নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে...(ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব)

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১১

মেলবোর্নের দিনলিপিঃ ঘরে ফেরা, অনিশ্চিত পথে...(ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব)

মায়া ধরানো মেয়ে রোযালী চলে যাবার পর থেকে আমরাও নিঃসঙ্গ বোধ করতে থাকলাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বের হ’লাম সেই দোকানটিতে স্যুপ ও বীফ নুডলস খাওয়ার জন্য। চমৎকার ছিল দুটোই, তৃপ্তির সাথে খাওয়ার পর পেট পুরোপুরি ভরে গেল। সে স্বাদটা যেন এখনো মুখে লেগে আছে। ফিরে এসে ব্যাগ গুছিয়ে বসে থাকলাম। একটু একটু টেনশন লাগছিল। চায়না সাউদার্ন এর স্টাফ নিশ্চিত করার পরেও কেন যেন মনে হচ্ছিল, আমাদের চেকড-ইন লাগেজগুলো আমাদের সাথে যাবে না, দু’দিন আগেই ওগুলো ঢাকা চলে গেছে। তার পরের টেনশনটা ছিল, ঢাকায় নেমে কি পরিস্থিতিতে পড়বো! কেউ বলে আশকোনা হজ্জ্ব ক্যাম্পে নিয়ে যাবে, কেউ বলে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে আর্মী কোয়ারেন্টাইনে পাঠাবে, সেখানে ১৪ দিন কাটানোর পর বাসায় যাবার অনুমতি মিলবে, ইত্যাদি নানা রকমের তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছিলাম। গুয়াংঝুতে বসেই জেনেছি, ঢাকায়ও ‘লকডাউন’ শুরু হয়ে গেছে। আমরা মধ্যরাতে ঢাকা পৌঁছাবো, এত রাতে আমার ছেলে পুলিশ আনসারের জেরা কাটিয়ে উঠে আমাদেরকে রিসীভ করার জন্য এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারবে তো? ইত্যাদি নানারকমের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।

যথাসময়ে ডিনার বক্স সার্ভ করা হয়েছিল, কিন্তু ঘন্টা দেড়েক আগে স্যুপ ও নুডলস খাওয়ার কারণে পেট ভরা থাকায় সন্ধ্যে ছয়টার সময় সে খাবার খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। সময়ও কাটছিল না। সেই আমেরিকান দম্পতি তখনো ঘুমুচ্ছিলেন। আমরা নিভৃতে একটা কোণায় বসে প্রথমে মাগরিবের এবং তার একটু পরে এশার নামায পড়ে নিলাম। রাত সোয়া আটটার দিকে চায়না সাউদার্ন এর স্টাফ এসে আমাদের খোঁজ করলেন, আমরা তৈরী আছি কিনা তা দেখে নিলেন। চেয়ারের উপর রাখা ডিনার বক্সগুলো দেখে তিনি বললেন, এগুলো যেহেতু চায়না সাউদার্ন কর্তৃক সরবরাহকৃত, ইচ্ছে করলে আমরা বক্সগুলো প্লেনেও নিয়ে যেতে পারি, সেখানে খেতে পারি। তার কথা শুনে আমরা বক্সগুলো সাথে নিলাম। আমাদের অদূরে মুখে মাস্ক লাগানো এক যুবক বসে ছিলেন। ট্রানজিট এরিয়া থেকে ওয়াশরুমে যাওয়া আসার পথে লক্ষ্য করলাম, যুবকটি আমার মুখের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছেন। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে যখন গিন্নীর সাথে বাংলায় কথা বলছিলাম, যুবকটি তখন মন দিয়ে আমাদের কথোপকথন শুনছিলেন। তিনি ঠিক কখন এসে ওখানে বসেছেন, তা খেয়াল করিনি। চায়না সাউদার্ন এর স্টাফ আমার সাথে কথা বলার পর ওনার সাথেও কিছু কথা সেরে নিলেন। তারপর তিনি আমাদেরকে ইশারা করলেন তাকে অনুসরণ করতে। আমরা বোর্ডিং এর উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম।

আমার দু’হাতে দুটো ব্যাগ ধরা দেখে যুবকটি আমার কাছে এসে পরিস্কার বাংলায় আমার কাছ থেকে একটা ব্যাগ বহন করার জন্য তাকে দিতে বললেন। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি বাঙালি’? উনি জানালেন, হ্যাঁ। চলতে চলতেই তিনি একটি ব্যাগ আমার হাত থেকে নিয়ে জানালেন, তার নাম মোহাম্মদ সাজাদুল ইসলাম, তার বাড়ী দিনাজপুর। ভেঞ্চুরা লেদার ওয়্যার নামে একটি কোম্পানীর ইন্টার্নাল অডিট বিভাগে তিনি অডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন। কোম্পানী একটা জরুরী কাজে তাকে চীন পাঠিয়েছিল, ফেরার পথে তিনি আটকা পড়েছেন। তার আচরণে সত্যিই আমি খুব মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমার মত অচেনা একজন সাধারণ ব্যক্তিকে তিনি যে সৌজন্য ও সম্মান দেখালেন, এটা তার বংশের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের একটা সামারী পরিচয় আমার কাছে রেখে গেল।

বোর্ডিং গেইটে এসে চায়না সাউদার্ন এর সেই স্টাফ নতুন একদল স্টাফের কাছে আমাদেরকে হস্তান্তর করে শুভবিদায় জানিয়ে চলে গেলেন। আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে একজন স্টাফ এসে এক এক করে শরীরের তাপমাত্রা মেপে নিলেন এবং তা কাগজে টুকে নিলেন। তাপমাত্রা মাপার পর দুই একজনকে লাইন থেকে আলাদা করে বের করে নিয়ে দূরে একটি জায়গায় বসিয়ে দিলেন। অনুমান কররলাম, তাদের শরীরে হয়তো তাপমাত্রা অনুমোদিত সীমার চেয়ে বেশী পাওয়া গেছে। তারপর আমাদেরকে গেইট থেকে বের হয়ে অপেক্ষমান একটি বাসে উঠতে বললেন। বাসে উঠে দেখি, গিন্নী আর আমি পাশাপাশি বসবো, একত্রে এমন দুটো আসন খালি নেই। কারণ, অনেকেই করোনাভীতি জনিত কারণে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য একটি করে আসন ফাঁক রেখেই বসেছেন। অগত্যা গিন্নীকে একটা খালি আসন দেখিয়ে সেখানে বসতে বললাম, আমি উপরের হ্যান্ডেল ধরে একটি আরামদায়ক অবস্থান গ্রহণ করলাম। এটা দেখে আমার স্ত্রীর পাশে বসা একজন কমবয়সী (আমাদের চেয়ে) মহিলা একটু সরে গিয়ে পাশের আসনে বসলেন, যেন আমি এসে আমার স্ত্রীর পাশে বসতে পারি। তারপর আমাকে ইশারায় তার ছেড়ে দেয়া আসনটিতে বসতে বললেন। প্রয়োজন ছিল না বসার, কারণ আমি দাঁড়ানো অবস্থাতেও কমফোর্টেবল ছিলাম। শুধু তার বদান্যতায় মুগ্ধ হয়ে আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে খালি আসনটি গ্রহণ করলাম।

প্লেনে উঠে দেখি, প্রায় সব আসন খালি। সব মিলিয়ে ইকনমি ক্লাসে বিশ পঁচিশ জন যাত্রী হবে। তার পরেও অবাক হ’লাম, যখন দেখলাম আমাদের আসনটি প্লেনের একেবারে লেজের শেষ সারিতে। হয়তো ওজনের সুষম বন্টনের জন্য এমনটি করা হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী ঠিক আটটা পঞ্চান্নতেই প্লেনটা নড়ে উঠলো। সোয়া নয়টায় আকাশে পাখা মেলার পর বিমানবালারা খাদ্য পরিবেশন করলেন। প্রায় চার ঘন্টার রাত্রির ফ্লাইট, সেই হিসেবে ওদের ডিনার দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু যা দিয়ে গেল, তাকে বড় জোর স্ন্যাক্স বলা চলে। মনে মনে চায়না সাউদার্ন এর সেই স্টাফকে ধন্যবাদ জানালাম, যিনি আমাদেরকে ট্রানজিট এরিয়ায় দেয়া ডিনার বক্সগুলো ক্যারী করতে বলেছিলেন। ঢাকা এয়ারপোর্টে কতক্ষণ কাটাতে হবে, তার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। তাই আমরা স্ন্যাক্সগুলো রেখে দিয়ে সাথে আনা ডিনারবক্স খুলে ফেললাম। মুশকিল হলো, স্ন্যাক্স এর সাথে ওরা কোন ডিসপোজেবল স্পুন বা ফোর্ক, কোন কিছুই দেয় নি। ট্রানজিট এরিয়াতে অবশ্য দিয়েছিল, কিন্তু আমরা সেগুলো ফেলে এসেছিলাম। আমরা যেহেতু শেষ সারিতে বসা ছিলাম, ঘাড় ঘুরালেই কেবিন ক্রুদের নির্ধারিত জায়গায় ওরা কে কী করছে, তা দেখতে পেতাম। দেখলাম, বয়স্কা একজন বিমানবালা তার ডিনারবক্স খুলে খাওয়া শুরু করেছেন, এবং তার মেন্যু ঠিক তাই, যা আমরা ট্রানজিট এরিয়া থেকে ক্যারী করে এনেছি। বসে বসেই আমি তার কাছে এক জোড়া ডিসপোজেবল কাটলারিজ এর প্যাকেট চাইলাম, তা না হলে প্লেনে বসে ভাত খাবো কি করে? উনি খাওয়া থেকে ওনার ফোকাস অন্যত্র সরাতে চাইলেন না, ইশারায় অন্য একজন বিমানবালাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাকে বলাতে তিনি মাত্র একটি সেট প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বললেন, তাদের কাছে আর নেই। উনি ওনার ব্যক্তিগত কিট থেকে ওটা দিয়ে গেলেন। আমি ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডিনারে মনোনিবেশ করলাম। আমরা একজন স্পুন দিয়ে খেলাম, আরেকজন ফোর্ক দিয়ে। কোন অসুবিধে হলো না।

নির্ধারিত সময়ের পঁচিশ মিনিট আগে, রাত এগারটায় প্লেন ঢাকায় ল্যান্ড করলো। বাসায় বসে ছোট ছেলে ফ্লাইট ট্র্যাকারে আমাদের ফ্লাইটের গতিবিধি মনিটর করছিল। প্লেন রানওয়েতে টাচ ডাউন করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তার ফোন পেলাম। তাকে জানালাম, আমরা ল্যান্ড করেছি। সে বললো, হ্যাঁ, আমিও ট্র্যাকারে দেখলাম, তোমাদের প্লেন ল্যান্ড করেছে। তাকে বললাম, তুমি আপাততঃ বাসায়ই থাকো। আমাদের ইমিগ্রেশন হয়ে গেলে আমি তোমাকে কল করবো। তবে আধা ঘন্টার মধ্যে আমার কোন কল না পেলে তুমি নিজে থেকেই রওনা দিয়ে দিও। আমাদের বোর্ডিং পাসের ছবি ওর কাছে আগেই পাঠিয়েছিলাম। ওকে বললাম, পুলিশ কিছু বললে প্রমাণ হিসেবে বোর্ডিং পাসের ছবিগুলো দেখাইও।

অনিশ্চিত আশঙ্কার দোলাচলে বুকটা দুলছিল। মধ্যরাত, কি বিপদ না জানি নেমে আসে! প্লেন থেকে বের হয়ে এসে দেখলাম, কয়েকজন আনসার ও পুলিশ আগত যাত্রীদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে গাইড করছেন। প্লেনে একটা ফর্ম (হেল্থ কার্ড) দেয়া হয়েছিল যা আগেই পূরণ করে রেখেছিলাম। সেটা নিয়ে প্রথমে স্বাস্থ্য বিভাগের স্টাফদের সম্মুখীন হ’লাম। একজন মহিলা ফর্মটির উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে কিছু গতবাধা প্রশ্ন করলেন, যা এতদিন ধরে শুনতে শুনতে মুখস্থের মত হয়ে গিয়েছিল। আমি ঝটপট উত্তর দিলাম। উনি আমাদেরকে মৌখিকভাবে কোন কিছু ব্রীফ না করে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি লীফলেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, আপনাদের এখন কি করণীয় এবং অকরণীয়, সবই এটাতে লেখা আছে। বাসায় গিয়ে মনযোগ দিয়ে তা পড়বেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করবেন। আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইমিগ্রেশনের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম।

ইমিগ্রেশনের লাইনে এসে দেখি, সেই যুবক সাজাদুল আমার পেছনে। সে জানালো, তার কোম্পানীর ড্রাইভার তাকে বলেছে, আগামীকাল থেকে দেশে “কমপ্লিট লকডাউন” শুরু হতে যাচ্ছে। তাদের উত্তরার অফিস দু’সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। সে খুব চিন্তায় পড়ে গেল। সে জানালো, সে দিনাজপুরে চলে যাবে, এবং আজকে রাতেই একটু পরে শেষ বাসটা ঢাকা ছেড়ে চলে যাবে। তার কথার আর্জেন্সী আমি বুঝতে পারলাম। তার মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও তাকে আমি পেছন থেকে টেনে এনে আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলাম, ঠিক যেভাবে সে আমার মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও আমার হাত থেকে ব্যাগটা টেনে নিয়েছিল। আমি তাকে বললাম, আমি ঢাকায় থাকি এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছে গেছি, তখন আশাকরি আমাদের আর কোন সমস্যা হবেনা। তুমি শেষ বাসটি ধরে দিনাজপুর না পৌঁছাতে পারলে পথে তোমার ভোগান্তির শেষ থাকবে না। সে এ কথা শুনে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। সাজাদুলের পর আমি ইমিগ্রেশন অফিসারের সামনে অগ্রসর হ’লাম। উনি পাসপোর্ট দেখতে দেখতে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে বেশ গল্প জুড়ে দিলেন। মাস্ক ও মাথার ক্যাপ খুলে সামনের ওয়েবক্যাম এর দিকে তাকাতে বলে চেহারা মিলিয়ে নিলেন। তার পর শার্টের আস্তিন গোটাতে বললেন। স্ট্যাম্প প্যাড বের করে সেখানে একটি সীল চাপ দিয়ে ধরে সীলটি আমার কব্জী ও কনুই এর মাঝখানে স্ট্যাম্প করে দিলেন। কৌতুহল হলো, সীলে কী লেখা আছে সেটা দেখার। দেখি, মাঝখানে বড় করে লেখা “PROUD TO PROTECT”, আর চারপাশে ছোট করে আরো কি যেন লেখা ছিল। তারপর হাতের বুড়ো আঙুল বের করতে বললেন। নির্বাচনের সময় যেভাবে হাতের বুড়ো আঙুলে কালি লেপন করে দেয়া হয়, সেভাবেই তিনি বুড়ো আঙুলে কালি মেখে দিলেন। আমার পরে আমার স্ত্রী তাঁর সম্মুখে এসে দাঁড়ালেন। আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রেও তিনি একই প্রক্রিয়ায় কাজ করলেন। তাকিয়ে দেখলাম, অন্য কাউন্টারগুলোতেও একই প্রক্রিয়া চলছে। এভাবেই আমাদের ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর জাতি হিসেবে আমাদের অসভ্যতার স্মারক আমরা হাতে আঙুলে মেখে নিয়ে কনভেয়র বেল্টের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম।

৫ নং কনভেয়র বেল্টে আমাদের লাগেজ আসার কথা। বেল্টের অদূরে এসেই লক্ষ্য করলাম, আমাদের কনভেয়র বেল্টটা থেমে আছে। ভয়ে ভয়ে কাছে আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ! আমি যেখানে এসে দাঁড়ালাম, দেখলাম ঠিক সেখানেই আমাদের লাগেজগুলো পাশাপাশি রাখা আছে। আমাদেরকে কনভেয়র বেল্টের কাছে আসতে দেখে দূর থেকে একজন লোক একটা লাগেজ ট্রলী ঠেলতে ঠেলতে আমাদের কাছে এসে বললেন, লাগেজ খুঁজে পেয়েছেন স্যার? আমি বললাম জ্বী, পেয়েছি। আমাকে দেখিয়ে দেন স্যার, আমি ট্রলীতে করে লাগেজগুলো আপনার গাড়ীতে তুলে দিয়ে আসবো। আমি বললাম, কত নেবেন? তিনি বললেন, আপনি খুশী হয়ে যা দেবেন তাই স্যার। আমি আমাদের লাগেজগুলো দেখিয়ে দিলাম, উনি সেগুলো ট্রলীতে ওঠালেন। আমি ছেলেকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ওরা কত দূরে আছে। সে বললো ওরা সে মুহূর্তে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করছে। আমি বললাম, বেশ, আমরা লাগেজ নিয়ে বের হচ্ছি, তুমি সরাসরি ২ নং টারমিনাল গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করো। গেইট থেকে বের হবার আগে আগে সেই ট্রলীম্যান বললেন, স্যার গেটের বাইরে আমাদের কোন বখশিস নিলে অসুবিধা হয়। পুলিশ, আনসার ওরাও ভাগ চায়। আপনি যা দেবার এখানেই আমাকে দিয়ে দেন। আমার ওয়ালেটে ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া দুটো একশত টাকার নোট ছিল, সে দুটো বের করে ওনাকে দিলাম। উনি আপত্তি করলেন এবং নোট দুটো ফেরত দিলেন। বললেন, স্যার ডলার দেন। আমি ওয়ালেট থেকে একটা পাঁচ ডলারের নোট বের করে ওনাকে দিলাম। নোট পেয়ে উনি ট্রলীটা ওখানে রেখেই সালাম দিয়ে চলে গেলেন। বাকী পথ সামান্যই ছিল। আমি সেটুকু পথ নিজে ট্রলী ঠেলে বের হয়েই ছেলেকে সামনে দেখতে পেলাম। ওরও মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, ড্রাইভারেরও। ছেলে কাছে এলে করোনা গ্রীটিংস করলাম, অর্থাৎ শুধু মুখে সালাম বিনিময়, নো হাগস!

রাস্তা ফাঁকা থাকাতে খুব দ্রুতই বাসায় পৌঁছে গেলাম। ঘড়িতে দেখলাম, রাত বারটা বেজে চার মিনিট, অর্থাৎ ক্যালেন্ডারের হিসেবে আরও একটা দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ২৩ তারিখ সকালে মেলবোর্ন থেকে রওনা দিয়ে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাসায় প্রবেশ করলাম। স্মরণ করলাম, ৪৯ বছর আগের এই দিনে এই সময়টা ছিল আমাদের স্বাধীনতারও প্রথম প্রহর! গুয়াংঝু বিমান বন্দরের ট্রানজিট এরিয়ার সীমিত পরিসরে দু’দিন কাটিয়ে এসে ঘরে ফিরে যেন মুক্ত স্বাধীনতার আনন্দ অনুভব করতে থাকলাম। বাসায় ঢুকেই দেখতে চাইলাম কব্জী ও কনুই এর মাঝখানে দেয়া সীলের বাকী কথাগুলো কী লেখা আছে। শার্টের আস্তিন গুটিয়ে দেখি, বাসায় প্রবেশের আগেই সে সীল উধাও, সাথে বুড়ো আঙুলের কালিও!

এয়ারপোর্টে পূরণকৃত ফর্মে স্বাক্ষর করে এসেছিলাম যে আগামী ১৪ দিন আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবো, ঘর থেকে বের হবো না। সে প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছি। এ ব্যাপারে আমি আগে থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। সে প্রতিজ্ঞা পালন করাতে ভালই হয়েছে। কারণ আমরা ফিরে আসার দুই দিন পর থানা থেকে একজন এএসআই বাসায় এসে দেখে গেছেন যে আমরা বাসায় আছি কি না। থানার এ তৎপরতা দেখে খুশী হ’লাম। মনে হলো করোনা বিস্তার রোধে সরকারের কাজ এখন অনেকটা সুসংহত হয়েছে। তারও দুই দিন পর করোনা রোধক ডিউটিতে নিয়োজিত সেনাদল থেকে একজন ওয়ারেন্ট অফিসার এসেও চেক করে গেলেন আমরা বাসায় আছি কিনা। এতে আরও খুশী হলাম। সাজাদুল পরের দিনই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে যে সে উত্তরা থেকে ভোর চারটায় বাসে রওনা দিয়ে সন্ধ্যে ছয়টায় বাড়ী পৌঁছেছে। মনে করে ফোন করায়, ওর এই সৌজন্য প্রকাশে এবং ওর নিরাপদে বাড়ী পৌঁছানোর খবর পেয়েও যারপরনাই খুশী হ’লাম।

ঘরে থাকায় এক অনাবিল শান্তি অনুভব করছি। প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিন থেকেই আমাদের এখানে বসন্তের আগমনী বার্তা কোকিলের কুহু ডাকের মাধ্যমে শুনতাম। এ নিয়ে আমি পর পর কয়েক বছর ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম, কোকিল কি করে মনে রাখে যে ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিনটাতেই তাকে কুহু ডাক শোনাতে হবে? এ বছর এখানে ছিলাম না বলে সে ডাক শোনা হয় নি, তবে ওখানেও দুই একদিন শুনেছি। ২৬ তারিখ সকালে ঘুম থেকে জেগে শুনি, অদূরে কোথাও এক কোকিল আনমনে ডেকে যাচ্ছে। খুব ভাল লাগছিল। ব্যালকনিতে এসে দেখি, দেয়ালে রাখা একটি টবে এক জোড়া বুলবুলি পাখি তিনটে ডিমে তা’ দিচ্ছে। আমরা বাসায় না থাকাতে বোধহয় বাসাটা নিরিবিলি পেয়ে ওরা সেখানে নীড় বেঁধেছে। ক’দিন আগে দেখি সে ডিম ফুটে তিনটে পক্ষীশাবকও বের হয়েছে। তার মধ্যে দুটো বেশ ঝরঝরে হয়েছে, একটার অবস্থা নাজুক। পাখিগুলো রোজ কয়েকবার করে খাদ্য আহরণ করে বাচ্চাগুলোর কাছে আসলেই ওরা মাথা উঁচু করে মুখটা হাঁ করে খোলে। পাখিগুলো তাদের মুখের ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে খাদ্য পৌঁছে দেয়। প্রথম দিকে অতি ক্ষুদ্র কিছু পোকা মাকড় ধরে আনতো ওদের মা ও বাবা। আজ সকালে দেখি, পক্ষীমাতা একটা পাখাওয়ালা ফড়িং পাকড়াও করে এনে পাখাসহ ওদের মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। ওরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে গায়ে পালকও জন্মেছে। হয়তো খুব শীঘ্রই দেখবো, শাবকগুলো ওড়ার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করতে করতে একদিন সত্য সত্যই ওরা ফুড়ুৎ করে উড়ে যাবে অনন্ত আকাশে।

আমার গল্পটি ফুরোলো, নটে গাছটি মুড়োলো ..........

ঢাকা
০৮ এপ্রিল ২০২০
শব্দ সংখ্যাঃ ২১৬২

(পুনশ্চঃ এ লেখাটি শেষ হবার পরের দিন দুপুরে দেখি, পাখির নীড় খালি, পক্ষীশাবক উড়াল দিয়েছে, পক্ষীপ্যারেন্টসও ধারে কাছে কোথাও নেই। খুশী হ’লাম, আমার গল্পটি শেষ হবার সাথে সাথে মায়াময় এ জগতের অসীম প্রান্তরে দু’টি নবজীবন শুরু হবার গল্পটিও জুড়ে দিতে পারলাম বলে।)


প্লেনে উঠে দেখি, প্রায় সব আসন খালি ....


প্রায় সব আসন খালি থাকা সত্ত্বেও, সবচেয়ে পেছনের আসনে আমরা দু'জন ....


আমরা বাসায় না থাকাতে বোধহয় বাসাটা নিরিবিলি পেয়ে ওরা সেখানে নীড় বেঁধেছে, তিনটে ডিমও পেড়েছে।


মায়ের কন্ঠের শব্দ পেয়ে দুই পক্ষীশাবক মুখ হাঁ করে বসে আছে, খাদ্যের আশায়। তৃতীয়টি বোধকরি অকালমৃত্যু বরণ করেছে।


ওদের গায়ে পালক গজিয়েছে.....

বুলবুলি প্যারেন্টস - নীড় ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে বের হবার আগে রেলিং এর উপর দু'জন দু'মুখী হয়ে বসে প্রহরারত।

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: শেষ পর্ব টা দুইবার পড়লাম।

রোযালী মেয়েটা আসলেই খুব ভালো।
কোথায় রাখইবে এই টেনশনে নিজ দেশে শান্তি নিয়ে ফিরতে পারেন নি।
প্লেনে কি নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। না নিজের সিটে বসেই পড়ে নিয়েছেন?
বিদেশে বাঙ্গালীরা একজন অপরজনকে সাহায্য করে কিন্তু নিজ দেসে করে না।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্লেনে কি নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে - আমি তো কোথাও লিখিনি যে প্লেনে নামায পড়েছি।
তবে না, প্লেনে নামায পড়ার জন্য আলাদা কোন জায়গা নেই। তা না থাকলেও, ইচ্ছে থাকলে যে কোন জায়গায়, যে কোন অবস্থায় নামায পড়া যায়, এবং তা কবুল করা না করার মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা'লা।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩০

মা.হাসান বলেছেন: পুত্তম পিলাচ।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: ওকে।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৮

শাহিন-৯৯ বলেছেন:



আপনার প্রতিটি পর্ব পড়া হল, কখনো ব্লগে কখনো ফেসবুকে। আপনার লেখার স্টাইল, একাধারে চমৎকারভাবে ঘঠনা বলে যাওয়ার ক্ষমতা আমাকে মুগ্ধ করে, আপনার শব্দ নির্বাচন, তার বিন্যাস খুবই উচ্চ মানের।

আমার কেন যেন মনে হয় আপনি কবিতার পরিবর্তে ছোট গল্প লিখলে বেশি ভাল হতো। এর অর্থ কিন্তু আপনার কবিতাকে ছোট করছি না।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, প্রতিটি পর্ব পড়ার জন্য এবং প্রতিটিতে মন্তব্য করে যাবার জন্য। মন্তব্যগুলো যথেষ্ট প্রেরণাদায়কও বটে।
দুই একটা ছোট গল্প যে লিখিনি, বা বলা উচিত লিখতে চেষ্টা করিনি, তা নয়। এবং সেটা করতে গিয়ে টের পেয়েছি, সাহিত্যের এ শাখাটিতেই আমি সবচেয়ে বেশী দুর্বল। ছোট গল্পে কথার আধিক্য বর্জনীয়, যা আমার পক্ষে মেনে চলা কঠিন।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত।
শুভকামনা---

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের মানুষ দেশের ভেতরে নতুন কিছু শিখার সুযোগ পায় না, মো: সাজাদুল ইসলাম আপনাকে সাহায্য করেছে, অন্যদেরও সাহায্য করবেন সময় মতো

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: মো: সাজাদুল ইসলাম আপনাকে সাহায্য করেছে, অন্যদেরও সাহায্য করবেন সময় মতো - উনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আমার বিশ্বাস, উনি যেখানেই থাকবেন, সেখানেই মানুষ তার সাহায্য পাবে।

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৫

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে :)

সাবধানে থাকবেন আর পরিবারের সবাইকে ভালো রাখবেন :D

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত হ'লাম।
শুভকামনা---

৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৮

মা.হাসান বলেছেন: ক্ষনিকের মেলা ভেঙে সবাই যার যার গন্তব্যের পথে রওনা হলেন। মান্না দের কফি হাউসের মতো ঐ এয়ারপোর্ট হয়তো বলছে

সেই সাত জন নেই
আজ জায়গাটা তবু আছে
সাতটা চেয়ার অজোও খালি নেই
একই সে বাগানে আজ
এসেছে নতুন কুঁড়ি
শুধু সেই সেদিনের মালী নেই ।

দিনাজপুরের সাজাদুলের সৌজন্য বোধ মুগ্ধ করেছে। পরবর্তিতে ফোন বিনিময়ে দুপক্ষের আন্তরিকতার প্রকাশ পেয়েছে।
বিমানবালারাও নিজেদের স্পুন-ফর্ক আপনাদের সাথে শেয়ার করে আকাশ পথে উত্তম সেবার নমুনা রেখেছে।

ঢাকা এয়ারপোর্টে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক যাত্রির হয়রানির কথা শুনেছি। এও শুনেছি ক সপ্তাহ আগে ইমিগ্রেশনের ওখানে যারা টাকা দিতে পেরেছে তাদের ছেড়ে দিয়েছে , যারা দেয়নি তাদের কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে। আমি গত ৫-৬ বছরে ঢাকা এয়ারপোর্টে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছ থেকে ভালো আচরন ছাড়া খারাপ কিছু পাইনি। আগে কিছু ছোটখাটো সমস্যা ছিলো । আপনি ভালো ভাবে এসেছেন, শুকরিয়া।
পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি ঐ সিলে একটা তারিখ দেয়া থাকতো- ১৪ দিন পরের, আর লেখা থাকতো ঐ দিন আপনার কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে।

আমার অনুমান পাখিগুলো গৃহকর্তা-কর্ত্রিদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলো।

হাতে সময় থাকলে সাজেক ভ্রমনের কাহিনী লিখে ফেলুন না, বহু পরিকল্পনার পরেও বিভিন্ন বাধার কারণে সাজেক দেখার সুযোগ হয়নি, দুধের স্বাদ না হয় ঘোলেই মেটাই।


আমার আগের মন্তব্যের ইতিহাস এখানে
সামু ব্লগের সেরা সব কমেন্টার এবং তাদের ঐতিহাসিক সব কমেন্ট

পোস্টটি অন্য রকম ভালো লাগায় ঐতিহাসিক এই কমেন্টটি ব্যবহার করার ইচ্ছে হয়েছিলো।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: কাহিনীর সাথে মান্না দে'র সেই বিখ্যাত গানটির কথাগুলো প্রাসঙ্গিতা টেনে জুড়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সাজাদুল অবশ্যই একজন সজ্জন ব্যক্তি। আমার বিশ্বাস, উনি যেখানেই থাকবেন, সেখানেই তার চারপাশের মানুষ তার সাহায্য সহযোগিতা পাবে। ওনার সাথে আজ সকালেও কথা হলো। উনি বাবা, মা এবং একমাত্র ভাইকে নিয়ে দিনাজপুরে ভালই আছেন।
ঢাকা এয়ারপোর্টে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক যাত্রির হয়রানির কথা শুনেছি - এ ধরণের কথা শুনতে শুনতে আমারও কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। আমার কপালটা বিলক্ষণ ভাল বলতেই হয়, কারণ এ রকমের কোন আলামতই আমার নজরে পড়েনি। এটা আমি ব্লগপোস্টে উল্লেখ করলাম এজন্য যেন অন্যরাও জানতে পারে যে এ অভিযোগগুলো সর্বক্ষেত্রে ঠিক নয়। আর এটা তো জানা কথা যে টাকা পয়সার অবৈধ লেনদেন সেখানেই হয়ে থাকে যেখানে কোন অপূর্ণতা বা দুর্বলতা থাকে।
পাখিগুলো গৃহকর্তা-কর্ত্রিদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলো - সুন্দর বলেছেন। কথাগুলো শুনতেও খুব ভাল লাগলো।
ঐতিহাসিক কমেন্ট এর যে লিঙ্কটি দিয়েছেন, সেটা এক কথায় দারুণ। পোস্টটাকে "প্রিয় তালিকা"য় তুলে নিয়েছি। ব্যাখ্যাটুকুর জন্য ধন্যবাদ। পুত্তম পিলাচ এর জন্যেও।

৭| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: লেখাটি অজানা কারণে আমার খুবই ভালো লেগেছে। হ্যাপী এন্ডিং এর জন্যই হয়তো
বুলবুলি পাখির ডিমও দেখা হয়ে গেলো।
ছবিগুলোও সুন্দর। তবে ঐ লোকটির টাকা না নেয়ার কারণ কি স্যার?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটি অজানা কারণে আপনার খুবই ভালো লেগে গেল? খুশী হ'লাম জেনে, আর অজানা কারণটিও জানতে পারলে আরেকটু বেশী খুশী হ'তাম।
বুলবুলি পাখির ডিম আগে কখনো দেখেন নি? ওরা তো বসত বাড়ীর আশে পাশের ঝোপ ঝাড়ে সাধারণতঃ নীড় বেঁধে থাকে এবং সেখানে ডিম পাড়ে।
ঐ লোকটির টাকা না নেয়ার কারণ - উনি বিদেশ প্রত্যাগতদের কাছ থেকে টাকা নয়, ডলার-ইউরো নিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
পরীক্ষা তো পিছিয়ে গেল, তাই বলে প্রস্তুতিতে কোন রকম ঢিলে দিবেন না। এ অমূল্য সময়টার সদ্ব্যবহার করে চলুন। জানা পাঠও বার বার পড়তে থাকুন, পড়ে সেটা লিখে নিজেই পরীক্ষক হিসেবে মূল্যায়ন করতে থাকুন। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

৮| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:০৭

সোহানী বলেছেন: প্রথমেই আপনার অস্থায়ী ভাড়াটে পাখীগুলোর জন্য একরাশ ভালোবাসা। আমার বাসার চারপাশে স্কুরেল সারাক্ষন খেলা করে কিন্তু এবার নীরব পেয়ে উনারা এবার আমার জানালা পর্যন্ত লাফালাফি শুরু করেছে ;)

অবশেষে নিরাপদে পৈাছে আপনার সকল কঠিন জার্নি শেষ হলেও একদিকে কিন্তু আমি বলবো ভালো একটা এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার হলো। আর আপনার কল্যাণে আমিও জানলাম পুরো পরিস্থিতি।

এয়ারপোর্ট থেকে যতই আমার কষ্ট হোক না কেন নিজেই ট্রলি এনে মাল টেনে তুলি। কোনভাবেই এসব দালালদের সাহায্য নেই না। শুধু একবারেই বাবা-মা হজ্ব থেকে আসার সময় ওদের সাহায্য নিয়ে যে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে তারপর থেকে ও পথে পা দেই না।

অবাক হলাম আপনাদেরকে বাসায় কোয়ারেন্টাইন করতে দিয়েছে শুনে। কারন এ কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিয়ে প্রবাসীদের হৈচৈ অনেক শুনেছি। থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা না করে জোর করে জেল খানায় রাখার মতো অবস্থা। যাক আপনাদেরকে এ ঝামেলায় পড়তে হয়নি শুনে ভালো লাগছে। প্রয়োজনীয় তদারকিও করছে শুনে ভালো লাগছে।

আমরা বাংলাদেশীরা অবশ্যই সজ্জন। শুধু দেশে সুযোগ পাইনা বলে নিজেকে প্রকাশ করতে পারিনা।

শেষ পর্বে ভালোলাগা বরাবরের মতই।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৪৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি বলবো ভালো একটা এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার হলো - অভিজ্ঞতাগুলো বিচিত্র হলেও চমৎকার ছিল, সন্দেহ নেই।
আমিও সবসময় নিজেই ট্রলি এনে মাল টেনে তুলি। তবে এবারে দুটো কারণে লোকটাকে অনুমতি দিয়েছিলাম সেটা করতে। এক, দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম। দুই, লোকটাকে দেখে মায়া হয়েছিল। ভাবলাম যাত্রীর অভাবে ওদের আয় রোজগার অনেক কমে গেছে। আমার এ কাজটুকু করে দিলে ওর কিছুটা আয় হবে।
প্রয়োজনীয় তদারকিও করছে শুনে ভালো লাগছে - আমিও যুগপৎ বিস্মিত ও আশ্বস্ত হয়েছি দু'তরফে ওদের এই তদারকি দেখে।
সবগুলো পর্ব পড়ে যাবার জন্য, মন্তব্য ও ভাললাগার কথাটুকু জানিয়ে যাবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
সপরিবাররে সুস্থ থাকুন, শুভকামনা---

৯| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:০৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভীষণ ভালো লেগেছে স্যার আপনার সদ্য সমাপ্ত ভ্রমণ পর্বটি। লেখার নিপুণতায় মনে হল গুয়াংজু বিমানবন্দর থেকে নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঢাকায় ফেরা পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। চায়না সাউদার্নের দেওয়া সান্ধ্যকালীন ডিনার বক্স রাতে বিমানে যছ কাজে লাগবে পাঠক হিসেবে আমরাও তো বুঝতে পারিনি। সম্ভবত সন্ধ্যার পরপরই বিমানে আলাদা করে ডিনার পরিবেশনের ব্যবস্থা না থাকায় চাইনা সাউদার্নের স্টার্ফ আপনাদেরকে বিমানে ক্যারি করার কথা বলতে পারেন।
নতুন করে সাজাদুলের পরিচয় পেয়ে খুশি হলাম। ঢাকা বিমানবন্দরে দেশীয় পদ্ধতিতে সামান্য অনাচারের অভিজ্ঞতাটুকু বাদ দিলে মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভ্রমণ পর্ব শেষ করেছেন বলাই যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ঢাকা বিমানবন্দরের দেশীয় পদ্ধতি তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো আপনাদের খুব খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু পরে যখন বাসায় এসে খোঁজ নিয়ে ঘাড়, কনুই ও নখের নিদর্শনগুলো উদ্ধারে ব্যর্থ হলেন তখন বোধহয় কিঞ্চিৎ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।
অবাক হয়নি, কুলির শুরুতে স্যার স্যার সম্মোধন করে,পরে 200 টাকা নিতে অস্বীকার করায় বাধ্য হয়ে 5 ডলার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পত্রপাঠ বিদায় নেওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে, তখনো কিনা গন্তব্যস্থল বেশ কিছুটা দূরে আছে। উপমহাদেশেরর চিরাচরিত চলচ্চিত্র। কলকাতার হাওড়া বা শিয়ালদা স্টেশনের কুলিদেরো চোখের নিমিষে লাগেজ নিয়ে বেপাত্তা হওয়ার মধ্য দিয়ে এই কুলির কোন পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। শঠতা বা চাতুরতায় এরা অতুলনীয়।

সবশেষে আপনার নতুন অতিথি পক্ষীকুলের পরিচয় পেয়ে ও কাজ ফুরালে তাদের লাপাত্তা হওয়ার মধ্য দিয়েও আপনার সুন্দর অনুভূতির পরিচয় পেয়ে খুশি হলাম। খুশি হলাম সাপ্তাহিক রুটিন চেকআপে থানা ও সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনের কর্মসূচির মধ্য দিয়েও।

ছোট ভাই রাজীব নুর বোধহয় খেয়াল করেননি যে আপনি বিমানে নয়, বিমানবন্দরের লাউঞ্জে মাগরিবের নামাজ পড়ার কথা বলেছেন।
বরাবরের মতোই মা.হাসান ভাইয়ের মন্তব্য খুব ভাল লেগেছে। সোহানী আপুর মন্তব্যও ভালো লেগেছে তবে তা আপনার নতুন ভাড়াটিয়াদের ক্ষেত্রে যতটা প্রযোজ্য ঠিক ততটাই বিষন্ন হলাম প্রবাসীদের খাবার-দাবার হীন জেলখানা সম থাকার ঘটনাটি জেনে।

ভালো থাকুন; সুস্থ থাকুন সবসময়।


১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার এ সিরিজের সবগুলো পর্ব পড়ে যাবার জন্য, মন্তব্য ও ভাললাগার কথাটুকু জানিয়ে যাবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। প্রতিটি পর্বে আপনার মত আরো কয়েকজনের মন্তব্য পেয়ে আমারও মনে হয়েছে, হ্যাঁ, আমাদের সাথে সফরসঙ্গী আরো কয়েকজন রয়েছেন, যারা সফরের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে অবগত আছেন। ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য।
সাজাদুল সম্বন্ধে উপরের কয়েকটি প্রতিমন্তব্যে অনেক কথাই বলেছি। তার জন্য আমার অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভ্রমণ পর্ব শেষ করেছেন বলাই যায় - হ্যাঁ, অবশ্যই তা বলা যায়। কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে ভেতর থেকে সাহস ও মনোবল জুগিয়ে যাচ্ছিল, তাই অনিশ্চয়তা এবং বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতেও বিচলিত হই নি। প্রতিটি ক্রিটিকাল পয়েন্টে আমি অচেনা সাহায্যকারীর আচমকা সাহায্য পেয়েছিলাম।
ডলারের নোটটা হাতে পাবার সাথে সাথে সেই ট্রলীম্যান এর ট্রলী হ্যান্ডেল ছেড়ে হাত দুটো কপালে ঠেকিয়ে সেলাম জানিয়ে অকুস্থল ত্যাগ করাটা মোটেই উচিত হয়নি। বিশেষ করে সে যখন কথা দিয়েছিল যে ভারী লাগেজগুলো সে গাড়ীতে তুলে দেবে। তার এ আচরণে আমি খানিকটা স্তম্ভিত হয়েছিলাম বটে, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। লোকটাকে দেখে আমার কেন যেন মনে হয়েছিল, করোনার কারণে তার রুটি-রুজিতে আঘাত এসেছে। তাই তার এ বিরূপ আচরণকে ক্ষমা করে দিতে সময় লাগেনি।
মা.হাসান এবং সোহানী এর মন্তব্যদুটো আমারও ভাল লেগেছে। ওনারা বরাবরই ব্লগপোস্টে সুবিবেচিত ও বিচক্ষণ মন্তব্য করে যান।

১০| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:১৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনি ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছেন জানতাম, তবে এখন বিস্তারিত জানলাম। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসার শান্তিই অন্যরকম। বোনাস হিসাবে পক্ষী-কথন...চমৎকার। আপনার অপেক্ষাকালীন সঙ্গীদের আর কোন খবর জানেন? মানে তারা ঠিকঠাক মতো পৌছুলো কিনা! অবশ্য ইমেইল এড্রেসের বিনিময় হলেই সেটা সম্ভবপর হবে।

কোয়ারেন্টাইন-কালীন প্রশাসনিক সচেতনতা ভালো লাগলো।

নিরাপদে থাকুন......সুস্থ থাকুন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: বোনাস হিসাবে পক্ষী-কথন...চমৎকার - পক্ষী-কথনটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হ'লাম।
কোয়ারেন্টাইন-কালীন প্রশাসনিক সচেতনতা ভালো লাগলো - জ্বী, এটা মুগ্ধ হবার মত একটা স্বস্তিকর খবর।
আপনিও নিরাপদে থাকুন......সুস্থ থাকুন, সপরিবারে। শুভকামনা---

১১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার শেষ পর্বে একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে্ছে- আপনি দেশের মাটিতে পা দিয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছেন। অনেক টেনশন কমে গেছে। আপনি শান্তি নি;শ্বাস ফেলেছেন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি একদম ঠিক কথাটি বলেছেন, ধন্যবাদ।

১২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২২

নীল-দর্পণ বলেছেন: এত সুন্দর বিস্তারিত বর্ণনা পড়তে পড়তে মনে হল নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।

দেখলাম আপনারা যেদিন ঢাকায় এসেছেন সেদিন আমি কর্মস্থল থেকে ঢাকা আসি। যেই বাসে আসি সেটা ছিল ঐদিনের একমাত্র এবং শেষ বাস। একদম শেষ সারিতে ৫টি সিট থাকে তার ঠিক আগের সারিতে সিট পেয়েছিলাম!! একটু চোখ লেগে যায় তখনি এমন ঝাঁকি সিট থেকে একদম উঠিয়ে আবার ধপাস করে ফেলে। এমন করতে করতে স্মরনীয় এক জার্নি করতে করতে এসেছি।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: এমন করতে করতে স্মরনীয় এক জার্নি করতে করতে এসেছি - যাক, তবুও নিজ গৃহে কোনরকমে ফিরে আসতে পেরেছেন, এটাই বড় স্বস্তির কারণ। সেদিন না আসতে পারলে তো আজও বোধকরি কর্মস্থলেই থেকে যেতে হতো!
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত।
শুভকামনা---

১৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬

করুণাধারা বলেছেন: অনিশ্চিত যাত্রার সমাপ্তি হলো অবশেষে!! খুঁটিনাটি অনেক কিছু বর্ণনা করেছেন, তা থেকে অনেক কিছু জানা হল। প্লেনে যাত্রী কম থাকলে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসতে হয় এটা জানা ছিল না, আর শেষে পোর্টার নিয়ে ঘটনাটার মধ্যে একটা শিক্ষনীয় বার্তা পেলাম!!

পাখিদের পারিবারিক কাহিনীর বর্ণনাও খুব ভালো লাগলো।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: খুঁটিনাটি অনেক কিছু বর্ণনা করেছেন - আমার কাছে মনে হয়, এইসব খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো মোটেই অবহেলার নয়। এসব থেকেও অনেক সময় অনেক কিছু শেখা যায়, বোঝা যায়।
দুঃসহ এই অস্থির সময়ে আপনার শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক শান্তি কামনা করছি।
ভাল থাকুন সপরিবারে, শুভকামনা....

১৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ইশ আপনার বুলবুল আমাকে দিল্লীর পায়রা, দুবাই এর ঘুঘু দম্পতীর কোথা মনে করিয়ে দিলো। ঢাকার বাসায় চড়ুই বসেছে ঘুলঘুলিতে কিন্তু চোখের সামনে না। তাছাড়া আমাদের কুটুমিয়া ( আমাদের পোষা বেড়াল ) কে দুবাই থেকে সাথে করে নিয়ে এসছি; সে সারাক্ষণ শিকারের নেশায় থাকে। তবে কুটু মিয়া' র আবুধাবি টু ঢাকা ভ্রমণ গল্প ও ছিল এমন অনিশ্চিত রুদ্ধশ্বাস পূর্ণ !! আল্লাহ'র অশেষ রহমতে সে এখন ভালো আছে, আনন্দে আছে, দেশের আবহাওয়ায় মানিয়ে নিয়েছে।


চমৎকার রুদ্ধশ্বাস পূর্ণ অনিশ্চিত ভ্রমণ গল্প সুন্দর পরিসমাপ্তিতে শেষ হল ;
রোযালী সত্যিই মায়ায় বাঁধল। আপনাদের স্যুপ বীফ নুডুলস আর ভেজ রাইস বক্স আমার পরবর্তী খাদ্য তালিকায় রয়ে গেলো একজন খাদ্য রসিক হিসবে :P

আমিও আমার প্রবাস জীবনে অসম্ভব ভালো কিছু মানুষের দেখা পেয়েছিলাম; জনাব সাজেদুলের মত। আপনার এই ভ্রমণ মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো । অবশ্যই ঢাকার ইমিগ্রেশন লাইনে সামনের সারিতে নিয়ে আসার মমত্বটুকু সহ !

আর “PROUD TO PROTECT”, নিয়ে কী বলবো !!!
করোনা বিপর্যয়ের শুরু থেকে আমার মেয়ে দুই 'বার ভ্যাকেশনে এসছে দেশে। প্রথম বার সেই চায়নিজ গ্রুপের পরবর্তী অংশের সাথে- সেদিন করোনা চেকিং কাউন্টারে কেউ ছিলেন না, তবে বের হবার আগে বলে দেয়া হয়েছে " অপেক্ষার দরকার নেই আপনারা ইমিগ্রেশন সেরে চলে যান ; তবে সাংবাদিক বা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন চেক করা হয়েছে।
পরবর্তী পর্বে মার্চ এর ৯ তারিখ - সেদিন ও একটা কাগজ ফিলাপ করে চলে এসছে। আবার ফ্লাই করে ১৬ ই মার্চ সেদিন দুবাই এয়ারপোর্টে কয়েকদফা পরীক্ষা শেষে আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবে বাসভবনে ফিরেছে।

আচ্ছা এই কয়ারেন্টাইন ফলোআপ নিয়ে কিছু বলি -
যেহেতু আমার মেয়ে এবং ওর বাবা ৯ ই মার্চ দুবাই থেকে ফিরে, পাসপোর্ট এর স্থায়ী ঠিকানা ধরে গ্রামে খবর নেয়া হয় বর্তমানে আমার মেয়ে কোথায় আছে, খবর নেয়া হয় ১৯.২০ তারিখে। ততদিনে মেয়ে দুবাই ব্যাক করেছে। রইলো আমার স্বামী। টিভির স্ক্রলিং মেসেজ দেখে থানায় নিজেই ইনফ্রম করেন বাসায় অবস্থানের কথা এবং আই ই ডি সি আর থেকে ফোন করে স্বাস্থ্যের অবস্থা যাচাই করা হয়। তারমানে কাজ কিছু যে হচ্ছে না তা নয় ! কিন্তু বড্ড সময় নিয়ে ফেলেছে :( এই তৎপরতা আরও কয়েকদিন আগে নিলে হয়ত সংক্রমণ কিছুটা রোধ করা যেতো।

বর্তমানে আমি যেখানে বাস করছি সেখানে সরকারি কিছু খোলা যায়গা রয়েছে ,কিছু সবুজের ও দেখা মিলে দেখা মিলে কোকিল ভোরের নির্মলতায় পাখির কিচির মিচির !! আক্ষরিক অর্থে বাসায় প্রবেশের তেমন কোন রাস্তা না থাকার পর ও শুধু মাত্র এই সবুজটুকুর লোভে এখানেই পরে থাকবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


আপনার গল্পে ভালোলাগা।




১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: হ্যাঁ, আমারও মনে আছে আপনার দুবাই এর ঘুঘু দম্পতির কথা।
আপনাদের দুবাই এর কুটুমিয়া কি তার ঢাকার স্বজাতীয়দের ভাষা বোঝে? মানুষের ভাষার মত তাদের মাঝে কোন আরবী-বাংলা দ্বন্দ্ব নেই তো? :)
আপনার এই ভ্রমণ মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো - আজও যখন তিন সপ্তাহ আগের সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করি, তখন দুঃসহ ভোগান্তি নয়, বরং মানবিকতার স্মৃতিগুলোই ভাস্বর হয়ে উঠে।
তারমানে কাজ কিছু যে হচ্ছে না তা নয় - জ্বী, আমি আপনার সাথে একমত, কাজের কাজ কিছু কিছু করে হচ্ছে। তবে সরকারের কাজের চেয়ে অকাজের খবর মিডিয়াতে বেশী বেশী করে প্রচার পায়, যদিও এখনকার মিডিয়া সবচেয়ে বেশী সরকার-বান্ধব। করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বর্তমানে যে লেজে গোবরে অবস্থা চলছে, আমি মনে করি তার জন্য অনেকাংশেই দায়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা এবং অপেশাদারিত্ব। আশায় আছি, যেটুকু ভুল এবং তজ্জন্য ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে, তা ফেরানোর তো আর কোন পথ নেই, আগামীতে যেন আর কোন বড় ভুল না হয়।
শুধু মাত্র এই সবুজটুকুর লোভে এখানেই পরে থাকবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি - বাহ, চমৎকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শান্তির নীড় হয়ে থাকুক আপনার এ আপন গেহ!
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত। শুভকামনা---

১৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনাদের দুবাই এর কুটুমিয়া কি তার ঢাকার স্বজাতীয়দের ভাষা বোঝে? মানুষের ভাষার মত তাদের মাঝে কোন আরবী-বাংলা দ্বন্দ্ব নেই তো? :)

কুটু মিয়া একজন ব্লু ব্লাডের পাবলিক, " ব্রিটিশ সর্ট হেয়ার" উনি জাতে :P তাই ইন্টারন্যাশনাল ইংরেজি তেই দিব্বি চালিয়ে নিবেন আশা করি :) তবে
সেতো শুরু থেকেই আইসলেশনে। আসলে তার কোন বন্ধু খুঁজে পাইনি এখন ও :( এখানকার ভেট কয়েকজন কে বলে রেখেছি কেউ ব্রিডিং এ আগ্রহী হলে আমার নাম্বার দিতে।

ধন্যবাদ কুটু মিয়ার খবর নেয়ার জন্য।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: অভিজাত কুটু মিয়ার জন্য শুভকামনা রইলো, সে একজন উপযুক্ত ব্রীডের সঙ্গী(ণী) খুঁজে পাক!

১৬| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

মোঃমোজাম হক বলেছেন: দু:খিত,সবগুলো পর্ব এক নাগারে পড়তে পারিনি।
আমার দুশ্চিন্তা ছিল আপনাকে নিয়ে, কিন্তু আল্লার রহমতে শেষে এসে সবকিছুই দ্রূত সমাপ্ত হলো।
এই ভ্রমন কাহিনী আমার হয়তো আপনারও অনেকদিন মনে থাকবে।
অনেক ধন্যবাদ

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: দু:খিত,সবগুলো পর্ব এক নাগারে পড়তে পারিনি - কোন ব্যাপার না। সময় পেলে পড়বেন, না পড়লেও সমস্যা নেই। সফরটাকে স্মরণে রাখার জন্য লিখে যাচ্ছি। কোন একদিন হয়তো আমার ছেলেরা, নাতি-নাতনিরা এসব লেখা পড়ে কিছুটা আনন্দ পেলেও পেতে পারে, আমাকে স্মরণ করলেও করতে পারে। চলার পথে দেখা মানবিকতার কথা, মানুষ হিসেবে দেখা উৎকর্ষতার কথা পাঠকের সাথে শেয়ার করতে আমার ভাল লাগে।
আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছেন, এ কথা জেনে অভিভূত হ'লাম। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন আপনাকেও ভাল রাখুন, সুস্বাস্থ্যে রাখুন সপরিবারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.