নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে...(৪)

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

এর আগের পর্বটি পড়তে পারবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে.... (৩)

আজ ২৪ মার্চ ২০২০, সকাল। ঘুম ভাঙার পর কিছুক্ষণ শূন্যে তাকিয়ে থেকে আকাশে প্লেনের ওঠানামা দেখলাম এবং ভূমিতে বিমান ও বিমানবন্দর সচল রাখার জন্য যেসব ভিন্ন ভিন্ন পেশার উপদল সাধারণতঃ আমাদের চোখের আড়ালে থেকে কাজ করে যায়, তাদের তৎপরতা দেখতে থাকলাম। এদেরকে দেখে আমার পিঁপড়ের সারির কথা মনে পড়লো, আর সেই সাথে পিঁপড়েদের নিয়ে লেখা আমার একটা কবিতার কথাওঃ

“পিঁপড়েরা সব সারি বেঁধে যায়, সারি বেঁধে আসে,
মাঝে যদি উল্টো পথে দেখা হয় কারো সাথে,
ঝটপট জরুরী কিছু কথা চটজলদি সেরে নেয়,
তারপর আবার একান্তে পথ চলা শুরু করে দেয়।

পিঁপড়েদের মত এত অধ্যবসায়ী আর কেউ নেই,
পিঁপড়েদের মত এত শক্তিশালী আর কেউ নেই।
ওরা নিঃশব্দে পথ চলে, আর খুব কম কথা বলে।
স্ব-ওজনের বিশ গুণ বোঝা ওরা বয়ে নিয়ে চলে”।

(আমারই একটি কবিতা থেকে, “পিঁপড়ের মত”)

চায়না সাউদার্ন একটি দ্রুত প্রসারমান এয়ারলাইন ছিল। অদৃশ্য ঘাতক করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বের আজ প্রায় সব এয়ারলাইনই মুখ থুবরে পড়ে আছে। চায়না সাউদার্ন এখনো তবু কিছুটা সচল আছে। দিনে রাতে চব্বিশ ঘন্টায় ৭/৮ টি করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলে, আর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলে প্রতি ঘন্টায় কয়েকটি করে। বালকসুলভ যে কয়েকটি অভ্যেস আমি এই বুড়ো বয়সেও পরিত্যাগ করতে পারিনি, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আকাশে উড়ন্ত প্লেনের আনাগোনা দেখে আনন্দিত হওয়া। তাই সাত সকালে সবাই যখন ঘুমিয়ে, আমি তখন গুয়াংঝু’র বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ট্রানজিট লাউঞ্জে বসে অনন্ত আকাশে ছোট বড় মাঝারি, সব ধরণের প্লেনের আনাগোনা দেখছিলাম। আবারো আমারই লেখা একটি কবিতার কথা মনে পড়লোঃ

“বিকট গর্জনে ভেসে যায় এক উড়ন্ত প্লেন,
একটি প্রতিকী পতাকা লেজে তার আঁকা।
উড়তে উড়তে সেটি হুট করে ঢুকে যায়
ভাসমান একটা মেঘের দ্বীপের ভেতর।
ভেতরে তার মেঘবালিকাদের আনাগোনা।

একটু পরেই আবার ওটা বেরিয়ে আসে
মেঘ ভেদ করে। আমি নিঃশব্দে নির্নিমেষ
তাকিয়ে দেখি যতক্ষণ, যতদুর দেখা যায়,
ঐ দূর নীলিমায়। যেতে যেতে অবশেষে
ওটা বিন্দু হয়ে হারিয়ে যায়, এক সময়”।

(আমারই একটি কবিতা থেকে, “চলে যাওয়া...”)

আমি বসে থাকতে থাকতেই দেখি, ফিতের ওপাশে এক নীরব চীনা কর্মী আনমনে সারিবদ্ধ হুইল চেয়ার গুলো স্প্রে করে জীবানুমুক্ত করছে। মাঝরাতে একবার ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় দেখি, ছোট একটি চলন্ত যান দিয়ে যান্ত্রিক উপায়ে মেকানিক্যালী ফ্লোর ক্লীনিং এবং স্যানিটাইজিং চলছে। বাকী সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগেই আমি হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হ’লাম। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, ৪৮ ঘন্টার এই কঠিন যাত্রাবিরতির সময়ে দেখা আমার সবচেয়ে ভাল কী লেগেছে? আমি নিঃসন্দেহে বলবো, ঝকঝকে তকতকে, spick and span ওদের ওয়াশরুমগুলো। ওয়াশরুমে ঢুকেই মন ভাল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে চীনাদের তৎপরতা অবিশ্বাস্য রকমের উচ্চমানের। ২৪ ঘন্টা ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়ানো থাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত পোশাকে দু’জন ক্লীনার। সুপ্রশিক্ষণপাপ্ত সৈনিকের ন্যায় নিখুঁত ও যান্ত্রিক তাদের কাজ। প্রতিবার, প্রতিজনের ব্যবহারের পর ওরা আসছে, শুধু কমোড, বেসিন এবং বেসিন প্ল্যাটফর্ম নয়, পুরোটা মেঝে ওরা স্প্রে দিয়ে স্যানিটাইজ করছে, তার পর মুছে দিয়ে মেঝে শুকনো রাখছে। হ্যাঁ, এটা ওরা করছে কোন ঘন্টা মিনিট ধরে নয়। প্রতিবার, যখনই কেউ (অবশ্য ঐ এলাকায় যাত্রীদের সংখ্যাও খুব বেশী ছিল না) ওয়াশরুম ব্যবহার করতেন, তার পরে পরেই এসে ওরা রুটিনমাফিক এ কাজগুলো করতেন। ক্লীনার বলে ওদের সরকার ওদের নিরাপত্তাকে ছোট করে দেখেনি। ওদের গায়ে যে পোশাক দেখলাম, বোধকরি অনেক উন্নত দেশের ডাক্তারদেরও আজকের এই দুঃসময়ে সেরকম সুরক্ষিত পোশাক পরার সৌভাগ্য হয় নি। হাতে ওদের দুই লেয়ারের গ্লোভস, মাস্কের পরেও মাথা থেকে থুতনি পর্যন্ত আরেকটি আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত। পায়ে স্যানিটাইজড জুতোর পরেও বাহির দিয়ে আচ্ছাদিত আরেক বিশেষ ধরণের জুতোমোজা। লক্ষ্য করেছি, বার ঘন্টার প্রতিটি শিফট ডিউটির পর ওরা নতুন করে এসব পোশাক পায়, এবং হাসপাতালের বর্জ্য সংগ্রহকারী এক ধরণের বিশেষ যন্ত্রচালিত মেশিন চালিয়ে কেউ একজন এসে সেসব পরিত্যাক্ত পোশাকগুলো নিরাপদ ডিস্পোজালের জন্য নিয়ে যায়।

ফিতে ঘেরা আমাদের বিরতি এলাকাটা থেকে বের হলেই পাওয়া যায় ঠান্ডা, ইষদোষ্ণ এবং গরম পানির ডিস্পেন্সার। ভিন্ন তিন মাত্রার উষ্ণতার পানি পাওয়া গেলেও, ডিস্পেন্সারের উপরে একটা সুপারিশ লেখা আছে সুস্বাস্থ্যের জন্য গরম পানি পান করার জন্য। আমি তাই যতবার সেখান থেকে পানি পান করেছি, গলা যতটা গরম সহ্য করতে পারে, ততটা গরম পান করেছি। ফিরে এসে সেলফোন চার্জে দিয়ে মেইল খুলে দেখলাম, ছেলেরা সবাই ওদের মায়ের ছবি দেখতে চাচ্ছে। প্রথমে গিন্নীকে ছবি তোলার কথা বলায় তিনি রাজী হলেন না, ছেলেদের কথা বলায় রাজী হয়ে গেলেন। তাকে নিয়ে কয়েকটি ভিন্ন স্পটে ছবি তুলে তা এটাচ করে ফ্যামিলী মেইলগ্রুপে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর থেকেই ছেলে এবং বৌমাদের কাছ থেকে খুশীর প্রতিক্রিয়া পেতে থাকলাম। আমরা একটু পরে নিজ জায়গায় ফিরে এসে দেখি, ততক্ষণে বাকী পাঁচজনও ঘুম থেকে উঠে গেছেন। সিডনীগামী অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোককে রাতে ঘুমের চোখে দেখে ও কথা বলে মধ্যবয়স্ক ভেবেছিলাম। সকালে দেখে মনে হলো আমাদের ছেলের বয়সী। তার স্ত্রীর (পরে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় ওরা জানিয়েছে, ওরা স্বামী স্ত্রী নয়, “পার্টনার”। রাতে যদিও “স্ত্রী”ই বলেছিলেন)। নাকের অবস্থা কেমন জিজ্ঞেস করাতে মহিলা নিজেই উঠে এসে, সুপ্রভাত সম্ভাষণ জানিয়ে আমার স্ত্রীর দেয়া স্কার্ফটির জন্য প্রভূত ধন্যবাদ জানাতে শুরু করলেন। আমি বললাম, এটা খুবই সামান্য একটা ব্যাপার ছিল। তার পর তাদেরকে বললাম, লস এঞ্জেলিসগামী পাশের ঐ মহিলাদ্বয় রাতে আমাদেরকে তাদের কম্বল বালিশ পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলেন, আমাদের প্রয়োজন ছিল না বলে আমরা তা নেই নি। আপনাদের প্রয়োজন ছিল, তাই আপনারা আমাদের এ সামান্য জিনিসটি চেয়ে নিয়েছেন বলে আমরা খুশী হয়েছি। এ কথা শুনে মহিলার চোখদুটো ছল ছল করে উঠলো। অস্ফূট স্বরে তিনি বলে উঠলেন, পৃথিবীর মানুষ এখনো এত ভালো!!!

ধীরে ধীরে আমরা সাতজন একটু একটু আলাপচারিতার মাধ্যমে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে শুরু করলাম। অস্ট্রেলীয় দম্পতির সাথে আসা অপর মহিলার সম্পর্কটা কিছুতেই ঠাহর করতে পারছিলাম না। দুই মহিলা দেখতে বোনের মত নয়, আবার কথোপকথন শুনে তাদেরকে বান্ধবীও মনে হচ্ছে না। গিন্নী এক ফাঁকে ওদের সাথে কথা বলে আমাকে জানালেন, অস্ট্রেলীয় দম্পতির সাথে আসা অপর মহিলা আলাদা এসেছেন, কানাডিয়ান, এই বিমান বন্দরেই তাদের মাঝে পরিচয় হয়েছে। তাহলে দাঁড়ালো, আমরা এখানে সাতজন মানুষ, চারটে গ্রুপ। কাদের ফ্লাইট কখন, সেটাও জানা হলো। আজ রাতে প্রথমে বিদায় নেবেন অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি, রাত নয়টায়। তার পরে যাবেন লস এঞ্জেলিস দম্পতি, রাত সাড়ে নয়টায়। পরের দিন দুপুর আড়াইটায় যাবেন অপর মহিলা, যিনি বেজোড়, কানাডার ভ্যাঙ্ক্যুভারে। আর তার পরে ঐ দিনই আমরা রওনা হবো ঢাকার উদ্দেশ্যে, রাত নয়টায়। আমরা নিজেদের মাঝে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে গ্রুপ হিসেবেও একে অপরের সাথে মাঝে মাঝে কিছু কথা বলছিলাম। আলাপচারিতায় জানলাম, অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোকের নাম কিয়াল স্মিথ, মহিলার নাম ইমা মিশেল। ওরা প্রায় দু’মাস ধরে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফর করে, বাকী সফর কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে যাচ্ছেন। দেশে ফেরার কারণ, ইমার বাবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এটা শোনার পর থেকে ইমার আর কোন কিছু ভাল লাগছিল না, তাই ওরা যত দ্রুত সম্ভব, দেশে ফিরে যাচ্ছেন। বাসায় ইমার বাবাকে দেখাশোনা করার মত কেউ নেই, কারণ স্ত্রীর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়েছে। তিনি চেইন স্মোকার, তাই তার ফুসফুস আগে থেকেই ঝরঝরা ছিল। ইমা শঙ্কিত যে তার বাবা এ যাত্রায় সার্ভাইভ করতে পারবেন না। তাই, করোনা ভাইরাস যতই সংক্রামক হোক, তার বাবার জীবনের এ সংকটময় মুহূর্তে তিনি বাবার পাশেই থাকতে চান। শুনে অবাক হ’লাম যে তার বাবার বয়স আমার চেয়েও কম!

ইমা ও কিয়ালদের পরে যাবেন লস এঞ্জেলিসগামী সেই দুই মহিলা। তাদের নামও বলেছিলেন, কিন্তু নাম দুটো একটু শক্ত হওয়ায় মাথায় গাঁথে নি। শ্বেতাঙ্গিণীর বয়স আনুমানিক ৩৫ এর আশে পাশে হবে, তার সাথে থাকা শ্যামলা মহিলার ২৫ এর আশে পাশে। কনিষ্ঠজন সারাক্ষণ হয় একটি বই পড়ছিলেন, নয়তো সেলফোনে গেইম খেলছিলেন। জ্যেষ্ঠ্যজন খুব করে ঘুমিয়ে নিচ্ছিলেন। তারা উভয়ে অস্ট্রেলীয় দম্পতির তুলনায় স্বল্পভাষী, ক্ষীণ কন্ঠে কথা বলেন। আলাপচারিতায় জানলাম, ওনারাও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফরের পর নিজ দেশে ফিরছিলেন এবং তাদের মত ওনারাও ব্যাকপ্যাকার। লস এঞ্জেলিস থেকে ওনারা অন্য কোন একটা ডমেস্টিক এয়ারপোর্টে ফ্লাই করবেন, সেখান থেকে তাদের আড়াই ঘন্টার মত রোড জার্নি করে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। ওনাদের পরের দিন দুপুরে যাবেন সেই কানাডীয় মহিলা, রোযালী রিকার্ড। তাকে মহিলা না বলে তরুণী বলাই ভাল, কারণ তার বয়স মাত্র ১৯। প্রথম দিকে তাকে বেশ রিজার্ভড মনে হলেও, আলাপ সালাপের পর দেখা গেল তিনি সবার সাথে টীনএজার সুলভ উচ্ছ্বাসে খোলা মনে কথা বলছেন। অপর দুই গ্রুপের তুলনায় উনি আমাদের সাথে প্রায় ১৮/১৯ ঘন্টা সময় বেশী কাটিয়েছেন, তাই ওনার সম্বন্ধে জেনেছিও বেশী। আর তা ছাড়া উনি কথা বলতে ভালবাসেন।

রোযালী’র পরিবার ফ্রেঞ্চ কানাডিয়ান। এ সফরে আসার আগে তিনি ভূমধ্যসাগরীয় দেশ মরক্কো সফর করেছেন। মরক্কো একসময় ফরাসী উপনিবেশ ছিল বিধায় সে দেশটি চষে বেড়াতে তার কোনই অসুবিধে হয়নি। তার আগে তিনি কাজিনদের সাথে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ ঘুরে এসেছেন। তখনো তার বয়স ১৮ বছর হয়নি বিধায় বয়সে বড় কাজিনদের সাথে যেতে হয়েছিল। এবারে তিনি বয়ফ্রেন্ডসহ প্রথমে সফর করেছেন জাপান, দু’সপ্তাহব্যাপী। তার বয়ফ্রেন্ডের হাতে ছুটি না থাকায় উনি ফিরে গিয়েছেন কানাডায়, আর এই ১৯ বছর বয়সের তরুণী এক মাস ধরে একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন ভিয়েতনামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। উনিও একজন ব্যাকপ্যাকার। এ রকম পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের কাছে প্রকৃতির দুটো বড় আকর্ষণ থাকে- হয় সাগর না হয় পাহাড়, না হয় দুটোই। ওনার দুটোই ভাল লাগে, তবে সাগরের চেয়ে পাহাড়ের প্রতি তার আকর্ষণটা বেশী। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্বের ব্যাপারেও তিনি বেশ আগ্রহী। এক মাস ভিয়েতনামে থেকে তিনি বাসে করে যান ক্যাম্বোডিয়া, সেখানে দু’সপ্তাহ ঘুরে তিনি চলে যান লাওস। লাওস থেকে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল সফর করেন, সেখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলেও যাবার কথা ছিল। ধনী দেশের নাগরিক রোযালী’র কাছে ভিয়েতনাম, লাওস, ক্যাম্বোডিয়া আর থাইল্যান্ড এর গল্প শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। খুব সুন্দর করে উনি সেসব দেশের ইতিহাসের, ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এবং সেসব দেশের সাধারণ মানুষের সৌহার্দ্যমূলক আচরণের প্রশংসা করেছেন। সেসব দেশের মধ্যে কেবল থাইল্যান্ডে আমরা একাধিকবার সফর করেছি। চীয়াং মাই, চীয়াং রাই এর কথা যখন তিনি বলছিলেন, আমরা তা রিলেট করতে পারছিলাম। থাইল্যান্ড এর পর তার যাবার কথা ছিল ইন্দোনেশিয়া, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনী। সিডনী থেকে তার নিজ দেশে ফেরার কথা ছিল। এত বড় একটা সফরসূচী উনি সম্পন্ন করেছেন স্রেফ একা একাই। ইতোমধ্যে করোনার কারণে বাকী দেশগুলোতে ‘লকডাউন’ ঘোষিত হওয়ায় তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে ব্যাংকক-গুয়াংঝু-বেইজিং-মন্ট্রীয়েল এর টিকেট কিনে এখানে আসেন। কিন্তু গুয়াংঝুতে নেমে তিনি জানতে পারেন যে চীনের ভিসা না থাকার কারণে তিনি বেজিং যেতে পারবেন না। এর ফলে তাকে তিন হাজার ইউ এস ডলার গচ্ছা দিয়ে রি-রুটিং করে পুনরায় টিকেট ক্রয় করতে হয়েছে। তাও সরাসরি মন্ট্রীয়েল এর টিকেট পান নি বলে ভ্যাঙ্ক্যুভার পর্যন্ত টিকেট করেছেন। বাকীটা সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল আমরা ছাড়া বাদ বাকী সবার বাড়ী পৌঁছতে হবে একাধিক স্টেশন টাচ করে এবং ওদের ফ্লাইট টাইম ছিল দশ থেকে তের ঘন্টার। আমাদেরটা পৌনে চার ঘন্টার, এবং সরাসরি। আমরা বয়স্ক, তাই আমাদের সফরের বাকী অংশটা সরাসরি এবং সংক্ষিপ্ত হবে, একথা জেনে ওনারা সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

চায়না সাউদার্ন এর একজন স্টাফ এসে লাঞ্চ এবং ডিনারে আমরা কী খেতে চাই, তা টুকে নিল। অপশন মাত্র দুটোই ছিলঃ ভেজিটারিয়ান অথবা ‘অর্ডিনারী’ ডায়েট। ভেজিটারিয়ান না হয় বুঝলাম, কিন্তু ‘অর্ডিনারী’ ডায়েটে কী থাকবে তা জিজ্ঞেস করলাম। উনি বললেন, না দেখে উনি তা বলতে পারবেন না। অগত্যা আমরা ভেজিটারিয়ান ডায়েটই অর্ডার করলাম, লাঞ্চ এবং ডিনার, দুটোর জন্যই। ভাবলাম ভেজি ডায়েট, না জানি কেমন হবে! ওরা লাঞ্চ সার্ভ করে ঠিক দুপুর ১২ টায়, ডিনার সন্ধ্যে ৬ টায়। লাঞ্চবক্স হাতে পেয়ে কৌতুহল বশতঃ সাথে সাথে খুলে ফেললাম। লাঞ্চ দেখে তো পছন্দই হলো, এখন খেতে না জানি কেমন হয়! পরিমাণ মত সাদা ভাত, কচি শসা হালকা করে কাটা, আধা সেদ্ধ ফুলকপি, কাঁচা বাঁধাকপি ও লেটুস পাতা, চিকণ করে কাটা আলু হাল্কা ফ্রাই এবং মাশরুম ও কাটা জলপাই এর মিশ্রণ হাল্কা ফ্রাই। সবগুলোই খুব সুস্বাদু ছিল, শেষোক্তটা একটু বেশী। আগের রাতে অভুক্ত ছিলাম, তাই মুখে যেটাই দিচ্ছিলাম, সেটারই স্বাদ খুব মুখরোচক মনে হচ্ছিল। পেট ভরে গেল। বাকী পাঁচ জনের মধ্যেও তিন জন ভেজি ডায়েটই নিয়েছিলেন। যে দুই জন অন্য ডায়েট নিয়েছিলেন, সেখানে সসেজ ছিল, মীট ছিল, আর সালাদ ছিল।

খেয়ে উঠে যোহরের নামায পড়ে একটু চেয়ারে হেলান দিলাম। লক্ষ্য করলাম, কিয়াল স্মিথ খেয়ে দেয়ে উঠে আমার পাশের চেয়ারে বসে তার ল্যাপটপ খুলে বসেছে। ইমা মিশেলও তার পাশে বসে দেখছে। ল্যাপটপের পর্দায় চোখ পড়তেই বুঝলাম যে ওরা ফেইসবুক দেখছে। অবাক হ’লাম, চীনে না ফেইসবুক নিষিদ্ধ! আমি ওপাশে মাথা ঘুরিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম, ঘুমিয়েও পড়লাম। একটু পরে ওদের হাসাহাসিতে ঘুম ভাংলো। দেখি ওরা সবাই গল্পে মশগুল। ইতোমধ্যে সবাই বেশ আপন আপন হয়ে গেছে। কেউ চেয়ারে, কেউ মাটিতে বসে খোশগল্প করছে। আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম। কিয়ালের কাছে কথা শুরু করলাম, করোনা নিয়ে ওদের সরকারের ভূমিকা নিয়ে। ওর কথা শুনে বুঝলাম, ওদের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এর উপর ও খুবই নাখোশ। আমি ওর দেশ থেকে সদ্য প্রত্যাগত। আমার কিছুটা ধারণা আছে, ওদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাজনীতি সচেতন জনগণের একটা বড় অংশের কতটা অসন্তোষ রয়েছে। করোনা নিয়ে কথা বলতে বলতে স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক দাবানল নিয়ে কথা উঠলো। এ ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ ওরা, কিয়ালের চেয়ে ইমা বেশী। ইমাকে জিজ্ঞেস করলাম, ওর দেখা মতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী কে? ও বললো, আমার জন্মের সময় যিনি ছিলেন, তিনি অর্থাৎ বব হক। তাকে যাচাই করার মত বয়স আমার হয়নি, কারণ আমার জন্মের পরপরই তিনি পদত্যাগ করেন, কিন্তু আমার পরিবারের কাছ থেকে জেনেছি যে উনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন এবং জনপ্রিয় ছিলেন। উনি পরপর চারবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং একটানা প্রায় নয় বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

আমি যখন কিয়াল এবং ইমার সাথে কথা বলছিলাম, তখন দেখি তার ল্যাপটপটা নিয়ে সেই লস এঞ্জেলিসগামী মহিলাদ্বয় ব্যস্ত। ঘন্টাখানেক পর সেটা রোযালী নিয়ে বসলো। কিয়াল আমার কানের কাছে এসে বললো, সে আমার সাথে ছেলেদের সেলফোনে কথোপকথন শুনে বুঝেছে যে আমরা তাদের নিয়ে এবং তারা আমাদের নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন। সে তার ল্যাপটপে একটা বিকল্প পদ্ধতিতে ভিপিএন দিয়ে ফেইসবুক চালু করতে পেরেছে। আমি সবার শেষে যাব বলে সে সবার শেষে আমাকে এ অফারটা দিচ্ছে, যে আগে যাবে তাকে আগে দিয়েছে। রোযালী’র পর আমরা ইচ্ছে করলে সন্ধ্যে পর্যন্ত তার ল্যাপটপে ফ্যামিলীর সাথে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে চ্যাট করতে পারি। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে এ সুযোগটা নিতে রাজী হ’লাম। এর আগে সে বলেছিল যে সে আগামীতে বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে চায়। এবারেই সে চেয়েছিল, ফেরার সময় মিয়ানমার ও ঢাকা হয়ে সিডনী যেতে। কিন্তু সময়াভাবে তা হলোনা। আমি তাকে আন্তরিকভাবে স্বাগতম জানালাম এবং আমার একটি নেইম কার্ড দিয়ে ঢাকা আসার আগে আমাকে জানিয়ে আসতে বললাম। ওর সাথে কথা বলে মনে হলো যে ও আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোর নৈসর্গিক শোভা সৌন্দর্য সম্বন্ধে অবগত। একটু পরে রোযালী এসে কিয়ালের ল্যাপটপটা আমার হাতে দিয়ে গেল। আমি ফেইসবুকে লগ-ইন করার সাথে সাথে প্রথমে ছোট ছেলে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘বাবা তুমি চীনে বসে ফেইসবুকে লগ-ইন করতে পারলে’? আমি বললাম, হ্যাঁ পারলাম এবং কি করে পারলাম, তা ব্যাখ্যা করলাম। এরপর একে একে বাকী দু’জন ছেলেও বৌমা সহ চ্যাট শুরু করলো। জরুরী কথাগুলো আগে সেরে নিলাম, পরের দিকে কিছু হাল্কা কথাবার্তাও হলো।


ঢাকা
০৬ এপিল ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ২২৩৩



চায়না সাউদার্ন এর সুস্বাদু ভেজিটারিয়ান লাঞ্চবক্স

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +১৭/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৪

আকন বিডি বলেছেন: ক্যাডেট কলেজ ব্লগে কি কম লেখা হয়?

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঐ ব্লগটা তো এখন মৃত্প্রায়। অথচ, একসময় কতই না জমজমাট ছিল!
আপনি কি সেখানে এখনো যান?
প্রথম মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৮

আকন বিডি বলেছেন: হ্যা মাঝে মাঝে যাই, আসলেই মৃত প্রায়। খারাপা লাগে। কি জমজমাট ছিল এক সময় । এ রকম হওয়ার কারণটা কি?

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: কারণটা আমার অজানা। হয়তো সবার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে, হয়তো ব্লগিং এর চেয়ে লোকজন এখন ফেইসবুকিং অথবা গ্রুপ চ্যাটিং এ বেশী মনযোগী হয়েছে। তবে সেখানে পাঠকের সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। পোস্টগুলো পঠিত হয় প্রত্যাশিত সংখ্যায়ই, তবে কেউ মন্তব্য করে না। মন্তব্যের বড় খরা চলছে সেখানে। আর মন্তব্য ছাড়া পাঠক-লেখকের মাঝে ইন্টার-একশন হয় না, সেটা না হলে লেখক উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৯

ঈশান মাহমুদ বলেছেন: দারুণ লিখেছেন। মনে হলো আমরাও যেন আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। :)

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার কোন পোস্টে আপনি এই বুঝি প্রথম এলেন, আপনাকে সুস্বাগতম!
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ৪৮ ঘণ্টা শুরুতে বোরিং হলেও পরের দিকে ঘটনাপ্রবাহ আপনাদের কাছে রীতিমতো আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ালো, ঠিক একটা আদর্শ সংসারের মধ্যেই। এমন বিশ্বসংসারের মধ্যে থেকে ফেরার সময় রীতিমতো বিষণ্ণ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিয়াল স্মিথের ল্যাপটপের সৌজন্যে গুয়াংজুতে বসেও পুত্রদের সঙ্গে কথা বলতে পারার সুযোগ মানে কুড়িয়ে পাওয়া চোদ্দ আনার সামিল। সবমিলিয়ে দারুন উপভোগ্য।
তবে লক্ষ্যনীয় রোজালী রিকার্ড ১৯ বছরের একটি মেয়ে একা একা বিশ্ব পরিভ্রমনে বার হল আর আমরা এ জীবনে কি করলাম!!

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: ৪৮ ঘণ্টা শুরুতে বোরিং হলেও পরের দিকে ঘটনাপ্রবাহ আপনাদের কাছে রীতিমতো আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ালো - জ্বী, ঠিকই বলেছেন। টেনশন, ক্লান্তি, ক্ষুধা ইত্যাদি শুধু প্রথম রাতটিতেই যা ছিল, যার অনেকটাই লস এঞ্জেলিসগামী ঐ মহিলার আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণে প্রশমিত হয়েছিল। পরে দেখলাম, কার চেয়ে কে বেশী ভাল, তা নির্ণয় করা মুশকিল!
তবে লক্ষ্যনীয় রোজালী রিকার্ড ১৯ বছরের একটি মেয়ে একা একা বিশ্ব পরিভ্রমনে বার হল আর আমরা এ জীবনে কি করলাম!! - এদের এসব সাহসিকতা দেখলে সত্যিই আশ্চর্য হতে হয়। জ্ঞানই শক্তি। আমার মনে হয়, বুকিশ নলেজ ছাড়াও, ছোটবেলা থেকে স্বাধীনভাবে নিজের কাজটুকু নিজেকে দিয়ে করানোর ফলে এরা কাজ করাও যেমন শিখে, তেমন এদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে যায়। অন্তরে এবং মননে এবজর্বড নলেজ এদেরকে সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনেক অনুপ্রাণিত হ'লাম। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা!!!

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৫

সোহানী বলেছেন: কঠিন এ ৪৮ ঘন্টায় কিছু অনাত্বীয় অপিরিচিত সহযাত্রী পেয়েছেন। এবং কিছুটা কমফোর্ট টাইম পার করেছেন শুনে ভালো লাগছে।

আসলে আপনি পজিটিভ মনের মানুষ বলে তারাও আপনাকে সহজেই আপন করে নিয়েছে।

আর চাইনীজ লাঞ্চ আপনার ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগছে।

কানাডা বা আমেরিকায় দেখেছি, বাচ্চাগুলো গ্রেড ১২ পার হলে বা ১৮ বছর হলেই ঘর থেকে বের হয়ে পরে। যা আমরা এশিয়ানরা চিন্তাই করতে পারি না। একা একা পরিচিত জায়গায়ও ছেড়ে দেই না। আমার ছেলে মাঝে মাঝে টিউটরিং থেকে একটু দেরীতে ফিরলে আমি ২০ বার কল দেই। ও খুব বিরক্ত হয়। বারবার বলে এটা বাংলাদেশ নয় B:-) । এতো টেন্সড্ হবা না। আসলে আমাদের পারিবারিক বন্ধন বেশী তাই টেনশান ও বেশী।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: কিছুটা কমফোর্ট টাইম পার করেছেন শুনে ভালো লাগছে। - শুধুমাত্র প্রথম রাতটাতেই যা কিছু ডিসকমফোর্ট ছিল। তার পরে সব কিছুই সহজ হয়ে যায়, মনেই হয়না একটা অচেনা জায়গায়, অপরিচিত মানুষের সাথে আছি। আর তা ছাড়া, আরেকটা মূল মন্ত্র তো ছিলই, ঐ যে, “carpe diem, carpe diem”!! :)
চাইনীজ লাঞ্চটা (সাদা ভাত আর ভেজিটেবল, নো ডাল, নো মাছ) শুধু ভাল না, খুব ভাল লেগেছিল।
এতো টেন্সড্ হবা না - এটাই আসল পরামর্শ। বাবা মা টেন্সড্ হলে সন্তানরাও তা হবেই, এবং টেন্সড্ হলে সাহসের সাথে নতুন কিছু করার হাতটা অবশ হয়ে যায়, মনটাও ভীতু হয়ে যায়।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...

৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, প্রীত হ'লাম।

৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩০

মা.হাসান বলেছেন: সেলিম আনোয়ার ভাই বা ফাতেমা ছবি আপা এয়ারপোর্টে আটকা পড়ে থাকলে ৪৮ ঘন্টায় অন্তত ২৪টা কবিতা লিখে ফেলতেন, আপনি মাত্র দুটো দিলেন, তাও পুরানো, এজন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ঐ দুটো বাদ দিয়ে পড়লাম, এই ত্রুটি মার্জনার জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।

ঢাকা এয়ারপোর্টের ডিপারচার লাউঞ্জের কাছের টয়লেট গুলোর পরিচ্ছন্নতার মান এখন সন্তোষ জনক। বিভিন্ন সহকর্মি এবং সিনিয়রদের কাছে চীনাদের দেয়াল বিহীন গন টয়লেট এবং টয়লেট পেপারের বদলে নিউজপ্রিন্ট কাগজ ব্যবহারের কথা শুনেছি। চীন তাদের এয়ারপোর্টের টয়লেটগুলো অন্যদেশের লোকদের জন্য ব্যবহার উপযোগি রেখেছে জেনে ভালো লাগলো।

(ছবিটি ফেক না, ইউকে টেলিগ্রাফ থেকে নেয়া)


চীনারা কর্ম তৎপর। বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিঙ ওদের এফিসিয়েন্সি বাড়াতে সাহায্য করে বলে মনে করি। আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েরা এস এস সি এবং এইচ এস সির পরে বেশ কয়েক মাস সময় নষ্ট করে। এই সময়ে তাদের সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণ দিলে এবং ট্রেনিংকালীন সময়ে কিছু ভাতা দিলে এর রিটার্ন অনেক বেশি হবে বলে মনে করি।

আপনাদের সাতজনের মিথষ্ক্রিয়া অনন্যসাধারণ ছিলো। বিরূপ পরিবেশ কত সহজেই মানুষকে কাছে নিয়ে আসতে পারে! কিয়ালের বিবেচনাবোধ অসাধারণ।
থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর অস্ট্রেলিয়ান টুরিস্ট যায়, শেষ দেশ টা বাদ দিলে বাকি গুলোতে অনেক অস্ট্রেলিয় পার্মানেন্টলি বাস করে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা টুরিস্ট পাই না।

আপনার অপেক্ষার সময়টা ভালো কেটেছে বোঝা গেলো, খালি কবিতা লিখতে পারলেন না এই যা কষ্ট থেকে গেলো।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: কবিতাংশ দুটো পোস্টে প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসেছে, নিজের কবিতাকে প্রমোট করার জন্য নয়।
বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিঙ যেমন ভাল রিটার্ন দিতে পারে, তেমনি হিতে বিপরীতও হতে পারে। এটা শুরু করার আগে ভাল-মন্দ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনা করতে হবে।
বিরূপ পরিবেশ কত সহজেই মানুষকে কাছে নিয়ে আসতে পারে! - সাদা চামড়াওয়ালা/লী দের রসদ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করার ভয়ঙ্কর চিত্রের পাশাপাশি অশ্বেতাঙ্গদের সাথে ব্যবহার্য বালিশ, কম্বল ইত্যাদি শেয়ার করার অফার একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ছিল।
আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা টুরিস্ট পাই না - আগে চরিত্র বদলাতে হবে।

৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: ঘরে বন্ধী আছি।
কিছু ভালো লাগছে না।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখালেখি চালিয়ে যান পুরোদমে, সংসারের যাবতীয় দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে পালনের সাথে সাথে। দিনে অন্ততঃ দশ মিনিট মেডিটেশন করুন।

৯| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৩

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: লম্বা লেখা দেখলে মনে হয় জীবন টা অনেক ছোট।
আর দুঃসময় শম্বুকগতিতে চলে। সুন্দর লিখেছেন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: দুঃসময় শম্বুকগতিতে চলে - ঠিক বলেছেন। তবে আল্লাহ'র অশেষ রহমতে আমাদের দুঃসময়টা সুসময়ে পরিণত হয়েছিল।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...

১০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৯

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার এয়ারপোর্টের অপেক্ষাকালীন সময়টা খারাপ কাটে নাই বলাই বাহুল্য। বরং মনে হচ্ছে, আপনি বেশ এনজয় করেছেন। আসলে বিপদের সময়ে কে কেমন বোঝা যায়। আপনার কপাল ভালো ছিল যে, আপনার সহ-অপেক্ষমান যাত্রীরা উন্নত মন-মানসিকতার ছিল।

শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ফিরে আসতে পেরেছেন, এটাই অনেক খুশীর খবর.....আর সেই সাথে একটা লাইফ-টাইম এক্সপেরিয়েন্সও লাভের খাতায় যুক্ত হলো। :)

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার এয়ারপোর্টের অপেক্ষাকালীন সময়টা খারাপ কাটে নাই বলাই বাহুল্য। বরং মনে হচ্ছে, আপনি বেশ এনজয় করেছেন - দুঃসময়ে ধৈর্য ধরতে পেরেছি এবং আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন এর উপর ভরসা রেখে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে সর্বোত্তম ফল অর্জন করতে পেরেছি, এটাই বড় প্রাপ্তি। আর, উদ্বেগসংকুল, ক্লান্তিকর প্রথম রাতটির পর থেকে বাকী সময়টুকু বেশ উপভোগ্য ছিল, তাই দ্রুত কেটে গেছে।
আপনার সহ-অপেক্ষমান যাত্রীরা উন্নত মন-মানসিকতার ছিল - অবশ্যই তারা তা ছিলেন।
আর সেই সাথে একটা লাইফ-টাইম এক্সপেরিয়েন্সও লাভের খাতায় যুক্ত হলো জ্বী অবশ্যই, এবং সে জন্যেই তো এত দীর্ঘ পোস্ট লিখে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...

১১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা ! আমার তো ভীষণ ভালোলাগে, বিভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ দেখতে, মিশতে। দুবাই তে থাকার কারনে কিছুটা পেয়েছিলাম।
আমার মেয়েটা রোজালী' র কাছাকাছি, ভাবতেই ভালোলাগে ওদের এই স্বাধীনচেতা মনোভাব; আমি নিজেও হুম বলা চলে বুকে পাথর বেঁধেই মেয়েকে দুবাই এ রেখে এসছি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনেক শুভ কামনা।
ভিপিএন কিছুটা চিনেছি প্রবাসে, সেই ভিপিএন আপনাদের জন্য চমৎকার পারিবারিক সময় করে দিয়েছে জেনে ভালো লাগলো।
চায়নিজ ফুড আমার সব সময় ই দারুণ লাগে; সুবাস ই খিদে জাগায়।

ভালোলাগার সিরিজ হয়ে থাকছে আপনার এই ভ্রমণ পর্ব।
শুভ কামনা।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: অবশ্যই এটা ছিল আমার জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা!
সেই ভিপিএন, তার সাথে সেই মানুষটির (কিয়াল স্মিথ) উদারতা ও মহানুভবতার কল্যাণেই কিছু সময়ের জন্য আমরা গোটা পরিবার একসাথে ভার্চুয়ালী মিলিত হতে পেরেছিলাম।
ভালোলাগার সিরিজ হয়ে থাকছে আপনার এই ভ্রমণ পর্ব - অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মেয়ের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...

১২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৭

উম্মে সায়মা বলেছেন: সময় করে আপনার মেলবোর্নের দিনলিপি সবগুলো পড়ব। নিশ্চয়ই খুব ইন্টারেস্টিং হবে৷
কেমন আছেন খায়রুল আহসান ভাই?
ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: নিশ্চয়ই খুব ইন্টারেস্টিং হবে - পড়ে কেমন লাগলো, জানাবেন। খুশী হবো।
আমরা ভাল আছি এখানে, তবে বাংলাদেশে করোনার ক্রমবিস্তার এবং সরকারের হেলাফেলায় যেন তেন ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার দৃশ্য দেখে যারপরনাই শঙ্কিত হচ্ছি।
আশাকরি, আপনারা ভাল আছেন, যেখানেই আছেন।
মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...

১৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৮

অন্তরন্তর বলেছেন: চতুর্থ পর্ব বেশ মনোমুগ্ধকর। বিদেশীদের সাথে বেশ সুন্দর সময় কাটানোয় আপনার ভ্রমণ বিরক্তিকর হয়নি এটা লিখায় প্রকাশ পেল। আমি একবার রোম এয়ারপোর্ট এ ৫২ ঘণ্টা ছিলাম ১৯৯১ সালে তবে তখন বয়স কম ছিল এবং তারুণ্য ওই লম্বা সময়টা বিভিন্নভাবে উপভোগের মাধ্যমে বুঝতেই দেয়নি যে ৫২ ঘণ্টা চলে গেল। চলুক আপনার লিখা। শুভ কামনা।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: চতুর্থ পর্ব বেশ মনোমুগ্ধকর - অনেক ধন্যবাদ।
ক্লান্তিকর প্রথম রাতটির পর থেকে বাকী সময়টুকু বেশ উপভোগ্য ছিল, তাই দ্রুত কেটে গেছে।
মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা...

১৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:


খুবই অল্প যাত্রী আটকা পড়ায় সবকিছু সহজ হয়েছিলো, বেশী মানুষ আটকা পড়লে সমস্যা হতো।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: বেশী মানুষ আটকা পড়লে সমস্যা হতো - সমস্যা কিছুটা হতো, তাতে সন্দেহ নেই।
তবে চীনারা পরিস্থিতি ভালভাবেই সামাল দিয়েছে এবং দিচ্ছে। পরিসংখ্যান গুম করার তথ্য কতটা সত্য জানিনা, তবে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

১৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: লেখালেখি চালিয়ে যান পুরোদমে, সংসারের যাবতীয় দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে পালনের সাথে সাথে। দিনে অন্ততঃ দশ মিনিট মেডিটেশন করুন।

কিছুই লিখতে পারছি না মন মতো।
দেশভাগ এবং ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটা উপন্যাস শুরু করেছিলেম। সেটা ধরেও দেখি নি।
মেডিটেশন করতে ইচ্ছা করে না। মনে হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে সব আপনাতেই ঠিক হয়ে যাবে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: দেশভাগ এবং ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটা উপন্যাস শুরু করেছিলেম - বাহ, এটা তো একটা বড় কাজে হাত দিয়েছেন। মন মেজাজ ভাল হলে আবার লেখা শুরু করবেন।

১৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩

নতুন নকিব বলেছেন:



সবগুলো পর্ব পাঠের ইচ্ছে। ইনশাআল্লাহ পাঠের পরে মন্তব্যে অভিমত জানাবো। আপনার ভ্রমন বৃত্তাদিতে খুঁটিনাটি উঠে আসায় বরাবরই সুখপাঠ্য। কাশ্মীর সফরে ইতোপূর্বে ভিন্ন স্বাদ ছিল। আশা, এবারেও সেই ধারাবাহিকতায় আরও বিমুগ্ধতা আসবে।

ভালো থাকুন। দুআ চাই।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনিও ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন সপরিবারে।
মন্তব্যে এবং প্লাসে প্রীত ও অনুপ্রাণিত। প্রতিটি পর্বের পাঠোত্তর মন্তব্যের আশায় রইলাম।

১৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: কে কি মন্তব্য করেছে সেটা জানিতে আবার এলাম আপনার পোষ্টে।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ।

১৮| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২০

মিরোরডডল বলেছেন: আপনার সময়টা সবার সাথে ওখানে ভালো কেটেছে জেনে ভালো লাগলো ।

ওদের সম্পর্কে আমার এতবছরের অভিজ্ঞতা আর অভজারভেশন ওরা খুবই মুক্তমনের মানুষ , ফ্রেন্ডলি, হেল্পফুল, ইজি গোয়িং , সবকিছুকেই খুব সহজভাবে নিয়ে জীবনটা উপভোগ করতে জানে । অন্যদের প্রতিও ভীষণ রেস্পেক্টফুল । আর সেকারনেই ওদেরকে আমার অনেকি ভালো লাগে ।

এখানেও তাই । ১৮ হলেই ওদের আলাদা হয়ে যাওয়া, দেশ বিদেশ ট্র্যাভেল করা , নিজের মতন স্বাধীন ভাবে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি লাইফ লিড করা এটাও আমি ভীষণ সাপোর্ট করি । আমি নিজেও তাই করেছি । হয়তো ১৮তে করিনি আরও কিছুসময় পরেই করেছি কিন্তু জীবনকে জানার জন্য বোঝার জন্য ইটস আ মাস্ট ।

ফর্মার অস্ট্রেলিয়ান প্রাইম মিনিস্টার Bob Hawke লাস্ট ইয়ার মে মারা গেছেন । হি অয়াজ অ্যামেজিং ! শুধুমাত্র ওনার কারনেই আমি ওনার দলকে সাপোর্ট করি । ভোট টাও তাঁদেরকেই দিয়েছিলাম । বর্তমান সময়ের অনেক সুবিধা যেটা আমরা এখন পাচ্ছি এগুলো ওনার সময়ে করে গিয়েছেন । ২০১০ এ ওনাকে নিয়ে একটা মুভি হয়েছে Hawke , দেখতে পারেন ।

অনেক অনেক ভালো থাকবেন । সেইফ থাকবেন ।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার সময়টা সবার সাথে ওখানে ভালো কেটেছে জেনে ভালো লাগলো - ওরা না থাকলে, কিংবা থাকলেও এমন মন প্রাণ খুলে না মিশলে আমাদের পক্ষে ট্রানজিটে ৪৮ ঘন্টা পার করাটা সত্যিই খুব মুশকিল হয়ে যেত।
ওরা খুবই মুক্তমনের মানুষ , ফ্রেন্ডলি, হেল্পফুল, ইজি গোয়িং , সবকিছুকেই খুব সহজভাবে নিয়ে জীবনটা উপভোগ করতে জানে । অন্যদের প্রতিও ভীষণ রেস্পেক্টফুল - এসবগুলো বিশেষণই আমি ওদের মাঝে দেখতে পেয়েছি।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিবিসি, ভোয়ার পাশাপাশি রেডিও অস্ট্রেলিয়ার খবরও শুনতাম। আমার কাছে ওদের সংবাদ পরিবেশনা বিবিসি'র পরেই উচ্চমানের ছিল। নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম হিসেবে ওরা স্বীকৃত ও প্রসিদ্ধ ছিল। সে সময়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিলী ম্যাকমোহন। তার সরকার বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তখন থেকেই আর কিছু না হলেও, অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী কে এলেন, কে গেলেন তা অনুসরণ করতাম। ম্যাকমোহনের পরে পালাক্রমে গফ হুইটলাম, ম্যালকম ফ্রেজার, বব হক, পল কীটিং এবং জন হাওয়ার্ড এসেছিলেন। শেষোক্তজন প্রায় একটানা ১১ বছর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর সময়েই ২০০১ সালে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অস্ট্রেলীয় সংসদের অতিথি গ্যালারীতে বসে তাঁর এবং তৎকালীন বিরোধী দলের নেতার মধ্যকার একটি সংসদীয় বিতর্ক শোনার। উনি যখন নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হন, ততদিনে তিনি ২২ বছরের সংসদীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন ঝানু সাংসদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

১৯| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:০৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


ভ্রমণকাহিনী বোধ হয় সাহিত্যের একটি অন্যতম আকর্ষনীয় অঙ্গন যেখানে পাঠক লেখাটির পরতে পরতে নিজের উপস্থিতিকে আলাদাভাবে উপলব্ধি করতে পারে।একটি ভাল ভ্রমণকাহিনী মুহূর্তেই পাঠককে লেখার ভেতর টেনে নেয়,পাঠককে ভ্রমণের অংশ করে তোলে।পাঠক অচেনাকে চিনতে পারে,অজানাকে জানতে পারে,অদেখাকে দেখতে পারে।এবং অদেখা জিনিসগুলো ছাপার অক্ষর দ্বারা অনুভব করার জন্য প্রাঞ্জল ভাষায় থাকা চিত্তাকর্ষক বর্ণনার ভিতরে ঢুকে যায়। উল্লেখ্য এই পোষ্টের লেখাটির মধ্যে থাকা আপনার লেখা কবিতা দুটো পাঠে মনে পড়ে যায় দেশের বিখ্যাত ভাষা বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত ‘বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন’ গ্রন্থটির কথা (আপনার সম্ভবত স্মরণে থাকতে পারে যে গ্রন্থটি আমাদের সময়ে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে আবশ্যিক বাংলা পাঠ্য সুচীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল)। গ্লন্থটির শুরুর দিকে এক জায়গায় লেখা ছিল;
“পাখীর মত ডানা মেলে দিয়ে জীবনের প্রথম আজ নিজের দেশের আকাশে উড়ছি। নীচে ফসলের মাঠ আর তরুলতার সবুজ। ওপরে নীল শূন্য আকাশ। সাদা-কালো রঙ-বেরঙের মেঘমালার ছোঁয়া লাগছে শরীরে ও মনে। ওপর থেকে মাঠঘাট দেখে মনে হচ্ছে কে যেন পাশার ছক পেতে রেখেছে। মানুষ ও মানুষের ঘরিবাড়ীগুলো দেখে মনে গালিভারের লিলিপুটের কথা মনে পড়ছে।ঘরবাড়ী লাগছে শিশুদের খেলাঘরের মত। বাস-ট্যাক্সী-ট্রেনগুলোকে মনে হচ্ছে যেন তাদের খেলনা।পদ্মাকে মনে হচ্ছে যেন খেয়ালী মেয়ের হাত থেকে খসে পড়া এক টুকরো রূপালী ফিতা।”— মনে হল অনেকটা এভাবেই শুরু আপনার এ পর্বের ভ্রমন কাহিণী পর্বটি । লেখার শুরুটাই মনকে একটা মায়ার আচ্ছন্নতায় বেঁধে ফেলে। কাব্যিক শব্দ ও উপমার সুন্দর দোলাচলে পাঠক হিসাবে এই ভ্রমন কাহিনীটির একটি অংশই যেন হয়ে উঠেছি ।

গতানুগতিক ভ্রমণ কাহিনী থেকে কিছুটা হলেও ভিন্নতা পেলাম । আপনার দীর্ঘ ভ্রমনকালীন সময়ে একসাথে কাটানো বিভিন্ন দেশের সহযাত্রীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলি ছোট ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরার প্রয়াসটিখুবই ভাল লেগেছে । লক্ষণীয়ভাবে সাম্প্রতিক সময়ের করোনা পরিস্থিতিতে সিভিল এভিয়েশনের চরম দুরাবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপচারিতায় কিছু গুরুতবপুর্ণ কথাও উঠে এসেছে লেখাটিতে।

বিশ্বব্যপী ভয়াল করোনার বিভিষিকাময় ক্ষনে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উৎকন্ঠা কিছুটা নিরসন নিমিত্ত লেখাটি পাঠের পর ভাল লাগার আবেশ নিয়ে লেখাটি প্রিয়তে গেল ।

অনেক অনেক শুভচ্ছা রইল

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: এই পোষ্টের লেখাটির মধ্যে থাকা আপনার লেখা কবিতা দুটো পাঠে মনে পড়ে যায় দেশের বিখ্যাত ভাষা বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত ‘বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন’ গ্রন্থটির কথা - আমার এই সামান্য লেখাটি পড়তে গিয়ে এমন একজন গুণী ভাষাবিদ, সাহিত্যিক ও প্রাজ্ঞ প্রফেসরের কথা আপনার মনে হয়েছে, সেটা জেনে নিজেকে ধন্য মনে করছি। জ্বী, ওনার লেখা ‘বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন’ গ্রন্থটি আমাদেরও সে সময়ে পাঠ্য ছিল। পোস্টে উদ্ধৃত আমার কবিতাংশ দুটো প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে। এই প্রাসঙ্গিকতাটাকে আপনার কাছে আরোপিত মনে হয় নাই এজন্য মনে মনে অনেক প্রীত হ'লাম। কবিতা শুধু কবির কল্পনাই নয়, কবিতা কবির বিশ্বাস, কবির প্রতীতি থেকে উঠে আসে। যারা কবিতার নাম শুনলেই নাক সিঁটকান কিংবা ভ্রূ কুঁচকান, তাদের অনেকেই এ কথাটা জানেন না।
আমার এ পোস্টের কোন কথাই আপনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়ায়নি। এমন উদারভাবে পোস্টের প্রশংসা করে গেলেন, যা আমাকে ভ্রমণের টুকিটাকি নিয়ে আরো অনেক কথাই লিখতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রাণিত করে যাবে।
আর সর্বোপরি, এ পোস্টটিকে "প্রিয় তালিকা"য় তুলে রাখার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.