নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেটের পিছুহাঁটা

০২ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

পৃথিবীতে যতো রকমের খেলা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল বা সকার। ক্রিকেট মূলতঃ বৃটিশ সাম্রাজ্যের একটা অংশের মধ্যে জনপ্রিয়। তার মধ্যেও রকমফের আছে। খোদ ইংল্যান্ডেই সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, ক্রিকেট নয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থাও তাই। ক্রিকেট শুধু এই উপমহাদেশেই সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার আর কোন খেলায় বলার মতো সাফল্য নেই বলেই ক্রিকেটের এতো জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশ অবশ্য প্রথম আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছিলো দাবায়। নিয়াজ মোরশেদ যখন গ্র্যাণ্ড মাস্টার খেতাব পান তখন আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রাণ্ড মাস্টার বাস করতেন ফিলিপাইনে। এখন বাংলাদেশে আছেন ৫ জন গ্রাণ্ড মাস্টার। অথচ বাংলাদেশের মানুষের কাছে, মিডিয়ার কাছে, স্পন্সরদের কাছে দাবা এক অকল্পনীয় অবহেলার নাম। সম্প্রতি সিদ্দিকুরের কল্যাণে গলফ নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা চোখে পড়ে।

ভারত আর পাকিস্তানে ক্রিকেট এক উন্মাদনার নাম। কিন্তু তাদের ক্রীড়াঙ্গন ক্রিকেটসর্বস্ব নয়। ভারত হকিতে বহুবার অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জিতেছে। হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। ভারতের ধ্যানচাঁদ হকি যাদুকর হিসাবে বিশ্বস্বীকৃত। টেনিসের সানিয়া মির্জা, দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ ভারতের জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ। এছাড়া অলিম্পিক, এশিয়ান গেমসে ভারতের ক্রীড়াবিদগণ পদক জিতেছেন। সেসব পদকজয়ীরা ভারতে খুব জনপ্রিয়। পাকিস্তান হকিতে বেশ কয়েকবার অলিম্পিক স্বর্ণ পদক জিতেছে। বিশ্বকাপও জিতেছে বেশ কয়েকবার। পাকিস্তান স্কোয়াশেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে কয়েকবার। জাহাঙ্গীর খান বিশ্ব স্কোয়াশ জগতে কিংবদন্তী। তবে ক্রিকেটই সবার কাছে প্রধান আকর্ষণ।

ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হওয়া সত্বেও ফুটবলের বিকাশে ফিফা নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর বিপরীতে ক্রিকেটের পা গজিয়েছে পেছন দিকে। প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়া ক্রিকেটের প্রসারে কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর সে পদক্ষেপের সুফল হিসাবেই বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পেয়েছিলো। কিন্তু ডালমিয়ার বিদায়ের সাথে সাথে ক্রিকেটের বিকাশের সব ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। তিন মোড়ল নীতি আর টাকা নিয়ে ভারতের নির্লজ্জ টানাটানিতে ক্রিকেটের প্রাণ নিয়েই টানাটানি পড়ে গেছে।

ফিফার দিকে তাকান। তারা ফুটবলকে জনপ্রিয় কারার জন্য বিশ্বকাপে দল বাড়িয়েই চলেছে। ফিফা জানে, যে দেশ বিশ্বকাপে খেলবে সে দেশে ফুটবলের নতুন জোয়ার আসবে। ফুটবলকে জনপ্রিয় করার জন্য ফিফা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতারকে সুযোগ দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার জন্য। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলবে ৩২টি দল, ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেও ৩২ দল ( আইসিসির মতো দল কমাচ্ছে না), ২০২৬ বিশ্বকাপে দল সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে ৪৮টি। ফিফার সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এটা পাশ হয়েছে। (ভাগ্যিস সেখানে আইসিসির কেউ ছিলো না)

১৯৭৫ সালে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলেছে ৮টি দল। ৬টি টেস্ট দল ( ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউ জিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান) আর বাইরে থেকে শ্রীলঙ্কা আর পূর্ব আফ্রিকা। অপর টেস্ট দল দঃ আফ্রিকা বর্ণবাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ৬টি টেস্ট দলের সাথে আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলে জায়গা পায় শ্রীলঙ্কা আর কানাডা। অর্থাৎ ৮ দল। ১৯৮৩ সালে তৃতীয় বিশ্ব কাপেও দল সেই ৮টিই। ততোদিনে শ্রীলঙ্কা ৭ম টেস্ট দল হয়ে গেছে। আইসিসি ট্রফি জিতে ৮ম দল হিসাবে সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপেও সেই ৮ দল, ১৯৯২তেও একই কাহিনী। ১৯৯৬ সালে এসে দল বেড়ে হয় ১২টি। ততোদিনে জিম্বাবুয়ে পেয়ে গেছে টেস্ট মর্যাদা, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছে টেস্ট দল দঃ আফ্রিকা। ৯টি টেস্ট দলের সাথে আইসিসি ট্রফি খেলে সুযোগ পেয়েছে কেনিয়া, নেদারল্যান্ডস আর সংযুক্ত আরব আমিরাত। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৯টি টেস্ট দলের সাথে আইসিসি ট্রফি খেলে সুযোগ পায় বাংলাদেশ, কেনিয়া আর স্কটল্যান্ড। ২০০৩ বিশ্বকাপে দল সংখ্যা বেড়ে হয় ১৪টি। নতুন টেস্ট দল বাংলাদেশকে নিয়ে ১০টি টেস্ট দল, সাথে ৪ সহযোগী দল কেনিয়া, কানাডা, নাসিবিয়া, নেদারল্যান্ডস। ২০০৭ বিশ্বকাপে দল আবার বেড়ে হয় ১৬টি। ১০টি টেস্ট দলের সাথে সহযোগী ৬ দল -নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড, বারমুডা, কানাডা, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড।

২০১১ বিশ্বকাপে এসে শুরু হলো পিছু হাঁটা। দল ১৬ থেকে কমে গেলো ১৪তে। পূর্ণ ১০ সদস্যের সাথে সহযোগী ৪ দল-কানাডা, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ১৪ দল। পূর্ণসদস্য ১০ আর সহযোগী ৪ দল-স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান আর সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৯ বিশ্বকাপে দল কমানোর ভূত আরো মাথাচাড়া দেয়। ১৪ থেকে সোজা ১০ দল। এবার সব টেস্ট দলও সরাসরি খেলতে পারবে না। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সাথে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে আইসিসির পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ ৭ দল খেলবে সরাসরি। তালিকার তলানীতে থাকা বাকি ২ টেস্ট দল আর সহযোগী দলের মধ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য বাছাই টুর্নামেন্ট খেলে সুযোগ পাবে আর ২ দল। ফলে প্রথমবারের মতো কোন টেস্ট দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে। কারণ আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ড অঘটন ঘটনোর সামর্থ্য রাখে।

এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপে দল আরো কমাবার ধান্দার খবরও বাতাসে ভেসেছে। নতুন দলকে টেস্ট মর্যাদা দেয়াতো দূরের কথা উল্টো টেস্ট দলের টেস্ট মর্যাদা কেড়ে নেবার প্রস্তাব তোলা হয়েছিলো। ভারতের এ প্রস্তাবে হাঁ বলেছিলো শ্রীলঙ্কাও। ১২-২ ভোটে সেই ভয়াবহ প্রস্তাব ফেল করেছে। অথচ ক্রিকেটের বিকাশের স্বার্থে এই মুহূর্তে আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডকে টেস্ট মর্যাদা দেওয়া উচিত। আইসিসির অবহেলায় কেনিয়ার মতো একটি সম্ভাবনাময় দল হারিয়ে গেছে। আর কোন দল যাতে না হারায় সেদিকে মন না দিয়ে দল কমাবার অশুভ মতলবে আছে আইসিসি। পত্রপত্রিকার সংবাদে সবার কাছে পরিষ্কার এর পেছনে আছে ভারতের ইচ্ছে। বিজ্ঞাপনের বেশিরভাগ টাকা ভারত থেকে যায় বলে ভারতেকেই সেই টাকার সিংহভাগ দিতে হবে ? হাস্যকর ভাবনা। ছোট দলের সাথে খেললে বিজ্ঞাপন পাবে না- এটাই দল কমানোর মতো ভয়াবহ ভাবনার মূল কারণ ! ভারতের পক্ষ থেকে আইসিসিতে ভরাডুবির প্রতিশোধ হিসাবে ভারত এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বর্জনের হুমকি দিচ্ছে। আরো ভয়নক খবর হলো, ভারতের এই নির্লজ্জ ভাবনাকে সমর্থন করছেন গাভাস্কারের মতো খেলোয়াড়ও। Click This Link

বাকি সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের সম্মিলিত আপত্তির মূল কথাটা কি ভারত বুঝতে পারছে না ? আইসিসিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল-এর বদলে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বানাবার চেষ্টায় যে ভারতের সাথে কেউ নেই সেটা বুঝতে চাচ্ছে না ভারত ? ক্রিকেট ভক্তরা কিন্তু ভারতকে বাদ দিয়ে আইসিসি দাঁড় করাবার দাবী তুলতে শুরু করেছেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

জোয়ান অব আর্ক বলেছেন: বাংলাদেশকেও দুয়ে পুছে টেস্ট মর্যাদা দেয়া হয়েছিল কেবল ক্রিকেট গিলিয়ে জনগণের পকেট কাটার জন্য। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে কেনিয়া বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো করলেও তাদেরকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি।

যেসব দেশে ইন্ডিয়া তাদের বিজ্ঞাপনের ব্যবসা করতে পারবে, বেছে বেছে সেসব দেশকেই লাইম লাইটে আনা হচ্ছে। আফগানিস্তানের যদিও চান্স আছে, আয়ারল্যান্ডের পরিণতি সম্ভবত কেনিয়ার মতই হবে।

০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:২৭

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সহমত। ধন্যবাদ।

২| ০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

ভাললাগে না বলেছেন: ICC তে যত দিন ভারত আছে তত দিন ক্রিকেটের উন্নতি হবে না। ভারত শুধু ব্যবসাই করছে ক্রিকেট নিয়ে।এরকম চলতে থাকলে এক সময় ভারত আর অল্প কয়েকটি দেশ ছাড়া ক্রিকেট খেলার জন্য কেউই থাকবে না।

আর এটাও সত্য যে ভারতের মত নির্লজ্জ জাতি দুনিয়াতে কমই আছে।

০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: প্রকৃতপক্ষে ব্যবসা বাড়াতে হলে ক্রিকেটের প্রসার দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.