোটেলে নেয়া হয়।
মানুষ খুব আশ্চর্য এক সৃষ্টি, যেখানে মনে হবে শেষ প্রান্ত দেখা যায় ঠিক সেখান থেকেই হয়ত আশার আলোকবর্তিকা হাতে কেউ এগিয়ে আসে, আমাদের কে মুগ্ধ করে। ভালোলাগল আপনাদের পারস্পারিক মমত্ববোধ।
শুভ কামনা।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: এখন বোধহয় অবস্থা এতটা খারাপ নয়। চায়না সাউদার্ন এ যাওয়া আসা করে আমি খারাপ কিছু পাইনি।
ভালোলাগল আপনাদের পারস্পারিক মমত্ববোধ - ধন্যবাদ, এ কথাটা জানাবার জন্য। আগামী পর্বে এমন মমত্ববোধ এবং সহমর্মিতার আরো কিছু পরিচয় পাবেন।
মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
১২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৬
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন:
আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পড়তে খুবই ভালো লেগেছে কিন্তু 48 ঘন্টা কানেক্টেড বিমানের জন্য বসে থাকা যে কতটা প্রাণান্তকর তা সহজে অনুমেয়।
Carpe diem বিষয়টি বুঝলাম না।
ককেশীয় ও আমেরিকার মহিলার আন্তরিক ব্যবহার ভালো লাগলো। ভালো লাগলো কেয়ার ইন অস্ট্রেলিয় স্বামীর পরিচয় পেয়ে। তবে অমানবিক লাগলো প্রথম রাতে বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যেও সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষকে খাবারের ব্যবস্থা না করে হাতঝেড়ে ফেলাটা।
আমার হিসেবে 48 ঘণ্টার মধ্যে দুদিন কাটলো। ককেশীয় ও আমেরিকান তরুণী ইতিমধ্যে চলে গেছে। অস্ট্রেলিয়ান দম্পতির চলে যাওয়ার পরও আপনাদের আরো একদিন অপেক্ষা করতে হবে। বাকি সময়টুকু লাউঞ্জে কিভাবে কাটবে তা জানতে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভারতে ট্রেনে আসা-যাওয়া কালে এরকম মানবিক আবেদনে সাড়া দিলে যেকোনো যাত্রী সর্বশান্ত হরহামেশাই নজির আছে। রেলের তরফ থেকে যাত্রীদের জন্য একারণে আগাম সতর্কতা জারি থাকে। এখানেই বোধহয় উপমহাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের তফাৎ।
শুভেচ্ছা নিয়েন স্যার।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৪৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: Carpe diem এক জোড়া ল্যাটিন শব্দ যার ইংরেজী অর্থ "seize the day" অথবা “pluck the day”!
অভিধান অনুযায়ীঃ to urge someone to make the most of the present time and give little thought to the future. মোদ্দা কথা, এর মানে- "যখন যে অবস্থায় থাকো, সেটা থেকেই সর্বোৎকৃষ্ট ফল আহরণ কর, ভবিষ্যতের কথা ভেবে অস্থির হয়োনা"
তবে অমানবিক লাগলো প্রথম রাতে বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যেও সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষকে খাবারের ব্যবস্থা না করে হাতঝেড়ে ফেলাটা - আমার কাছে ওটা কোন ব্যাপার বলে মনে হয়নি। নিয়ম নিয়মই। মীল টাইমের পরে সেখানে পৌঁছেছি, কোল্থেকেই বা ওরা মীলস এনে দেবে? আর তা ছাড়া ক্ষুন্নিবৃত্তির কিছু বিকল্প ব্যবস্থা তো ওরা রেখেছিলই- বিস্কুট, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্কস এর ক্যান, যখন তখন, বিনামূল্যে!
ওদের আচরণ শিষ্ট ছিল, কোন রূঢ়তা পাইনি।
বাকি সময়টুকু লাউঞ্জে কিভাবে কাটবে তা জানতে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম - সেটা আজ আরও পরে পোস্ট করার চেষ্টা করবো।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: ২ নং প্রতিমন্তব্যে দেয়া লিঙ্কের পোস্টটা কি আপনি পড়েছেন? না পড়ে থাকলে পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
১৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২২
এইচ তালুকদার বলেছেন: ঘরে ফেরার অনিশ্চয়তার চেয়ে বড় কোন অনিশ্চয়তা নেই
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিক বলেছেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৬
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
চীনাদের বা অন্য কোথাও কোন খারাপ ব্যাবহার পাবেননা।
কারন তারা কর্পোরেট, পেশাদার।
খারাপ ব্যাবহার পাবেন সোউদি বা কুয়েতে।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২২
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিক বলেছেন, ধন্যবাদ।
১৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: ছবি যোগ করেছেন। পোষ্ট আরও সুন্দর হয়েছে।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: পুনঃমন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রীত হ'লাম।
১৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৪৯
মুক্তা নীল বলেছেন:
অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে ৪৮ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করেছেন।
স্কার্ফ দেওয়ার বিষয়টি মনে দাগ কাটলো হোক না সামান্য
সবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে দেশে এসে পৌঁছেছেন
এতেই শুকরিয়া ।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: স্কার্ফ দেওয়ার বিষয়টি মনে দাগ কাটলো হোক না সামান্য - সেটা প্রয়োজনে ওদের কাজে লেগেছিল, এটাই সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টি।
সবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে দেশে এসে পৌঁছেছেন, এতেই শুকরিয়া - মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
১৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫২
নজসু বলেছেন:
আপনার লেখা পাঠ করার পর কি মন্তব্য করবো বুঝে উঠতে পারিনা। আমি আগেও বলেছি আপনার বলার ধরনটা এতো সুন্দর হয় যে, মনে হয় আপনার সাথেই আছি। দীর্ঘ সময়ের বিড়ম্বনা যেন আমাকেও বি[ম্বিত করলো।
চীনারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেদের দূরে রেখে অসামাজিক হয়ে উঠছে কিনা জানিনা। তবে ঐ যে বললেন চীনাদের আমরা খারাপ বলতে পারিনা। কারণ তারা কখনো খারাপ ব্যবহার
ইজি চেয়ারগুলো খুব আরামদায়ক। দেখেই ঘুম ঘুম লাগছে। আপনার পুরো লেখায় একটা বাক্যে আমার গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেছে।
মায়ের ছবি পাঠাও।
বাক্যটাতে মায়ের জন্য ছেলের হৃদয়ের আকুতিটা যে কেউ স্পষ্ট দেখতে পাবে।
আপনার সুন্দর সাবলীল পাঠক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করার মতো লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: বিড়ম্বনা যতই হোক, দিন শেষে মানবিক ভালবাসা ও মায়া মমতা অজানা অচেনা সাতটি মানুষের জীবনকে অনেক কিছু দিয়ে গেছে, আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছে। এ পোস্টের একটি বাক্যও অতিরঞ্জিত নয়। আনুপূর্বিক ঘটনাবলী যেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং অনেস্টলী বিবৃত হয়, সে লক্ষ্যে অনেক শব্দ অনেকবার করে বদলাতে হয়েছে, সঠিক শব্দ চয়নের জন্য।
ইজি চেয়ারগুলো খুব আরামদায়ক - সত্যিই।
মায়ের ছবি পাঠাও - হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে এ শব্দ তিনটে উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরে দিয়েছি। অর্থাৎ ছেলেরা এ শব্দ তিনটেই বলেছিল/লিখেছিল।
অত্যন্ত উদারভাবে পোস্টের প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ। প্লাসে অনুপ্রাণিত
১৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩
নজসু বলেছেন:
ওহ বলতে ভুলে গেছি। ছবিগুলোর জন্য ধন্যবাদ। রাজীব ভাইয়ের মতো আমিও একবার আপনার কাছে ছবির আবদার করেছিলাম।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: দেয়ার মত ছবি হাতে থাকলে দিতে আপত্তি নেই। চেষ্টা করবো আগামীতেও দিতে।
ধন্যবাদ।
১৯| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০২
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রতিমন্তব্যে আমার আসা। না স্যার আগে লিংক দেওয়া পোস্টটি পড়িনি। উল্লেখ্য তখন ব্লগে আমার আবির্ভাব ঘটে নি। আপনার দেওয়া লিংক ধরে পড়ে এলাম। বয়সে হঢ়তো আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্রের সামান্য বেশি তরুণীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা সারা জীবনে মনে রাখার মতো। চমৎকারভাবে লিখেছেনও আপনি।
শুভেচ্ছা নিয়েন।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫০
খায়রুল আহসান বলেছেন: উল্লেখ্য তখন ব্লগে আমার আবির্ভাব ঘটে নি - আমি তখনকার কথা ভেবে বলিনি। ভেবেছিলাম, আপনি যদি আমার মত পাঠকের মন্তব্যগুলোও পড়ে থাকেন, তবে হয়তো প্রতিমন্তব্যে লিঙ্কটা আপনার চোখে পড়বে।
করোনা বাংলাদেশে মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আপনাদের ওখানে কেমন অবস্থা? সপরিবারে খুব সাবধানে থাকবেন।
২০| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:০৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রতিমন্তব্যে আবার আসা। হ্যাঁ স্যার পরিবার বা আত্মীয় স্বজন সকলেই কুশলে আছেন। তবে বাসা থেকে সাতকিমি দূরে এক পৌরপিতা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আমরাও খুব চিন্তিত। এদিকে বাসায় কোন কাজের মাসী নেই। সংসারের কাজ করে নাভিশ্বাস উঠছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা রাজ্যবাসী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। চরকির মত নিজেকে করোনা মোকাবিলার নিয়োজিত রেখেছেন। পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বেঁধে রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অকুণ্ঠ প্রশংসার দাবিদার।
আপনারাও সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ভালো থাকবেন সবসময়।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২১
খায়রুল আহসান বলেছেন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমারও অকুন্ঠ শ্রদ্ধার পাত্রী। নিশ্চয়ই তিনি স্রষ্টার কাছ থেকে প্রতিটি ভাল কাজের বিনিময় পাবেন।
২১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৮
মিরোরডডল বলেছেন: ৪৮ ঘণ্টা ট্রানজিট মানে হিউজ পেইন । আমিতো চিন্তাই করতে পারিনা । আমার ম্যাক্সিমাম ট্রানজিট ৩ আওয়ারস । ওটাতেই আমি অস্থির হয়ে যাই । আর এসময়তো আপনার আরও এক্সট্রা পেইন ছিল ফর অল দোজ হেলথ চেকিং । ওটা আগেই গেস করেছিলাম একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে । আপনাদের চলার পথে কিছু গুড সোল মানুষকেও জানা হলো । যাক ভালোভাবে সব পার করে এসেছেন এটাই অনেক কিছু ।
১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০০
খায়রুল আহসান বলেছেন: ওটা আগেই গেস করেছিলাম একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে - অভিজ্ঞতাটা বিচিত্র হলেও, সুখকর ছিল। পরের পর্বগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন।
যাক ভালোভাবে সব পার করে এসেছেন এটাই অনেক কিছু। - অনেক ধন্যবাদ।
২২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৮
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
৪৮ ঘণ্টা এয়ারপোর্ট থাকা যে কত কষ্টের তা ভুক্তভুগিরা ভালভাবে জানে।আমিরাত এয়ার ওয়েজের নীজেদের কারণে দুইবার কানেকটিং ফ্লাইট ১২ ঘন্টা বিলম্বের কারনে তাদের ব্যবস্থাপনাতেই দুবাই নগড়ীর ভিতরে হোটেলে রেখেছিল ।থাকা খাওয়া খানা দানা বেশ ভালই ছিল ।তাই মনে হয় ১৪ দিন চীনে থেকে আসলে ভালই করতেন । তারা নাকি করুনাকে এখন নিন্ত্রনে নিয়ে গেছে । ঢাকার যে কি অবস্থা হবে তা সঠিকভাবে কেও বলতে পরছেনা । যাহোক, লস এঞ্জেলিসগামী মহিলা যাত্রীকে আপনার স্ত্রীর স্কার্ফ দেয়ার কথায় মনে পরে গেল CNBC এর Breaking news কথা, যেখানে করোনার হাত হতে নিউ ইয়র্ক বাসীদের প্রটেকসনের জন্য মেয়র নীচের ঘোষনাটি দিয়েছে;
NYC Mayor de Blasio urges New Yorkers to cover face with scarves or bandanas while outside
এদিকে গত মঙ্গলবার President Donald Trump recommended scarves as protection against the corona virus.
The following evening, Trump repeated that advice, saying scarves are “highly recommended by the professionals.”
“Depending on the fabric, I think in a certain way, a scarf is better,” Trump said.
তাই মনে হয় ইউএসএ তে বর্তমানে মুখোসের সংকটকালে স্কার্ফ টি সেই মহিলার জন্য বেশ উপকারে দিবে ।
পরের পর্ব দেখতে গেলাম ।
শুভেচ্ছা রইল
১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:০০
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথমেই, পরের মন্তব্যটা থেকে আপনার শাশুড়ীমাতার করোনাক্রান্ত হবার জানতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ওনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। নিউ ইয়র্কে আমার ছোট ভাই বসবাস করেন। তাদের জন্য উদ্বিগ্ন আছি, কারণ নিউ ইয়র্কের করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ বলে জানি। আমার এক বাল্যবন্ধু নিউ ইয়র্কের পুলিশ বিভাগে (NYPD) উচ্চপদে কর্মরত আছেন। তিনিও করোনাক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আছেন। সম্প্রতি তার ফুসফুসের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও, দুটো কিডনীই অকেজো হয়ে গেছে। অথচ, করোনাক্রান্ত হবার আগে তার কিডনীর কোনই সমস্যা ছিলনা। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে গেলে রোগীকে কোন রোগ ছেড়ে কোন রোগ নতুন করে ধরে বসবে, তা বলা যায় না।
যাহোক, লস এঞ্জেলিসগামী মহিলা যাত্রীকে আপনার স্ত্রীর স্কার্ফ দেয়ার কথায় মনে পরে গেল... - আমার স্ত্রীর স্কার্ফটি আসলে চেয়ে নিয়েছিলেন সিডনীগামী কিয়াল, তার স্ত্রী ইমার জন্য। আর লস এঞ্জেলিসগামী মহিলারা আমাদেরকে অফার করেছিলেন একটি বালিশ ও কম্বল।
অনেক ধন্যবাদ, প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও এসে আমার এ পোস্টটা পরে দুটো মন্তব্য রেখে যাবার জন্য। প্লাসে অনুপ্রাণিত।
২৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
পারিবারিকভাবে কঠীন সময় পার করছি ।
করুনা আক্রান্ত শ্বাশুরী মাতা নিউইয়র্কের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ।
বাকী লেখা গুলি কখন পাঠ করতে পারব সঠিকভাবে বলতে পারছিনা ।
আপনি লিখে চলুন,সময় সুযোগ পেলে দেখে যাব ।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন
ভাল থাকার শুভ কামনা রইল
১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:১৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন আপনার এ কঠিন সময়কে সহজ ও সহনীয় করে দিন!
আপনি লিখে চলুন,সময় সুযোগ পেলে দেখে যাব - জ্বী অবশ্যই, কোন তাড়াহুড়ো করবেন না। আগের পর্বটিতে আপনার মন্তব্যটা পড়ে কেন জানি মনে হয়েছিল, এটা ড. আলীর স্বাভাবিক মন্তব্য নয়। উনি হয়তো ব্যস্ততার মাঝে আছেন। এ মন্তব্যটা থেকে বুঝতে পারলাম কারণটা।
আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য আন্তরিক দোয়া এবং শুভকামনা রইলো। সেই সাথে আরো দোয়া করি, মহামারী করোনা ভাইরাসের অভিশাপ থেকে বিশ্ব মুক্তি পাক। এটা যদি কেউ ইচ্ছে করে বিশ্বে ছড়িয়ে থাকে, তবে আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন তাদেরকে হেদায়েত দান করুন! হেদায়েতের যোগ্য না হলে তাদেরকে যথোপযুক্ত ফায়সালা দিয়ে দিন!
২৪| ১৭ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:১০
করুণাধারা বলেছেন: দীর্ঘ তিন মাসের আনন্দময় ভ্রমনের শেষে তখন কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছানোর কথা, তখন জানতে পারলেন ৪৮ ঘন্টা ট্রানজিটে থাকতে হবে!! স্বাভাবিক ভাবে এটা মেনে নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতির মাঝে কিভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন তার বর্ণনা এই পোস্ট। পড়তে খুব ভালো লাগলো।
এখন বুঝতে পারছি কেন এই পোস্ট গুলো আগে পড়িনি। আমি ঠিক করেছিলাম রমজান মাস শুরুর আগেই আমার ধারাবাহিক অনুবাদ কাহিনী শেষ করব, সেটা করতে গিয়ে হয়ত এই পোস্ট পড়া হয়নি।
চমৎকার পোস্টে ++++
১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:০৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: ৪৮ ঘন্টা ট্রানজিটে থাকতে হবে - এমন নির্মম একটা সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে সত্যিই প্রথমে খুব অসহায় বোধ করেছিলাম। কিন্তু সেই সাথে নিজেকে নিজেই প্রবোধ দিয়ে চলেছিলাম, বিদেশ বিভূঁই এ মোটেই মুষড়ে পড়লে চলবে না। আমি মুষড়ে পড়লে গিন্নীকে সুস্থ রাখা কঠিন হতো। আল্লাহ তা'লার সীমাহীন করুণা ও দয়া, নিজের বোধশক্তি এবং মনোবল, তিন দেশ থেকে তিন ছেলে এবং বৌমাদের ক্রমাগত সাহস জোগানো এবং চায়না সাউদার্ন এর সকল স্টাফদের সর্বাত্মক সহযোগিতার ফলে একটি বিরূপ পরিস্থিতিও সহসা অনুকূলে চলে আসে।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনেক অনুপ্রাণিত হ'লাম। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: চমৎকার!!! দুঃসময়ে এই স্মৃতিগুলো একদিন কোন
একটি মহৎ কাজের অনুপ্রেরনা দিবে ।
...............................................................................